ফুল যবে সাংগ করে খেলা
ফল ধরে সেই। কত সহজে যৌনতার ব্যাকরণকে এক লাইনে আঁটিয়ে ফেলেছেন বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রনাথ।
মানুষ আর তার শরীর নিয়ে পড়াশুনো করতে গিয়ে এইটাই বারেবারে বুঝলাম, আমরাও পশু। আর পাঁচটা জীবের সংগে জৈব চাহিদা গুলির কোন তফাৎ নেই। আহার, নিদ্রা, মৈথুন। বাকি সবই এর সাথে যুক্ত।
এর জন্যেই ঘর বাড়ি, নানান বাহার। কিন্তু মৈথুন কার্যটি ঠিক
নিজের জন্যেই নয়। প্রকৃতি আমায় ভোলাচ্ছে তার কাজ হাসিল করতে। সে আমার স্পিসিস-কে টিকিয়ে
রাখতে চায়। নতুন প্রানী দরকার। তারই জন্যে ফুলে রং। রাতের সাদা ফুলে গন্ধ। ছেলে
পাখির পালকে বাহার। পুরুষ সিংহের কেশর। পুং কোকিলকণ্ঠ মাধুর্য ভরা। মেয়েদের বুকভরা
বাৎসল্য,
শিশুর খাদ্য তার বীজপত্রে, ডিমে, মাতৃ দুগ্ধে। কীট পতংগ পশু পাখি.... সব মা, নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপ দেয় সন্তানকে বাঁচাতে। সেই প্রবল ইন্সটিনক্টকেই
সারা বিশ্ব মাতৃ শক্তি, মাদার গডেস বলে ইতিহাস জুড়ে
প্রনাম জানিয়ে চলেছে।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনতা,প্রেম,তর্পণ ও
অক্ষরেরা
সোনালি পুপু
১
যদক্ষরং পরিভ্রষ্টং
মাত্রাহীনঞ্চ যদ ভবেৎ
পূর্ণং ভবতি তৎসর্বং
তৎপ্রসাদানো পরমেশ্বরী
কি জানি এখানে ও ভুলভাল
কিছু লিখলাম কিনা। লিখলে আর কি করা, আমার
কন্যে যেমন থেকে থেকেই হেসে বলে, ক্ষমস্য
পরমেশ্বরী।
সেইই আর কি। সমসকৃত তো
জানি না,
কচুও। নেহাৎ অনর্গল দেবভাষা বলা এবং পড়া মা জননী, সব সময় সব ভাষার শব্দ ভাংগবার অভ্যাস করিয়েছেন অজ্ঞান বেলা থেকে,তাই বুঝি।
যারা অক্ষর থেকে
পরিভ্রষ্ট হয়ে ক্ষয়াটে হয়ে গেলো, যারা মাত্রাহীন হয়ে বেপথু হয়ে
নষ্ট হতে যায়,তারা।যাদের হাতের লেখা আমার মতই টেরাবাঁকা, মাত্রা
ছাড়া,
তারাও। তাদের সব অপূর্ণতা তুমি পূর্ণ করে দেবে বলে কোল পেতে
বসে আছ।তোমার প্রসন্নতার প্রসাদ, আজ পিতৃপক্ষএর সুরুতে শরতের
আকাশ বাতাস আমার কাছে পৌঁছে দিয়ে গেলো সকাল সকাল।
সেই দুহাজার চার থেকে
তর্পণ করতে শেখা। আজ বসে ভাবছি।কি দিয়ে করে চলেছি তর্পণ।
সতিল গংগোদকং, তার সংগে তোমাদের শেখানো এত অক্ষর আর এত প্রেম, সেও
দিই তোমাদের। অঞ্জলিতে পুপুসোনালির, "তস্মৈ স্বদা"।
কাল কিনা, আমার সপ্তর্ষি প্রকাশন অফিসিয়ালি ফোন করে জানালেন, তাঁদের
প্রকাশনায় আমার কবিতার বই, পঞ্চাশে প্রেম,
ভারি জনপ্রিয় হয়েছে।
ভারি আল্লাদ হল।আর অবাক
ও হলাম খুব।
আমার অক্ষরদের যে মানুষ
এত আদর করবেন,
এ কখনো ভাবিনি।
.....গেয়েছি
গান যখন যত আপন মনে খ্যাপার মত.....
তাতে যে ওই মাত্রাহীনকে
পুরিয়ে দেবার লোক বসে বসে মধু ভরে দ্যান,তাই টের পেলাম এবার।
ভালবাসাই ত শিখেছি খালি।
মায়ের শুদ্ধ ভাষার বকুনি
খাই উঠতে বসতে। কান্ডজ্ঞানহীন।পল্লবগ্রাহী। এই শব্দটিই কপালে জোটে বেশির ভাগ
সময়।বিয়ের পর,
আমার নতুন বর গম্ভীর হয়ে দরজা বন্ধ করে এভিয়েশানের ওপর
পড়াশুনো করে। মা কি খুশীই না হন।বলেন, দেখছো।পড়ালেখা একে
বলে।তোমার মত ফাঁকিবাজ? তারপরেই সেই শব্দটি এসে যায়।পল্লবগ্রাহী।
আমি বাবার বারান্দার
নিরাপদ আশ্রয়ে পালাই। মুখে কিছু বলার সাহস নেই। সামনে ঝুলে মনে মনে বিড়বিড় করি।কি
খারাপ হয় পল্লবেই থাকলে? সবাই জিওট্রপিক হয়ে শিকড় গেড়ে মাটির তলায় চলে যাবে বুঝি? এই যে সামনেই শিউলি গাছের পাতার ডগায় প্রজাপতিটা ফুরফুর করে উড়ছে, পল্লবগ্রাহী তো।কোন দাম
নেই ওর?
তাই আমি খালি ভালবাসতে
শিখলাম। এইটা সোজা।অনেক কোশ্চেন, শর্টনোট,সাজেশন লাগেনি।বাবা একটাও চ্যাপটার শেখানো, কখনো
মুখে বলে শেখাতেন না। সবই গান হয়ে কান থেকে প্রানে চলে আসতো।
প্রেমে জল হয়ে গলে যেতে
হবে, আর প্রেমধন মায়ের মতন, দুঃখী
সুতেই অধিক যতন, সেও শুনি। আবার এইযে পাতায় আলো নাচে, তাকেই বলে প্রেম, সেও
শুনি।
সেই যে প্রেমের পাগলপনা, তারি কিছু টুকরো, খাতার পাতায় ধরে রাখতে
চেষ্টা করি।
তাই সপ্তর্ষি প্রকাশন
বইয়ের জনপ্রিয়তা বলতেই মনে হল,তবে প্রেমই জিন্দাবাদ। তর্পণ
করতে আঁজলা ভরা অক্ষর আর প্রেম নিয়ে বসলাম।
দুই প্রেমিক শিল্পী
মানুষকে বললাম,
এইই দিলাম। আর ত কিছু পকেটে নাই।
খুদিগর্জি থেকে বে-খুদি
তে পৌঁছে দেয় যে ভালবাসা, তাকেই বুঝি খুদা নামে ডাকে, এই বোধটুকু খালি কুড়িয়ে পেয়েছি। খুদ মানেই সেই তো? আমার
প্রানের গভীর গোপন মহা আপন......
তাই সব সময় ঘুরে আসে সুর, তুঝ মে রব দিখতা হ্য, ইয়ারা ম্য ক্যা করুঁ?
বিশ্বকর্মা পুজোর আওয়াজ
বাইরে। সৃষ্টিকর্তা এসে পাটে বসলে তবে দেবীপক্ষ এগিয়ে আসবে।
প্রেমের ঢেউয়ে পাগল দুটি
মানুষের পায়ের কাছে পৌঁছেছিলাম সাড়ে সতেরো বছরের প্রেমে। সর্ব জীবে ভালবাসার
উত্তাপ বিলানো অগ্নি এবং তাঁর রামকৃষ্ণগতপ্রাণা দাহিকা শক্তিকে আবারো থ্যাংকইউ
বললাম। তাঁরা না থাকলে আমার ভালবাসার লন্ঠনকে জ্বালিয়ে রাখতো কে?
সেই যে ছোট্ট বেলায় হো হো করে গান গাইতে শিখেছি,
"আকাশে দুই
হাতে প্রেম বিলায়
বিলায় ও কে?
সে সুধা ছড়িয়ে গেলো লোকে
লোকে....."
২
আমার ছেলে বাবানের
পরীক্ষা চলছে। ইস্কুল শেষ করে ফেলল। পরীক্ষার চাপ। কিন্তু আমায় সে এ সব নিয়ে মাথা
ঘামাতে বারণ করে। আর সেই জন্যে চিন্তা আরও বেশি হয়। তবু আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে পরীক্ষারা, এগিয়ে আসছে নব বর্ষ। চার পাশে এত রকম তোলপাড়।
বেল ফুলেরগন্ধ
মাখা এই সকালে একা বসে মনে হল সেক্স বা যৌনতা যে এক বড় ধরনের ম্যাজিক, খুব ইন্টেস ম্যাজিক, এটা বোধহয় বেশির ভাগ মানুষই
ভুলতে বসেছে।
আমি রুগিদের হাতে পেলেই
বোঝানোর চেষ্টা করি। ছোট বড় সবাই যে রকম অবাক চোখে তাকায়, বুঝতে
পারি পাশ্চাত্য প্রথাগত বিশ্বায়ন, সেক্স
কে সহজলভ্য করেছে, শ্রদ্ধার বিষয় করে তোলেনি। তাই যৌনতাকে
সম্মান করতে বললে, অতি আধুনিক ও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে। তাই
বুঝি নির্ভয়া থেকে বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী মাদার আজ অসভ্য কৈশোরের যৌন নির্যাতনে আহত, অপমানিত,
দীর্ন হলেন। ছোটদের আমরা এই অসাধারণ শক্তি সম্বন্ধে
শ্রদ্ধাশীল হতে শেখাচ্ছি না। এ আমাদেরই অপরাধ। কিংবা, হয়ত আমাদেরই মনের গোপন গহন পাপ। আমরা আগের প্রজন্ম, ভুলে গেছি ভারতবর্ষের কোনারক খাজুরাহোর ঐতিহ্য। দেহের বল্লরীতে ফুটে ওঠা বাসনা
কুসুমের কাম্য আনন্দের অনাবিল স্বাভাবিক আনন্দ। বিশ্বায়ন আমাদের শিখিয়েছে, ফাক ইউ। ভুলিয়ে দিয়েছে গোড়ার কথাটিই। অ্যানিমালস ফাক, হুম্যান
বিইংস মেক লাভ।
তবু এ ম্যাজিক ফুলঝুরি ফোটায়। ফেসবুকের রোজকার
গল্পগাছার মাঝখানের ফাঁক দিয়ে প্রিয় কবিদের কলমে। ফিংগে খঞ্জনের মত শিষ দিয়ে যায়
সুসাহিত্যিকের লেখায়।কেউ তাকে গভীরে গিয়ে আঁকে। কেউ তাতে উইটের ধার মেশায়। কেউ বা আগেই ডুব দেয়: আর পাবো কোথা, দেবতারে প্রিয় করি প্রিয়েরে দেবতা। কত শত কলম সম্মানের জন্যে লড়াই করে।যৌনতার
প্রাপ্য সম্মান। কোথাও বা; এক জন
যাদুকরী দূরে বসে জাল বোনে। সে জানে কোথায় ম্যাজিক। সে ফুলের, জোছনার,
মেঘের রংগে ঢেকে গ্রিসের মন্দিরের লাস্যময়ী পূজারিণীদের
মত শরীরী প্রেমের, কামনার জয় গান গাইতে থাকে।
গৌরী পীঠে শিব লিংগ ধর্ম
নয় সৃষ্টির প্রতীক বলে প্রনাম পেত ভারতে। আমাদের পুরোনো পৃথিবীর অ্যালকেমিস্ট
ভিষগরা পুঁথির পাতায় পাতায় লিখে রেখেছেন সান্ধ্য ভাষায়,শরীরের খল নূড়িতে জৈব পদ্ধতির সংগে ফোঁটা ফোঁটা ভালবাসা মিশিয়ে আদর করতে পারলে
সে অমৃত জরা, ব্যাধি, মৃত্যু
শোকের সংগে ও লড়াই করার ক্ষমতা দ্যায় মানুষকে।
আজও চিকিৎসক হিসেবে
মানুষকে বলছি,
কাছকাছি থাকো। আদর করে থাকো। অনেক আদর কর। তাতে গর্ভস্থ শিশু সুস্থ থাকে। প্রৌঢ় শরীর ক্লান্তি কাটানোর রসদ
পায়। বার্ধক্য মধুর হয়, ব্যথাশুলো
কমে।
ভালবাসার শরীরী প্রকাশ
এক আশ্চর্য অমৃত।তাকে বুকে করে রাখতে, মাথা ঠেকিয়ে প্রনাম জানাতে, দাবানলের দহন থেকে জীবনের পথ
চলার প্রদীপ করে জ্বালিয়ে রাখতে শিখুক আমার দেশ, আমার
পৃথিবী, আমি শুধু এ টুকুই চাইছি।
৩
ভালই ত বাসতে চাই।কিন্তু
এই এত যে ভালবাসার আনন্দে ভেসে যাব, তার কি উপায় আছে?চারিদিকে ইদানীং হিংস্রতা, ধর্মের
নাম অপব্যবহার করে কদর্য ব্যভিচার, আর যৌন
লাঞ্ছনার স্রোত বয়ে চলেছে। কলম ধরার জায়গা পেয়েছি যখন, না লিখে আর থাকতে পারছি না।
মানুষ মধ্যযুগে বর্বর
ছিল আমরা বলে থাকি।ক্রমে ক্রমেই নাকি মানব জাতি সভ্য,
সূক্ষ্ম রুচিসম্পন্ন হয় উঠেছে।
কই?
দেখে ত টের পাচ্ছি না?
সেই ত, বনে জংগলে বাস করা মানুষের মত ছেঁড়া ছেঁড়া কাপড়ের টুকরো পরনে, নাকি ডিজাইনার।শরীর দেখিয়ে বিপরীত লিংগের মানুষকে উত্তেজিত করার আদিম চেষ্টা,
কি ছেলেদের, কি মেয়েদের। মেয়েদের হয়ত একটু
বেশিই। কিনা,
সেক্সি।
হ্যাঁ। আমি আমার পছন্দের সঙ্গীর সংগে যত খুশি উত্তেজনায় ডুবতে পারি। দুজন দুজনকে যত
খুশি সুড়সুড়ি দিতে পারি। সেখানে অন্য কারো নাক গলানোর অধিকার থাকে না।। কিন্তু মুর্খ মানুষ, বুঝে উঠতে পারি না, ভিড়ের মধ্যে সবার জন্য, সেক্সিই হব যদি, ত কেউ উত্তেজিত হয়ে হাত ধরে
টানলে, পিঙ্ক সিনেমা বানিয়ে “না”
বলব কেন।
এটা ভন্ডামি নয়?
সবাই,
পিঙ্ক চলচিত্রে, মেয়েদের “না”
বলার অধিকারকে হাই লাইট করা নিয়ে প্রশংসা করেছেন। মুখ্য চরিত্রের
সংলাপে,
আইনজীবীর মুখে, মেয়েদের কি কি করা চলে
না, সেই ফর্দ ও যে ছিল সেইটা নিয়ে
মাথা ঘামাচ্ছে কি তরুন সমাজ?
হোয়াটসাঅ্যাপ ফেসবুকে
প্রত্যেক দিন ঘুরতে থাকে নতুন নতুন যৌন ছবি আর ভিডিও। বাচ্চা বুড়ো নির্বিশেষে সেগুলি দেখে পড়ে, আবার অন্য কাউকে পাঠিয়ে চলেছে নিরানব্বই ভাগ মানুষ।
একেই যৌন রস বলে? এতে বীভৎস রস বই আর কোন রস ত দেখতে পাচ্ছি না।
আমি চিকিৎসার যে শাখাটি
নিয়ে বিশ বছরের ওপর কাজ করে চলেছি, প্রজনন ও জননতন্ত্র নিয়েই
সেখানে কাজ। দুঃখ হয় যখন দেখি, যত দিন
যাচ্ছে, এ শহরে সুস্থ যৌনতা বিরল হয়ে
আসছে ততই। বিশেষত উচ্চবিত্ত ও তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত মানুষের মধ্যে।
বিজ্ঞান আমায় শিখিয়েছে,
সেক্স স্টার্টস এট দা ব্রেন। তারপর স্নায়ুতন্ত্রের রাস্তা
দিয়ে মেরুদন্ড বেয়ে অনুভূতিরা নেমে আসে দেহের নিচের দিকে, জননতন্ত্রের
অংশগুলিতে। রক্ত কনিকারা দৌড়ে দৌড়ে খবর পাঠায় শিরায় শিরায় শিরশিরানির।
এসেছে এসেছে সেই কথা বলে
প্রাণ –
আজকাল মানুষ শরীরে আর
সাড় পায়না নাকি। তবে কি চিন্তার সমুদ্রে কাউকেই দেখে প্রানে ঢেউ ওঠে না আর?
একটু খানি ফিরে তাকানো
কটাক্ষের ধারে ফিদা হয়ে যেত যে প্রাণ, আজ স্পষ্ট দেখতে পাওয়া ক্লিভেজ আর নিম্নাঙ্গ উন্মুক্ত করা স্লিট তাকে কাছে না
টেনে দূরে ঠেলে দিচ্ছে? আদরের
বদলে ঘেন্না এসে ভরে দিচ্ছে ব্লু ফিল্মের নায়ক নায়িকার চোখ মুখ।
মন থেকে শরীরকে আলাদা
করলে পড়ে থাকছে ডিসেকশান টেবিলের বাসি মড়া। হাড়, চামড়া, মাংসপিণ্ড। গা ঘিনঘিন করা চর্বির দলা। একে দেখে কি আর আদর পায়?
৪
ফুল যবে সাংগ করে খেলা
ফল ধরে সেই। কত সহজে যৌনতার ব্যাকরণকে এক লাইনে আঁটিয়ে ফেলেছেন বৈজ্ঞানিক রবীন্দ্রনাথ।
মানুষ আর তার শরীর নিয়ে পড়াশুনো করতে গিয়ে এইটাই বারেবারে বুঝলাম, আমরাও পশু। আর পাঁচটা জীবের সংগে জৈব চাহিদা গুলির কোন তফাৎ নেই। আহার, নিদ্রা, মৈথুন। বাকি সবই এর সাথে যুক্ত।
এর জন্যেই ঘর বাড়ি, নানান বাহার। কিন্তু মৈথুন কার্যটি ঠিক
নিজের জন্যেই নয়। প্রকৃতি আমায় ভোলাচ্ছে তার কাজ হাসিল করতে। সে আমার স্পিসিস-কে টিকিয়ে
রাখতে চায়। নতুন প্রানী দরকার। তারই জন্যে ফুলে রং। রাতের সাদা ফুলে গন্ধ। ছেলে
পাখির পালকে বাহার। পুরুষ সিংহের কেশর। পুং কোকিলকণ্ঠ মাধুর্য ভরা। মেয়েদের বুকভরা
বাৎসল্য,
শিশুর খাদ্য তার বীজপত্রে, ডিমে, মাতৃ দুগ্ধে। কীট পতংগ পশু পাখি.... সব মা, নিজের জীবন বিপন্ন করে ঝাঁপ দেয় সন্তানকে বাঁচাতে। সেই প্রবল ইন্সটিনক্টকেই
সারা বিশ্ব মাতৃ শক্তি, মাদার গডেস বলে ইতিহাস জুড়ে
প্রনাম জানিয়ে চলেছে। সৃষ্টির পথ যে ছলনাময়ী আকীর্ন করে রেখেছেন, তিনি টিনএজ আসতেই ভোগা দিচ্ছেন : এইটাই প্রেম। যত সংসারের পথে এগিয়ে চলি
মহাকাল বুঝিয়ে দ্যান, ওরে, বোকা বনেছিস। এ চাহিদা শুধু শরীরের। এতে মন কই? মন না থাকলে
সাংসারিক ধাক্কা, চামড়ায় সময়ের কুঞ্চন, চুলে সাদারঙ পেরিয়ে ভালবাসা বসবে কোথায়? এগিয়ে আসেন রবি। পুরাতন প্রেম ঢাকা পড়ে যায় নব প্রেম জালে, বলেই,
মনে করিয়ে দ্যান, ও হে, ভুল বুঝো না। বাসনা সব বাঁধন যেন কুঁড়ির গায়ে। সকালে উঠেই মনে হল তাইই তো, এ যে শস্যকণার মত। যেই বীজপত্রে দানা পাকলো, ওমনি ঝরে গেলো খোসা। রয়ে গেলো দানাটুকু। তারি এক মুঠি তুলে রেখে এলাম
মহেঞ্জোদারোর কুলুঙ্গিতে মাটির কৌটো ভরে। এই ২০১৫য় যে প্রত্নতাত্ত্বিক খুঁজে পেলো, সে এক দানা নিয়ে বারান্দার টবে পুঁতে জল দিচ্ছিল। কাল সবুজ কুচি দেখা যেতেই
লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে একশা। বোঝাই কি করে, ওরে, ওই তো আমার প্রাণ। ও যে মৃত্যুঞ্জয়। সে আমার প্রেম। তারে আমি রাখিয়া এলেম
অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে কালের
যাত্রায়........শরীরের খিদে, সন্তান পালন, সব কালের যাত্রাপথে চলবে, আর প্রেম পরম নিধি কালোত্তীর্ণ
হয়ে জ্বলবে রাজেশ্বরের মুকুটের মাঝখানটিতে। শেষের কবিতা আমায় চুপিচুপি সেই কথাটি
বলে গেলো।
সোনালি
পুপু