রংরুট * সম্পাদকীয়

সমাজ সংস্কৃতি সমকাল। আমাদের অস্তিত্বের তিনটি স্তম্ভ স্বরূপ। আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যক্তি আমির স্বরূপ গড়ে ওঠে কিন্তু এই তিনটি বিষয়ের ঘাত প্রতিঘাতের সংমিশ্রনেই। সেই ব্যক্তি আমির স্বরূপ সমষ্টির দিগন্তে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে হয়তো সেইটাই আমাদের প্রত্যেকের নিজের নিজের পথ। আবার সেই পথের কতটুকু রংরুট আর কতটুকু নয়, সে বিচার কালান্তরের হলেও সমকাল কিভাবে সেই ব্যক্তি আমির দর্পনে দৃশ্যমান সেটিও বড়ো কথা। তাই আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সমকাল কি ভাবে আমাদের গড়ে তুলছে, বা একটু উল্টো দিক দিয়ে বললে, কিভাবে আমরা আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সমকালকেও রূপ দিচ্ছি, আর সেই দেওয়ার পথ রংরুট না মনুষ্যত্বের দিগন্ত প্রসারী রাজপথ সেই দিকেই আলোকপাত করার উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও বাসনা নিয়ে হাজির ভিন্ন স্বাদের ত্রৈমাসিক ‘রংরুট’। সমাজ সংস্কৃতি সমকালের বলিষ্ঠ দর্পন।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

সুর সঙ্গীত গীতিধারায় কাজী নজরুল * ঝিলিমিলি


তবে চারপাশের মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত সুরের গুঞ্জনরণের যে ভান্ডার তা থেকে নজরুল সুর আহরণ করেছিলেন। পথে না নামলে পথের কিনারা হয় না, সে আমরা যে কোন সময়ে উপলব্ধি করে থাকি। পথের মাঝে মূল্যবান যে রত্নটি আছে,তাকেও চিনে নিতে হয়, খোঁজার পদ্ধতি জানা চাই সে রত্ন কুড়িয়ে নিলেও কোন না কোন মুহুর্তে তা কাজে লাগবে। তাই বুঝি নজরুল নিতান্ত অজানা কোন পথচারী, ভিখারী,মাঝি-মাল্লার কন্ঠ থেকে এমন কি রাস্তায় বসে যে কাওয়াল রুজী সংগ্রহ করে তাদের কাছে থেকেও সুরের বিচিত্র রঙ খুঁজেছেন। চট্টগ্রাম এবং সন্দ্বীপে বেড়াতে গিয়ে কবি রচনা করেছিলেন ভাটিয়ালী আর সাম্পানের গান। মাঝি মাল্লাদের সুরের অবদানকে তিনি অকুণ্ঠে স্বীকার করেন। এভাবে সুর সংগ্রহের ধারাটি নজরুল গীতির উল্লেখযোগ্য সম্পদ।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

মুক্তিযুদ্ধের রাজনীতি বনাম আওয়ামী লীগের রাজনীতি * শামসুজ্জোহা মানিক


প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগকে সামনে রেখে ভারত-সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ন্ত্রণ করল। ভারত-সরকার বাংলাদেশে একটি প্রকৃত সেকিউলার কিংবা লোকবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মোটেই আগ্রহী ছিল না। কারণ সেটা পশ্চিম বঙ্গ ও ত্রিপুরার সামনে বঙ্গের পুনরেকত্রীকরণের বাস্তবতা হাজির করতে পারত, যেটা ভারত-রাষ্ট্রের অখণ্ডতার জন্য হুমকির কারণ হতে পারত কিংবা ভারতের বিদ্যমান কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থাকে দুর্বল করতে পারত। অন্যদিকে বঙ্গের পুনরেকত্রীকরণ না ঘটলেও ভারত তৎকালীন পূর্ব বঙ্গে এমন কোনও মুক্তিযুদ্ধও চায় নাই যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের নিকট থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাকে এ বঙ্গে ভেঙ্গে ফেলতে পারত। সেটাও ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা গড়ে তোলা এবং রেখে যাওয়া উত্তর-উপনিবেশিক ভারতের রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারত। অর্থাৎ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের আশ্রয়ে ও সাহায্যে যে সুবিধাভোগী শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহ গড়ে উঠেছিল উপনিবেশিক ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষার মধ্যেই তাদের স্বার্থ নিহিত। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ভাষা চিত্র * অমলেন্দু চন্দ

দেখা যাচ্ছে যে এক হাজার বা তার বেশী বছর ধরে একটা ভাষার সুত্রপাত হয়ে ম্যাচিওর করল তার সম্পূর্ণ নিজস্ব একটা পরিশীলিত ব্যাকারন নিয়ে, সেই ভাষার জন্ম প্রক্রিয়াটাই অনেকটা ধুসর ছায়াচ্ছন্ন, যদিও তাকে ইন্ডো ইরানিয়ান বংশোদ্ভূত ভাষা বলে নামাঙ্কন করা হয়ে গেল। এবং আর্য অনার্য ভাগের প্রসঙ্গে সেই একই ভৌগলিক খন্ডে বসবাস করা সবাই কি সংস্কৃতে কথা বলত, নাকি অনার্য দের ভাষা আলাদা ছিল, নাকি আর্যরাই অনার্য দের ভাষাটাকে অ্যাসিমিলেট করে নিয়েছিল। আনুমানিক ছাড়া শব্দ বর্ন ভিত্তিক পরিষ্কার উত্তর নেই, বিচ্ছিন্ন ভাবে বর্ণের ধ্বনিমাত্রার সাযুজ্যে বিভিন্ন সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে তত্ত্বগত ভাবে মজার ব্যাপার হল ভাষা তাত্ত্বিকেরা বলেন যেরকম ইরানিয়ান যেন্দা ভেস্তা তে যোরোয়াস্টারিয়ান দের কোন, আমরা যাকে বলছি মাইগ্রেসানের সুত্রে “এক্সটারন্যাল হোমল্যান্ড” এর সঙ্কেত দেওয়া নেই সেইরকম ঋগ বেদেও আর্য বংশোদ্ভূত দের কোন এক্সটারন্যাল হোমল্যান্ড এর সঙ্কেত নেই। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

তোমার আলোয় তোমায় দেখি * কাকলি ভট্টাচার্য্য

"রাজা"--থেকেই রবীন্দ্রনাথের প্রকৃত তত্ত্ব প্রধান নাটকের যাত্রা শুরু। যেখানে দেখান হয়েছে প্রকৃত প্রেমের দহন ও মুক্তি। "অচলায়াতনে" - সংস্কারের যাবতীয় বন্ধনকে ছিন্ন করবার আহবান জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। "ডাকঘর" - নাটকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু ভাবনা এক শিশুর মানসপটে আত্মপ্রকাশ করেছে। রবীন্দ্রনাথ এই নাটক সম্পর্কে বলেছিলেন ' এর মধ্যে গল্প নেই। এ গদ্য লিরিক।'  "ফাল্গুনী"র মধ্যে দিয়ে পুরাতন কেই নতুন করে দেখেছেন এই মহা- নাট্যকার। মুক্তধারা নাটকে যন্ত্রসভ্যতার নিরমমতার বিরুদ্ধে প্রান দিয়েছেন এই নাটকের নায়ক অভিজিৎ"রক্তকরবী" তে পাশ্চাত্যের ধনতান্ত্রিক সভ্যতার অন্তরালে যে অন্তসারশূন্যতা আছে তাকেই তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ। এই নাটকের নায়িকা নন্দিনী সম্পর্কে জানিয়েছেন" মাটির উপরিতলে যেখানে রূপের নৃত্য যেখানে প্রেমের লীলা, নন্দিনী সেই সহজ সুখের, সহজ সৌন্দর্যের।" কালের যাত্রায়"-- রবীন্দ্রনাথ পরিবর্তনশীল এক চিরন্তন সত্যকে উচ্চারন করেছেন। ক্ষমতার মহে শাসক দল মানুষকে উপেক্ষা করলে আবার আসে উলটো রথের পালা। তখন ঘটে উচুতে নিচুতে বোঝাপড়া।   ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও আমরা * শ্রীশুভ্র

আমরা সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘরে উঁকি দিই না কখনোই। আমরা চোখবুঁজেই আবিশ্ব সন্ত্রাসবাদের জনক ও পরিচালিকা শক্তির উল্টো দিকে তাকিয়ে থেকে সন্ত্রাসবাদের মুণ্ডপাত করতেই বেশি সচ্ছন্দ বোধ করি। আমাদের এই কপটতাই প্রতিটি মৃত্যুমিছিলের পরবর্তীটির দিকে এগিয়ে দেয় আমাদেরই সহনাগরিকদের। আমরা একটি বিস্ফোরণ থেকে পরবর্তীটির অপেক্ষায় দিন গুনি। আর এই ভাবেই আমাদেরই হাতে গড়ে তোলা নিয়তির কোলে আমাদেরই কেউ কেউ  হয়তো ঢলে পড়বো কোন একদিন পরবর্তী কোন মৃত্যুমিছিলের রক্তস্নাত লগ্নে পা মিলিয়েতাই এই মৃত্যুমিছিল কিন্তু চলতেই থাকবে। আর আমরা যারা বেঁচে যাবো এক একটা মৃত্যুমিছিল থেকে, তারা চোখবুঁজে কান বন্ধ করে নিজেদের স্ব স্ব মৌলিক বিচারবুদ্ধির মুখাগ্নি করে মিডিয়ার প্রতিধ্বনীতে সরব হয়ে উঠবো। বদ্ধমুষ্ঠি উত্তলন করে বলবো সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

জীবনচর্চায় নান্দনিকতার স্থিতি * শাখা নির্ভানা


কেন আমরা খুজতে যাব শিল্প-সাহিত্যের মৌলিকতা? কেনইবা জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে যাব শিল্পের নান্দনিকতা? যা দিন কাল পড়েছে, যেখানে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার মতন বিষয় মুখ থুবড়ে পড়ছে। যেখানে পুরো জাতির উপরে চেপে বসে গেছে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা। সেখানে তো কবিতার বদলে শিখতে হবে খিস্তি-খেউড়, গিটারের বদলে প্রশিক্ষন নিতে হবে পাটকেল ছোড়ার। এসব মৌলিক প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়- এই দড়াটানাটানি একদিন থাকবে না, সেদিন নান্দনিকতার যে বিপুল চাহিদা তৈরী হবে, তা মিটবে কি দিয়ে? যুদ্ধের পরীখার ভিতরেও গর্ভবতী মা সন্তান প্রসব করে। আগ্নেয়গীরির পাশেও প্রেমিক-প্রেমিকার রোমাঞ্চের চাহিদা তৈরি হয়। আজ যদি আমরা মৌলিক শিল্প সৃজনের দিকে মনযোগী না হই তবে, সাহিত্য-ব্যবসায়ীরা ততপর হবে, মুনাফা লুটবে সস্তা বিনোদনের বদলে। বিনোদনের সাথে যে কিছু শিক্ষাও দিতে হয়, সে ভাবনা তো থাকে মৌলিক শিল্পানুরাগীর অন্তরে।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বেণীমাধবের হয়রানি * সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়


ছবি এই ক'দিন ভাল মুখে কথা বলেনি। ভাতের থালা মুড়ির বাটি এমন ভাবে সামনে ধরে দিচ্ছে যে ভাত মুড়ি কোলে ছিটকে উঠছে। কাল দুপুরে দোকান থেকে ফিরে দেখে তপতপে মুখে সুটকেশ গোছাচ্ছে। এমন পরঢলানে পুরুষমানুষের ঘর করার থেকে বাপের ভিটেয় গিয়ে নাকি গলায় দড়ি দেওয়াও সম্মানের । রান্নাঘরের বার উঠোনে সকালে মধুকে দিয়ে পাঠানো পাকা জ্যান্ত রুইটা মরা কাঠ হয়ে পড়ে আছে। রান্নাবান্না কিছুই হয় নি। পর পর তিনটে প্রশ্ন একসঙ্গে বেণীর মাথায় ভিড় করে এল ... মাছটা এখনও বেড়ালে নেয় নি কি করে? দুপুরে খাওয়া দাওয়া কি আদৌ জুটবে না? আর সবচেয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা হল গলায় দড়ি দিতে হলে বাপের বাড়ি গিয়ে কেন? ওদের গাঁয়ে কি বড় গাছ নেই! শেষ প্রশ্নটা ভেবেই বেণীমাধব নিজেকে দু গালে চড়াল। এসব কথাও মাথায় আসে এই আপৎকালে !~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বিভাজন ও ভারতের ইতিহাস * অলভ্য ঘোষ

ধর্ম দিয়ে শোষিত; বঞ্চিত নিপীড়িত মানুষকে সহজে বিচ্ছিন্ন করে রাখা যায়। অসাম্য, অত্যাচার ধর্মের আফিম খাইয়ে ভোলানো গেলে সহজেই সংঘবদ্ধ সংগ্রামের শিরদাঁড়া ভেঙে লড়াইয়ের চেতনাকে অসাড় করে দেওয়া যায়। ধর্মীয় বিচ্ছিন্নতার আবির্ভাব ঘটিয়ে সাধারণের লড়াই সংগ্রামের সামর্থ্যকে ধ্বংস করে শাসক ও ধর্মের পাণ্ডারা চায় শর্তহীন আনুগত্য। শাসকের অনুগত করে তোলা ধর্মের নামে রাজনীতির লক্ষ্য। বিশ্বপ্রেম বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি বুলির আড়ালে সাম্রাজ্যবাদী শোষণ ও আগ্রাসন চালিয়ে চলেছে। আর শোষণ ও পীড়নের বিরুদ্ধে যখন মানুষ মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছে; তখনই নিপীড়নের যন্ত্রণার অভিমুখ ঘুরিয়ে দিতে ধর্মের বলির কাঠে মানুষকে বিভাজন করে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। দমন হয়েছে বিক্ষোভ বিদ্রোহ।  আর যেখানে ধর্মের আফিম গেলানোর কর্মটি ব্যর্থ হয়েছে নেমে এসেছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ধনতান্ত্রিক শোষণের তীব্রতার সাথে সাথেই এই উপমহাদেশে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে ধর্মের নামে রাজনীতি। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

ধর্ম নিরপেক্ষতা * রওশন আরা বেগম


ইহজাগতিক ভাবনার ক্ষেত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রয়োজন অপরিসীম। আর এই ধর্মের থেকে চিন্তার মুক্তিতেই ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ সম্পুর্ণ হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা আধুনিক রাষ্ট্রের মূলনীতি বলেই স্বীকৃত হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি একেবারেই অসত্য। ধর্মের সাথে যে রাষ্ট্রের সম্পর্ক নেই তা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে তাই বোঝায় রাষ্ট্রীয় উদযোগের সঙ্গে ধর্মীয় বিষয়ের সংযোগহীনতা, পরলৌকিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কহীন তবে ইহোজাগতিকতাই রাষ্ট্রের প্রধান ধর্ম। ধর্ম থাকতে পারে নাগরিকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণের বিষয় হয়ে। রাষ্ট্র সকলকে নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার দেবে সেই সাথে ধর্মহীন বা নাস্তিকের অধিকারও নিশ্চিত করবে সমান ভাবে। তবে রাষ্ট্রের সাথে কোন ধর্মের সম্পর্ক থাকবে না। একজন নাস্তিক ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে তার মত প্রকাশ করার অধিকার রাখে আর সেই অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব আধুনিক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

দৌড় * শাখা নির্ভানা


প্রশ্ন শুনে অন্য দিকে তাকিয়ে শুন্য দৃষ্টি মেলে ধরে মিদ্দা। কি যেন খুজে ফেরে তার চোখ। চৌদ্দগুষ্টির ঠিকুজী খুজেও এমন কাউকে পায়না সে যাকে আপন ভাবতে পারা যায়। মায়ের চোখ মনে পড়ে না। অত ছোটবেলার অতীত কি মাথায় থাকে? বাবার নিরুদ্দেশের গল্প শুনেছে বুজীর মুখে- দূর সম্পর্কের বোন, মা গত হবার পর যে তাকে বড় করে তুলেছে মায়ের চোখের ঠান্ডা দৃষ্টির প্রলেপ দিয়ে। কিন্ত সে তো থাকে নিশ্চিন্তপূর। মরহুম স্বামীর ভিটেয় বসত গেড়েছে ছেলে-পুলে নিয়ে। সে তো চেনে তার পুটুকে, সে তো রজব আলী মৃধাকে চেনে না। এই শেষ বেলায়, কুবেলায় সে তাকে ডাকবে কিভাবে? তারপরেও যাবার বেলায় এমন কাউকে খুঁজে পেতে মনটা তার দাপাদাপি করে শক্ত পাঁকে আটকে যাওয়া বুনো শুয়োরের মতো। সময়ের চাওয়া সময়ে না চাইলে পাওয়া যায়না তা কোনভাবে- ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

স্টেথোস্কোপের পাণ্ডুলিপি * শুভ্র ভট্টাচার্য্য

স্টেথোস্কোপের পাণ্ডুলিপি” সোনালির পেশাগত অভিজ্ঞতা আর সংবেদনশীল মননশীলতার গর্ভজাত। পেশায় চিকিৎসক সোনালি তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার আলোতে আমাদের চারপাশের সমাজকে অত্যন্ত কাছ থেকে স্পষ্ট আলোতে দেখে চলেছেন। সেই দেখার প্রিজমেই বিচ্ছুরিত অনবদ্য কটি গল্পের উপহারে সমৃদ্ধ তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। আবার এইটি শুধুমাত্র একটি গল্পগ্রন্থও নয়। আর পাঁচটি গল্পের বই থেকে এর গোত্র আলাদা। আবার এটি শুধুমাত্র ডাক্তারী অভিজ্ঞতার দলিলও নয়। আর সেইখানেই স্টেথোস্কোপের পাণ্ডুলিপির বিশেষত্ব। বস্তুত বাংলা সাহিত্যে এই ধারার সাহিত্য এখনো নবীন। সোনালীর এই প্রয়াস যে সেই ধারাকেই সমৃদ্ধ করবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গল্পের মধ্যে দিয়ে পাঠক এই সমাজে মেয়েদের অবস্থান,পুরুষতন্ত্রের দূর্মর প্রভাব;আর সেই প্রভাবের সাথে নারীর ব্যক্তিজীবনের নিরন্তর সহবাসের না বলা কাহিনীর আদিগন্তে কিছুটা হলেও অবগাহন করতে পারবেন।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

প্রাবন্ধিক রবির রশ্মিছটায় * শুভ্র ভট্টাচার্য্য

আলোকিত রবির অনালোকিত তত্ত্বকথায় শিবানী দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের মতে মূলধন ও মজুরীর মধ্যে অতিরিক্ত প্রভেদ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করতে বাধ্য। এবং সমবায় প্রণালীতে অধিকাংশই যখন তাঁদের সম্মিলিত শক্তিকে ধনে পরিণত করতে সফল হবে তখনই সার্বিক উন্নতি সম্ভব। সম্ভব সর্বমানবের স্বাধীনতার ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত করা। আর সমাজের অভ্যন্তরের ধন বৈষম্যের মধ্যে এই সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা করাই নতুন যুগের বাণী। রবীন্দ্র চেতনায় ও কর্ম প্রয়াসে সমবায়ের নীতির বিভিন্ন দিকগুলকিকে ছুঁয়ে গিয়েছেন শিবানী তাঁর সমবায়ের আলো আঁধারে রবীন্দ্রনাথশীর্ষক নিবন্ধে। তবুও বলতে হয়, রবীন্দ্রনাথের পরে দেশীয় অর্থনীতিতে সমবায় প্রথার সাফল্য কতটা এবং এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের কর্ম প্রয়াসের সুফল সামাজিক অর্থনীতিতে আজও কি আদৌ কার্যকরী আছে, বা থাকলে তা কতটুকু ও কি রকম; সেই বিষয়টিও যদি শিবানী তাঁর আলোচনায় অন্তর্ভুকক্ত করতেন তাহলে আরও ভালো হতো।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

নদীমাতৃক * সোমস্নিগ্ধ মুখোপাধ্যায়

স্যারের কথায় ধীর গতিতে এগোতে থাকে গাড়ি। কাছাকাছি আসতেই বেশ কিছু লোক হুমড়ি খেয়ে পড়ে বনেটের উপর। সহজাত দ্রুততায় পেছনের দরজা খুলে নিমেষের মধ্যে নেমে আসে সে। পেছন থেকে বেশ কয়েকজন তাকে বলে চলে.. অ্যাকিসিডেন্ট.....দাদা অ্যাকিসিডেন্ট... আর ভীড় ঠেলে এগোতেই কিছুটা সামনে রাস্তার উপর সেই হাড়হিম করা দৃশ্য দেখে স্তব্ধ হয়ে যায় বীতিহোত্র! বছর পঁচিশ তিরিশের এক মহিলার দেহ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে । স্পট ডেড, দেখেই স্পষ্ট। কোমর থেকে পা এর দিক পুরো মিশে গেছে কালো পিচের রাস্তায়। খানিক দুরে একটা মোটরবাইক। আর সেখানে এক মাঝবয়সীর কোলে একনাগাড়ে কেঁদে চলেছে একটা বছর দুয়েকের শিশু! আর সেই ভদ্রলোক বাচ্চাটার কান্না না থামিয়েই পাগলের মত ফোনে কাউকে কিছু বলতে বলতে ছুটে চলেছে রাস্তার এদিক থেকে ওদিকে।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

গণনাটকের ভগীরথ * ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়

পূর্ববর্তী একশবছরের সনাতনী নাট্য ও মঞ্চের প্রয়োগভাবনার ওলট পালট ঘটিয়ে নবান্নহয়ে গেল বাংলা নাটক ও মঞ্চের এক মাইলফলক আজও অসংখ্য গ্রুপ থিয়েটার সেই ধারারই উত্তরাধিকার বহন করে যার প্রথম পুরোহিত বিজন ভট্টাচার্য তাঁর নাট্যনির্মাণ দিয়েছিল নতুনতর নাট্যভাষা সনাতনী শিল্পের জন্য শিল্প’-অনুগত সাহিত্যভাবনা পরিবর্তিত হয়ে গেল নতুনতর স্লোগানে – ‘শিল্প হবে মানুষের জন্য গণনাট্য সঙ্ঘ থেকেই বিজন অট্টাচার্যের পাশাপাশি উঠে এসেছিলেন এক অসামান্য প্রয়োগশিল্পী ও অভিনেতা শম্ভূ মিত্র গণনাট্যের আদর্শে দিক্ষিত হয়ে উঠে এসেছিলেন আরো দুই অসামান্য প্রয়োগশিল্পী ও অভিনেতা উৎপল দত্ত ও কিছু পরে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন জনের কেউই গণনাট্যসঙ্ঘের সাংগঠনিক বন্ধনে আবদ্ধ থাকেননি শেষ পর্যন্ত শম্ভূমিত্র ১৯৫০এ গঠন করলেন বহুরূপী’, উৎপল দত্ত লিটল থিয়েটার গ্রুপ’ (১৯৫০) ও অজিতেশ গঠন করলেন নান্দিকার’(১৯৬০)
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

আশি বছরের পাঠ * রেজওয়ান তানিম

যে রবিঠাকুর বুদ্ধদের বসুর কাছে লিখিত পত্রে জীবনানন্দের কবিতাকে চিত্ররূপময় বলে উল্লেখ করেছেন সেই কবিগুরুর কাছেও অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছিল ক্যাম্পে। যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সুধীন দত্তের কাছে বলেন, জীবনানন্দ দাশের কবিতায় কোন স্টাইল নেই, আছে পাঁচমিশালী ভাব।১১ প্রকৃতপক্ষে বাংলা কাব্যজগতে রবীন্দ্রনাথের সমকালীন আর কোন কবি লেখকই তাদের আঙ্গিক এবং ভাষাতাত্ত্বিক দিক থেক রবীন্দ্রনাথের থেকে এত বেশি পৃথক ছিলেন না। সেই ক্ষেত্রে চিরকালীন রোম্যান্টিসিজম ও আধ্যাত্মবাদের কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনানন্দ দাশের মানবের চিরন্তন বিপন্নতা এবং না পাওয়ার বোধে ন্যুব্জ স্যুরিয়ালিস্টিক কবিতাটি ভাল না লাগাটাই ছিল স্বাভাবিক। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

কালিদাসের কাল * সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

একটা দল নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন কালিদাস। নিজেই নাট্যকার, নিজেই নির্দেশক এবং অবশ্যই নিজে হিরো। চেহারাখানাও যে হিরো হবার মতনই ছিলো ভদ্রলোকের, সে গল্প তো আছেই। সেইরকমই ঘুরতে ঘুরতে গিয়ে হাজির হলেন কুন্তল রাজ্যে। সে রাজ্যটা যে এগ্জ্যক্টলি কোথায় ছিলো, সঠিক করে এখন বলা মুশকিল। যতদূর সম্ভব, ডেকান প্ল্যাটোর দক্ষিণপশ্চিম দিকের খানিকটা অংশ কুন্তল রাজ্য নামে চিহ্নিত ছিলো। খুব বড় রাজ্য কিছু নয়। অন্তত পোলিটিক্যালি খুব সিগনিফিক্যান্ট কিছু নয়। কিন্তু শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ছিলো সেখানে। শিল্পীর কদর ছিলো। তার উপর খবর ছড়িয়েছিলো, সেখানকার রাজকন্যার স্বয়ম্বর, এবং তিনি স্বয়ং নাকি রীতিমতন বিদ্যেবুদ্ধির পরীক্ষা নিয়ে তবে পাত্র নির্বাচন করবেন। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

গোড়ায় গলদ * বিপ্লব রহমান

কিন্তু ইতিহাস বলছে, শুধু অস্ত্রে জিহাদী সন্ত্রাস বন্ধ করা যায় না। বিশেষ করে জিহাদ যখন সুইসাইডাল হয়, তখন তো নয়ই। আফসোস, মগজ ধোলাই হওয়া জিহাদীরা যদি ভাবতে পারতেন, আইএস কাদের সৃষ্ট, এর অস্ত্র-অর্থের উৎস, নিরীহ মানুষ বধে ক্ষতি কার, লাভই বা কার, জিহাদীরা কাদের ক্রিড়ানক, তাহলে হয়তো পুরো কর্মযজ্ঞ কঠিন হতো, কিন্তু তা হওয়ার নয়, জঙ্গিদের ধর্মের নামে ভাবনার জগৎটিকে একপেশে করে তৈরি করা হয়েছে একেকটি মুজাহিদ কিলিং মেশিন। তাই শুধু বল প্রয়োগে ফ্যানাটিক ফারাবি থেকে শুরু করে নিবরাসদের দমন করা যাবে না। আর দু-একটি মাদ্রাসা বা পিস টিভি বন্ধই যথেষ্ট নয়। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

বঙ্গ রাজনীতি * রওশন আরা বেগম

রাষ্ট্রের থেকে যে কিছু পাওয়ার আছে এই বোধটি মানুষের মধ্যে আজও জাগেনি। আর অধিকার বোধ সেটি তো আরেক ধাপ উপরে। তেমনি হাসিনাও ঠিক এই ভাবেই এসেছে। তারা বাবা একটা দেশ দিয়েছিলেন। দেশ বাসী তা কোন দিনও ভুলেনি। শেখ মুজিব দেশ দিয়েছেন তবে দেশে সঠিক নেতৃত্ব বা সুশাসন তিনি কখনো দেখাতে পারেন নি। এই ব্যর্থতাকে মুজিব ভক্তরা মানতে নারাজ। তাকে যে ভাবে মারা হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কজনক একটা অধ্যায়। এর প্রতিদান হিসাবে বাংলার মানুষ হাসিনাকে বার বার ক্ষমতায় এনেছে। আমরা পেয়েছি বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবের বংশের ধারা। একটা দেশের প্রধান মন্ত্রী কেমন হবেন তা নির্ভর করে গোটা দেশের মানুষের চরি্ত্রের উপর। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

তোমার বেলা যে যায় সাঁঝবেলাতে * শৌনক দত্ত

অথচ সম্পাদক তো সাঁকো হবেন, লেখক ও পাঠকের মাঝখানে। কেন তবে এই যোগাযোগহীন যাতনা? আজকাল পাঠক, লেখক ও সম্পাদক একেকটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ। দেখা হয় কদাচিৎ, কালেভদ্রে, এক-দেড়বার বছরে এই বার্ষিক দেখাসাক্ষাতানুষ্ঠান। ফলে কতিপয়ের সঙ্গে কতিপয়ের কচলাকচলি কেবল, বছরভর, করুণ কলরব করে চলেছি সবাই মিলে। এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে, এই প্রশ্ন অবান্তর। বরং প্রতিবেদিত ওই পরিস্থিতি বিরাজমান, এই সত্য সবাই স্বীকার করি কি না সেটাই জিজ্ঞাসা। এবং স্বীকার যদি করি, তাহলে এহেন শ্বাসরোধী বিরক্ত পরিস্থিতির পবনে প্রবাহিত থাকবো নাকি মোকাবেলার পথ ও পন্থা খুঁজব, সিদ্ধান্ত দরকার। সেলফোন-ফেসবুক-ব্লগ-ওয়েবজিন ইত্যাদির মারকাটারি দিনে কেন ও কোন আক্কেলে যোগাযোগের অভাব বোধ করছি এবং শীর্ষসমস্যা বলে এইটেকে প্রচার করছি, বিশদে বলা চাই।  ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

নারী ও সম্পূর্ণা * পারমিতা চক্রবর্ত্তী

হিন্দু সনাতন ধর্মে "বিবাহ" বলতে আমরা একজন পুরুষ ও একজন নারীর সামাজিক,শারীরিক ও মানসিক মেলবন্ধনকে বুঝি ৷ দুটি পরিবারের মধ্যে নতুন যোগসূত্র স্থাপন করে "বিবাহ" নামক শব্দটি ৷ একটি বিবাহকে টিকিয়ে রাখতে গেলে সবচেয়ে বেশি নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য প্রকৃতি নারীকে রূপ দিয়েছে সেভাবেই যাতে সুখ, দুঃখ, বিষাদ সকল জিনিসকে প্রতিরোধ করতে পারে অনায়াসে ৷ এখানে নারী না-বলে মেয়ে বলি, কারণ কঠিন বাস্তবে দাঁড়িয়ে একজন মেয়েকে টিকিয়ে রাখতে হয় তার পরম প্রাপ্তির "বিবাহ"-কে ৷ একটু প্রাচীন কাল নিয়ে আলোচনা করা যাক যখন মেয়েরা স্বাধীন ছিল না কিংবা নিজেদের স্বাধীন বলে ভাবতে পারত না, তখন থেকে মেয়েদের লড়াই'টা ছিল কঠিন বাস্তবের সাথে ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

পদাবলী * সোনালি পুপু

সেদিন দুপুরে বাড়ির জন্য ভোগপ্রসাদ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিল। দালান থেকে বাড়ির দিকে নামতে গিয়ে অচেনা মানুষ দেখে থমকে গেলো। শ্যামলা ছিপছিপে চেহারা। এক মাথা কোঁকড়া চুল সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ঠাকুরমশাইকে ডাকছেমাঝ সিঁড়িতে থালা হাতে শৈবলিনীকে দেখে চুপ করে গেলো থেমে গেছে শৈবালঅবাক হয়ে চেয়ে রয়েছে অচেনা ছেলেটার দিকে। বুকের মধ্যে কিসের ঢেউ তোলপাড় করছে তার। কে ? কে এই মানুষটি ? কোথায় দেখেছি একে ? খুব যেন চেনা; তবু নাম মনে করতে পারছিনা কেন? দুজনেই বোকার মত চেয়ে থাকে পিছন থেকে ঠাকুরমশাই,“কে রে,কে ডাকে?”বলে ডাক দিতে হুঁশ ফেরে শৈবালেরতরতর করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে ধুক ধুক করতে থাকে বুকের মধ্যে ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

জিরো ডেসিবেল * ম্যারিনা নাসরীন

বিয়ের দুবছরের মাথায় একদিন অনিমা চুপি চুপি বলল, সে তার গতমাসের পিরিয়ড মিস করেছে। ওরেব্বাস! স্ত্রীর পিরিয়ড মিসের খবরটি এত মধুর! বুকের মধ্যে অষ্টমীর ঢাক বেজে উঠেছিল।  প্রেগন্যান্সি রিপোর্ট পজেটিভ। অমরের মনে আছে এই উপলক্ষে সে কলেজ থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছিল। ইচ্ছে হয়েছিল ছুটির দরখাস্তে এই কারণটিই লেখে । কিন্তু কলেজ জুড়ে হাসাহাসি পড়ে যাবে ভেবে বাতিল করেছে। কয়মাস অমর কচুরিপানার মত ভেসে ভেসে অনিমার কাছে কাছে ঘুরে বেড়াত। দুজন মিলে ঠিক করল, মেয়ে হলে নাম দেবে অরুণিমা আর ছেলে হলে অনিমেষ।  অনিমেষ আজ আসতে এত দেরি করছে কেন?~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~  

বসন্ত এসে গেছে * ব্রততী সান্যাল

সর্বাণীর সাথে আজকাল মাঝে মাঝেই দেখা করেন হরিবাবু। মনে রঙ ধরছে আস্তে আস্তে, বেশ বুঝতে পারছেন। সর্বাণী একদিন নিজের বাড়ি নিয়ে যাবেও বলেছে, বিয়েটা শীঘ্র ফাইনাল হয়ে যাবে। পাড়ার লোকে, এমনকি শ্যামও খানিক হাসাহাসি করছে বটে, তবে হরিবাবু পাত্তা দিচ্ছেন না, বিয়েটা উনি করেই ছাড়বেন! সর্বাণীকে নানাবিধ উপহার দিতে ও তার সঙ্গে সময় কাটাতেই ব্যস্ত তিনি। মিনাক্ষী বোধহয় মনে খানিক কষ্ট পেয়েছে, কি আর করা যাবে, বিয়ে তো একজনকেই করবেন হরিবাবু। বাধ সাধছে মালতী, মাঝেই মাঝেই বাড়িতে চলে আসে, নানারকম রান্না করে আনে, অহেতুক গল্পও জুড়ে দেয়, হরিবাবুর প্রেমে পড়েছে নির্ঘাত। হরিবাবু বিরক্তি দেখালেও কিচ্ছু মনে করে না,~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

মাটির মহক * বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়


গদাধরের গল্প মন দিয়ে শুনতে থাকেন মুখার্জি সাহেব তাঁর বাগানে মালির কাজ করে গদাধর মাটি খুঁড়ে  সুন্দর  সুন্দর সব ফুলের গাছ লাগায় আর তখন ই অদ্ভুত মনকেমন  গ্রাম্য চেনা গন্ধে ভরে যায় বাগান পরিচিত গন্ধ , মাটির মহক  সুবীর মুখার্জী এবং স্বাতী মুখার্জী স্বামী  স্ত্রী দুজন ই  ব্যস্ত অবসরের পর  মুখার্জী সাহেব নিজে একটি কনসালটেন্সি ফার্ম চালান মুখার্জী অ্যাসোসিয়েটস  স্বাতী মুখার্জী ব্যস্ত আইনজীবী বিকেলের এই সময়টি তাদের গল্পের জন্য নির্দিষ্ট একটিই  মাত্র ছেলে সায়ন ব্যস্ত ইঞ্জিনিয়ার কর্পোরেট জগতের সাফল্যের এস্কালেটার বেয়ে তর তর করে উপরে ওঠার স্বপ্নে মশগুল মাটি থেকে সে এখন  অনেক অনেক উপরে যেখান থেকে দুনিয়াকে  ছোট দেখায়~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~