জয়িতা ভট্টাচার্য ~ কোরোনা ও সভ্যতার সংকট

 

কোরোনা ও সভ্যতার সংকট

 


২০২০,বসন্ত সমাগমে ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাত।কাক জ্যোত্স্না র আলোয় নিকষিত হেম।সবে শেষ হয়েছে ভ্যালেন্টাইন্স ডে ,সবে সরস্বতী  পুজো ,ছেলেমেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা, এই সুন্দর গ্রহে হঠাৎ নিঃশব্দ  পিশাচের মতো হাওয়ায়  মিশে গেল কুটিল অট্টহাসি যেন কার।

মানুষের  পশু প্রবৃত্তি আর আগ্রাসনের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতির আত্মা,কোটি কোটি  সবুজ নিধন,নির্বিচারে নিরীহ পশু ,মাছ,,পাখি কেউ রক্ষা পায়নি মানুষের লোভের কাছে।

আজ বুঝি প্রতিশোধ নেবার পালা।

"বস্তাপচা ময়লায়  ঢেকে গেছে পৃথিবীটা

মানুষ, মানুষ থেকে দূরে।

ছোঁয়া যাবে না__ স্নেহের পরশকে।"(মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)

নিও- নর্মাল যক্ষপুরীর কথা।

আমাদের বাঙালিদের একটা প্রবচন শুনতাম ছোটোবেলায়, "আপনি বাঁচলে বাপের নাম" কথাটার মানে যদিও আমরা সবাই জানি কিন্তু  একেবারে আক্ষরিক ভাবে যেদিন টিভির খবরে দেখলাম এক মৃত বাবা পড়ে আছেন সারাদিন রাত,নিথর এক বাবা! ছেলে তার সস্ত্রীক  কাছেই বসবাস, তবু জন্মদাতার  শেষ ক্রিয়াটুকুও করতে আসেনি সংক্রমণের ভয়ে।

 শিউরে উঠলাম। হয়তো এই বাবা দিনের পর দিন ঘামে ভেজা শার্ট ,পুত্রের প্রিয় খাবারটা কিনে এনেছেন,কোলে নিয়ে পৃথিবীর রূপ প্রথম তিনিই দেখালেন।কত আত্মত্যাগ থাকে এক পিতার।জীবন বিপন্ন করে সন্তানের জন্য পিতা কিন্তু পিতার জন্য  সন্তান নয়।

শুভ্রজিত্ নামে ছেলেটি কিভাবে ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছে একফোঁটা বাতাসের জন্য, পথে পড়ে আছে ,কী আকুল অসহায় তার মা বাবা প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছে তাদের জাতককে বাঁচানোর অবশেষে স্থির হয়ে গেলো দেহটি।এই গোটা ঘটনা ভিডিও করলো যে ছেলেটি সে মৃত্যু কিভাবে হয় কিভাবে তিল তিল করে জীবন মৃত্যুতে পরিবর্তিত হয় তা দেখতে বড়ো উৎসাহী ছিলো!একবার তার কি মনে হলো না একটা জীবন বাঁচানোর কথা?

নাহ্।তাহলে এই বিরল দৃশ্য সে ক্যামেরাবন্দী করবে কী করে।

আমরা দেখতে থাকলাম এক থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে সূর্য  ডোবার সঙ্গে সঙ্গে  অস্ত গেলো প্রাণ।

আমরা হতবাক হলাম।আমরা বুদ্ধি ভ্রষ্ট হলাম।

আরো অনেক কিছু  ঘটনা ঘটবে আগে পরে।এই শতাব্দীর প্রথম ঘটনা,আমাদের সকলের জীবনে এই প্রথম আমরা মুখোমুখি হলাম অতিমারী র "কোরোনাকাল"।

আমরা এখন সকলেই মুখস্থ করে ফেলি বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার প্রতিদিনের বুলেটিন।খেলার স্কোর বোর্ডের মতো দেখি মৃতের সংখ্যা। পৃথিবীতে কত নং এ ভারত।

 আমরা এই লকডাউনের ও আনলকের চক্রে মানিয়ে নিচ্ছি দিব্যি।

কিন্তু এই অতিমারী তে যত মানুষ মারা গেছেন

 তার চেয়ে  অনেক গুণ বেশি মারা গেছে আমাদের মনুষ্যত্ববোধ।

শোভাবাজারের একটি মন্দিরে আশ্রয় নেওয়া বৃদ্ধাকে রাস্তায় ফেলে দেওয়া,

পথচলতি মানুষের সামনে মৃত্যু কেউ আসেনি।

নভেম্বরের ২০১৯ এ উহান শহরে প্রথম যিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন তখনও এমনকি তেমন কেউ ব্যাপারটা গা করেনি। ধীরে ধীরে সংখ্যা  বাড়তে জানা যাচ্ছিল বাদুরের মাংস বা প্যাঙ্গোলিনের মাংস খেয়ে  একধরনের ফ্লু হচ্ছে।

বাকি গল্প তো আমাদের বাচ্চারাও জানে। তবে আমাদের বহুত্বের দেশে ভিন্ন আবহাওয়া, মানুষের ভিন্ন যাপনের জন্য এখানে মিউটেশন বেশি হবে সেটা স্বাভাবিক।

"এ বড়ো সুখের সময়  নয়

এ বড়ো আনন্দের সময় নয়"(শক্তি চট্টোপাধ্যায়)।

২১মার্চ রাতে

আচমকাই ঘোষণা হলো জনতা কার্ফিউ আর তার পরের দিন শুরু হয়ে গেল লকডাডাউন।

আমরা মুখে মাস্ক এঁটে নিলাম কিন্তু আমাদের মানবতার মুখোশগুলো ক্রমে খুলে পড়ে যেতে লাগল।

আমরা একে অপরের সঙ্গে  ব্যবধান রচনা করতে লাগলাম।কোরোনা নয় সংক্রমিত হলাম সন্দেহ রোগে।

মনের ময়লা স্যানিটাইজারে সাফ হয় না। কোভিড এ আক্রান্ত ও মৃত্যু র সঙ্গে তাল মিলিয়ে অমানবিকতার উপাখ্যান।

প্রতিদিন একটি করে নতুন নিয়ম কদিন পর সেটা খারিজ হয়ে যায়  আবার সে নতুন নিদান।

আমরা বাঙালিরা ছোঁয়া বাঁচিয়ে চলতে অভ্যস্ত নয়,পৃথিবীর  কোনো সভ্য দেশেই নয়,তাই পরস্পর দূরত্ব রক্ষা,সামাজিক দূরত্ব রক্ষা আমাদের নৈরাশ্যের  দিকে এগিয়ে দিলো।

একটানা ঘরবন্দি, নজরবন্দি  জীবনে অতিষ্ঠ  মানুষের মধ্যে নানা বিকৃতি পরিলক্ষিত  হলো সঙ্গে যুক্ত হলো সামনে পেছনে আশেপাশে আক্রান্তের খবর।

দুঃস্বপ্নের মতো রাত বিরেতে ঘন ঘন এম্বুলেন্সের শব্দে শিশুবালা মতো ভয়ে বুকটা দুরদুর।আবার কে গেল!

মাঝে মাঝেই  পুলিশের টহল বাঁশি বাজিয়ে। এই জীবন আমরা কখনো দেখিনি।

আত্মীয় পরিজন হয়ে গেল অবাঞ্ছিত।ছোটো ছোটো রোজগারের কর্মী,আঞ্চলিক মিস্ত্রি, মজুর ,কাঠের মিস্ত্রি, মিষ্টি র কারিগর থেকে শপিং মলের অস্থায়ী সেলস্ এর ছেলেমেগুলি এক রাতের মধ্যে  হয়ে গেল কর্মহীন। আরো দেখা বাকি ছিলো।আমরা ভয়ে ইঁদুরের মতো গর্তে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতে লাগলাম আমাদের রাজ্যে কত লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি বলে দেশের এক কোনা থেকে আরেক কোনা ঘর পরিবার ছেড়ে কাজ করতে যায়।

তাদের নাম হোলো পরিযায়ী। এক দেশ থেকে অন্য দেশে উড়ে যাওয়া  নীল আকাশে ডানা মেলা বালিহাঁস নয়,লক্ষ লক্ষ শীর্ণ, হত দরিদ্র, মানুষের পা।ওদের সময় দেয়নি রাষ্ট্র ঘরে ফিরে যাবার।দেয়নি আশ্রয়। কর্মহীন  তারাদের গায়ে কখনো ছড়িয়ে দেওয়া হলো রাসায়নিক, কখনো তারা পোকার মতো দলবদ্ধ ভাবে চাপা পড়লো মালবাহী ট্রেনের চাকায়।আমাদের স্মৃতি ক্ষণস্থায়ী।আমরা ভুলে গেলাম ওদের কথা। আমরা এই বিপাকেও  যুক্তিবদ্ধির দুয়ার বন্ধ করে থালা বাসন বাজালাম।রাষ্ট্র নিশ্চিন্ত হলো দেশের মানুষ  উঠতে বললে ওঠে বসতে বললে বসে।

অসভ্যতার মুখোশটা ক্রমশ আলগা হয়ে গেলো।আমার দেশের ভোটদাতা জনগন তথা শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল হাঁটছেন কেরল থেকে পশ্চিমবঙ্গ, দিল্লি থেকে ঝাড়খণ্ডে বা হায়দ্রাবাদ, মুম্বই থেকে তারা গনগনে রোদে,মহামারী র মধ্যে ক্ষুধা তৃষ্ণা উপেক্ষা করে চলেছেন।রাষ্ট্র উদাস।পথেই মারা গেলেন প্রায় ২২০ (Hindustan times), পথ দুর্ঘটনায় ২০০,,প্রায় ১ কোটি মানুষ হলেন আচমকা কর্মহীন  (The Hindu),

"একেই কি বলে সভ্যতা!"

১১ মার্চ  বিশ্ব সংস্থা সার্স কোভিড  কে অতিমারী  ঘোষণা করলেন।

তারপর আমরা সাক্ষী  হলাম সব নারকীয় দৃশ্যের।

এই গৃহবন্দি দশায় গার্হস্থ্য নির্যাতন বেড়ে গেলো, অবসাদ ও মোবাইল কেন্দ্রিক জীবনে নীলছবির বাড়াবাড়ি,শহর ও গ্রামের  সবচেয়ে  সহজলভ্য  যাতায়াতের মাধ্যম লোকাল ট্রেন  বন্ধ হলো।

শয়ে শয়ে কারখানার মজুর যাদের ভিড়ে উপচে পড়ত সকালের হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন, খাঁ খাঁ  আতংকে অসার। ট্রেন নির্ভর হকার ,জল,মুড়ি,বাদাম,রুমাল সেফটিপিন বিক্রেতা ভাই বা স্টেশন নির্ভর চা ঘুঘনি  রকমারি দোকান বন্ধ হয়ে গেল।

হাসিনা মাসিরা যারা কলকাতার বাবু বাড়ি কাজ করে  হাসি নামে ,তেমন মলিনা,লক্ষ্মী, মালতীরা কাজ হারালো।ঘরে অনটন,কারো স্বামী নেই,কারো স্বামী ছেড়ে গেছে,কারো স্বামী মাতাল মেরে  আধমরা করে দেয় টাকা না পেলে,সেইসব দুর্গারা অসহায় পিঞ্জরবদ্ধ হলেন।

যৌন পেশায় যুক্ত দিদিদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলো।হিজড়া সম্প্রদায়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেল।

তাদের উপার্জন বন্ধ হতে কারো করুণা হয় না ঘৃণা হয় তবু মানুষের প্রয়োজনেই দেহব্যবসার পেশা টিঁকে আছে প্রাচীনকাল থেকে।তারাও ক্রমে

ভিখারি হয়ে গেল।

অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন।এক রাষ্ট্র হীন প্রশাসনিক দেশ যেন।

কতদিন আগের একটি মানুষ লিখেছিলেন "দুঃসময়ে "

........এ নহে মুখর বনমর্মরগুঞ্জিত,

এ যে অনাগত গরজে সাগর ফুলিয়ে

এ নহে কুঞ্জ কুন্দকুসুমরঞ্জিত,

ফেন হিল্লোল কলকল্লোলে দুলিছে।

কোথা রে সে তীর  ফুলপল্লবপুঞ্জিত,

কোথা রে সে নীড়,কোথা আশ্রয়শাখা......"

বস্তুত  এই অতিমারী  না হলে আমরা উপলব্ধি করতেও পারতাম না যে দামী জামা,স্মার্ট ফোন আর বাজার অর্থনীতির  এই বিশ্বে মানবজাতির  মধ্যে এতখানি সভ্যতার সংকট উপস্থিত হতে পারে।

আমাদের কোরান আমাদের বেদ,আমাদের বাইবেল আমাদের বুদ্ধিকে চেতনায়  এক তামসিক অনিশ্চয়তা   ঢেকে দিয়েছে।

"কারণ নিঃশব্দে  দেখে যাওয়া  ছাড়া আমাদের মতো মানুষের কিই বা করণীয় থাকে..."(সৌমিত বসু)

উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কয়েকটি দেশ অনেকদিন ধরেই পেনশন,বার্ধক্য ভাতা,রোগের চিকিত্সার মতো উৎপাদনশীল  ব্যয়  বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত ছিল ক্রমশ বর্ধমান জনসংখ্যা যেখানে জন্মহার ও মৃত্যু হার কম। এই বিশ্বব্যাপী  অর্থনৈতিক রিলেসনস থেকে বেরিয়ে আসার ফন্দি ফিকির খুঁজছিল তারাও।এমন কিছু যাতে  অনুৎপাদক জনসংখ্যা হ্রাস করা যায়।অন্যদিকে চিনের মতো দেশ একটি এমন কোনো অভূতপূর্ব  ব্যবসায়িক ম্যাজিক মন্ত্র চাইছিল যাতে তারা বিশ্বব্যাপী মন্দাকে হারিয়ে দিতে পারে! আমেরিকা ও চিন দুটি দেশ ই  পরিত্রাণ চাইছিল কূটনৈতিক বুদ্ধি তে।

ঠিক এইসময়  এই কোভিড  ১৯ এর মহামারী ছড়িয়ে পড়াটা বেশ কাকতালীয় নয় কি!

"....দখল নানা প্রকার

ইংরেজদের হঠিয়ে ভারতবর্ষের দখল নিলো দেশবাসী

পুরুষদের হঠিয়ে নিজেদের অধিকার দখলে নিলো মেয়েরা

জমিদারদের হঠিয়ে জমির দখল নিলু ভাগচাষি

সমস্ত সম্পর্ক শিকেয় তুলে গা-গেরাম

দখল নিল রাজনীতি

ঠিক যেভাবে আমেরিকা মুঠোয় আগলে রাখে সব ক্ষমতা ...."(সৌমিত বসু)

পরিবারের  বৃদ্ধ বৃদ্ধারা যেমন নিঃশব্দে বোঝা হয়ে ওঠেন,আমেরিকার মতো একটি উন্নত দেশে মন্দা অর্থনীতির সময় বছরের পর বছর বয়স্ক জনসংখ্যার উর্দ্ধগামী সংখ্যা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে নেতৃত্বে র কারন তাদের যাবতীয় ভরণপোষণ ও চিকিৎসায় ব্যবহার সরকারের।এমন যদি হতো যে দুর্বল ও রাষ্ট্রের কাছে কেবল বোঝা হয়ে থাকা বিপুল জনসংখ্যা কমিয়ে ফেলা যেত! শুধু আমেরিকা কেন এ সমস্যা তো সব উন্নত দেশগুলির।

এমন একটা পরিস্থিতি যখন বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ও একটা ব্যবসায়িক প্রকল্প চায় এমন কিছু যা সারা বিশ্বে তার বিপুল চাহিদা থাকবে যে ব্যবসা করে চিন লাভের গুড় পিঁপড়ে বিহীনভাবে ঘরে তুলতে পারবে! কারন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক  চুক্তি র কারনে উন্নত দেশগুলোর অস্ত্র ব্যবসা আর তেমন লাভজনক নয়।

ঠিক এমন সময়  বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া একটি ভাইরাস মূলত উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিকভাবে এবং যে রোগে বিপুল শতাংশ বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হয়, এবং, এবং যে দেশ থেকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাস সেই দেশ থেকেই যাবতীয়  রোগ প্রতিরোধ সরঞ্জাম  রপ্তানি হতে থাকে! এ এক আশ্চর্য সমীকরণ।

"শব্দ হয় শব্দ  হয়; হেঁয়ালির শব্দ হয়;

শৃগালেরা শব্দ নিয়ে আসে

ডুবল ডুবজল;মাথাগুলি ডুবে যায়;

টান পড়ে অস্তচূর্ণ  শ্বাসের

এইখানে স্বপ্ন লিখি;ওইখানে ঘুম লিখি;ফুলে ওঠে শিরা উপশিরা

আমাদের গৃহ নেই;আমাদের রক্ত নেই;

আছে শুধু দেহভর্তি পীড়া___"জহর সেন মজুমদারের কবিতার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই শহরে,গ্রামে।

আমরা দেখলাম বিনষ্ট সভ্যতার কঙ্কাল। লাশের স্তূপ গোপনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে ধামার মাঠে আত্মীয় পরিজন অন্ধকারে কাঁদে।

আমরা দেখলাম রক্তচোষা বেসরকারী হাসপাতালের নির্মম মৃত্যু নিয়ে বাণিজ্য।

সভ্যতা ভুলে বনগাঁয় বৃদ্ধ অক্সিজেন চেয়ে  পাননি ,কেউ দেয়নি ,

কেউ ধরেনি, }ম্বুলেন্সে উঠতেসাহায্য করেনি সবাই দূরে দাঁড়িয়ে দেখেছে একটি মৃত্যু।

নাগের বাজারে এক বৃদ্ধার মৃতদেহ পড়ে রইলো পনেরো ঘন্টা রোগের ভয়ে মানবিকতার পরাজয় 

"এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার

একি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা

ও কি পাখির কূজন নাকি হাহাকার....."

ঘরে তারা বন্দি,যে কোনো রোগী:

এখন প্রতিবেশীর প্রকৃত রূপ ফুটে উঠলো,

সন্তান পিতাকে ফেলে রেখে দিল,

ঘরের মধ্যে কোরো না রোগীর আত্মহত্যা,

ঠাঠা রোদ্দুরে  চিকিৎসায় অপেক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যু র রোজ সাক্ষী হতে লাগলাম আমরা।

যত্ন করে নিয়ে আসা হলো এন আর আই ধনীদের বিমানে বিনামূল্যে ,

গরিব শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে গিয়ে  একে একে মারা গেল বাসের নীচে,লড়ির নীচে,রেলের চাকায় পিষ্ট  হয়ে ,উপবাসে ,একঘরে হয়ে।

লকডাডাউন  এক প্রক্রিয়া, যার ফলে আরো স্পষ্ট হলো বিভাজন রাজনীতি ।ধনী ও সর্বহারার বৈষম্য।

"এই রক্তস্নাত কসাইখানা আমার দেশ না

এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না "(নবারুণ ভট্টাচার্য)

রাষ্ট্র  এই শতাব্দীর সবচেয়ে মারাত্মক অতিমারী তে যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা কোনো সভ্য দেশে হয় না।

এমনকি কোনাকালে শিশুরাও অবসাদগ্রস্ত। তারাও চিহ্নিত গরিব আর বড়লোকে। যাদের স্মার্ট ফোন আছে কম্পিউটার আছে এই ১৩৫ কোটির দেশে মাত্র দশ শতাংশ  পেতে লাগলো বৈদ্যুতিক মাধ্যমে  শিক্ষা র সুযোগ আর প্রত্যন্ত গ্রাম ও বস্তির শিশুরা অধিকাংশ  পড়াশুনো ছেড়ে  শিশু শ্রমিক ও ভিখারি হয়ে গেল।

    অন্ধকার চিরে উষার আলোর মতো জমাট শ্যাওলার ওপর আলো পড়ল কতিপয় ডাক্তার ও নার্স যাঁরা মানবতার ধ্বজা উঁচু করে জীবন বিপন্ন করে দিবারাত্রি লড়ে গেলেন মানুষের সেবায়। তাই এই সভ্যতার সংকটে দাঁড়িয়ে ও আমরা দেখি ক্ষীণ আশার আলো।আমরা আবার বাঁচবো।আমরা আবার হাসব।আমরা আবার পুরোনো  সেই জীবনে ফিরে যাব হয়ত এই নিও নর্মাল সভ্যতায়।নতুন করে লেখা হবে মানুষের ইতিহাস।

 ভস্মের ভেতর থেকে উড়বে ফিনিক্স পাখিটা।

 

কপিরাইট জয়িতা ভট্টাচার্য কর্তৃক সংরক্ষিত

২টি মন্তব্য: