হুমম্ মনে
হচ্ছে তুমি বামপন্থী বা লিবেরাল। এইসব রকমারি তন্ত্র হল সিভিলাইজেশনের এক এক ধাপ।
রাজতন্ত্র অবশ্যই খুব গোড়ার দিকের ধাপ। কিন্তু জিন জোন্স বলে এক ফরাসি দার্শনিক
ভারি ইন্টারেস্টিং কথা বলেছেন। তার মতে, সিভিলাইজেশন শুরু হয়েছে সেই দিন থেকে যেদিন মানুষ প্রথম বেড়া বাঁধতে শিখেছে।
মজার ব্যাপার হল, যে বেড়া বাঁধতে শেখে, সে কি শুধু জমিতে বেড়া বেঁধেই ক্ষান্ত হয় ভায়া, সব কিছুতেই বেড়া বাঁধে। যত বেশী বেড়া তত বেশী সিভিলাইজেশন।
পশুপাখিরা বেড়া বাঁধাকে বলে বন্ধন, আমরা বলি
উন্নয়ন। এখন সুখ কিসে, বন্ধনে না উন্নয়নে, সেটাতো সেই বলতে পারবে যে এর মধ্যে আছে। রাম লোকটা যুদ্ধ
টুদ্ধ করে,
রাবন কে মেরে, সীতাকে বনবাসে পাঠিয়ে একরকম প্যাসিভ লাইফ লীড্ করত। নায়ক হয়েও দর্শকের মত
শুধু দেখে যেত। রাজা যদি যুদ্ধ টুদ্ধ না বাঁধায়, খাজনা না বাড়ায় – তাহলে প্রজারা ভালই থাকবে। হ্যাঁ, কদ্দিন থাকবে সেটা একটা প্রশ্ন বটে –~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ঘণ্টা খানেক সঙ্গে সুজন
বিশ্বজিত
ভট্টাচার্য
ভোট আসতে
এখনও ঢের বাকী। সার্জিকাল স্ট্রাইক সুদূর অতীত। নোটবন্দীর উত্তেজনাও থিতিয়ে এসেছে।
সুজন উদ্বিগ্ন। নিয়মিত টিভিতে মুখ না দেখালে, লোকে একদিন বেমালুম ভুলে যাবে যে। মুখরোচক কিছু নেই। তাই
ঘটনাহীন বর্তমান ছেড়ে সে এখন অতীত নিয়ে মেতেছে। একে একে বিগত দিনের লোকজনের
ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে। বেশিরভাগই মৃত, তাদের অ্যানিমেশন করে দেখান হচ্ছে। শক্তি সুনীল দিয়ে শুরু করে পিছনে যেতে যেতে
কালিদাসে পৌঁছে গেছে। আরো পিছনে গেলে কেমন হয়, আদি কবি বাল্মীকি? দেখুন,
আজকের নিবেদনঃ ঘন্টা খানেক সঙ্গে সুজনে, আদি কবি বাল্মীকির সাথে সাক্ষাৎকার।
দৃশ্যপট –তসরের পাঞ্জাবী গায়ে সুজন, আঙ্গুলের ফাঁকে পেনসিল। ডেস্কের উপর ছড়ানো গোটাকয় প্রাচীন
পুঁথি। বাল্মীকি চেয়ারে সোজা হয়ে বসা। গলা অবধি চাদরে ঢাকা। বড় বড় দাড়ি রবিঠাকুরের
মত,
মাথার মধ্যিখানে টাক, সাইডের চুল কান ছাড়িয়ে নেমে দাড়ির সাথে মিশে গেছে। টেবিলে
ঢাকা দেওয়া জলের গ্লাস, পাশে সেলফোন
সদৃশ যন্ত্র। রং তুলি ক্যানভাস আর কম্পিউটার নিয়ে ক্রিয়েটিভ টিমের লোকেরা পেছনে
বসে। আলোচনার অবসরে তারা তাৎক্ষণিক অ্যানিমেটেড ছবি তৈরী করবে।
সুজনঃ -
নমস্কার। আপনার সময় বাংলা ভাষা সৃষ্টি হয়নি, আবার আজকের যুগে সংস্কৃতের চল নেই। মুষ্টিমেয় পণ্ডিত ছাড়া
সে ভাষা কেউ চর্চা করে না। আমাদের স্টুডিয়েতে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত আছেন যিনি
দোভাষীর কাজ করতে সম্মত হয়েছেন। প্রয়োজন হলে দয়া করে বলবেন।
বাল্মীকিঃ -
রামায়ণ যখন যখন যে যে ভাষায় লেখা হয়েছে আমিও তখন তখন সে ভাষা আয়ত্ত করেছি।
ভারতবর্ষের সবকটা ভাষা তো বটেই, এছাড়া চীনা, জাপানি, ইউরোপের কিছু
ভাষা,
হিব্রু, উর্দু আর
গোটাকয়েক কম্পিউটর ল্যাঙ্গওয়েজও আমি জানি। পণ্ডিতের প্রয়জন হবেনা। আপনাদের কোন
ভাষায় উত্তর পছন্দ?
সুজনঃ - হে
হে,
আমাদের বাংলা চ্যানেল। আপনি বাংলায় কথা বললেই দশর্কেরা বেশী
পছন্দ করবেন।
বাল্মীকিঃ – না হে, সব কথা
বাংলায় বললে বাঙ্গালী দর্শক আমাকে আকাট ভাববে। সংস্কৃত মৃত ঠিকই, তবে বাংলা ভাষারও (মৃদু হাসি) স্বাস্থ্য ভাল নয়। আমি বরং
আমার ল্যাঙ্গোয়েজ অ্যাপে কন্টেম্পোরারি বাংলা মোড্ সিলেক্ট করে নেই। (টেবিল থেকে
মোবাইল সদৃশ যন্ত্র হাতে নিয়ে টেপাটেপি করে) – হয়ে গেছে। এবার শুরু করা যাক।
সুজনঃ – রামায়ণ এখনো সমান পপুলার। রাম না হনুমান কে বেশী পপুলার এ
নিয়ে অবশ্যই রিসার্চ করা যায়। আপনি কি ভেবে এই ক্যারেক্টারটা তৈরী করেছিলেন? আপনার চোখে হনুমান আসলে কি?
বাল্মীকিঃ – হনুমান একটা কনসেপ্ট। পবন পুত্র, তাই নির্দিষ্ট অবয়ব নেই। ইচ্ছামত আকৃতি ধরতে পারে। কখনও
টর্নেডো কখনও বা মৃদু হাই। অনেকটা মোবাইল অ্যাপের মত। ঠিক মত চালাতে পারলে অনেক
অসাধ্য সাধন করা য়ায়। তবে হ্যা, এই সব আপাত
নিরীহ অ্যাপের চলাচলের পিছনে অনেক কঠিন কঠিন অঙ্ক লুকিয়ে থাকে। প্রোগ্রামিং। যে
বানায় সে জানে। রামের যেমন হনুমান, রাবনের তেমন
কুম্ভকর্ণ। ভাল কথা, আজকাল শুনেছি পোকেমন
বলে কে একজন হনুমান কে বেজায় কম্পিটিশন দিচ্ছে?
সুজনঃ – হা হা, তা বটে।
পোকেমন একটু সেকেলে, এখন চলছে ব্লু
হোয়েল। তবে এদের রামচন্দ্রের মত গডফাদার নেই, বেশিদিন কম্পিট করতে পারবে না। আচ্ছা, রাম তো হিউম্যানবিং, তার মধ্যে মনুষ্যচিত দূর্বলতা নিশ্চয় ছিল। সে হঠাত এক কথায়
সুখ স্বাচ্ছন্দ ছেড়ে বনে যেতে রাজি হল কেন?
বাল্মীকিঃ – দ্যাখ, চেকভ বলেছে
গল্পে যদি পিস্তলের উল্লেখ থাকে তবে কখনও না কখনও গুলি গোলা চলবেই। গ্রীক নাটক পড়, ট্র্যাজেডির তিনটে ভাগ। প্রথমে ভূমিকা, দ্বিতীয় ভাগে বিস্তার, একদম শেষে ট্র্যাজেডি। ভূমিকাতেই রামচন্দ্রের অস্ত্র
বিদ্যার উল্লেখ আছে। রাম যদি বনে না যায় তবে বিস্তার আসবে কোত্থেকে, গুলি গোলা চলবে কি করে? দ্বিতীয় ভাগটা ঠিকমত জাঁকিয়ে তৈরী করতে পারলে, তবেই না শেষভাগে ট্রাজেডিতে বাজিমাৎ।
সুজনঃ – ঠিক আছে, রামকে না হয়
পুরুষোত্তম বানাবার জন্য তাঁর মধ্যে মানুষের দূর্বলতা বেশি দেখান নি, কিন্তু ভরত আর শত্রুঘ্ন? এরা তো সাধারন মানুষ, এরা যদি দাদা ভক্তি না দেখিয়ে, সুযোগ সন্ধানীর মত পিছনে কাঠি করত, তা হ’লে গল্পটা
আরো ন্যাচারাল হ'ত না? লোকে অনেক বেশী রিলেট করতে পারত।
বাল্মীকিঃ – এটা আমার মনেও এসেছিল, কিন্তু গল্পটা তাতে ফোকাস হারাত। ভরত আর শত্রুঘ্ন ভিলেন হয়ে
যেত। তাতে আবার রাবনের প্রাধান্য খর্ব হত। তাই ওদের সাইডেই রেখে দিয়েছি। পুরো
রামায়ণে শত্রুঘ্নের একটাই ডায়লগ। মন্থরার পিঠে কিল মেরে বলেছে –‘খামোশ’!
সুজনঃ – আচ্ছা একটু বায়লজিকালি ভাবা যাক। লক্ষ্মণ তো বিয়ের পরদিনই
বনে যায়নি। বউ নিয়ে ঘরে ফিরে বৌ-ভাত, ফুলশয্যা মানে, সমস্ত রিচুয়াল
টিচুয়াল শেষ করেই গিয়েছিল আশাকরি। লক্ষ্মণের বিয়ে নিশ্চয় কন্সামেটও হয়েছিল, বনবাসের সময় অযোধ্যায় উর্মিলা প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলে কি হ’ত?
বাল্মীকিঃ –(মাথা চুলকে) এক্সকিউজ মাই ল্যাঙ্গোয়েজ, খুবই কেলোর কীর্তি হত। অযোধ্যার কুচুটে লোকগুলো হয়ত
উর্মিলাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে বলত। লক্ষ্মণকে বাড়ি ফিরে আসতে হ’ত অথবা উর্মিলাকে বনে হাজির করাতে হ’ত। ডাক্তার বদ্যি খুঁজতে হ’ত। বাচ্চা দেখে সীতার মা হবার ইচ্ছে প্রবল হ’ত, খুবই কেলো।
ভাগ্যিস হয়নি। রাম রাবনের যুদ্ধটাই ফস্কে যেত। (চিন্তিত হ’য়ে মাথা চুলকাতে থাকে)।
সুজনঃ – আর একটা বায়োলজিকাল কৌতূহল, রামায়ণে সব রকম রসের মিক্স আছে কিন্তু তেমন ভাবে আদিরস নেই।
সুগ্রীব ছাড়া কোন চরিত্রই কামাতুর হয় না। একটু অস্বাভাবিক নয়?
বাল্মীকিঃ – কাতরতা তখনই আসে যখন কামনার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
মিথুনাবদ্ধক্রৌঞ্চের মৃত্যু আমাকে ব্যথিত করেছিল, তাই, প্রথম থেকেই
আমি প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে রেখেছি। বাঁদর, মানুষ,
রাক্ষস, সব আলাদা
আলাদা স্পিশিসের ইন্টার্যাকশন্। একের অন্যের উপর সেক্সুয়াল এ্যাট্রাকশন্ নেই।
ব্যতিক্রম শুধু সূর্পনখা, তার পরিণতি
সবাই দেখেছে,
তাই ও পথে আর কেউ পা বাড়ায়নি। আলাদা স্পিশিস ওয়াজ দ্য
স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট। এক প্রজাতি হলে কেস মহাভারত হয়ে যেত।
সুজনঃ – গানের তেমন প্রয়োগ নেই।
বাল্মীকিঃ – আছে বইকি, রাবনের বীণা
বাদন,
অশোক বনে চেরীদের নাচা গানা, তবে বেশীটাই কর্ণাটকী ঘরানায়। যেহেতু রাম আর তার দলবল
উত্তরের বাসিন্দা, ওরা দক্ষীণী
সঙ্গীতের মর্ম ঠিকমত বুঝতে পারেনি। তখন তো আর, এ আর রহমান ছিল না। হেঃ হেঃ হেঃ।
সুজনঃ – রাম রাবন কে মেরে সীতাকে উদ্ধার করল, অযোধ্যায় ফিরে এল, দেশজুড়ে দীপাবলির আলো জ্বলে উঠল, তারপর দে লিভড্ হ্যাপিলি এভার আফটার। এইভাবে গল্পটা শেষ করলেন না কেন?
বাল্মীকিঃ – কি মুশকিল! তাহলে ট্র্যাজিডিটা হবে কি করে? লোকের মনে গল্পটা দাগ কাটবে কেন? শোন খোকা, নায়ক দূর্বল
বা নির্বোধ বলে ট্র্যাজেডি হয় না। নায়ক সবল, বুদ্ধিমান আর সচ্চরিত্র হয় বলেই ট্র্যাজেডি তার কাছে আসে।
এটাই নিয়ম। ওয়াদিপাস কে দেখ। সবল, বুদ্ধিমান, সচ্চরিত্র, সুপুরুষ – তাই তার জীবনে এত ট্র্যাজেডি। আসলে কি জান, যুদ্ধে জয় হোক কি পরাজয় কিছুই একমপ্লিশড্ হয় না, সব আগের মতই চলতে থাকে। লোকে একদিন যুদ্ধটা ভুলে যায় কিন্তু
ট্র্যাজেডিটা মনে রাখে।
সুজনঃ – লোকে ভাল সময়ের উদাহরণ দেয় রামরাজত্ব বলে। রাজতান্ত্রিক
ব্যাবস্থার মধ্যে খুব ভাল থাকা কি সম্ভব?
বাল্মীকিঃ – হুমম্ মনে হচ্ছে তুমি বামপন্থী বা লিবেরাল। এইসব রকমারি
তন্ত্র হল সিভিলাইজেশনের এক এক ধাপ। রাজতন্ত্র অবশ্যই খুব গোড়ার দিকের ধাপ। কিন্তু
জিন জোন্স বলে এক ফরাসি দার্শনিক ভারি ইন্টারেস্টিং কথা বলেছেন। তার মতে, সিভিলাইজেশন শুরু হয়েছে সেই দিন থেকে যেদিন মানুষ প্রথম
বেড়া বাঁধতে শিখেছে। মজার ব্যাপার হল, যে বেড়া বাঁধতে শেখে, সে কি শুধু জমিতে বেড়া বেঁধেই ক্ষান্ত হয় ভায়া, সব কিছুতেই বেড়া বাঁধে। যত বেশী বেড়া তত বেশী সিভিলাইজেশন।
পশুপাখিরা বেড়া বাঁধাকে বলে বন্ধন, আমরা বলি
উন্নয়ন। এখন সুখ কিসে, বন্ধনে না উন্নয়নে, সেটাতো সেই বলতে পারবে যে এর মধ্যে আছে। রাম লোকটা যুদ্ধ
টুদ্ধ করে,
রাবন কে মেরে, সীতাকে বনবাসে পাঠিয়ে একরকম প্যাসিভ লাইফ লীড্ করত। নায়ক হয়েও দর্শকের মত
শুধু দেখে যেত। রাজা যদি যুদ্ধ টুদ্ধ না বাঁধায়, খাজনা না বাড়ায় – তাহলে প্রজারা ভালই থাকবে। হ্যাঁ, কদ্দিন থাকবে সেটা একটা প্রশ্ন বটে – কিন্তু সে তো তুমি করনি, আর আমিও
উত্তর জানি না।
সুজনঃ – রামচন্দ্রকে যে ভগবান বানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটা কি আপনার সময়েই না হালে?
বাল্মীকিঃ – প্রাচীন গ্রীসে এক দেবতা ছিল দিউস্। খুব পাওয়ারফুল দেবতা।
নাটকের দেবতা,
আঙুর থেকে মদ তৈরির দেবতা। মিশরেও অনেক দেবতা ছিল। এখন আর
কেউ টিকে নেই। গ্রীক নাটক গুলো কিন্তু টিকে আছে, মিশরের শিল্পকলাও টিকে আছে। রামচন্দ্রও এই রকম অনেক বিশ্বাস
অবিশ্বাসের দোলায় দুলেছেন। কখনও ভগবান কখনও শয়তান। রামায়ণটা টিকে গেছে, সেটাই আমার তৃপ্তি।
সুজনঃ – শেষ প্রশ্ন, রামায়ণের
দীর্ঘ আয়ুর কারণ কি?
বাল্মীকিঃ – প্লেন এন্ড সিম্পল গল্প বলবার কায়দা। সপরিবারে শুনবার মত
গল্প। আসলে সেই সময়ে রিলিজিয়াস টি আর পি নিয়ে এত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই ছিল না। প্রত্যেকটা
চ্যাপ্টার,
মানে কান্ডেই অনেকটা ফ্রী স্পেস রাখবার সুযোগ ছিল। স্পেস
থাকবার ফলে গল্পটা যথেষ্ট অক্সিজেন পেয়েছে। যুগে যুগে লোকে বিভিন্ন ভাবে
ইন্টারপ্রেট করেছে, ইম্প্রোভাইজ করেছে, দম বন্ধ হয়ে মরতে দেয়নি।
সুজনঃ – আমাদের স্টুডিয়োতে আসবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যেতে যেতে
দেখে নেব আমাদের ক্রিয়েটিভ টিম কি এ্যানিমেশন তৈরী করেছে।
অ্যানিমেশন -
দুটি ছেলে আর একটি মেয়ে বনের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছেলে দুটির পরনে জিন্স্
আর অরেঞ্জ টি-শার্ট। মাথায় বেসবল ক্যাপ, হাতে ধনুক বান। মেয়েটার নীল হট শর্টস আর লাল হাত কাটা টপ, পায়ে স্নিকার, চোখে সানগ্লাস। দূ্রে একটা কুটির দেখা যায়। ক্লোজ শটে চোখে পরে, কুটিরের আঙিনায় গাছের ডাল কেটে তৈরী আলনায়, চীর ও বল্কল সযত্নে সাজিয়ে রাখা। ক্যামেরা কুটির ছাড়িয়ে আর
একটু এগিয়ে যায় – কুটিরের পেছনে
বিস্তীর্ন খোলা মাঠ আর সেই মাঠের আকাশ জুড়ে উঠেছে এক বিশাল রামধনু।
ছেলে দুটো আর
মেয়েটা আনন্দে গেয়ে ওঠে, -
(সুরঃ নাক মে নাগিনা দেখা)
বনেতে ভয়েজ
দেখি –
কুটিরে বুটিক দেখি দিগন্তে রামধনু – এক লাফে ছুয়ে দেখি ভরত ভ্রাতারে বলি – ফাঁকা মাঠে গোল দাও ফুলটস বলে মারো ছক্কা!!! টিং টি টিং টি
টিং (তিন জনে মিলে নাচতে থাকে)
সুজনঃ – (বাল্মীকির দিকে তাকিয়ে) আপনি আদি কবি, আপনি কি বলবেন?
বাল্মীকিঃ – (গানের সুরে সুর মিলিয়ে)
বনবাস বাইপাস
–
ঘাসফুল চারপাশ বৌদির হেঁসেলের – সীতাভোগ বারোমাস সূর্পনখারা যদি – সীমানা পেরোতে চায় বার্মা পাঠাবো পাবে অক্কা!!! - টিং টি
টিং টি টিং
(বাল্মীকির গান শুনে তিন জনে আরো উৎসাহে নাচতে থাকে। সুজন আর
বাল্মীকি ফেড আউট হয়ে যায়, পর্দায় ফুটে
ওঠে রামধনুর ক্লোজআপ।)
সুজনঃ এই
জিনিসটাকে আমরা আগে রামধনু বলতাম, এখন নাম
হয়েছে রঙধনু। আপনার সময়ে এর কি নাম ছিল?
বাল্মীকিঃ
মেইন ল্যান্ড ইন্ডিয়ায় এর নাম ইন্দ্রধনুস্। আমাদের সময়ও ইন্দ্রধনুসই বলতাম। বাংলায় রামধনু বলে বুঝি? যাক একটা বিষয়ে তাহ'লে ‘রাম’ মাহাত্ম্যে গো-বলয় থেকে বাংলা অনেক এগিয়ে আছে। হাঃ হাঃ হাঃ!
সমাপ্ত
বিশ্বজিত ভট্টাচার্য