নাসির ওয়াদেন ~ বাঘিনী


বাঘিনী

                                      


ছিচকাঁদুনি বৃষ্টির ঝিরঝির পতনে এক কোমর জল দখল নিয়েছে কাঠিকুড় জঙ্গল। সবুজ পাতার শীৎকারে তরঙ্গ-ধ্বনির তালে ভেসে উঠে বাঘেদের ডাক। গর্জনসিক্ত সোহাগিনী শব্দের সাথে পাহাড়ের বুক নিঃসৃত ক্ষীণ জলধারা ক্রমে ক্রমে নেমে আসে সমতল বনভূমিতে। সোনালি আকাশ, জোৎস্নার মোহময়তা,আলোর বন্যা ভাসিয়ে দিয়েছে জঙ্গলে। অসহিষ্ণু বৃষ্টিধারা আর পচনশীল বৃক্ষপত্রের মৃদু শব্দ বিক্ষুব্ধ কোলাহল ভেদ করে উলঙ্গ ক্ষুধার তাড়নায়  বন্যপ্রাণীরা খাদ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে , লোকালয়ের দিকে ছড়িয়ে পড়ে, আশেপাশের অধিবাসীদের কষ্টার্জিত পশুদের হরণ করে ক্ষুধার জ্বালা মেটায়। আলপথ বেয়ে নেমে আসে সমতল ক্ষেত্রভৃমির দিকে। রাত আনুমানিক নয়টাগ্রামগঞ্জে এই সময়ে বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে শরতের আকাশে বাতাসে ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি চলছে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয়েছে, এলাকায় বাঘ বেরিয়েছে, সকলেই সতর্ক থাকবেন ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন এই এলাকায় বাঘ আসার কোন উদাহরণ নেই, তথাপি বাঘের ঘোষণা শুনে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।  দুদিন থেকে নছরালীর একটা সাদাকালো ছাগল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, অনেকের ধারণা হয়ত বাঘে টেনে নিয়ে যেতে পারে নিমবিশ্বাস নিয়ে মানুষ কেউ কেউ বেরিয়ে আসে মসজিদের সামনে, এসে মৌলবী সাহেবের কাছে জানতে চায়, বাঘ কোথায় আছে, কে কে দেখেছে ইত্যাদি

মাঠের আগলদার কাসেদ সেখ সংবাদটি দিয়েছে মৌলবী সাহেবকে পাশের বেলে গ্রামের আমবাগানে বাঘ দেখা গেছে

এক যুবক খেঁকিয়ে উঠে বলে, -- আপনাকে যেকেউ বলল আর আপনি যাচাই না করেই মানুষকে ভয় দেখিয়ে দিলেন?

মৌলবী সাহেব আমতা আমতা করে বলে, সতর্ক করে দেওয়া কী ভুল হয়েছে!

কাসেদ এসে জানাল, পঞ্চায়েত প্রধান পুলিশকে ফোন করে জানিয়েছে, আশেপাশের গ্রামকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে একদল পুলিশ বেলের দিকে রওনা হয়েছে

' অঘনাতপুরে বাঘ বেরিয়েছে, মুঙ্গলাকে আক্রমণ করেছে' খবরটা ছড়িয়ে পড়েছে পাশের গ্রাম দুলানে , খবর ছড়িয়ে পড়ে বেলাড়া, ডুমেরগাঁ,  ধিতোরা , মিয়াপুর ,কাহিলাগড়, নুড়াই গ্রামগুলোতে মাইকে ঘোষণা করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে

   খবরের কাগজের ঘটনা এরকম যে, 'দিন কয়েক আগে এমনই আতঙ্ক ছড়িয়েছিল বীরভূম  - ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত এলাকায় তিনটি খাঁচা পেতেও দেখা মেলেনি বাঘের গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, লোকমুখে বাঘের কথা জানতে পেরে স্থানীয়রা লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রাম পাহারা দিচ্ছে অনেকে বলছেন তারা বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন যদিও কাদামাটিতে সেই পায়ের ছাপ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে'নত্তনপুর এলাকার এক আদিবাসী মহিলাকে বাঘ মেরে ফেলেছে আর কয়েকজন আহত',, খবরের জেরে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে আছে

     মৌলবী সাহেব হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেনবাঘ যে জঙ্গল ছেড়ে খাদ্যানুসন্ধানে লোকালয়ে আসতে পারে অনেকেই মানছেনএখান থেকে কাঠিকুড় জঙ্গলের দুরত্ব কম করে সত্তর থেকে আশি কিলোমিটার হবে , আর বাঘ জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসবে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না

    ভিড়ের মধ্যে থেকে মাঝবয়সী  এক যুবকের ঠাট্টা সুরে বলতে শোনা গেল , যত্ত সব বাজে কথা, বাঘ এল আর এলাকার কোন পশু হারল না, বাঘ বুঝি নিরামিষাশী, ঘাস পাতা খাওয়া বাঘ। আবার ভিড় থেকে কে বলে উঠল, বিশ্বাস করছিস না, বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা বাঘে তো পথ ভুল করে চলে আসতে পারে, এতে অবিশ্বাসের কী আছে পাগলা নদীর ধারে ঝোপঝাপ আছে, থাকতেই পারে, কাশবনে ওরা লুকিয়ে থাকে

   নদীর দু'পাড়ে ঘন কাশবন , দিনের বেলা লুকিয়ে থাকে আর রাতের বেলা খাবার সন্ধানে অন্ধকারে বের হয় তাছাড়া নিজের আস্তানা খোঁজার চেষ্টা করতে যেদিকে সেদিকে  চলে আসতেও পারে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করলেও কেউ কেউ ব্যাপারটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না ওরা যুক্তি দেয়, এসব চোর ডাকাতদের রটনা, আর না হলে কিছু বদমাইশ ছেলের কীর্তি

পুলিশ এসে খোঁজ খবর নিয়ে চলে গেল, কিন্তু মশাল জ্বেলে গ্রাম পাহারা দেওয়ার জন্য বলেও গেল।

     ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমির বুক পাঁজর চিরে বাঁশ নদীর উৎপত্তি। কয়েকটি পাহাড়ের জলধারা দ্বারা পুষ্ট হয়ে বাঁশ নদী অতীত থেকে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলেছে , মিশেছে ভাগীরথী নদীতে লালকাঁদিয়া অঞ্চলে। / এলাকার বাসিন্দারা শান্তির নদী হিসেবে দেখে আসছে, মাঝে মাঝে বন্যার জলে এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে এই নদীতে চণ্ডালমারা কাছে যান চলাচল সেতু জলের স্রোতে মাঝখানে ভেঙে পড়েছে মানুষ দিশেহারা ,যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত যে নদীর জল সারাবছর শান্ত ও নিঝুম থাকে, তাকেও মাঝেমধ্যে উগ্র নাস্তিক হতে দেখা যায়

নদীসভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে বালি সংস্কৃতির যথেচ্ছাচার বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য নদীকেও কষ্ট দেয়, তাই ভয়ংকর হয়ে উঠে এই কয়দিনের বৃষ্টি পতনের পর পাড় ভেঙে কয়েকটি গ্রামে জল ঢুকে পড়েছে। বাঁশ নদীর বন্যার জলে প্লাবিত হয়েছে দুপাড়ের মাঠঘাট বাঁশ নদী এলাকায় বাঁশলোই নদী নামে পরিচিত। ঝাড়খণ্ডের ছোটনাগপুর মালভূমির বুক চিরে বেরিয়ে এসে গোড্ডা জেলার  আমড়াপাড়া কোল ঘেঁষে চণ্ডালমারা, রঁলা গাঁ হয়ে মহেশপুর গঞ্জের উত্তর প্রান্তে পূর্ববাহিনী হয়ে ছুটে আসে রাঢ় বাংলার ভেতর হয়ে গিরিয়ার কাছে ভাগীরথীর জলে সমর্পণ করেছে মহেশপুর তৎকালীন দোর্দণ্ড প্রতাপ  রাজা গোপাল চন্দ্র সিংহ দের রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ সেই স্মৃতি নিয়ে দণ্ডায়মান। মুর্শিদকুলির সেনাবাহিনীর সাথে রাজস্ব সংক্রান্ত বিষয়ে উদয়নারায়ণের সংঘর্ষ বাধলে উদয়নারায়ণ পরাজিত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে অঞ্চলটি নবাবের কর্তৃত্বে চলে যায়। পরবর্তীতে আলিবর্দী খানের সময়ে বাহাদুর খানের হাতে শাসনভার চলে আসে এবং সাড়ে সাতশো বিঘা জমি শাসনকার্য পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়েছিল। এক সময়ে নবাব মুর্শিদকুলি খানের সাথে রাজা উদয়নারায়ণ এর বন্ধুত্ব গভীর ছিল। প্রজাদের উপর জোরজুলুম করে খাজনা আদায় করা থেকে অনাবৃষ্টির ফলে শস্য না হলেও খাজনা মকুব করা হতো না, প্রজাদের ঘরবাড়ি ভেঙে সঞ্জিত অর্থ লুঠ করে নিয়ে যেত নবাবের লোক।প্রজাগণ মরিয়া হয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে নবাবের লোক বীরক্ষেতির রাজা বীরেশ্বর সিংহের তুমুল লড়াই হয় যুদ্ধে বীরেশ্বর সিংহ প্রাণত্যাগ করে। রাজমহিষীসহ পুরবাসিনী লা-ডুবি জলে আত্মহত্যা করে সেই সময়ের লোকগাথাকে আজও কিছু মানুষ গেয়ে থাকে

শস্য শ্যামলা চিরহরিৎ এর পাশে লালমাটির রাঙা আকাশ থেকে সেই লোকগাথা বাঁশ নদীর স্নিগ্ধ বাতাসে ভেসে চলেছে।

   এবারের বন্যা দুকুল ছাপিয়ে এগিয়ে চলেছে মুর্শিদাবাদের দিকে, মাঝখানে বীরভূমির ঢ্যাঁকোল গায়ে দক্ষিণ ধারে পূর্ব উত্তরবাহিনী হয়ে কাহিলাগড় গাঁয়ের উত্তর প্রান্তে ছুটে চলে কাশবন আর ধিযার প্লাবিত করে। নদীর উভয় পাড়ে ঘন কাশবন, সেই কাশঝাড়ে বাঘ, শিয়াল, শুয়োর নানা বন্যপ্রাণী থাকবে তাতে আশ্চর্য নেই রাতের বেলা কাশবনের ভেতরে পশুদের চলাচলের সময় কাশবন কেঁপে উঠে বিশ্বাস বাবুদের জমিজমা এই নদীর দু'পাড়ে ছড়িয়ে আছে বর্ষাকালে বিশ্বাসবাবু মাঝে মাঝে জমির ধান দেখতে যান, কাশবনে শিয়াল, নেউল, বিষধর সাপ দেখে থাকেনতিনি বাঘ কখনও দেখেননি, কিন্তু লোকমুখে শোনা যাচ্ছে এলাকা ঘন জঙ্গলে ভরা থাকাকালীন মাঝে মাঝে বাঘ আসত।

    শীতকালীন ফসল কাটতে খেতমজুররা মাঠে যেত।বিশ্বাসবাবু হরবোলা হয়ে সব পশু পাখির ডাক নকল করে ডাকতে পারতেন। নদীর জলে ছোট ছোট নানান জাতের মাছ ঘুরতে দেখা যেত। সেই নদীর এক ধারে ছোট্ট একটা আদিবাসী গাঁ। ঝেকড়হাটি বিশুদ্ধ সোরেন সেই গাঁয়ের মোস্তাগীর। তার কথায় গাঁয়ের লোকজন উঠে বসে। গাঁয়ে কোন রকম অশান্তি,ঝুটঝামেলা হলে তার দাওয়ায় বসে বিচার সভা। হাড়িয়া খেয়ে বুদ হয়ে চুপচাপ বসে শোনে আর একজন শাগরেদ খাতাকলম নিয়ে লেখে উভয় পক্ষের কথা শেষ হলে মিনিট পাঁচেক সময় হাতে নিয়ে রায় ঘোষণা করে।

     বিশ্বাসবাবুর সাথে বিশুর সম্পর্ক ভাল তাঁরা গাঁয়ের জমিদার তাঁর বাপ-ঠাকুরদা পঞ্চগ্রাম থেকে এসে জঙ্গল ঘেরা এই গাঁয়ের পত্তন করেনসেই সময়ে নবাব মুর্শিদকুলি খানের রাজশাসন চলছিল নবাব আলিবর্দী খানের সময়ে জমি বন্দোবস্ত করে জমিদারি পান। নবাবের পতনের পর ইংরেজরা দেশ শাসন করলে বিশ্বাস বাবুদের সম্পত্তি বেড়ে যায় বাহাদুর খানের অধীনে তাঁদের জমিদারি চলত। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজস্ব দফতরের সাথে বাহাদুর খানের ও তাঁর উত্তর সূর্যের উপর রাজস্ব চাপ বৃদ্ধি ঘটলে তাঁরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তখন পাঠানদের সম্পত্তি নিলাম হয় বহরমপুরের জমিদার রামদা সেন পুরো সম্পত্তি কিনে নিয়েছিলসেই সময়ে গোপাল চন্দ্র সিংহ

রামদা সেনের আবেদনে সাড়া দিয়ে পাঠানদের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে রামদাস তখন এই এলাকা গোপাল চন্দ্র সিংহ দের দান করেন

বিশ্বাসবাবুর দাদু শ্রীমন্ত বিশ্বাস গোপাল সিংহের অধীনে জমিদারি চালাতে শুরু করেনসিংহনগর মৌজা বাহাদুর খানের শাসনে থাকার সময়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার রামচন্দ্রপুর গাঁয়ের দুর্গাপূজাতে এলাকার অন্ত্যজদের প্রবেশাধিকার না থাকায় পাঠান শাসক খানের উদ্যোগে দুর্গাপূজা করার জন্য কোষাগার থেকে খরচ বহন করেন

    বিশ্বাস বাবুদের সেই জৌলুস আর নেইএকে একে সবাই শহর গঞ্জে চলে গেলেও বিজয় বিশ্বাস গাঁয়ের সেই মিঠে রোদ, কোমল হাওয়া, ছিচকাঁদুনি বৃষ্টির ঝিরঝির শব্দ ছেড়ে শহরে যেতে পারেননি, গাঁয়ের মাটি কামড়ে পড়েছিলেন পাঁচপুরুষের সম্পর্ক যেন নাড়ির টান, মা মাটি তাকে আপন করে নিয়েছে বলেই বিজয় বিশ্বাসের ছোট ছেলে বৈদ্যনাথ বিশ্বাস আজও গাঁয়েই রয়েছে। পঞ্চায়েতে মেম্বার হয়ে গাঁয়ের আচার বিচার এখনও করে থাকে

      সাতাত্তরের বিপ্লব ঢেউ আছড়ে পড়লে গাঁ-গঞ্জের পরিবর্তন ঘটে বিশ্বাস বাবুদের জমিজমা বর্গা হয়ে যায়, আর্থিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে একদল লোক মাঝরাতে শলাপরামর্শ করে মাঠের ধান লুঠ করে /

পরদিন সকালে খবর পেয়ে ডাক পড়ে পঞ্চাদের

-- পঞ্চা, এবারও ধান রক্ষা করতে পারলি না?

পঞ্চানন আমতা আমতা করে হাত জোড় করে বলে,  না বাবু, পারলুম না সরকার ওদের, বড়বাবু বলতাছেন, পঞ্চা, তোরা জমিতে যাস না সরকারের কথায় আমাদের চলতে হয়, গেলে গুলি খেয়ে মরবি।

--ভয় পেয়েছিস ?

-- কে মরতে ভয় পায়না হুজুর!  জীবুনটো কত সুন্দর, বাঁচার লেগি দুটো সুখের লেগি তো হামরা লেঠেলগিরি করি হুজুর

-- হারামজাদা, এতদিন তোদের পুষে লাভ কী হলো? কত ভাল ভাল খেয়ে সুখে শান্তিতে ছিলিস, বউ বাচ্চাদের আমোদ স্ফূতি করে দিন কেটেছে, এবার তোর চাকরি থাকবে তো?

  হাতে পায়ে ধরে পঞ্চা বলে, হুজুর প্যাটে মারবেন না, গরীব মানুষ, আপনাদের দয়ায় ছেলেপুলে নিয়ে বেঁচে আছি। আপনার অন্নে হামাদের প্যাট চলে। নোকরী চলি গ্যালে না খ্যাঙ্ মরি যাব।

-- ছাই খাবি। রাগে গজগজ করতে করতে কাছারি বাড়ি থেকে চলে গেছিল ছোট বিশ্বাসের দাদু শ্রীমন্ত বিশ্বাস

      মাস কয়েক পরে হার্ট অ্যাটাক্ হয়ে শ্রীমন্ত বিশ্বাস মারা যায়। একজন রাগি ও বদমেজাজি লোকের অবসান হয়। গরীবের ধন্যবাদ সম্পদ কীভাবে লুঠ করতে হয় সে বিষয়ে তাঁর দক্ষতা ছিল। কারণে অকারণে গরীবের উপর অকথ্য অত্যাচার চলত, ভয়ে গরীবেরা সিটিয়ে থাকত।

তিনি যখন সাদা দামী ধুতি আর পাঞ্জাবি পরে রাস্তার উপর দিয়ে চলতেন, তখন পঞ্চার বাবা ছাতা ধরে পেছনে চলত।গাঁয়ের গরীবেরা ওই রাস্তার দিকে ভুল করেও মাড়াত না হাঁটুর উপর কাপড়পরা লোক গুলো খালি পায়ে হেঁটে যেত,পেন্নাম হুজুর বলে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে পড়ত,মেয়েরা লুকিয়ে পড়ত। নজর মন্দ ছিল।

      গাঁয়ের অন্ত্যজ লোকদের সাহস ছিল মাথা তুলে দাঁড়াতে, আড়ালে আবডালে মানুষ ফিসফিস করে কথা বলত আর নতুন করে বাঁচার জন্য কত আলোচনা করত। মুনসুরালির নেতৃত্ব গোপনে গোপনে একটা সংগঠন গড়ে ওঠে ধীরে ধীরে

-- সাহসী হতে হবে তোমাদের ভীতু মানুষ বারবার মরে আর পুরুষ মানুষ একবার মরে

কথাটা  বুঝতে পারত না মানুষগুলো। কিন্তু স্বাধীন হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে মুনসুরালির কথাগুলো হাঁ করে শুনত, অর্ধেক বুঝতে আর বাকি নাই বুঝেই চুপ করে কথা শুনত। রাত ভোর হওয়ার আগেই সে গঞ্জে চলে যেত। তার উৎসাহে গরীবের একাংশ নতুন করে বাঁচার প্রেরণা পেয়ে যায়।

   মিশিয়ে সেখ শিক্ষিত আর ভাল মানুষ ছিল। পালাগানের পার্বনের সময় মাঝে মাঝে গাঁয়ে এসে আনন্দে কাটাত। কাজের তাগিদে শহরে শহরে ঘুরে বেড়াত, দুচার পয়সা রোজগারের জন্য কত যে পরিশ্রম করতে হয়, তা সে মানুষকে বুঝাত। নিজ পায়ে দাঁড়ালে যে কত আনন্দ তা সবিস্তারে ব্যাখ্যা করত।রোজগার করে ছোট একটা জমি কিনে ফেলল, উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে বাড়ি করবে

  কথাটা শ্রীমন্তবাবুর কানে যেতেই, ভয়ংকর বিষধর সাপের মতো গর্জন ছাড়তে ছাড়তে তিনি চিৎকার করে একদিন বলেন -- অ্যাঁ,এত দূর সাহস, কে আছিস রে?

--জো হুজুর !

--খাইয়ে দাইয়ে মোষের মতো মোটা করলাম, আর বেটারা নাকে তেল মেরে ঘুমাচ্ছিস ?

কলিমদ্দি দৌড়ে এসে বাবুর কাছে এসে হাজির হাতে তেল চকচকে লাঠি, মাথায় লাল পাগড়ি, পরনে মালকোঁচা আধ হাঁটু ধুতি, গায়ে ফতুয়া, হাতে লোহার বালা পরা কলিমদ্দি হাঁক দেয় কর্তা জো হুকুম হো। বনবন করে বার কয়েক লাঠি ঘুরিয়ে নেয়

--খাচ্ছিস দাচ্ছিস, খোঁজ খবর কিছু নিয়েছিস?

--কোন খবর হুজুর!

--গাঁয়ের খবর। রাতের ভেতরে কি চলছে জানিস ? আমার কাছে খবর আছে, মিশির ছোঁড়া এসে কান ভারি করে যাচ্ছে

-- কিছু ভাববেন না বাবু। আজই খুঁজখবর লিছি সব সাফ সুরত করি দিবু।

    পড়ন্ত বিকেল,  সোনালি রোদ পশ্চিমের আকাশে শীত রঙের মেঘের আড়ালে সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির সারা দেহে শীতল উষ্ণ গন্ধ ভেসে আসে শতাব্দীর জাল ভেদ করে গরীবের পাড়ায় আবহ সংগীতের মূর্ছনা, নিবু নিবু গোলাপি নেবুর আলোছায়া রোদ ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসে রাতের আঁধারে আকাশ গাছে জোনাকির আলো। জোনাকির কাম প্রবাহ জাগলে ওরা ওই সময়ে আলোকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে, আলোর সংকেত পেয়ে পুরুষ জোনাকি দলে দলে উড়ে আসে স্ত্রী জোনাকির কাছে কাম প্রক্রিয়া চলে, তাদের দেহে আলোর ঝলকানি বেড়ে যায়, ওরা পরস্পর পরস্পরের  গায়ে গভীর লেপ্টে থাকে দেহে বিবর্তন লক্ষ করা যায়, নতুন /প্রজন্মের জন্য অপেক্ষায় থাকে।

   শীতকালীন হাওয়া খেয়ে পুষ্ট হয়েছে মাঠের ফসল, সোনালি মাঠে পাকা ফসলের গন্ধ ভাসে হাওয়ার ঝরনায়। ঘন কাশবনের ভেতর থেকে মাঝে মাঝে শেয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শোনা যায় সন্ধ্যা হলেই গাঁয়ের লোকজন ঘুমিয়ে পড়ে

    ভোরবেলা পড়শির কোলাহলে ঘুম ভাঙে, পড়শির ডাক শুনে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে দেখা গেল কয়েকজন লোক মিশিরকে বিশ্বাস বাবুদের বাড়ির থামে মোটা রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। কী হয়েছে, জানতে চাইলে লোকজন কথা না বলে সড়ে পড়ছে। ভিড়ের মাঝে গিয়ে দেখি মিশিরের সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন

পাশ থেকে একজন ক্ষীণ কণ্ঠে বলল, আহা! ছেলেটি খুব ভাল ও কি আলু চুরি করতে যায় !

ব্যাপারটা পরিষ্কার হলে, বোঝা গেল, মিশির নাকি বিশ্বাসবাবুর খেতেখেতের আলু চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। মিশির হাতজোড় করে কাকুতি মিনতি করে নিরপরাধ বুঝাতে চেয়েছে, কেউ কর্ণপাত করেনি। আমার বাবা দৌড়ে এসে বাবুর লোকদের ভৎর্সনা করে, পুহাতে তুলে না দিয়ে ছেড়ে দিতে বলে মুক্তি পেয়ে মিশির গাঁ ছাড়ে, আজ পর্যন্ত গাঁয়ে ফিরে আসেনি।  পরিবর্তনের পর পরিবর্তন হাওয়া বয়ে চলে রাজনৈতিক আকাশে। পশ্চিমের উষ্ণ বাতাস শীতল গায়ে লাগে। নদীর জল আয়নার মতো ঝকঝকে, বহে চলছে মন্থর গতিতে বাঁশ নদীর মৃদু স্রোতে। হাঁটুর নিচে জল, কোথাও কোথাও গোঁড়ালি পর্যন্ত, শীতকালে জলশূন্য নদী একটা অগ্নিবলাকা ঝকঝকে জলের উপর

একপায়ে  দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত। শীতল বাতাস বহে যায় নদীর বুকের উপর দিয়ে। জলে মায়াবী স্নিগ্ধতা আর মায়াছায়া খেলা করে, মেঘশূন্য আকাশে নীলছবির হাতছানি পড়ন্ত আলোময় আকাশ সুন্দরী নারীর মতো উজ্জ্বল সৌন্দর্যময়

  আতঙ্ক মানুষকে যে কতখানি অসহায় করে তোলে, তা কয়েকদিন থেকে দেখে আসছে নছরালী। তার কষ্টের ধন, সাদাকালো আলপুনা ছাগল টি একমাত্র অন্ধের যষ্টি, তাকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কচি বাচ্চা দুটো মায়ের জন্য চিৎকার করে ডাকছে, কালো বাচ্চাটা পাঁঠি আর সাদা বাচ্চাটা পাঁঠা। গতকাল মোস্তা এসে খাসি করে গেছে। আজ থেকে ছাগল না পেয়ে বড় চিন্তায় আছে নছর। যদি না খুঁজে পাওয়া যায়, তাহলে বাচ্চা দুটোর কী হবে তার গিন্নি মানত করেছে ধলো দরগার পীরবাবার মাজারে, ভাত-মাংস চড়াবে। কঠিন ব্যামো থেকে বেঁচে এসেছে নছর , পীরবাবার দরগায় সাদাখাসি হালাল করে শিন্নি চড়াবে।

   নছরালী মনে মনে ভাবে, কী মহিমা পীরবাবার। পীরবাবা বুঝি তাদের পরীক্ষা নিচ্ছে।  দোহাই বাবা, তুমার কতা রাখতি পারবি তো!

নছর গিন্নি এশার নামাজ শেষ করে জায়নামাজ বসে দুহাত তুলে খোদার কাছে আরজ করেবলে,-- হে খুদা!  তুমি হামাদের সাদাকালো ছাগলটা ফিরিঙ্ দ্যাও। কুনো বদনোকের লজর যেনু না লাগে।

  বাঘের আগমনের কথা চাউর হতেই সারা এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে আছে। বুকখানা ধড়াস খড়াস করে কেঁপে ওঠে। মন চিন্তা করে  বাঘে যদি খেয়ে ফ্যালে, তাহুলে ধলো দরবারে পীরবাবার মাজারে কী দিঙে মানত পুরা   কোরবে,,,

  ভেবে ভেবে কুল হারায়। বরোকতুলকে মাইকে বলার জন্য দশটা টাকা দিয়ে এসেছে

সন্ধ্যার দিকে বরোকতুল মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ঘোষণা করে। বলে, নছরালীর একটা সাদাকালো ছাগল হারিঙ্ গেলছে , তুমরা কেহু যদি দেখতি পান কিংবা বাড়ির আনটা-কানটায় থেকি থাকে, খবোরটো দিবেন।,,,,,

      ছাগল খুঁজি না পেয়ে, নছরালী মনে মনে ভাবে গাঁয়ের প্যাকার ছোঁড়ারা আবার মহিষপুরের হাটে বিচি দায়না তো!  বাঘে কী সত্যি নিঙ যেতি পারে? প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়

বাঘ বেরিয়েছে, সংবাদে আগলহীন বাড়ির লোকজন ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ঘরে খিল এঁটে শুয়ে পড়ে। হঠাৎই মোবাইল বেজে উঠলো উল্লাস বাবুর, অন্য প্রান্তে কে বলছে, খবরটা সঠিক কী?

-- কীসের খবর? ?

আপনার গাঁয়ে বাঘ বেরিয়েছে কি?

উল্লাস বাবুর প্রত্যুত্তরে জানান,  না, তার গাঁয়ে না, পাশের গ্রাম বেলেতে এরকম সংবাদ

গোটাচারেক যুবক দুর্গামন্দিরের পাশে তাস খেলতে গিয়ে বাঘ দেখে। চল্লিশ হাত দূরে বাঘ বসে আছে দেখে চিৎকার করতে করতে পালিয়ে বাঁচে তারাই গোটা গাঁয়ের লোক জড়ো করে পুলিশকে ফোন করে

--' একটু সতর্ক থাকবেন ' বলে ফোন কেটে দিল খবরটা মোবাইলের মাধ্যমে আশেপাশের সব গাঁয়ে ছড়িয়ে পড়ে, মানুষ বাঘাতঙ্কের জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যায়

  গাঁয়ের এক প্রান্তিকে বাস করে  সরিফুদ্দি। ভাঙা পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি দীর্ঘ কয়েক বছর থেকে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে বিছানাগত।

চলাফেরা তো দূর অস্ত বিছানা থেকে উঠে বসতেই পারে নাসেদিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখি ভীষণ কষ্টের মধ্যে আছেআমাদের দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলল, কষ্টের বর্ণনা   প্রকাশ করে নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করতে লাগল আক্ষেপ করে জানায় সে আর বাঁচতে চায় না খোদা কেন যে তার মরণ দেয় না মরে গেলে শান্তি পাবে

   সরিফুদ্দি আর বেঁচে থাকতে চাইছে না, জীবনে অনেক লড়াই করেছে। জোয়ান বয়সে কত কুস্তি খেলেছে, কত বড় বড় কুস্তিগিরকে আড়াই প্যাচ কষে মাটিতে ফেলে দিয়েছে, সেসব কথা আজ তার কাছে ইতিহাস কোন লড়াইয়ে হার মানেনি সেকথা মনে করিয়ে দিল আজ বার্ধক্য আর অসুস্থতা তাকে অসহায় করে তুলেছে এবার পরকালের দিকে পা বাড়িয়ে আছে, দম ফুরিয়ে গেলে যেন বেঁচে যায়

       সহানুভূতি জানিয়ে তাকে নতুন করে বাঁচার সাহস জুগিয়ে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কিছু নেই মানুষ যখন অসহায় হয়ে যায়, তখন তাকে শুধু সান্ত্বনা দেওয়া ব্যতীত কিছুই থাকে না এক্ষেত্রেও তাই, মানুষ অসহনীয়, অসহিষ্ণু হয়ে গেলে জীবনের প্রতি আস্থা কমে যায়, বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে যায়, নিজেকে খুব ছোট মনে করে।

   সাইকেলের টায়ার জ্বেলে কিছুলোক ছুটে গেল মুঙ্গলার বাড়ির দিকে বাঘ তার নেবুগাছের তলায় বসে আছে সারা সন্ধ্যা ছুটে ছুটে ক্লান্ত, তাই অন্ধকারে নেবুগাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছে, শিকার করার কোন স্পৃহা নেইমুঙ্গলা রাতের বেলা পেচ্ছাব করতে উঠোনে আসে, চোখে ঘুম ঘুম ভাব, চারদিক গাঢ় অন্ধকার। চোখে সচরাচর কিছু চট করে দেখা যাবে না, হঠাৎই তার চোখে পড়ে সামনে গাছতলায় বিশাল এক জন্তু বসে আছেরাতের আঁধারে চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে

  'বাবা গো, মা গো 'বলে চিৎকার করতেই আশপাশের বাড়ির লোকজন ছুটে আসে, মুঙ্গলা বোবা হয়ে গেছে, কোন কথা বলতে পারছে না, থরথর করে কেঁপে যাচ্ছে লাঠি, বল্লাম যে যা পেয়েছে তাই হাতে নিয়ে দৌড়ে আসেশ্রীকান্তের শ্রীনাথ বহুরূপীর কথা মনে পড়ে ভট্টাচার্য বাবুর খড়মের আওয়াজ কানে শুনতে পাই নেবুগাছের কাছে যেতেই বাঘ গা ঢাকা দিয়েছেহাওয়া বাঘ।

  তখন কেউ কেউ অবিশ্বাসের সুরে বলে, '' কই গো বাঘ, তুমি উদয় হও।" ভিড় ঠেলে একজন মাঝবয়সী লোক এসে বলে, কই, দেখি পায়ের ছাপ!  বাঘ হয়তো পালিয়ে গেছে, কিন্তু পায়ের ছাপ তো নিয়ে যায়নিতন্নতন্ন করে মানুষের পায়ের ছাপ ছাড়া অন্যকিছুর  ছাপ চোখে পড়ল না মুঙ্গলা তো বিছানায় শুয়ে থরথর করে কেঁপে যাচ্ছেমুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না

    চারিদিকে হুলস্থুল কাণ্ড গোটা গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছে, কেউ ঘরের বাইরে যেতে চাইছে না, সাহসী কয়েকজন ছাড়া বিনিদ্র গ্রামের বাসিন্দা  ঘুম ত্যাগ করে পাহারারত যাদের ঘরে খিল আছে তারা খিল এঁটে ঘুমাচ্ছে, চোখে ঘুম নেই বাইরে ইঁদুরের শব্দেও বাঘের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছে যেন

     রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে সরিফুদ্দির ভাঙা বাড়ি। বৃষ্টির মনখারাপের দিনে জ্বর বেড়ে গেছে সবুজ পৃথিবীর স্বাদ তেতো মনে হচ্ছে তার। এ পৃথিবী তো সুখের আবাস। যদি সুখ নাই থাকে, তবে বেঁচে থাকার মানে কি  বাড়ির ভেতরে গোঙানি আওয়াজ পেয়ে ভিতরে গেলাম। দেখি উঠোনে  পাতা বিছানায় শুয়ে কাঁপছে কাছে যেতেই খপ করে ডান হাতখানা চেপে ধরে আকুতিপূর্ণ নিবেদন করে জানাল শীঘ্রই যেন তাকে নিরাপদ জায়গা নিয়ে যাই পাঁচিল ভাঙা ফাঁকা বাড়ির উঠোনে থাকতে চাইছে না তারও মনে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছে, বাঘ নির্ঘাত রাতের বেলা এসে ঘাড় কামড়ে তুলে নিয়ে যাবে বউ বলেছে সে আজ বাইরে থেকে বাঘের পেটে যেতে চায়না

    তার আকুতি মিনতি দেখে মনে কষ্টবোধ হল। যে মানুষটা দুদিন আগে মরবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল, সেই মানুষটা আজকে বাঁচার জন্য কতটা আকাঙ্ক্ষিত। জীবন বড়ো মোহময়। বেঁচে থাকার চেয়ে আর বড় কী থাকতে পারে

 

    কিছুটা দূরে একদঙ্গল শেয়ালের ডাক শোনা গেল

 

কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন