মেনোপজের সময় মন ভালো
রাখার জন্য মেয়েদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে৷ নিজের সঠিক খেয়াল নিতে হবে৷ সবচেয়ে
যেটা জরুরি সেটা হলো মেয়েদের নিজের কর্মজগৎ৷ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত
রাখলে মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা থাকবে না৷ সাধারণভাবে প্রৌঢ়ত্বের শুরুতে ৪৮ থেকে
৫২ বছর বয়সের মধ্যে মেনোপজ হয়। এই বয়সে যদি সম্পূর্ণ এক বছর টানা পিরিয়ড বন্ধ
থাকে তাহলেই তাকে বলা হবে মেনোপজ। আর এই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে মানসিক
অবসাদে ভোগে।অনেক সময় নিজের সন্তান ও অন্যান্য অল্পবয়স্ক আত্মীয়স্বজন থেকে
মানসিক দূরত্ব তৈরি করে ফেলেন এবং ক্লান্তি ও বিষাদে মন ভারাক্রান্ত করে ফেলেন।
অথচ এই সময়কার পরিবর্তন জীবনের আর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ভেবে নিয়ে উপযুক্ত
ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই বিগত যৌবনের জন্য আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ ভুলে যাওয়া সহজ হয়।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নারীর
শরীর ও ঋতুনিবৃত্তিকাল বা মেনোপজ
রাবেয়া রাহীম
সাধারণত মেয়েদের গড়ে
বারো বছর বয়সের পর থেকেই স্বাভাবিক ঋতুচক্র শুরু হয়৷ আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সের
পর এটি বন্ধও হয়ে যায় । মহিলাদের ঋতুচক্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরবর্তী সময়কে
মেনোপজ বলা হয়৷ এটা একটি স্বাভাবিক এবং অবশ্যম্ভাবি জৈবিক ঘটনা। অর্থাৎ প্রত্যেক
নারীর শরীরবৃত্তীয় চক্রে এই সময়টি উপস্থিত হবেই হবে। মেনোপজের কিছু সময় আগে
থেকেই মাসিক অনিয়মিত হতে শুরু করে। মেয়েদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে শারীরিক ও
মানসিক নানান পরিবর্তন আসে। সাধারণত এই পরিবর্তন দুইটি সময়ে প্রবল হয়ে ওঠে। এক
বয়:সন্ধি কাল,
দুই ঋতুনিবৃত্তিকাল। আর এই ঋতুনিবৃত্তি কালকে বলা হয়
মেনোপজ।
মেনোপজের ফলে স্বাভাবিক
জীবনে পরিবর্তন :-
মেয়েদের জীবনে মোট
চারটি পর্যায় রয়েছে৷
১) ঋতুচক্রের শুরু,
২) সন্তানের জন্ম,
৩)ব্রেস্ট ফিডিং ও
৪) মেনোপজ৷
এগুলো সবই হরমোনের
দ্বারা নিয়ন্ত্রিত৷ মেনোপজ হওয়া মানেই হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাওয়া৷ ফলে
শরীরে কিছু পরিবর্তন আসতেই পারে৷ মেজাজ ঠিক না থাকা জয়েন্ট পেইন ইত্যাদি৷তবে এটা
যেহেতু পুরো বিষয়টাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। তাই ধীরে ধীরে পাঁচ-দশ বছর পর শরীর
আপনা থেকে এটি মেনে নেয়৷ ফলে তেমন কোনও সমস্যা আর দেখা যায় না৷ অনেকেই মনে করেন, মেনোপজ হওয়া মানেই হয়তো তার যৌবন শেষ হয়ে গেল তা কিন্তু একেবারেই নয়৷
এসময় নির্দ্বিধায় তারা যৌনতা উপভোগ করতে পারেন৷ কন্ট্রাসেপশনের ভয়ও থাকে না৷
এছাড়া যদি অন্য কোন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তবে
অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷
মেনোপজের সময় বা
চলাকালীন সময়ে নারীদের কিছু সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে যেমন :--
মেনোপজের সঙ্গে মানসিক
স্থিতি :-
মেনোপজের ফলে ত্বকে বলি
রেখা আসে৷ অনেকে খুব মোটা হয়ে যান বা রোগা হয়ে যান৷সেই কারণে অনেকে মানসিক অবসাদে
ভুগতে পারেন৷অনেকে মনে করেন, পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই
হয়ত যৌবন চলে যাওয়া৷সেই কারণে মহিলাদের অবসাদ দেখা যায়৷তবে এটা পুরোটাই কল্পিত৷
এছাড়া হরমোনের ক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে মেজাজ খারাপ থাকা, হঠাৎ রাগ হওয়া ইত্যাদি হতেই পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, মহিলা যে কথাগুলো বলতে চান না সেগুলোও বলে ফেলছেন৷ এটাও মানসিক ভারসাম্য
হারানোর একটি লক্ষণ৷
মেনপজজনিত পরিবর্তনের
সময় অল্পস্বল্প মনোযোগের ঘাটতি হতে পারে। কিন্তু স্বাভাবিক মেনপজ কখনওই
স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দেয় না।
হরমোনের ভারসাম্যহীনতার
কারণে এই সময়টায় হঠাৎ হঠাৎ মেজাজ ওঠানামার সমস্যা হয়। বিষণ্ণতা, অস্থিরতাবোধ তৈরি হতে পারে। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, ধ্যান,
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ভালো
ঘুম,
পারিবারিক সহচার্য পারে এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে।
এসময় মন ভালো রাখতে কি
করা উচিত :
-
মেনোপজের সময় মন ভালো
রাখার জন্য মেয়েদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে৷ নিজের সঠিক খেয়াল নিতে হবে৷ সবচেয়ে
যেটা জরুরি সেটা হলো মেয়েদের নিজের কর্মজগৎ৷ বিভিন্ন কাজের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত
রাখলে মানসিক অবসাদের সম্ভাবনা থাকবে না৷
সাধারণভাবে প্রৌঢ়ত্বের
শুরুতে ৪৮ থেকে ৫২ বছর বয়সের মধ্যে মেনোপজ হয়। এই বয়সে যদি সম্পূর্ণ এক বছর
টানা পিরিয়ড বন্ধ থাকে তাহলেই তাকে বলা হবে মেনোপজ। আর এই পিরিয়ড বন্ধ হয়ে
যাওয়ায় অনেকে মানসিক অবসাদে ভোগে।
অনেক সময় নিজের সন্তান
ও অন্যান্য অল্পবয়স্ক আত্মীয়স্বজন থেকে মানসিক দূরত্ব তৈরি করে ফেলেন এবং
ক্লান্তি ও বিষাদে মন ভারাক্রান্ত করে ফেলেন। অথচ এই সময়কার পরিবর্তন জীবনের আর
একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা ভেবে নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই বিগত যৌবনের
জন্য আকাঙ্ক্ষা ও উদ্বেগ ভুলে যাওয়া সহজ হয়।
পরিপূর্ণভাবে
ঋতুনিবৃত্তি বা মেনোপজ হয়ে গেলে মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে না। এ সময় কিছু
কিছু দৈহিক পরিবর্তন হয়, হাতে, পায়ে, ঘাড়ে,
নিতম্ব ও থাইতে চর্বি জমার সম্ভাবনা থাকে, ওজনও বেড়ে যেতে পারে। কেউ কেউ আবার বেশি রোগা হয়ে যায়। কারও ত্বকের মসৃণতা
কমে যায়,
বলিরেখা পড়তে পারে। শরীরে কোথাও ব্যাথা অনুভূত হতে পারে।
উদ্বেগ,
রাগ ও শুচিবাই রোগ দেখা দিতে পারে। এই সকল উপসর্গে মানসিক
দুর্বলতা আসে।
রক্ত চলাচলের ক্রিয়ায়
পরিবর্তন হয় তাই মাঝে মাঝে হঠাৎ করে গরম বা ঠান্ডার অনুভূতি হতে পারে। দিনে মধ্যে
চার-পাঁচবার শরীর ঘেমে ওঠে, যাঁদের হাই ব্লাড প্রেসার ও
ডায়াবেটিস আছে,
তাদের এসব উপসর্গ বেশি হয়। এই সময় শরীরে হরমোন নিঃসরণের
ক্রিয়ার বিশেষ পরিবর্তন হয়। ওভারি শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়, ডিম্বাণুও থাকে না, তাই স্বভাবতই ওভারি থেকে নিঃসৃত
স্ত্রী হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। ওভারির নিঃসৃত হরমোন হ্রাস পাওয়ার ফলে
পিটুইটারি ও অ্যাডরেনাল গ্রন্থিসমূহের হরমোন বৃদ্ধি পায়, তাই
কারও কারও মুখে বা চিবুকে চুলের মতো লোম দেখা দিতে পারে। এই সকল উপসর্গ কিন্তু
সকলের হয় না।
অনেকেরই তেমন কোনও
চিকিৎসা দরকার হয় না, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
শরীরের যত্ন,
ত্বকের যত্ন, ব্যায়াম এই তিনটি ব্যাপার বিশেষভাবে
মনে রাখতে হবে। সুষম আহার, কোষ্ঠকাঠিন্যের চিকিৎসা আর
ঠিকঠাক ঘুম দরকার। নিয়মিত হেলথ চেক আপ জরুরি। যাদের খুব বেশি উপসর্গ থাকে, যেমন বার বার কান মাথা জ্বালা করছে, গাঁটে গাঁটে খুব ব্যথা
বা একেবারে ঘুম হচ্ছে না, অসম্ভব টেনশন, সেই সকল ক্ষেত্রে এইচ-আর-টি বা হরমণ রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির দরকার হতে পারে
অল্পদিনের জন্য। এছাড়া এই সময় স্ত্রীরোগ বিশেষঞ্জরা ত্বক, চুল ও শরীর ভাল রাখার জন্য কয়েকটি ওষুধ দিয়ে থাকেন।
কয়েকটি তথ্য:
মেনোপজ হঠাৎ একদিন হয়
না প্রথমে হয়তো তিন মাস বন্ধের পর আবার একবার হল, তারপর
আবার কিছুদিন বন্ধ থেকে একমাসে দু-বার পিরিয়ড হল, আবার
বন্ধ এইভাবে ক্রমশ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এসময় যদি অত্যধিক ব্লিডিং হয় তাহলে
গাইনোকোলজিস্ট দেখিয়ে নেওয়া উচিত কারণ এই বয়সে মেনোপজ ছাড়াও জরায়ুর টিউমার বা
অন্য অসুখ হতে পারে।
যে সব মহিলাদের ৪০-এর
নীচে মেনোপজ হয়ে থাকে তাহলে সেই মহিলারাও আরলি মেনোপজ বলা হয়। আজকাল মেয়েদের ১০
বছর বয়সের আগেই পিরিয়ড হয়ে যায়, তার মানে কিন্তু এই নয় যে
তাড়াতাড়ি মেনোপজ হয়ে যাবে, আবার এও বলা যায় না যে যাদের
প্রথম পিরিয়ড শুরু হয়েছে দেরিতে, তাদের মেনোপজ আরও দেরিতে হবে।
ডায়বেটিস থাকলে
মেনোপজের দেরি হতে পারে। তবে মেনোপজের কারণে স্বাভাবিক শারীরিক মিলন বাধাপ্রাপ্ত
হয় না।
এখন আলট্রাসোনোগ্রামের
মাধ্যমে মেনোপজের ডায়াগনসিস খুব সহজে করা যায়। এ সময় মহিলারা নিয়মিত ব্যায়াম
করবেন ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন । এতে আত্মবিশ্বাস অনেকগুণ বেড়ে যাবে। মনে
রাখবেন মনের জোর ও সঠিক চিকিৎসায় মেনোপজের উপসর্গগুলি অতিক্রম করা যায় এবং
নিশ্চিন্ত দাম্পত্যজীবন কাটানো যায়।
মেনোপজের পর ভাল আছি:
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
ক্যানসার এড়াতে প্রথমে
স্তন বাদ দিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। কিন্তু তাতেই থেমে না থেকে নিজের
ডিম্বাশয় এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবও বাদ দিয়েছেন নায়িকা। স্তন ক্যানসার ঘটাতে পারে
এমন জিন (বিআরসিএ-১) খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল তাঁর শরীরে। আর এ সবের পর বেশ ভালই
আছেন তিনি। সম্প্রতি অ্যাঞ্জেলিনা জানিয়েছেন, মেনোপজের
এই সময়টা দারুণ এনজয় করছেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘আমি
বেশ লাকি। পিরিয়ড সংক্রান্ত সমস্যা আমাকে আর সামলাতে হয় না।’’
কিন্তু অনেক মহিলারই
ধারণা রয়েছে,
মেনোপজ হলেই তাঁরা বুড়ো হয়ে যান। এ ব্যাপারে কী মনে করেন
জোলি?
‘‘হ্যাঁ এটা ঠিক যে আমি অনুভব করতে পারছি আমার বয়স হয়েছে।
তবে সেটা আমার ভালই লাগছে। আমি আর যৌবন ফিরে পেতেও চাই না।’’
প্রতি দিন শারীরিক ব্যায়াম
অভ্যস্ত হউন ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য
গ্রহণ করুন ।
শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ
রাখুন।
সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন
।।
রাবেয়া
রাহীম