শুধুমাত্র কবিতার অন্তর্গত মহিমা ও সৌন্দর্য সৃজনের
ক্ষেত্রেই নয়,
এই কবি তার কবিতার শরীর সৃজনেও যে প্রতিটি ধবনি তথা
অক্ষর তথা শব্দের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তা তার প্রতিটি কবিতার শব্দ ব্যবহারের
পরিমিতি থেকেই অনুধাবন হয়। প্রধানত অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের সমন্বয়ে তার কাব্য
প্রয়াস সচেষ্ট থাকলেও,
প্রকাশিত এই গ্রন্থের ৭১ টি কবিতার বেশিরভাগ কবিতাই
অক্ষরবৃত্তের অমিল মুক্তক বা অতি মুক্তকে সৃজিত। কবিতাগুলো পড়ার সময় ধ্বনিগত
ত্রুটির কারণে আমাকে কোথাও হোঁচট খেতে হয়নি, কবিতার শারীরিক গঠন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি কাব্যরস আস্বাদনেও, এতোটাই স্বতস্ফূর্ত, মসৃণ এবং সাবলীল এই কবির ছন্দগত সৃজন দক্ষতা; সাধনা-লব্ধ এক সহজ-গভীর বাক্রীতির দারুণ এক উদাহরণ এই কবিতাগুলো, বিবৃতি মুলক বাক্যের পরিমিত ব্যবহার এই গ্রন্থের
কবিতাগুলোকে দান করেছে দারুণ এক সমুচ্চতা~~~~~~
সরদার ফারুক এর কবিতার
গ্রন্থ
“অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি”
সৈয়দ ওয়ালী
না পড়ে উপায় কি? বলছিলাম,
অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ার কথা। আর, কেউ কি এই একবিংশ শতাব্দীতে একেবারে আনকোরা তর্ক জুড়ে
দিতে পারে?
যুক্তি আমাদের হ্যা বোধক উত্তরই বা কোন আক্কেলে দেবে, বলুন? একবিংশে বসবাস রত
প্রতিটি মানুষকেই কোন না কোন ভাবে অন্যের তর্কে ঢুকে পড়তেই হয়। তবে এই লেখায় আমি
তর্ক করতে নয়,
কবি সরদার ফারুকের প্রকাশিত কবিতার গ্রন্থ ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ নিয়ে আলাপের
চেষ্টা করব। বইয়ের নামটা পড়েই যে কোন কবিতা রসিকের বইটি পড়ে দেখার ইচ্ছে হবে।
যেমনটি আমার বেলায়ও ঘটেছে। কবিতার ভেতর তর্ক? তাও আবার অন্যদের তর্ক? বাহ, চমৎকার তো! কোথায় রস আস্বাদন করব, তা নয়, কবি সরদার ফারুক
আমাদের একেবারে প্রথমেই আহবান জানালেন অন্যের তর্কে ঢুকে পড়ার আহবান। না ঢুকে উপায়
আছে?
চলুন ঢুকে পড়ি...
নীল তারা,আকাশের বুনো ফুল
অন্ধকারে, কার কথা বলো?
নোনা জল,বালির মিহিন গুঁড়ো
গায়ে মেখে শুয়ে থাকি
উড়ুক্কু পাখিটি, লক্ষীমন্ত
এতো দূরে কী করে যে গেলে!
কি বলবেন, শুরুতেই যদি কবি আমাদেরকে আমাদের আদিম পিতা-মাতার বিস্ময়পূর্ণ মহাকাশ
সম্পর্কিত অতি আদিম প্রশ্নের দিকে ছুঁড়ে দেয়? আমরা কেউ জানিনা নীলতারা, আকাশের বুনোফুল, অন্ধকারে কার কথা বলে। তারপরের পঙক্তি দুটো দেখুন- ‘নোনাজল, বালির মিহিন
গুঁড়ো/ গায়ে মেখে শুয়ে থাকি’ কোথায় মহাকাশ আর
কোথায় নোনা জল,
বালির মিহিন গুঁড়ো, ভাবুন একবার! কি অসামান্য প্রতিতুলনা! এমন না হলে, হওয়াতে না পারলে কি আর কবি, কবিতা! এমন হয়, হওয়াতে পারে দেখেই আমরা কবিতা পড়ি, কবিতা ভালবাসি আর কবিতা কে বলে থাকি বিশুদ্ধ শিল্প। এবার এ কবিতার শেষ দুটি
পঙক্তি দেখুন- ‘উড়ুক্কু পাখিটি , লক্ষীমন্ত/এতো দূরে কী করে যে গেলে! ভাবুন, নীল তারা,
আকাশের বুনো ফুল কে কবি বলছেন, উড়ুক্কু পাখি, লক্ষ্মীমন্ত এবং আবার বলছেন এতো দূরে কি করে যে গেলে। সত্যি তো, আমাদের জীবনের প্রিয় সব স্বপ্নেরা, আমাদের লক্ষ্মীমন্তেরা আদতেই কি আমাদের নাগালের ভেতর
থাকে?
কোন কালেই ছিল?
এবার আসা যাক অন্য এক প্রশ্নে। আচ্ছা, আকাশের ওই বুনোফুলেদের কি কোন প্রেমিক প্রেমিকা আছে? থাকতে নেই? কেন,
কেন থাকতে নেই, থাকবে নাই বা কেন?
আর নাই থাকবে যদি তবে সরদার ফারুককে আমি বা আপনি কোন
পরিচয়ে এই কবিতায় যুক্ত করব? হ্যা আছে, অন্তত সরদার ফারুকের মত ভিন্ন ও মৃদু স্বরের খাঁটি
প্রেমিক এখনো আছে, যে কিনা
তার কবিতার বই উৎসর্গ করতে পারেন এইসব আকাশী-বুনোফুলদের জন্য। এই চির অজানা, রহস্যময় নান্দনিক আন্তনাক্ষত্রিক অসীম রূপের দিকে দিকে
চেয়ে চেয়ে যেমন আদিম মানব মানবীরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গেছেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে বাস করে আমরাও এই অসীমকে, অসীমের রূপকে, বিজ্ঞানকে,
সত্যকে ছুঁতে না পারার ব্যর্থতায় ফেলে যাই দীর্ঘশ্বাস।
কবিতার গুটিকয় পঙক্তির যে কি দুর্দান্ত ক্ষমতা থাকে তা এই ছয় পঙক্তির কবিতাটি
আমাদের পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়। এমনি বহু অনন্য সাধারন পঙক্তি ও চিত্রকল্পের
সম্ভারে সাজানো রয়েছে প্রকাশিত এই গ্রন্থটির কবিতাগুলো যা পাঠকের চেতনাকে বিমোহিত
আলোড়িত করে পাঠক নিয়ে যাবে অন্য এক ভুবনে, যেখানে পাঠক এবং কবির ভেতর কোন ভেদরেখা থাকবে না। যেখানে পাঠক এবং কবি
উভয়েই রসিক মাত্র।
কবিতা যে পদ্য নয়, কবিতা যে তার আক্ষরিক অর্থের ঊর্ধ্বে পৌছে অন্য এক রস-জগতের সন্ধান কিংবা
দ্বিতীয় বা বহু কবিতার জন্ম দেবার অভীপ্সা বা প্রেরণা পাঠকের বা রসিকের চেতনায়
বুনে দিতে প্রয়াসী হয় প্রকাশিত এই গ্রন্থের কবিতাগুলো পাঠের সময় তেমন অনির্বচনীয়
অনুভুতি বহুবার আমার ভেতরে জন্মেছে। সৎ কবিতা বলতে আমরা যে অনুভব বা রস এর সাথে
আমরা পরিচিত এই কবিতাগুলো পাঠ করার সময় তেমন অকৃত্রিম ও বিশুদ্ধ অনুভবও আমি আমার নিজের ভেতর প্রত্যক্ষ করেছি। ইসলামপুর
থেকে বাজার-লোভন কাটপিস কিনে এনে কৃত্রিম জোড়াতালির বেনিয়ে-চাতুর্য কবি সরদার
ফারুক এর কবিতায় একেবারেই দুর্লক্ষ্য বরং
তার কবিতায় আছে অগণন সহজ সিঁড়ি যা বোধের গভীরে নেমে গিয়ে কিংবা ক্ষণকালীন জীবনের
তুচ্ছতার ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে মানব প্রানের বা চেতনার মহিমান্বিত রস ও সৌন্দর্যের
উপভোগের সুযোগ করে দেয়।
শুধুমাত্র কবিতার অন্তর্গত মহিমা ও সৌন্দর্য সৃজনের
ক্ষেত্রেই নয়,
এই কবি তার কবিতার শরীর সৃজনেও যে প্রতিটি ধবনি তথা
অক্ষর তথা শব্দের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন তা তার প্রতিটি কবিতার শব্দ ব্যবহারের
পরিমিতি থেকেই অনুধাবন হয়। প্রধানত অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তের সমন্বয়ে তার কাব্য
প্রয়াস সচেষ্ট থাকলেও,
প্রকাশিত এই গ্রন্থের ৭১ টি কবিতার বেশিরভাগ কবিতাই
অক্ষরবৃত্তের অমিল মুক্তক বা অতি মুক্তকে সৃজিত। কবিতাগুলো পড়ার সময় ধ্বনিগত
ত্রুটির কারণে আমাকে কোথাও হোঁচট খেতে হয়নি, কবিতার শারীরিক গঠন বাঁধা হয়ে দাড়ায়নি কাব্যরস আস্বাদনেও, এতোটাই স্বতস্ফূর্ত, মসৃণ এবং সাবলীল এই কবির ছন্দগত সৃজন দক্ষতা; সাধনা-লব্ধ এক সহজ-গভীর বাক্রীতির দারুণ এক উদাহরণ এই কবিতাগুলো, বিবৃতি মুলক বাক্যের পরিমিত ব্যবহার এই গ্রন্থের
কবিতাগুলোকে দান করেছে দারুণ এক সমুচ্চতা।
সমাজ সচেতন এই কবি তার চারপাশের দৃশ্যমান অগণন
বস্তুপুঞ্জ ও মানব ভাবনার সমকালীন অভিঘাত থেকেই আপন দক্ষতায় সংগ্রহ করে নিয়েছেন
তার কবিতার উপাদান। তার কবিতা পাঠ করতে গিয়ে আমি আনন্দিত হৃদয়ে লক্ষ্য করেছি যে, নিতান্ত সাধারণ বস্তুকেও কবি তার নিজস্ব কবিত্ব গুনে কি
অসামান্যতাই না দান করেছেন। বস্তুর সাথে বিমূর্তের অসামান্য সব প্রতিতুলনায় মুগ্ধ
হয়েছে আমার কাব্যবোধ,
তৃপ্ত হয়েছে কাব্য রসের তৃষ্ণা। ৭১ টি কবিতা নিয়ে
প্রকাশিত এই ‘অন্যদের তর্কে ঢুকে পড়ি’ গ্রন্থটির পাঠ আমার জন্য ছিল এক দারুণ আনন্দময় ভ্রমনের ব্যাপার। অভিনিবেশ
পাঠকের জন্য এইটুকু বলতে চাই, এই গ্রন্থটির
কবিতাগুলো একগুচ্ছ কিংবা এক-হাড়ি বৈচিত্র্যময় আনন্দের সংবাদ কিংবা রস নিয়েই আপনার
পাঠের অপেক্ষায় অপেক্ষারত। প্রকাশিত কবিতার এই গ্রন্থটির খোঁজ পাঠক নিজে স্বার্থেই
খুঁজে নিক কামনা রইল।
...
***কবিতার
বই ‘ম্যাক্সিম’ প্রসঙ্গে
দুটি কথা***
সৈয়দ
ওয়ালী
আনন্দ দেয়া ব্যতীত কবিতা পাঠের উপযোগিতা কি আদৌ আছে, নাকি নেই? কবিতা কি শুধুই আমরা
আনন্দের জন্যই পাঠ করি?
কবিতা কি মাদক তবে? যা মাদকাসক্ত
ব্যক্তিকে এক বিশেষ আনন্দ দেবার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়? কবিতা কি পাঠকের মনোজগৎ পরিবর্তনে কোন ভুমিকা রাখে না? কবিতা কি পাঠককে তথা মানুষকে সুন্দর ও কল্যাণময় জীবনের
সন্ধান দেয়না?
একটি মহৎ কবিতা পাঠের পর কি একজন মানুষের মনোজগৎ পরিবর্তন
হয়ে যায় না?
একটি মহৎ কবিতা পাঠের পর একজন পাঠক কি যে বিষয়ে কবিতাটি
সৃজিত হয়েছে সেই বিষয়ে আর কোনদিনও তার পূর্বের জগতে ফিরে যেতে পারেন? এমন নানাবিধ প্রশ্নের যন্ত্রণায় যখন আমি ভেতরে ভেতরে দগ্ধিত
হচ্ছিলাম তখনই 'ইমিতিয়াজ মাহমুদ' এর দুটি
কবিতা পাঠ করার পর আমার এমন দহন কালের অবসান ঘটে। দীর্ঘদিন থেকেই আমি খুব সহজ
যুক্তিতে নিজেকে এবং কবিতার পাঠককে জানাতে চাইছিলাম যে, কবিতা মাদক-জাতীয় বিনোদন বস্তু নয়, কবিতা তার চেয়ে বেশি কিছু, অন্য কিছু;
যা তার পাঠককে তথা মানুষকে আনন্দ দেবার পাশাপাশি পাঠকের
মনোজগৎকে খুব সূক্ষ্ম ভাবে পাল্টে দেয়, ক্রমাগত দিতে
থাকে। এভাবে একজন দুজন করে এই পৃথিবীর প্রতিটি কবিতা পাঠক তথা মানুষ পাল্টে যায়।
এই পাল্টে যাবার ব্যপারটা খুব স্থুল ভাবে এবং দ্রুততার সাথে ঘটে না, ঘটে খুব সুক্ষ্মভাবে এবং খুবই ধীরে। হ্যা, একটি মহৎ কবিতা পাঠককে শুধু আনন্দই দেয় না পাল্টেও দেয়।
যেমন আমাকে পাল্টে দিয়েছে Imtiaz
Mahmud ইমতিয়াজ মাহমুদের দুটি কবিতা,
*সাধ*
পাতার ওড়ার সাধ, মরার পড়ে
মেটে।
*শেষকৃত্য*
গাছের শেষকৃত্যে, পাখিরা থাকে
না।
উপরের কবিতা দুটি কয়েক বার পড়ুন এবং পাতার ওড়া এবং গাছের
শেষকৃত্য বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতাকে মেলাবার চেষ্টা করতে গেলেই চমকে উঠে আবিস্কার
করবেন যে,
ব্যাপারটা তো আক্ষরিক অর্থে এমনই (গুঢ় অর্থে অনেক কিছুর
সন্ধান যদি নাও করেন)। আমাদের চেনা জীবনের, জগতের কত
কিছুর ক্ষেত্রেই না এই দুটি কবিতা প্রাসঙ্গিক ও মাইন্ড ব্লোয়িং ভাবনার উৎস হবার
ক্ষমতা রাখে! দুর্দান্ত নয় কি! এই জীবনে বাঁশপাতাসহ বহু ধরণের গাছের বহু
ধরণের পাতাদেড় আমি কতনা বার ঝড়ে পড়ার পর
দমকা ও এলোমেলো বাতাসে উড়তে দেখেছি। চোখের সামনেই ঘটেছে এমন কিন্তু ঠিক এই ‘সাধ’
কবিতা পাঠ করার পূর্বে কখনই কি আমি পাতার ওড়ার সাধ নিয়ে
এইভাবে ভেবেছি?
না ভাবিনি। তবে কি দাঁড়াল? এই কবিতাটি পাঠ করার পর ‘পাতার ওড়ার’ বিষয়ে আমার ভাবনাটা আজীবনের জন্যই পাল্টে গেল নাকি? একই সাথে আবিষ্কারের বিস্মিত-আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি আমার
পাতার ওড়া বিষয়ক দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিও কি বেশ কিছুটা পাল্টে গেল না? হ্যা, পাল্টেই গেল। ‘শেষকৃত্য’ কবিতাটিও আমাকে তুমুল রকম নাড়া দিয়ে পাল্টে দিয়েছে গাছের
জীবনের শেষকৃত্য বিষয়ে,
গাছের জীবনের ট্রাজেডি বিষয়ে। যেই গাছ তার ফুল, ফল,
লতাপাতা, শাখা প্রশাখা এবং
তাকে কেন্দ্র করে পোকামাকড়ের জগত গড়ে ওঠার
মাধ্যমে পাখিদের খাবার,
নীড়,
ছায়া প্রদান করে থাকে, সেই পাখিরা
গাছটির মৃত্যুর সময় উপস্থিত থাকে না! কি ভীষণ রকম নিষ্ঠুর বাস্তবতা তাই না? এই কবিতাটি যার ট্রাজেডিকে কেন্দ্র করে সৃজিত হয়েছে সেই
গাছের জীবন-মৃত্যুর চক্রের সাথে আমি আমার পিতার জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছি আশ্চর্য
রকম ভাবে। আমার পিতা যে কয়টি মানুষদের বেড়ে ওঠা ও প্রতিষ্ঠিত হবার মত গুরুত্বপূর্ণ
সময়ে তার ছেলেমেয়েদের যথাযথ খাবার, পোশাক, স্কুলের বেতন, মাস্টারের
খরচ না দিয়ে সেই সব মানুষদের মাথা গোজার ঠাই করে দিয়েছেন, খাবার জোগাড় করে দিয়েছেন সেই সব মানুষদের কেউই দীর্ঘকাল ধরে
রোগে ভোগা আমার পিতার কোন কাজে আসেনি। কি নিদারুণ নিষ্ঠুরতা, কি নিদারুণ মিল কবিতা ও বাস্তবতায় তাই না? কে বলে যে, কবিতা মানুষকে শুধু
আনন্দ দেয়া বাদে আর কিছু দিতে পারে না? একটি মহৎ
কবিতা পাঠককে শুধু আনন্দ দেয় না, দেয় আরও অনেক কিছু
যা ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘ম্যাক্সিক’ কবিতার বই এর আরও
বেশ কটি কবিতা আমাকে দারুণ আনন্দ দেবার পাশাপাশি কিঞ্চিত হলেও পাল্টে দিয়েছে যেসব
বিষয় নিয়ে কবিতা গুলো রচিত হয়েছে সেই সব বিষয়ের ভাবনা জগত। তার ম্যাক্সিম বইয়ের
আরও যেসব কবিতা ভাল লেগেছে সেগুলো হচ্ছে-
*মানুষ*
মানুষকে হাসতে দেখে জেনেছি, তার দাঁত আছে।
*শিক্ষা*
মানুষের পায়ের ধুলো হয়ে
আমি উড়তে শিখেছি।
*অনুসারী*
একটি নির্বোধেরও দশটা অনুসারী থাকতে পারে,
যারা অধিকতর নির্বোধ।
*সমালোচক*
সাপ,
সুতা আর লাঠির মধ্যে পার্থক্য করতে অক্ষম
এক লোক, কলম দিয়ে বিষ নির্গত
করছেন।
*তুচ্ছ*
গরুর লেজে যে ওড়ে সে মাছি। বাঘের লেজে যে
ওড়ে সেও মাছি।
*মূল্যায়ন*
ইঁদুরের মূল্যায়নে, বাঘের চেয়ে
বেড়াল ভয়ানক।
*গণিত*
তৈলাক্ত বাঁশ থেকে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বানরটা
বুঝতে পারল, মানুষ কতটা
হারামি হতে পারে।
*আতেল*
একটি জাম গাছ বিখ্যাত হবার বাসনায় কাঁঠাল
ফলাবার কসরত করছে।
*হোঁচট*
মানুষ যতবার হোঁচট খায়, ততবার মাটির
নিকটবর্তী
হয়।
*প্রমাণ*
পা হাতকে বলছে পারলে একটা লাথি মেরে নিজের
দক্ষতা প্রমাণ করো।
কবিতা বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের আপাত যৌক্তিক
উত্তর পেতে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ কবি ইমিতিয়াজ মাহমুদ। আপনার কবিতার বই ‘ম্যক্সিম’ পাঠকপ্রিয়তা পাক এই
কামনা জানিয়ে শেষ করছি।
...
সৈয়দ ওয়ালী