অলভ্য ঘোষ
(শেষ অংশ)
কনসলিডেশন অব হোল্ডিং হলে পশ্চিমবঙ্গের ভূমি সংস্কার আইনে চাষের ও চাষির
প্রভূত উন্নতি হওয়া সম্ভব বলে অনেকেই ভেবেছিলেন। চাষের জমির আয়তন বাড়বে।প্রচুর
সংখ্যক আল কমে যাবে;ফলে জমি কম নষ্ট হবে;যৌথভাবে
চাষ করার সুযোগ পাবেন অল্প জমির কৃষকরা ; ফলে ভাগ করে নিতে পারবেন
লাভ বা ক্ষতি যা কিছু হবে তা নিজেদের মধ্যে।গরীব মানুষের মধ্যে একটা ঐক্য
প্রক্রিয়া তৈরি হবে যা কিনা তাদের প্রয়োজনীয় রসদ যোগাবে জীবন সংগ্রামে ।
ক্ষমতায় থাকতে হলে দেশের আসল পরিচালকদের সঙ্গে আপোষে আসা দরকার;তিন বারের সরকার চালানোর অভিজ্ঞতায় বামফ্রন্ট সরকার বুঝে গেছিল।ফলে একদা কৃষি
বিপ্লবের কথা বলা বামফ্রন্টের সারথিরা ক্ষমতা পেয়ে ক্ষমতা বাঁচাতে বাম থেকে ডান
নীতির দিকেই ঝুঁকে গেল।সীমিত ভূমি ও সংস্কারের পাট চুকল; পাট্টাদার
ভূমিহীনরা বিপদ বুঝলেন;চতুর্থ বামফ্রন্ট থেকে এই সরকার
হয়েছিল শিল্পপতিদের ও উন্নয়নের সরকার।আর বর্তমান সরকারের তো ভূমি নীতির বালাই নেই;বামফ্রন্টের ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট এরা পরম তৃপ্তিতে গলাধঃকরণ করে ভূমি
সংস্কারের বিষয়টিকেই ঝলসে জ্বালিয়ে রোস্ট বানিয়ে ফেলেছে।
৫ নং অধ্যায়ে জমির দাগ গুলোর একত্রীকরণ ও কৃষি খামার সমবায় সমিতি গঠন(Consolidation of
lands comprised in plots of land and cooperative Farming societies)র কথা বলা হয়েছে।অধ্যায়টি ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২,
৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬,
৪৭, ৪৮ নং ধারাগুলি ১৭ ই জানুয়ারি
১৯৭৭ থেকে খাতা কলমে কার্যকর করা হয়েছিল।পরে ১৯৮১ সালের দ্বিতীয় সংশোধনীতে এই
অধ্যায়ে ৪৮ নং ধারা যুক্ত করা হয়েছিল।
৩৯নং ধারায় বলা আছে যে সাত বা তার অধিক রায়ত যাদের ১ একর বা তার কম জমি আছে
এরূপ রায়তরা আবেদন করলে বা রাজ্য সরকার মনে করলে ওই রায়তদের জমিগুলি (যা এক-লপ্তে
নেই।) ক্ষতিপূরণ প্রদানের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা যেতে পারে।
৪৩ নং ধারায় বলা আছে যে যদি সাত বা ততোধিক রায়ত এক-লপ্তে জমির মালিক হয়;তবে তারা নিজেরা কৃষি খামার সমবায় সমিতি গঠন করতে পারে।
এরূপ সমবায় সমিতি রেজিস্ট্রিকৃত হবার পর অন্তর্ভুক্ত রায়তের বাস্তবে অন্যান্য
সব জমি সমবায় সমিতিতে ন্যস্ত হবে এবং সমিতির কোন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে তার নিজস্ব
বাস্ত ছাড়া অন্য কোন জমি রাখতে পারবে না।সমবায় সমিতিতে রায়তের শেয়ার সমিতিতে তার
দেওয়া জমির অনুপাতের সঙ্গে এক হবে।এরূপ সমবায় সমিতি অন্য কোন জমি অধিকার বা দখল
করতে পারবে না।
৪৮ নং ধারা অনুযায়ী ভূমি সংস্কার আইন মোতাবেক
গঠিত কোন কৃষি খামার সমবায় সমিতি বিধি
অনুযায়ী সরকারী সুবিধা পাওয়ার যোগ্য।পূর্বোক্ত ধারাগুলি কে কোন রূপ প্রভাবিত না
করেই নিম্নোক্ত সুবিধা ও ছাড়গুলি দেওয়া যায়।
ক) সরকারের আদেশে ভূমি রাজস্ব হ্রাস।
খ) প্রথম তিন বছর বিনামূল্যে এবং তারপর কম-মূল্যে, বীজ ও
সার সরবরাহ।
গ) বিনামূল্যে রাজ্য সরকারের প্রযুক্তিবিদদের উপদেশ।
ঘ)বিধিবদ্ধ শর্তে আর্থিক সহায়তা এবং উৎপাদিত ফসল বিক্রয়ে সুবন্দোবস্ত।
কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় এই যে ভূমি সংস্কার আইন কে জমিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে
১৯৫৬ সালে যে ভূমি সংস্কার বিধি রচিত হল সেখানে আইনের ৫ নম্বর অধ্যায়ের ১১টি
গুরুত্বপূর্ণ ধারা রূপায়ণের জন্য কোন রকম বিধির সংস্থান করা হল না সন্দেহের অবকাশ আরও এই কারণে যে ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার
আইনিটি প্রণীত হবার দীর্ঘ ১৭ বছর পর ১৯৭২ সাল থেকে আইনটির প্রকৃত কাজ শুরু
হয়।সরকারের সদিচ্ছার প্রতি সন্দেহের কারণ আরও জোরালো হয়, যখন
১৯৮১ সালের সংশোধনীতে ৫ নম্বর অধ্যায়ে একটি নতুন ধারা ৪৮ ক যুক্ত করার পরেও ঐ
অধ্যায়ের ধারাগুলো রূপায়ণ এর জন্য কোন বিধির সংস্থান করা হয় না।
অথচ ১৯৮১ সালের ভূমি সংস্কার আইনের দ্বিতীয় সংশোধনী যখন ছ বছর বাদে ১৯৮৬ সালে
মাননীয় রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভ করে। তখন তৎকালীন ভূমি মন্ত্রী বিনয় চৌধুরী
লিখেছিলেন,
“সংশোধনী আইনের ৪০ নং ধারায় (ভূমি সংস্কার আইনের ৪৮ ক নং
ধারায়) পাট্টাদার ও বর্গাদারদের সাহায্য করার জন্য কো অপারেটিভ কমন সার্ভিস
সোসাইটি গঠন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।যে
কোন এলাকার সাত বা তার বেশী সংখ্যক ব্যক্তি যারা ১ একর পর্যন্ত জমি যে কোন শর্তে
চাষ করে তারা এই ধরনের সমবায় গঠন করতে পারবে।এই সমবায় উৎপাদনে সাহায্য করা জন্য
চাষের বলদ,
উন্নত মানের বীজ,সেচের ব্যবস্থা প্রভৃতি বিভিন্ন
বিষয়ের জন্য সহজ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করবে।উৎপন্ন ফসলেরও বিক্রির সুবন্দোবস্ত
করবে।হিসাব নিয়ে দেখা গেছে,পাট্টা প্রাপ্য কারী গড় পড়তা ২
বিঘা করে জমি পেয়েছে।তাই পাট্টা প্রাপকদের গরু,লাঙল, বীজ,
সার প্রভৃতির জন্য সরকারী অথবা ব্যাংক থেকে সাহায্যের
একান্ত প্রয়োজন নতুবা তারা জমির মালিকদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় এবং
ঋণে আবদ্ধ বাঁধা গোলাম পরিণত হয়।পাট্টাদার ও বর্গাদারদের এই অসুবিধা দূর করার
জন্য এই ধরণের সমবায় গঠন করার কর্মসূচী নেওয়া হচ্ছে।পাট্টাদার ও বর্গাদাররা এর
দ্বারা
যে বিশেষভাবে উপকৃত হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।(পৃষ্ঠা৪, রাজস্ব পর্ষদ প্রকাশিত পুস্তিকা ১লা মে, ১৯৮৬)।
বিনয় চৌধুরী আরো লিখেছিলেন,“বর্গাদারদের নামে রেকর্ড-ভুক্ত
হওয়ার দরুন ছোট জোতের মালিকদের প্রয়োজনের সময় জমি বিক্রির অসুবিধা দূর করার জন্য
(ভূমি সংস্কার আইনের ২৬গ নং ধারায়)রাজ্য ও এলাকা ভিত্তিক লাভ গঠন করার ব্যবস্থা
করা হয়েছে।সেচ এলাকায় ১ হেক্টর ও অ-সেচ এলাকায় ১.৫ হেক্টর পর্যন্ত জমির মালিক
যাদের অন্য তেমন কোন আয় নেই জমির আয়ই মূল আয় তারা এর সুযোগ নিতে পারবে।ল্যান্ড
কর্পোরেশন জমির বাজার দরের সমপরিমাণ টাকা বর্গাদারদের ঋণ স্বরূপ দেবে উক্ত জমি বন্ধক রেখে।বর্গাদার
ওই টাকা জমির মালিককে দিয়ে দেবে এবং ঋণের টাকা পরিশোধ করলেই জমির মালিক হয়ে
যাবে।এই ব্যবস্থার ফলে ছোট জোতের মালিকদের প্রয়োজনের সময় বর্গা রেকর্ড হওয়া
সত্ত্বেও জমি বাজার দরে বিক্রি করতে অসুবিধায় পড়বে না এবং বর্গাদাররাও ল্যান্ড
কর্পোরেশন থেকে আগাম ঋণ পেয়ে ক্রমশ জমির মালিক হতে পারবে।(পৃষ্ঠা ৪, রাজস্ব পর্ষদ প্রকাশিত
পুস্তিকা ১লা মে, ১৯৮৬) বিনয় চৌধুরী মতো একজন পোড় খাওয়া
কৃষক আন্দোলনের নেতা হাতে ভূমি দপ্তর থাকা সত্ত্বেও ভূমি সংস্কার আইনের এত
গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো বাস্তবে রূপায়ণের জন্য কেন ভূমি সংস্কার বিধি রচিত হল না
-তা খতিয়ে দেখা দরকার।
১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠনের পর যখন সরকারের ভূমি নীতি ঘোষিত
হয়,সেখানে ভূমি সংস্কারের মৌলিক প্রশ্ন কে ভারতের বর্তমান রাষ্ট্র কাঠামোর
অভ্যন্তরে আদৌ সমাধান করা সম্ভব কিনা এ বিষয়ে তৎকালীন ভূমি-মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর
বক্তব্য ছিল “ভূমি সংস্কার বলতে আমরা যা বুঝি তা বর্তমান সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যে থেকে
নিতান্তই সীমাবদ্ধ ক্ষমতা দিয়ে করা সম্ভব নয়।একমাত্র বিপ্লবের মাধ্যমেই তা করা
সম্ভব।এই বিষয়ে কোন ভুল ধারণা সৃষ্টি করা বিপ্লবের পক্ষে ক্ষতিকারক।বামফ্রন্ট
সরকার ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তা হল এই সীমিত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে এমন কতগুলো
পদক্ষেপ নেওয়া যা প্রকৃত ভূমি সংস্কারের সংগ্রাম কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
(দেশহিতৈষী,
১৩ জুন ১৯৮০)
বামফ্রন্ট সরকার ঘোষণা করেছিল।সরকারী পদক্ষেপগুলো ছিল, ক)বেনামী
ও সিলিং বহির্ভূত জমি উদ্ধার করা; খ) উদ্ধারকৃত জমি বিনামূল্যে
ভূমিহীন কৃষক ও ক্ষেত মজুরদের মধ্যে বিতরণ করা;গ)
বর্গাদারদের চাষের অধিকারকে নথিভুক্তর মাধ্যমে সুনিশ্চিত করা ও ঘ) ভূমিহীন কারিগর, কৃষি শ্রমিক ও মৎস্য জীবীদের জন্য বাস্তু জমির ব্যবস্থা করা।
মনে করার কোন কারণ নেই যে এই ধরনের ভূমি নীতি কেবলমাত্র বামফ্রন্ট সরকারই
গ্রহণ করেছিলেন।সত্তরের দশকের গোড়া থেকেই কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কমিশন
ও কেন্দ্রীয় ল্যান্ড কমিশন বারে বারে প্রাদেশিক সরকারগুলো কে এই ধরনের আইনি
সংস্কারের জন্য আইন প্রণয়ন করার নির্দেশ দিচ্ছিল। কারণ ভূমি-হীনতাকে কেন্দ্র করে
সামাজিক বিরোধ ও প্রতিরোধ এক উদ্বেগজনক অবস্থার মুখে দেশকে ঠেলে দিয়েছিল;যা ক্ষমতায় আসীন শাসক শ্রেণীকে তার নিজস্ব শাসন কায়েম রাখার স্বার্থেই সতর্ক
করেছিল।১৯৮১ সালে এই ধরণের সংস্কার কর্মসূচি প্রসঙ্গে বিনয় চৌধুরী লিখেছিলেন; এটা সকলেই সহজে বুঝতে পারবেন যে;জমি রাখার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে
দিয়ে একটা বিশেষ ধরণের উৎপাদন প্রথার অবসান করা যায় না।সেই প্রথাকে কিছুটা
নিয়ন্ত্রণ করা যায় মাত্র।সামন্ততান্ত্রিক চরিত্র অত্যন্ত নগ্ন ও প্রকটভাবে থাকলে
জনমানসে তার যে প্রতিক্রিয়া হয় সামন্ততান্ত্রিক সম্পর্কের উপর যদি কিছুটা বর্তমান
যুগোপযোগী রং চাপানো যায় তা হলে জনমানসে তার প্রতিক্রিয়া অপেক্ষাকৃত কম হতে পারে।
আমাদের দেশেও সাম্রাজ্যবাদীদের সাক্ষাৎ প্রভাবে,ভূমি
সংস্কারের ক্ষেত্রে জমির ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া ওপরই জোর দেওয়া ওই একটা উদ্দেশ্য
নিয়েই।(ভূমি সংস্কারের সমস্যা, বিনয় চৌধুরী, গণশক্তি-২১ শে জুন, ৯৮১)
১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের রাজনৈতিক পরিচালকরা ভালোভাবেই জানতেন যে
সাম্রাজ্যবাদ ও তার দেশীয় দোসর দের স্বার্থেই সীমিত ভূমি সংস্কার কর্মসূচী তারা
গ্রহণ করেছেন।কারণ দেশের রাষ্ট্র কাঠামো ততটা সংস্কারেরই অনুমতি দেবে যাতে
কাঠামোর স্থায়িত্বে কোন আঘাত না লাগে এবং শাসক শ্রেণীর স্বার্থ নির্বিঘ্ন
থাকে।তৎসত্ত্বেও বামফ্রন্ট যে কারণে এই সীমিত ভূমি সংস্কার কর্মসূচীকে গুরুত্ব
দিয়েছিল তা বিনয় চৌধুরীর ভাষায় এগিয়ে যাওয়া সব থেকে কঠিন কাজ এই খানেই।
সীমিত ভূমি সংস্কারের জন্য যে চার-দফা কর্মসূচী বামফ্রন্ট সরকার ঘোষণা করেছিলো
তা সম্পূর্ণ রূপায়িত হলে এবং বামফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ তার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সঠিক
আর্থসামাজিক ব্যাখ্যা হাজির করতে পারলে জনগণ আসল বা প্রকৃত ভূমি সংস্কারের জন্য
বৃহত্তর সংগ্রামে ঝাঁপ দিতে পারতো বলে মনে হয়।কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই কর্মসূচি ঠিক
ঠিক রূপায়িত হয়নি অথচ বামফ্রন্ট এই আধা খেঁচড়া কাজটি কে বিরাট ভূমি সংস্কার
হয়েছে বলে জনগণের কাছে তুলে ধরেছিল।
সীমিত ভূমি সংস্কার যা আমূল ভূমি সংস্কার ইত্যাদি কে জনগণের কাছে অজানাই রেখে
ছিল।
ভূমি সংস্কার আইনের ৫নং অধ্যায়ের (কনসলিডেশন অব ল্যান্ড ইন হোল্ডিংস এন্ড কো
অপারেটিভ জমির সোসাইটিস)বিষয়টি অবগত হওয়ার পর অনেকে আশান্বিত হয়েছিল যে কেবলমাত্র
রেকর্ডে নথিভুক্ত নয়,পাট্টাদার বর্গাদার বাস্তু-জমি প্রাপকরা এ করে আইনি
ব্যবস্থাকেই তাদের চিরস্থায়ী দরিদ্রের কিছুটা উপশম ঘটাতে পারবেন।কিন্তু দীর্ঘ সময়
ধরে সরকার ৫ নং অধ্যায়ে বর্ণিত সুবিধা গুলো পাওয়ার জন্য কোন বিধি প্রণয়ন না
করায় ওই প্রান্তিক মানুষগুলোর নাম কেবল রেকর্ডেই হয়েছে।কাজের কাজ কিছুই
হয়নি।বাস্তবে এই মানুষগুলোর একটা বিরাট অংশ কোন রকম অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যবস্থা
না থাকায় অভাবের তাড়নায় জমি হস্তান্তর করে উচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন।
১৯৮০ সালেই বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম ভূমি সংস্কার কমিশনার তার বই এ লিখেছিলেন।
“যে ভূমি সংস্কার কর্মসূচী শুধুমাত্র জমি বণ্টন করে বা ভাগচাষীর চাষের আইনগত
নিরাপত্তা দিয়েই ক্ষান্ত তার ফলাফল সীমাবদ্ধ হতে বাধ্য।অন্যদিকে কায়েমি
স্বার্থ-বাদীদের সৃষ্ট বিরুদ্ধ প্রক্রিয়া এবং বিশেষভাবে উপকৃত অংশের জন্য সহায়ক
ব্যবস্থার অভাব তাদের অবস্থাকে সংস্কার-পূর্ব কালের অবস্থান চেয়েও খারাপ করে তুলতে
পারে।পশ্চিমবঙ্গের ভূমি সংস্কার কর্মসূচী প্রথাগত প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির এই চরম
ঘাটতি স্বীকার করে।"(পৃষ্ঠা-২, পশ্চিমবঙ্গে ভূমি সংস্কার, দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়)
সরকারি ন্যস্ত জমি ভূমিহীন কৃষকরা পাবেন তাদের জীবন জীবিকার উন্নয়নের জন্য এই
ধারণা থেকে সরে এসে ঐ জমি তুলে দেওয়া হতে থাকে অর্থবানদের হাতে রাজ্যের উন্নয়নের
নামে।
বামফ্রন্ট সরকার সেই কঠিন রাস্তায় না হেঁটে কেন্দ্রীয় সরকারের মুক্ত
অর্থনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে।ফলে প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষের জীবন উন্নয়নে ভূমি
বণ্টনের ভূমিকা গুরুত্বহীন হয় এবং ভূমিকে একটি বাজার সামগ্রী হিসাবে দেখা শুরু
হয়।আগেই বলা হয়েছে এর ফলে অর্থবানদের হাতে জমির কেন্দ্রীভবন ঘটে আর অব্যবহার্য অবস্থায় বিশাল পরিমাণ জমি ফেলে
রাখা হয় পরবর্তী লাভজনক হস্তান্তরের অপেক্ষায়।যেহেতু প্রান্তিক কৃষক,ক্ষেত মজুর বর্গাদারদের মধ্যে ভূমি বণ্টন গুরুত্বহীন হয়ে যায় কাজেই ৫ নং
অধ্যায়ের কাজের জন্য বিধি প্রণয়ন ও অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে এবং অর্থহীন হয়ে
যায়।
চাষের জমি অকৃষি রূপায়িত হওয়ার প্রবণতা,অর্থবানদের
জমি কিনে ফেলে রাখার অভ্যাস কিছুটা হলেও বাধাপ্রাপ্ত হবে।তাই সীমিত ভূমি সংস্কারের
ক্ষমতাকে ব্যবহার করে প্রকৃত ভূমি সংস্কারের জন্য সংগ্রাম গড়ে তোলার ঘোষণার মধ্য
দিয়ে যে কর্মসূচী যাত্রা শুরু হয়েছিল,মুক্ত অর্থনীতির কাছে আত্মসমর্পণের
তাগিদে মাত্র দেড় দশকেই তার ইতি।ভূমিহীন কৃষককে সরকারের ন্যস্ত জমি থেকে বঞ্চিত
করে সেই জমি দেশী বিদেশী ফড়িয়া বানিয়া অর্থবানদের হাতে তুলে দেওয়াটা কোন ভূমি
সংস্কার কর্মসূচীর উদ্দেশ্য হতে পারে না। ভূমি সংস্কার একটি বহুমাত্রিক পরিকল্পনা
এবং ভারতবর্ষের মত কৃষি প্রধান দেশে আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণের প্রধান হাতিয়ার।সেই
হাতিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাব ঘটলে অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি
পায়।এই বৈষম্যের চূড়ান্ত শিকার হয় গ্রামীণ কৃষক সমাজ।
সীমাবদ্ধ বা সীমিত ভূমি সংস্কারের অন্যতম বাকি কাজ যা ভূমি সংস্কার আইনের
পঞ্চম অধ্যায়ের রূপায়ণ এর মাধ্যমে অনেকটাই এগিয়ে নেওয়া যেত;সেই দায়িত্ব ত্যাগ করে বামফ্রন্ট সরকার জনগণের প্রতি তার ঘোষিত দায়িত্ব পালনে
ব্যর্থ হয়েছে।এই ব্যর্থতায় কেবল যে পঞ্চম অধ্যায়ের পঞ্চত্ব প্রাপ্তি ঘটল তাই
নয়।বামফ্রন্ট সরকারের হাতে ভূমি সংস্কার কর্মসূচিরও পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটল।এখন
ভাবনার সময় এসেছে কিভাবে গ্রামীণ কৃষি জীবী মানুষ মানুষের মতে বাঁচতে পারেন।
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বামপন্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির বিরুদ্ধে
জনগণের সংগ্রাম কে বিপথে পরিচালিত করবার ক্ষেত্রে বিশেষ যুক্তিয়ানার পরিচয় রেখেছিল
পশ্চিম বঙ্গে। বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলে।বাস্তব ক্ষেত্রে কৌশলে মানুষের
ক্ষোভকে প্রশমিত করে এরাই কেন্দ্র সরকারকে সাধারণের ওপর উদার অর্থনীতির আক্রমণে
নামার সুযোগ করে দিয়েছিল।এরাই পশ্চিমবঙ্গে নয়া অর্থনীতির সবচেয়ে বড়
রূপকার।বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়বার জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে
নন্দী-গ্রামে নির্বিচারে হত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়ে জনগণকে হতোদ্যম করতে
চেয়েছে।একচেটিয়া পুঁজির এরা এতটাই দালাল হয়ে উঠেছিল যে পশ্চিমবঙ্গে খুচরো
ব্যবসার ক্ষেত্রে রিলায়েন্স, ওয়ালমার্টের মতো
কোম্পানিগুলিকে সাদরে আহ্বান করে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবন জীবিকা কে বিপন্ন করে
তুলেছিল।এ কথা বলতে লজ্জা হয়নি যে বিশ্বায়ন নাকি তাদের সামনে রাজ্যের উন্নয়ন
ঘটানোর সুযোগ এনে দিয়েছিল।
শ্রমিক পিছু উৎপাদন অর্থাৎ উৎপাদন শীলতা বাড়িয়ে কর্মী সংখ্যা কমানো মারফত কম
খরচে বেশি মুনাফা; ন্যাশনাল মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো এই
দর্শনের উপর প্রতিষ্ঠিত।জামশেদপুর টাটা স্টীল ১৯১৯ থেকে দশ বছরে উৎপাদন বাড়িয়েছে ৫
গুণ কিন্তু কর্মী সংখ্যা নামিয়ে এনেছে প্রায় অর্ধেকে।অনিয়মিত শ্রমিকদের কাজ করতে
হয় অল্প মজুরিতে কঠিন শর্তে।স্থায়ী কর্মী সংখ্যা কমিয়ে অনিয়মিত ক্যাজুয়াল লোক
দিয়ে অল্প খরচে মাল বানিয়ে নেওয়া কম খরচে
বেশি মুনাফার আর একটি কৌশল। টাটারা জামশেদপুরে আছে এক 'শ' বছর;বহু যুগ ধরে ওড়িশাতে।অথচ সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্যগুলোর সব চেয়ে নীচের দুটি বা
তিনটির মধ্যে আজও বিহার ও ঝাড়খণ্ড এবং উড়িষ্যার স্থান।টাটাদের যে হুগলী জেলা বা
পশ্চিম বাংলার বেকার যুবক যুবতিদের কিছুই দেওয়ার ছিল না তার প্রমাণ হুগলী জেলার
কোনও এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে সিঙ্গুরের টাটা কারখানার কর্ম-খালির বিঞ্জপ্তি দেওয়া
হয়নি ।
সব রঙের কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জমি,জল,খনিজ সম্পদ কর্পোরেশন গুলো অধিকার করছে।সিঙ্গুরে প্রায় ১ হাজার একর উৎকৃষ্ট
চাষের জমি এর মধ্যে তিন ফসলী জমিও ছিল এক গোপন চুক্তির মাধ্যমে টাটাদের উপঢৌকন
দেয়া হয়ছিল ।বাজার দরের চেয়ে অনেক কম ভাড়ায় ৯০ বছরের লীজ;শতকরা এক ভাগ সুদে সুলভ ঋণ (সেই সুদ ও ২০ বছর পর থেকে দিলেই হবে এই চুক্তি
ছিল।);'ভ্যাট'
ও অন্যান্য কর বা মাশুল মাপ বাবদ টাটাদের ৮০০ কোটি টাকার
বেশি ভর্তুকি দিতে চলেছিল বামফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের মানুষের পকেট কেটে।লুট
ছাড়া একে আর কি বলা যায়।সিঙ্গুরে জমি মালিকরা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত শুধু হয়নি। জীবিকা
চলে গিয়েছিল আরও ১০ হাজার মানুষের জনমজুর,ভাগচাষী, ভ্যান চালক,
সবজি বিক্রেতার।
কলিঙ্গ-নগরে টাটারাই ওড়িশা সরকারের সাহায্যে আদিবাসীদের জমি নেওয়ার চেষ্টা করতে গেলে যে আদিবাসী আন্দোলন
শুরু হয়েছিল তা রুখতে ১৪ জন আদিবাসী নিহত হয়ে ছিল।টাটার গুণ্ডারা আন্দোলনের
নেতাদের শুধু খুন করার হুমকি নয়;একজনকে খুন ও আর এক জনকে গুরুতর
ভাবে জখমও করেছিল।এক আম্বানি এই কীর্তি চালিয়েছে উত্তর প্রদেশে;আর এক আম্বানি মহারাষ্ট্রে।কোলা কোম্পানিগুলির দ্বারা মাটির তলার জলের যথেচ্ছ
ব্যবহার ও দূষণ প্রতিরোধে উত্তর প্রদেশ ও কেরলের মানুষ পথে নেমেছেন।
ক্ষমতা দখলের রাজনীতিতে তৃণমূল বামেদেরও পিছনে ফেলে;মার
দাঙ্গা জুয়াচুরির যে নজির তারা গত নির্বাচনগুলোতে রেখেছেন তা সর্বজন বিদিত।শিশু
পাচার ও নারী পাচার,ধর্ষণ, ব্রিজ ভেঙ্গে পড়া থেকে সারদা, নারদা,রোজভ্যালি কাণ্ডে রাজনৈতিক নেতাদের জড়িয়ে পড়া নাম বিশ্বের দরবারে পশ্চিমবঙ্গের
দুর্নীতি এবং সংস্কৃতির ভড়ং-বাজী বেশ হাস্যকর রসিকতায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে।এমন অবস্থায়
পরিবর্তন কথাটি সাধারণের ডাইজেস্ট করতে যখন খুব কষ্ট হচ্ছে; তখনই নতুন বোতলে পুরনো মদ ভরে তাদের দেওয়া হচ্ছে কিছু নাম।যেমন বিশ্ব বাংলা, নবান্ন,
পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান,আসানসোল,দূর্গাপুর,কালিম্পং ইত্যাদি ইত্যাদি।
সারা বাংলা কে টুকরো টুকরো করে কেবল রাজনৈতিক বিভাজনেরই নাম কি
পরিবর্তন!মেদিনীপুর ওয়েস্ট ঝাড়গ্রাম,জঙ্গল মহল সাবডিভিশন।ঝাড়গ্রাম
সাবডিভিশন
ছিল অলরেডি মেদিনীপুর ওয়েস্ট দুটো ভাগে ভাগ হলো।সুন্দরবন জেলা,বসিরহাটজেলা ভাগ করবে দক্ষিণ ও উত্তর চব্বিশ পরগনা কে।বর্ধমান একটা রুরাল
ডিস্ট্রিক;আর একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিস্ট্রিক।পুরুলিয়া জেলাতেও দুটো সাবডিভিশন
বাড়বে।একটা ঝালদা সাবডিভিশন অপরটি মালবাজার সাবডিভিশন।
নতুন জেলা করতে আদালতের ছাড়পত্র লাগে।সেই ছাড়পত্র মিলেছে।আগে থেকেই নতুন জেলার
পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে প্রশাসনিক কর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।কালিম্পং এর
দায়িত্বে ছিলেন মুখ্য সচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। আসানসোলের দায়িত্বে ছিলেন
স্বরাষ্ট্র সচিব মলয় দেব।ঝাড়গ্রামের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেছিলেন রাজ্য পুলিশের
ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ ও কলকাতা পুলিশের নগরপাল রাজীব কুমার।
ছয় বছরে তৃণমূলের দাবি তাদের সরকার শান্তি ফিরিয়েছে জঙ্গল মহলে।২২তম জেলা
হিসাবে ঝাড় গ্রামের জন্ম দুশো কোটির প্রকল্পের শিলান্যাস যে কেবল সত্যিকারের
শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে না;তা একটি বাচ্চা ছেলেও
জানে।শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই সকলের শিক্ষা, রোজগার, কোয়ালিটি অ্যান্ড ডিগনিটি অফ লাইফ।নীল সাদা দেয়াল আর রাস্তা ঘাট মানেই
উন্নয়ন নয়।একরাশ ফাঁকা বুলি আর শিলান্যাস নয় মানেই উন্নয়ন নয়।দুদিন পরে যা
আবর্জনা আগাছায় ঢাকা পড়ে যাবে।
শুধুই রাজনৈতিক কৌশল।মানুষের সার্বিক উন্নতি চরিতার্থ হচ্ছে কোথায়।যা হচ্ছে
সবটাই একটা চটকদারি ভোটের রাজনীতি।দীর্ঘকাল যা এদেশের রাজনীতিতে হয়ে আসতে আসতে যেন
একটা প্রথা হয়ে গেছে।উন্নয়নের নামে ভাগ কর মানুষকে ভাগ করো ভোট।এও তো ডিভাইডেশন
রুল এরই নামান্তর।
যেমন ধরুন পালের হাওয়া নিজের দিকে টানার কৌশলে পাহাড়ে ভোটের আগে কালিম্পং কে
নতুন জেলা ঘোষণা করে দেয়া হয়েছিল এ বছর।হ্যাঁ রাজ্যের দ্বিতীয়বারের জন্য
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর রাজ্যের প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে কয়েকটি নতুন জেলা তৈরি
করবেন তা জানিয়েই রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।হ্যাঁ অবশ্যই
পাহাড় বাসীদের কালিম্পং এর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। জেলার ঘোষণার বিপক্ষে ছিলেন
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।কিন্তু পাহাড়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে অবস্থান থেকে সরে
আসতে বাধ্য হয়েছিল তারা।সবি ঠিক আছে।কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করেন;ভোটের আগে কালিম্পং জেলার আত্ম প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য ছিল মোর্চার ওপর চাপ
বাড়ানো।তৃণমূলকে বাড়তি অক্সিজেন দেওয়ার জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল একগুচ্ছ
কর্মসূচী:
১। সেবক থেকে সিকিম। সংযোগকারী রাস্তা তৈরি।
২। জল সংকটের কথা মাথায় রেখে কালিম্পং এর জন্য নতুন জল প্রকল্প।
৩। পর্যাটনে বিশেষ নজর।
৪। লাভা-জোলে-গাঁওয়ের রাস্তার অবস্থা ভাল করার দিকে জোর।
৫। পাহাড়ে আইটি ইন্ডাস্ট্রি সহ আরও শিল্প সম্ভাবনার দিকে জোর।
ঘোষিত কর্মসূচি গুলো যে ভোটের এজেন্ডা তা বুঝতে কোন অসুবিধা হয় না।
হেভিওয়েট বাম নেতা শিলিগুড়ির মেয়র শ্রী অশোক ভট্টাচার্য মনে করেন “প্রশাসনিক বিষয় নয় উন্নয়নের বিষয় নয় বা এর পেছনে কোন Socio
Economic
Linguistic development বিষয় নয়।সবার পেছনে আছে ভোট।"
বামেরা শেষ করে দিয়ে গেছে।তৃণমূল শুধু কফিনের শেষ পেরেক টা পুঁত ছে। দুষ্টু!
কোটি কোটি টাকার দেনা।তবুও কম কিছু হচ্ছে না।কন্যাশ্রী,যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী থেকে বৈতরণী-সমব্যথী,বঙ্গ-বিভূষণ,সবুজ সাথী,অঙ্গন বাড়ি,একশো দিনের কাজ,দুই টাকার চাল কত বলবো সাইকেল
বিলানো থেকে ক্লাবে ক্লাবে দান খয়রাতি মেলা, খেলা, উৎসব।এই রাজ্য তামিলনাড়ু নয়;মদ বেচে রোজগার হয় না ;এখানে উল্টে বিষ মদ খেকোদের পেছনে খরচ হয়।দুধ বেচে রোজগার হয়।সারদা রোজ
ভ্যালি এগুলো সব দুধের আড়ত।তা বলে ভাববেন না কুণাল ঘোষ সৎ।পাজি। এখানে মিত্র, পাল ,বন্দ্যোপাধ্যায়, রায় ,হাকিম
সবাই সৎ ঘাঁটি গোয়ালা।আর দিদি শিল্পী মানুষ।ছবি এঁকে বই লিখে পাটি ফান্ডের টাকা
যোগান।এমন সুদিন এর আগে কোনদিন ছিল না।কোন চিন্তা করবেন না।পটল তুললেও সরকার
আছে।দাহ করার কিংবা কবর দেবার পয়সা নেই।কড়কড়ে দুই হাজার টাকা সরকার দেবে। আর কি
চাই। মরেও সুখ।তবে চাকরী চেয়ো না। নিরাপত্তা চেয়ো না।শিক্ষা চেয় না।লুট হওয়া
টাকা ফেরত চেয় না!যা গেছে তা যাক।সিন্ডিকেট আর প্রোমোটারি মানে আবাসন শিল্প;করে খাও।মেলা পার্বণ মোচ্ছবের কোন খামতি হবে না।দিদির জন্মদিন টা জাতীয়
হুজুগের দিন ঘোষণা করলে কেমন হয়!আরে বাবা একদিন ছুটি বেড়ে যাবে।
তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়;যতদিন এই পোড়া দেশটাতে ভোট হবে
উন্নয়নের মাপকাঠি;বিভাজন সংগঠিত হবে ভোটার চিহ্নিত করে।জনগণ কোন দিন তার
সার্বিক কল্যাণ বা উন্নয়ন ছুঁয়ে দেখতে পারবেন না।ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের নাকের
সামনে মূলর মত উন্নয়নের বুলি ঝুলিয়ে একের পর এক বছর কাটিয়ে যাবে।স্বাধীনতার একশো
বছর পরেও ভারতীয় জনগণ তৃতীয় বিশ্বের এক নিম্নস্তরের জীবনেই আটকে থাকবে।
এই মুহূর্তে ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় সমস্যা দেশের ভর সংখ্যার মানুষ চরম
দারিদ্র্যতার মধ্যে বসবাস করেন।জীবনের কোন ক্ষেত্রেই তাদের কার্যকরী ক্ষমতা নেই;ভূমিকানেই।আর এই মানুষ গুলোর কে জিইয়ে রাখতে পারলেই গণতন্ত্রের ঢাক বাজিয়ে
অশিক্ষিত,
অর্ধ-শিক্ষিত, অভুক্ত মানুষ কে খুদ
কুড়ো ছিটিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে সহজে বোতাম টিপিয়ে নেবে ভোট ভিক্ষুক
রাজনৈতিক দলীয় প্রার্থীরা।ভোটের আগের কাজী ভোট ফুরলে পাজি।ভোটের আগে উন্নয়নের যে
প্রতিশ্রুতি নেতারা দেন তা কোন দিনেও ফলপ্রসূ হয়না।কোন কোন ক্ষেত্রে সামান্য
উন্নয়ন হলেও সেই সব উন্নয়নের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন ক্ষমতাসীন দলের দলীয়
কর্মীরা।বিশেষ বিশেষ যোগাযোগ ছাড়া সরকারি অনুদান সুযোগ সুবিধা পৌঁছয় না সাধারণের
হাতে।তাই বিপুল সংখ্যার সাধারণ মানুষের উন্নয়ন মানে দরিদ্রতা থেকে মুক্তি তা
স্বাধীনতার সত্তর বছর পরেও তিমিরে থেকে গেছে।
সবার প্রথমে চাই সুনিশ্চিত জীবিকার সংস্থান।যতদিন না নিজের পরিশ্রমের উপর
নির্ভর করে উপার্জন সম্ভব হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবনে অর্থনৈতিক স্থিতাবস্থা
আসবেনা।আর অর্থনৈতিক সুস্থিরতা ছাড়া সমাজের একজন হিসেবে কোন নাগরিকই মান্যতা পেতে
পারেন না।আর সামাজিক মান্যতা যদি কোন মানুষের না থাকে সামাজিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের
পক্ষে আগ্রহ জাগবে কিভাবে।তাই ক্রমে ক্রমে ম্রিয়মাণ হয়ে আসছে প্রতিবাদী
কণ্ঠস্বর।কমে আসছে দেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনে হস্তক্ষেপ করার সাধারণের
আত্মবিশ্বাস।তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় বর্তমানে এদেশে কর্মসংস্থান কেবল দিতে পারে
অর্থনৈতিক,সামাজিক ও রাজনৈতিক সর্বব্যাপী পরিবর্তন;মর্যাদার
সাথে উন্নয়ন।উন্নয়নের চালু মডেল অর্থাৎ বৃহৎ কর্পোশনদের পরিচালনায় উন্নয়নের
রমরমার বৈশিষ্ট্য গরিবের স্বার্থ বিরোধী।গরিব কে বঞ্চনার শিকার বানানো।
দেশী বিদেশী বৃহৎ পুঁজির হাতে ভারতীয় উপকূল কে তুলে দেওয়া হচ্ছে।ছোট ব্যবসা
দেশের ছয় ভাগের এক ভাগ মানুষের জীবিকা;সেখানেও দেশী বিদেশী বড় পুঁজি
ঢুকছে;ক্রমে ক্রমে অপসৃত হচ্ছে ছোট ব্যবসায়ী।পার্ক সার্কাস বাজারের দেড় লক্ষ বর্গ
ফুট জায়গা কলকাতা কর্পোরেশন তুলে দিয়েছে রিলায়েন্সের হাতে।৫৫ হাজার আছে বর্তমানে
ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য।
"দেশি বিদেশী-বৃহৎ পুঁজি পরিচালিত চালু উন্নয়ন গরিবের নিবাস,প্রাকৃতিক সম্পদ জীবিকার কোনও বাস্তব উন্নতি তো ঘটায়'ই না
বরং যা ছিল সেটাও কেড়েনেয়।শুধু গরিব নয়,কর্মপ্রাথী যুবক যুবতির জন্যও
টাটার মতো বৃহৎ পুঁজির বিনিয়োগ মূল্যহীন;" বলে
মনে করেন অর্থনীতিবিদ্ অমিত ভাদুরি।
নেই কর্মসংস্থান এই উন্নয়নের দেশে ;পরিবর্তনের রাজ্যে।যে নেত্রী
একদিন টাটাদের এ রাজ্য থেকে খেঁদাতে পথে নেমে ছিলেন।ক্ষমতায় এসে আজ তিনিই শিল্প
পতিদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন আসুন শিল্প করুন পশ্চিমবঙ্গে।এমন উন্নয়নের পথ চাই
যেখানে কর্মসংস্থান দিয়ে শুরু,লক্ষ্য পাঁচ বছরের মধ্যে সকলের
সুনিশ্চিত জীবিকা।অন্তত: সুনিশ্চিত কর্মসংস্থান।
অর্থনীতিবিদ্ অমিত ভাদুরি বলেছেন;"আধুনিক বড় শিল্পে যেখানে দু কোটি টাকা বিনিয়োগে একটি চাকরি।ছোট শিল্পে গড়ে এক
কোটি টাকা বিনিয়োগে ১৫০টি চাকরি।পশ্চিম বাংলায় ফিবছর ১২লক্ষ কর্মপ্রার্থী যোগ
দিচ্ছেন।বড় পুঁজির কয়েকশ বা হাজার চাকরিতে ভবিষ্যৎ নেই।যুবক যুবতির ভবিষ্যৎ কৃষি ও
ছোট শিল্পের তথা অভ্যন্তরীণ বাজারের প্রসারের সঙ্গে জড়িত,এই
প্রসারের ফলে লাগবে ইঞ্জিনিয়ার,বিঞ্জানের স্নাতক,শিক্ষক আর ডাক্তার।"
মানুষ বিভাজিত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।আজ আর পিছবার জায়গা নেই।মর্যাদার
সাথে বাঁচার অধিকার আদায় করেনিতে আজ সংগঠিত হতে হবে মানুষ কেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে
সমস্তরকম আক্রমণের বিরুদ্ধে।
(সমাপ্ত)
তথ্য সূত্র:-
ক)সমাজ বিঞ্জান ও প্রকৃতি পরিচয়( বিশেষ সংখ্যা)তৃতীয় বর্ষ,তৃতীয় সংখ্যা,অক্টোবর ২০১৬
1)বাস্তার-অঘোষিত যুদ্ধ চলছে- শুভ দীপ
2)মাদার টেরিজা ও বিক্ষোভ দমনের রাজনীতি-কণিষ্ক চৌধুরী
3)রিভিউঃ মুসলিম এগেইন্সট পার্টিশন-শামসুল ইসলাম এবং জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গে কিছু
কথা-সুজয় মল্লিক
4)শিবাজি ও ধর্ম শিবাজির দৃষ্টিভঙ্গী(শহীদ গোবিন্দ পানসারের "কে ছিলেন
বাজি"অবলম্বনে)অনুবাদ: ড:সুব্রত রায়
5)প্রকৃতির গভীরে পাড়ি কিংবা বিঞ্জানে ইশ্বরের অন্তর্ধান- অমিতাভ চক্রবর্তী
6)ভারতবর্ষের ভূমি ব্যবস্থা-সংস্কার ও বিবর্তন-বৈদ্যনাথ সেনগুপ্ত
7)পশ্চিমবঙ্গ ভূমি সংস্কার আইন,১৯৫৫(পঞ্চম অধ্যায়ের পঞ্চত্ব
প্রাপ্তি) গৌতম তালুকদার
খ)আমরা বলছি শোন
জুলাই-অগস্ট ২০০৮, বর্ষঃ ২
1)ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি মার্কিন স্বার্থেই রচিত(উন্নায়ন না অন্তরঘাত
)গুরুপ্রসাদ কর
2)প্রত্যেকের হাতে কাজ: উন্নয়নের বিকল্প পথ
অর্থনীতিবিদ্ অমিত ভাদুরির সঙ্গে কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে।
অলভ্য ঘোষ
অলভ্য ঘোষ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন