লড়াইয়ের অন্তরালে
২
তিনদিনের ছুটি নিয়ে পুজোর সময় বাড়ি আসে শুভ্র। কাজকর্ম কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে এক জুনিয়রকে দায়িত্ব
দিয়ে সে বাড়ি আসে। তাও ফোনের পর ফোন। যাদবপুরের
যে পাড়ায় ওদের বাড়ি, সেখানে বন্ধু-বান্ধব
খুব কম। তবু যে কজন কাছাকাছি থাকে, তাদের ডেকে এনে আড্ডা দেয়। ঠাকুর দেখতে বেরোয় না।
ছেলে বছরে দু’তিনবার আসে। ফলে সিক্তা
নিজের হাতে নানা পদ রান্না করে খাওয়ান। কাজ থেকে ছুটি নিয়ে
ছেলের সঙ্গে নানা গল্পগুজব করেন। সৌমেনবাবুও কৃতী ছেলের সাফল্যে খুশি। তিনিও ছেলের অভিজ্ঞতা শুনতে বসে
যান। দু’তিনদিনের বেশি ছুটি যেহেতু সে পায়
না, এই তিনটে দিন সৌমেনবাবু ও সিক্তার কাছে স্বপ্নের মতো। একমাত্র পুত্রের
সাহচর্য পেয়ে অদ্ভুত তৃপ্তি পান
ওঁরা।
অষ্টমীর বিকেলে সিক্তা ছেলেকে জিগ্যেস করেন, কি রে ঠাকুর দেখতে
বেরোবি না?
--নাহ, রাস্তায় এত ভিড় ভালো লাগে না। তুমি বাবাকে নিয়ে ঘুরে
এসো।
-- চা খাবি?
--দাও।
সিক্তা চা করতে করতে রান্না ঘর থেকে ছেলেকে
জিগ্যেস করেন,
বাবু, বিয়ের ব্যাপারে কিছু
ভাবলি?
--না।
---তোর পছন্দের কেউ আছে?
--না না।
--তাহলে খোঁজ-খবর নেব? এবার ঘর-সংসার কর। আমরা
তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। তোকে তো দেখাশোনা
করার কেউ তো চাই।
--কে বলল বুড়ো হয়ে গেছ? এখনও তিন বছর চাকরি
আছে। বাবাকে সিনিয়র সিটিজেন বলা যায় রিটায়ার
করেছেন বলে। তবু যথেষ্ট ইয়ং লাগে।
কথাটা শুনে বাবা-মা দুজনেই হাসেন। বারান্দায় বসা
সৌমেনবাবু স্ত্রীকে বলেন, দেখলে তো? ছেলে আমাকে কি বলল? তুমি কিন্তু আর আমাকে কোনদিন
বুড়ো বলো না। আসলে কি জানিস, আমি আগাগোড়াই হেলথ
কনশাস। ব্যায়াম আর প্রাণায়াম নিয়মিত করি বলে বোধ হয় এখনও ফিট আছি।
--- ভাল তো। চালিয়ে যাও। শুভ্র বলে।
--ঠিক আছে। তোর মা যে কথাটা বলছিলেন, তার সূত্র ধরে আমি
জিগ্যেস করি,
তোর বিয়ের ব্যাপারে তাহলে খোঁজ-খবর নেব?
-- নাও। যোগাযোগ হলে ফোন করো। চলে আসব।
--হ্যাঁ,
এই কথাটাই
শুনতে চাইছিলাম। এই বলে সৌমেনবাবু ঘরে ঢোকেন। সিক্তা ছেলেকে এবং স্বামীকে চা
দিয়ে নিজের চা আনতে রান্নাঘরে যান।
-- বলছি কি একটা ফ্ল্যাট দিল্লিতে
কিনে নে না?
এভাবে
ভাড়া দিয়ে কতদিন আর থাকবি?
বাবা ছেলেকে জিগ্যেস করেন।
---কোন প্রবলেম নেই তো। তিন বন্ধু
মিলে থাকি। অঢেল জায়গা। প্রত্যেকের আলাদা রুম। আঠারোহাজার টাকা ভাড়া। আমাকে ছ’হাজার টাকা
দিলেই হয়ে যায়।
--কিন্তু বউমা এলে তো এভাবে থাকা
চলবে না। প্রাইভেসির প্রয়োজন হবে।
-- তাহলে কোম্পানির ফ্ল্যাটের জন্য
অ্যাপ্লাই করতে হবে।
--কোম্পানির ফ্ল্যাটে কেন থাকবি? একটা ফ্ল্যাট কিনে নে। সিক্তা চা পান করতে
করতে ছেলেকে
বলেন।
--সেতো অনেক দাম। এতো টাকা পাব কোথায়?
--কেন আমরা দেব। তুই কিছু দিবি। আমাদের
যা আছে সব তো তোরই থাকবে। দু’ইরুমের একটা ফ্ল্যাট দেখ। পশ এরিয়াতে অনেক দাম হবে। একটু দূরে দেখ। তোর
নিজের তো গাড়ি আছেই। ফলে অফিস করতে অসুবিধে হবে না।
--ফ্ল্যাট কিনে কি হবে? কোথায় থাকি, তার কী ঠিক আছে?
---তখন বিক্রি করে দিবি। বিয়ে করলে
নিজের একটা আস্তানা চাই। নাহলে তোরই
অসুবিধে হবে।
শুভ্রর বাবাও মায়ের কথায় সায় দেন। ফলে শুভ্র বলে, বেশ তবে মাস দুই সময় দাও। কাজ সামলে খোঁজ-খবর
করা বেশ কঠিন। তবু দেখছি।
চা-পান পর্ব সেরে শুভ্রর মা—বাবা ফের বলেন, চলনা আমাদের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে। ভিড় এলাকায় যাব না। ঘন্টা খানেক বাইরে
কাটিয়ে আসি। তুই আবার কবে আসতে পারবি, কে জানে?
--চলো তাহলে।
বাবা –মা ছেলেকে নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেরন। পাড়ার পুজো দেখে একটা টোটো ভাড়া করে ভিড়
এলাকায় না গিয়ে কাছাকাছি কয়েকটা পুজো প্যান্ডেল পরিক্রমা করে ওঁরা ফিরে আসেন।
ছেলে দশমীর সকালে ফিরে যাবে। সকাল সাতটায়
ফ্লাইট। ফলে নবমীর দিন সিক্তা নিজের হাতে
রান্না করেন শুভ্রর পছন্দের সবজি ডাল, সুক্তো, চিতল মাছের পাতুরি, ও, ফ্রুট চাটনি। দুপুরে
সবাই একসঙ্গে খেতে বসে। শুভ্র বলে, যা খাওয়াচ্ছ, অনেকদিন মনে থাকবে। দিল্লিতে তো এমন ট্যাস্টি রান্না কে
করবে ! নিজেরা অলটারনেটলি করি। ওখানে আমার বন্ধুগুলো খুব ভালো। একজন অসমের, আরেকজন কেরালার। আমিই রেসিপি বলে দিই। কোনদিন
রাইস ডাল সঙ্গে সবজি। কোন দিন চাপাটি চিকেন, কোনদিন ডিমকষা ভাত, কোনদিন সময় না থাকলে বাইরে
থেকেই রাতের খাবার কিনে নিই।
--ট্রান্সফার নিয়ে যদি এখানে আসতে
পারিস,
তাহলে কত
ভালো হত। মায়ের আক্ষেপ।
--আরে আমার চাকরির ঠিক আছে নাকি? অন্য জায়গায় এর চেয়ে
বেটার পোস্ট বা স্যালারি পেলে কে থাকবে? দেখলে না এই নিয়ে তিনটি
কোম্পানি ছেড়ে দিয়েছি।
--এখন একটু থিতু হওয়ার চেষ্টা কর।
বিয়ে করলে কিন্তু কোন রিস্ক নেয়া যাবে না । বাবার পরামর্শ।
-- কি যে বল? সব মাল্টিন্যাশানাল
কোম্পানিগুলো একই রকম। খুব খাটায়। যারা বেটার ফ্যাসিলিটি দেবে, আমি তো তাদের সঙ্গেই
থাকব, নাকি?
--এই ব্যাপারটা ওর ওপর ছেড়ে দেয়া
ভালো। সিক্তা বলেন।
-- বেশ, তুই যা ভালো বুঝিস, তা ই করিস। প্রায় আট বছর তো চাকরি করছিস, ফলে তোর কাজের
ব্যাপারটা তুই ভালো বুঝবি। আমাদের পরামর্শ, ভালো থাকিস। নিজের দিকে খেয়াল রাখিস। আরেকটা কথা তোর বিয়ের
ব্যাপারে আমরা কিন্তু চেষ্টা চালাব। যদি কন্যা পছন্দ হয়ে যায়, একবার এসে দেখে যাস।
-- হুঁ। ফোন করো।
৩
আদর আর বিশ্রামে কাটিয়ে পরের দিন সকালে শুভ্র
দিল্লি চলে যায়। এদিকে সৌমেনবাবু পরের পনেরো দিনের মধ্য বিজ্ঞাপন দেখে তিন-চারটি
পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথাবার্তা এগিয়ে যায়।
সল্টলেকের একটি পরিবারের সঙ্গে সৌমেন বাবু ও সিক্তা কথা প্রায় চূড়ান্ত করার আগে
শুভ্রকে ফোন করে। একবেলার জন্য এসে দেখে মত দেওয়ার পরই শ্রীময়ীর সঙ্গে মাস দু’য়েক বাদে
বিয়ে হয়ে যায়। শ্রীময়ী সুন্দরী এবং জুলুজিতে এম এস সি।ওরা দুইবোন। শ্রীময়ী বড়ো। ওর বাবা রাজেশ চৌধুরীর উঁচু পদে চাকরি। মাও চাকরি করতেন
প্রাইভেট সংস্থায়। কিন্তু দুই মেয়েকে বড়ো
করার স্বার্থে চাকরি ছেড়ে দেন। বিয়ের পর শুভ্র শ্রীময়ীকে নিয়ে
দিল্লি চলে যায়। নতুন কেনা ফ্ল্যাটে ওরা ওঠে। বিয়ের প্রথম মাসটা একে
অপরকে আবিষ্কার করতে করতে স্বপ্নের মতো কেটে যায়।হানিমুনে কাটে গোয়ায়। দিল্লিতে ফিরে শ্রীময়ী লক্ষ্য
করে শুভ্র অফিস যাওয়ার নামই করে না। মাস দুই পর শ্রীময়ীর
মনে সন্দেহ দানা বাঁধে। নান কারণে সম্পর্কটাও ঠিক ঘণিভূত হচ্ছিল না। প্রথমত, শুভ্র একটু অন্তর্মুখী, শ্রীময়ী বিপরীত। শুভ্র সামান্য মতের অমিল হলেই রেগে যায়।
শ্রীময়ীর যা সবচেয়ে অপছন্দের, তা হল শুভ্র রোজ রাতে ড্রিংক করে। মাঝে সাজে এক- আধদিন
আনন্দের জন্য হলে সে মানিয়ে নিত, কিন্তু রোজ মাতাল হওয়াটা শ্রীময়ীর অপছন্দ। কৌতূহলবশত
শ্রীময়ী একদিন সন্ধ্যায় জিগ্যেস করে, তুমি অফিস থেকে
কতদিনের ছুটি নিয়েছ?
--লম্বা ছুটি দিচ্ছিল না। ফলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছি।
--চাকরি করছ না, তোমার চলছে কী করে?
--ডোন্ট ওরি। এ নিয়ে তিনটে চাকরি
ছাড়লাম। আমার ওপর বসিং করাটা আমি
মেনে নিতে পারি না।
-- মনে হচ্ছে চাকরি করাটা একটা
ছেলেখেলা তোমার কাছে। একটা জীবন নিজের জীবনের সঙ্গে জড়িয়েছ। পুরো তিনমাস এখনো হয়নি, আমি প্রেগন্যান্ট। যাকে পৃথিবীতে আনছ, ভেবেছ তার কথা?
--আরে বাবা, এখনি এতসব ভাবার কি আছে। টাকাপয়সার ভাবনা তো? ও তোমাকে ভাবতে হবে না। ব্যাংক ব্যালেন্স
যথেষ্ট আছে।
-- ভাবার কি আছে মানে? বসে খেলে ব্যাংকে যা আছে, তা তো কদিনেই শেষ হয়ে যাবে। আর ড্রিংকের পেছনে কত টাকা ওড়াও, খেয়াল আছে? এই যে বলি ড্রিংক করাটা
আমার অপছন্দ,
তবু তুমি
করবে?
---আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, প্লিজ।
শ্রীময়ী বেডরুমে চলে যায়। সে ভাবে বাবা-মা এক
মাতালের সঙ্গে তার বিয়ে দিয়েছে। শুভ্র সম্পর্কে আরও খোঁজখবর নেওয়া উচিত ছিল। সে আদৌ চাকরি করে কি
না, তা নিয়ে শ্রীময়ীর
সন্দেহ হয়। সে বাড়িতে সব জানায়। শ্বশুর-শাশুড়িকে
সব জানায়। ওঁরা সবাই আশ্বস্ত করে বলেন, কোন চিন্তা নেই। শুভ্র বেশিদিন বসে থাকবে
না। কিন্তু শ্রীময়ীর ভীষণ অস্বস্তি হয়।
একটা অসহায়তাবোধে তার কান্না পায়। বাবাকে ফোন করে ক্ষোভ
উগড়ে দেয় সে। তার একটাই প্রশ্নঃ কেন বিস্তারিত না জেনে বিয়ে দিলে?
শ্রীময়ীর ইচ্ছে ছিল চাকরি করার। কিন্তু তার বাবা
চাইছিলেন ওঁর নিজের চাকরি থাকতে থাকতে
অন্তত একটি মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেওয়া। ফলে শুভ্রর শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরি,সৌম্যকান্তি ফর্সা চেহারা এবং ওর মা-বাবার ব্যবহার এত
ভালো লেগে যায়,
রাজেশবাবু
শ্রীময়ীর মতামত নিয়েই বিয়ে দিয়ে দেন।
কিন্তু শ্রীময়ীর অভিযোগ শুনে তার বাবা কষ্ট পান। তবু বলেন, দুশ্চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে। ওর যা যোগ্যতা এবং
রেজাল্ট,
ও বেশিদিন বসে থাকবে না। তুই নিজের দিকে খেয়াল
রাখ। ওর মদ খাওয়ার নেশা সম্পর্কে ওর মা-বাবাও কিছু জানে না।
---তুমি জিগ্যেস করেছিলে ওর
মা-বাবাকে?
--হ্যাঁ।
--ওঁরা কি বললেন?
-- ওঁরা তো শুনে অবাক। তবে আমাকে আশ্বস্ত
করলেন,
ওঁরা
ছেলেকে বুঝাবেন যাতে এই অভ্যেস তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেয়। তুই এ নিয়ে অযথা টেনশন করিস না।
টাকাপয়সার সমস্যা ওর কোনদিনই হবে না। সময়মতো খাওয়া–দাওয়া করিস। এই নে মায়ের সঙ্গে কথা
বল।
-- হ্যাঁ বলো, মা।
--ডাক্তার দেখিয়েছিস?
-- না দেখাব। অ্যাপয়ন্টমেন্ট নেয়া
আছে।
--সব সময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা
করিস। একদম টেনশন করিস না। আমরা তো আছি নাকি?
--তোমরা কী করবে!
-- ওর বাবা-মাকে দিয়ে আবার বলাব
যাতে মদের নেশাটা ছেড়ে দেয়। তুই নিজের দিকে খেয়াল
রাখ।
-- হ্যাঁ।
-- শুভ্রকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য
আমাদের বাড়ি চলে আয়।
-- বলেছিলাম। ও এখন কোথাও যাবে না। আমাকে একা যেতে বলেছে।
এয়ারপোর্টে আমাকে পৌঁছে দেবে।
-- ঠিক আছে তা- ই কর। ডাক্তার
দেখিয়ে কদিনের জন্য এখানে চলে আয়।
-- দেখি। পরে জানাব। রাখলাম।
--হ্যাঁ, রাখ।
মোবাইল
রেখে ড্রয়িং রুমে শুভ্রর সঙ্গে কথা বলতে যায় শ্রীময়ী। শ্রীময়ীকে দেখেই শুভ্র
জিগ্যেস করে,
আমার বাবা-মা কীকরে জানল আমি ড্রিংক করি?
--আমি জানিয়েছি। শ্রীময়ীর স্পষ্ট
উত্তর।
--কেন জানালে?
-- জানাব না? জানানোটা দরকার ছিল।
--কাজটা তুমি ঠিক করোনি।
-- বেশ করেছি। তাঁরা জানুন তোমার
প্রাইভেট লাইফ কেমন? বাড়ির বাইরে কীভাবে জীবন কাটাও।
-- আমার সামনে থেকে চলে যাও।একটা সামান্য ব্যাপার
নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করছ? নাউ
গেট লস্ট।
--- কার সঙ্গে কথা বলছ তুমি মনে আছে
তো?মাতাল কোথাকার।
--মাতালের সামনে আসার দরকার কি? বেডরুমে গিয়ে টিভি দেখ, না হয় বই পড়ো। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
--কাজ মানে তো ল্যাপটপ নিয়ে পরে
থাকা আর মদ খাওয়া।
---ধ্যাৎ। অসহ্য।
--সহ্য করতে হবে। বিয়ে করেছ, সহ্য করবে না! তোমার মা-বাবাকে মদ খাওয়ার কথা বলায় খুব
গায়ে লাগছে,
না? শ্রীময়ী চিৎকার করে বলে।
--গেট লস্ট। এই বলে শুভ্র নেশার
ঘোরে শ্রীময়ীকে চড় মারে।
--এত বড়ো সাহস!! শালা মাতাল, এই বলে শ্রীময়ী শুভ্রকে পালটা
চড় কষায়। দু-দুটো চড় খেয়ে শুভ্র দমে যায়। টেবিলের ওপরে রাখা
ড্রিংকের অবশিষ্ট অংশটুকু পান করে মানিব্যাগটা পকেটে পুড়ে সঙ্গে ল্যাপটপটা নিয়ে
ধীরে ধীরে কোনদিকে না তাকিয়ে ফ্ল্যাট থেকে
বেরিয়ে যায়। শ্রীময়ী পেছন থেকে ডাকে, কোথায় যাচ্ছ? শুভ্র কোন উত্তর দেয় না। লিফটের কাছে এসেও
লিফটে না উঠে হেঁটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে যায়। তারপর রাতের ছায়ার মতো রাস্তায় মিশে যায়।
শ্রীময়ী ফ্ল্যাটের দরজায় অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।
বার বার ফোন করে। কিন্তু ফোন সুইচ-অফ।
দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে সে দরজা বন্ধ করে দেয়। বেডরুমে বসে সে কাঁদে।
তারপর বাড়িতে সব ফোন করে জানায়। সারারাত বিনিদ্র কাটে। পরেরদিন সকালবেলা
শ্রীময়ীর বাবা সকালের ফ্লাইটে চলে আসেন। শুভ্রর খুঁজে নানা
জায়গায় খোঁজ-খবর নেন। কোন সংবাদ না পেয়ে
অবশেষে স্থানীয় থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। খবর দেওয়া হয় শুভ্রর
মা-বাবাকেও।শুভ্রর মা-বাবাও চলে আসেন দিল্লিতে। সপ্তাহ দুই ধরে সবাই নানা জায়গায়
ওঁরা খোঁজ-খবর নেন। সমস্ত আত্মীয়স্বজনকে
জানানো হয়। কেউ কোন সংবাদ দিতে পারেনি।
এক উৎকন্ঠাময় বিকেলে শ্রীময়ী সহ সবাই একসঙ্গে
ড্রয়িংরুমে বসে। শুভ্রর মা সিক্তা শ্রীময়ীকে বলেন, একটু ধৈর্য ধরতে পারতে, মা। আমার ছেলে ভীষণ অভিমানী এবং
জেদি। ও কোনদিন
মদের নেশা ধরবে, ভাবতেই পারিনি। তবে আমার
বিশ্বাস,
আমি বললে ও মদ খাওয়া অবশ্যই ছেড়ে দিত। কলেজে পড়ার
সময় একবার সিগারট খায়, জানতে পেরেছিলাম। আমি বলায়, ও আমার গা ছুঁয়ে প্রমিস
করেছিল,
আর কোনদিন
সিগারেট ছুঁবে না। এবং তা ই করেছিল। ফলে মদের নেশা হয়ে থাকলে এটা বেশিদিন হয় নি। বিয়ে হয়ে এসে তুমি কি
মদের বোতল এই ফ্ল্যাটে বা ওর ঘরে দেখতে পেয়েছ?
--না, শ্রীময়ী মাথা নিচু করে উত্তর
দেয়।
--আর চাকরির কথা বলছ? ও বেটার ফেসিলিটির
জন্য ওয়েট করছিল। তুমি কি মনে করো চেষ্টা করছিল না? এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন ও
নয়। আর ও যদি চাকরি নাও করে, তবুও ওর এবং তোমার কোন
অসুবিধে হত,
বলো? আমাদের সবকিছু তো তোমাদেরই। আমার একটাই ছেলে। জানি না কোথায় গেছে। আমাদের জীবনের সবকিছু এই
ছেলে। এই বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখ মোছেন। তারপর শ্রীময়ীর বাবাকে
বলেন,
আমরা কাল সকালে বেরিয়ে যাচ্ছি, বেয়াইমশাই। শ্রীময়ীকে নিয়ে এখানে থেকেও তো লাভ নেই।
শ্রীময়ীকে কিছুদিন আপনাদের কাছেই রাখুন। বাড়ি ফিরে আমরা আরও খোঁজ-খবর
নেব।
৪
সমুর বয়স এখন পাঁচ। গত পাঁচবছর সে বাবাকে দেখেনি।
অবশ্য দেখলেও চিনতে পারবে না। কারণ সে মাকেও চিনতে ভুল করে।
কথা বলতে পারে না। আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে
দেয় সব। তিন বছর বয়সে ধরা পড়ে সে মানসিক প্রতিবন্ধী। অর্থাৎ তার অটিজম রয়েছে। তিনবছর থেকেই শ্রীময়ীর
লড়াই শুরু। ছেলেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা তার কাছে একটা বড়ো চ্যালেঞ্জ।
দুজন প্রশিক্ষিত শিক্ষিকার কাছে সে নিয়ে যায় সে পালাক্রমে। শ্বশুর ও শাশুড়ি একটি
গাড়ি কিনে দিয়েছেন শ্রীময়ীকে। শ্রীময়ী নিজের বাড়িতেই বেশি থাকে। ইতিমধ্যে
ওর বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ফলে সমুকে
দেখাশোনায় শ্রীময়ী মা-বাবার সাহায্য পুরোপুরি পায়। সারাক্ষণ ওকে দেখে
রাখতে হয়। স্পীচথেরাপির জন্য বাড়িতেই একজন
শিক্ষক আসেন। প্রশিক্ষিত শিক্ষক –শিক্ষিকারা যে ভাবে বলেন, শ্রীময়ী ঠিক সেভাবেই
ছেলেকে গাইড করে। ছেলের পেছনে খেটে সে নিজের কথা, নিজের স্বাদ-আহ্লাদের কথা, আশা-আকাঙ্খার কথা ভুলে যায়। মাসে দশ থকে
পনেরোহাজার টাকার মতো খরচ হয় শুধু সমুর
জন্য। শ্বশুর-শাশুড়ি প্রতি মাসে এসে শ্রীময়ীর হাতে সব খরচ দিয়ে যায়।
গত পাঁচবছরে বদলেছে অনেককিছু। সিক্তা চাকরি থেকে
অবসর নিয়েছেন। শ্রীময়ীর বাবা অবসর নিয়েছেন। একটা শূন্যতাবোধ, একটা হাহাকার দুটি পরিবারকে গ্রাস করে রেখেছে। শুভ্রর জন্য সিক্তা ও
সৌমেনবাবু যেমন বুকে বিষাদের ভার নিয়ে দিনযাপন করেন, ওর জন্মদিনে কাঁদেন, একমাত্র নাতি সমুর
ভবিষ্যতের কথা ভেবেও নীরবে হাহাকার করেন। শ্রীময়ীর বাবা- মাও সমুর
ভবিষ্যতের কথা ভেবে অসাক্ষাতে চোখের জল ফেলেন।
শুভ্র
নিখোঁজ হওয়ার পর শ্রীময়ী মাসখনেক দিল্লি্তে থেকে দিনরাত শুভ্রর খোঁজ নিয়ে ব্যর্থ
হয়ে বাবার সঙ্গে চলে এসেছিল। ফ্ল্যাটের চাবি এখনও তার কাছে। পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলার ফোন
নাম্বার নিয়ে এসেছিল সে, কিন্তু বছর দুই তাঁরাও আর সেখানে থাকেন না। ফলে ফ্ল্যাটটা বেহাত হয়ে
যাবার একটা আশঙ্কা তার মনে। কিন্তু ফ্ল্যাটের কাগজপত্র বা
দলিলই বা কোথায়,
সে জানে
না। শুভ্র নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে একটা অপরাধবোধ তার মনে কাজ করে। এতটা
উদ্ধত হওয়া তার উচিত ছিল না। হয়ত আরও একটু ধৈর্যশীল হওয়া
উচিত ছিল। সমুর জন্মের আগে এবং পরে শুভ্রর কথা খুব মনে পড়ত। এখনো সারাদিনের শেষে
একবার অন্তত মনে পরে। খুব কষ্ট পায় সে
ভেতরে ভেতরে। বছরে
এক-দু’বার সে দিল্লি যায়। ফ্ল্যাটটা লোক দিয়ে পরিষ্কার করে।
কেঊ এল কিনা খোঁজ-খবর নেয়। এবছর গত ছ-সাতমাসে একবারও
যাওয়া হয়নি। আসলে সমুর পেছনে এত খাটতে হয়, নানা ধরনের থেরাপির কাজ
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দেশে করে এতটাই ব্যস্ত থাকতে হয়, দিল্লি যাবার কথা মনেই আসে না। তবু বাবাকে নিয়ে সে
যাবে ঠিক করে।
দিল্লির ফ্ল্যাটে গেলে শুধু স্মৃতি ভিড় করে আসে।
শুভ্রর ভালোবাসা বা আদরের মধ্যে কোন কপটতা ছিলনা। তার সৌন্দর্যেরও
প্রশংশা করত। নানারকম ব্যায়াম শিখিয়ে দিত। সে নিজেই পার্লারে নিয়ে যেত। জিমে ভরতি হওয়ার কথা বলছিল। কিন্ত সমু পেটে চলে
আসায় সে ভরতি হয়নি। বাইরের খাবার খুব একটা
পছন্দ করত না। নিজেই নানা রকমের রেসিপি শিখিয়ে দিত। রান্নায় সাহায্য করত। কিন্তু সন্ধের পর তার
নিজের কাজ বা মদ্যপানে ডুবে যেত। সেটা ছিল
তার নিজস্ব সময়। কিন্তু এই স্পেসটুকু শ্রীময়ী দিতে রাজি ছিল না। সে চাইত শুভ্র তার
সঙ্গেই সময় কাটাক। মদ্যপ লোককে সে ভয় পেত
এবং ঘৃণা করত। ফলে যা হওয়ার তা ই হল।
একদিন রাতে সমু ঘুমিয়ে পড়লে শ্রীময়ী আয়নার সামনে
দাঁড়ায়। ওর মা-বাবা দোতলার ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। এই নির্জনতায় তার শরীর তার সঙ্গে
কথা বলে। তার বিষাদগ্রস্ত মন তার
সঙ্গে কথা বলে। সে কোন উত্তর দিতে পারে না। সমুর স্পীচ থেরাপিস্ট
প্রসূন রায়ের কথা মনে পড়ে। ওঁর সুন্দর ব্যবহার, খেলোয়াড়-সুলভ চেহারা এবং চোখে
চোখ রেখে কথা বলার ধরনটা মনে পড়ে। ওঁর
চোখের ভাষা কথা বলে। কিন্তু কোন ভাষার উত্তর নেই তার কাছে। উত্তর একটাই লড়াই।
সমুকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লড়াই। রাত প্রায় বারোটায় যখন সে এইসব
ভাবছে,
হঠাৎ
মোবাইল বেজে ওঠে। শ্রীময়ী একটু চমকে যায় এত রাতে কে হতে পারে। ফোন ধরে দেখে
শাশুড়ির নাম্বার।
--হ্যাঁ, মা বলুন। এত রাতে! সব ঠিক আছে
তো?
-- হ্যাঁ, সব ঠিকই আছে। তোমাকে যে খবরটা
দেব বলে এত রাতে ফোন করলাম, সন্ধে সাতটা
নাগাদ কুরিয়ারে একটা বড়ো খাম এসছে। ওপরে তোমার নাম। ঠিকানাটা আমাদের বাড়ির।
আমার উচিত ছিল তোমাকে আরও আগে ফোন করার। কিন্তু শুভ্রর
কাকা-কাকিমা এসছিল বলে একটু ব্যস্ত থাকায় তোমাকে ফোন করা হয়ে ওঠেনি। কাল তো রবিবার। সমুর
কোন ক্লাস নেই। তুমি কি একটু আসতে পারবে?
-- খামটা কোথা থেকে এসেছে, দেখুন না প্লিজ। খুলে দেখুন না কি আছে।
-- খামটা পাঠিয়েছে জে কে পটেল।
দিল্লির ঠিকানা।
--এই নামে আমি তো কাউকে
চিনিনা। আপনি যখন বলছেন, আমি কাল যাব। তবে খুলে দেখুন না, কোন অসুবিধে নেই। আমার
নামে ওখানে কে কি পাঠাবে?
-- সেটাই তো বুঝতে পারছি না।
--মা, আপনি খুলুন। কোন অসুবিধে নেই।
--ঠিক আছে।
ভারী কাগজের বড়ো খাম খুলে সিক্তা দেখেন দু’কোটি
টাকার অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেক। শ্রীময়ী সেন চৌধুরীর
নামে। নামটি হাতের লেখা। নীচে শুভ্রর সই এবং নাম। হাতের লেখা ও নাম দেখে সিক্তা চমকে জান। এ যে শুভ্রর হাতের লেখা ও সই এবং আকাউন্ট নাম্বার।
প্যাকেটের ভেতরে আর কিছুই নেই। সেন্ডারস নেম এর
জায়গায় লেখা জে কে পটেল। অথচ শুভ্রর
দিল্লির ঠিকানা।
সিক্তা সব বুঝতে পারেন। মনের মধ্যে একটা আশার আলো
দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে ছেলের পুরনো নাম্বারে ফোন করেন। কিন্তু ভুল নাম্বারে ডায়েল
করা হয়েছে বলে শোনা যায়। বুকের
ভেতরে
শূন্যতাবোধ আবার ফিরে আসে। ছেলের জন্য কাঁদেন। স্বামী সান্ত্বনা দেন।
ছেলেকে ফোন করার পর খবরটা শ্রীময়ীকে দেন। শ্রীময়ী সব শুনে বলে,
---তার মানে ও আছে। আমি বাবাকে
নিয়ে আবার দিল্লি যাব। ওকে খোঁজব। টাকার চেয়ে আমার যে ওকে ভীষণ
প্রয়োজন। চেকটা আপাতত আপনার কাছেই রাখুন। দিল্লির ঠিকানা যখন দিয়েছে, দেখি ও নিশ্চয়ই ওখানে আছে।
--- আমাদেরও তাই মনে হচ্ছে। আমরাও
দিল্লির আত্মীয়-স্বজন মারফত খোঁজ নেব কাল। ফোনও করব আবার। রাখছি শ্রীময়ী। কাল এসো
কিন্তু।
--আচ্ছা, যাব। সাবধানে থাকবেন।
এই বলে ফোন রেখে শ্রীময়ী শুভ্রর নাম্বারে ফোন
করে। দুটো নাম্বারই ওর মুখস্ত। কিন্তু না কোন কোন উত্তর নেই। সে শুধু শোনে,দিস নাম্বার ডাজ নট
একজিস্ট। ভেতরে তবু একটা আশার আলো নিয়ে সে ঘুমোতে যায়।
পরেরদিন সমুকে নিয়ে গাড়ি করে সকালেই শ্রীময়ী শ্বশুরবাড়ি যায়। শুভ্রর মা বলেন, আমি আমার ভাইপোকে খোঁজ
নিতে বলেছি। ও জে এন ইউ তে পড়াশোনা করে। ও বেরিয়ে পড়েছে। ঘণ্টা খানেকের
মধ্যেই সব কিছু জেনে যাব। শ্রীময়ীর ভেতরটা কেঁপে ওঠে। সত্যিই যদি ওর কোন খবর
পাওয়া যায়,
প্রথমেই
ওর কাছে আগে মাপ চেয়ে নেবে। মনকে আগে ভারমুক্ত করে তারপর কথা বলবে। ছেলের সমস্যার
কথা জানলে আশাকরি ও ফিরবেই।
ও যখন মদ খেত, টাকার কথা বললেই বলত, ডোন্ট ওরি। আজ সে বুঝতে
পারে, সত্যিই টাকার অভাব
নেই। শ্বশুর-শাশুড়ি বলেছেন, এই বাড়ি এবং সমস্ত
ব্যাংক-জমানো টাকা শুভ্র ও তার নামে নমিনি করা আছে। এদিকে বাপের বাড়িতে একতলাটা
মা-বাবা তাকেই দিয়ে যাবে বলেছে। আবার ওর বাবার জমানো টাকারও হিসেব-নিকেশ কিছুটা
তাকে রাখতে হয়। বাবার সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট
রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাংকে। শ্রীময়ীর বোনের সঙ্গেও রয়েছে
একইরককম ব্যবস্থা।
সকাল এগারোটা নাগাদ শাশুড়ির কাছে ওঁর ভাইপো
সাম্যর ফোন আসে। সাম্য জানায় দিল্লির ফ্ল্যাটটা মিস্টার পটেলের কাছে বিক্রি করেছে এক
বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। ঐ সন্ন্যাসীর আসল নাম শুভ্র সেন। এখন কোথায় থাকেন, তিনি জানেন না। মাস খানেক আগে তিনি
এই ফ্ল্যাট কিনেছেন। এটাও জানান তিনি কোন
টাকা কাউকে পাঠাননি।
--শোন, আজ তো রবিবার। তুই কাল সকালে ঐ
এলাকার এস বি আই শাখার অফিসে যা। গিয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারের
সঙ্গে বিস্তারিত জানিয়ে শুভ্রর ঠিকানাটা
জানার চেষ্টা কর। সিক্তা সাম্যকে বলেন।
--- ঠিক আছে, পিসি। এখন রাখছি।
শ্রীময়ী
সব শুনে বলে,শেষে আমার কপালে এই ছিল? শুভ্র সন্ন্যাসী হয়ে
গেল? কী করে পারল?
ছেলে আর
আমার কথা একটুকুও ভাবল না? এই বলে শ্রীময়ী কাঁদে।
সৌমেনবাবু বলেন, কেঁদো না, মা। ভাগ্যের ওপর দোষ
চাপিয়ে লাভ নেই। ইংরেজিতে একটা কথা আছে, ক্যারেকটার ইজ ডেস্টিনি। ভাগ্য অনেকটা আমাদের কৃতকর্মের পরিণতি। তবু
এই ভেবে আমার কিছুটা স্বস্তি, যে শুভ্র যেখানেই থাকুক, যেভাবেই থাকুক, ভালো আছে।এই প্রথম সৌমেনবাবু মুখ খুললেন।
কম কথা বলার এই মানুষটি ছেলে হারানোর যন্ত্রণায় কাতর। শুভ্রর দোষ হয়তো ছিল। কিন্তু তিনি মনে করেন, শ্রীময়ী সমান দায়ী। সিক্তাকে তিনি একথা
বলেনও। কিন্তু এতদিন বউমাকে কিছু বলেননি। এই প্রথম বললেন।
-- মানছি, আপনার ছেলের নিখোঁজ হওয়ার জন্য
আমি দায়ী।আমারই কৃতকর্মের পরিণতি। এই বলে শ্রীময়ী কেঁদে ফেলে। তারপর বলে, তবে এটাকে ভালো থাকা বলে, বাবা? বাস্তবকে এড়িয়ে যাওয়া? সন্তানকে পৃথিবীতে এনে তার দায়
শুধুমাত্র স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া ?
-- তুমি ঠিকই বলেছ মা। তোমার প্রশ্নগুলোর
সঙ্গে আমি একমত। তবে আমার বিশ্বাস শুভ্র ফিরে আসবেই। প্রতিকুল পরিস্থিতি
আন্দাজ করে সিক্তা এই বলে শ্রীময়ীকে আশ্বস্ত করেন। পরেরদিন সাম্য ফোন করে জানায়, ঐ ব্যাংকে শুভ্র সেন
অ্যাকাউন্ট ক্লোজ করে দিয়ে গেছে। ক্লোজ করার আগের
ঠিকানাটাই জে কে পটেল এর ঠিকানা।
মানে দিল্লিতে শুভ্র যেখানে থাকত। এখন কোথায় আছে, তাদের কাছে কোন ইনফরম্যাশন নেই।
কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন