বিকাশ চন্দ ~ মানুষের মহার্ঘ্য হৃদয় বোধের দায়

 

মানুষের মহার্ঘ্য হৃদয় বোধের দায়



যখন লেখাটি শ্রদ্ধেয় পাঠকের কাছে পৌঁছাবে প্যানডেমিক/অতিমারি/কোভিড-১৯ করোনা কাল আমাদের দেশে সাত মাস অতিক্রম করার পথে। সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত ছড়িয়েছে প্রায় ৩ কোটি ১৫ লক্ষ মানুষের মধ্যে। মৃত ৯ লক্ষ ৬৪ হাজারেরও অনেক বেশি। সারা বিশ্বে এখন ৭৫৯ কোটি ৪৩ লক্ষ মানুষের বাস। যদিও সংখ্যাটা তার চেয়েও বেশি। বাংলার বাদল হাওয়া হয়তো ভিজিয়েছে আমেরিকার পথ, চীনের হিউয়ান প্রদেশের আত্মারা মিশেছে মহাশূন্যে, ব্রাজিল, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো, পেরু, বাদ নেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান সহ বিশ্বের ২০০ টি দেশ করোনা জর্জরিত। সকলের সাথে মিলে যাচ্ছে ভারতের সাধারণ হত দরিদ্র মানুষ ও ভারত আত্মার সবেদন হাহাকার। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ গুলোতে জারোয়া উপজাতি যাদের কাছে সভ্যতার আলো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি তারাও চরম বিপন্নতার মুখে, মারাও গেছে ক'জন করোনা সংক্রমণে। একই বিধ্বস্ত অবস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার চারটি প্রদেশের বনাঞ্চলের পিছিয়ে থাকা জনবসতি যাদের হাহাকার পৌঁছোয়নি তথাকথিত সভ্যসমাজে, পারেনি উন্নততর/তম মিডিয়াও সঠিক তথ্য তুলে ধরতে। এটা বাস্তব যে প্রায় সারা বিশ্বের/ভূবনের মানুষের সজল চোখের জীবনের জন্য প্রার্থনা কখনো দেখেনি। দেশ বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছে। অমানবিক অত্যাচার, আগ্রাসনলীপ্সু জীবনগ্রাসী বোমাবর্ষণে ভয়াবহ মৃত্যু দেখেছে। আজ অত্যাচারী দেশ সমূহ এবং অত্যাচারিত দেশ সমূহের সকল মানুষ এক অদৃশ্য এক ভাইরাসের সংক্রমণে দিশেহারা সারা বিশ্ববাসী। এরমধ্যে হাইড্রো ক্লোরোকুইনের জন্য লাল মুখো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারত সরকারের প্রতি হুমকি ভারতবর্ষ প্রত্যক্ষ করেছে। এও বিশ্ব মানবাত্মা লক্ষ্য করেছে যে জনৈক জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু বর্ণবিদ্বেষের কারণে হয়েছে জেনে আমেরিকার প্রায় সকল মানুষ রাস্তায় নেমে তীব্র আন্দোলন করে যার ফলে স্বরূপ সাদা ঘরের মত্ত দানব ট্রাম্পকেও পাতাল ঘরে লুকোতে হয় প্রাণ ভয়ে। আবার প্যানডেমিক সময়ে ভারত সরকার ও তার প্রদেশ গুলির লকডাউনের হঠাৎ সিদ্ধান্ত একটি সচল ও স্বচ্ছ ভাবনার সমাজ ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলতে কসুর করেনি শুধু কেবলমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুলোকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে যদিও প্রকাশ্যে এসেছে - লকডাউন ছাড়া কোন উপায় ছিল না। লকডাউনের মধ্যেই আমাদের অভিজ্ঞতায় এসেছে আমফানের দুর্বিনীত ঝঞ্ঝার তান্ডব। দেখেছি অসহায় মানুষের অসহ্য সংকটের দিনগুলি যা এখনো অপূরণীয়। সমাধানের চিত্রটিও অত্যন্ত অপরিচ্ছন্ন। এই সবের মধ্যেই করোনার যোদ্ধা, ডাক্তার, নার্স, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ঔষধের গবেষণাগার সম্মিলিত প্রচেষ্টা চাইছে পৃথিবী আসুক চেনাছন্দে, তাঁদের বিনম্র আহ্বান চলো যাই জীবন নির্মাণে।


বাধ্যতামূলক মুখ ঢাকার প্রয়োজন সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে, কিন্তু পাঁজরের ভেতর হৃদয়কে আড়াল করে নয়। বিশ্বের করোনা আক্রমণে সকল দেশের একটা চিত্র পরিস্ফুট হয়েছে যে বিশ্বে যত রোগী ততো চিকিৎসালয় নেই, নেই প্রয়োজনীয় বেড, চিকিৎসক, নার্স এবং উপযুক্ত রোগের পরীক্ষাগার। এক্ষেত্রে ভারতের বাগাড়ম্বর আমাদের নজরে এসেছে। অত্যন্ত বেদনাদায়ক যে আমাদের সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শুনেছি ১৮ দিনে মহাভারতের পান্ডবের জয়লাভ হয়েছিল, আমরা করোনা জিতবো ২১ দিনে। থালা বাজানো, শাঁখ বাজানো, মোমবাতি জ্বালানো, রাস্তায় গান, হাততালি এসব কোনটাই করোনা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থাই নয়। লকডাউনের থেকে এখনও কোন স্কুল খোলেনি, অসম্পূর্ণ পরীক্ষায় থাকা পরীক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে পরবর্তী শ্রেণীতে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। NEET পরীক্ষায় আবেদন জানিয়ে ছিলেন ১৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী, সেখানে পরীক্ষা দিতে পেরেছেন প্রায় ৮৫% ছাত্র-ছাত্রী। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তি কিভাবে হবে বা কলেজ স্তরে বাকী থাকা পরীক্ষা কিভাবে হবে তাও অস্বচ্ছতায় আটকে। আমাদের দেশে ১৩০ কোটি মানুষের বাস। যার ৭০% মানুষ নিম্নমধ্যবিত্ত। দিনমজুরি তাদের ভরসা। এর ৩০% মানুষ প্রতিরাতে অনাহারে ঘুমোয়। এঁদের কর্মসংস্থান ছড়িয়েছিল এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে তাদের সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। যাদেরকে বলা হয়েছে অবৈজ্ঞানিক ভাবে পরিযায়ী শ্রমিক। যাদের অনেককেই ফিরতে হচ্ছে ফেলে আসা কাজে। যাদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ কোন রাজ্য সরকার নেয়নি।


মনে রাখতে হবে দেশের সমূহ ক্ষেত্রে উন্নতি বিধানে কেন্দ্র-রাজ্য শুধু নয় পৃথিবীজুড়ে শিক্ষা, গবেষণা, উন্নততর জীবনধারণের ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মধ্যে নিবিড় প্রক্রিয়া চলতে থাকে। যা কিন্তু এসময়কালে অত্যন্ত বিপন্নতায় মধ্যে আবিষ্ট। শিক্ষা পরিমণ্ডলে সর্বস্তরে ছাত্র-শিক্ষককে দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে । এ যেন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হচ্ছে আর ভোগান্তি বাড়ছে ছাত্র-শিক্ষকের। জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে শিক্ষাবর্ষের অনিশ্চয়তা। ২০২১ এ যারা মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ তারা আছে অত্যন্ত অসহায় অবস্থায়। অনলাইনে বা ই-লার্নিং এর পড়া শুরু হয়েছিল বা চলছে কিন্তু সকল ছাত্র-ছাত্রীদের যে সুযোগ নেয়ার ক্ষমতা নেই। আবার যেখানে ইন্টারনেট পরিষেবা দুর্বল সেই গ্রামাঞ্চলের ছেলে মেয়েদের অবস্থা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। মাধ্যমিক পরীক্ষায় টেস্ট পরীক্ষা হয় নভেম্বরের শেষে বা ডিসেম্বরের শুরুতে। ছাত্র-ছাত্রী প্রায় সাড়ে দশ লক্ষ অভিভাবক ও শিক্ষক মিলিয়ে ৩০/৩৫ লক্ষ মানুষ রয়েছে চরম আশঙ্কায়। এখনো কোনো সরকারপক্ষই সিদ্ধান্ত নেয়নি। আবার উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫% মার্কস পেয়েও পছন্দমতো বিষয় ও কলেজ পাওয়া দুষ্কর। কোন তরফে স্পষ্ট উদ্যোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে জটিলতা আরো প্রবল। যাদের ৩০/৪০ পাতা লাগে উত্তরপত্র লিখতে সেখানে নেটে/হোয়াটসঅ্যাপে উত্তর দেয়া কঠিন কাজ। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে সফট কপি জমা দেওয়া এমনতর ব্যবস্থা কোন দেশের প্রযুক্তিগত সভ্যতাকে দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরার জায়গা নেই। আবার পরবর্তী ধাপে উন্নততর ভাবনার দিশা কোন সরকার ছাত্র-শিক্ষক সমাজের সামনে এখনো স্পষ্ট করেনি। আবারো শোনা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দুই ঘন্টার হবে, আবার সফটকপি জমা দিতে হবে আধ ঘন্টার মধ্যে।


আবার অতিমারি সাময়ে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে তুমি বেঁচে থাকতে চাইলে তোমাকে নিজস্ব খরচে স্বাস্থ্যপরিসেবা কিনতে হবে। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার দায় যে সরকারের সেটা সর্বস্তরের প্রতীয়মান হচ্ছে না, যার নিয়মিত প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন মাধ্যম আর ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়। এতদিন জানতাম দেশের সমস্ত মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দায় নেবে সরকারের সুস্বাস্থ্য অধিকরণ বা মিশন। করোনাভাইরাস এসে বিশ্বব্যাপী একটা প্যানডেমিক পরিস্থিতি চলছে। কোন দেশেই এখনো মানুষের উপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে সাফল্য পেয়েছে এমনটা বলেনি বরং ঘুরেফিরে কথাটা বেরিয়ে আসছে এটা বাস্তব সম্মত হতে ২/৩ বছর লেগে যাবে অর্থাৎ এখনো যথেষ্ট সময় লাগবে। তাছাড়াও করোনা ক্রমশ তার স্বরূপ বদলাচ্ছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এর উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তাতে গবেষণা ও সেইমতো টালমাটাল হয়ে পড়েছে। আর সবচেয়ে বেদনা এ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসা খরচ, ওষুধ, অক্সিজেন মানুষের খরচ সাধ্যের অতীতে চলে যাচ্ছে। এদের দায় নেবার দায়িত্ব থাকা উচিৎ যেকোন কল্যাণকামী সভ্য রাষ্ট্রের। তাহলে এখানে... ? যখন লিখছি মহালয়ার দিন, আমাদের দেশে তখন করোনা অন্ধকারে আক্রান্ত মানুষ ৫০,৭৯,৯৩৩ জন, এখন ৫৫ লক্ষ, মৃত ৮২০৬৬, এখন ৮৮,৯৩৫ (২৩.০৯.২০২০ পর্যন্ত) আশার কথা ধীরে ধীরে হলেও সুস্থতার সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্তের দিক থেকে ভারত পৃথিবীর দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে আক্রান্ত ২,২৫,১৪৬। মৃত্যু ৪,৩৫৯; সুস্থ ১,৯৬,০০০ (২৩.০৯.২০২০ পর্যন্ত) এসময় দেখছি প্রাকৃতিক নানান ক্রিয়া-বিক্রিয়া। দেশে দেশে চলছে যুদ্ধাস্ত্র তৈরির ও বিক্রির প্রতিযোগিতা, সীমান্তে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে জ্যান্ত মৃত অজস্র উপগ্রহ। চাঁদে মানুষ যাচ্ছে, মঙ্গলে উপগ্রহ যাচ্ছে। মানুষ রোবট তৈরিতে খরচ বেশি তাই যন্ত্র রোবট তৈরিতে আগ্রহ বেড়েছে বিশ্বব্যাপী তার সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বলার কিছু নেই। এত গবেষণাগার এক করোনা ভাইরাস এর আগ্রাসনের থাবায় জীর্ণ চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে। যদি আরো কোন ভাইরাস করোনার সাথে যুক্ত হয় তবে? WHO একটু নড়েচড়ে তাদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে কতটা সামর্থ্য রাখে যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট WHO কে হুমকি দেয়। আমরা ভেতরে-বাইরে কতটা মানুষ না হৃদয়হীন রোবট।


সংবিধানে বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্র যেই পরিচালনা করুক না কেন আয়ের অসমতা ন্যূনতম করার চেষ্টা করবে। কোন ব্যক্তি বিশেষে নয়, জনগণের সব অংশের মধ্যে সব পেশায় ও দেশের সব এলাকায় এটা করতে হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাষ্ট্র যে নীতি নিয়ে চলবে তার কয়েকটি হ'লো --

১.       নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমানভাবে সকল নাগরিকদের জীবন জীবিকার পর্যাপ্ত উপায় এর  অধিকার থাকবে।

২.      আর্থিক ব্যবস্থা এমন ভাবে চলবে সম্পদের যেন কেন্দ্রীয় ভবন না হয়।

৩.      নারী-পুরুষ উভয়ের সমান কাজে সমান মজুরি;

৪.      শিক্ষা, স্বাস্থ্য,কাজের অধিকারের জন্য রাষ্ট্র আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবে;

৫.      ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত সকলের সচেতন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা;

৬.      তপশিলি জাতি আদিবাসী ও আর্থিকভাবে দুর্বল অংশের জন্য শিক্ষা ও আর্থিক স্বার্থের দিকে রাষ্ট্র বিশেষ নজর দেবে।


শুধু তাই নয়, সামাজিক, আর্থিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুবিচার ও বৈষম্য অবসানের জন্য আরো বেশ কিছু ব্যবস্থা নির্দেশাত্মক নীতিতে আছে। এই নীতি ৭৩ বছরে লোক দেখানো কিছু ছাড়া রাষ্ট্রের কল্যাণকামী ভাবনার বাস্তবায়ন কারুরই চোখে পড়ার মতো নয়, যদিও অত্যাধুনিক "আচ্ছে দিন" উপহারের নয়া নজির অপেক্ষা করছে স্বাধীনতার ৭৫ বছরের প্রতিষ্ঠা দিবসে রাম রাজ্য প্রতিষ্ঠার ঘোষণা হবে। তবে আমাদের সংবিধানের কি হবে যা সুসভ্য সমাজ গঠনে এতদিন সংশোধিত হলেও অনুসৃত হয়ে আসছে। আবার অবাক বিষ্ময়ে দেখলাম এ সময়েই কেন্দ্রীয় সরকার ২২ শে সেপ্টেম্বর কৃষক বিরোধী কৃষি বিল পাশ করালেন সংবিধানকে এড়িয়ে।


এ এক অদ্ভুত আঁধার সময়। পরিযায়ী শ্রমিকের চরম দুর্দশা কিংবা দেশব্যাপী কৃষকদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান থেকেই সহজবোধ্য ভারতের শোচনীয় আর্থিক অবস্থা। আগেও উল্লেখ করেছি তবে বিভিন্ন হিসেবে মোটামুটি ধারণায় আছে প্রায় ১৪ কোটি পরিযায়ী শ্রমিক, আবার কয়েক মাসের মধ্যে কৃষি, নির্মাণ ও অন্যান্য কাজে ভিন রাজ্যে যায় প্রায় ২০ কোটি শ্রমিক সব মিলিয়ে, যারা অভাবে নিজের রাজ্যে কর্মসংস্থান করতে না পেরে ভিন রাজ্যে যায়। এই দুর্গত মানুষদের কাছে না আছে আশ্রয়, শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা যা একটি সভ্য শিক্ষিত দেশের কাছে দাবি করে বাঁচার অধিকার। সভ্যতার নিষ্ঠুর পরিহাস নিজেভূমে পরবাসী আসামের ১৯ লক্ষ মানুষ নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়া, কাশ্মীরের ৮০ লক্ষ নাগরিকের অসহনীয় অধিকারহীন অবরুদ্ধ অবস্থা, অপর রাজ্যগুলির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিক জীবনের উপর পরিকল্পিত অত্যাচার - এইগুলো সমাজবিজ্ঞানী, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন এই অসম পরিস্থিতির দায় কার। এই সভ্য ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের বৈচিত্র যেখানে বলা হয় পৃথিবীর ক্ষুদ্র প্রতিরূপ, সেখানে পৃথিবীময় সমকালীন সভ্যতার কী বার্তা বহন করবে!


প্রতিটি ক্ষেত্রে একটি দিশাহীন পরিস্থিতি আমাদের প্রতিনিয়ত বিব্রত করে। আমাদের দেশ থেকে বিদেশে সুউন্নত কর্মসংস্থানের জন্য যান গবেষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সহ বহু কৃতি মানুষ। এই সঙ্কট মুহূর্তে কিছু জন ফিরে এসেছেন। হয়তো সংকটকাল কাটলে ফিরবেন। সেটা অন্য কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার কেউই কর্ম বিনিয়োগকে গুরুত্ব দেননি। চাপে পড়ে কিছু ডাক্তার নিয়োগ হয়েছে কিন্তু অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্র শূন্যপদ খালি পড়ে আছে। আউটসোর্সিং চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা ছিল বছরের ২ কোটি বেকারের কর্মসংস্থান। উল্টে শূন্য পদ বাতিল করেছেন। রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রগুলিকে বেসরকারিকরণ করেছন। রেলে, বিমান ক্ষেত্রে, বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে। শিক্ষা চিকিৎসাতে তো হয়েছেই। পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও কয়লাখনি/ব্লক বেসরকারিকরণ করা হয়েছে সম্প্রতি আরও ২৬ টি সংস্থাকে পুরোটাই বিক্রি করবেন যেগুলি অত্যন্ত লাভজনক। তাহলে সুশিক্ষিত বেকার বাহিনী ইঞ্জিনিয়ার গবেষক এদের স্বাধীন উদ্ভাবনী শক্তির মর্যাদা কিভাবে রক্ষিত হবে। আর নিয়োগ সেখানে চালু হবে অবাধ আউটসোর্সিং, এখানে যেমন পার্শ্বশিক্ষক, ক্যাজুয়াল, পার্টটাইম কর্মী নিয়োগ হচ্ছে। বাস্তবিকই একটি ধর্মনিরপেক্ষ কল্যাণকামী রাষ্ট্রের যা করনীয় তার থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে নিজে এবং পরোক্ষত রাজ্যকেও তাই করতে উস্কানি দিচ্ছে। ফলে এখান থেকে শিল্প তাড়ানো যেতে পারে, প্রতিষ্ঠিত হবে না। আরও সংকটজনক অবস্থা বয়স্ক নাগরিকদের। এই করোনাকালে সিনিয়র সিটিজেনদের গচ্ছিত টাকা যার সুদে তারা বাঁচে সেই সুদ ন্যূনতম করা হয়েছে, স্টেট ব্যাংকেও তাই। আমেরিকা পারে বিনা সুদে ফেডারেল ব্যাংক টাকা মানুষকে লোন দিতে, আবার সেই টাকা শেয়ার বাজারে খাটিয়ে মানুষ আবার নিজের হাতে সঞ্চয় করে আবার ব্যাংকে টাকা ফেরত দেয়। সেটা এক প্রচেষ্টা মাত্র আমাদের দেশের সরকারকে বুঝতে হবে। করোনা প্রহর কালে দুনিয়াজুড়ে মানুষের জীবনের সব দিক থেকে যে দুর্নিবার আঘাত আছড়ে পড়েছে তা এই শতাব্দীর গড়ে ওঠা সভ্যতার উপর আঘাত, অবহেলিত মানুষ সম্পদের সঠিক ব্যবহার, কর্পোরেট স্বার্থরক্ষায় তার লগ্নিপুঁজির স্বার্থরক্ষায় কর্মহীন, বেরোজগারি মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছেছে। সময়কাল চিহ্নিত করবে এই সংকটকালে থেকে বেরোবার পথ কি আর জায়গা নেই যে জীবনের টানে জীবিকার টানে কোথায় কেমন আলো শব্দের হৃদয়ে রাহুর গ্রাস মাথাপিছু আয় তলানীতে ঠেকেছে। বিপদ বাড়ছে ভিন্ন রুচির ব্যবস্থাপনার গুনে মানবজীবনের বিশ্বাসটুকুও এসময়ের সভ্যতার উন্নয়ন টুকুও বিপর্যস্ত করে ফেলেছে। গড়ে প্রতিদিন চুক্তি ভিত্তিক ডাক্তার, শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মহীন প্রায় ৫০ হাজার, এখনই তা প্রায় ৮০ লক্ষ ছুঁয়েছে। কৃষক মৃত্যুর হারও বাড়ছে একজন সাধারণ কলমচি হিসেবে বুঝি অনুভবে, মুখোশের আড়াল থেকে মানুষত্যের পরিচয় যেন ছেদ না পড়ে। প্রকৃতির গাছ, পাখি, ফুল, নদীর স্রোত, বৃষ্টি, চাষাবাদ, বনকুসুমের গন্ধ, চেনা পাখিদের সম্মিলিত গান, তেমনি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় যে সভ্য মানব সমাজ। তাদের উদার চেতনার জোরে সকল দ্রাঘিমা রেখা অক্ষরেখা সকল কিছু ভুলে একাত্ম হোক এই আত্মবিশ্বাস নিয়ে যে আবার আমার নতুন পৃথিবী গড়বো। কারণ করোনার সংকটকাল নিরসন হ’লে মানুষ শান্তি আর সাম্যের অবস্থান চাইবে এটাই এ সময়ের মানবাত্মার চাহিদা। পায়ে পায়ে এমন মানুষের সংখ্যা বাড়ছে যাঁরা পৃথিবীতে মেপে দেখবে। ইতিহাস আর সভ্যতার নিয়মে করোনা একদিন পরাভূত হবে। সে কারণেই সারা বিশ্বের গবেষণাগার, জেনেটিক বিভাগ, সকলকেই মন প্রাণ দিয়ে অবিরত ব্যস্ত করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়। আমরা সবাই থাকি একসাথে, অনুভবে একাত্ম থাকি সকলে মানবিক হৃদয়ে, করোনা পরাভূত সময়ে কালের নিয়মে অতিক্রান্ত হলেও যেনো আলো অক্ষর নির্মল হৃদয় তথাকথিত রাহুল করাল গ্রাস এর কাছে আত্মসমর্পণ না করে। মানুষের মহার্ঘ্য হৃদয় বোধের দায় আজ তাই বিশ্বময়। এখন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দায় পৃথিবীর সকল দেশেরই, সকল মানুষেরও।


কপিরাইট বিকাশ চন্দ কর্তৃক সংরক্ষিত

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন