কট্টর ইসলাম বা মৌলবাদী ইসলামী সংগঠন গুলোও অজগরের মত সারা পৃথিবীর অন্য
সম্প্রদায়কে গিলতে চেয়েছে সাম্রাজ্যবাদের মতোই। ইসলামের নামে রাষ্ট্র, ইসলামের নামে জিহাদি নির্মাণ এসব সাম্রাজ্যবাদের আরেক নমুনা।। আজ তাই অন্য সম্প্রদায়রা বিশ্বাস করতে পারছে না তাদের। কথা হচ্ছে ইসলামকে অনেক বেশি সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ তাদের দুর্বলতা সাম্রাজ্যবাদ মূলধন করে জাতি দাঙ্গা তৈরিতে
কাজে লাগাচ্ছে। উগ্রপন্থা নাম দিয়ে লুটছে। শুধু মুসলিম কেন যেখানে যেখানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি
যে কোন মানুষের ওপর নির্যাতন নেমে আসবে আমরা বিরোধিতা করবো। দেশের হিন্দু অত্যাচারের বিরুদ্ধে যতটা ভিড় মিছিলে হবে; মুসলমান
অত্যাচারের বিরুদ্ধেও থাকবে সমান ভিড়। সেদিন ভয় পাবে ধর্মের নামে মানবতা নিয়ে খেলা
করা মানুষগুলো। বুঝবে মানুষ জাগছে তাদের আর ভাগ করা যাবে না। ইসলামের নাম করে কঠোর মানবতা বিরোধী সংগঠনগুলোকে আমাদেরই রুখতে হবে। যেমন মোকাবেলা করতে হবে মানবতা বিরোধী
হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সংগঠনগুলোর। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আবিশ্ব
মুসলিম বিদ্বেষের নেপথ্যে
অলভ্য ঘোষ
রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বার বার বলা হচ্ছে? রাখাইন রাজ্যে হিন্দুও আছে অনেক। মানুষের উপর অত্যাচার এত মানবতার
অপমান। রোহিঙ্গারা পাকিস্তান হবার সময়
বাংলাদেশের মত পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতে চেয়েছিল। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাহেব তা মেনে নেয়নি। মিয়ানমারে এখনো দশ লক্ষ রোহিঙ্গা
আছেন। যাদের দেশের নাগরিক বলে মনেই করা হয় না। ১৫০ জনের মত রোহিঙ্গা সম্প্রতি
উগ্রপন্থা অবলম্বন করলে; গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে
দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪০০ জনের মত হত্যা করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনা ও অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ এতে যুক্ত দাবি করা হচ্ছে। লাখে লাখে রিফিউজি ভারত বাংলাদেশ
জলপথে ডিঙি বেয়ে আসতে চাইছে। মাঝপথে জলে ডুবে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে।
ভারতে চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গারা পালিয়ে এসেছে। ভারতীয় আদালত তাদের দেশে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে। ৮৭০০০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ৫০০০০ হাজার এখনো মাঝ রাস্তায়। তাদের কাছে ত্রাণ কিছুই নেই।
কেন সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের উপর এত বিদ্বেষ?
কারণ একটাই ক্ষমতা দখল; সাম্রাজ্যবাদ। ক্ষমতাবান দেশগুলো উগ্রপন্থার নাম করে জল জমিন জঙ্গল লুটবে। তৃতীয় বিশ্বে ধর্মের জিকির তুলে চাইবে দাঙ্গা।
ব্রিকস সম্মেলন করে এলেন নরেন্দ্র মোদী চায়নায় সম্মান পেয়ে আপ্লুত। উগ্রপন্থার বাড়বাড়ন্তর কথা তুলেছেন তিনি সম্মেলনে। মজা হল আমেরিকা ও তার সহযোগী দেশগুলো
চায় উগ্রপন্থার নামে মানুষের বিপ্লব দমন করতে, লুঠতে। মোদী কেবল ঠোঁট মিলিয়েছেন তাদের কথাই
উচ্চারণ করে। তৃতীয় বিশ্বের মহা-লুট আসন্ন। মানুষকে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন না করলে
সে লুট সম্ভব নয়। ব্রিক্সের পাঁচ সদস্য রাষ্ট্র প্রায় ৩ বিলিয়ন
মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার
প্রায় ৪০ শতাংশ। সেখানেও লোটার শপথ নেওয়া হচ্ছে আসলে তলায় তলায়।
কট্টর ইসলাম বা মৌলবাদী ইসলামী সংগঠন গুলোও অজগরের মত সারা পৃথিবীর অন্য
সম্প্রদায়কে গিলতে চেয়েছে সাম্রাজ্যবাদের মতোই। ইসলামের নামে রাষ্ট্র ইসলামের নামে জিহাদি নির্মাণ এসব সাম্রাজ্যবাদের আরেক নমুনা।। আজ তাই অন্য সম্প্রদায়রা বিশ্বাস করতে পারছে না তাদের। সামান্য আমার হিন্দু মুসলিম সমালোচনা
মূলক ভিডিও গুলোতে; হিন্দু নাম থেকে যত না বাপ মা
তুলে গালাগালি খাই; তার দশ গুণ খিস্তি আসে মুসলিম
নামের আইডি থেকে। কোথায় থাকি? প্রাণ নাশের ও হুমকি আসে। তবুও বাংলাদেশেই আমার সবচেয়ে বেশি পাঠক। কথা হচ্ছে ইসলামকে অনেক বেশি
সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে। কারণ তাদের দুর্বলতা
সাম্রাজ্যবাদ মূলধন করে জাতি দাঙ্গা তৈরিতে কাজে লাগাচ্ছে। উগ্রপন্থা নাম দিয়ে লুটছে। শুধু মুসলিম কেন যেখানে যেখানে হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইহুদি
যে কোন মানুষের ওপর নির্যাতন নেমে আসবে আমরা বিরোধিতা করবো। দেশের হিন্দু অত্যাচারের বিরুদ্ধে যতটা ভিড় মিছিলে হবে; মুসলমান
অত্যাচারের বিরুদ্ধেও থাকবে সমান ভিড়। সেদিন ভয় পাবে ধর্মের নামে মানবতা নিয়ে খেলা
করা মানুষগুলো। বুঝবে মানুষ জাগছে তাদের আর ভাগ করা যাবে না। ইসলামের নাম করে কঠোর মানবতা বিরোধী
সংগঠনগুলোকে আমাদেরই রুখতে হবে। যেমন মোকাবেলা করতে হবে মানবতা বিরোধী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান
সংগঠনগুলোর। বৌদ্ধ ধর্ম তো অহিংসার প্রতীক মিয়ানমারের বৌদ্ধ
ধর্ম অবলম্বন কারীরা বৌদ্ধ ধর্ম অবমাননায় নেমেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত
অস্ট্রেলিয়া র ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে
কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক এক পাক অফিসার কে জেরা করেছিলেন এই বলে- যে তারা
কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ করেছিলো। তাদের সরল জবাব ছিল;
"আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিল, যে
একজন ভালো মুসলমান কখনোই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী
মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে। আমাদের এসব উশৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে, যাতে
এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে। তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানি। "
মুসলিম ধর্মের নামে এ জাতীয় রাজনীতি সারা পৃথিবীর কাছে ইসলামকে ঘৃণা করতে
শিখিয়েছে। ইসলাম ধর্মের নামে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়।
একাত্তরের মার্চে মিরপুরের সেই বীভৎসতার কথা বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে
এনেছিল পাকিস্তানীরা; কাপড়
খুলতে বলেছিল সবাইকে; রাজি
না হওয়ায় বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলেকে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং
মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে
নিয়ে যাওয়া হয়। রাজারবাগে পুলিশ লাইনে ধরে আনা
বাঙ্গালী নারীদের উপর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ত ওরা; ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ ছুরি দিয়ে
স্তন কেটে, পশ্চাৎদেশের মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে
সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো ওরা; মাঝে মাঝে বন্দুকের নল; বেয়নেট
ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে যোনি থেকে গলা পর্যন্ত চিরে ফেলত; তারপর এ সকল মেয়ের লাশ অন্যান্য
মেয়েদের সম্মুখে ছুরি দিয়ে কেটে কুচি কুচি করে বস্তার মধ্যে ভরে বাইরে ফেলে দিত। আর ছোট ছোট বালিকাদের যখন ধর্ষণে
সুবিধা করতে পারতো না, তখন ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ
বাইরে এনে দুজন দু পা দুই দিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিত। ধর্ষণের তীব্রতায় জেনারেল নিয়াজি শেষ
পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছিল;
"It is not uncommon in history when a battle has been lost because
troops were over indulgent in loot and rape."
একাত্তরের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর নরপিশাচরা এমন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩
সাংবাদিক, ৪৯ চিকিৎসক, ৪২ আইনজীবী এবং ১৬ শিল্পী, সাহিত্যিক ও প্রকৌশলীকে উলঙ্গ
করে, চোখ বেঁধে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে, মলদ্বারে লাঠি ঢুকিয়ে মেরে
ফেলেছিল বাংলাদেশে।
গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড অনুসারে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মমতম গণহত্যাটি হয়েছিলো
বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের হাতে। ওরা পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের পুরস্কারটা
পাকিস্তানকে দেয়। একমাত্র বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া পাকিস্তানকে কোন
নিম্নশ্রেণীর পশুও পছন্দ করার কথা না। কারণ তারা যে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল
বাংলাদেশে; সেটা হার মানিয়েছিল হিটলার, মুসলিনি, গেস্টেপোদেরও। ওয়াসিফ সিদ্দিক আবির এর একটি নিবন্ধ থেক এই তথ্যগুলো দিলাম।
বাংলাদেশে নির্বিচারে হিন্দু ধর্ষণ ও হত্যা হয়েছে।
মানুষ কেন এভাবে এই পৃথিবীর একটি প্রাণীর ও নৃশংস কোরবানি; মানবতা
বিরোধী। হ্যাঁ রোহিঙ্গাদের উপর অত্যাচারের তীব্র নিন্দা
করি। নিন্দা করি যারা হিংসা ছড়িয়ে ধর্মের ভাবমূর্তি
নষ্ট করেন কিংবা যারা একটা সমূহ সম্প্রদায়ের প্রত্যেককেই ঘৃণা করেন। আবার বলছি একটা জটিলতা তৈরি করে
সাম্রাজ্যবাদ সুবিধা খুঁজছে অস্ত্র বেচার; সম্পদ লুটের। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল রাজনীতিতে যেমন
পছন্দ না হলেই মাওবাদী; পাহাড়ের আন্দোলনকে উগ্রপন্থা
সাব্যস্ত করে দমন পীড়নের চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও এই খেলা চলে। তৃতীয় বিশ্বের সাধারণের আজ কোন প্ররোচনায় পা না দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এসেছে। মানবতার স্বার্থে নিজেদের অধিকারের স্বার্থে আওয়াজ তুলতে হবে। না আর ৭১এর বাংলাদেশ কিংবা ২০১৭ এর
মিয়ানমার গণধর্ষণ গণহত্যা আমরা মেনে নেব না!
তুর্কী, ইরান এগিয়ে এসেছে। মিয়ানমার সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গাদের হয়ে লড়বে মুসলমানের স্বার্থে। তুর্কী বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে
রোহিঙ্গা রিফিউজিদের জন্য বর্ডার খুলে দিতে। তারা ত্রাণ সাহায্য করবে। বাংলাদেশ, ভারতের মত জনসংখ্যার চাপে
মুহ্যমান দেশের পক্ষে নতুন করে উদ্বাস্তু ধারণ বেশ চাপের শুধু নয়; অর্থনীতির; আর্থিক সংকটের উপর
প্রভাব ফেলবে। সবচেয়ে বড় কথা কেন বাংলাদেশ থেকে হিন্দুদের
পালিয়ে যেতে হবে ভিনদেশে কিংবা মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দেশান্তরী হতে
হবে; দেশতো কারো বাবার সম্পত্তি নয়
সকলের। প্রত্যেকে পাক তার নিজের দেশে বাঁচার অধিকার। নাগরিকত্বের অধিকার। আর একটা কথা মনে রাখবেন যারা কুক্ষিগত করতে
চাইছেন ধর্মের নামে রাজ শক্তি ক্ষমতা বা সাম্রাজ্য তারা কিন্তু সাম্রাজ্যবাদের মতই
চিহ্নিত হচ্ছেন, চিহ্নিত করে দিচ্ছেন নিজের ধর্ম ও সম্প্রদায়ের শ্রেণী চরিত্র। অস্তিত্ব বাঁচাতে মানুষ মানবতাকে
ধর্মের উপর বসাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বাঁচার স্বার্থে; আমাদের
সকলের মা এই পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে মানবতার জয়গান করতে
হবে।
"অজগরের মত অন্যান্য সম্প্রদায়কে গিলে ইসলামিক রাষ্ট্র গড়ে
নেবে যেখানে যেখানে মুসলমান আছে!"প্রাথমিকভাবে ইসলাম বিরোধী জোট এই ভয় থেকেই
তৈরি হচ্ছে ভারত, মিয়ানমার পৃথিবীর বিভিন্ন
প্রান্তে। আর এই ভাবনাকে পুষ্টি জোগাতে ইতিহাস ঘাঁটছে
ইসলাম বিরোধী সংগঠনগুলো। একটি সন্ত্রাস আরেকটি
সন্ত্রাস তৈরি করছে; এবং এর
পরিণতি উভয়ের বিনাশ! তাই আবার বলি আমাদের নিজেদের পাল্টাতে হবে। পরিচয় দিতে হবে অহিংসার। আবার ঔপনিবেশিক শাসনের হাতে যাতে চলে
না যাই তাই এই উপমহাদেশে সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের; ঐক্যের আজ খুব প্রয়োজন।
অত্যাচার ও আধিপত্যবাদের কাহিনী মানব ইতিহাসে কখনো সাম্রাজ্যবাদ, কখনো উপনিবেশিকতাবাদ আবার কখনো বিশ্বায়ন হিসেবে পৃথিবীতে
প্রবর্তিত হয়ে চলেছে। Survival of the fittest-এর বাস্তবায়ন আজকের আধিপত্যবাদ। ইসলামী সন্ত্রাস, আমেরিকান জঙ্গিপনা, এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নির্যাতন এই আধিপত্যবাদের নামান্তর আধুনিক জীব
তত্ত্ববাদ বা ডারউইনের তত্ত্বের অনুসারী বিজ্ঞান। ধর্ম লুপ্ত। ধর্ম ও দর্শনের এখানে কোন স্থান
নেই। সাম্রাজ্যবাদ যে কোন পরিমণ্ডলে এবং যে কোন
আকৃতিতে; জুলুম
ও অত্যাচারের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। ভিন্ন জাতিকে গোলাম বানানোর পরিকল্পনা দুনিয়াকে অধীনে করার উচ্চাভিলাষ এবং
অন্যের ওপর নিজ কৃষ্টি সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার বাসনা থেকেই; অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জাতিভিত্তিক, শ্রেণিভিত্তিক ইত্যাদি শোষণ প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে।
প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষ দর্শনের দেশ। ভারতীয় দর্শন সাম্রাজ্যবাদের পরিপন্থী; মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের যে জয়গাঁথা তা কৌরব দের অন্যায় রাজ্য দখলের
বিরুদ্ধে পাণ্ডবদের ন্যায্য সংগত ধর্মের লড়াই। সাম্রাজ্য বিস্তারের লড়াই নয়। রামচন্দ্র বালি কে মেরে কিষ্কিন্ধার কিংবা রাবণ বধ করে লঙ্কা দেশের রাজা হননি।
এক হাজার বছর পূর্বে ভারত উপমহাদেশে ছিল একচেটিয়া হিন্দুদের দেশ। এদেশের রাজা প্রজা সবাই ছিল হিন্দু। ১
হাজার বছরের মধ্যে এই উপমহাদেশের ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ৩টি দেশে ৪৯কোটি ৬২লাখ
মুসলমান হয়েছে। এরা সবাই তো এই দেশেরই অখণ্ড
ভারতের লোক ছিল। এদের পূর্বপুরুষ তো হিন্দুই ছিল।
২০০৯-এ পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় চার
ভাগের এক ভাগ মুসলমান। এ গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা
প্রায় ৬৮০ কোটি যার মধ্যে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ১৫৭ কোটি; আর মুসলমানদের মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ এশিয়া মহাদেশে বসবাস করে। ইন্দোনেশিয়ায়
প্রায় ২০ কোটি ৩০ লাখ মুসলমান বাস করে যা বিশ্বে মোট মুসলমান জনসংখ্যার প্রায়
১৩%। পাকিস্তানে ১৭ কোটি ৪০ লাখ, ভারতে
১৭ কোটি ৭২ লাখ, বাংলাদেশে ১৪ কোটি ৫০ লাখ, এবং
ইরান ও তুরস্কে ৭ কোটি ৪০ লাখ মুসলিম বসবাস করে। এই ছয় দেশে বিশ্বের মোট মুসলমান জনসংখ্যার প্রায় ৫৩%র বাস। বর্তমানে ভারতের লোক সংখ্যা ১২৯ থেকে ১৩০ কোটির উপর। ভারতে ১৭ কোটি ৭২ লাখ মুসলিম মোট অবস্থানরত জনসংখ্যার ১০.৯% সংখ্যালঘু হলেও
হাজার বছরের ইতিহাস ও পরিসংখ্যান আধিপত্যবাদের পথ ধরেই সাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ
দল গুলো নিজ নিজ ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি করছে। অবশ্যই রাজনৈতিক কৌশল হয়ে উঠেছে ধর্ম এই উপমহাদেশে কেবল নয় সমগ্র পৃথিবীতে। সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের উপর নেমে
আসছে বিদ্বেষ!কিন্তু কেন?
বাংলাদেশের ঢাকার গুলশানের একটি রেস্তোরায় জঙ্গি হামলায় ২২ জন নিহত; ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা, মুহূর্তের মধ্যে কেড়ে নেওয়া হয় অন্তত ৮৪ জনের প্রাণ। আহত হয় বিপুল সংখ্যক মানুষ। আট মাসের ব্যবধানে ফ্রান্সের নিস শহরে বাস্তিল উৎসব পালন রত লোকজনকে ট্রাক
চাপা দিয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। লন্ডনে মেট্রোতে বিস্ফোরণ। পার্সন্স গ্রিন স্টেশনের
প্লাস্টিকের ব্যাগে বিস্ফোরণ ঘিরে আতঙ্ক। ঘটনায় আহত কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী। লন্ডনে ব্রিটিশ
পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ৫ জন মারা গেছেন ও ৪০ জনেরও বেশি
মানুষ আহত হয়েছেন। তুরস্ক আংকারায় এক পুলিশ অফিসার
গুলি করে মেরে ফেলেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে; বার্লিনের রাস্তায় ক্রিসমাসের বাজার ভর্তি মানুষের ওপর এক লোক চলন্ত ট্রাক
তুলে দিয়ে ১২ জনকে পিষে মেরেছে, আর ৪৮
জনকে আহত করেছে। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে এক
জন একটি মসজিদে আচমকা ঢুকে গুলি চালিয়েছে। জর্দানে আইসিসের সেনারা কিছু নিরাপত্তা পুলিশকে মেরেছে। বুক ফুলিয়েই ঘোষণা করেছে জর্দানের সরকার ইরাক আর সিরিয়ার মুসলমানদের ওপর বোমা
মারায় আইসিসের প্রতিবাদ। ২০০১ য়ে ভারতীয় সংসদে
জঙ্গি হামলা, ২০০৮ য়ে মুম্বাই জঙ্গি হামলা, কাশ্মীরেতো জঙ্গি হামলা লেগেই আছে। জঙ্গি হামলায় প্রতিনিয়ত
কাঁপছে সিরিয়া। তবে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত
বার্ষিক মার্কিন গবেষণা‘কান্ট্রি
রিপোর্টস অন টেররিজম ২০১৬’ অনুযায়ী, ভারতে
জঙ্গি হামলা বেড়েছে অন্তত ১৬ শতাংশ। আর তাতে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ১৭ শতাংশ। কিন্তু একই সময়ে মার্কিন গবেষণা পত্রে
বিশ্বে জঙ্গি হামলার হার কমেছে ৯ শতাংশ বলে দাবি করা হয়েছে।
বিশ্বে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৮৪%। ২০১৬ তে সারা বিশ্বে মুসলমানদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৩ কোটি ৪০ লাখ এবং
খ্রিস্টানদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৩ কোটি ৩০ লাখ। বিশ্বের প্রধান প্রধান ধর্ম গুলো ও তাদের অনুসারীরা একে অপরকে সন্ত্রাসী বলে
না। কিন্তু সবাই এক যোগে মুসলমানদের
সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করছে; কেন? গণহত্যা, আত্মঘাতী
বোমা বিস্ফোরণ, সাধারণ
মানুষকে হত্যা, শিশু যৌন নির্যাতন ও দাসত্ব; যেসব অপরাধ মূলক কাজের জন্য মুসলমানদের
সন্ত্রাসী বলা হয় সে সব অপরাধ মূলক কাজ কি অন্যরা করে না? তবে কেন তাদেরকে সন্ত্রাসী বলা হয় না? একটি সন্ত্রাস রুখতে আরেকটি সন্ত্রাস নতুন করে আবার সন্ত্রাসের জন্ম দেয়। সন্ত্রাস বা হিংসা কখনো সমস্যার সমাধান নয়।
ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তি পাঁচটি হলেও শিয়া মাজহাবের ভিত্তি হচ্ছে ছয়টি যার
একটি এই জিহাদ। ইসলামে জিহাদের ব্যাখ্যা দেওয়া
হয় এরকম; কেউ বলে অমুসলিম, কাফের, হত্যা করাই জিহাদ আবার কেউ বলে না এটা না নিজের অন্তরের কু প্রবৃত্তি দমন করার
নামই জিহাদ। ভারতের হিন্দু-বাদীরা
মনেকরে মুসলিমদের অতি মাত্রায় তোষণ করে
ভারতীয় রাজনৈতিক দলগুলো। আর এই তোষণের কারণে
ভারতে দাউদ ইব্রাহীমের মত আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মাফিয়া তৈরি হয়েছে।
সংখ্যালঘু ভোট যে রাজনৈতিক দলগুলো চায় তা ভোটের আগে এ রাজ্যে রাজনৈতিক দল
নেতাদের ফুরফুররা শরীফ ছোটা দেখেই বোঝা যায়। আর হিন্দু মুসলিম উভয় এইসব ধর্মীয় সংগঠনগুলোর মহিমা এমন; এখানে
কিছু কনফার্ম ভোট জুটে যায় দলগুলোর। ইমাম সাহেব বা গুরু বাবা
যে দিকে ঝুঁকতে বলবেন তার অনুরাগীরা সে
দিকে ঝুঁকে পড়েন। অনেকটা গাধার পালের মত।
ভারতের হিন্দু মৌলবাদী দল গুলো ও সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে। কারণ দেখাচ্ছে; ভারত
সরকারের সংসদ থেকে শুরু করে দিল্লির অক্ষরধাম এমনকি অমরনাথ তীর্থ যাত্রীদের ওপর
মুসলিম সন্ত্রাসী সংগঠন গুলোর হামলা। কিন্তু কথা হচ্ছে একটা
সন্ত্রাস কে কি আর একটা সন্ত্রাস দিয়ে রোখা যায়? যদিও এখনো পর্যন্ত হিন্দু সন্ত্রাসী দের ডাইমেনশন পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে নি। কেবল বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলোতে বিদ্যমান। যদিও হিজবুত -আল কায়েদার মতো হিন্দু সন্ত্রাসবাদী সংগঠন গুলোর দেশের বাইরে
গিয়ে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে বেড়ানোর মতো কোন আন্তর্জাতিক এজেন্ডা নেই। তবুও সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী চিহ্নিত করে তা দমন না করলে দাবানলের মতো ছড়িয়ে
পড়বে সমগ্র ভারত ভূমিতে; এ
বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মানব জাতির কল্যাণে সর্ব
ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে বিরোধিতা করতে হবে যে কোন রকম সন্ত্রাসের। শুধু বিশেষ একটি দলকে ভোট দেয়ার জন্য প্রতি বছর বিচ্ছিন্ন ভাবে হাজার হাজার
মানুষের উপর নেমে আসে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০১৬ সালে দুর্নীতি
থেকে, দাদা-গিরি, নারী নির্যাতন ও নৈরাজ্যের নানা চিত্র দেখেছে। অথচ সন্ত্রাসের সেই পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়েই আবার ভণ্ড মা মাটি মানুষের মমতা
সরকার এলো। বিকল্প নেই হয়তো তাই!তবে এওতো
সন্ত্রাসবাদের সাপেক্ষে সাধারণের রায়। মানুষ জাগবে কবে? আবার কি ৩৫ বছর ঘুমিয়ে থাকবে এ বঙ্গের মানুষ!২০০০ সালে
বিএনপি-জামাত জোট আমলে ওপার বাংলার মানুষ দেখেছে মাইনরটির ওপর নৃশংস অত্যাচার। এওতো সন্ত্রাস ছাড়া আর কিছু নয়। আজ সময় এসেছে পৃথিবীর
সব সন্ত্রাসের মোকাবেলায় সাধারণ মানুষের জোট গড়ার। না মানুষকে বিভাজিত করা যাবে না
ধর্মের নাম নিয়ে। জাতের নাম নিয়ে রাজনৈতিক; অরাজনৈতিক
দলের নাম নিয়ে। নিপীড়িত সাধারণ মানুষের জাত কী? দল কী? রং কী?
মানুষের মনে কী একবারও উদয় হবে না এসব প্রশ্ন। অখিল ভারত নেপালী একতা সমাজ, ভারতের
কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী), ফিলিপাইন কমিউনিস্ট পার্টি, অল
ত্রিপুরা টাইগার ফোর্স, আম
শেনরিকিও, কনটিনিউটি আইরিশ রিপাবলিকান
আর্মি, আইরিশ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি, আইরিশ পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন, ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এমন অসংখ্য
সন্ত্রাসবাদী নিষিদ্ধ রাজনৈতিক বা ধর্মীয় জঙ্গি সংগঠন গুলো আছে। যাদের সদস্যরা অমুসলিম হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান
কিংবা অন্যান্য সম্প্রদায় ভুক্ত কিন্তু মুসলমানদের মত সেই সব সংগঠনের ভিত্তিতে সেই
সব সম্প্রদায়ের সমগ্র জনগোষ্ঠীকেই সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করা তো হয় না। অথচ মুসলমানদের নির্দ্বিধায় চিহ্নিত করনের কাজ চলছে। কিন্তু কেনও; কিছু ইসলামিক সংগঠনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ভুক্তভোগী
হবেন সমগ্র মুসলমান। যদি এমনটা হতো সমগ্র
মুসলিম; ইসলাম
সন্ত্রাসবাদের সমর্থক প্যারিস, নিস, সিডনির
কাফে কিংবা জাকার্তার কফিশপের মতো
সন্ত্রাসের মানচিত্রে ঢাকার
গুলশানে হিন্দু বন্ধু দের চোখের সামনে হত্যা হতে দেখ নির্ভুল উচ্চারণে কলমা পড়তে অস্বীকার করতো না
এক মুসলমান যুবক। তাকেও হত্যা করা হয়েছিল। এমন নজির অনেক আছে। তবুও যদি বলেন বিচ্ছিন্ন ব্যাপার; হায়দার আলী, টিপু
সুলতান, বাংলার সৈয়দ মীর নিসার আলী
তিতুমীর, কিংবা
বেগম হজরত মহল অথবা মৌলানা আবুল কালাম আজাদ সহ আরো অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীর নাম
বলতে পারি। যাদের নাম ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে
উজ্জ্বল হরফে লেখা আছে। যাদের নিয়ে আমাদের
গর্বের শেষ নেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।
প্রাচীন কালে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত গ্রিস সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা
চালিয়ে ছিলেন মহাবীর আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডারের পর রোম
সাম্রাজ্য একজন সেনাপতি এবং একনায়ক জুলিয়াস সিজারের নেতৃত্বে রোমের প্রশাসনিক
চরিত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় ও রোম একটি গণতন্ত্র থেকে একটি একনায়ক
কেন্দ্রিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়! সিজারের পোষ্য পুত্র অক্টাভিয়ান খ্রী:পূ: ৩১-এ
এক্টিয়ামের যুদ্ধে মার্ক এন্টনী এবং ক্লিয় পেট্রাকে পরাজিত করে। এরপর অক্টাভিয়ান অদমনীয় হয়ে উঠে
এবং খ্রী:পূ: ২৭-এ রোমান সিনেটে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অসীম ক্ষমতা দেয়ার সাথে
আউগুস্তুস উপাধি প্রদান করে যা রোমান সাম্রাজ্যের শুরুর একটি মাইলফলক। প্রেইটোরিয়ান দেহরক্ষী বাহিনী
ক্লডিয়াসকে সম্রাট ঘোষণা করলে; ক্লডিয়াসের
নেতৃত্বে রোমানরা ব্রিটানিয়াকে নিজ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করে। অক্টেভিয়ানের পর এটাই ছিল সর্ববৃহৎ
রাজ্য বিস্তারের ঘটনা। ডিয়ক্লেটিয়ানের
শাসনকালে দেশ চার ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটি অংশে একজন নির্দিষ্ট শাসনকর্তা নিয়োগ
করা হয়!প্রথম কন্সট্যান্টাইন এর শাসনকালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে এর অবসান ঘটে এবং
সকল প্রতিদ্বন্দ্বীকে পরাভূত করে তিনি একছত্র সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। কন্সট্যান্টাইন রোমান রাজধানী বাইজেন্টাইনে স্থানান্তর করেন এবং তার
সম্মানার্থে কনস্টান্টিনোপল হিসেবে জায়গাটির নতুন নামকরণ করা হয়। নগরীর পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এটি
ছিল প্রাচ্যের রাজধানী। সাম্রাজ্যের
পূর্বাঞ্চল(বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য) বিশ্বের এক অগ্রণী শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। রোমান সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক
এবং সামরিক ক্ষেত্রে সেই সময়কার সবথেকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধিশালী
সাম্রাজ্যসমূহের অন্যতম ছিল। এটি ছিল প্রাচীন কালের এবং পৃথিবীর বৃহত্তম
সাম্রাজ্যসমূহের একটি। ট্রাজানের সময়কালে এর
আয়তন ছিল ৫০ লাখ বর্গ কিলোমিটার, যা ২১ শতকের ৪৮ টি জাতিগোষ্ঠীর
সম পর্যায়ের। এবং প্রায় ৭ কোটি লোকের বসবাস ছিল যা তৎকালীন
বিশ্ব জনসংখ্যার ২১% ধারণ করছিল। রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং স্থায়িত্বই
ল্যাটিন এবং গ্রিক ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, আবিষ্কার, স্থাপত্য, দর্শন, আইন
এবং সরকার গঠনের বিস্তৃতি এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেছিল। ফলে বোঝা যাচ্ছে; আলেকজান্ডারের
মতোই সামরিক শক্তির মাধ্যমে গোটা দুনিয়ায় নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি চালু করতে
চেয়েছিল রোমান সম্রাটেরাও। রোম আর পারস্যের মধ্যে
দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য চলেছিল দীর্ঘ যুদ্ধ। যখন তদানীন্তন বিশ্বের এই দুই পরাশক্তি স্বীয় আধিপত্য; দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করার জন্য পরস্পরের সাথে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। ঠিক তখনি ইসলামের আগমন এ দুই
পরাশক্তির অহমিকা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পৃথিবীর বুকে আর এক নতুন আবহ সৃষ্টি করে।
ফলে চিন্তিত ইউরোপের রাষ্ট্রীয় ধর্মযাজকেরা এ নতুন সভ্যতার জোয়ারকে ইউরোপের
রাজরাজা রা ও সামন্ত প্রভুরা এ ধর্ম যুদ্ধে প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে যোগ দিয়েছিল। প্রায় ৩০০ বছর ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চলেছিল হত্যাযজ্ঞ; রক্তপাত ও লুণ্ঠনের মতো বীভৎসতা। অনেকেই এই আধিপত্যবাদ কে খ্রিষ্টীয় ইউরোপের ধর্মান্ধতার ফল এবং সন্ত্রাসবাদের
একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা বলে দাবি করেন। ১৫০০ শতকের পরে ইউরোপে শিল্প বিপ্লবের আরম্ভে নিত্য নতুন কারিগরি বিদ্যার
প্রসারের উদ্ভাবিত হয় নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি। প্রতিষ্ঠিত হয়ে চলে কলকারখানা। দেশে বিপুল পরিমাণে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন হতে থাকে। প্রয়োজন হয়ে পড়ে কাঁচামাল ও পণ্য বিক্রির বাজারের। ইতোমধ্যে স্টিম-ইঞ্জিন আবিষ্কার হওয়ায় মানুষের কর্মকাণ্ডের গতিবেগ গেলো বেড়ে। জাহাজে এ ইঞ্জিন ব্যবহার করে ইউরোপের মানুষ দূর-দূরান্তে ছুটল কাঁচামাল
সংগ্রহে ও কারখানায় তৈরি পণ্য সমূহের বাজার অনুসন্ধানে। যান্ত্রিক অগ্রগতি ইউরোপীয়দের সারা দুনিয়ার উপনিবেশ স্থাপনের সহায়ক হল। ইংরেজ, ফরাসি, ওলন্দাজ, বেলজিয়াম, ইতালি, জার্মানি, স্পেনীয় ও পর্তুগাল রাষ্ট্র ও জাতিগুলো সাম্রাজ্যবাদের পুরোধা হিসেবে নিজেদের
প্রতিষ্ঠিত করে চলল। আবিষ্কৃত হল আমেরিকা
মহাদেশ!সে দেশের আদি বাসিন্দা রেড ইন্ডিয়ানদের
নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন ও
হত্যার মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হল। হল পাশ্চাত্যের এক নতুন উপনিবেশের গোড়াপত্তন। কৃষিকাজ ও বসতি স্থাপনের জন্য আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রায় ১৪ মিলিয়ন মানুষকে
গোলাম বা দাস বানিয়ে নিয়ে আসা হল। মানবেতর জীবন যাপনে করা
হল বাধ্য। মোটকথা, সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম
এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাম্রাজ্যবাদের শিকারে পরিণত হল। কিন্তু ঊন বিংশ শতাব্দীতে উত্থিত
সাম্রাজ্যবাদী শক্তি গুলো বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভেই অস্তমিত হতে শুরু করলো। উপনিবেশ গুলোর উপর থেকে উপনিবেশিকতাবাদি দের প্রথম বিশ্বযুদ্ধ থেকেই মুঠো আলগা
হতে শুরু করেছিল। প্রথম মহাযুদ্ধের সময়ে ১৯১৭
খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার জারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লেনিনের নেতৃত্বে বলশেভিক বিপ্লব
সফল হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঔপনিবেশিক শাসন হাত ছাড়া
হল। পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে জন্ম
নিলো কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র নামে নতুন এক ভাবাদর্শ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সমাপ্তি তে যখন অক্ষশক্তি সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত এবং
মিত্রশক্তির ইউরোপীয় অংশীদাররা রণ ক্লান্ত তখন আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিতে আণবিক ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে
নিজেদের পৃথিবীর একমাত্র সুপার পাওয়ার হিসেবে জানান দিয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বী কমিউনিস্ট রাশিয়া ধুঁকছিল যুদ্ধের ধকলে। নির্দ্বিধায় পৃথিবীর বুকে আমেরিকা তার মোড়লিপনার ছড়ি ঘোরাতে আরম্ভ করলো। কিন্তু এই অবস্থাও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। অল্প দিনের মধ্যেই সোভিয়েত রাশিয়া আণবিক বোমা ফাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত
প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। আর পরস্পরবিরোধী আদর্শের প্রতিনিধি হিসেবে পৃথিবীতে ‘ঠাণ্ডা’ যুদ্ধের উষ্ণ আবহ সৃষ্টি করে
দুই পরাশক্তি বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
তারপর এইভাবে ৪০ বছর পৃথিবীর বুকে এক অনিশ্চিত অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ৮০-এর দশকের শেষের দিকে কমিউনিস্ট সাম্রাজ্যের পতন ঘটতে লাগল এবং মার্কিনীরা
বিশ্ব মোড়ল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে থাকে। তখন পৃথিবীর বুকে তিনটি শক্তি কাজ
করছিল : (১) পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদ (২) কমিউনিস্ট ব্লকও (৩) তৃতীয় বিশ্ব। কমিউনিস্ট দের মূলোৎপাটনের পর মানবজাতির ধনী গরীব বিভক্তির ভিত্তি আর
সাম্যবাদের আদর্শে, রাজনীতি
বা অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা রইল না। গত শতকের ’৯০-এর দশকের প্রারম্ভে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পর যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হয়ে দাঁড়ালো। ইতোমধ্যে আমেরিকার চিন্তাবিদ
হান্টিংটন এক নতুন ঠাণ্ডা যুদ্ধের বার্তা দিয়ে Clash
of Civilization নামে এক নব্য মতবাদ প্রচার করেন।
হান্টিংটন তার মূল বক্তব্যে যা বলতে চেয়েছেন; ঠাণ্ডা যুদ্ধের অবসানে নতুনভাবে যে প্রভাব বিস্তারের লড়াই শুরু হতে চলেছে তা হবে
পাশ্চাত্য শক্তির সাথে প্রাচ্য সভ্যতার লড়াই। হান্টিংটন মনে করেন; যদিও
আগামীতে পাশ্চাত্য বহুদিন প্রভাবশালী সভ্যতা হিসেবে টিকে থাকবে; তবে তারা তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি অন্য সভ্যতার কাছে
হারাতে থাকবে। হান্টিংটন আরো মনে করেন এ সময় মুসলিম সভ্যতা
সর্বব্যাপী অগ্রসরমান থাকবে। আর
পাশ্চাত্যের নেতৃত্বে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসলামের ক্রমবর্ধমান সংখ্যাধিক্য শক্তি সঞ্চয় রুখতে যে ইংরেজি প্রবাদ বাক্যের
অনুসরণ করা হচ্ছে তা হল। Give the dog a name and
kill it.
ইরাক-ইরান যুদ্ধে, ইরাক ও
আফগানিস্তানে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালনায় আমেরিকার ভূমিকা কিংবা ইসরাইলের ইহুদিদের হাতে
মুসলিম ফিলিস্তিনিদের ওপর অকথ্য অত্যাচার এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মৌন সম্মতি
মধ্যপ্রাচ্যে এক ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টির দিকেই ইঙ্গিত করে। ওয়ার অন টেরর ও বিশ্বায়নের নামে
প্রাচ্যে পাশ্চাত্যের আগ্রাসী তৎপরতা শুরু হয়েছে। All muslims are not terrorists, but most of the terrorists are muslims, war on terror ইত্যাদি
নানারকম স্লোগানের দ্বারা পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র
মুসলমানদের টেররিস্ট হিসেবে চিহ্নিত করতে চাইছে।
বর্তমানের নতুন পৃথিবীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মানবগোষ্ঠীর সংঘাতের অভিমুখ বদলে দেওয়া হবে। ধনী গরিব সামাজিক শ্রেণী বিভাজনের লড়াই হবে না। অর্থাৎ ধনী গরিব অথবা অন্যান্য
অর্থনৈতিকভাবে চিহ্নিত বিভাজন মানুষের মধ্যে চাগার দেওয়ার আগেই তাকে বিভাজিত করে
দেওয়া হবে সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের লড়াইয়ে আর অবসর মিলে যাবে সাম্রাজ্যবাদী, পুঁজিবাদী, ধনোতান্ত্রিক, সামন্ততান্ত্রিক শ্রেণি
প্রভুদের। পৃথিবীর পরবর্তী স্নায়ু যুদ্ধ
চলবে তিনটি ব্লকের পরিবর্তে সাতটি সভ্যতা এবং বিভিন্ন ধরনের স্বার্থের অনুকূলে
বিভক্ত হয়ে। গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো বিভিন্ন
সভ্যতার অংশ হিসেবে লড়বে।
অধ্যাপক হান্টিংটন তার ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন অ্যান্ড দ্য মেকিং অব ওয়ার্ল্ড
অর্ডার নামক বইটিতে যে সাবধান বাণী উপস্থাপন করেছেন আমেরিকা আজ তার পশ্চাৎ অনুসরণ
করেই ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, মিশর ও
সিরিয়া কে মার্কিন সন্ত্রাসে পর্যুদস্ত করেছে! পাকিস্তান, লেবানন, ফিলিস্তিনও খণ্ড-বিখণ্ড হওয়ার
আশঙ্কা জেগেছে।
ক্ষমতার বলয় পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অপশ্চিমা দেশগুলোর দিকে
সরে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি মাল্টিপোলার থেকে
মাল্টি-সিভিলাইজেশনাল হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি সভ্যতা প্রধানত
একে অপর থেকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক
অবস্থানে ভিন্ন। তাই বিশ্বায়নের নামে একটি
মিক্সড কালচার বা মিশ্র সংস্কৃতি ভরে দিয়ে খানখান করার করার চেষ্টা চলছে মানুষের
প্রাচীন ঐতিহ্য গরিমা। পুরাতন সভ্যতা গুলোর বহু
বছরে অর্জিত ধ্যান ধারণা দর্শনের গোঁড়া উৎপাটনের চেষ্টাও চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সফল হলেও প্রাচীন সভ্যতা গুলোর মূল পুরনো বাড়ির গাত্রে বট
বৃক্ষের মত মানব সভ্যতার অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত। মজার ব্যাপার হল তা কেটে ফেললেও আবার সেখান থেকেই জন্ম নিচ্ছে গাছ।
প্রফেসর হান্টিংটনের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে; প্রাচ্যের পুনর্জাগরণ ও
পুনরুত্থানের সম্ভাব্য সব সম্ভাবনা অঙ্কুরে ধ্বংস করে দেয়ার প্রচেষ্টায় পশ্চিমা
বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে! পবিত্র ভূমি অর্থাৎ জেরুজালেম এবং কন্সটান্টিনোপল
এর অধিকার নেয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টান দের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫ - ১২৯১ সাল
পর্যন্ত যেমন যুদ্ধ অভিযান চালিয়ে চলেছিল; তেমনি বিশেষ করে সংখ্যাধিক্য মান মুসলিম বিশ্বে মধ্যপ্রাচ্যে ছদ্মবেশে ক্রুসেড
শুরু করেছে আজো আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্পদ লুটের উদ্দেশ্যে। হ্যাঁ শুধু মুসলিম নয় প্রাচ্যের জল জমিন জঙ্গল লুট চলছে এরই সাথে। এ ধ্বংসযজ্ঞ কবে শেষ হবে; আর কত
লোক যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী কূটকৌশলের শিকার হবে; তা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আবির্ভাব এর পর বলা কঠিন।
তসলিমা নাসরিন "সন্ত্রাস কোনো সমস্যার সমাধান নয়" শীর্ষক এক নিবন্ধে
লিখেছেন;
"ডোনাল্ড ট্রাম্পও ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেয়ে তাঁর মতো করে
প্রতিবাদ করেছেন সন্ত্রাসী হামলার। ভয় হয় প্রতিবাদ আবার
বুশের মতো না হয়ে যায়, এদেশ
ওদেশ থেকে দুর্নীতিবাজ একনায়ক সরকার হঠাতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে না আবার
খুন করে ফেলেন। কেন মুসলমানদের খুন করা হলো এই রাগে, দুঃখে বা এই ছুতোয় আবার কট্টরগুলো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বানিয়ে
না ফেলে।
সবচেয়ে যেটা খারাপ লাগে, তা হলো, জিহাদিদের সন্ত্রাসী
কাণ্ডকারখানা দেখে দেখে সারা পৃথিবীর সাধারণ মানুষের মধ্যে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা
বাড়ছে। যে মুসলমান সন্ত্রাসের সাতে নেই, পাঁচে
নেই। তাকে কেন ভুগতে হবে! পৃথিবীর বেশির ভাগ মুসলমান
সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়, তবে কেন বেশির ভাগ মুসলমানকে
মানুষ আজ অবিশ্বাস করছে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই
ভালো। আমাকে কালই একজন বললো, ‘কে জিহাদি, কে
জিহাদি নয়, তা বাইরে থেকে বোঝা যায় না, তাই সব
মুসলমানকেই প্রত্যাখ্যান করি।’ মুসলমানদের মধ্যেও অনেকে নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকছে, চারদিকের জিহাদি কাণ্ডকারখানা দেখে তারাও
অপ্রস্তুত, তারাও লজ্জিত।
দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সন্ত্রাস করছে, পারমাণবিক শক্তি বোমা ফেলছে, নিরীহ
মুসলমান মারা পড়ছে, ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর
বুলডোজার চালাচ্ছে ইসরাইল, কাশ্মীরে মুসলমানদের নির্বিচারে
খুন করছে ভারতীয় সেনা— এসব
কারণে মুসলমানরা নাকি জিহাদি দলে নাম লেখাচ্ছে। কিন্তু জিহাদিরা কি মুসলিম সমাজের
কোনো উন্নতি করতে পারে? ক্ষতি ছাড়া এ পর্যন্ত লাভ কি
তারা করেছে কারোর? মুসলমানদের
সবচেয়ে যেটা প্রয়োজনীয় কাজ, যেটা
করলে বা গড়লে মুসলমানদের উন্নতি হবে, সেটা আর যা কিছুই হোক, জিহাদ নয়। সেটা শিক্ষা এবং সচেতনতা। সেটা সমানাধিকারের আর সমতার সমাজ। সেটা ধর্মনিরপেক্ষতা, বিজ্ঞানমনস্কতা। কিন্তু ক’জন জানে বা মানে সে কথা? "
আইসিসকে তো দেখেছি আমরা মুসলমানদেরই গলা কেটেছে, মেয়েদের ধরে বেঁধে যৌনদাসী বানিয়েছে
কোন সুস্থ সমাজেই যা কাঙ্ক্ষিত নয়। তসলিমা তার নিবন্ধে
ইহুদিদের কাছ থেকে মুসলমানদের শিক্ষা নিতে বলেছেন। "ইহুদিরাও অত্যাচারিত হয়েছিল, কিন্তু ওরা অত্যাচারের প্রতিশোধ
নিতে দলে দলে মানুষের গলা কাটতে নেমে যায়নি। ওরা নিজেদের শিক্ষিত করেছে, সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবেছে, অর্থনৈতিক
শুধু নয়, নৈতিক উন্নতির কথা ভেবেছে, বিজ্ঞানের কথা ভেবেছে, আজ
পৃথিবীর বড় বড় শিক্ষাবিদ, বড় বড়
চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ
ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক। বছর বছর নোবেল পাচ্ছে। মানুষ খুন করে, রক্তপাত
ঘটিয়ে স্বর্গে যাওয়া যাবে বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বিপ্লব করা যাবে— এসব মনে হয় না কোনো বুদ্ধিমানের কাজ। বুদ্ধি এত লোপ পাওয়া কি ভালো? অনেকে
বলছে, মুসলমানরা হয় বোকা, নয় বর্বর। যারা বোকা নয় বা বর্বর নয়— তাদেরও শুনতে হচ্ছে এই অপবাদ। "এই নিবন্ধে তসলিমা দৃঢ় ভাবে বলতে চেয়েছেন সন্ত্রাস কোনো সমাধান নয়। কোনো সম্প্রদায়ের জন্যই সন্ত্রাস
স্থায়ী শান্তির পথ এনে দিতে পারবে না। তিনি বলেছেন; "আজকের মুসলিম সন্ত্রাসীদের জিজ্ঞেস করো, সকলেই
বলবে, আমেরিকার সন্ত্রাস তাদের পছন্দ নয়, আমেরিকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ করতেই তারা আজ সন্ত্রাসী হয়েছে। আমার প্রশ্ন, ‘তুমি যদি বন্দুকের বিরুদ্ধে, তবে
তুমি নিজেই কেন বন্দুক হাতে নিচ্ছ? তুমি যদি খুনের বিরুদ্ধে, তবে
তুমি খুন করো কেন? "
ধর্মের নামে বা ঈশ্বরের নামে খুনোখুনি করে বর্বর মানুষেরা। সভ্য মানুষেরা মানবাধিকার, সমানাধিকার, সমতা আর শান্তি চায়। ধর্মকে ব্যক্তিগত বিশ্বাসের গণ্ডি ডিঙ্গিয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কেনো
হস্তক্ষেপ করারা অধিকার দেওয়া হবে। ধর্ম যে যার ব্যক্তিগত। রাষ্ট্র সকলের। হিন্দু, মুসলিম, শিখ, ঈশাই রাষ্ট্র সবার। যে কোন রাষ্ট্রে সবার সমান অধিকার থাকা উচিত। একি আইন হওয়া উচিত সকলের জন্য। না হলে শ্রেণী ভাগ
বিভাজন অব্যাহত থাকবে। পৃথিবীতে যতদিন না
সম্পূর্ণ রূপে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে থাকবে হিংসা। থাকবে মানুষে মানুষে আধিপত্য
বিস্তারের লড়াই। নানা লিঙ্গের, নানা
রঙের মানুষকে একসঙ্গে সুখে শান্তিতে বাস করতে হলে সাম্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প
কোনো উপায় নেই।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াইয়ের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে বিশ্ব
নেতৃবৃন্দ। সর্বশেষে বলি জঙ্গি হামলার অশুভ দৈত্য ঠেকাতে
শুধু নিরাপত্তাজনিত ব্যবস্থা গ্রহণই যথেষ্ট নয়
জঙ্গিদের মানসিকভাবে ভুল পথ থেকে সরিয়ে আনতে না পারলে বিশ্ববাসীকে প্রতিদিন
তার খেসারত দিতে হবে। জঙ্গি দমনে অস্ত্র প্রয়োগের চেয়েও মনস্তাত্ত্বিক
লড়াইয়ে যত্নবান হতে হবে আমেরিকা ও তার সহযোগী সন্ত্রাস দমনে এগিয়ে আসা রাষ্ট্র
গুলো কে। সহানুভূতির পরিচয় দিতে হবে
মুসলমান সমাজকে। জঙ্গিবাদের মাধ্যমে যে কোনো
কল্যাণ অর্জিত হতে পারে না সংশ্লিষ্ট বিষয় টি যাতে উগ্রবাদী প্রভাব তৈরি করা
সংগঠন গুলোর আগে সাধারণের মননে উপলব্ধি
জাগ্রত করতে পারে; তার জন্য শিক্ষিত সুচিন্তক
মানুষ গুলোকে সুসমন্বিত ভাবে অবিরল প্রচার
চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের সকলের মা এই পৃথিবীকে
ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে; মানবতার যে কোন শত্রুদের
বিরুদ্ধে বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় ও সচেতন মানুষের ঐক্য গড়ে তোলার আজ আশু প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র:
https://www.amarblog.com/puranpapi/posts/108176
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/246463\
সন্ত্রাস কোনো সমস্যার সমাধান নয়
তসলিমা নাসরিন
http://www.bd-pratidin.com/home/printnews/194051/2016-12-22
https://bn.wikipedia.org/wiki/
http://www.bd-pratidin.com/editorial/2016/07/17/157269
http://www.bd-pratidin.com/international/2017/07/25/250497
অলভ্য ঘোষ