পৌলমী ভট্টাচার্য্য ~ চেনা আতঙ্ক


চেনা আতঙ্ক

 


দিনের আলো ক্ষয়ে এসেছে সোনা ক্ষয়ে যাওয়ার ঢঙে হাড় হাভাতের মতো দাঁড়িয়ে থাকা এক তলা কিম্বা অসামঞ্জস্য দু – তিন তলা বাড়িগুলোর জন্য ঐ নষ্টা মেয়েমানুষ গুলোর সুবিধে হয়েছে বৈকি ওরা এখনো সাজেনি। সাজেনি এখনো ওদের মতো করে রাতের শহর ব্যস্ত শহরের বাতিস্তম্ভ গুলো হাঁপিয়ে উঠেছে ওদের কর্তব্য করার  জন্য। প্রদোষ কালের সন্ধিক্ষণে শহর, শহরতলি, অলি- গলির বাতিস্তম্ভ গুলোর কী আনন্দ! ওরা আবার জ্বলবে, আবার – আবার--- বারবার নিভবেও কিন্তু জ্বলবে তো!  ঐ মেয়েমানুষ গুলোর রঙ মাখা চেহারার ভেতর একটা অন্য রূপ হয়তো ঘুমিয়ে আছে সভ্যতার মুখোশ ঐ মেয়েমানুষ গুলো কে সুস্থ থাকতে দেয় নি। সভ্য জগতের বিকৃত মাথারা ওদের শরীর গুলো কে নেকড়ে, কুকুরের মতো ছিড়ে খেয়েছে। তকমা পড়েছে ওরা নষ্টা মেয়েছেলে সত্যি কী তাই? তবুও ওরা মনোরঞ্জন করে সভ্য বাবুদের খিদে মেটাবার জন্য।


সময় কে নিংড়ে সন্ধে  চলেছে রাতের কাছে। বৈদ্যুতিক নিয়নের আলোয় পাঁজরা গোণা কালো কুকুরটাকে পরম যত্নে আদর করছে বিল্লু। ও এরকমই; রাস্তার বেজম্মা,বেওয়ারিশ জীবগুলোই ওর একমাত্র বন্ধু। জবার কান ফাটানো চিৎকারে বিল্লুর টনক নড়ে কুকুরটাকে আদর করা আর হল না। টুপ করে রাতের তারারা এক এক করে জ্বলে উঠেছে বেনারসের আকাশে, এখনো গোণা যায়, এরপর সব হারিয়ে যাবে নিজেদের মতো তারায় আঙ্গুল দেওয়া বিল্লুর একটা নেশা। লালীবাঈ এর পেল্লাই মহল্লার আগে একটা আধভাঙ্গা রকের ওপর বসে কুকুরটার সাথে খেলা করছিল বিল্লু, লাগোয়া ঘর থেকে মীরার ভজন ভেসে আসছে। হাল্কা হাওয়ায় এঁদো গলি মেতেছে হিন্দি ভজনের সুরে সন্ধ্যে নামতেই বেনারসের ঘাট সেজেছে নিযুত প্রদীপে,সঙ্গতে উপচে পড়া মানুষের কোলাহলে ঘাটের ওপর ইতস্তত স্থান করেছে কিছু ভক্ত সাধক - সাধিকার দল; ওরা ভজনে আকড়াতে চাইছে অনাড়ম্বর মাথাগুলোকে জবার চিৎকারে বিল্লু অনেক আগেই পৌঁছেছে শামসুর চাচার চায়ের দোকানে নিয়ম মাফিক স্টিলের লম্বা ঢ্যাঙ্গা গ্লাসে চা আর নোনতা বিস্কুট এনে দিয়েছে বিল্লু ওর পাতানো মাসি জবা কে

দরজায় টোকা মেরেছে কেউ। ঘরের ভেতর হাল্কা ধূপের গন্ধ, রঙ বেরঙের নকশা করা চাদর টান করে বেছানো,খসে পড়া সিমেন্টের তাকে কিছু সাজের সরঞ্জাম ; আর রয়েছে সামান্য আত্মতৃপ্তি দরজা খোলে বকুল।


----   কখন থেকে দরজা নাড়াচ্ছি, খুলবি তো!

----   হুম  

----   হুম মানে;   নেকা না খুকু?


তিরঙ্গার প্যাকেট এক টানে ছিঁড়ে মুখে চালান দেয় জবা , রকমারি কাঁচের চুড়ি আর চা দিয়ে  বিনুনি পাকাতে পাকাতে বেরিয়ে যায় ও সন্ধে কে বরণ করা বকুলের হয়ে গেছে, এবার নতুন সাজে নতুন রাতের জন্য তৈরি করবে ওর যাত্রাপথ। নিজের মাতৃভাষা কে একমাত্র কাছে রাখার উপায় হল জবা। ও ছাড়া সবার সাথেই হিন্দি তে কথা বলতে বকুল কে বেশ কিছু দিন ধরে বকুলের মন ভালো নেই ওর জীবনে লাভের হিসেব নিকেষের কোন খাতাই তৈরি হয় নি, লোকসান ভরে গেছে ওর অজান্তে পৃষ্ঠা দখল করে আবছা আলোর মতো বকুলের কিছু স্মৃতি আজও ঘোরা ফেরা করে ওর কাছে সেই কবে বেনারস শহর নিজের শহর হয়ে গেছিল। কোথা থেকে ভেসে এসেছিল তাও অজানা। লালীবাঈ এর খাস নওকরানী রামাঈয়া কে সাথে নিয়ে প্রত্যেকদিন সকালে গঙ্গায় পুজো দিতে আসে লালীবাঈ। সেদিনের সকালেও তেমনি আসা দেমাকী,রাশভারী, গজগমনে চলা লালীবাঈ এর নজর যায় এক রূপসী কিশোরীর দিকে জলের তোড়ে ভেসে স্থান পেয়েছিল দশাশ্বমেধ ঘাটে,পূণ্যার্থীদের সাহায্যে জ্ঞ্যান ফিরলেও মরতে চেয়েছিল আবার বকুলের শারীরিক ভাষায় সন্দেহ হয় লালীবাঈ এর রামাঈয়া কে বলে, --- “ দেখ্ তো ও ছোড়ী কো সায়দ ডুব নে কা মন কর রহা হ্যায় বাঁচা লে উসে” রামাঈয়া চায় নি ঝামেলায় জড়াতে রামাঈয়ার চোখের ভাষা পড়ে গঙ্গার ঘাটের সিঁড়ি দিয়ে নিজেই নামতে শুরু করে লালীবাঈ


---      মাই আপ রুখ যাইয়ে   ম্যায় দেখতি হু


আড়চোখে মাখন সিল্কের শাড়ির ঘোমটা টেনে একবার দেখে নেয় রামাঈয়া কে বেঁচে গেছিল বকুল সেদিন, ডুকরে কেঁদে লালীবাঈ এর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ও ; তারপর কিছু জানে না পরে যখন জ্ঞ্যান ফেরে তখন সে লালীবাঈ এর কোলে মাথা রেখে এক মাতৃস্নেহের জালে  আবদ্ধ হয়েছে চোখ খুলে অচেনা পৃথিবী কে দেখেছিল বকুল চোখের কোণ দিয়ে অবাধ্য জল বারণ মানেনি লালীবাঈ প্রথম শুনেছিল মা শব্দ বকুলের মুখে বুকের ভেতরে জ্বলন্ত কয়লার তাপে পুরনো হৃদযন্ত্র পুড়তে বসেছে  বাঈ এর চোয়াল শক্ত করে  নিজেকে বুঝিয়েছিল সবার কপালে সব সুখ সয় না একটা সময় সুখের সাগরে ছোট্ট ডিঙি ভাসিয়েছিল, যে ডিঙির নোঙর বাঁধবে ওদের সুখের দ্বীপে এমন স্বপ্নে  হয়তো চাঁদের কলঙ্ক এসে ধরা দিয়েছিল, চাঁদ নয় সেই মুহূর্তে সুখের বিসর্জন দিয়েছিল লালীবাঈ অচেতনতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে দৃঢ় চিবুকে কথা ছুঁড়ে দেয় সেই কিশোরীর উদ্দেশ্যে


----    তু হামাকে মা কিউ বোলা?   হামি কারও কুছ নহী আছে


বকুল শান্ত হয়ে লালীবাঈ এর হাত ধরে বলেছিল যে, সে আজ থেকে তাকে লালী মা বলেই ডাকবে পৃথিবীর আলো নতুন করে দেখার সুযোগ দিয়েছে বাঈ, মা তো ডাকতেই হবে তাকে বাঁধা দিতে গিয়ে গলার স্বর ভেতরে  দলা পাকিয়ে গেছিল বাঈ এর রামাঈয়া সুনজরে দেখে নি কখনো বকুল কে খাস হওয়ার লোভ মনে দামামা বাজিয়েছিল অনেক আগেই  ; এখন যদি কেউ এসে মাইজী আর রামাঈয়ার মাঝে দিওয়ার তোলে তাহলে রামাঈয়ার বেনারসে দ্বিতীয় লালীবাঈ হওয়া হবে না, সে জানত বকুল তৈরি হয়ে লালীমায়ের ঘরে এসেছে স্বর্গের কিন্নরীরা হয়তো এমন ছিল পুরাণে, কিন্তু মর্তলোকে এমন নারী মেলা ভার সোনালী জরির ঠাস বুননে  আর শ্যাওলা রঙের ঘাগড়ায় বকুলের উদাসীন মুখ যেন আজ অন্য কিছু বলছে লালীবাঈ এর সামনে দেওয়াল জোড়া কাঠের নকশায় আটকানো আয়না, তার সামনে খয়েরি মখমলি গদিতে বসে লালীবাঈ  সাজছে রামাঈয়ার হাতে বাঈয়ের সামনে আয়নায় বকুলের অবয়ব উঠে দাঁড়িয়েছে লালীবাঈ, সেও তৈরি এই বয়সে ও তাকে টেক্কা মারার জন্য হিম্মত লাগবে কারোর বকুলের হিম্মত আছে বলতে হবে আয়নার সম্মতি ছাড়াই বকুলের রূপের ওপর একমুঠো সোনার কাঠি ছুঁয়ে দিল লালীমা, নিজের চোখের কাজল নিয়ে বকুলের চুল দিয়ে লুকানো কপালে টিকা লাগিয়ে দেয়


---   কিসিকো নজর না লগ জায়ে


এই মাতৃত্বের স্বাদ কে কখনোই অবজ্ঞা করতে পারেনি দাম্ভিক  লালীমা যাকে সবাই কুর্নিশ করে , লালীবাঈ এর গীত কা ডেরা যেখানে এক নামে সবাই চেনে এই শহরে, সেখানে কারও কাছে লালীবাঈ বশ্যতা স্বীকার করেছে ভাবতেও অবাক লাগে এই হয়তো ভবিতব্য বকুল আর লালীবাঈ যখন জলসাঘরে পৌছেছে তখন তবলার কানা ছুঁয়েছে হুসেন মিয়াঁ,বরকত আলীর সারেঙ্গীর ছড়ে আঘাত পড়েছে, হারমোনিয়ামের একপাশ উঠে গেছে সাহাবজীর ডান কোলের ওপরে ; আর তাদের সাথে নাদের মাদকতা ছড়াচ্ছে কিঞ্জল স্বরযন্ত্র দিয়ে পিলুর ঠুংরি তে জলসাঘরের ঝাড় লন্ঠন টা দুলছে আর মিঠি মিঠি হাসছে দুলকি চালে ঠুংরির ফাঁকে এক হাত দিয়ে কপালে হাত ছুঁয়ে নিল কিঞ্জল লালীবাঈ কে দেখে লালীবাঈ ও ভুরু তুলে সম্মান নিজের কাছে রেখে তাকিয়ায় আয়েশ করে বসেছে আদ্ধা তালে জমে উঠেছে তখন কিঞ্জলের গলায় ঠুংরি গীত কা ডেরা খুব একটা বড় নয়, মাঝারী মাপের  দুটো ঘর নিয়ে ওদের জলসাঘর শ্রোতাদের মনোরঞ্জনের জন্য বসার জায়গাটা ভারি সুন্দর ; মখমলি সাদা গদি, কিছু তাকিয়ার সুব্যবস্থা, কুরুশের বুননে বক সাদা দস্তানা দুভাগ করে দুদিক দিয়ে নেমেছে রঙিন পানীয় স্থান নিয়েছে কারুকার্য করা কাঁচের পাত্রে, ঢোলকের আকারে কিছু কাঁচের গেলাস কুর্নিশ জানাচ্ছে রঙিন বাবুদের। মাঝে মাঝে আঁতর দিয়ে মোহিত হচ্ছে পরিবেশ আপাদমস্তক নকশা আরশিতে জলসাঘর পরিপাটি চুনিলাল ইতিমধ্যে ”ক্যায়া বাত ক্যায়া বাত “ করে ভণ্ডামি শুরু করে দিয়েছে এক প্রস্থ ঠুংরির বন্যা বয়ে গেল মহলে ; সবাই নেশাতুর চুনিলালের আদিখ্যেতা না পসন্দ লালীবাঈের, কিন্তু রুপিয়ার প্যায়ার এতই যে বেহিসাবি বাবুদের ঘাটাতে নারাজ কিঞ্জল কে উদ্দেশ্য করে যাযাবর টাকা গুলো রামাইয়ার হাত ঘুরে পৌঁছে গেল লালিবাঈ এর নকশা মোড়া কাঠের বাক্সে রাত বাড়লে অন্ধকারের সামিয়ানার তলায় গাইয়ে আর শ্রোতার মিশ্রণটা খুব জমে আচ্ছন্ন পরিবেশে গুণমুগ্ধদের রসদ জোগাতে কার্পেটে এবার বসেছে বকুল মোহময়ী নারী সবাইকে মুগ্ধ করেছে এমনিতেই তার রূপে, সাথে যখন সুর শলাকা উচ্চগ্রাম ছুঁল, আহা! এমন সংসর্গ কেউ ছাড়তে চায় ? “ কা করু সজনি আয়ে না বালম “ – আবেগ মেখে বন্ধ চোখে কয়েক ফোঁটা মুক্ত ঝড়ে পড়ল প্রলেপ মাখানো গালে


--- ওয়া! বেটি ওয়া! কেয়া বাত, তুনে আজ মেরা দিল লুঠ লিয়া


এলিয়ে পড়া লালিবাঈ মুহূর্তে রঙিন সুরার গ্লাস হাতে নিয়ে উঠে বসেছে বকুলের সুরের জাদুতে মহল্লার অলি গলি মাতাল হয়ে উঠেছে ঠুংরির লগগি তে বকুল জোয়ার তুলেছে ;” আয়ে না বালম” এক এক করে বাবুদের নজরানা জমা হচ্ছে বেশি লগ্নিতে বাঈ এর কাছে একটা কালো মুখের লেঠেল ইশারা করে কাছে ডাকল রামাইয়াকে জলসাঘরের বাইরে ও বেনারসের রাত তখন মজেছে বহির্মুখী মেয়ে গুলো আর বাবুদের মজলিশে কোমর দুলিয়ে রামাইয়া লেঠেলের নিকষ দেহের কাছে গেল ; একটু ফিসফিসানি তারপর আঁতকে ওঠা ; হায় রাম এক ঝটকায় শরীরটাকে নিয়ে ফেলল লালিবাঈ এর কাছে দুটো ঠোঁট শুধু নড়ছে কিন্তু চতুর রামাইয়ার শারীরিক ভঙ্গির প্রকাশ ঘটল না বাঈ এর মুখে বিরক্তি, আক্রোশের ছাপ কিন্তু অচেতন বাবুদের কাছ থেকে রুপিয়া নিয়েছে সে, জলসা মাঝপথে বন্ধ করার বান্দা সে নয় গ্লাসের সুরা সবটা গলা পর্যন্ত পৌঁছল না লালিবাঈ এর,রামাইয়ার হাত ধরে গিয়ে পৌঁছাল মহল্লার মূল ফটকে মিলিটারি পোষাকে এক জওয়ান পড়ে আছে নর্দমার সামনে ; অন্ধকার তার মুখটাকে ঢেকে দিয়েছে কিছু লোক ইতস্তত ছুটছে গলির সামনে বড় রাস্তায়, ষণ্ডামার্কা দু চার জন মাথায় তাজ পরা লোক হাতে বড় বড় লাঠি নিয়ে দ্রুত এপাশ- ওপাশ করছে বেশি হাঁটার ক্ষমতা নেই লালিবাঈ এর বাঈ এর কথামতো বিশ্বস্ত দুটো লেঠেল তোলার চেষ্টা করছে মিলিটারির শরীরটাকে মাথায় আঘাত গভীরতর, রক্ত গড়িয়ে কান বেয়ে পড়েছে উর্দিতে এমন দাঙ্গা বহুবার দেখেছে বেনারস শহর, দেখেছে লালিবাঈ ও, তাতে প্রাণ গেছে বহু বেকসুরের আর মরতে দেয়া যায় না একটা তাজা প্রাণ কে পাঁজাকোলা করে জওয়ান কে নিয়ে এসেছে লালিবাঈ এর লোকেরা মহল্লা সংলগ্ন একটা গুদাম ঘরে নিরুপায় বাঈ,নয়তো ছেলেটা মরে যেত


দরজা বন্ধ ঘরে বাগবিতণ্ডা চলছে বাঈ এর সাথে; কিন্তু কার সাথে! সকালের গরম জল আর মধু দিতে এসে রামাইয়া দাঁড়িয়ে আছে দরজায় কান লাগিয়ে আবছা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে আসছে ঘর থেকে রামাইয়ার থিত জায়গায় সূর্য তার আলো কে পাঠানোর প্রয়োজন মনে করে নি ; ওর সন্দিগ্ধ মন আকাশ – পাতাল ভাবছে এদিকে লালিবাঈ এর গঙ্গা স্নানের সময় চলে যাচ্ছে আলতো করে টোকা পড়ল দরজায় বাঁধন হীন চৌকাঠে দাঁড়িয়ে বাঈ বর্ণচোরা  মুখে রক্তমাখা চোখ, প্রশস্ত কপাল জুড়ে আতঙ্কের ভাষা রামাইয়া শ্বেতপাথরের টেবিলের ওপর গরম জলের গেলাস, মধুদানি রাখে গতরাতের রক্তমাখা মুখটাকে নিকষা রাত চিনতে দেয়নি মাথায়, বুকে জখম নিয়ে সিল্কের ধুতি জড়িয়ে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে সেই যুবক পালঙ্কে লালিবাঈ এর অবাধ্য মনে আতঙ্ক উঁকি মেরেছে মৃত্যুর সাথে কানামাছি খেলে এতগুলো বছর পেরিয়ে তার ভাই এসেছে লালিবাঈ এর কাছে সময় তো তাকে আনন্দ উপহার দিতে পারত নতুবা একটা খুশি ; দিল না, পরিবর্তে বাঈ এর মিলিয়ে যাওয়া ক্ষতস্থান কে নতুন করে রক্তাক্ত করতে চায় ইশারা করে ঘর ছাড়ার হুকুম দেয় রামাইয়া কে এক যুগ আগের ইতিহাসে ঘর গুড়িয়ে যাবার রাত এসেছিল লালিবাঈ এর জীবনে  কলকাতা থেকে দুবাইয়ে পাচার হচ্ছিল লালীবাঈ সহ কিছু কিশোরী দলের মাথা ছিল নিজের মর্দ জগদীশ প্রসাদ তখন লালীবাঈ এর পরিচয় কারও ঘরের ঘরণী লীলাবতী মিলিটারিতে তখনও যোগ দেয়নি লালীবাঈ এর ভাই গোপন সূত্র মারফৎ তার জামাইবাবুর কীর্তি জানতে পারে সে, কিন্তু দিদি যে রক্ষকের ভক্ষক ভাইয়ের মাথায় আসেনি দুবাইয়ে যাবার আগে লালীবাঈ কে নিয়ে বেনারসে যাবার কথা ছিল প্রসাদের ভাই কে একা ছেড়ে যেতে মন চায় নি দিদির। ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায় পাচার চক্র ঘানি পিষছে, অগত্যা দিদির পতি দেবতাও হাজতে গেছিল তীর্থ করতে পরিস্থিতির কঙ্কাল সামনে আসায় লীলাবতী মানসিক ভাবে ডুবতে থাকে ততদিনে মিলিটারিতে যোগ দিয়ে ওর ভাই দেশ ছাড়া পিছুটানের অভাবে লীলাবতি হঠাৎ যাত্রা করল উদ্দেশ্যহীন লক্ষপথে, পরিহাস পিছু নিল, পৌঁছে গেল বেনারসে নানা বাঁধা কাটিয়ে এতগুলো বছর বেনারস তাকে আপন করে নিয়েছে। সেই লীলাবতী এখনকার লালীবাঈ


দিদির খোঁজ না পেয়ে যখন ভাই নিশ্চিত যে দিদির মৃত্যু হয়েছে,হঠাৎই একদিন গঙ্গার ঘাটে লালীবাঈ কে দেখে ওর ভাই, কিন্তু হিসেবে গণ্ডগোল হয় কিছুদিন নজর রাখে লালীবাঈ এর গতিবিধির ওপর অফিসের ছুটি পেয়ে বন্ধুর বাড়ি এসেছিল ঘুরতে দিদির কাছে পৌঁছানোর আগেই হিন্দু মুসলিম দাঙ্গায় ওর মাথায় পড়ে লাঠি সেই পোশাক কেও রেয়াত করে নি কোন ধর্ম কলকাতায় ফিরে জানতে পারে জগদিশ জেল থেকে পালাতে গিয়ে এনকাউনটারে মারা গেছে


সকালের মিঠে রোদ এখন কড়া হয়েছে, লালীবাঈ মানসিক ভাবে তাজা অনেকটা একটা আফশোস যে,  আসল নকলের খেলায় তার অনেক বছর হারিয়ে গেল বকুলের গলায় দরজা খোলে লালী মা অসূর্যম্পশ্যা বকুল লালী মাকে প্রসাদ দিতে এসেছে আজ লালীবাই এর ঘরের, মনের সব দরজাই উন্মুক্ত বকুলের জন্য জানলা দিয়ে নতুন রোদ আর গঙ্গার হাওয়া ঢুকছে ঘরে, যাতে হয়তো বকুলের এক নতুন জীবনের সূচনা হবে


কপিরাইট লেখিকা কর্তৃক সংরক্ষিত

 

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন