পুজোর ছমাস আগে থেকে শুনছি বাজার করছে,
অথচ এখনও নাকি কিছুই কেনা হয় নি। আর এদেরও বলিহারি। লাখ লাখ স্টক
ঝুলিয়ে রাখে দোকানে এদিকে ট্রায়াল রুম এই ক'টা। ঢুকতে পারাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আর ঢুকল তো
বেরনোর নাম নেই। ভাস্কর গজগজ করে। শঙ্খ মজা পায়। এই অভিজ্ঞতা ওর সম্প্রতি শুরু হয়েছে। যদিও ভূমির সাথে প্রেম
বেশ কিছুদিনের। তবে এই ট্রায়াল রুমের বাইরে দাঁড়ানোটা বেশিদিন নয়। প্রথমবার যখন এসেছিল,বেশ ভালোই লেগেছিল। ফাঁকাও ছিল
মোটামুটি । ভূমি একটা করে কুর্তি পরে এসে
দাঁড়াচ্ছিল উদ্গ্রীব চোখে তাকিয়ে। যেন শঙ্খর ভালো মন্দ লাগাটাই শেষ কথা। ও হ্যাঁ বললে
হ্যাঁ না বললে না...পরে অবশ্য ভুল
ভেঙ্গেছে। বেশ কয়েকটা জামা শঙ্খর তেমন না লাগলেও ভূমি সেগুলোই নিয়েছে। তুমি নিজের
পছন্দেই নেবে তো আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেন? অভিমান করে
বলেছিল শঙ্খ টিপিটিপি হাসছিল ভূমি... ওমা! রাগ হল বুঝি বাবুর! দাঁড় না করিয়ে উপায়
কি! তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই এদিকে শপিং ও জরুরী। তাই তো তোমায় সঙ্গে আনলাম...~~~~~~~~~~~
বুদ্ধির্যস্য
সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায়
ফোনটা পকেট থেকে
বার করেই বিরক্তিতে ভুরু কোঁচকাল শঙ্খ। শালা এমন ভেতরে বানিয়েছে ঘরগুলো যে টাওয়ার
পর্যন্ত নেই ফোনের। রাতে পুজোকমিটির মিটিং
আছে। রূপঙ্করকে আনার কথা। কিন্তু পয়সা কম লাগবে বলে কেউ কেউ রিয়্যালিটি শো-র গায়ক
গায়িকাদের আনতে চাইছে। সেই নিয়ে বসতে হবে। মাথার মধ্যে রূপঙ্করকে আনার পক্ষে যুক্তিগুলো সেট হয়ে আছে। এই ফাঁকে ক'টা ফোন
করে নেওয়া যেত টাওয়ার থাকলে।
অবশ্য চার্জও
কুড়ি পার্সেন্ট দেখাচ্ছে। অতএব এই
আপাত অন্তহীন অপেক্ষায় যে ফোন নিয়ে খেলে
সময় কাটাবে সে উপায়ও নেই । অগত্যা এদিক ওদিক
মাপা ছাড়া কাজ কি!
পাশেই আর একটি
ছেলে দাঁড়িয়ে। ওরই বয়সী হবে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কাজও দুজনের এই মুহূর্তে এক। শঙ্খর
সাথে চোখাচোখি হতে হাসল, টাওয়ার নেই তো?
নাহ,
থ্রিজি, ফোরজি সব ফালতু...
ভেতর থেকে এক
মহিলা বেরিয়ে এলেন হাতে এক পাঁজা জামাকাপড় নিয়ে।
মাত্র একখানা বেছে রেখে সব কটা পাশের বাস্কেটে ফেলে দিলেন।
পিছনে আরও একটি
মেয়ে,
তার হাতেও গোটা তিনেক। এপাশে একটু হুড়োহুড়ি । দুজন বেরোলে চারজন
এগিয়ে যায় জায়গা নিতে। নীল পোশাকের এটেন্ডেন্ট হাত তুলে থামায় উৎসাহীদের। পিছনের
মেয়েটির মা এগিয়ে যান। তার হাতে আরও গোটা দশেক জামা ঝুলছে। এটেন্ডেন্টটি গুণে গুণে পাঁচটা নিয়ে মেয়েটিকে
দেয়। পাঁচের বেশি নেওয়া যাবে না।
ওদিক থেকে কেউ
বেরোলেই শঙ্খ উদ্গ্রীব হয়ে তাকাচ্ছে। কিন্তু চাঁদমুখের দেখা নেই।
পাশের ছেলেটির
ছটফটানিও বেশ স্পষ্ট। আরও গোটা চারেক ভদ্রলোক কাছে পিঠেই দাঁড়িয়ে।
এই দেখ তো,
ঠিক লাগছে এটা? বলতে বলতে একজন বেরিয়ে এল।
অ্যাঙ্কেল লেংথ ক্যাপ্রি আর বেগুনি হলুদ প্রিন্টের টপ পরে। মাথায় তুমুল সিঁদুরের
সমারোহই বলে দিচ্ছে সদ্য বিবাহিত। টপের
ট্যাগটা বোধহয় লাগছে পিঠে। সেটা ঠিক করতে করতেই বেরল। হাঁটা দেখে মনে হয় এই ধরনের পোষাকে খুব একটা অভ্যস্ত নয় মেয়েটি।
টপটাকে একটু টেনেটুনে ইজি হওয়ার চেষ্টা
করতে করতেই পাশের ছেলেটির সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করছে কি গো, দেখ না, টাইট দেখাচ্ছে কি বেশি?
ছেলেটি কেমন আমতা
আমতা করে উত্তর দেয়, না...মানে...ভালোই তো...
মেয়েটি মুখ তুলে
তাকিয়েই কেমন ঘাবড়ে যায়... একী! এমা!!মানে আপনি কে!! আরে ও কোথায় গেল! এখানেই তো
ছিল !
ততক্ষনে আর এক
ভদ্রলোক তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসে '
আরে এই তো আমি! একটু ওদিকে গেছি আর তুমি তার মধ্যে... হল! আর
কতক্ষন! পেট জ্বলে গেল আমার খিদেয়'
'উফহ,
বাচ্চাদের মত বায়না কেবল। বাড়ি থেকে বেরিয়েই খাই খাই। বলেছিলাম খেয়ে
বেরোতে!' বলতে বলতে
মেয়েটি হুড়মুড়িয়ে ভেতরে দৌড় দেয়।
শঙ্খ হেসে
ফেলে। ছেলেটিও।
হাই,
আমি শঙ্খ।
আমি ভাস্কর। চেনা
চেনা লাগছে!
ভাস্কর ! কোন
কলেজ বলুন তো! আমারও চেনা লাগছে খুব।
জয়পুরিয়া
নাঃ মিলল না। আমি
বি ইউ। অন্য কোথাও দেখেছি হয়ত।
অফিস ডালহৌসি ?
হ্যাঁ ফেয়ারলি প্লেস ।
ওঃ তাহলে হয়ত
ওদিকেই কোথাও ..
কী ঝামেলা বলুন
তো! পুজোর ছমাস আগে থেকে শুনছি বাজার করছে,
অথচ এখনও নাকি কিছুই কেনা হয় নি। আর এদেরও বলিহারি। লাখ লাখ স্টক
ঝুলিয়ে রাখে দোকানে এদিকে ট্রায়াল রুম এই ক'টা। ঢুকতে পারাটাই একটা চ্যালেঞ্জ। আর ঢুকল তো
বেরনোর নাম নেই। ভাস্কর গজগজ করে।
শঙ্খ মজা পায়। এই
অভিজ্ঞতা ওর সম্প্রতি শুরু হয়েছে। যদিও
ভূমির সাথে প্রেম বেশ কিছুদিনের। তবে এই ট্রায়াল রুমের বাইরে দাঁড়ানোটা বেশিদিন
নয়। প্রথমবার যখন এসেছিল,বেশ ভালোই লেগেছিল। ফাঁকাও ছিল
মোটামুটি । ভূমি একটা করে কুর্তি পরে এসে
দাঁড়াচ্ছিল উদ্গ্রীব চোখে তাকিয়ে। যেন শঙ্খর ভালো মন্দ লাগাটাই শেষ কথা। ও হ্যাঁ বললে
হ্যাঁ না বললে না...
পরে অবশ্য ভুল
ভেঙ্গেছে। বেশ কয়েকটা জামা শঙ্খর তেমন না লাগলেও ভূমি সেগুলোই নিয়েছে।
তুমি নিজের
পছন্দেই নেবে তো আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেন? অভিমান
করে বলেছিল শঙ্খ
টিপিটিপি হাসছিল
ভূমি... ওমা! রাগ হল বুঝি বাবুর! দাঁড় না করিয়ে উপায় কি! তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে
চাই এদিকে শপিং ও জরুরী। তাই তো তোমায় সঙ্গে আনলাম...
শপিং আর কতক্ষন।
বাকিটা তো আমরা দুজন...
চারঘন্টা
কেনাকাটার বোঝা তখন শঙ্খর হাতে। নিছক
কৌতূহলেই জিজ্ঞেস করে "তাহলে এদ্দিন
কি করতে?
আগে কখনও আমায় নিয়ে আসতে না তো!"
"বা
রে! এদ্দিন তো যা কিনতাম তা পরে তোমার সঙ্গে বেরোতাম! তুমি কেমন মুগ্ধ হয়ে বার বার
কমপ্লিমেন্ট দিতে যে! কিন্তু এখন তো অনেকদিন হয়ে গেছে। এখন আর ওসব সারপ্রাইজ দেওয়া
কমপ্লিমেন্ট দেওয়ার স্টেজ নেই বাবা... এখন স----ব কিছু একসাথে"
শঙ্খ সেদিনই
প্রমাদ বুঝেছিল। স----ব একসাথে মানে ঠেকের আড্ডা, বন্ধুদের
সাথে খেলা দেখতে যাওয়াটাওয়া সব ভোগে। এদিকে
ভূমির প্রতি আনকোরা মুগ্ধতাটাও এখন
খানিকটা কমেছে। সেজায়গায় ঠেলেঠুলে
ঢুকে গেছে অভ্যেস। তাছাড়া এখন এই ব্যাপারটা বড্ড ঘনঘন চলছে।
"এই,
দেখ, আগের কালোটা না এইটা... শিগগির
বল" ভূমির গলা পেয়ে সামনে তাকায় শঙ্খ। আগের কালোটা কেমন
কিছুতেই মাথাতেই আসছে না! "এইটা, এইটাই
বেটার" বোদ্ধার মত ঘাড় নেড়ে দেয় ...
"কিন্তু
এটার ঝুলটা একটু বড় না? কালোটার ফিটিংস বেটার লাগল না?"
"হ্যাঁ,
তা লাগল" (এখনও কালোটার আবছা ছবিও মাথায় আসেনি) । "তবে এই
রংটা তোমায় খুব মানিয়েছে... "
"ধ্যাত,
আস্তে বল..." হঠাৎ কেমন লজ্জা মত পেল নাকি! হেসে ভেতরে চলে যায়
ভূমি
টাওয়ার এসেছে...
পাশ থেকে ভাস্কর বলে ওঠে নিজের ফোনের দিকে তাকিয়ে।
আমার আবার চার্জও
প্রায় শেষ। নইলে খানিক গেমস খেলা যেত।
ছবির মত সুন্দর
একজন বেরিয়ে এল "এটা দেখ, বেষ্ট লেগেছে আমার।
কিন্তুউ দামটা বড্ড বেশি"
"দাম
নিয়ে ভেব না অত। যা পছন্দ নাও, চলো এবার..." ভাস্কর তাড়া লাগায় তাকে।
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
পায়ে ব্যাথা হয়ে গেল।
চট করে ভেবে নেয়
শঙ্খ। ফোনে টাওয়ার এসেছে,
না?
"যেগুলো পরে দেখালে সেগুলো খুব সুন্দর । কিন্তু তোমার পরে একজন বেরোল একটা
সাদা টপ পরে । গলার কাটটা দারুন। সঙ্গে ফেডেড নীল জিন্স। দেখ তো ভেতরে দেখতে পাও নাকি।তাহলে ওরম একটা
সেট নাও... "
ঝটপট টাইপ করে
সেন্ড করে দেয় শঙ্খ।
মোটামুটি
সাত মিনিটের মাথায় ভূমি বেরিয়ে আসে থমথমে বিরক্ত মুখে । কোন কথা
না বলে জামার ঝাঁকা নিয়ে কাউন্টারে গিয়ে লাইন দেয়।
'হয়ে গেল?
আর কিছু দেখবে না?'
না... এর বেশি
উত্তর আসে না।
টাকা মেটানোর পর
ব্যাগ হাতে নিতে গেলে ছিনিয়ে নেয় ভূমি "থাক। ওই সাদা টপ টাইট জিন্সে পরা
সুন্দরীর ব্যাগ বওগে যাও"
আরে ওর ব্যাগ আমি
কেন বইব! যে বইবে সে তো আমার পাশেই দাঁড়িয়েছিল। আলাপও হল তার সঙ্গে। ভাস্কর। চেনা
লাগল কিন্তু কেন লাগল মনে পড়ল না...
ওঃ,
তাহলে তো অর্ধেক কাজ সেরেই নিয়েছ। থাক। আজ আর মুড নেই ঘোরার ।বাড়ি
যাব।
গোটা রাস্তা
ভূমির মুখ ভার কিন্তু শঙ্খর মুখে টিপটিপে হাসি।
দুদিনে মেঘ কেটে
গেল। চারদিন পর মেসেজ এল শঙ্খর ফোনে
"মার সাথে বেরোচ্ছি পুজোর বাকি
কেনাকাটা করতে। আজ আর দেখা হচ্ছে না। কাল প্রিয়ার সামনে দেড়টায়"
"আরে
এদিকে বাঁশদিয়ে ব্যারিকেড করে রাখলে মোড়ে একটা নো এন্ট্রি লাগিয়ে দে..." শঙ্খ
চিৎকার করে বিলুকে হুকুম করে।
পুজোর মুখে পাড়ার
প্যান্ডেল ছেড়ে প্যান্টালুনসের ট্রায়াল রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা! ফাগোল
নাকি!!
সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায়