দুর্নীতির পথটাই কি রংরুট? নাকি সততা আদর্শের পথে পড়ে থেকে
মার খাওয়াটাই রংরুট? আসলে কার কাছে কখন কোনটা রংরুট সেটা নির্ভর করবে তার উপর না কি
সকলের জন্যে একটাই সাধারণ পরিমাপ থাকা উচিৎ। এটাও একটি মূল প্রশ্ন। মূল প্রশ্ন এই জন্যেই
যে, আমাদের রোজকার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতাই শুধু নয়, মানুষের ইতিহাস খুঁড়ে দেখলেই অনুভবি
মানুষ এই দ্বান্দ্বিক সত্যের মুখোমুখি হতে বাধ্য হবেন। ডারুইন তত্বই যদি মানতে হয়,
তবে পৃথিবীতে একটই রংরুট। যে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না, নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে
না সাফল্যের সাথে, সেই রংরুটের পথিক। আর যারা ছলে বলে কৌশলে নিজেকে টিকিয়ে রেখে সাফল্যের
সাথে পরবর্তী প্রজন্মকে দুধে ভাতে রেখে যেতে পারবে, বীরভোগ্যা বসুন্ধরা শুধু তাদেরই
জন্যে। এটিই ডারুইন তত্ব। মানুষের ইতিহাসই শুধু নয়, পৃথিবীর ইতিহাসই সেই সাক্ষই দেয়।
ইতিহাস সচেতন মানুষ মাত্রেই জানেন সে কথা! তাই যে রংরুট নিয়েই বিতর্ক, সেই রংরুট আদৌ
কতটা রং, বা সেই রং-এর মূল রঙই বা কি; কিংবা কোনটা সত্যই রংরুট আর কোনটা নয়, এই নিয়ে
যুগে যুগে মানুষের তর্ক বিতর্ক এগিয়ে চলেছে নিরন্তর। হয়তো সে তর্কের শেষ নাই। চিন্তাশীল
মানুষ, সৃজনশীল সত্ত্বা সেই কারণেই সব ইন্দ্রিয়ের শাটার নামিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে
পারে না। না আজকের কথাটুকু আজকেই বলে যেতে হবে আজকের মতো করে। আজকের প্রশ্নগুলির উত্তর
দিতে দিতে। নীতি আদর্শের কথাই তো সব নয়। মানুষের অস্পষ্ট প্রশ্নগুলিকে সুস্পষ্ট করে
তুলতে হবে। মানুষের প্রতিদিনের সমস্যাগুলির মুখোমুখি মোকাবিলা করাই কি আসল মনুষত্ব
নয়? আমাদের মূল প্রশ্ন এইখানেই। আমরা কজন এই মুখোমুখি মোকাবিলার পথে হাঁটি? হেঁটেছি?
হাঁটবো আদৌ? রোজাকার হেডলাইনে নিজে খবর না হওয়া অব্দি আমাদের কজনের টনক নড়ে আদৌ? কজন
আমরা উচিৎ কে ঔচিত্যে দাঁড় করিয়ে থাকি? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তো অশুভ শক্তির সাথে দুর্নীতির
সাথে আপোষ করে চলতে শেখাকেই আমরা জীবনের বাস্তবতা ধরে নিয়ে সেই ধারণাকেই নিজেদের মনে
বদ্ধমূল করে নিই। এবং কেউই কিন্তু সেটিকে রংরুট বলে স্বীকার করতে রাজী নই। অনেকেই বলবেন
ঠিকই তো কে আর নিজে থেকে ক্ষুদিরাম হতে যাবে? ঢাল নাই তলোয়ার নাই, নিধিরাম সর্দ্দার
হওয়াটাই কি আদর্শ নাকি? কিন্তু এই ভাবে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়াটাই যদি দস্তুর হয় সমাজের,
এই সময়ের বা সকল যুগেরই তবে তো এই পথকে রংরুট বললে মস্তবড়ো ভুলই হয়ে যাবে তাই না? গোটা
সমাজ যে পথে চলেছে, সেই পথ কি করে রংরুট হতে পারে?
কিন্তু শুধু কি আমাদের সমাজই এই ভাবে ভাবছে? উন্নত অনুন্নত
বিশ্বের নানান প্রান্তের বিভিন্ন সমাজের ভাবনার প্রকরণগুলিই বা ঠিক কি রকম? কোনটা তাদের
কাছে রংরুট, আর কোনটা নয়; সেটিও কি জানার বা বোঝার প্রয়োজন নাই আমাদের? বিশ্ব থেকে
চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে চলার দিন তো আজ আর নাই। তাহলে? অর্থাৎ আমরা চাই বা না চাই, এই দ্বন্দ্ব
কিন্তু আমাদের চারপাশ ঘিরে আমাদের দিকেই নিষ্পলক তাকিয়ে রয়েছে। তাকিয়ে থাকবে। ডারুইনের
‘সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট’ যত বড়োই অমোঘ সত্য হোক না কেন, সেই সত্যকে শিরোধার্য্য
করে হলেও আমাদের ঠিক করতেই হবে আমরা কোন রুটে আছি। ঠিক যদি করে নিতে না পরি ঠিকমতো
তবে সেটিই হয়তো অনেক বড়ো এক রংরুট। যার সত্যই শেষ নাই। শেষ কথা বলা তো দূরস্থান। সমাজ
সংস্কৃতি সমকাল। আমাদের অস্তিত্বের তিনটি স্তম্ভ স্বরূপ। আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যক্তি
আমির স্বরূপ গড়ে ওঠে কিন্তু এই তিনটি বিষয়ের ঘাত প্রতিঘাতের সংমিশ্রনেই। সেই ব্যক্তি
আমির স্বরূপ সমষ্টির দিগন্তে নিজেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলবে, হয়তো সেইটাই আমাদের
প্রত্যেকের নিজের নিজের পথ। আবার সেই পথের কতটুকু রংরুট আর কতটুকু নয়, সে বিচার কালান্তরের
হলেও সমকাল কিভাবে সেই ব্যক্তি আমির দর্পনে দৃশ্যমান সেটিও বড়ো কথা। তাই আমাদের সমাজ
সংস্কৃতি সমকাল কি ভাবে আমাদের গড়ে তুলছে, বা একটু উল্টো দিক দিয়ে বললে, কিভাবে আমরা
আমাদের সমাজ সংস্কৃতি সমকালকেও রূপ দিচ্ছি, আর সেই দেওয়ার পথ রংরুট না মনুষ্যত্বের
দিগন্ত প্রসারী রাজপথ সেই দিকেই আলোকপাত করার উদ্দেশ্য লক্ষ্য ও বাসনা নিয়ে হাজির ভিন্ন
স্বাদের ত্রৈমাসিক ‘রংরুট’। সমাজ সংস্কৃতি সমকালের বলিষ্ঠ দর্পন। প্রকাশিত হয় প্রতি
বছর বৈশাখ শ্রাবণ কার্তিক মাঘে।
নীচের লিংকে ক্লিক করে মূল সূচীতে গিয়ে পছন্দের বছর ও সংখ্যা
নির্বাচন করে নির্দিষ্ট লেখা পড়া যাবে। ও নিজস্ব মতামত দেওয়া যাবে। নির্দিষ্ট ট্যাবে
লেখা পাঠানোর নিয়মাবলী দেওয়া রয়েছে।
রংরুট
একটি ত্রৈমাসিক ওয়েব জার্নাল