নাসির ওয়াদেন ~ মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘরকন্না

 

মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘরকন্না

 


"জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ব্যবধান গড়ে তোলে কত কিছু। তার ব্যপ্তি অপরিমেয়। সে নির্মাণ ভেঙে হয় বিনির্মাণ । আর তা থেকে জন্ম হয় নতুন নতুনতর-র। এটাই সৃষ্টির চিরন্তন প্রক্রিয়া। জীবন মরণের সীমানা স্বেচ্ছাকৃত নয় । নয় বলেই সে জীবন ঘিরে এত অনিশ্চয়তা , কখনও বা আশঙ্কা । জীবনকে দেখাও হয়তো বা সেজন্য প্রত্যেকের চোখে এক একটি আলাদা চিত্রপটের মতো । কিন্তু যত ভিন্ন হোক দেখার চোখ, যত রঙিন চশমা থাক সে চোখে,  জীবনকে ভালবাসে না, এমন কেউ কি আছে ! বেঁচে থাকার মধ্যে প্রতিনিয়ত যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াসমূহ , তার সঙ্গে যেন মিলেমিশে যায় এইবোধ। এ-ও এক আত্ম উপলব্ধি, আত্মবৎ সর্বভূতেষুর মতো এক জীবন দর্শন । বেঁচে থাকা যে এ জীবনের পরমাশ্চর্য ঘটনা, তা জেনেও সেই জীবন রসে জারিত থাকতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে না , এমন মানুষ সংখ্যায় অতি নগন্য। জীবনের এ এক অতি স্বাভাবিক ছন্দ। কিন্তু অকস্মাৎ ছন্দ পতনে ঘটে গেছে এ সবের । সৌজন্যে কোভিড-১৯।,,," কঠিন ও বাস্তব সমস্যার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে সময়। ঘড়ির কাঁটার সময় মেপে মেপে চলছে পৃথিবীর যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ। আসলে আধুনিকতার ধাঁচে কিংবা উত্তরাধুনিকতার খোলসের ভেতর লুকিয়ে আছে পার্থিব জীবনের নিশ্চয়তা, নির্ভরতা আর কল্পনা ও স্বপ্নালু চিন্তা। ক্রমাগত প্রযুক্তি আর জৈব শক্তির অপব্যবহারের ফলে নতুন নতুন জটিল ও শাণিত জীবাণু নির্মিত হচ্ছে মানুষের অজান্তে। সেই দৈত্যাকৃতি জীবাণু একসময় মানবজীবনে আশীর্বাদের বিপরীতে অভিসম্পাত বর্ষণ করে সুখের আলয়ে অসুখের বাতাবরণ সৃষ্টি করে যাচ্ছে অবিরত। মৃত্যু একটি কঠিন ও বাস্তব বিষয়, যাকে পরিহার করা, তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া জীবের পক্ষে সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি । অসুখ থেকে মানুষের পরিত্রাণ যেমন নেই, তেমনি আবার অসুখের নিরাময় সম্ভবপর হয়েছে বিভিন্ন প্রযুক্তি আর শুশ্রূষার বিনিময়ে । আজকের এই মারণমূখী সভ্যতার বুকে মানুষ জীবিত আছে, আধুনিকতা লব্ধ জ্ঞান আর বিজ্ঞানের বদৌলতে । তাই এই নগ্ন শরীরে জীবনমৃত্যুর খেলা অনিবার্য ঘটনা । মৃত্যুকে ' an offensively meaningless event ' মনে করা হয় ।


মানব সভ্যতার অগ্রগতি আধুনিক সময়ের উর্বর ফসল । মানুষ প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে জৈবিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্মিত হয়ে থাকে, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পরিমাপিত হয়ে, সময়, ক্ষণ, দিন নির্ধারিত হয়। বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে কৃত্রিম 'জিন ' তৈরির প্রক্রিয়ায় ক্লোনিং কার্য সম্পাদনের ভেতর কৃত্রিমভাবে জীব সৃষ্টি করার মহাকৌশলও মানুষ আয়ত্ত করে ফেলেছে। এই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াসমূহের ভেতর দিয়ে শক্তি বা এনার্জি অর্জন করে মানুষ অভিষ্ঠে পৌঁছতে উদ্‌গ্রীব । " আসলে আধুনিকতার ধাঁচার ভিতরেই প্রোত্থিত রয়েছে পরিণতির নিশ্চয়তা। জ্ঞানের চর্চার কাঠামোর অন্দরে গাঁথা আছে রাশনালিজমের প্রতি স্থির প্রত্যয় । যুক্তি, বিজ্ঞান, আইন --আলোক প্রাপ্তির এই তিন স্তম্ভ তৈরি করেন সেই রেঁনেসা মহাপুরুষ, যিনি ঐশ্বরিক, যিনি জ্ঞানের বিনিময়ে শয়তানের কাছে নিজের আত্মা বিকিয়ে দেবেন অনাযাসে। আমাদের আধুনিকতা আদতে এই শিখর থেকে শিখরে ছুটে চলার প্রাগলভ উল্লাস । এক-একজন মানুষ ক্রমাগত হয়ে ওঠে নিজের ছায়ার চেয়েও বৃহৎ, হাতের মুঠোয় বন্দি করার চেষ্টা করে সমগ্র পৃথিবীর রহস্য । ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো আলোচনা করেছেন, কীভাবে ক্রমাগত প্রযুক্তি আর রাজনীতির ভয়াবহ মিশেলে ক্ষমতাশীল মানুষ যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে জৈব শক্তি। এই জৈবশক্তি সে শুধুমাত্র নিজের যাপনের সুবিধার্থে ব্যবহার করেনি, কৃত্রিম জীবন তৈরি করে গিয়েছে ক্রমাগত, আর শেষমেশ জন্ম নিয়েছে এক ভয়ংকর দৈত্য, যে কীনা তার ক্ষমতার বলয়ের বাইরে । যে ক্ষমতার ভিতর এক সময় ছিল সুপারম্যান হওয়ার হাতছানি, তাকে মানুষ কাজে লাগিয়েছে " to build viruses that cannot be controlled and that are universally destructive. This formidable extention of biopower....will put it beyond all human sovereignty  "- মানুষ ভাবে এভাবেই নিজ করায়ত্ত শক্তি দিয়ে সমস্ত রকম বিপদ আপদ, অসুখ-বিসুখের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে নিজেকে ।কিন্তু অশুভ পরিণতির দিকে যে পা গলিয়ে গেছে, সেই পথ থেকে পা  টেনে বের করা অনিশ্চিত হয়ে যায় কোন কোন সময়। তখন সমগ্র মানবজাতি অনিশ্চিত হয়ে নিজ নিজ গৃহবন্দি জীবন যাপনের ভেতর কোন অলৌকিক বিস্ফোরণ কিংবা রাষ্ট্র যন্ত্রের ক্ষমতার কাছে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠে, কিংবা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ কামনা করে নিরন্তর মুক্তির প্রচেষ্টা চালায় ।মানুষের মনে আদিম অন্ধবিশ্বাস তখন একমাত্র ভরসার উপশমের উপাদান কল্পিত হয় । এই ' to make sense of the senseless  ' ধারণার ভেতর যে নির্মাণ কাঠামো থাকে, তাকে নির্ভর করে মানুষ আশ্বাসের আগুনে বসে নিজেকে উতপ্ত করার বৃথা প্রয়াস চালায় ।


করোনা এক বিমূর্ত ব্যাধি, যার আকার, আক্রমণ সম্পর্কে মানুষ ওয়াকিবহাল নয়, শুধুই অজানা আতঙ্ক বেশি বেশি করে গ্রাস করে ধনী-নির্ধন, উচ্চ-নীচ, ক্ষমতাসীন ও অক্ষমের ভেতর, মানুষ একসময় দিশেহারা হয়ে রাষ্ট্র যন্ত্রের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে, নিদান প্রার্থনা করে । যে অপশক্তি তাদের গ্রাস করে তাদের শক্তি ক্ষয় করে, প্রতিরোধ ক্ষমতা লুণ্ঠন করে তাদের মৃত্যুর কিনারে নিয়ে যায়, তখন অতল গহ্বরের দিকে তাকিয়ে তার অন্তরাত্মা কেঁদে ওঠে । মহামারী বারবার ফিরে আসে দৈত্যের অবয়বে,সেই দৈত্য কাল্পনিক চরিত্র হলেও অবোধ, নিষ্পাপ, কোমল মানবহৃদয়ে যে ভয় ভীতি ও সংশ্রয়ের ধারণা জন্মে, তার হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় মনে মনে কল্পনা করে, অবশেষে হতাশা ও আশঙ্কা বুকে চেপে বসে, তেমনি এই মারণব্যাধির জীবাণু দৈত্য বাস্তব আকৃতি ধারণ করে বিবেকবান ও  সভ্যতার বাহক মানবজাতির পথপ্রদর্শক ব্যক্তির দেহেও অনাযাসে প্রবেশ করে তিল তিল করে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। অতীতে যক্ষ্মা, কলেরা, ক্যান্সার ইত্যাদি মারণব্যাধি মহামারী রূপে মানবসভ্যতাকে গ্রাস করেছিল, তার ইতিহাস সুদীর্ঘ । অ্যান্টিবডি দেহে তৈরি হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, রোগমুক্তির পথ প্রশস্ত করে সত্যি, কিন্তু ব্যাধি থেকে সঠিক সময়ে পরিত্রাণ পেতে যে সময়টুকু লাগে, তার সেই সময়ের মধ্যে অনেক জীবনহানি ঘটে, যা অপূরণীয়।


বিশ্বব্যাপি অস্থিরতা আর নির্লজ্জ মানসিকতা যেভাবে মানব সভ্যতাকে ক্রমাগত গ্রাস করে চলেছে, তাতে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক শক্তির  বদলে আসুরিক দৈব শক্তির কাছে মাথা নত করে বিভিন্ন রকম আচারাদির আয়োজন চলছে সর্বত্র।পরিত্রাণ -মুক্তি -উদার স্বাধীনতা এই তিন একমাত্র কাম্য শব্দ তাদের কাছে । মানুষ তাই দল,মত ,জাতি নির্বিশেষে আপন মুক্তির তাগিদে যে যেরকম ভাবে পারছে নিজের অক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়ে, মুক্তির আশ্বাসের জন্য শূন্যে যাতায়াত করছে, এ-ও এক রকম ভয়ানক মানসিক রোগ । সাহিত্যের ভেতরেও অনুসন্ধানে মেলে ব্যাধির নানান উপসর্গের উল্লেখ, উপশমের বিভিন্ন পন্থা। 'এপিডেমিক 'শব্দের ভেতর যে শব্দ দ্যোতনা লক্ষ করা গেছে, তাতে তৎকালীন সময়ে যক্ষ্মা, ক্যান্সার, ম্যালেরিয়া, গুটিবসন্ত, অ্যানথ্রাক্স ইত্যাদি নামীয় ব্যাধি নাশকতা নিয়ে মানবসভ্যতাকে আক্রমণ করেছে আর প্রতিষেধক আবিস্কারের ফলে তাদের মারণমূখী ক্ষমতাও হারিয়ে গেছে একসময় । ধর্মমঙ্গলের কবি ময়ূর ভট্ট ' সূর্য শতক ' এ লিখেছেন, কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ' রাত্রি ' কবিতার মধ্যে কুষ্ঠরোগীর চিত্র বর্ণনা করেছেন, সাহিত্যিক সমরেশ বসু  (কালকূট) 'শাম্ব' উপন্যাসে কীভাবে রোগমুক্তি ঘটে তার বিবরণ দিয়েছেন ও '' মহাকালের রথের ঘোড়া " কিংবা '' অন্তরীপ বা হ্যানসেনের অসুখ " অথবা  গুন্টার গ্রাসের " সিটি অব জয় " উপন্যাসে যে সভ্যতার চিত্র চিত্রিত হয়েছে তা আমাদের অনেকের কাছে অজানা নয় ।


এই মুহূর্তে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে করোনা বা কোভিড -১৯ থাবা বসিয়েছে, সেই সিংহ দুয়ারে অবস্থান করে রাজা-প্রজাকে আক্রমণ করে যাচ্ছে দিনের পর দিন মাত্রাতিরিক্ত হারে তা উদ্বেগজনক । এসেছে সামাজিক বিধি মান্যতার নিদান, সামাজিক দূরত্বের ভাবনা, সেই থেকে শৃঙ্খলহীন করার দুর্দম প্রচেষ্টা, ফল স্বরূপ অন্যতম অমোঘ মহৌষধ 'লেকটাউন ' প্রক্রিয়া। লকডাউন করে যেমন অনেক রাষ্ট্র নিজেদের রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে, তেমনি অনিযন্ত্রিত লকডাউন পন্থা মহামারীতে ঘৃতাহুতি দিয়েছে । আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে লকডাউন প্রক্রিয়া অতিক্রম করে এসেছে । এই মূহুর্তে আনলক-৪ এ দেশ অবস্থান করছে, তবু মারণমূখী ব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না , এক রকম বিনাযুদ্ধে মাটি ছেড়ে আত্মসমর্পণ ।


'কোথা হা হন্ত চির বসন্ত আমি বসন্তে মরি' -শব্দবাণ আমাদের কর্ণপটাহে আঘাত করে অদ্যাবধি। চিকিৎসাবিদদের  ধারণা, করোনা ভাইরাস বিভিন্নভাবে মানবসভ্যতাকে গ্রাস করে চলেছে ।(১) বিদেশ থেকে আসা সংক্রমণ  (২) স্থানীয় সংক্রমণ  (৩) সম্প্রদায় সংক্রমণ  (৪) মহামারী বা অতিমারি চেহারা । শোনা যায় যে, ২০১৯ এনকভ নামে একটি নতুন ভাইরাস যা চিন দেশের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম চিহ্নিত হয়েছিল । এর আগে এই ভাইরাসের নমুনা বিশ্বের কোথাও দেখা যায়নি বলে একে নভেল বা নিউ বলা হয়েছে । আক্রান্তদের হাঁচি, কাশি থেকে রোগ ছড়ায় উহানের বাজার এলাকায় ।রোগের নাম দেওয়া হয় কোভিড -১৯। আক্রান্তদের হাঁচি, কাশি থেকে যে কণা নির্গত হয় তার নাম ড্রপলেট।শেষ পর্যন্ত এই ব্যাধির জীবাণু সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং মৃত্যুর হার বৃদ্ধি ঘটে ।


বিতর্কের মধ্যে আলোচিত হয়েছে, ঈশ্বর মানুষ সৃষ্টি করেছে, না মানুষই নিজ প্রয়োজনে ঈশ্বরের অস্তিত্ব উদ্ভাবন করেছে । বিতর্কিত বিষয় আলোচনা করার মানসিকতা বা ইচ্ছে নেই, তবে এটা ঠিক মানব সভ্যতা আজ সংকটে। এই সংকটমোচনে মানবমুক্তির দাবি সর্বত্র জোরদার হচ্ছে, কেননা, করোনার প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে, জনজীবনে ও বৃহত্তর সামাজিক কর্মে, জীবন দর্শনে। বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধির হার ক্রমাগত নিম্নমূখী। দিন দিন অর্থনীতি বেহাল হয়ে পড়েছে করোনার কবলে পড়ে ।


মানুষ দিশেহারা, কোটি কোটি মানুষ কর্মহীন, সামাজিক ক্ষেত্রে পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস-- আস্থার ক্রমাগত পার্থক্য বৃদ্ধি ঘটছে। এর মধ্যে জাতিগত প্রশ্নও উঠে আসছে না, তা কিন্তু নয়, অবাঞ্ছিত প্রশ্নের উদয় ঘটছে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে । জাতিকে এক অনিশ্চিত অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ঠিক তেমনি বিভিন্ন উৎপাদনশীল ক্ষেত্রগুলিও ধ্বংসের পথে, পরিবহণ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প, লাভজনক সংস্থাকে অকাতরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে, ব্যক্তিকেন্দ্রিক অর্থনীতি সামাজিক অর্থনীতিকে গ্রাস ও করায়ত্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত। সুবিধাজনক পরিবহণ রেল ব্যবস্থা স্তব্ধ ,ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের যাতায়াতের যে সহজ, সরল ও সুবিধাজনক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল তা একেবারেই স্তিমিত । দিন দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য আকাশছোঁয়া। যে যেরকমভাবে পারছে মূল্য নির্ধারণ করে দেদার লুঠ করছে, সরকারিভাবে কোন নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে না। ফলে একশ্রেণির মানুষ মুনাফা লাভ করলেও অধিকাংশ মানুষ কপর্দক শূন্য হয়ে পড়ছে । মহামারী থেকে দুর্ভিক্ষের জন্ম, সেই দুর্ভিক্ষের কারণে মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়েছে অতীতে। হরোপ্পা - মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা সুমেরীয় সভ্যতা ইত্যাদি সভ্যতার বিভিন্ন সময়ে ধ্বংসের ক্ষেত্রে এই উপাদান ছিল নিশ্চিত।


রাষ্ট্রীয় সংকটকালে রাষ্ট্র নায়কের বেশি বেশি চিন্তা করতে হবে কীভাবে এই সৃষ্ট মহামারী জাত করোনা সংকট থেকে মুক্ত হয়ে মানবসভ্যতাকে রক্ষা করা যায় । এর জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফলাফল নির্ধারণ করে সভ্যতা রক্ষার আশু প্রয়োজনে ভাইরাস মোকাবিলায় ভ্যাকসিন আবিস্কারের দিককে গুরুত্ব দেওয়া, যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তড়িৎ গতিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি আমাদের দেশও প্রত্যাশা করছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরি করে মানবসংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে । অতিনগরায়ণের  ফলে সংকট দিন দিন বাড়ছে, কেননা অতি জনঘনত্ব বসতি পরস্পরকে জড়িয়ে থাকার  সুযোগে জীবাণু অতি দ্রুত সংক্রামিত হওয়ার প্রেরণা পাচ্ছে বলা সঙ্গত। মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে হলে, সংকটকাল থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়কে মান্যতা দিতে হবে । এই মান্যতা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা থাকা অতি প্রয়োজন। সদিচ্ছা ছাড়া রাষ্ট্রের হাতে যে অস্ত্র থাকুক না কেন, তার প্রয়োগের দিকে রাষ্ট্রীয় চিন্তার অভিমুখ প্রতিফলিত হয়। অতিমারির আবহে মানবসভ্যতার জীবনযাপনে রাষ্ট্র কর্তৃক মানুষের কাছে ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা যদি পৌঁছানো যায়, তাতেই মানুষ মুক্তির নিশ্বাস নিতে পারবে।


আমাদের দেশে ২৩ শে মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণার মধ্যদিয়ে কয়েক পর্যায় অতিক্রম করে আনলক-৪ পর্যন্ত চলছে, কারো জানা নেই আরও কতদূর অগ্রসর হতে পারে  একশো পঁয়ত্রিশ কোটি মানুষের দেশ , আমাদের দেশ, উপমহাদেশের নাম নিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন জাতি,ধর্ম,বর্ণ,গোত্র, ভাষা সমন্বিত হয়ে হাজার হাজার বছর ধরে একত্রে বসবাস করে আসছে । অতীতের ইতিহাসে এরকম মারণব্যাধির সম্মুখীন যে দেশ হয়নি তা কিন্তু নয়, মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, তবুও মানুষ সামলে নিতে পেরেছে, কিন্তু এখন আক্রান্তের হার বেশি । লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে আগুনের শিখার মতো মানবসমাজে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশালতর আমাদের দেশে ৩০ শতাংশ মানুষ হতদরিদ্র, সংখ্যায় প্রায় চল্লিশ কোটির সমতুল্য ।এই বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের আহার, আচ্ছাদনের অন্যতম সম্বল শ্রমের বিনিময়ে অর্থোপার্জন ,যা এখন অন্ধকারে নিমজ্জিত। এই পরিস্থিতিতে সরকার বিনামূল্যে যে রাশনিং ব্যবস্থা চালু করেছে তার সংখ্যাও নিতান্ত নগন্য আশি কোটি, শতকরা ৬০ ভাগের কাছাকাছি । অথচ ৪০ শতাংশ মানুষ এর মধ্যে নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত ইত্যাদি একটা অংশ আছে , যা থেকে তারা বঞ্চিত।


পরিসংখ্যান থেকে জানা যাচ্ছে যে, দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের যেখানে বাস, জনঘনত্ব বেশি, সেখানে ব্যাধির প্রকোপ বেশি , তুলনামূলক ভাবে উচ্চবিত্ত ও ধনিক শ্রেণির এলাকায় কম। কোভিড -১৯ এর ব্যাপকতা বৃদ্ধির পূর্বে আমাদের দেশে বিদেশিদের অবাধ বিচরণ ছিল, বিশেষ করে মার্চের প্রথম দিকে তা যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেত তাহলে হয়ত এই ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধিতে হ্রাস ঘটত। আচমকা লকডাউন ঘোষণার ফলে সামাজিক বিশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা গেছে, অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তির মতে এই ঘোষণা অবিবেচক ও অপরিনামদর্শিতার ফসল। আর একটু সতর্কতা অবলম্বন ও পরিকল্পনা করে লকডাউন ঘোষণা করা হলে হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক বা প্রবাসী শ্রমিককে বিভিন্ন রাজ্যে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আটকে পড়তে হতো না । সেখানে খাদ্যের অভাব , আনাজপত্রের সংকট, দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় যোগানের স্বল্পতা বেশি বেশি করে তাদের জীবন যাত্রাকে দুর্বিষহ করে যন্ত্রণার মধ্যে ঠেলে দেয়। তাছাড়া, কর্মক্ষেত্রগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার  কারণে মানুষ কাজ হারায়, এমনকি দৈনিক মজুরির কাজে নিযুক্ত কর্মীদের কাজও হারায়, তাদের সংসারে সংকট দেখা যায়।


দৈনিক কাজে নিযুক্ত পরিচারিকা, খবরের কাগজ বিক্রেতা, রেল হকার ও ফুটপাথের হকাররাও কর্মহীন হয়ে সর্বশ্রান্ত হয়। সরকারি কর্মচারীগণ নির্ধারিত সময়ে বেতন, ভাতা পেলেও বেসরকারি কাজে যুক্ত শ্রমিকদের বেতন, ভাতা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কাজের বিনিময়ে মজুরি পাওয়ার নিয়মে তারা অর্থহীন হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে, ন্যূনতম আয়ের সংসারে আগুন লাগে, অনেক মানুষকে অনাহারে অভুক্ত হয়ে থাকতে হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রের শ্রেণিচরিত্র বিশ্লেষণ করা হলে,তাহলে অতি সহজেই পরিগণিত হয় যে, আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনাবদ্ধ এই দেশ। এই দেশের  রাষ্ট্র ব্যবস্থা পুরোপুরি পুঁজিবাদী । উপরতল থেকে চুইয়ে পড়া রসে নিচুতল সম্পৃক্ত হয়ে থাকে, তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আমজনতাকে। শেষ পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই নীচু তল পর্যন্ত রসদ পৌঁছতে পারে না, কিন্তু ভাইরাস সর্বস্তরের মধ্যে পৌঁছে যায় এবং মানুষ অতি সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে ও মারা যায় । গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, পাঞ্জাব ইত্যাদি রাজ্যে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক হাজার হাজার মাইল পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়, অনেকেই পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে। এদিকে লকডাউনের সময়কালে সিভিল ভলান্টিয়ারের হাতে কতজনের পিঠে যে লাঠির ঘা পড়েছে তার ইয়ত্তা নাই । কোন কোন  দরিদ্র মহিলা কোন কোন বৃদ্ধা রোগীকে সামলাতে গিয়ে পুলিশের গুঁতো  খেয়েছে তার হিসেব নেই । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখা হয়েছে শিশুদের সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে,  কিন্তু পঠন পাঠনের অভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে । শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে থেকে চালু করা হবে তার ইঙ্গিত মেলেনি ।জাতির মেরুদন্ড ভেঙে পড়লে সেই জাতি কবে ডানা মেলে উড়তে পারবে, তা অন্ধকারাচ্ছন্ন।


১৯৮১ সালে ডিন কুন্টজ " দি আইজ অব ডার্কনেস " উপন্যাসে এইরকম একটা ভাইরাসের কথা উল্লেখ করেন । এই ভাইরাস মনুষ্য নির্মিত ভাইরাস, যা আদতে জৈব যুদ্ধের জন্য গোপনে প্রস্তুত করা হচ্ছে চিন দেশে, তার ক্ষতিকারক সংক্রমণ কী হতে পারে, তাই মূল প্রতিপাদ্য । এই নিয়ে চিন-মার্কিন পারস্পরিক দোষারোপ শুরু হয়েছে । উপন্যাসের বয়ানে উল্লেখিত আছে যে,  " They call the stuff ' Wuhan-400' because it was developed at their RDNA Labs outside of the city of Wuhan, and it was the four hundredth viable strain of man made micro organisms created at that research center. Wuhan-400 is a perfect weapon.  It affects only human beings. " এই বিতর্কের সত্যাসত্য বিচার্য বিষয়, কিন্তু যেভাবে রাষ্ট্রনায়কের দল পরস্পর বিরোধী দোষারোপ দিয়ে নিজেদের অক্ষমতা গোপন করতে চাইছে, তার পরিনতি অতীব ভয়ংকর ।


অনিশ্চিত এক ভয়ংকর অন্ধকার পথে হেঁটে যাচ্ছে দেশ, মুখ থুবড়ে পড়ছে মানবসভ্যতা , সংকট ও প্রতিবন্ধকতার পাহাড়বোঝা মাথায় নিয়ে যাচ্ছে মানুষেরা। এর পরিসমাপ্তি কোথায় কেউ জানে না, আদৌ হবে কিনা তারও দিশা নেই । আমৃত্যু এই যন্ত্রণা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে মানবসভ্যতাকে । সময়ই শেষ কথা বলে, এই আপ্তবাক্য নিয়ে মানুষ আশাবাদী । আশার তির কাঁধে নিয়ে লক্ষ্যের দিকে  এগিয়ে যাচ্ছে। এই মারণব্যাধির হাত থেকে মুক্তি পেতে উপশম আবিস্কারের দিককে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার ।পুঁজিবাদী  দৃষ্টিতে দেখলে সর্বনাশ হবে, ও মানবকল্যাণ মুখ্য না হয়ে যদি ব্যবসা, পুঁজি, মুনাফা সর্বস্ব হয়, তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে অচিরেই।

' মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি


বিধির বিধানে বাঁচিয়া গিয়াছি অমৃতের টীকা পড়ি ' -এই অমৃতের টীকা ঐশ্বরিক অবদান নয়, মানুষের চিন্তা চেতনা ও সাধনার অন্যতম ফসল । এই ফসল দিয়ে সমৃদ্ধ হবে মানবসভ্যতা। 'বিধির বিধান ভাঙিয়াছি মোরা এমনই শক্তিমান ' , সেই শক্তি মানবকল্যাণে, মানুষের সেবায় যেখানে ব্যবহৃত হয়েছে, তারা সুখি হয়েছে, সুখস্বপ্ন দেখছে । হয়ত প্রকৃতি তার বহুল লতা, পাতা, গাছগাছালির মধ্যদিয়ে এই মারণব্যাধির নিয়ন্ত্রণে মহৌষধ  সুপ্ত রেখেছে, সেই উপকরণ দিয়ে রোগমুক্তি ঘটবে, তার অনুসন্ধানও প্রতিনিয়ত চলছে । ঘোলা জলে মাছ ধরার অপপ্রয়াস থেকে দূরে থাকতে হবে কর্তাদের, তাঁদের অভিষ্ঠ লক্ষ্য হবে কল্যাণকর সভ্যতার বিনির্মাণ ।


     ' পথ ভাঙা, তাতে কিছু ডাঙা কিছু জল

     জলহীন দুধের স্বাদ আলাদিনের চেরাগ

     উজানে ধৈর্য্যের অসাধু নৌকো, শীতল

     বাতাসের দেওয়াল দিয়া শোক, বিরাগ

     ঢাকিলাম আর দুঃখ পোড়াইলাম

     কিছু দূর গড়াইলাম,,,,


ভবিতব্য আমাদের কারোর হাতে নাই, সে কি

একথা কি আজ জানতে কারো আছে বাকি?


ভারতের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবতে গিয়ে চিন্তা কুরে কুরে খায় করোনা ভাইরাস ।যদি আমরা এভাবেই ভাবি যে, স্বাধীনতার ৭৩ বছর পার করেও কেন স্বাস্থ্য পরিকাঠামো সুসংগঠিত করতে পারছি না, কেন অর্থ লিপ্সা আমাদের কাছে পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে না পারলে, সুচিকিৎসার ব্যবস্থার উপর জোর না দিলে, যারা সরকারি দায়িত্ব নিয়ে ন্যূনতম সেবা প্রদান করে, অধিকাংশ সময়েই নিজস্ব বা চুক্তিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত হয়ে কর্তব্য পালনে অবহেলা প্রদর্শন করে, সর্বহারা শ্রেণির সর্বস্ব লুণ্ঠন করে ছিবড়ে করে দেয়, এদের মুখে লাগাম পরানো খুব দরকার । যদি তা সম্ভব না হয়, তবে অচিরেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, জাতির মেরুদন্ড নুব্জ হবে, এ থেকে রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়বে । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান সর্বোপরি দৈনিক আহার না জোটে, তাহলে ধর্মের ভাঙা বাঁশি হাতে নিয়ে সুর তোলা যাবে না ।


    " হাজার হাজার শ্রমে ফলিত সুবর্ণ রাশি

    ভাগ করে খায় মুষ্টিমেয়, আমার হাতে ধর্মের ভাঙা বাঁশি " -ছাড়া আর কিছু থাকবে না ।


মানবসভ্যতাকে বাঁচাতে হলে, রক্ষা করতে হলে, করোনাকাল উত্তীর্ণ হয়ে এক নিখাদ নিশ্চিত সমাজ গড়ে তুলতে হবে, একজোট হয়ে মোকাবিলা করতে হবে । শত্রুকে দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে গেলে চলবে না, সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া বীরের ইঙ্গিত ।

 

     " দীর্ঘতর পথ ,এ পথের নেই সীমানা

     মৃত্যু ভয় দুয়ারে দাঁড়িয়ে তবু পিছুবোনা

     পথই সম্বল পথের শেষে পথ যায় গোনা

     পথে হাঁটো সাথী, পথেই হবে পথিক চেনা ।"


সামনের পথ অন্ধকারাচ্ছন্ন। আলোহীন পথে চলতে হবে সাবধানতা  অবলম্বন করে । বের্টন্ট ব্রেশট বলেছেন  " In the dark times /Will there also be singing  ?/ Yes, there also be singing / About the dark time. " আস্থা, বিশ্বাস, নিয়ম নীতি, সামাজিক দূরত্ব, কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মান্যতার ফলে কতটা ফলাফল সদর্থক হতে পারে, তা স্থানীয় তথ্য প্রমাণ করে, অধিকাংশ দেখা গেছে যে, বিগত বছর এই সময়ের মৃত্যু হার, এখনকার এই সময়ের মৃত্যু তুলনামূলক হারে অধিক ছিল । বর্তমানে তুলনামূলকভাবে হ্রাস পেয়েছে মৃত্যুহার, এর অন্যতম কারণ স্বাস্থ্যবিধি মান্যতা। এই মান্যতা পরস্পরকে আতঙ্কিত না করে , সাবধানতা অবলম্বন করে সচেতন নাগরিক হতে হবে সকলকেই । তাহলেই অনেক রকমের মারণব্যাধির করাল থেকে মানবসভ্যতা নিস্তার পাবে বলা সঙ্গত । তাই, সকলের এই মূহুর্তে উচিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, লড়াই চালিয়ে যাওয়া কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নতুন আলোর উৎস  সন্ধানে ।                   

কৃতজ্ঞতা স্বীকার :-

দেশ সাহিত্য পত্র ও কিছু তথ্যাবলী।


কপিরাইট নাসির ওয়াদেন কর্তৃক সংরক্ষিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন