এই রংরুটই আমাদের কাছে
সহজ রুট হয়ে উঠেছে স্বাধীনতার সাত দশকে। সমাজবাস্তবতা ও আইন; মনুষ্যত্ব ও মানবিকতার যে পারেই যে থাকি না
কেন। তাই অমরা জেনে গিয়েছি অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই পস্তাতে হবে। চোরকে ধরতে গেলেই
আইন আমাকে ছিবড়ে করে দেবে। ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ালেই নিজের মৃত্যু পরোয়ানায় নিজেরই
দস্তখত পড়ে যাবে। আর প্রতিরোধ করতে গেলেই রাজনীতি আপনাকে হাইজ্যাক করে নেবে।
স্বাধীনতার সাত দশকে এটাই ভারতীয় উপমহাদেশের অর্জন। আজকে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড়ো
সমস্যা রামমন্দির না বাবরি মসজিদ। গোরক্ষকক না গোভক্ষক। আজকে বাংলাদেশের সমস্যা
ইসলামী সংস্কৃতি না বাঙালি সংস্কৃতি। আজকে পাকিস্তানের সমস্যা মৌলিক অধিকার না মৌলবাদ।
একদিকে বাইশে শ্রাবণের স্মরণ সভা আর আরেক দিকে স্বাধীনতার সাত দশকের উদযাপনের
মাঝখানে তাই আজও সেই দ্রষ্টা রবীন্দ্রনাথ যেন ঝুলতে থাকেন নিরালম্ব
হয়ে।~~~~~~~~~~~~~~~
শাকিলা তুবা - বিজন বনের দিকে
বুকের ভেতরটা লাফিয়ে উঠল, আরেকবার
এই স্নেহময়ী নারীকে দেখবার বাসনায়। সত্যি সত্যিই একদিন ঠিকানা যোগাড় করে চলেও
গেলাম সেখানে। এত বছর পরে একটা মানুষ ঠিক ওই একই রকম থাকে কি করে এটা খুবই
আশ্চর্যের। শামসুন বুজি আমাকে দেখে খুশীতে যেন একেবারে পাগলপারা। কোথায় বসতে দেবে, কি
খাওয়াবে তার নেই ঠিক। যতক্ষন ছিলাম সারাটাক্ষন আমার গায়ে হাত বুলিয়েছে। আর কত যে
জিজ্ঞাসা, এ কেমন আছে,
সে কত বড় হয়েছে ইত্যাদি। দেখলাম, কি
সুন্দর গোছানো তার সংসার। টিভি, ফ্রিজ, ডাইনিং টেবল সে এক হুলুস্থুল
ব্যাপার। আমাদের বাসায়ও এত স্বাচ্ছন্দ্য নেই। অথচ লোকটা নাকি ছিল এক মালী। কি করে
এই লোকের এত টাকা এসেছিল এটা জানিনা। কিনতু শামসুন বুজিকে রেখেছিল পটের বিবি করে।
ওখানে তার সতীনকেও দেখলাম। সেও পাশের বাড়ীতেই থাকে। দুজন দুজনকে সম্বোধন করছিল, ‘অ বু, অ বু’ বলে। তার সতীনও আমাকে এত যত্ন করেছিল যে বলার না। শুনলাম, রানীর বিয়ে হয়ে গেছে আরো আগেই এখন রানী নিজেই শ্বাশুড়ী হবার মতন অবস্থায়। নাদিমও দুই মেয়ে আর বউ নিয়ে আলাদা থাকে, ব্যাবসাপাতি করে খায়। আশ্চর্য প্রশান্তিতে ভরে উঠল মন। বিদায় নেবার সময়ে শামসুন বুজির কান্না আমাকে আবারো মনে করিয়ে দিল, একদিন আমরা খুব কাছাকাছি ছিলাম। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রাহাত মুস্তাফিজ - সাম্প্রতিক বাংলাদেশ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বলা হয় অসাম্প্রদায়িক, সেক্যুলার, জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল। এই দলটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে
নেতৃত্ব দিয়েছে। বাহাত্তরে একটি সেক্যুলার সংবিধান প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছে। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে দলটি দেশের মানুষের প্রত্যাশা বাড়িয়ে
দেয়। অতঃপর ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে
অভিযুক্ত প্রভাবশালী চিহ্নিত রাজাকারদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হলে
মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি হয়। ২০১৩ সালে রাজাকার কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে আশাভঙ্গের সূচনা
হয়।ফলশ্রুতিতে রাজধানীর শাহাবাগে সৃষ্টি হয় সতঃস্ফূর্ত জনতার ঐতিহাসিক গণজাগরণ! যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবীতে শিক্ষিত, সচেতন, মধ্যবিত্ত শ্রেণি ফেটে পড়ে।
শাহাবাগের আগুন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এমন একটা পরিস্থিতিতে শাহাবাগের সেক্যুলার
স্পিরিটের একদম বিপরীতে অবস্থানকারী শক্তির উত্থান ঘটানো হয় দেশে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
হাসিদা মুন - শিক্ষা ও সমকাল
একদা ব্রিটিশ আমলে
সেকেলে কেরানি বানানোর উপযোগী শিক্ষার প্রচলন ছিল ব্রিটিশ কোম্পানির স্বার্থে।
বর্তমানেও দেখা যায়,
শিক্ষার বাজারীকরণের ফলে এই ধরনের কোর্সের কদর বেড়েছে।
ভালো চাকরির আশায় ছাত্রছাত্রীরা এসব পড়ে ও ডিগ্রি পায়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও
এসব কোর্স আছে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌলিক বিজ্ঞান, যথা
পদার্থবিদ্যা, গণিত অথবা বাংলা ভাষা,
ইতিহাস, দর্শন ইত্যাদি জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা
অনুপস্থিত থাকে। এককালে ব্রিটিশরা চেয়েছিল কেরানি। এখন আন্তর্জাতিক করপোরেট
পুঁজিও চায় উঁচু দরের কেরানি। সে জন্য শিক্ষা কোর্স এভাবেই তৈরি হচ্ছে যে, প্রকৃত
শিক্ষা তার আদর্শ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোন জাতি যদি এভাবে প্রকৃত শিক্ষা থেকে দীর্ঘ সময় দূরে সরে
থাকে, তবে সে জাতির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকার। শিক্ষাবিদ, দেশপ্রেমিক
রাজনীতিবিদ ও দেশ নিয়ে ভাবেন এমন সৎ মানুষদের এখনই সোচ্চার হওয়া দরকার। আমরা
প্রকৃত শিক্ষা চাই,
যা জ্ঞানের আলো ছড়াবে। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য, শিক্ষার
সাম্প্রদায়িকীকরণ ও বাজারীকরণের নীতি এখনই পরিত্যাগ করতে হবে। শিক্ষা হোক অধিকার।
শিক্ষা হোক বিজ্ঞানভিত্তিক এবং প্রকৃত মানুষ গড়ার উপায়।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
অমলেন্দু চন্দ - নীতি স্বার্থ ও তত্ব
সাব-অল্টারন
কিছু হলেই ডেমোক্র্যাসির নতুন এলিট নতুন
অভিধা দেবে - জাতে রামেই নেই বুঝিয়ে রাবণের গুষ্টির তুষ্টি করা আঁতেল, সে আবার এক ভেন্ন বাস্তু র ঘুঘু, কানে মোবাইল
চেপে ড্রাইভার ডেকে এ সি চালিয়ে বেঁচে বর্তে থাকার কর্মস্থলে দেখতে পাওয়া যায়
তাদের, এই উদ্বাস্তুরা আবার
বাতেন বাবুর জাত,
অনেক এদের দাম আর মান। এদের এই রয়েছে আছে এই ছিল এই নেই
খেলায় তো ইতিহাস কাবার। কারন বুদ্ধিচাছা এলিটিস্মের মাইক তো এধার ওধার সব ধারেই
বেজেই চলেছে,
এ বলে আমি নীল রক্তের ও বলে আমি বিবর্তনের গল্পে লাল রক্তের
এলিট। এদিক ওদিক কিছু লাশ থাকলেই হল ইতিহাসে, সে ভাঙিয়ে খাবার বন্দোবস্ত চলবে চলছে লড়কে লেঙ্গে
বুঝে নেব, আর তাতে যাদের লাশ তাদের গুষ্টি গোল্লায় গেলেই বা কি করার আছে, সিস্টেম সিস্টেম, - সে সব তো তোমার জানাই আছে, না কি, এখনও বুঝিয়ে বলতে হবে, সে হলেই তো
হল,
তুমি অপোগণ্ড। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শ্রীশুভ্র - একটি ঐতিহাসিক সঙ্কট ও অলীক ভারত
স্বাজাতির প্রতি
প্রীতি ও ভালোবাসাই দেশীয় উন্নতির ভিত্তি সরূপ! আর সেই স্বাজাত্য প্রেমই
পারে গোটা জাতিকে এক সূত্রে বেঁধে রাখতে! ঠিক এইখানেই পিছিয়ে পড়েছে ভারতবর্ষ! এতগুলি
স্বতন্ত্র জাতি তাদের স্বতন্ত্রতা অতিক্রম করে ভারতীয় জাতীয়তার মোহ
কল্পনায় ঐক্যবদ্ধ হবে, সে নেহাতই কষ্টকল্পনা! স্বভাবতঃই তা হয়ওনি! আর সেই একতাবোধের
অভাবেই ভারতীয় জাতিসমূহে দূর্নীতির প্রাদুর্ভাব! দুঃখের বিষয়, এই সরল সত্যটি আমরা আজও
বুঝি না! স্বাধীনতার পর গোটা ভারতবর্ষ
জুড়ে এই যে দূর্নীতির ব্যাপক বিকাশ তার মূলে এই কারণগুলিই মূল নির্ণায়ক ভূমিকা
নিয়েছে! একদিকে দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও অন্যদিকে এক শ্রেনীর বিত্তশালীর হাতে
দেশের সম্পদের উপর একচ্ছত্র অধিকার! আর সেই অধিকার চর্চার জন্যই সংসদীয় গণতন্ত্রের
চর্চা! দেশের সার্বিক বিকাশের পক্ষে যা প্রধান অন্তরায়! ফলে অন্ন বস্ত্র
বাসস্থান সহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলি আজও সুরক্ষিত নয়! আজও প্রতিটি ভারতীয়র শিক্ষার
অধিকার, সুস্বাস্থের অধিকার, জীবিকার অধিকার রাষ্ট্র কর্তৃক সুরক্ষিত নয়!
সামাজিক সুরক্ষার ধারণা এদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি! গড়ে ওঠেনি নাগরিক দায়িত্ব ও
কর্ত্তব্যবোধের সুনিশ্চিত ধারণাও!~~~~~~~~~~~
সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায় - বুদ্ধির্যস্য
পুজোর ছমাস আগে থেকে শুনছি বাজার করছে,
অথচ এখনও নাকি কিছুই কেনা হয় নি। আর এদেরও বলিহারি। লাখ লাখ স্টক
ঝুলিয়ে রাখে দোকানে এদিকে ট্রায়াল রুম এই ক'টা। ঢুকতে পারাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আর ঢুকল তো
বেরনোর নাম নেই। ভাস্কর গজগজ করে। শঙ্খ মজা পায়। এই অভিজ্ঞতা ওর সম্প্রতি শুরু হয়েছে। যদিও ভূমির সাথে প্রেম
বেশ কিছুদিনের। তবে এই ট্রায়াল রুমের বাইরে দাঁড়ানোটা বেশিদিন নয়। প্রথমবার যখন এসেছিল,বেশ ভালোই লেগেছিল। ফাঁকাও ছিল
মোটামুটি । ভূমি একটা করে কুর্তি পরে এসে
দাঁড়াচ্ছিল উদ্গ্রীব চোখে তাকিয়ে। যেন শঙ্খর ভালো মন্দ লাগাটাই শেষ কথা। ও হ্যাঁ বললে
হ্যাঁ না বললে না...পরে অবশ্য ভুল
ভেঙ্গেছে। বেশ কয়েকটা জামা শঙ্খর তেমন না লাগলেও ভূমি সেগুলোই নিয়েছে। তুমি নিজের
পছন্দেই নেবে তো আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেন? অভিমান করে
বলেছিল শঙ্খ টিপিটিপি হাসছিল ভূমি... ওমা! রাগ হল বুঝি বাবুর! দাঁড় না করিয়ে উপায়
কি! তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই এদিকে শপিং ও জরুরী। তাই তো তোমায় সঙ্গে আনলাম...~~~~~~~~~~~
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় - বাংলা সিনেমার ত্রয়ী সত্যজিৎ - ঋত্বিক – মৃণাল
সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটক এবং মৃণাল সেন – ভারতীয় চলচ্চিত্রের
তিনটি পৃথক ঘরানা । সত্যজিৎ রায় বাস্তবের চলচ্চিত্রভাষ্য নির্মাণ করেন সাহিত্যকে
আশ্রয় করে, ঋত্বিক ঘটকের
সিনেমায় দেশ বিভাগের যন্ত্রণা, ক্রোধ আর মৃণাল
সেনের সিনেমায় কঠোর বাস্তবের সঙ্গে যৌবনের স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নকে নিংড়ে নেওয়া
চিত্রভাষ্য, আর্থ-সামাজিক
পরিপ্রেক্ষিত থেকে মানুষের সংকটময় রূপের বিশ্লেষণ । জীবনঘনিষ্ঠ গল্পের সঙ্গে
সিনেমার আর্টের সমস্ত দিকগুলির সংমিশ্রণ মৃণাল সেনের সিনেমায়, ছবির গল্পের তলে আর এক স্তরের গল্প বলেছেন
যেন তাঁর সিনেমায় । শ্রেণীবিভক্ত সমাজের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাগুলি
বুঝতে চেয়েছেন নিজের মত করে আর ধরে রেখেছেন তাঁর সিনেমায় । ঋত্বিক ঘটক চলে গেছেন
১৯৭৬এ, সত্যজিৎ রায় ১৯৯২এ, ৯৪ বছরে পা দিয়ে মৃণাল সেন এখনও রয়েছেন
আমাদের মধ্যে । শেষ ছবি করেছেন ‘আমার ভুবন’ ২০০২এ । জীবন ও শিল্পের অবিরাম প্রবাহ বয়ে
চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সৌমিত্র চক্রবর্তী - সাক্ষাৎকার
দেশীয় ঐতিহ্য ও
উত্তরাধিকার কোনো কালেই গন্ডীবদ্ধতার সৃষ্টি করে নি। প্রাচীনকালেও এক দেশের সঙ্গে
দূর প্রান্তের আরেক দেশের বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান ছিল। দেশজ সংস্কৃতি
তাতে কোনো বাধা সৃষ্টি করে নি। বরং আদানপ্রদান উন্নতির সহায়ক হয়েছিল। গোলকোন্ডার
প্রাচীন দুর্গে বা আগ্রার লালকেল্লায় ব্যবহৃত প্রযুক্তি এই সাংস্কৃতিক
আদানপ্রদানের ফলেই সম্ভব হয়েছিল। অথচ আজকের সাইবার এজে সেই দেশজ সংস্কৃতি হারিয়ে
যাচ্ছে। মিশ্র কালচার বিশ্বমানবতার দিকে মানুষকে এগিয়ে তো দিচ্ছেই না, পরন্তু আরও
বেশী করে গোঁড়া ও মৌলবাদী করে তুলছে। এই ভাবনার মূলে আছে পুঁজিবাদের ইন্ধন। দুটি
দেশকে উগ্র করে তুলতে পারলে দুই দেশেই তাদের বিক্রির পরিসর বেড়ে যাবে এই কূট নীতি
থেকেই অকারণ জাতীয়তাবাদের তুঙ্গ প্রচার চলছে স্যোসাল মিডিয়ায়। ফলে বিশ্বমানবতা
দূরে থাক বিদ্বেষ বাড়ছে। পাশাপাশি দুই দেশের খেলার সময়ে যদি লক্ষ্য করেন, তাহলে
দেখবেন এই বিদ্বেষের প্রকাশ পারদ গরলের মত কেমন ফুটে উঠছে ক্রমশই। আমি এতে আহত হই।~~~~~~~~~~
সুবীর সরকার - সাক্ষাৎকার
স্বাধীনতা! সে আবার এলো কই? একটা
বিশাল উপমহাদেশকে টুকরো টুকরো করে,রক্তের স্রোতে ভেষে, অবিশ্বাস ও সন্দেহের আবহে ৪৭ এর স্বাধীনতা আসলে স্বপ্নভঙ্গের এক
বেদনামাত্রই বলে আমার মনে হয়। তাই
৭০ বছর পেরিয়েও বৈষম্য, দারিদ্র,দাঙ্গা, কুসংস্কার, ঝা-চকচকে আধুনিকতার পাশে বস্তীর তীব্র অন্ধকার, শোষণ বঞ্চনার এক ভাঙ্গা দালানে বসে থাকা পাখিদল।
উন্নয়ণ হয়েছে। তবে
সেই উন্নয়ন ১০ ভাগ মানুষের, আমজনতার
নয়। আমজনতা কেবল পিছু
হটেছে,উচ্ছেদ হয়েছে।পিড়িত হয়েছে। আত্মপরিচয়
হারিয়েছে। ভারতীয় রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা কখনই শক্তপোক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি।
ভারতবর্ষের কোন রাজনৈতিক দলই ধর্মনিরপেক্ষতাকে মান্যতা দিতে পারে নি, বা চায় নি। আসলে সবাই চেয়েছে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে। তবে ভারতবর্ষের সাধারন জনসমাজ কিন্তু শান্তি চেয়েছে, সম্প্রিতী চেয়েছে সবসময়। তাই সেভাবে প্রকট
হতে পারে নি ভারতে সাম্প্রদায়িকতা, এটাও
কিন্তু বাস্তব। লোকসমাজই লালন করবে
আবহমানকাল ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাকে। এটাই
চিরায়ত ভারতের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। ~~~~~~~~~~
অলভ্য ঘোষ - বিভাজন ও ভারতের ইতিহাস
জমিদারি এবং মধ্যস্বত্ব প্রথা বিলোপ করে প্রকৃত কৃষক স্বত্ব
লাভ করবে এই ছিল প্রজাস্বত্ব সংস্কারের ঘোষিত কর্মসূচী। কিন্তু বাস্তবে অবস্থা ঘটল
ঠিক এর উল্টো; প্রথাকে স্বত্ববান করে কৃষকের হাতে জমি তুলে দেবার নীতির
সাথে সাথে পুরাতন ভূস্বামী জমিদারদের ব্যক্তিগত চাষের অজুহাতে জমি পুনরুদ্ধার
করবার সুযোগ দেওয়া হোল;
অর্থাৎ ভূস্বামী জমিদারেরা ব্যক্তিগত চাষের কারণে জমি
নিজেদের নামে নিয়ে আসতে পারবে। ব্যক্তিগত চাষের আওতায় আনার অছিলায় জমি কেন্দ্রীভবন; প্রকৃত চাষিদের উচ্ছেদ তো ছিলই; অন্যদিকে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভাগ চাষির অধিকারকেও খর্ব
করা হতে লাগল। একজন ভাগচাষীকে একাদিক্রমে চাষ করতে দেওয়া হলও না। কেউ ভাগচাষ করলে
তার কোন ভাবে একটা অধিকার জন্মে যায় এবং সে প্রজাস্বত্বের একজন দাবিদার হতে পারে
এই আশঙ্কায় প্রতি বছর ভাগচাষী বদল হতে শুরু করল। এতে একদিকে যেমন প্রচলিত আইন রক্ষা
হল অন্যদিকে ভাগচাষীদের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব তৈরি হবারও একটা ক্ষেত্রে তৈরি
হয়ে গেল। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রওশন আরা বেগম - বাংলাদেশ ও শিক্ষা পরিকাঠামো
শিক্ষার জগতে নিয়ন্ত্রনহীনতা আমাদের তাহলে কোথায় নিয়ে যাবে? যে শিক্ষা ব্যবস্থা আমি নিজের জন্যে কোন কালে কল্পনা করিনি, তা আমার ছেলেমেয়েদের জন্যে বা আগামী প্রজন্মের জন্যে আমি
কিভাবে মেনে নেব?
যে শিক্ষা শুধু নিজের একটা পেশা তৈরীতে সাহায্য করে সেই
শিক্ষার কোন মুল্য নেই। এই শিক্ষা শুধু স্বার্থপর ব্যক্তিগত উন্নয়নের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকে,
সমাজ ও পৃথিবীর কোন কাজে আসে না। এই রকম একটি শিক্ষা
ব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু হয়েছে। তাই ওই শিক্ষার মাধ্যমে মানবিক মানুষ তৈরীর পথ
বন্ধ হয়ে গেছে। এই কারনেই হয় তো রাজনৈতিক পরিবর্তনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, আভ্যন্তরিন ভোক্তার প্রতিযোগিতা বেড়েছে, শোষনের মাত্রাও তীব্র হয়েছে। এই সবই আমাদের শিক্ষার মাধ্যমে
এসেছে। তাই মানব উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু হচ্ছে না, যা হয়েছে তা হলো মানব শোষনের বিভিন্ন হাতিয়ারের উন্নয়ন।
শিক্ষা লাভের অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে একটি। কোন কোন দেশে মানুষের এই
অধিকারটি সম্পুর্ন রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হয়ে থাকে। আবার কোন কোন দেশে এই
নিয়ন্ত্রনটা কিছুটা শীতিল। উন্নত সামান্য কয়েকটি দেশে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে
বানিজ্যকরন মুক্ত করে এটিকে সম্পুর্ণ ভাবে নাগরিক মৌলিক অধিকারের মধ্যে আনতে
পেরেছে। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শাখা নির্ভানা - যৌনতায় বাঁচামরা
যৌনতা বিষয়ে পাশ্চাত্য যেভাবে চিন্তা করে, প্রাচ্য সেভাবে করে না। এই পার্থক্যটা বুদ্ধিবৃত্তিক।
এখানেই ধরা পড়ে যায় প্রাচ্যের যৌনচেতনার দৈন্যতা। পূবে যৌনতা একটা ট্যবুর নাম, পশ্চিমে তা অনেকটা স্নান, ঘুম আর আহারের মতন স্বাভাবিক জীবনবৃত্তীয় বিষয়। খাদ্য-ক্ষুধার মতন যৌনতা
প্রাণীদেহের একটা স্বাভাবিক চাহিদা। মানুষের অন্যসব চাহিদার মতন এরও দুইরকমের
ব্যবহার বয়েছে- স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক ব্যবহার। প্রথমে দেখা যাক পাশ্চাত্য এই
স্বাভাবিক ব্যবহারের সীমানা প্রাচীর কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত করতে পেরেছে। যৌনতার
স্বাভাবিক ব্যবহার উন্নত সমাজ গঠনে অপরিহার্য্য অনুষঙ্গ। সেই অনুষঙ্গের সাথে
সমাজকে ক্রিয়াশীল করার নিমিত্তে প্রথমে তারা শিক্ষাক্রমকে এই যৌন চেতনার অনুকূল
করে তোলে। পর্যায়ক্রমে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষাক্রমের সাথে যৌনশিক্ষাকে
সন্নিবেশিত করে তারা আগামী প্রজন্মকে স্বাভাবিক যৌনতার ব্যাপারে জ্ঞানদান পরিপূর্ণ
করে। তখন এই নবীন প্রজন্ম কর্মক্ষেত্রে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে পা রেখে
সহজেই অনুধাবন করতে পারে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক যৌনতার
পার্থক্য।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শামসুজ্জোহা মানিক - বাঙ্গালীর সমাজ ও জাতি গঠনের গতিধারাঃ একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
রাজনৈতিক দল না থাকলে রাষ্ট্র ও
জনগণের মধ্যে আর কোন কার্যকর সেতুবন্ধন থাকে না। ফলে আমলা-পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতায়
অবস্থাটা যে শুধু জনগণের জন্য অসহনীয় উঠে তা-ই নয়, অধিকন্তু জন-বিচ্ছিন্নতার ফলে রাষ্ট্রের জন্যও বিপজ্জনক হয়ে
উঠে। অর্থাৎ এ দেশে রাজনৈতিক দল রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে প্রায় একমাত্র
মধ্যস্থতাকারী সামাজিক প্রতিষ্ঠান। জনগণের স্থানীয় স্বশাসনের ব্যবস্থার দুর্বলতার
ফলে রাষ্ট্রশাসন যেমন আমলাতান্ত্রিক রয়ে গেছে তেমন এই আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের
সঙ্গে যোগাযোগ ও মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকাতেও প্রধানত রাজনৈতিক দল রয়ে গেছে। বিপদে ও
প্রয়োজনে জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষি কিংবা সংলাপের ভূমিকা পালনে
যেটুকু হোক ভূমিকা পালন করে রাজনৈতিক দল বা তার নেতা-কর্মীরা। আবার আমলাতন্ত্রের
পক্ষ থেকে জনগণের উপরও নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার সহজ হাতিয়ার হয়ে দেখা দেয় বিশেষত বৃহৎ
রাজনৈতিক দলগুলি। ~~~~~~~~~
পারমিতা চক্রবর্ত্তী - বৃদ্ধাশ্রম কি সত্যই বৃদ্ধ - আশ্রম
বৃদ্ধশ্রম (বৃদ্ধাশ্রম
নয়) নিয়ে
কিছু কথা লিখতে হবে ভাবিনি। কিন্তু এই দায় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারলাম না ৷
পাশ্চাত্য উন্নয়নশীল দেশগুলিতে শিশুশ্রম নিয়ে এত সোচ্চার কিন্তু বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে
তারা এত নীরব কেন? জাতিসংঘ, ইউনেস্কো বা
ইউএনডিপি, যাই
বলুন বৃদ্ধাশ্রমের বিপক্ষে কি তাদের কোনো প্রচারণা অাছে? সহজ উত্তর
সবার জানা। এক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ঠিক গিরগিটির মত। পাশ্চাত্যের
দেশসমূহে ভঙ্গুর পরিবারপ্রথা,
পিতৃপরিচয়হীন প্রচুর সন্তান,
মায়ের দ্বিতীয়/তৃতীয়/চতুর্থ .... বিয়ে। এসব
নানাবিধ অসঙ্গতিপূর্ণ অবস্থা পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশসমূহে দেখা যায়। ফলসরূপ
সেখানকার বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা
খুব কম ক্ষেত্রেই পারিবারিক বন্ধনের উষ্ণতা পায়। খুব অবাঞ্ছিত, কষ্টকর, মমতাহীন ও
নিঃসঙ্গ জীবন সেসব মানুষদের ৷ একা একা তাদের নিজেদের কাজ নিজেদের করতে হয় শরীর/মন না
চাইলেও। ছেলেমেয়েরা থাকে শহরের এক বা অন্যপ্রান্তে। বার্থডে, খ্রিস্টমাসে
কার্ড পাঠিয়ে উইশ করে তাদের দায়িত্ব শেষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্লব রহমান - মধ্যরাতে পাহাড়ে প্রলয়
আমরা যারা প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষার কথা বলি, তারা মানবাধিকারের দৃষ্টিতে রাজনৈতিক কারণে তো বটেই, পরিবেশগত ঝুঁকির কারণেও বহুবছর ধরে পাহাড়ে বেআইনী বসতি
স্থাপন বন্ধের কথা বলে আসছি। কিন্তু ভোটের
হিসেব কষে পাহাড়ে আদিবাসী পাহাড়িদের সংখ্যালঘু করতে, বাঙালি সেটেলার ভোট বাড়াতে দিনের পর দিন সেখানে বহিরাগতদের বসতি দেওয়া হয়েছে।
নদীভাঙা,
হত-দরিদ্র বাঙালি এসব মানুষের পাহাড়-জঙ্গল-জলা সম্পর্কে
নূন্যতম ধারণা নেই। তাই বন উজার ও গাছ কেটে লাকড়ি সংগ্রহ করা তাদের প্রধান পেশা
হয়ে দাঁড়িয়েছে। বসতি গড়তে গিয়ে যথেচ্ছ পাহাড়-টিলা কাটা ছাড়াও রয়েছে বেআইনি ইটভাটার
দৌরাত্ব। রাঙামাটি,
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে শহরের উপকন্ঠেই চোখে পড়বে পাহাড় কেটে
নাশ করা এসব ইটভাটার দৌরাত্ব। এসব নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে কিছুদিন আগেও সাংবাদিক
সহকর্মি বুদ্ধজ্যোতি চাকমা প্রভাবশালী মহলের রোষানলে পড়েছেন। আর দিনের পর দিন পাহাড় থেকে প্রাকৃতিক বন ও বড়
বড় গাছ কাটার ফলে কথিত অরণ্যভূমি পার্বত্যাঞ্চল আসলে পরিনত হয়েছে সবুজ মরুভূমিতে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শিমুল রায় সরকার - কিছু তিতকুটে স্মৃতিকথা
আমার যেটা
বিরক্তির কারণ সেটা হল মানুষের হিপোক্রেসি। এই শব্দটা যদি শ্রীজাত কোন রগরগে
কবিতায় ব্যবহার করতেন তাহলে কারো কিছু যায় আসতো না। তাহলে মোদ্দা কথা হল শব্দটা
সবার কাছে অশ্লীল মনে হচ্ছে ধর্ম এসে যাওয়াতে। তাহলে বাবা অশ্লীল, অশ্লীল করে এতো চেল্লানোর কি আছে? এতো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্হা হয়ে গেলো। আমি সবার
সামনে বলবো আমি ধর্ম মানি না অথচ ধর্মের গায়ে একটু আঁচড় পড়লেই রে রে করে উঠব। এটা কেমন তর কথা? আমি ধর্ম মানিনা,জীবনে কোনদিন
কোন অশ্লীল শব্দও ব্যবহার করিনি। পরিচিত কেউ বললেও সাপোর্টও করিনা। কিন্তু কবি,সাহিত্যিকরা কি লিখবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার । আমার ভালো না
লাগলে আমি পড়ব না। ব্যাস ফুরিয়ে গেলো কথা। তা নিয়ে এত হইচই করার কি আছে বুঝিনা
বাপু। অবশ্য আমি যে সব বুঝব এমন কোন মানে নেই। এইসব দেখে-শুনে আরো তিতকুটে লাগছে
সবকিছু। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শুভব্রত দাশগুপ্ত - প্রফেশনালিজম
মার কাছে থেকে ১০০টা টাকা ম্যানেজ করে বেরিয়ে পড়লাম। ব্যাঙ্কশাল কোর্টের সামনে
এক শীর্ণ-বৃদ্ধ টাইপিস্ট মোটা চশমা সামলে এক-এক করে চারখানা Biodata খটাখট-খটাখট শব্দে বানিয়ে হাতেহাতে ধরিয়ে দিতে লাগলেন। আমারটা চোখের সামনে
ধরতে, এক অভাবনীয় অনুভূতি আমাকে আচ্ছন্ন করল। ছাপার অক্ষরে নিজের নাম - ‘অনুপম
ভাদুড়ি’ প্রথমবার দেখতে-দেখতে স্বরন করতে লাগলাম – Professionalism show করতে
হবে!! হাঁটতে হাঁটতে ধর্মতলাতে এসে প্রথমবার ‘বিফ-রোলের’ স্বাদ
পেলাম – বাবু ভুরু নাচিয়ে বলল,
‘সব শিখতে হয়!!’ জিতু আর্তনাদ করে ওঠে, আমরা
চমকে তাকাই,
Biodataতে রোলের তেল গড়িয়ে এসে লেগেছে। মুখটা বিশ্রী করে বাবু বলে, ‘শালা!
বলদ একটা!! নে,
যা আবার টাইপ করে আন – আমরা আর যাচ্ছি না!!’~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রেজওয়ান তানিম - রবীন্দ্র চিত্রকলা: রেখায় রঙে আধুনিকতা
এ কথা প্রচলিত, রবীন্দ্রনাথ চিত্রকলায় আসেন প্রৌঢ় বয়সে। পাণ্ডুলিপির কাটাকুটি ঢেকে দেবার
জন্য উদ্দেশ্যহীন আঁকাআঁকি,
রেখায় রেখায় মেলবন্ধন, তার চিত্রকলার মূল জায়গা। শিল্পজগতে বিচরণ, ড্রয়িং এর সমালোচনামূলক মূল্যায়নে আগ্রহসৃষ্টি বেশ দেরিতে- জীবনের শেষ সতের
বছরে। রবীন্দ্রমানষে চিত্রকলার উন্মেষ কখন ঘটে এই প্রশ্নের সদুত্তর পাওয়া দুষ্কর।
একথা মনে রাখতে হবে জোড়াসাঁকোতে পারিবারিক আবহ ছিল শিল্পসাহিত্য বান্ধব এবং
সমকালীন অন্য যেকোনো পরিবারের চেয়ে অগ্রসর। তাই একথা জোর দিয়েই বলা চলে শৈশব থেকেই
চিত্রকলার সাথে তার পরিচয় ঘটে এবং তিনি তখনই চিত্রশিল্প চর্চায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন।
ক্ষিতীশ রায় উল্লেখ করেন,
তিনি রবি ঠাকুরের কিছু ড্রয়িং দেখেছেন। বুলবন ওসমান দাবি
করেন,
কবি ১৮৭৪-৮২ এই সময়কালে মালতি নামে একটি পুথির পাতায় ছবি
আঁকতেন। তবে সে ছবি প্রথাগত চিত্রশিল্পীর মত নয়, বরং নিজের খেয়ালখুশি মত, নিজের জন্যে। ~~~~~
সৈয়দ ওয়ালী- অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি ও ম্যাক্সিম
শুধুমাত্র কবিতার অন্তর্গত মহিমা ও সৌন্দর্য সৃজনের
ক্ষেত্রেই নয়,
এই কবি তার কবিতার শরীর সৃজনেও যে প্রতিটি ধবনি তথা
অক্ষর তথা শব্দের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তা তার প্রতিটি কবিতার শব্দ ব্যবহারের
পরিমিতি থেকেই অনুধাবন হয়। প্রধানত অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের সমন্বয়ে তার কাব্য
প্রয়াস সচেষ্ট থাকলেও,
প্রকাশিত এই গ্রন্থের ৭১ টি কবিতার বেশিরভাগ কবিতাই
অক্ষরবৃত্তের অমিল মুক্তক বা অতি মুক্তকে সৃজিত। কবিতাগুলো পড়ার সময় ধ্বনিগত
ত্রুটির কারণে আমাকে কোথাও হোঁচট খেতে হয়নি, কবিতার শারীরিক গঠন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি কাব্যরস আস্বাদনেও, এতোটাই স্বতস্ফূর্ত, মসৃণ এবং সাবলীল এই কবির ছন্দগত সৃজন দক্ষতা; সাধনা-লব্ধ এক সহজ-গভীর বাক্রীতির দারুণ এক উদাহরণ এই কবিতাগুলো, বিবৃতি মুলক বাক্যের পরিমিত ব্যবহার এই গ্রন্থের
কবিতাগুলোকে দান করেছে দারুণ এক সমুচ্চতা~~~~~~
মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী - রাখী পূর্ণিমা
কোনো এক রাখীতে আমার জন্ম। ঠিক জন্ম নয়, এদের ঠাকুর্দার বাবা গৃহপ্রবেশ করে ওই দিন। তারপর থেকে
প্রতি রাখীতে আমায় সাজানো হয়, রাখীর উৎসবের সাথে
সাথে আমার জন্মদিন বা বলা যেতে পারে এদের পদার্পণ দিন পালন হয়। প্রথম দিকে
সাদামাটা করে নিজেদের মতো করে দিনটা পালন হ'ত পরে সেটা
বড়সড় উৎসবে পরিণত হয়। আজও এই পরিবারের এখনের প্রজন্ম এসেছে, পালন করেছে ঠিকই, শুধু তাল
কেটে যাচ্ছিল ওদের বুঝতে পারছিলাম। ভাবছিলাম, ওদেরকে বোঝাই, যে বয়স হলে সব্বাইকে চলে যেতে হয়, আমারও হবে। তবে মানুষের মধ্যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চলে যাবার
দিনটা আগাম জানা যায় না,
আমারটা ওরা জেনে গেছে। অবশ্য আমি বয়স হিসেব করতে পারিনা, তবে,
আমি পাঁচ প্রজন্মকে দেখলাম, তাদের কতো সুখ দুঃখের সাক্ষী রইলাম। এই যে দুইবোন এদের নাম পিতু-মুন্নি; হ্যাঁ, ভালো নামও আছে
চান্দ্রেয়ী আর গরিমা। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সোনালি পপু - হাভেলীর গল্প
যমুনায় অনেক জলের ঢেউ
বয়ে যায়। লোকটির কাঁচা পাকা
দাড়িতে ঢাকা মুখের নিচের দিক। পাকার ভাগই বেশি। হাল্কা হলদে ছাপ কিছু অংশে। গোঁফের
রেখা মিলে মিশে গেছে দাড়ির সংগে। কিছু নেমে এসেছে ওপরের ঠোঁটে। এমনি গোঁফের কিছু
এলোমেলো চুল ওপরের পাতলা ঠোঁটে নেমে এলেই সোহনির হাসি পেয়ে যায়।
ইশ! কি বিচ্ছিরি রে বাবা। অস্বস্তি হয় না? আমারই
ত অস্বস্তি লাগে দেখে।
আগে দাড়িতে আরো বেশি রং ছিল ।কমলা ঘেঁষা
মেহেন্দি রং। চুলগুলো লম্বা হয়ে প্রায় কাঁধের কাছে। নিচের দিকে চুলের ডগাগুলো
কোঁকড়ানো। গোল হয়ে গুটিয়ে থাকে।
এখন চোখে সূর্মা । গায়ে
মলমলের পাতলা জামা। সাদা। কখনো হাল্কা নীল। বুকের ওপর দিয়ে কোনাকুনি এনে পাশে
রেশমের দড়ি দিয়ে বাঁধা। কোমরবন্ধ আছে। দরবারের পোষাকের মত জরি পাথর দেওয়া নয়।
হাল্কা সুতির। ঢিলেঢালা।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সোমস্নিগ্ধ মুখোপাধ্যায় - স্পর্শ
অটো ওয়ালার রোজগেরে হাঁকডাকের জন্য অপেক্ষা না
করে তিতিরকে নিয়ে অটোর মধ্যে সেঁধিয়ে যেতেই সাথে সাথে আরও দুটো লোক মউলির পাশে
অটোতে চেপে বসল। এই ছোট্ট শহরে যাতায়াতে অটোই একমাত্র ভরসা। কিন্তু পেছনে তিনজনে
এই অটোতে বসা যেন রীতিমত অস্বস্তিকর। তার উপর মউলির কোলে তিতির। কিছুদূর যাবার পরই
মউলি টের পাচ্ছিল অকারণেই বার বার মাঝের ব্যক্তির হাত মউলির কাঁধ স্পর্শ করছে।
যদিও সে জানে এ অভিজ্ঞতা মউলির বা মউলির বয়সী মেয়েদের খুব চেনা এক জীবনেরই অঙ্গ, এ দেশে। যা সে আরো
হাজার টা মউলির মতই পার করে এসেছে। মনে মনে বলে ওঠে, তিতির না থাকলে তোমার হাত দেবার ইচ্ছের গুষ্টির
ষষ্ঠী পুজো করে ছেড়ে দিতাম এখুনি। আর কেনই বা করবে না। ডাকাবুকো বলেই তো গোটা কলেজ
চিনত মউলি কে। মনে পড়ে আদ্রা লোকালে, যেদিন বাপের বয়সী লোকটা কে কান ধরা করিয়েছিল, তার পরেরদিন কলেজে সে কি খাতির! ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
সৈয়দ ওয়ালী - আমরা ভাবের পাগল, রসিক নাগর
শুধুমাত্র টেকনিক জেনে রসিক এবং রসসৃষ্টিকারী
(রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, লালন, জীবনান্দদাশ) হওয়া যায় না, হওয়া যায় না একজন হুমায়ুন
আজাদ কিংবা সব্যসাচী সৈয়দ শাম সুল হক। আমরা
অনেকেই জানি যে, হুমায়ুন আজাদ একজন ভাষা বিজ্ঞানীও বটে। কিন্তু বিশ্বাস করুন তার
ভাষা বিজ্ঞানের বই আজ পর্যন্ত আমার পড়া হয়নি অথচ তার কবিতার বই আমার সাথে সাথে
বাসে বাসে ঘোরে, কি আশ্চর্য তাই না? এমনই হয়, আমারা এই বদ্বীপরে মানুষেরাই এমন। তাই বলছিলাম, ভাব থাকতে
হয়, ভাব। ভাব
থাকলে টেকনিক অর্জন করে নেয়া যায়। আমি
এমন অনেক কবিকে তাদের সাক্ষাৎকারে বলতে
শুনেছি যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, লিখছেন না কেন, সে উত্তর দিয়েছে, লেখা আসছে
না, ভাব নেই, ভাব তাকে ছেড়ে চলে গেছে কিংবা ভাব শুকিয়ে গেছে। এই হচ্ছ আসল কথা, টেকনিক
দখলে থাকলেই লেখা বেরুবে না, রুপ-রস-গন্ধ সৃষ্টি হবে না। ভাব থাকতে হবে, এই ভাবই
আসল বস্তু। ~~~~~~~~~~~~~~~~
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)