মুখোমুখি শর্মিষ্ঠা ঘোষ



মুখোমুখি শর্মিষ্ঠা ঘোষ


সম্পাদক রংরুট: সকলের আগে ত্রৈমাসিক রংরুটের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। রংরুটের এই বিশেষ সংখ্যায় আপনাকে স্বাগতম। প্রথমেই যে বিষয়টি জানতে চাইবো সেটি হলো, কবিতাই বা কেন? অর্থাৎ কবিতা ছাড়া আরও তো অনেক বিষয় রয়েছে সাহিত্যের। সেখানে কবিতা নিয়ে আপনার আগ্রহের উৎস কি? এবং মোটামুটি ভাবে জীবনের কোন পর্যায় থেকে এই আগ্রহের সূত্রপাত। এবং এই বিষয়ে বিশেষ কারুর প্রভাব যদি থেকে থাকে আপনার জীবনে।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ:, লেখালেখির শুরু সেই ছাত্র জীবন থেকেই একেবারে স্কুল লাইফে। ডায়েরি দিয়ে শুরু তারপর কবিতায় উত্তরণ। স্কুলে অফ পিরিওডে বন্ধুরা পড়বার জন্য বই নিয়ে আসতো বিভিন্ন রকম তার মধ্যে কবিতাও থাকত । বাবা-মায়ের লাইব্রেরী থেকে ঝেঁপে আনা। আঁতলামি আর কি। খেলাচ্ছলে শুরু হয়েছিল কবিতা পড়া। তারপর প্রেমে পড়ে গেলাম। এভাবেই একে একে পড়া বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, কবিতা সিংহ, দেবারতি মিত্র, মণীন্দ্র গুপ্ত, নীরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা দেব সেন এদের। "সঞ্চিতা", "সঞ্চয়িতা", সুকান্ত সমগ্র এবংও জীবনানন্দ দাশের বাইরে কবিতার ভুবন চেনা শুরু তখনই । সিলেবাসের বাইরে পা বাড়ানো। আর কবিতাই আমার প্রথম প্রেম।


প্রেমে পড়তে কোন কারণ বারণ যুক্তি লাগে নাকি? এমন কোন বাঙালি নেই যে ছাত্রজীবনে কবিতা লেখে নি কিন্তু সেই খেয়াল টাই যখন নেশা হয়ে ওঠে তখন অন্যরকম। সে সময় "দেশ" এ সুনীল গাঙ্গুলী কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ লিখছেন এবং তখনই খুলে যাচ্ছে অনুবাদ সাহিত্যের ধারা । ফরাসি কবিতা, পাবলো নেরুদা, টি এস এলিয়ট, হাইনরিখ হাইনে,  বিটলস, অ্যালেন গিন্সবার্গ, কৃত্তিবাস আন্দোলন, হাংরি আন্দোলন এগুলো ঢুকে পড়ল চেতনায়। এই সময় ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরির মেম্বারশিপ এনে দিল অনন্ত সুযোগ বিদেশি সাহিত্যের সাথে সাথে আমাদের দেশীয় সাহিত্যের কবিদের জানার   আমাকে কেউ কোনদিন গাইড করেনি এটা পড়ো সেটা ভালো বলে । এলোমেলো যখন যেমন হাতে এসেছে পড়ে গেছি নিরন্তর। তার থেকেই জল দুধ আলাদা করতে শেখা।


সম্পাদক রংরুট: এবারে আসি আপনার নিজের লেখার বিষয়ে, কোন বিশেষ লেখকের প্রভাব সম্বন্ধে আপনি কি সচেতন? যেমন, অনেকেই আমরা আমাদের খুব প্রিয় লেখকের দ্বারা মনের অজান্তেই প্রভাবিত হয়ে পড়তে পারি। আবার অত্যন্ত সচেতন ভাবে প্রিয়তম লেখকের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার প্রয়াসও করতে পারি। আপনার নিজের  লেখালেখির ক্ষেত্রে বিষয়টি ঠিক কি রকম?


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: আগে তো কারুর সাথে ঠিকঠাক চেনাশোনা হবে। বোঝা যাবে সে কেমন। তারপর তো গ্রহণ বা বর্জনের প্রশ্ন। আগে তো পথটা চিনতে হবে। জানতে হবে তার সৌন্দর্য বা বিপদ। তারপর ঠিক করতে হবে আমি আদৌ সে পথে হাঁটতে চাই কিনা। আর যদি জ্যাঠামশাই বলেছেন বলে হাঁটবো না ভাবি সেটি প্রেজুডিস মাত্র। কাউকে না জেনে তার সম্পর্কে কথা বলার মত।
ছন্দ পছন্দ আমার। আবার ছন্দহীনতার মধ্যেও ছন্দের এসেন্স থাকে। ছন্দের রাজপুত্তুররা তো পথ দেখাবেন ই আমাকে। ভাষা নিরপেক্ষ ভাবেই। আবার যখন গদ্য কবিতার কথা ভাবছি তখনও সামনে অনেক মডেল। কাজেই কোন ইনহিবিশান নেই। কি হোল ভাবিনা। শুধু দেখি সেটা লিখে আনন্দ পাচ্ছি কিনা। কনস্টিপেশান এর কষ্ট তো জানে সবাই। আবার সাহিত্যের নামে নতুন করে উপদ্রব করি কেন। ইট শুড বি ফ্রি ফ্লোয়িং। যেমন ক্যাপ্টেন কুক নমক। থাকলে থাকবে। গেলে যাবে। আমি তো আগে সেলিব্রেট করে নি কলম উৎসব। এতো আশীর্বাদ যে চিরকেলে মুখচোরা কলম পেলে ভাষা খুঁজে পাই


সম্পাদক রংরুট: কবিত লেখার বিষয়ে, আপনি কি আবেগের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশেই বিশ্বাসী, নাকি মহাকবি টি এস এলিয়টের সেই বিখ্যাত উক্তির মতো আপনিও বিশ্বাস করেন, “Poetry is not a turning loose of emotion, but an escape from emotion; it is not the expression of personality, but an escape from personality. But, of course, only those who have personality and emotions know what it means to want to escape from these things.”  এলিয়ট কথিত এই যে ব্যক্তিগত আবেগ ও আপন ব্যক্তিত্বের বদ্ধ আবহাওয়া থেকে মুক্তির আনন্দই কবিতা, আপনার কবিজীবনের পর্বে এরকম অভিজ্ঞতা ঘটেছে কি কখনো?


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: না। কবিতা আমার কাছে কেবল আবেগের জ্যাবজেবে প্রকাশ নয়। কবিতা যেহেতু মিতবাক এবং স্হিতধী সে কখনও অযথা হুজুগে মাতে না। সে স্মৃতিতে ধরে রাখে সময়। তার সাথে মিশে যায় চেতনা চিন্তা ধারা। আর এইসব কিছু জারিত হয় পরিশোধন হয় কবির মনোজগতে। সময় তার অন্যতম অনুঘটক। ধর তক্তা মার পেরেক করে কিছু একটা নামিয়ে দেবার পর দেখা যায় তাতে বহু ফাঁক ফোঁকর রয়ে গেছে। যা বলার কথা তেমন উচ্চকিত হোল না আবার যা গুরুত্বপূর্ণ নয় তেমন সে হয়তো অযথা গয়নাগাটি পরে বসেছে। তাহলে কি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নেই কবিতার? আছে। একটা ধারণা একটা বিষয় তো ঝলকের মতই আসে। তারপর সেটি ঘুরপাক খেতে থাকে। মনের ভেতর। আস্তে আস্তে তার হাত পা গজায়। একটা আকার ধারণ করে। কখনো একটা ঘটনা টেনে আনে আরো স্মৃতি। তারপর মালা গাঁথা হয়।


সম্পাদক রংরুট: এলিয়টের প্রসঙ্গই যখন উঠল, উনি কিন্তু দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, “Honest criticism and sensitive appreciation is directed not upon the poet but upon the poetry.”  আপনার কবিতা লেখালেখির জীবনপর্বের অভিজ্ঞতায় আপনিও কি এলিয়টের সাথে একমত। কবি নয়, কবিতাই হোক আলোচনা সমালোচনার বিষয়বস্তু। যদিও আমাদের সাহিত্য সমাজে কবিতা ছেড়ে কবিকেই সমালোচনার বিষয় করে তোলার ঐতিহ্য অনেক সুপ্রাচীন। একজন সংবেদনশীল কবি হিসাবে আপনার প্রতিক্রিয়া


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: আমরা বরাবরই স্রষ্টা আর সৃষ্টিকে একাত্ম করে ফেলি। সে শুধু কবিতা নয় যে কোন সাহিত্য এবং সঙ্গীত নৃত্য চিত্র বা অভিনয় বা শিল্প কলার ক্ষেত্রেই সত্য। আমরা স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে যা না খোঁজ রাখি তার চেয়ে বেশি রাখি তার কেচ্ছার। মানুষের মনোজগতের ছাপ সৃষ্টির ওপর ছাপ খানিকটা ফেলে তবে সেটা এমন মোটা দাগের নয়। মানুষের অনেক শেডস হয়। আমরা সবটাই বুঝতে পারি এমন না। আসলে প্রতিভা তো খানিকটা লাগামছাড়া বিষয় তাকে সাধারণ মাপকাঠিতে সবসময় ধরা যায় না আর সেটাই আমাদের কাছে পাগলামি ক্ষ্যাপামি লাগে। আমাদের মাপে আমরা আকাশ মাপলে সেটা আমাদের দৃষ্টি সীমানা পর্যন্ত ই বৈকি। অন্ধের হস্তি দর্শন টাইপ


সম্পাদক রংরুট: আমাদের সমাজসংসারে নারীর অবস্থান আপনাকে কতটা ও কিভাবে বিচলিত করে? আপনার নিজের সাহিত্যচর্চার ভিতরে এর কোন প্রচ্ছন্ন প্রভাব বিদ্যমান কি?


শর্মিষ্ঠা ঘোষ:সমাজের মেয়েরা আসলেই ততটা অবলা নয় যতটা প্রচার । ক্ষমতায়ণের রাজনীতিতে সেকেন্ড সেক্স কথাটা চালু রাখাটাও এক ধরণের রাজনীতি। আমরা যদি খুঁটিয়ে দেখি দেখব অনেক ক্ষেত্রেই নারী স্বেচ্ছায় একধাপ নীচে থাকতে চেয়েছে। মেল ইগোকে তৃপ্ত করে হাসিল করেছে নিজের অভীষ্ট। এখনও যখন কেউ স্বেচ্ছায় বেছে নেয় এমন একটা ব্যবস্থা যেখানে কেবল পুরুষ টির ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়া হয় উপার্জন সংসার প্রতিপালন বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দেখভালের তখন তাকে খানিকটা সুবিধেবাদী স্বার্থপর মনে হয়। আমি নাকে কাঁদব আমার না পাওয়া নিয়ে আমিই আবার সংসার এ বেছে নেব তুলনায় কম চ্যালেঞ্জিং ভূমিকা তাহলে কি করে হবে। আর সংসার সংস্কৃতিতে ঘরোয়া রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে সাংসারিক শান্তি। নিজের অধিকার বুঝে নিতে হলে তাকেই নির্ধারণ করতে হবে সে কিভাবে নিজেকে তৈরী করবে। ক্ষেত সেই ফসল দেবে যে বীজ বপন করা হবে আর ততটা ফসল দেবে যত ভালো কর্ষন হবে সার জল পাবে। চাষী ঠিক করবে সে কেমন ফসল চায়। সমাজ প্রচলিত অর্থে পিতৃতান্ত্রিক হলেও সংসারের খুঁটিনাটি নিয়ন্ত্রণ করে নারীই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। শারীরিকভাবে মানসিক ভাবে যারা নির্যাতন সহ্য করে দায় তাদের ও কম না। রুখে দাঁড়ালেই ভয় পাবে অত্যাচারী। রুখে দাঁড়াতে হলে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে আগে

নিজের লেখাতেও এই লড়কে লেঙ্গে ব্যাপারটাই স্বাভাবিক ভাবে আসে। কেন হ্যান হোলনা কেন ত্যান দিল না এসব আসে না আমার। কে কার মালিক যে দেবে?


সম্পাদক রংরুট: আপনার কবিতায় সমাজ ভাবনার একটি প্রতিচ্ছবি ধরা পড়ে। বস্তুত সমাজসচেতনতার আলো একজন কবির সাহিত্যচর্চার অন্যতম আয়ুধ। কবিতার ভিতর দিয়ে আপনি আমাদের সামাজিক অবস্থানের এই যে একটা চলমান ধারাভাষ্য দেওয়ার প্রয়াসী, এটি কি বিশেষ কোন মতবাদ সঞ্জাত? না’কি আপনার সংবেদনশীল কবি মননেরই একস্টেনশন। এখানে প্রাসঙ্গিক ভাবে আরও একটি প্রশ্ন উঁকি দেয়, কবি মননের সাথে বিশেষ বিশেষ মতবাদের, তা রাজনৈতিক হোক বা আধ্যাত্মিকই হোক, কোন আপাত বিরোধ থাকা কি সম্ভব? আপনার নিজস্ব অভিমত


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: সমাজ সময়ের বাইরে দাঁড়িয়ে লেখা যায় বিশ্বাস করি না। এমনকি অবিনশ্বর প্রেম বিদ্রোহের মূল কারণ গুলিও যুগে যুগে একই থাকে। জামা বদলাতে পারে চরিত্র নয়। কোন অ্যাবস্ট্রাক্ট আর্ট বিশ্লেষণ করলেও কোন শব্দ গন্ধ বর্ণ সময় চরিত্র খুঁজে পাওয়া যায়। পার্থিব ছুঁয়েই তো অপার্থিবে উত্তরণ। আমাদের জিন ডিকোড করলে যে রেখাচিত্র মেলে তার প্যাঁচে প্যাঁচে যে অনুভূতি তার কোনটাই জীবন বহির্ভূত নয় কোনটাই অধরা নয় মানুষের। তার হয়ে ওঠার সাধনা সিদ্ধ হয় বা হয় না। এই যা পার্থক্য। সুতরাং সবটাই মনু কথা। সবটাই ঘরবাড়ি সংসার কাছে দূরের পৃথিবী বা মাটি জল বায়ু আগুন আকাশ উৎসারিত বোধ। তাতে পুতুল নাচের সুতো তাতে এদিক সেদিক চলন

আর মতবাদের কথা উঠলে অবশ্যই সেটা বিশ্বভ্রাতৃত্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৌহার্দ্য যুদ্ধ বিরোধী বিশ্ব শান্তির এবং সীমানাহীন মানবতার পক্ষে। বিশ্বে সবার জন্য শিক্ষা স্বাস্থ্য খাবার কর্মসংস্থান এর কথা লিঙ্গ নিরপেক্ষ সমান সম্মান সুযোগ এর কথা যে রাজনীতি বলে আমি তার সাথে গলা মেলাতে রাজি। আমি আশাবাদ নিরন্তর যুক্তি তর্ক প্রশ্নের সাথে মানিয়ে চলতে পারা বদলে নিতে পারা যুগের মাপমত চাহিদা যোগানের সর্বজনীন মঙ্গলের রাজনীতিতে অবশ্যই বিশ্বাসী। আমার লেখা সেই রাজনৈতিক বিশ্বাসের বাইরে নয়। আমার মতবাদ বিশ্বজুড়ে অনেক রাজনৈতিক দলই অনুশীলন করে। ভাষা যাই হোক তাদের দলের পেছনে আমিও আছি। আমি নিরপেক্ষ নই। আমি স্বাধীনতা সাম্য মৈত্রী ঐক্য প্রগতির পক্ষে


সম্পাদক রংরুট: আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায়, সাহিত্যের অবস্থান কতটা জোরালো বলে আপানার মনে হয়।? আজকের সাহিত্য এই সময়ের জীবন ও জীবন সংগ্রামে সংবেদী আলো দিতে পারছে কি আদৌ? না’কি এযুগের মানুষকে সেই আলোর খোঁজে ক্রমাগত ফিরে তাকাতে হচ্ছে শাশ্বত সাহিত্যের অভিমুখেই?


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: সাহিত্যকে সঠিকভাবেই সামাজিক আন্দোলন এর অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করছেন প্রচুর মানুষ। আগেও যেমন ছিল এখনও। সাহিত্য ফ্যাসিবাদ এর বিরোধিতা করছে আমাদের দেশে যেমন বিশ্বজুড়েই। সাহিত্যিকদের ওপর স্হান কাল নির্বিশেষে গত 20 বছরের রাষ্ট্রীয় জুলুম যথেষ্ট প্রমাণ যে সাহিত্য তার সমাজ সংস্কারক ভূমিকা থেকে মোটেই বিচ্যূত হয় নি। আমাদের হতাশ নস্টালজিক হবার কোন কারণ নেই। ধান্দাজীবীরা চিরকালই ছিলেন আছেন থাকবেন। কারণ দুধে ভাতে থাকার প্রবণতা মানুষের সহজাত। আবার সমাজ সংস্কার বা সামাজিক আন্দোলন বিপ্লব করাও রোমান্টিক সাহিত্যের চিরকালের বৈশিষ্ট্য এবং এর জন্য জীবন দিতে সেদিন ও তারা পিছপা হননি আজও হচ্ছেন না। এই ভালো খারাপ দ্বন্দ্ব টা মানুষ এর ধর্ম। আমরা সবার কাছে এক জিনিস আশা করতে পারি না। আর চেতন চৈতন্য চিরকালের সংখ্যালঘু। ভেড়ার দল চোখ বুজে পালের সাথে হাঁটতে নিরাপদ বোধ করে। পথ প্রদর্শক কুকুর বিভ্রান্ত করলে খাদেও পড়ে। এটাই ভবিতব্য


সম্পাদক রংরুট: কবিতায় অনেকেই দিন বদলের স্বপ্ন দেখেন। এবং দেখান। বিশ্ব কবিতার ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে সেটি অনুভব করা যায়। এই সময়ের একজন কবি হিসাবে এই দিন বদলের স্বপ্ন দেখা ও দেখানোর বিষয়টি কিভাবে ধরা দেয় আপনার অন্তরে?


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: আগের দুটো প্রশ্নের উত্তরে এই বিষয়ে অনেকটাই বলা হয়ে গেছে। আমার কথা বলতে পারি আদ্যপান্ত স্বপ্ন দেখা মানুষ। আপাদমস্তক আশাবাদী। ভালোবাসা বিশ্বাস ভরসা পরিবর্তনকামীতা সংগ্রাম উদ্যম নিরন্তর সাধনা করে যেতে হয়। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত। লক্ষ্য উঁচু হলে লাফটাও ওপর দিকেই হবে। গোটা না হোক আধা পথ তো যাবে। হতাশায় হামাগুড়ি দেবার চেয়ে সে বরং ভালো


সম্পাদক রংরুট: আপনার নিজের লেখার বিষয়ে কখনো কি মনে হয়েছে, একটি গণ্ডীর ভিতরেই আটকিয়ে যাচ্ছে আপনার যাবতীয় লেখালেখি। সাধারণত আমাদের অধিকাংশই কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে আত্মনির্মিত নিজস্ব গন্ডীর ভিতরেই আটকিয়ে যাই। অনেকেই হয়তো খেয়াল করি না। আবার অনেকেই হয়তো সচেতন ভাবে সেই গণ্ডীর ভিতর থেকে নিজেকে মুক্ত করতে প্রয়াসী হন। আপনার লেখালেখি ও আপনার ব্যক্তিগত উপলব্ধি থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত যদি করেন।


শর্মিষ্ঠা ঘোষ: বন্ধুরা অভিযোগ করে আজকাল আমি আর প্রেমের কবিতা লিখছি না। আমি নিজে বুঝছি ভাংচুর চলছে সময়ের সাথে। কঠিন সময়ে শক্ত হয়ে উঠছে কবিতার চোয়াল। মুঠো হয়ে যাচ্ছে হাত। কড়া পড়ছে পায়ে । আবার কোন বাঁকে আবার কিছু ঘটবে হয়তো। নাহ। জীবন পরিবর্তনশীল। তথৈবচ দেখা শোনা। কি করে এক থাকবে প্রকাশ ভঙ্গি


সম্পাদক রংরুট: সবশেষে এসে জানতে চাইবো আপনার ব্যক্তিগত সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি সমসাময়িক কার কার কবিতাচর্চা আপনাকে বিশেষ ভাবে উদ্বুদ্ধ করে, যেখান থেকে বাঙলা কাব্যসাহিত্যের অদূর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আপনি প্রবল ভাবে আশাবাদী ভুমিতে অবস্থান করতে পারেন।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ: বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে বড় শত্রুও বলতে পারবে না যে প্রতিভা কম পড়েছে। আমি তো মুগ্ধ পর্যটক। "বিস্ময়ে ভ্রমি বিস্ময়ে" কত নাম করা সম্ভব স্বল্প পরিসরে? শুধু এটুকু বলব আমরা অনন্ত সম্ভাবনা ধরি কারণ আমাদের উদ্ভাবন গ্রহণ আত্তীকরণ আর আপন করার ক্ষমতা


শর্মিষ্ঠা ঘোষ এর জন্ম উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ-এ ১৯৭৪ সালে। বর্তমানে ঐ শহরেই কর্মজীবন অতিবাহিত হচ্ছে। ছাত্রাবস্থা থেকেই লেখালেখি শুরু। কবিতাই প্রথম পছন্দ। তাছাড়াও গল্প প্রবন্ধ লিখে থাকেন। অবসরে অনুবাদ করেন ইংরেজি ভাষা খেকে। এযাবত প্রকাশিত একক কাব্যগ্রণ্হ চারটি। "অলীক অলীক ভালোবাসা ", "স্পর্শবিন্দু", "এখন সংহত অন্দরে" এবং "ভুয়ো প্রেম. কম"তাছাড়া মিলিজুলি

কপিরাইট রংরুট কর্তৃক সংরক্ষিত




1 টি মন্তব্য:

  1. ভালো লাগল। এতদিন কবিতা পড়েছি আজ কবি মানসিকতার সম্পূর্ণ পরিচয় পেলাম।

    উত্তরমুছুন