আমার যেটা
বিরক্তির কারণ সেটা হল মানুষের হিপোক্রেসি। এই শব্দটা যদি শ্রীজাত কোন রগরগে
কবিতায় ব্যবহার করতেন তাহলে কারো কিছু যায় আসতো না। তাহলে মোদ্দা কথা হল শব্দটা
সবার কাছে অশ্লীল মনে হচ্ছে ধর্ম এসে যাওয়াতে। তাহলে বাবা অশ্লীল, অশ্লীল করে এতো চেল্লানোর কি আছে? এতো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্হা হয়ে গেলো। আমি সবার
সামনে বলবো আমি ধর্ম মানি না অথচ ধর্মের গায়ে একটু আঁচড় পড়লেই রে রে করে উঠব। এটা কেমন তর কথা? আমি ধর্ম মানিনা,জীবনে কোনদিন
কোন অশ্লীল শব্দও ব্যবহার করিনি। পরিচিত কেউ বললেও সাপোর্টও করিনা। কিন্তু কবি,সাহিত্যিকরা কি লিখবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার । আমার ভালো না
লাগলে আমি পড়ব না। ব্যাস ফুরিয়ে গেলো কথা। তা নিয়ে এত হইচই করার কি আছে বুঝিনা
বাপু। অবশ্য আমি যে সব বুঝব এমন কোন মানে নেই। এইসব দেখে-শুনে আরো তিতকুটে লাগছে
সবকিছু। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কিছু
তিতকুটে স্মৃতিকথা
শিমুল রায় সরকার
বেশ কিছুদিন
ধরেই পৃথিবীর সব কিছুই ভীষণ তিতো লাগছে। না ফেসবুক খুলতে ইচ্ছে করছে,না গান শুনতে ইচ্ছে করছে, আর এখন তো অন্য কোথাও যাবো সেই উপায়ও নেই কারণ মেয়ের পরীক্ষা চলছে। ফেসবুক
খুললেই সেই শ্রীজাত'র অধার্মিক কবিতা নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডা।সেই সব পড়তে পড়তে
মন মেজাজ আরো তিতো- তিতো হয়ে যাচ্ছে। As if শ্রীজাত যেন এই প্রথম তাঁর কবিতায় অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করলেন। এর আগেও শ্রীজাত
বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন যেগুলোতে অনেক বেশী অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। তখন
ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল। কারণ সেগুলো ছিলো নারীর অধিকার নিয়ে। আসলে তাঁর রিসেন্ট কবিতার মাঝখানে ত্রিসুল এসে
যাওয়াতেই যত বিপত্তি। এই অবধি পড়ে কেউ আবার ভেবে বসবেন না যে আমি শ্রীজাতর চরম
ভক্ত। মোটেই তা নয়। আমার যেটা বিরক্তির কারণ সেটা হল মানুষের হিপোক্রেসি। এই শব্দটা
যদি শ্রীজাত কোন রগরগে কবিতায় ব্যবহার করতেন তাহলে কারো কিছু যায় আসতো না। তাহলে
মোদ্দা কথা হল শব্দটা সবার কাছে অশ্লীল মনে হচ্ছে ধর্ম এসে যাওয়াতে। তাহলে বাবা
অশ্লীল,
অশ্লীল করে এতো চেল্লানোর কি আছে? এতো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্হা হয়ে গেলো। আমি সবার
সামনে বলবো আমি ধর্ম মানি না অথচ ধর্মের গায়ে একটু আঁচড় পড়লেই রে রে করে উঠব। এটা কেমন তর কথা?
আমি ধর্ম
মানিনা,জীবনে কোনদিন কোন অশ্লীল শব্দও ব্যবহার করিনি। পরিচিত কেউ
বললেও সাপোর্টও করিনা। কিন্তু কবি,সাহিত্যিকরা
কি লিখবেন সেটা তাঁদের ব্যাপার । আমার ভালো না লাগলে আমি পড়ব না। ব্যাস ফুরিয়ে
গেলো কথা। তা নিয়ে এত হইচই করার কি আছে বুঝিনা বাপু। অবশ্য আমি যে সব বুঝব এমন কোন
মানে নেই। এইসব দেখে-শুনে আরো তিতকুটে লাগছে সবকিছু। এটা শুনে আমার কর্তা,ছেলে-মেয়ে বলল,"এ আর নতুন কি?
তুমি তো চিরকালের তিতো তাই সবকিছুই তোমার কাছে তেতো লাগবে"!
বোঝ! ভুল অবশ্য কিছু বলেনি। আমার পরিচিতরা আমার সামনেই আমাকে তিতকুটে মহিলা বলে, অল্প পরিচিতরা আমার আড়ালে বলে। কি করা! মেনে নিয়েছি।
ছোটবেলায় কেউ একজন মাকে বলেছিলেন,
....."দিদি
মেয়ে জন্মানোর পর ওর মুখে কি একটুও মধু দাও নি!"
আমি ঝাঁ ঝাঁ
করে বলেছিলাম,
...."তাতে
তোমার কি কাকিমা"!
আমি এমনি
তেতো যে বাবার এক বন্ধুর ছেলে আমার হাসির সাথে মোনালিসার হাসির তুলনা করায় আমি তার হাতে গরম চা ঢেলে
দিয়েছিলাম।
আমার স্কুল
লাইফে কাউকে ভীষণ ভালো লেগেছিল। পরে শুনলাম সে আমাদেরই এক বান্ধবীর প্রেমিক। সোজা
একদিন দুজনকে পাকড়াও করে বললাম,
...."মিশুদা শুধু রূপালির
জন্য তোমায় মুক্তি দিলাম। না হলে
এজন্মে তুমি আমার হাত থেকে মুক্তি পেতে
না!'
আমার কথা শুনে
রূপালি ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
......'তোর মতো তিতকুটে মেয়েরও তাহলে কাউকে ভালো লাগে!'
.....
"হুঁ ,লাগলো তো । কিন্তু মিশুদা যে তোর মতো ঢঙিকে কি করে পছন্দ
করল ,সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি।"
রূপালির
মুখটা থমথমে হয়ে গেলো। অবস্থা বেগতিক দেখে
মিশুদা হেসে,আমার মাথায়
একটা স্নেহের গাট্টা মেরে বলেছিল,
....."তুই
এত তিতকুটে কেন রে?" সেই মিশুদার সাথে দেখা বছর দুই আগে। অত সুন্দর চেহারার যুবক
কেমন ক্ষয়াটে,বুড়ো মার্কা হয়ে গেছে। বললাম,"কি চেহারা হয়েছো গো তোমার?" বলে,
....."কি
করব বল,জীবন সংগ্রামে লড়তে লড়তে আমার এই হাল। সুগার প্রেসার সব
নিয়ে নাজেহাল।
তোদের মতো
যদি আরামে থাকতাম তাহলে ভালো থাকতাম"। আমি হেসে বললাম,
....."হুঁ
আমি তো হুর পরি তাই বেহস্তে থাকি আর তাই আমার কোন জীবন সংগ্রাম নেই! তখন যদি ওই
পেত্নীকে বাদ দিয়ে এই পরিকে পছন্দ করতে
তাহলে তুমিও আজ বেহস্তে থাকতে।" কথোপকথনের সময় আমার পাশে আমার বর আর ওর পাশে
ওর বউ রূপালিও ছিলো। রূপালি হেসে বলল,
......"
তুই কি একটুও পাল্টাসনি এত বছরেও !?" মিশুদা আবার একটা স্নেহের গাট্টা
মাথায় মেরে বলেছিল,
...."তুই
এখনও একইরকম তেতো আছিস!"
আমার বর সায়
দিয়ে বলেছিল,
........"
ঠিক বলেছেন ওর এই তিতকুটে ভাব আর এই জীবনে যাবে না। আমার জীবনটাও তেতো হয়ে গেছে এর
পাল্লায় পড়ে।"
আমার হাত
ভেঙে যাওয়ায় 12th
এর পর কলেজে যেতে একমাস মতো দেরী হয়েছিল। হস্টেলেও তাই। আমি
যখন হোস্টেলে গেলাম তখন ragging
পর্ব শেষ। আমিও মহা আনন্দে আমার রূমমেটদের বললাম,
....."যাক
বাবা বাঁচা গেলো। না হলে একটা অনর্থ বেঁধে যেতো!"
কিন্তু ভগবান
বোধহয় আড়াল থেকে শুনে হাসছিলেন। হোস্টেলে যাওয়ার পাঁচ দিন পরে ডিনার খাওয়ার পরেই
কমন রূমে আমার তলব পড়ল। আমি মনে মনে সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে কমনরুমে গেলাম। গিয়ে
দেখি সব সিনিয়র দিদিরা বসে। মধ্যমনি অনামিকাদি। এই অনামিকাদির পরিচয় প্রথম দিনই
পেয়েছিলাম। কলেজের নেত্রী,পড়াশোনায় দূর্ধর্ষ আর দেখতে পুরো বলিউডের রেখার মতো। সবাই
বেশ সমীহ করে। আমারও অনামিকাদিকে বেশ
লাগত। একদম ন্যাকা ন্যাকা টাইপের নয় বলেই। তো সেই অনামিকা দি আমাকে ডেকে বলল,
........ কি
রে একমাস পরে এলি কেন?ragging
এর ভয়ে?
আমি
স্মার্টলি উত্তর দিলাম,
....... ওই
সব ভয় আমি পাই না। আমার হাত ভাঙা ছিলো তাই আসতে পারিনি।
অনামিকাদি
মুখে একটা চুক চুক শব্দ করে বলল,
......কেন
খুকি?
কেউ কি লেঙ্গী মেরেছিল,সেই দুঃখে
ঝাঁপ দিয়ে সুইসাইড করতে গিয়েছিলে?
বাকিরা তখন
মুখ টিপে হাসতে শুরু করে দিয়েছে। বুঝলাম আজ এরা আমাকে সহজে ছাড়বে না। খুকি,লেঙ্গী মারা শব্দ দুটো শুনেই মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল,তাও শান্ত ভাবে বললাম,
........ না ,ঘরের ঝুল ঝাড়তে গিয়ে খাট থেকে পড়ে গিয়েছিলাম।
হল শুদ্ধ
দিদিরা হো হো করে হেসে উঠল আর অনামিকাদি বলল,
.........
ওরে তোরা থাম,সুবোধ বালিকা বহুদিন পরে হাতে পেয়েছি,আজ রাতটা জমে যাবে। এই খুকি তুই কি কি জানিস? নাচ -গান -আবৃত্তি ? নিশ্চয়
রান্নাও করতে পারিস!"
আমার তখন
রাগে সারা শরীর রি রি করছিল,একটু গম্ভীর ভাবেই
বললাম,
.........না
ওসব কিছু পারিনা,বেদম মারপিট করতে পারি,বাইক চালাতে
পারি আর তুমুল ঝগড়া করতে পারি,গাছে চড়তে পারি,সাঁতার কেটে নদী এপার ওপার করতে পারি।
........ থাক
,আর বলতে হবে না কি কি পারো,এবার সোনামনি একটা নাচ দেখাও তো। হিন্দি কোন ছবির নাচ।
অনামিকাদি
গুছিয়ে বসে order
করল।
একে আমি নাচ
জানি না তারপর আমার তখন একটাই হিন্দি সিনেমা দেখা(হাতি মেরে সাথি),হিন্দি নাচ কি বস্তু তাই জানিনা তো কি করে নাচব। কি করে
রেহাই পাবো তাই ভাবছি,তেরিয়া হয়ে প্রশ্ন করলাম,
........যদি
না করি কি করবে?
........কিছু
না,রাতের খাওয়ার সব বাসন গুলো মাঝতে হবে আর রান্নার বাসন
গুলোও।
এটা শুনে
আমার চোখ কপালে,মনে মনে ভাবলাম 'এতো আরো কঠিন
কাজ"। শুনেছিলাম অনামিকাদি
দারুণ দাবা খেলে।আমিও দারুণ না খেললেও ভালই পারি। একটা চান্স নিতে চাইলাম,বললাম,
....... একটা
শর্ত আছে।
বাকিরা হই হই
করে উঠল।অনামিকাদি ওদের থামিয়ে দিয়ে ,উঠে এসে আমার
চোখে চোখ রেখে বলল,
......কি
শর্ত?
......আমাকে
দাবায় হারাতে পারলে আমি তোমাদের হিন্দি ডান্স দেখাবো।
.........
"বেশ তবে তাই হোক।এই তোরা কেউ আমার ঘর থেকে দাবার বোর্ডটা নিয়ে আয়।"
শুরু হল এক
অসম প্রতিযোগিতা ,
পুরো হস্টেলের মেয়েরা তখন কমনরুমে। অনামিকাদি যত এ্যাটাকে
যায় আমি তত ডিফেন্সিভ খেলতে থাকি।
সত্যিই অসাধারণ খেলছিল অনামিকাদি,একটা সময় মনে হতে লাগলো আমি হেরে যাবো কারণ আমার তখন বেঁচে
শুধু মন্ত্রী,একটা বোড়ে ,দুটো নৌকো আর
দু একটা সৈন্য। বারতিনেক চেকও খেয়েছি। তবু লড়ে যাচ্ছি প্রাণপন। একসময় দেখলাম তিনটে
বাজে,চোখে ঘুম জড়িয়ে আসছে,মাথাও আর কাজ
করতে চাইছে না বুঝতে পারছি এবার হেরে যাবো। কি করি ভাবতে ভাবতেই দিলাম দাবার বোর্ড
উল্টে। অনামিকাদি রেগে বলে উঠল ,
.......এটা
কি হলো?
আমি আর
নিজেকে ধরে না রাখতে পেরে বললাম,
.....বেশ
করেছি,আমি কিছুই করবো না ,দেখি তোমরা
কি করতে পারো!বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমি চিৎকার করবো। মেট্রনকে ডাকব।নিজেদের কি ভাবো
তোমরা?
আমি দরকারে হাত চালাতেও পারি"
একসঙ্গে
এতগুলো কথা বলে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম।ঘরে তখন পিনড্রপ সাইলেন্ট।দেখলাম অনামিকাদির মুখ
থমথম করছে।
........
শর্ত তুই দিয়েছিলি,শর্তের খেলাপ তুইই করলি ,এর ফল কি হয় কাল কলেজে গিয়েই দেখতে পাবি।এই তোরা শুতে যা।সবাই চলে যেতে উদ্যত হলে আমি অনামিকাদির হাতটা ধরে চোখে
চোখ রেখে বললাম,
......সে না
হয় কাল আমিও দেখে নেবো কি করো তোমরা। তবে একটা কথা ,দরকারে হাত চালাতে পারি কথাটা withdrew করলাম।আমি জংলি হতে পারি কিন্তু তোমাদের গায়ে হাত তুলতাম না।দেখো আমি যা
জানিনা তা যদি জোর করে করতে বলো সেটা আমি কিছুতেই করব না। এরপর তোমাদের যা ইচ্ছে
তোমরা করতে পারো,আমিও প্রস্তুত থাকব।
তারপর সত্যিই
আর কিছু হয়নি কিন্তু সেইদিন থেকেই অনামিকাদির সাথে সম্পর্কটা তিতকুটে হয়ে গেলো।
বছর খানেক পর অবশ্য ভালো হয়েছিল সম্পর্কটা , তবে সেটা
অন্য গল্প।
আমরা তখন
কলেজের নতুন ব্যাচ। সবে সবে হোস্টেলে এসেছি।প্রায়ই বাড়ির জন্য মন খারাপ করত।তখন তো
ফোনের সুবিধা ছিল না তাই চিঠি লিখতাম প্রতি সপ্তাহে। আমাদের কলেজের গায়েই পোস্ট
অফিস ছিল,
আর উল্টোদিকে ছিল পলিটেকনিক কলেজের হোস্টেল। আমরা চিঠি
পোস্ট করতে গেলেই ,ওই হোস্টেলের সব ছেলেরা তিনতলার জানলায় বসে আমাদের নানারকম
কুটক্তি করত। ক্রমশঃ সেটা বাড়তে লাগলো। কলেজ যাওয়ার পথে ,কলেজ থেকে ফেরার পথে। পুরো বাঁদরের দল যাকে বলে। একদিন আর
সহ্য করতে পারলাম না। একটা ঠিল কুড়িয়ে ছুঁড়ে মারলাম একটা জানলা তাক করে, কারো লাগেনি কিন্তু জানলার কাঁচ ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল। বললাম,
........বাঁদরের
দল,তোদের যদি সাহস থাকে সামনে আয়।
আমার অন্য
বন্ধুরা তখন ভয়ে থরহরি কম্প। আমি তখন ডেসপারেট মনে মনে বললাম,"আজ এর সমাধান করেই আমি ছাড়ব।" বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে
থাকলাম,
দেখলাম কেউ নামল না ,অনেক জানলা
তখন খালি,কেউ কেউ দাঁত বের করে মজা দেখছে। বন্ধুদের বললাম,
..... চল
থানায় যাই।
দু একজন রাজি
হলো না যেতে ,তারা হোস্টেলে ফিরে গেলো। আমরা পাঁচ ছজন মিলে থানায় গেলাম।
সব বলে কয়ে,রিপোর্ট লিখিয়ে যখন ফিরে আসছি তখন শুনলাম থানার অল্প বয়সী
এক অফিসার আর একজন অফিসারকে বলছে,
.........
এমন দারুণ দারুণ মাল দেখলে শালা আমাদেরই মাথার ঠিক থাকে না তো ওই বাচ্চাগুলোর কি দোষ।
মাথায় চড়াং
করে রক্ত উঠে গেলো,সোজা ওই অফিসারের সামনে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম,
......কি
বললেন আর একবার আমার সামনে বলুন।
অফিসারের
অবস্থা তখন তথৈবচ। তবুও স্মার্টলি উত্তর
দেওয়ার চেষ্টা করল,
..... না
মানে আপনাদের কিছু বলিনি।
আমি টেবিল
চাপড়ে বললাম ,
........
"আলবৎ বলেছেন,আপনি জানেন আমি কে?"
দিলাম বলে তখনকার বাম ঘরানার এক প্রোথিতযশা
মন্ত্রীর নাম। যিনি আবার আমার বাবার খুব ভালো বন্ধুও ছিলেন। ব্যাস! যা ভেবেছিলাম
তাই হলো। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা টমা চেয়ে একাকার। আশ্বাস দিল আজকের মধ্যেই ওই বজ্জাত
গুলোকে শায়েস্তা করার।বীরদর্পে হোস্টেলে ফিরে এলাম। পরদিন কলেজে যেতে যেতে ভাবছি
কি হয় !কি হয়! ওমা কলেজের সামনে গিয়ে দেখি ওই পলিটেকনিক হোস্টেলের তিনতলার সব
জানলা বন্ধ,একটা দুটো খোলা ছিল ,আমাদের দেখেই
কিনা জানিনা সঙে সঙে খোলা জানলাগুলো সব বন্ধ হয়ে গেলো।আহা! কি যে আনন্দ পেয়েছিলাম
সেইদিন কি বলবো। কলেজে ঢুকতেই এক সিনিয়র দাদা বলল,
........ মা,তোর চরণ দুখানি একবার ধরতে দে । দু বছরে আমরা যা পারলাম না
তা তুই এক মাসের মধ্যে কি করে করলি?
আমি মুচকি
হেসে বললাম,
......."সব
পলিটিক্স দাদা। ও তুমি বুঝবে না।"
সত্যিই
সত্যিই তারপর যতদিন ছিলাম হোস্টেলে আমাদের যাওয়া আসার পথে ওই পলিটেকনিক হোস্টেলের
জানলা আর খোলা দেখি নি। পরে শুনেছিলাম ওরা আমার একটা নাম দিয়েছিল ,"লৌহ মানবী।"
আমি কতখানি
তিতকুটে সেটা আর একটা গল্প না বললে ঠিকঠাক হবে না।
এক
বৃষ্টিভেজা দিনের গল্প। আমাদের ডিপার্টমেন্টের দুজন স্যার সেদিন অনুপস্থিত। সবাই
দল বেঁধে ক্যান্টিনে গেলো।আমার আবার ক্যান্টিনের প্রতি একটু এ্যালার্জি ছিল তাই
যেতাম না।ওরা চলে যাওয়ার পর আমি আমাদের ডিপার্টমেন্টের পাশেই একটা লাগোয়া আধা তৈরি
হওয়া বিল্ডিং ছিল যেটা আমাদের ক্লাসরুম থেকেই যাওয়া যেতো।বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি।
আমি একাই অর্ধেক হওয়া বিল্ডিং এর একটা পাঁচিলের উপর বসে তন্ময় হয়ে বৃষ্টির জলকেলি
দেখছিলাম কলেজের পিছনের বিশাল দীঘিতে। চারিদিক সাদা বৃষ্টির চাদরে,দূরের সবুজ জঙ্গলও ঝাপসা। ছাদে বৃষ্টির জলতরঙে বুঁদ হয়ে আছি
হঠাৎ শুনি পাশে কে যেন গান গাইছে,
"এই
বৃষ্টিতে ভিজে মাঠে চল চল যাই"।
ঘাড় ঘুরিয়ে
দেখি আমাদের কলেজের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছেলেটা বসে। লোকাল ছেলে বলে সবাই একটু সমীহ করে।
নাম শুনেছিলাম আগেই সেইদিন প্রথম দেখলাম। একরাশ বিরক্তি নিয়ে উঠে আসলাম। আসতে গিয়ে
বিপত্তি,দেখি শাড়ির আঁচলে একটা টান আর সাথে ওড্ডুর গান,"আর একটু বসো,চলে যেয়ো না।"
কোনকিছু না
দেখেই ঘুরে সপাটে এক চড় মারলাম গুড্ডুর গালে। গুড্ডু অবাক হয়ে গালে হাত দিয়ে বলল,
....."তুই
আমাকে মারলি কেন?"
........তোর
তো সাহস কম নয়,অন্যায় করে আবার উঁচু গলায় কথা বলছিস? আমি রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বললাম।
......যাচ্চলে
গান গাওয়া আবার কবের থেকে অন্যায় কাজ হলো!?
.......গান
গাওয়াটা অন্যায় নয় কিন্তু আমার শাড়ির আঁচল ধরে গান গাওয়াটা অবশ্যই অন্যায়।
.......আমি
তোর শাড়ির আঁচল ধরলাম কোথায়? বলেই আমার চোখের
সামনে ওর হাতদুটো তুলে ধরল।
সত্যিই তো ওর
হাত খালি ,তাকিয়ে দেখলাম আমার বেআক্কেল শাড়ির আঁচলটা পাশের পিলারের
খোঁচায় আটকে আছে। কিন্তু আমি তো দমে যাওয়ার মেয়ে নয়,বললাম ,
......এইসময়
আমাকে দেখে তোর এই গান গাওটাই অন্যায়। ভবিষ্যতে আর এমন করলে তখনও মারব।
........তোর
কি সাহস মাইরি! একটা লোকাল ছেলের গায়ে হাত তুলে দিলি? ভেবেছিস এরপর তোর কি হবে?
........যা
হবে হবে,তায় বলে তোদের ভয় পেতে হবে নাকি?
......গুরু
তোকে দন্ডবৎ। শালা জীবনে এমন বিটকেলে মেয়ে আমি দেখিনি।যাক গে ক্ষমা ঘেন্না করে
দিলাম তোর এই সাহসের জন্য কিন্তু প্লিজ কাউকে বলবি না আমাকে চড় মেরেছিস আজ।তাহলে
আমার প্রেস্টিজ পুরো ফুস হয়ে যাবে।
ওর কাকুতি
মিনতি দেখে বললাম,
.....এমন
আর না করলে বলবো না।
যাইহোক পরে
গুড্ডুর সাথে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল কিন্তু সময় বুঝে গান গাওয়াটা ছাড়েনি
কোনদিন। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও মেনে নিয়েছিলাম পরের দিকে।
কলেজে আর
হোস্টেলের ওই তিনবছর কোনদিন ভুলব না। আজ সবাই কোথায় হারিয়ে গেছে শুধু স্মৃতিগুলো
অমলিন রয়ে গেছে। জীবনের সেরা সময়গুলো কাটিয়েছি ওখানেই।আমাকে নিয়ে অনেকের অনেক
তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকতে পারে ,আমার কিন্তু পুরোটায়
মধু। এই তিতকুটে স্বভাবের জন্য হয়তো অনেক কিছু হারিয়েছি জীবনে কিন্তু পিছন ফিরে
যখন দেখি তখন কোথাও কোন আফসোসের ছায়া দেখতে পাইনা।বন্ধুরা,আপনজনেরা আমার এই তিক্ত স্বভাবকে মেনে নিয়েই আমায় ভালোবাসে।
আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ সবার কাছে।
শিমুল
রায় সরকার