বন্যা ব্যানার্জী ~ সাক্ষাৎকার

 

রংরুট:  আমাদের সমাজ সংসারে মেয়ে হয়ে জন্মানো সত্যিই কি বিড়ম্বনা বলে মনে হয়েছে কখনো জীবনের কোন পর্বে?

 

বন্যা ব্যানার্জী: হ্যাঁ,অনেক সময়ই মনে হয়েছে,জীবনের অনেকটা সময় পেরিয়ে এসেছি, কৈশোরের শুরু থেকেই, আজ পর্যন্ত নানাভাবে বিড়ম্বিত হয়েছি।

 

 

রংরুট: শৈশব কাটিয়ে কৈশরে পৌঁছে ছেলে মেয়েদের চলা ফেরা ওঠা বসার মধ্যে পার্থক্য গুলো প্রাথমিক ভাবে কেমন লাগতো আপনার?

 

বন্যা ব্যানার্জী: ভীষণ ভাবে কষ্ট দিত। আমরা ভাই বোন পিঠোপিঠি, তাই আমাদের বন্ধুরা এক ছিল। কৈশোরে পৌঁছে তাদের আচরণের বৈশিষ্ট্য, ঠাকুমা, জেঠিমা দের সেই বন্ধুত্ব ভাগ করে দেওয়াটাই প্রথম কষ্ট ছিল। ভীষণ ভাবে ছেলে বন্ধুদের মিস করতাম। বুঝতে পারতাম না কি অপরাধ তাদের। তবে আমার বাবা কুসংস্কার মুক্ত যুক্তিবাদী মানুষ ছিলেন। তার উদারতা আমার রক্ষা কবচ ছিল।

 

 

রংরুট: আমাদের বাঙালি সমাজে একেবারে সংসারের ভেতরেই ছেলে মেয়েদের মধ্যে ছোট থেকেই একটা বৈষম্য মূলক আচরণের ধারাবাহিকতা চলে আসছে আবহমান কাল ব্যাপীপরিতাপের কথা, যে মেয়েটি নিজের বাড়িতেই এই বৈষম্যের পরিবেশে বেড়ে ওঠে, সেই কিন্তু গৃহকর্ত্রীরূপে আবার নিজের সংসারেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। এই বিষয়টি আপনাকে কতটা ও কিভাবে নাড়া দেয়?

 

বন্যা ব্যানার্জী: হ্যাঁ, কথাটি খুব  সত্যিই। তবে আগেই বলেছি আমার বাবা ভীষণ ভাবে কুসংস্কার হীন ছিলেন। তাই আমাদের পরিবারে আমি এটা বুঝতে পারিনি। এমন কি আমার মা ও কখনও তাঁর ছেলেমেয়েদের আলাদা ভাবে পরিচর্যা করেন নিযেহেতু আমি কোন বৈষম্য আমার পরিবারে দেখিনি সেহেতু আমার মধ্যে এই সংকীর্ণতা বাসা বাঁধেনি তবে এই বৈষম্য আমি অন্যত্র ভয়ঙ্কর ভাবে দেখেছি, শুধুমাত্র পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে না পারায় আমার এক আত্মীয়াকে তাড়িয়ে দিয়ে তাদের ছেলের আবার বিবাহ দেওয়া হয়েছিল তাঁর যন্ত্রণা আমাকে ভীষন ভাবে কষ্ট দেয়এখন ওএর পাশাপাশি এটাও অনেকের মধ্যে দেখেছি যে কোন বৌমা তার শাশুড়ি মায়ের হাতে নির্যাতিত হয়ে পরবর্তী তে তাঁর বৌমার ওপরে সেই নির্যাতন করে জয়ের আনন্দে তৃপ্তি লাভ করেনএটা কিছুটা মানসিক অসুখ বলে আমার মনে হয়

 

 

রংরুট:  পিতৃতন্ত্রের যে ঘেরাটোপে নারীর জীবন, সেইটি আপনাকে ব্যক্তিগত ভাবে কতটা প্রভাবিত করে?

 

বন্যা ব্যানার্জী: তিহাসক্ষরলোনা যায় আমরা চৌকাঠ টি তে পা রাখতে সক্ষম হয়েছিকিন্তু তা অবলীলায় পেরতে এখনো অনুমতি লাগে একজন পুরুষেরই শুধু বাড়িতেই  নয়, রাস্তা, অফিস, বাস, ট্রেন সর্ব্ত্র মেয়েরা পুরুষের ঘেরাটোপেইতাই আজ ও ভয় মুক্ত হতে না পারায় অসহায়ের মত সেই পুরুষেরই আশ্রয় খুঁজি, মানে চৌকাঠ পেরোতে এদের প্রভাব কাটিয়ে না ওঠাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি

 

 

রংরুট:  নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা যে খুবই জরুরী সে নিয়ে আজ আর বিতর্কের অবকাশ নেই। কিন্তু দুঃখের সাথে লক্ষ করা যায় অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী নারীও সমাজ সংসারে সঅভিভাবকত্ব অর্জনে বাধা প্রাপ্ত হয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি?

 

বন্যা ব্যানার্জী: থাটি০০াগত্যিটািন্তুয়,বে ৭০ ভাগ তো বটেই,এবং  তুলনামূলক ভাবে বেশিযেহেতু সমাজ পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী সেহেতু একজন নারী সংসারের অর্থনৈতিক ভার বইবে, এবং সেই ভার বইলেও তার অভিভাকত্ব থাকবে এমন অনৈতিক কথা শুধু পুরুষ কেন নারী নিজেও বোধহয় মানতে সাহস পাননা, কারণ আমি আমার চাকুরীজীবি বন্ধুদের কাছে শুনেছি মাসের শেষে মাইনেটা তারা হাজব্যান্ডের হাতেই তুলে দেনএটা নাকি পুরুষের সম্মানআমরা নিজেরাও অভিবাকত্ব স্বেচ্ছায় পুরুষের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে ভালোবাসি

 

 

রংরুট:  কথায় বলে সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে। কিন্তু এর পেছনে পুরুষতন্ত্রের কৌশলগত অবস্থানটি সম্বন্ধে সাধারণ ভাবে আমরা কতটা ওয়াকিবহাল?

 

বন্যা ব্যানার্জী: কটুাসিেলোই কারণ এর পেছনে সত্যি একটি কৌশল তো দেখতে পাওয়া যাচ্ছেইসেটি হলো সংসারের গন্ডি মেয়েদের না পেরোতে দেওয়া খুন্তি, হাতা, স্বামী সেবায় বিনা পয়সার একজন কাজের লোকযে সবসময় তঠস্থ হয়ে থাকবে কোথাও কোন ত্রুটি যেন না পাওয়া যায়ভুল থাকলেই রমনীর গুন নষ্ট হয়ে যাবেতবে সময় বদলাচ্ছে হয়তো দ্রুত নয় তবুও আমরা আশাবাদী

 

 

রংরুট:  পেশাগত জগতে একজন নারী কতটা স্বাধীন আর কতটা পরিস্থিতির শিকার, সেটা নারীর ব্যক্তিত্বের উপর কতটা নির্ভর করে, আর কর্মজগতের বাস্তব অবকাঠামোর উপর কতটা নির্ভর করে?

 

বন্যা ব্যানার্জী: যদিওমিাকুরীজীবি নই, তবুীবনেরভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি প্রথম কথা তোএকজন নারী যোগ্যতা থাকা সত্বেও স্বনির্ভর হবেন কি না তা ঠিক করে দেন বাড়ির অভিভাবক (বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই) অর্থাৎ একজন পুরুষকিন্তু সংসারের দু:সময়ে নারীকেই হাল ধরতে হয়পুরুষশাসিত সমাজে পরিস্থিতির শিকার তো সর্বত্র  হতে হয়, কাজের জায়গা তেওমনের দৃঢ়তা অনেকটা সামাল দেয় বটে, কিন্তু নারী দূর্বল মায়ায়‌ অনেক সময়‌ অপমানিত হয়েও তাকে কাজের জায়গা আঁকরে থাকতে হয় পরিবারের কথা ভেবে এক্ষেত্রে সে অসহায়

 

 

রংরুট:  এই প্রসঙ্গে আমাদের সমাজ বাস্তবতায় লিঙ্গ বৈষম্যের বিষয়টি একজন সমাজ সচেতন মানুষ হিসাবে আপনাকে কতটা বিচলিত করে। সেই বিচলনের রূপ ও বিকাশ সম্বন্ধে যদি আমাদের অবহিত করেন!

 

বন্যা ব্যানার্জী: িঙ্গৈষম্যই তো মূল ব্যাধিএই বৈষম্য যতদিন থাকবে আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ, কিছুতেই উন্নতির শিখরে পৌঁছবে না

 

 

রংরুট:  বর্তমান সমাজে নারী নির্যাতনের বিষয়টি কি রাষ্ট্র ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলে মনে হয় আপনার? সামাজিক ভাবে আমাদের ভূমিকাই বা কি হওয়া উচিত এই বিষয়ে?

 

বন্যা ব্যানার্জী: আমাদেরায়নেক্রত্যেকমস্যারমাধানেচেতনতেবেচেতনতেবেকেবারেন্তানন্মানোরেকেইারানসিকিকড়েোলার্যাপারেপুত্র বা কন্যা সন্তানে কোনরকম বৈষম্য না রাখা বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়ার সাথে সেক্সুয়াল পাঠের ও প্রয়োজনগোপনীয়তা,নিষিদ্ধতাই কিন্তু মানুষ কে হাতছানি দেয়আর অজ্ঞ মানুষই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধের দিকে পা বাড়ায়

 

 

রংরুট:  বাড়ির বাইরে মেয়েদের সুরক্ষার বিষয়টি আজও কেন এত অবহেলিত! কি মনে হয় আপনার? দেশের প্রশাসনের শীর্ষপদে মহিলারা নেতৃত্ব দিলেও অবস্থার উন্নতি হয় না কেন? গলদটা রয়ে যাচ্ছে কোথায়?

 

বন্যা ব্যানার্জী: গেইললামলদোড়াতেইপুরুষতন্র, ৈষম্যেয়েদেরোগ্যতারর্যাদােওয়া, েক্সয়ুল্যাপারের্দাানা, েয়েদেরম্মান হানির ভয়ে অপরাধ কে গোপন করা এই সবকিছুই কিন্তু আমাদের গলদ

 

 

রংরুট:  আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালন আর সারা বছর নারী নির্যাতনের ধারাবাহিত ব্রেকিং নিউজ, এর মধ্যে সমন্বয় হবে কি করে? মেয়েদের এই বিষয়ে কি কর্তব্য আপনার মতে?

 

বন্যা ব্যানার্জী: ড়ঠিনিষয়আড়ম্বররেেবলমাত্রারীিবসালনরলেইমস্যািটোবোরীর শিক্ষা,সচেতনতা, স্বনির্ভরতা সব কিছুই আমাদের দায়িত্বনারী নির্যাতিত হয় বিভিন্ন‌ ভাবেএবং এ কথাও মিথ্যে নয় এই ব্যাপারে তার নিজের দায়িত্ব ও অনেকপ্রথম দিকেই যেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে সংসারে একটি নির্যাতিতা নারী একই ভাবে তার পরবর্তী জেনারেশনের নারী কে নির্যাতন করেসে মনে করে এটি তার অধিকার ভুক্তএই মানসিকতার পরিবর্তন ভীষন ভাবে দরকারপ্রতিটি সংসারকে দায়িত্ব নিতে হবে পরিবারে যেন লিঙ্গ বৈষম্য না হয়সুস্থ মানসিকতাই পারে শুধু একটি দিনের আড়ম্বর  প্রতিটি দিনের সম্মান হয়ে উঠতেদায়িত্ব আমাদের

 

 

রংরুট:  সমাজে নারীর সম্মান প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনো দেশ জাতি সমাজ উন্নত হতে পারে না। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

 

বন্যা ব্যানার্জী:  থার্থ যদিও আশা, স্বপ্ন এইগুলো  হারালে কিছুই অবশিষ্ট থাকেনাবর্তমানে যে সংকটের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটছি, প্রতিদিনের খবরে যেভাবে বিভিন্ন দিক থেকে নারী নির্যাতিত হচ্ছে তাতে আলোর রোশনি বহুদূরতবুও সবাই মিলে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে এই সংকট কাল নিশ্চয়ই‌ পেরিয়ে যাবো

 

ন্যা্যানার্জীৃহবধূ র্তমান নিবাস- ান্তিপুর,দীয়ােলা িক্ষা-াওড়ারসিংহত্তলেজেকে (াংলা) ্নাতকালোলাগা-বই পড়া, বিতা, ল্প লেখা। অহংকার-ারীন্মে  ্বপ্ন কুসংস্কারুক্ত,শিক্ষিত সমাজ ও দেশের আশাবাদী- প্রদীপের নীচে থাক আঁধার একাকী আলোর পরিধী দেখো দিগন্ত ব্যাপী

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন