অলভ্য ঘোষ : সাধারণের রবীন্দ্রনাথ




সাধারণের রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ দেখিতেছি কোটেশনে মুখ রগড়াইতেছেন তিনি মানুষ হইতে চাহিয়াছিলেন,  আমরা তাহাকে ঠাকুর বানাইয়া ছাড়িয়াছিএখন কাকে তাহার মাথায় পটি করিতেছেঠাকুরের গায়ে কুকুর ঠেং তুলিয়া যা করারকরিয়া চলিয়াছে। প্রতি মোড়ের মাথায় রিকশা স্ট্যান্ডের  গায়ে  আমাশাক্রান্ত বাঙালি যেমন কপালে হাত ঠুকিয়া শনি দেবতাকে বলিতেছে দুঃসময়টা পার করিও হে ঠাকুর, তেমনি মূর্তি গড়িয়াছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। বাঙালির হাঁচিতে-কাসিতে-বিবাহে-শ্রাদ্ধে তাহাকে টানিয়া স্বর্গ হইতে নামাইতেছেচুরি হইলেও তিনি আমাদের নোবেল ঠাকুর। আমরা তাহাকে মাদুলির ন্যায় ধারণ করিয়াছিতবে সবুজ উদ্ভিদের ন্যায় রবির কিরণে সালোকসংশ্লেষ আত্তীকরণ করিতে পারিলে ভাল হইতোক্লোরোফিলের মতো আমাদেরও কোনো সজীব সজীবতার জন্ম হইয়া উঠুক

বাজারে নতুন বৌঠানের (কাদম্বরী দেবী) সহিত রবির প্রেমের বেশ মার্কেট ভ্যালু আছে কাব্যকাহিনি লেখা চলে রবীন্দ্রনাথকে পুঁজি করিয়া কিছু লোক ভাঙ্গাইয়া খাইতেছেন তার প্রেমে পড়া কবিতাগুলো আমাদের প্রেমের লাইফলাইন হইয়াছে রবীন্দ্রসঙ্গীত  ও রবীন্দ্রনাথ বারোয়ারির মণ্ডপে লোক দেখানো ফ্যাশনে দাঁড়াইয়াছে অথচ তাহার গভীর নিগূঢ় দর্শন কেবল শান্তিনিকেতনি একটি বিশেষ নারীসুলভ প্যাটেন্ট ভঙ্গিতে আটকাইয়া রহিল পৌরষদীপ্ত হইলো না বাংলা ভাষা ও বাঙালি আর সোজা হইয়া দাঁড়াইতে পারে না এঙ্কাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিসে (Ankylosing spondylitis) ভুগে রবীন্দ্রনাথকে ট্যাগ(বস্তাপচা উদ্ধৃতি,  বাঁধা বুলি) করিয়া চলিতেছে “মানুষের ইতিহাসটাই এই রকম তাকে দেখে মনে হয় ধারাবাহিক কিন্তু আসলে সে আকস্মিকের মালা গাঁথা সৃষ্টির গতি চলে সেই আকস্মিকের ধাক্কায় দমকে দমকে যুগের পর যুগ এগিয়ে যায় ঝাঁপতালের লয়”(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর:  শেষের কবিতা)

যাহারা গানে কবিতায় রবীন্দ্রনাথকে নিজের মতো করিয়া পরিবেশন করার কিঞ্চিৎ চেষ্টা করিয়াছিলেন, তাহাদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়িতে হইয়াছে কেনই বা হইবে না?  রবীন্দ্রনাথ যে কিছু লোকের বাপকেলে সম্পত্তি হইয়া উঠিয়াছিল বিপণি ব্যবস্থায় মাটিতে বসিয়া হাত জড়ো করিয়া গুরু প্রণাম নিবেদনের পর আমরা যে বিশেষ রাবীন্দ্রিক উচ্চারণ ও ভঙ্গিমায় গান গাহিতে ও শুনিতে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছি তাহার অনর্থ হইলে আর রক্ষে থাকিত না একদল রবীন্দ্র অনুরাগী রেরে করিয়া উঠিতেন১৯৫১ সালের ভারতের কপিরাইট আইন অনুসারে,  ২০০১ সাল পর্যন্ত ভারতে রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত করতে হইলে বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতির অনুমোদন প্রয়োজন হইতো ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি দেবব্রত বিশ্বাসের ‘তুমি রবে নীরবে’ গানটি প্রকাশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করিলে,  দেবব্রত বিশ্বাস রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় প্রকাশিত স্বরলিপি দেখাইয়া গীতবিতান-এ গানের পাঠের ভুল নির্দেশ করিয়াছিলেন রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎশিষ্য শান্তিদেব ঘোষ এই ব্যাপারে দেবব্রত বিশ্বাসের দেওয়া তথ্য সমর্থন করিলে বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি গানটি প্রকাশের অনুমতি দেয় ১৯৬৪ সালে দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া ‘মেঘ বলেছে,  যাব যাব’ ও ‘এসেছিলে তবু আস নাই’ গান দুটি প্রকাশের অনুমতি দিতে বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি অস্বীকার করে ১৯৬৯ সালে তাঁর ‘পুষ্প দিয়ে মারো যারে’ ও ‘তোমার শেষের গানের’ গানদু-টির প্রকাশের অনুমতি বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি দেয় নাই বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি দেবব্রত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গানে অতিনাটকীয়তা,  অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারের অভিযোগ আনিয়াছিল ১৯৭০-৭১ সালে দেবব্রত বিশ্বাস বেশ কিছু গান রেকর্ড করেন কিন্তু তার কয়েকটিকে বিশ্বভারতী পুনরায় অনুমোদন দিতে অসম্মত হন বিরক্ত হয়ে দেবব্রত বিশ্বাস স্থির করেন তিনি আর রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ড করিবেন না বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র অবশ্য লিখিয়াছেন যে,  দেবব্রত বিশ্বাসের কোনো গান বিশ্বভারতী সঙ্গীত সমিতি বাতিল করে নাই ঈশ্বরী জানেন জল কতটা ঘোলা হইয়াছিল

বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুবিনয় রায় বলিয়া ছিলেন;  কবির জীবদ্দশায় তৎকালীন গুটিকয়েক ‘ওস্তাদীভাবাপন্ন’ গুণীজন তাঁর সামনেইতাঁর গান গাহিবার সময় অল্পস্বল্প আলাপ বিস্তারের ব্যবহার করতেন তাতে বাহ্যিকভাবে হয়তো তিনি কখনো আপত্তি প্রকাশ করতেন না শোনা যায় হিন্দিভাঙা গান সম্পর্কে গায়কের সুরুচি অনুসারে সংযত ও সংক্ষিপ্ত আলাপ বা বিস্তার তিনি কোনো কোনো সময় অনুমোদনও করেছেন কিন্তু সধারণভাবে বলতে গেলে এইসব বাহাদুরি তিনি কখনোই সমর্থন করতেন না

রবীন্দ্রনাথের যেকোনো পর্যায়ের গান রচনা নৈপুন্যে,  কথা সুরের সমন্বয়ে কাব্যমাধুর্যেও ভাবগভীরতায় এতই সমৃদ্ধ ও এতই সম্পূর্ণ যে,  এর মধ্যে আলাপ-বিস্তার তানকর্তব্যের অবতারণা নিতান্তই অপ্রাসঙ্গিক ও নিছক বাহুল্য বলিয়া মনে করেন সুবিনয় রায়
ফিউশন না কি কনফিউশন আজও রবীন্দ্রসঙ্গীতের রিমেক লইয়া দুই বাংলাতেই এই বিতর্ক চলমান রহিয়াছে

যেমন চণ্ডীপাঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর একটি বহুল প্রচলিত প্রকাশভঙ্গি কিংবদন্তী হইয়া উঠিয়াছে(আগে ভাষ্য অংশ পাঠ করা হতো স্বাভাবিক কথ্যভঙ্গিতে সুরে নয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তাঁর নিজস্ব ধারায় চণ্ডীপাঠ করছিলেন সুরেলা কণ্ঠে) তেমনি রবীন্দ্রসঙ্গীত একটি বিশেষ ভঙ্গি ভাবধারা অব্যাহত রাখিয়া চলিতে হইবে এমনটাই আরোপিত হইয়া বসিয়াছে না হইলেই অরাবীন্দ্রিক

উল্লেখ্য,  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই ছিলেন সমসাময়িক যুগের একজন বিশিষ্ট গায়ক স্বামী বিবেকানন্দ নিয়মিত জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে যাতায়াত করিতেন এবং সেখানে একাধিক রবীন্দ্রসঙ্গীত শিখিয়া নানা পারিবারিক অনুষ্ঠানে,  ব্রাহ্মসমাজের উৎসবে,  এমনকি দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়িতে রামকৃষ্ণ পরমহংসের সামনেও তা পরিবেশন করিয়াছিলেন ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার প্রথাও তাঁর সমসাময়িককালেই শুরু হইয়াছিল দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর,  সাহানা দেবী,  ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী, শান্তিদেব ঘোষ প্রমুখ রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ শিষ্যেরা ছাড়াও,  পঙ্কজকুমার মল্লিক,  কুন্দনলাল সায়গল, কানন দেবী প্রমুখ শিল্পীরা রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই রবীন্দ্রসঙ্গীতকে জনপ্রিয় করিয়া তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করিয়াছিলেন পরবর্তীকালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়,  সুচিত্রা মিত্র,  হেমন্ত মুখোপাধ্যায়,  দেবব্রত বিশ্বাস,  সুবিনয় রায়,  চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়,  সাগর সেন,  ঋতু গুহ,  গীতা ঘটক প্রমুখ রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছেন তাঁহাদের অনুপ্রেরণায় লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে,  কিশোর কুমার প্রমুখ বিশিষ্ট বলিউড-শিল্পীরাও রবীন্দ্রসঙ্গীত গাহিয়া ধন্য হইয়াছেনবাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্রের গানসহ অন্যান্য ধারার সঙ্গীত শিল্পীরাও রবীন্দ্রসঙ্গীত আজো গাহিয়া চলিয়াছেন পূর্ব পাকিস্তানের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ওয়াহিদুল হক,  কলিম শরাফি,  সনজীদা খাতুন প্রমুখ শিল্পীরা বাংলাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে বিশেষ জনপ্রিয় করে তুলিতে বিশেষ ভূমিকা লইয়াছেন বর্তমানে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা,  অদিতি মহসিন,  মিতা হক, পাপিয়া সারোয়ার সাদী মহম্মদ প্রমুখ বাংলাদেশি শিল্পীরা এবং মনোজ মুরলী নায়ার,  মণীষা মুরলী নায়ার,  মোহন সিং,  বিক্রম সিং,  স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত,  লোপামুদ্রা মিত্র,  শ্রাবণী সেন,  শ্রীকান্ত আচার্য, পীযূষকান্তি সরকার প্রমুখ ভারতীয় শিল্পীরা রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করিয়াছেনবাবুল সুপ্রিয়,  শান,  কুমার শানু,  অলকা ইয়াগনিক,  সাধনা সরগম,  কবিতা কৃষ্ণমূর্তি প্রমুখ বলিউড-শিল্পীরাও এখন নিয়মিত রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংকলন প্রকাশ করিয়া চলেন এমত অবস্থায় রবীন্দ্রসঙ্গীত যে তাহার আবহমান ধারা অব্যাহত রাখিতে পারিবে,  তাহা আর জোর দিয়ে বলা যাইতেছে না শিল্পের ধর্মই তো সৃজন সংমিশ্রণ বির্বতন এতো হইবেই সংরক্ষণশীলদের কৌলীন্য খোয়া যাইবেই এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই তবে উচ্চকটির রবীন্দ্রপ্রীতি যত পথপ্রান্তে নামিয়া আসিবে রবীন্দ্রনাথ ততই সাধারণের হইয়া উঠিবেন আশাকরা যায় নিজ সাহিত্যকর্ম নিয়ে তাই তিনি বলেছিলেন,  জীবনের আশি বছর অবধি চাষ করেছি অনেক সব ফসলই যে মরাইতে জমা হবে তা বলতে পারি না কিছু ইঁদুরে খাবে,  তবু বাকি থাকবে কিছু জোর করে বলা যায় না,  যুগ বদলায়,  তার সঙ্গে তো সবকিছু বদলায়তবে সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান,  এটা জোর করে বলতে পারি বিশেষ করে বাঙালীরা,  শোকে দুঃখে সুখে আনন্দে আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই যুগে যুগে এ গান তাদের গাইতেই হবে

রবীন্দ্রনাথ;  ঠাকুর হইতে চাহে নাই আমরা তাহাকে ঠাকুর বানাইয়া ছাড়িয়াছি আপনায় স্থাপিয়াছ, জগতের দেবতারে নহে কবি গুরুর পাশে আপনার ছবি সাঁটিয়া যাহারা লিখিয়া রাখিয়াছে লহ প্রণাম তাহারা কি একথা জানেন?  তাহারাও কি একথা জানেন,  যাহারা কোনো এক ভিক্ষুকের মুখে রক্তকরবীকে অক্তকবরি শুনিয়া নাক সিটকাইয়া ওঠেন পঁচিশে বৈশাখে মেলচ্ছের মুখে রবীন্দ্রনাথ শুনিয়া যারা জাত গেল ভাব প্রকাশ করেন,  তাহারাও রবীন্দ্রনাথকে কতটুকু বোঝেন?  চৌমাথার মোড়ে প্রত্যেক ক্রসিংয়ে কর্কশ যান্ত্রিক বাদ্যযন্ত্রের সহিত রবীন্দ্রনাথ মিলাইয়া যাইতেছেনশান্তিনিকেতন আজ চরস সেবনের আড্ডা হইয়া উঠিয়াছে এমন রবীন্দ্রপ্রীতি দেখিয়া স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ আর মর্ত্যলোকে ফিরিয়া আসিবেন বলে মনে হয় না সোনার তরীরে কাঁধে করিয়া বহন করিয়া চলিলাম বাহন করিতে পারিলাম না

ক্ষমা করিবেন রবীন্দ্রনাথ;  এইবার জন্মাইলে দয়া করিয়া আর কবিতা লিখিবেন নাগান গাহিবেন নাআপনি রাখাল হইতে চাহিলে আমরা বুঝিব কৃষ্ণ কানাই আপনি ভিক্ষুক হইতে চাহিলে আমরা বলিব হরিশচন্দ্র! আপনার আমরা মূর্ত গড়িব;  মুরোতি ধরিব না


(গান)
28.11.2012
পাড়ায় পাড়ায় গজানো গানের স্কুল বছরে একবার নজরুল ;  
বাকি দিন গুলো হিন্দি গান ঘরে ঘরে চাষ হয় প্রতিভাবান
পঁচিশ বৈশাখ ছুটি-দেবে দিদি ;  শাহরুখ , অমিতাভ নে কত ক্ষীর খাবি !  
মরছে নজরুল রবীন্দ্রনাথ নাচছে বেহায়া সংস্কৃতি !
চ্যানেলে চ্যানেলে খেমটা নাচে বাংলা ও বাঙালির একি দুর্গতি  
সিরিয়াল গুলো সব নেকা পরকীয়া জীবনের কথা যায় শুধু হোরকিয়া
সুমন ,  নচির পরে বাংলা গানে ইদানিং দেখে শুনে তালা লাগে কানে
বাংলা ছবিতে নেই জীবন দলিল হিন্দি , তামিল ছবির শুধুই ফসিল  
সত্যজিৎ আর মৃণাল সেন ঋত্বিক ঘটকেরা কোথায় গেলেন  
বাংলা ছবিতে আজ খিস্তি খেউর বার্লিন , কান আজ বহু বহু দূর  
বাংলা ভাষায় লিখলে পরে না খেয়ে মরবে সপরিবারে  
তার চেয়ে ঢের ভালো ইংরেজি শেখা হিন্দি রাষ্ট্রভাষা এটা মনে রাখা  
কলকাতা কলকাতা বাঙ্গালী কজন ;  সুন্দর বনে পাবে ডজন ডজন  
এর পর বাঘেরাও জমি কেড়ে নিলে বঙ্গপ সাগর আছে বুক মেলে
যতই ভাংরা-নাচ ;  ফ্লাইন কিস খাও ইউনি সেক্স পোশাকে ডিস্কোতে যাও !  
মনে রেখ ভিত ছাড়া ধসে পড়ে বাড়ি অপসংস্কৃতি এক দুরারোগ্য বিমারি !

আমার রবীন্দ্রনাথ;  রবীন্দ্রনাথের লেখা আমায় খুব কম টানে;  ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ টানে বেশি তিনি যে রবীন্দ্রনাথ নোবেল পাবার অনেক আগেই বুঝেছিলেন নিজেকে পাশ্চাত্যের দেবতা তার অর্ঘ্য গ্রহণ করার পর দেশের লোকের তাকে নিয়ে হুড়োহুড়ি, পাজাপাজি পড়ে গেলো এই আমার দেশ সাদা দের এঁটো প্রসাদ ভালোবাসে! তার দর্শন কে নয়;  রবীন্দ্রনাথ কে নয়; ভালবাসে তার নোবেল জয় অথচ রবীন্দ্রনাথ নিজেকে উজাড় করে বাংলা সাহিত্যকেই দিতে চেয়েছেনরবীন্দ্রনাথের মত বড় প্রেমিক আমি আজ অবধি দেখিনি এই উপমহাদেশে প্রেমের চেহারা কেমন হওয়া উচিত বলতে আমি রবীন্দ্রনাথকে বুঝি 'কবিরে পাবে না তাঁহার জীবনচরিতে' সম্পূর্ণ মিথ্যে লিখেছেন;  তার প্রেম তিনি নিকড়ে এক এক বিন্দুতে কাব্য করেছেন পাবলো পিকাসোর মত তিনি নরী কে সম্বল করে যৌনতাকে তার শিল্পের উদ্দীপনা না করলেও বিভিন্ন বয়সে বারবার তিনি প্রেমে পড়েছেন আর এই প্রেমকে ছিবড়ে করে; প্রকৃতির নিসর্গ তার সাথে মিশিয়ে পেয়েছেন তার শিল্পের কাঁচামাল রবীন্দ্রনাথের প্রেম যতোটা না শরীরী তার অনেক অনেক বেশি আধ্যাত্মিক কামনাকে নিম্নগামী নাকরে ঊর্ধ্বলোকে চালিতে করে মহিমা প্রদান;  এ একান্ত রবীন্দ্রনাথ পেরে ছিলেন; এ ব্যাপারে তিনি যেমন কোমল তেমনি কঠিন সে নদীর প্রেমিকফল্গু ধারায় বয়ে চলা নদী প্লাবিত করেছে তার কূল উর্বরতার কাজে লাগিয়েছে বাঁধ দিয়ে যত টুকু জল তার চাই বাকিটুকু ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেএই যে নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ শুদ্ধ সুরের ভেতর একটা নিষ্ঠুর কোমল নি; অত্যন্ত dominant ভাবে এটা আমাকে আকর্ষণ করে রবীন্দ্রনাথের ভেতর বাস্তবতা থেকে আরো কিছুটা ওপরে উঠে চিরন্তন সত্য খুঁজিবাকিটা নেকা লাগে মেকি লাগেশেষের কবিতার অন্তমিল মিতা র সাথে মিতালি রবীন্দ্রনাথ আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় বাস্তবতার ঊর্ধ্বে উঠতে কুৎসিতের মধ্যে ই সুন্দর কে অনুসন্ধানের চিরন্তন সত্য কে আবিষ্কারেরশেষের দিকের কিছু উপন্যাস ও কবিতা ছাড়া; রবীন্দ্রসাহিত্যের সবটাই সুন্দরের পুজো! আমি রূঢ় বাস্তবতার ভেতর থেকে সুন্দরে উত্তীর্ণ হতে চাই!  তার উজ্জ্বল প্রমাণ আমার গল্পে এক বেশ্যা ঈশ্বর খোঁজেআর তা সে পায় তার খরিদদারের ভেতরেই আমার সাহিত্য করার উদ্দেশ্য আস্তাকুড়ে অমূল্য রতন খোঁজাসিন্দুকে নয় সব পরিপাটি সুন্দর পৃথিবীতে অসুন্দর কিছু নেই এটা মনে হয় চোখ বুজে নেওয়া, পাশ কাটিয়ে চলা, সমস্যা, অক্ষমতা থেকে!  পালিয়ে না গিয়ে যুঝতে চেষ্টা শুরু করি কবরস্থানে গড়ার চেষ্টা করি সুন্দর উদ্যানআমি ডাস্টবিন ঘেঁটে কিংবা কয়লা খনিতে নিরন্তর খনন করে অমূল্য রতন খুঁজছি ধর্মে যখন সুন্দরের পুজো হয় আস্তাকুড়ের মানুষদের ভুলে ; পাথরের দেবতাকে দুধ,  ঘি,  ফল মূল দেয়া হয়; অথচ দু ফোটা দুধের জন্য মানব শিশু মারা যায় পৃথিবীতে একটু খাবারের জন্য মা বেচে শরীর কিংবা নিজের সন্তান কে;  তখন সুন্দরের ধর্মকে আমার ধর্ম বলেই মনে হয় না মনে হয় বিকৃতিধর্ম তখন পেটের খিদেসব হারিয়ে মা যখন অনুশোচনায় কাঁদে সেখানে আমার রবীন্দ্রনাথ কে আমি খুঁজে পাই তার আগে নয় রবীন্দ্রনাথের সাথে অমিল আমার শরীরে;  মিল আত্মায় অসহায় মায়ের চোখের জলের মতো আমাকেও বাস্তবতার শেষে ফিরে যেতে হয় সুন্দরের কাছে আশ্রয় নিতে হয় চিরন্তন সত্যের কোলেবিশ্রামে!

কাদম্বরীর প্রতি রবীন্দ্রনাথ
তুমি রবে বক্ষ-মাঝে মোর প্রাণের দেবী তুমি যে 
লহো তোমার স্থান 
তব বিগ্রহে এ দেহ মন্দিরে পূর্ণতা কর দান 
এতদিন শুধু শূন্যে পূজেছি ;  
শূন্যে তোমাকে খুঁজেছি!  
বেদীটার পরে যাকে অলক্ষ্যে রেখেছি গড়ে ;  
সে কি জানে না গো আমি ভালবাসি কাহারে 
অশ্রুজলে পূজেছি তোমারে ;  আমি তব ভাবে দিক শূন্য
তুমি সেরা ধন অমূল্য রতন;  তোমারে পেয়ে এ জীবন ধন্য
ভালবাসা পেলে সব অবহেলে বেঁচে থাকে শুধু ছন্দ
কি আছে দামি জানে ভূস্বামী হইলে কেবল অন্ধ!  

শিল্পী বিশেষত পুরুষ শিল্পীদের কথাই বলছি প্রকৃতির সাথে সম্পৃক্ত না হতে পারলে তার শিল্প সত্তার খোলতাই হয় নাপ্রকৃতি (ইংরেজি :  Nature) বলতে এই পৃথিবী তথা সমগ্র সৃষ্টিকে নির্দেশ করেবৈষ্ণব পদাবলীতে প্রকৃতি আর এক নামে পরিচিত হয়ে ওঠে নারীভূ প্রকৃতি এত দূর ঠিক আছে; যেমন রবীন্দ্রনাথ; নারী প্রকৃতি থেকে ভূ প্রকৃতি তে স্থির হয়েছেননাহলেত বুড়ো বয়সেও সে প্রেমে পড়ছেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর!  হাঁটুর বয়সী সেই মেয়েটিকে নিয়ে এমন সব কবিতা লিখে ফেলেছেন যে লেখাগুলো ফেয়ার করে পত্রপত্রিকায় পাঠানোর জন্য ছেলের বৌ বা তার বৌমার কাছে দেশে পাঠাতেও তার দ্বিধা হচ্ছেTHINKING OF HIM ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো ও রবীন্দ্রনাথ এর প্রেম কাহিনী নিয়ে সিনেমা করেছেন আর্জেন্টিনার চলচ্চিত্র পরিচালক পাবেলো সিজার  আমাদের দেশে যত রাধা কৃষ্ণ পুজো হোক না কেনো এধরনের সম্পর্ক ঘটলেই মানুষ ছি:  ছি:  করবেতাইত দ্বিধা! রবীন্দ্রনাথ তাই নারী প্রকৃতি থেকে মন সরিয়ে ভূ প্রকৃতিতে নিজের মন বেঁধে ছিলেন তাই রেহাই না হলে লোকে চরিত্রহীন বলবেরামকিঙ্কর, রবি শংকর কিংবা রাজা রবি বর্মা এরা কিন্তু পারেননি রবীন্দ্রনাথের মত নিজেকে এতটা শিষ্ট করেনিতে নারী প্রকৃতির কাছে বার বার তাদের ফিরে যেতে হয়েছে সেখানেই শিল্পের উদ্দীপনা পেয়েছেনযথারীতি সমাজ তাদের শিল্পের কদর করলেও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ছ্যাঃ ছ্যাঃ করতে ছাড়েনিরামকিঙ্কর এক স্টেশনে এক সাঁওতাল রমণীকে দেখে আকৃষ্ট হয়ে রেল থেকে নেমে পড়লেন তার পেছনে হাঁটতে শুরু করলেনছয় মাস নিরুদ্দেশতার ভাষায় যাকে সে ধরে ছিবড়ে না করে ছাড়ে নাতাকে মডেল করে আঁকলো অনেক ছবি একুশ বছর বয়েসে রবিশঙ্কর তাঁর গুরু (যাঁকে তিনি বাবা বলে ডাকতেন) আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিয়ে করেন এই বিয়েতে তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শঙ্করের জন্ম হয় কিন্তু এই বিয়ে বিচ্ছেদে শেষ হয়পরবর্তীতে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যু জোন্স এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন এই সম্পর্ক একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে নোরা জোন্স - রবি শঙ্করের এই মেয়ে একজন প্রথিতযশা জ্যাজ,  পপ, আধ্যাত্মিক এবং পাশ্চাত্য লোক সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার নোরা জোন্স ২০০৩ ও ২০০৫ সালে দশটি গ্র্যামি এওয়ার্ড পেয়েছেন পরবর্তীতে রবি-শঙ্কর তার গুণগ্রাহী ও অনুরক্তা সুকন্যা কৈতানকে বিয়ে করেন এই বিয়েতে তাঁর দ্বিতীয় কন্যা অণুশকা শঙ্করের জন্ম হয় বাবার কাছে শিক্ষা নিয়ে অণুশকা শঙ্কর এখন নিজেও সেতার বাজিয়ে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাজা রবি বর্মা একদা এক মন্দিরে এক সুন্দরী মহিলাকে দেখে পিছু-নিলেনগিয়ে উঠলেন বেশ্যা লয়েতিনি সেই মহিলার ছবি আঁকতে চান মহিলা-তো নারাজতিনি তাকে বোঝালেন তোমার রূপ তো চিরস্থায়ী নয় নষ্ট হয়ে যাবেকিন্তু তার ছবি আঁকা হলে সে রূপ ধরা-থাকবে ছবির ভেতরতাই হলসেই বেশ্যাকে নিয়ে আঁকা রাজা রবি বর্মার সরস্বতী ঠাকুরের ছবিটি আজ অমর হয়ে রয়েছে

রবীন্দ্রনাথ অকপটে স্বীকার করেছিলেন তিনি ইংরেজি টা ভালো জানে না;  ইংরেজিতে দক্ষ নয়আমাদের তো মাথা কাটা যাবে এ কথা বলতেমান সম্মান সব যাবেবাংলা জানি না ঠিক আছে; ইংরেজি না জানলে স্ট্যাটাস থাকেসাহিত্য চর্চাতো দূর বিদেশে গিয়ে চায়ের টেবিলে রবীন্দ্রনাথ ইংরেজিতে চিরকুট লিখতেও সংশয় প্রকাশ করেছেন৬০ ঊর্ধ্বে কবি খেলার ছলে অনুবাদ সাহিত্য চর্চা শুরু করেছিলেনতার জীবনে নিত্য নতুন খেলায় মাতোয়ারা থাকতেন তিনিতি-নিতো আমাদের মতন না যে কোন খেলায় হাতপা ভাঙবে না অথচ প্রাইজ মিলবে খুঁজে বেড়াবেছেলে কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে বিদেশে যাবে তার দেখাশোনা করতে সাথে গেছিলেন কবিএরই মধ্যে শোনা যায় তার পাণ্ডুলিপি খোওয়াও গিয়েছিলখোয়া যাওয়া পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেলো এবং তা পড়ে ইউরোপের গুনি-মহল বাহবা দিল কবিকেতা ছাপা হলও গীতাঞ্জলী নামেকবির তখন জয়জয়কারতখন তার ৬২ বছর বয়স কবি লনে পায়চারী করছেন টেলিগ্রাম নিয়ে এলেন এক বিদেশীবিদেশী ভাবলেন খবরটি পেলে কবি আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠবেনখবর তাকে দিলেন ভদ্রলোক; কবি আপনাকে আপনার গীতাঞ্জলী কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল প্রাইজ দেওয়া হবেকবি ভাবলেশহীন ভাবে বললেন যাক শান্তিনিকেতনের পায়খানা বাথরুম তৈরির পয়সাটা ঈশ্বর জোগাড় করে দিলেনআমরা হলে তো হার্ট ফেল করতামফেসবুকের কোনও গ্রুপে কবি বলে সনদ টনোদ দিলেই বাড়িতে পার্টি দিয়েদিইসনদপত্র বাড়িতে বাঁধিয়ে রাখিআর নোবেল বাপরে বাপ ভাবতেই পারছিনা কি করবোএক বছর পার্টি দেবো ঢেঁড়া পিটবো এই দেখো আমি নোবেল জয়ীআর এই জন্যই আমরা পাবো না.....আমরা পাবার জন্য আয়োজন করি আর সত্যিকারের পুরস্কার কোনো আয়োজন থেকে আসে না;  এ এক আয়োজন রহিত অনাড়ম্বর জীবন;  সৃজন করিয়ে নেয় জীবনের মোক্ষ শান্তির বাণী.....

বঙ্গরঙ্গ

রবীন্দ্রনাথ বলল আমায় ডেকে এইযে যারা আমায় নিয়ে নেকামি করছে এদিকে ওদিকে কিচ্ছু টি বোঝে না আমায় আসল জীবনের স্বাদ তারা কোনদিনও পায়নি আমি বললাম ;  গুরু ক্ষমা-করেন প্রশ্ন-আছে একখান!  চারি দিকে রেপ ধর্ষণ খুন খুনি হিংসা মহামারি তারি মাঝে শহরের এককোণে গুটিকয় লোক আর হারমোনিয়াম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে আবহমান কাল থেকে একি সেই নেকি সুরে বাইরের সব কথা ঝেড়ে ফেলে নেকা নেকা গান তার চেয়ে ঢের প্রাসঙ্গিক নয়কি উদোম পিঠের চালে কিংবা বুকের খাঁজে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে কেউ যদি খিস্তি লেখে অন্তিম মুহূর্তে স্খলিত হবার সময় উফ আরও জোরে আরও জোরে কি আর্তনাদ প্রশমিত অবদমিত করে আছে দাঁতে দাঁত চেপে গোটা বাঙালি জাতটাই এতো সকলেই জানে অথচ প্রকাশ পেলেই ভঙ্গ শিষ্টাচারকি বাহার কি বাহারপোশাকে বাঙালিযদি কিশোর কুমারের গান গাইয়েরা কিশোর কণ্ঠি হয়তোমার গানের বেলায় রবীন্দ্র কণ্ঠি কেনও নয়? নকল শিল্প মীরের মিমি-ক্রি হয়রবীন্দ্র সংগীত কেন তাহা নয় কেন তাহা হেলিয়া দুলিয়া বাবু বিবি একি-সুরে সেজে-গুজে সেই কবে থেকে একি গায় এ কোন সতীত্ব হাজার ব্যবহারেও নাহি ক্ষয়ের উপায়বঙ্গরঙ্গ দেখে পিত্তি জ্বলে যায়এখানে ঘরে ঘরে কপি পেস্ট করে জীবনানন্দ আর রবীন্দ্রনাথ জন্মায়আর যারা একটা প্রাসঙ্গিক সংস্কৃতি চেয়েছিল স্বতন্ত্র জীবনের স্বাভাবিক আর্তনাদ; সেই হাঙ্গরি জেনারেশন; শুকিয়েছে ঋত্বিক জীবন হয়েছে শ্মশান

শিলাইদহে বজরায় ঘুরছেন আর ছোট গল্প-লিখছেন;  ছিন্নপত্রে যার উল্লেখ আছে জমিদারি লাটে উঠেছিল বাবা মারা যাবার পর প্রচুর টাকার দেনাসম্পত্তির অংকের সাথে দেনার অংক ও ভাগ হয়ে রবীন্দ্রনাথের দাঁড়াল ৪৫০০০ হাজার টাকা দেনাসেদিনে এটা অনেক টাকা চিঠিতে নিজের নামটাই ভুল লিখে ফেলছেন চিন্তায় এক বন্ধু সাহায্য করেন এহেন রবীন্দ্রনাথ করতেন মার্কেটিং তাও আবার বাংলা সাহিত্য করেএকটু কেমন লাগছে  বাংলা সাহিত্যে শুধু লিখে জীবিকা নির্বাহ করতে পেরেছিলেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং পরবর্তীকালে সমরেশ বসু বাকিদের সবার কাছে সাহিত্য চর্চা ছিল সেকেন্ডারি অবসরযাপন কৃষি বিঞ্জানী রবীন্দ্রনাথকে তার জমিদারিতে আলু চাষের পরামর্শ-দিলো প্রচুর উৎপাদন আর লাভ হবেহলোটি কচু!  চাষের জন্য ব্যায় করা টাকাই উঠলোনা তবে এর থেকে রবীন্দ্রনাথ বুঝেছিলেনমাঠের কৃষক আকাশের মেঘ দেখলেই বলেদিতে পারে এ মেঘে বৃষ্টি হবেকিনাআর পুঁথি পড়া গবেষকেরা আজন্ম তপস্যা করলেও সঠিক উত্তর দিতে পারবেনাওনাকে বুঝতে হলে--মনটাকে সেভাবে আগে প্রস্তুত করে নিতে হবেরবীন্দ্রনাথ বহুবার বলেছেন আপন খেয়ালে কবিতা লিখে যে আনন্দ পাই অন্য কিছুতে তা নেই

রবীন্দ্রনাথ যাহা রাখিয়া গিয়াছিল তাহা টুকিয়া টুকিয়া ভাঙ্গাইয়া ভাঙ্গাইয়া একদল বাঙ্গালীর যে শিল্প ও জীবন বোধ গড়িয়াছে তাহা একান্ত তাহাদের নিজের আম লোক রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়া আর কোন শিল্পই চর্চা করেন নারবীন্দ্রনাথ যে রোজকার ব্যবহারিক জীবনে কোন কাজে লাগেন না তাহা যে নিজের কাছে নিজেদের ভণিতা এই ভোগবাদী সমাজ ও সভ্যতায় তাহা বুঝিতে আমাদের ক্লেশ হয়নারবীন্দ্রনাথ তার গান বাদে টেকেনাইআর এই গান টুকুই যে টিকিবে তার বিশাল শিল্প সম্ভারে তাহা তিনি জীবদ্দশায় অনুমান করিয়া ছিলেনযাহা হোক রবীন্দ্রনাথ কে এড়াইয়া শিল্প সাহিত্যের চর্চা এ বঙ্গে যখন অসম্ভব হইয়া উঠিয়াছিল; যাহারা তাকে এড়াইয়া গিয়েছিল তাহাদের স্পর্ধা ও সততায় আমি তারিফ না করিয়া থাকিতে পারিনাশিল্প সৃজন বন্ধ্যা হইয়া পরে তাতে অভিনবত্ব নতুনত্ব আধুনিকতার প্রবেশ না ঘটিলেরবীন্দ্রনাথও তাহা উপলব্ধি করিয়াছিলেন যারা রবীন্দ্রনাথকে এড়াতে চাইলেন কতটা তা পারলেন এব্যাপারে সন্দেহ থাকিতে পারে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যে নিজেই তিনি তার শিল্পরীতি কে য়ুরোপীয় আধুনিকতা বাদের মোড়কে নিসর্গ আধ্যাত্মিকতা থেকে অতি-বাস্তবতা আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক করিয়া তুলিয়াছিল এ ব্যাপারেও কোন সন্দেহ নাইআর এরা যাহারা রবীন্দ্র অনুরাগী সাজিয়া গোঁসাই সাজিয়া বসিয়াছেনরবীন্দ্রনাথের গান রবীন্দ্রনাথের কবিতা উদ্ধৃতি দিয়া প্রেম করিয়া বেড়াইতেছেনআর নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা খুঁজিতেছেন রবীন্দ্রনাথের দাড়ি ধরিয়াপবিত্রতা চর্চার বিষয় থেকে সড়ে আসিয়া ক্রমে ক্রমে তাহা প্রদর্শনের বিষয় হইয়াছেরবীন্দ্রনাথ নোবেল না পাইলে বিশ্বকবি হিসাবে তার খেতাব এই বৃহন্নলার সমাজে জুটিত কিনা সন্দেহ আছেআমরা সর্বদাই সাদাদের উচ্ছিষ্ট মাথায় তুলিয়া লইয়াছি আবার বলছি রাজা গজা এমন কি তোমাকেও আমার কোন প্রয়োজন নাইআমি আমার কাজ ছাড়া কাউকে আজ আর চিনি নারাজ লক্ষ্মী কে শ্রীকান্ত বলেছিল তুমি যতদিন না নিঃস্ব হবে ততদিন তোমার মানুষকে দান করার উপকার করার ইচ্ছা জেগে উঠবেএরকম একটা কিছুঅমরত্বের বাসনা, নামী হওয়ার বাসনা,  দামি হওয়ার বাসনা,  বিখ্যাত হওয়ার বাসনামানুষ কে হীন করেসম্পদশালী হওয়ার বাসনা আর এই বাসনায় কোনও তফাৎ নেই যাক পাঁচ টাকা রোজগার না করলে পাঁচ টাকা দান করবে কি ভাবে এই উন্নত দর্শন আমার নেইআমি রোজগার খরচ দুটো থেকেই বিরত কারো উপকার করার সাধ্য আমার নেইনেই তার ঢাক ঢোল পিটানোর ক্ষমতাওটা ঈশ্বরের হাতেই থাকযা আছে তা হল কেবল নিজের মত ইচ্ছে মত স্বাধীন ভাবে চলাকেতা-বান মানুষ নয়আমি অতি সাধারণ;  আমার মত দীন দারিদ্রের সাথে মিশতে পছন্দ করিলোক সংগ্রহ মহাপুরুষের কাজতুমি সে মহৎ কাজে ব্রতী হয়েছরবীন্দ্রনাথ কেও সাথে নিয়েছতারও বাপের সৌভাগ্য আমারও বাপের সৌভাগ্য গণ্ডায় গণ্ডায় শেয়ার দিয়েছ লাইক দিয়েছতোমার উজ্জ্বল পথের শ্রী কামনা করিএগিয়ে যাওভালো থাকো আর এই মজার খেলায় দেখো কত টা আটিয়া থাকা যায়আমার খেলা সাঙ্গ হয়েছেআজ এলাম

কপিরাইট অলভ্য ঘোষ কর্তৃক সংরক্ষিত



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন