বিপ্লব চক্রবর্তী : সোশ্যালমিডিয়া এবং বাংলা কবিতা




সোশ্যালমিডিয়া এবং বাংলা কবিতা

রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার সেই জায়গাটা অনায়াসে আমাদের মনে আনতে পারিশিলং-এ যেখানে অমিত আর লাবণ্য পাশাপাশি বসে ছিলেন, সেখানে একটি ব্যাঙ লাফ দিয়ে জলে পড়লতাই দেখে অমিত-র বলাটা অনেকটা এইরকম ছিলনা কি, মহাকালের নিরিখে দ্বিতীয়বার হয়ত ব্যাঙটিকে লাফ মেরে জলে পড়তে দেখা যাবেনা কিন্তু এই যে আমাদের সামনে লাফিয়ে পড়ল  এই সত্যটাকেও কখনো অস্বীকার করা যাবেনাসেটা কিন্তু অবশ্যই ছিল কবিতার বোধতার আগে একটা চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল স্থানিক সত্যটাও যে মহাকালের একটা অংশ রবীন্দ্রনাথের কবিস্বত্তা সেটা বারবার আমাদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন

আবার ধরুন, ঋত্বিক ঘটকের "মেঘে ঢাকা তারা" মুভির নায়িকা যখন শেষদৃশ্যে চিৎকার করে বলে ওঠেন "দাদা আমি বাঁচতে চাই"! আলাদা ভাবে ঐ সংলাপটাকে আমার ব্যাক্তিগত অনুভূতিতে কবিতা বলে মনে হয়েছে মানুষ যখন লড়াই সংগ্রামের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে শ্লোগান দেয়, সেটাও একসময় কবিতা হয়ে যায়সুভাষ মুখোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বহু কালজয়ী কবিতাই সম্ভবত শ্লোগান দর্শন থেকেই তৈরি হয়েছিল


একদম পেছনে চলে যাইচর্যাপদের কবিতাচর্যাপদের কবিতাগুলোকি সবটাই অতি উৎকৃষ্ট মানের কবিতা? তা বোধহয় নাসহজাত জীবনের আঙ্গিকটা আমরা চর্যাপদের কবিতার মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলামবাংলা কবিতার বৃদ্ধপ্রপিতামহ ধর্মী একটা ঐতিহ্যতে আমরা অবগাহন করেছিলাম বোঝাতে চেয়েছিলাম বাংলা কবিতারও একটা বংশলতিকা আছে

বাংলা সাহিত্যের হাজার বছরের ইতিহাস মোটামুটি এইরকম১০০০-১২০০ খ্রীস্টাব্দ আদিযুগ১২০১-১৮০০ খ্রীস্টাব্দ মধ্যযুগ এবং ১৮০১ সাল থেকে আধুনিক যুগ হিসাবে ধরা হয়েছে১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের মৃত্যুর পর উনবিংশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে পঞ্চম দশকে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত পুরাতন মঙ্গলকাব্যিক রীতি ভেঙে একটা নতুন কাব্যিক চেতনা দিয়ে বিদ্বজ্জনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি স্বদেশপ্রেম, সমকালীন ভাষা,  এবং রঙ্গব্যঙ্গের তীক্ষ্ণতার মধ্য দিয়ে একটি আবহমণ্ডল তৈরি করেছিলেন১৮৫৯ সালে তাঁর মৃত্যু হলে মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব আমার যদি ভুল না হয়, মাইকেল মধুসূদন দত্তই প্রথম বাংলাকবিতাকে সাবালক করেছিলেনমাইকেলের জমিটা তৈরি করে দিয়েছিলেন রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়তিনি স্কট,  বায়রণ, ও ম্যুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে  বীররসের আখ্যানপর্বে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের গভীর সংযোগ ভাষায়, প্রকরণে, ও বৈচিত্রে বাংলা কাব্যের যে নতুন ধারার প্রচলন করেছিলেন, তা মাইকেলকে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে ছিল তিনি মঙ্গলকাব্যের দেবীমাহাত্ম্য , রামায়ণ মহাভারতের পাঁচালির  সুর, বৈষ্ণবীয় কীর্তনরসকে বাদ দিয়ে কাহিনি বিন্যাস ও চিত্রপট তৈরিতে ভার্জিল, হোমার, দান্তে, মিল্টন, প্রভৃতি ইওরোপীয়  মহাকবিদের প্রদর্শিত শিল্পসমৃদ্ধ ধারাটাকেই গ্রহণ করলেও, ভারতীয় মহাকবি ব্যাস, বাল্মীকি, কালিদাস, ভবভূতি প্রমূখের বিষয় বৈচিত্রকেই সমৃদ্ধ করেছিলেন তাঁর আগের বিশাল সংখ্যক কবিদের এতটুকু ছোট না করেও বলতে পারি, অমৃত্রাক্ষর ছন্দকে বাংলা কবিতায় প্রবেশ ঘটিয়ে ছিলেন তাঁর মেধা ও মননের সবটুকু উজাড় করেরবীন্দ্রনাথ বাংলাকবিতার ফর্ম নিয়ে টেকস্ট নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেনআজকের সোশ্যাল মিডিয়ায়ও প্রচুর কবিতা পোষ্ট হচ্ছে , তা নিয়ে আড়াআড়ি দুটো মত তৈরি হয়েছে কবিতার শুদ্ধতা নিয়ে কিংবা কবিনামক আধুনিক আধুনিকাদের কবিতা নিয়েসেটা কতটা ঠিক কতটা অতিরঞ্জিত সেটাই আলোচনা করব বলে ভূমিকা করলামমূল প্রসঙ্গে আসার আগে আর একটু কূটকাচালি করে নিই, আলোচনাটা সমৃদ্ধ হবে তাহলেপ্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে সামাজিক মূল্যবোধের ব্যাপক রদবদল ঘটেতখন কবিদের কাব্যভাবনার ক্ষেত্রটিও পাল্টে যায়সমকালীন সামাজিক অবক্ষয় ও ক্ষয়িষ্ণু জীবনের সঙ্গে যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর বিধ্বংসী রূপও মূর্ত হয়ে ওঠেজীবনানন্দ দাশ, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসু , অমিয় চক্রবর্তী,  প্রেমেন্দ্র মিত্র, সমর সেন,  অজিত দত্তরা রবীন্দ্রভাবনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে আধুনিক বাংলা কবিতায় ইওরোপীয় ধ্যানধারণায় বাংলা কবিতাকে সমৃদ্ধ করেছিলেন

তাঁদের পরবর্তী বিমলচন্দ্র ঘোষ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দিনেশ দাস, অরুণ মিত্র,  শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ দাশগুপ্ত, ভাস্কর চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার, প্রমুখ শক্তিশালী কবিদের মেধায় প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছি্ল বাংলা কাব্যসাহিত্যতাঁদেরি উত্তরসুরি আমরাএখানেই মননশীলতার অন্য একটি পাঠ আমাদের বুঝতে হবেযেমন ধরুন, একজন মানুষ কবিতা লেখেন তারমানে তিনি কবি হতে চানআবার, কবি হতে আদৌ তিনি চান না, তিনিও কবিতা লিখতে পারেনফেসবুকে যারা নিয়মিত দরকাঁচামারা কবিতা পোষ্ট করেন তাঁদের অনেকের মনে কবি হওয়া-হওয়ি কোন সাহিত্য অনুশীলন যেমন নেই, পাশাপাশি নিজেকে যোগ্যতর করে তোলারও দায় নেইআমার বলা এটাই,  এই ধরনের কবিদেরও প্রয়োজন আছেএরা আগেও ছিল, এখনও আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেনএরাই কবিতার বাজারটা গরম করে তোলেন
   
রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিকতাবাদী বলতে বাংলা কবিতায় যারা এসেছিলেন, তাঁদের ইংরাজি শিক্ষার প্রতি এতটাই তণুমনপ্রাণ সঁপে দেওয়া ছিল যে তাঁরা বা়ংলা কবিতার চিরায়ত ধারার প্রতি যথেষ্টই উন্নাসিক ছিলেনএমন একটা ডিকশান তারা কবিতায় আনতে  চাইলেন যে গুলো পড়বে শুধুমাত্র তথাকথিত শিক্ষিত যারাএমন একটা প্রাচীর খাঁড়া করে দিলেন, তাঁরাই একমাত্র নান্দনিকতার ইজারাদারএটা ইংরেজরাই এদেশে শুরু করেছিলেন তাদের সাংস্কৃতিক তল্পিবাহক তৈরির জন্য
   
জেনে বিষ্ময়াবিষ্ট হয়েছিলাম, কবি হারাধন ধাড়ার ছদ্মনাম দেবী রায় রেখে হাংরি আন্দোলন শুরু হয়ে ছিলহাংরিদের অভিযোগ ছিল,  ষাট-এর দশকের প্রভাবশালী পত্রিকাসমূহ যেমন, কবিতা, ধ্রুপদী, একক, উত্তরসূরী, কৃত্তিবাস, শতভিষা, এইসব পত্রিকার সেই সময়ের প্রকা‌শনার  সূচিপত্র উল্টালে কোন নিম্নবর্গীয় কবিকে পাওয়া যাবেনাসেখান থেকেই নিম্নবর্গীয় কবিদের ছদ্মনাম নিয়ে কায়স্ত কিংবা ব্রাহ্মণ  সাজার ট্রেন্ড তৈরি হয়েছিলযার প্রথম পথপ্রদর্শক ছিলেন দেবী রায় ছদ্মনাম ধারী কবি হারাধন ধাড়া তারপরে দেখলাম বিনয় মজুমদারকে অকাদেমি পুরস্কার দিতে এত দেরি করা, সবটাই একধরনের  চাপা বর্ণবৈষম্য সেইসময় অন্ত্যজ কবিদের মনোভাব প্রকাশ করার এত স্পেস ছিল নাসোশ্যাল মিডিয়া তাহলে কি দীর্ঘদিনের ক্ষোভ বিক্ষোভের সেই অপর্যাপ্ত জায়গাটা দিচ্ছে? সেটা বলার জন্যও আরো কয়েকটি খোঁজখবর নেবার প্রয়োজন আছে
    
আমরা ইউরোপ থেকে সাহিত্যের কতগুলো সজ্ঞাকে গলাধঃকরণ করে ফেলেছিতার থেকে একটি চিন্তনতন্ত্র তৈরি হয়েছেসেই সজ্ঞা অনুসারে অনির্মিত, স্থানের ঐতিহ্যমুক্ত পাঠ, বাংল কবিতার প্রচলিত পাশ্চাত্যসম্পৃক্ত শব্দব্যবহারেই বাইরে শুদ্ধ কবিতা হতে পারেনাকবিতা হতে দেয় নিসেখানে অন্ত্যজদের ভাবনা প্রাধান্য পাবার  প্রশ্নই ওঠেনা

এই প্রসঙ্গে একটা তথ্য পরিবেশন করার লোভ সংবরণ  করতে পারলাম না৫ এপ্রিল ২০০৩ তারিখে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের পক্ষে বাংলা একাদেমি সভাঘরে মীর মোশারফ হোসেন স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল কবিতার পালাবদল---কৃত্তিবাস থেকে হাংরি জেনারেশানস্বাগত ভাষণ  সনৎকুমার চট্টোপাধ্যায়পরিচিতি পবিত্র সরকারবক্তা উৎপল কুমার বসুসভাপতি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীমীর মোশারেফের সাহিত্য থেকে সংক্ষিপ্ত সুনির্বাচিত পাঠ করেছিলেন শুভময় মণ্ডলআসলে,  হিন্দু এস্ট্যাবলিশমেন্ট কর্তৃক বহুকাল ধরে অবহেলিত মীর মোশারেফ হোসেনের ডিসকোর্সটিকে স্বীকৃতির সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল কৃত্তিবাস বনাম হাংরি আন্দোলনের মাধ্যমেএখনো সুপ্তভাবে বয়ে চলেছে কল্লোল থেকে নতুন রীতি, শতভিষা থেকে হাংরি, কৃত্তিবাস থেকে শ্রুতি, কৃত্তিবাস থেকে নিমসাহিত্য, এই ধরনের বিতর্কগুলোপাশ্চাত্য মননবিশ্বের প্রতারণায়, কবি ও লেখকরা কৃৎপ্রত্যয়, তদ্ধিতপ্রত্যয়, বিধেয়, মুক্তদল, রুদ্ধদল,  ইত্যাদি বিদ্যায়তনিক বাগাড়ম্বরে এমন ফেঁসে গিয়েছিলেন সেসময়ে,  সাহিত্য এবং কবিতা যে মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি বা বহুবিধ জ্ঞানের জীবনকর্ম  তাঁরা মেনে নিতে পারেন নিএছাড়াও, পশ্চিমবাংলাকে বারবার "বাংলাদেশ" বলার কৃত্তিবাসীয় প্রক্রিয়া আসলে ব্রিটিশের অধীনস্ত  থেকে একরকম ধোঁয়াশার রোমান্টিসিজম ভয়ঙ্কর দেশভাগোত্তর বাস্তবতাকে অস্বীকার করে গেছেএই মর্মান্তিক সংকরায়ণ এলাকাভিত্তিক লেখক এবং কবিদের অনুভূতিকে আঘাত করলেও অন্ত্যজ এলাকার সৃজনশীল মানুষেরা তাঁদের প্রতিবাদ প্রতিফলিত করতে পারেন নি ওপরে বসে থাকা অভিভাবকদের চাপেসোশ্যালমিডিয়া এসে সেই অভিভাবকত্বের মূলটাকে উপড়ে দিলফলে একশ্রেণির ভাবুকবিলাশের চোখে সোশ্যালমিডিয়ার সাহিত্যচর্চায় রজ্জুতে সর্পভ্রম হচ্ছে
  
অস্বীকার করা যাবে না যে,  প্রতিটি নতুন দশক নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেভাষা ব্যবহারে, প্রকরণে, উপস্থাপনায়, চিহ্ন পরিসরে নতুন নতুন নির্মাণ হতে পারেএ ভাবে যিনি কবিতাটা ভাববেন তিনিই কবি হিসাবে এগিয়ে থাকবেনতিনি মিডিয়ার নেকনজড় নাও পেতে পারেনএকজন সৃজনশীল কবি কখনো প্রাতিষ্ঠানিকতায় গা ভাসিয়ে দিতে পারেন নাআবার প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকাতে কালেভদ্রে লেখা কবি কখনোই প্রাতিষ্ঠানিক হতে পারেন নালিটিলম্যাগ মানেই ভালো কাগজ হবে এধারনাটাও  ভ্রান্ত তারাও এক একটি গোষ্ঠীর পরিপূরকআবার এমন অনেক লিটিলম্যাগ নামধারি পত্রিকা আছে, যেগুলো কাউন্টার প্রাতিষ্ঠানিকসেখানের কবি লেখকরাও সুনির্বাচিত এবং সুনিয়ন্ত্রিততাহলে বাকি থাকল সো‌শ্যাল মিডিয়া বা ফেসবুক
    
এবারে আসি, "যে আছে মাটির কাছাকাছি সে কবির লাগি আমি কান পেতে আছি" সেইসব তরুণ কবিদের কাছেতারা এটা দেখছেন, কবিতা নিয়ে পারস্পরিক আলোচনা নেই বললেই চলেবাংলা একাদেমি, জীবনানন্দ সভাঘর, অবনীন্দ্রনাথ সভাঘরের মঞ্চগুলোতে কবিতা পাঠের অনুষ্ঠান হয়সেখানে ভীড়ও হয়প্রচুর উত্তরীয় পরানো হয়, মেমেন্টো দেওয়া হয়সভাপতি এবং প্রধান অতিথির ভাষণ হয়আসল কাজটা হয় নাতরুণ কবিদের কবিতাটি কতটুকু কবিতা হয়ে উঠল সেই আলোচনা কেউ করেন নাএতে করে কবিতার মান খারাপ হচ্ছেআর একটা ব্যাপার ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ফেসবুকে এ সপ্তাহের সেরা কবি, সেরা গল্পকার বলে ছবিসহ একটা সার্টিফিকেট ছেড়ে দেওয়া হচ্ছেসেই নির্দিষ্ট লেখাটি এত নিম্নমানের যে বলে বোঝানো যাবে নাএটা ফেসবুকের ডি-মেরিট ফেসবুকের কল্যাণে আজকের পরিসরের একজন কবি অনায়াসে সুকান্ত, নজরুল, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে'র কবিতা ডিকসানকে কপি করে যাচ্ছেনতাদের এই ভুলটা ধরিয়ে দেবার কোন পরিসর নেইইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে বানিজ্যিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এমন কোনো কোনো কবির কবিতায় ব্যবহৃত শব্দপ্রয়োগকে অনেক তরুণকবি সরাসরি কপি করে যাচ্ছেনএইরকম অনেক কবির শব্দব্যবহারকে একশ্রেণির তরুণ-তরুণি কপি করে যাচ্ছেনফেসবুক আছে বলে এদেরকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে  কবিতায় যতক্ষণ পর্যন্ত একজন কবি তার নিজস্ব ডিকসান তৈরি করতে না পারছেন সে কখনোই কবি হয়ে উঠতে পারবেন নাএ কথাটাও তরুণদের সুসংবদ্ধভাবে বলার কেউ নেইবিক্ষিপ্তভাবে কেউ কেউ বলেন
 
সংগীত, নাটক, পেইন্টিং, ফাইন আর্টস, আবৃত্তি, ভাস্কর্য্য,  ধ্রুপদী সংগীত, রাজনীতি,  সৃজনশীলতার সবকটি বিভাগে ওয়ার্কশপের প্রচলন আছে একমাত্র কবি লেখকদের সৃজনশীল কাজের কোনো ওয়ার্কশপ হয়না ঘুরে ঘুরে সিনিয়র কবি লেখকদের সংগে আড্ডা মেরে মেরে কেউ কেউ কিছুটা সংগ্রহ করতে পারতেনএখন ফেবু আর অন্তর্জাল এসে সে গুড়েও বালি ঢেলে দিয়েছেকিছু কিছু বই থেকে কপিপেষ্ট করা সবজান্তা নতুন লেখকের সংখ্যাও একেবারে কম নয়তাদের পায়ে নেই মাটি, চোখে নেই অচেনাকে দেখার মরুভ্রম, রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার মানসিক চঞ্চলতাযেটা আছে নির্দিষ্ট কিছু ছককাটা ভ্রমণ আর তারজন্য পূর্বসূরিদের লেখা থেকে ধারকরা কথার বাহার এই মূহুর্তে বেশ কজন কবির নাম করা যায় যারা ফেসবুকে লিখতে লিখতে প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকায় কবিতা লেখার সুযোগ পেয়েছেন
   
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, যে ব্যাঙটি (শেষের কবিতায় )লাফিয়ে জলে পড়ল, অনাদি কালে হয়ত দ্বিতীয় বার এমনটি নাও ঘটতে পারেকবিকে ঐখান থেকেই শুরু করতে হবে তাঁর দেখার পর্বকেনিজের হৃদয়মনে জারিত করে তুলতে হবে তার ক্ষরণ আলো আঁধারির দোলাচলে পাঠকের মননে গুঁজে দিতে পারলে তবেই সে সার্থক কবি ফেসবুক যেমন তাকে প্রকাশ করার সুযোগ দিয়েছে,  তেমনি তাকে খরচ করে ফৌত করে দিতেও ফেসবুক এতটুকু দ্বিধা করবে নাতাই বলছি শনৈ শনৈ

কপিরাইট বিপ্লব চক্রবর্তী কর্তৃক সংরক্ষিত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন