বাস সেক্টর ফাইভে ঢুকলো, বৃষ্টির ফোঁটা যেন আরও ঘন-ঘন পড়ছে, হৃতেশ খেয়াল করল, পিছনে আর কথা শোনা যাচ্ছে না। আড়-চোখে সেই হাত দেখতে পেল – সামনে মেলে রেখেছে, বাসের দুলুনিতে অল্প অল্প
দুলছে। ফর্সা হাতে গাড় nail polish বেশ লাগছে। অফিসে
নিলাঞ্জনা,
দীপা, কোয়েল... এরা বেশ ফর্সা, পারমিতা একটু কালো। দীপা বোধহয় পাঞ্জাবী – বড়সড়
চেহারা। আসলে,
হৃতেশ মেয়েদের দিকে খুব বেশী তাকায় না, কলেজে বন্ধুরা হাসাহাসি করতো, “সালা ভীতু !!” হৃতেশ ঠিক ভীতু নয়, কিন্তু তাহলে ঠিক কি? কলেজে পড়তে শুভাশিসের বাড়িতে মাঝেমাঝে যাওয়া-আসা ছিল। শুভাশিসের তিন বোন – দুজন বড় আর একজন ছোট। বাবা রেলে-ক্লার্ক
ছিলেন,
রিটায়ার করে বজবজে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে গেলেন – আর শহরে থাকব না। আসলে, খরচ কমাতেই এই যুক্তি
দিয়েছিলেন। হৃতেশ মাঝেমাঝেই যেতো ওদের বাড়িতে, বোঝাবার
চেষ্টাও যে করেনি তাও নয় – কিন্তু স্মৃতি, জটিল করে দেয় পরিস্থিতি।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
কখনো
বৃষ্টি
শুভব্রত দাশগুপ্ত
জুনমাস শেষ হতে চলল, এখনও রোদ আর মেঘের মেলামেশা চলেইছে। এতো প্রেম গত-দুবছরে দেখা মেলেনি। কলকাতার
এক অংশে যদিবা একপশলা বৃষ্টির স্বাদ মিলল তো শহরের অন্য অংশে ঠাঠা রোদ। রাস্তায়
বিরক্ত চোখের আনাগোনা – কপালের ঘাম মুছতে-মুছতে আকাশের
দিকে তৃষিত চোখের চাউনি – আর কতদিন!!
হৃতেশের পিঠে ল্যাপটপ আর
যন্ত্রপাতির বোঝা, কানে ফোন নিয়ে এক্সাইডের মোড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,
- তুমি তো বললে বেলেঘাটা?
- কাস্টোমার যা বলেছিল... আমি তো আর নিজে নিজে...
নিলাঞ্জনা ওপার থেকে
কাঠকাঠ উত্তর দিল
- বেশ, বুঝলাম - তা এখন কোথায় বললে?
- সেক্টর ফাইভ। আমি মেসেজ করে দিচ্ছি। এইটুকু বলেছে কলেজ-মোড়ে
নামতে –
- উফফফ!!! তাড়াতাড়ি করো। আজ সারা কলকাতা ঘুরতে হবে।
হৃতেশের মুখে ক্লান্তি সুস্পষ্ট
- তুমি বাসে চড়ে যাও, দু-মিনিটে
পাঠাচ্ছি। তোমাকে, প্রয়োজন হলে ওখানেই আরও একটা কল দেবো – তার বদলে সোদপুর অন্য কাউকে পাঠাচ্ছি।
নিলাঞ্জনার রিনরিনে গলা
ভেসে এল
- বাঁ-চা-লে !!!
হৃতেশ যেন স্বস্তি পায়
আজ কলেজের বন্ধুদের
গেট-টুগেদার। সাতটার মধ্যে অলিপাবে ঢুকতে হবে – মোট
৮জন। মাকে বলা আছে, রাত হবে।
একটা হুড়োহুড়ি দেখেই
হৃতেশও দৌড়ল,
নাকের সামনে দৈত্যাকৃতি AC12 এসে
ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়েছে। একদম ফাঁকা, পছন্দের সীট-ও ২সেকেন্ডে জোগাড় হয়ে গেল মাঝামাঝি জানলার পাশে। এসির ফুরফুরে
হাওয়ায় রাস্তার বিরক্তিভাবটাও যেন উধাও। ইতিউতি সীট বেশিটাই ফাঁকা, তারই মধ্যে দাঁত-বের করা একটা দেহাতি যেন আকাশ ফুঁড়ে ঝপ করে পাশের সীটেই এসে
ঝাঁকিয়ে বসল। সবে নিজের সৌভাগ্যের সুখ-টা উপভোগ করার চেষ্টা করছিল হৃতেশ, এই ব্যাটা ঘাড়ের উপর বসে ষোলআনার মধ্যে আটআনা এককোপে উড়িয়ে দিল। দাঁতের কোনা
দিয়ে শুধু বলল,
“একটু সরে...”
দুটো স্টপ পেরতে না
পেরতে,
হলুদের হিল্লোল তুলে বাসে এক নারীর প্রবেশ। হৃতেশ অন্যমনস্ক
ছিল,
শুধু অনুভব করল তার শরীরি উপস্থিতি পিছনের জানলার সীটে।
ঝলকে পারফিউম হৃতেশের নাকে প্রবেশ করে মনে পরিয়ে দিল গত রবিবার শপার-স্টপে এক
সেলস্ম্যান ঠিক এই-রকমই গন্ধ যেন তাকে শোঁকাচ্ছিল, “স্যার
!! কম-দামের মধ্যে এই জিনিস পাবেন না।
দারুণ চলছে!!”
ভুল তো বলে নি – হাতেনাতে প্রমান !!
- হ্যাঁ, হ্যালো? বাসে
উঠে গেছি। ......জানলার পাশের সীট !!
যেন একঝাক ঘণ্টা বেজে
উঠলো।
সোজা হয়ে বসে পাশের
লোকটার দিকে তাকিয়ে হৃতেশের রাগটা আরও জোরালো হল। সব সময় দেখেছে, সুন্দরী মহিলারা কখনই তার পাশে বসে না বা বসতে পারেনা। এটা ভাগ্য না আর কিছু
জানা নেই।
- এবার বলুন, কি যেন বলছিলেন তখন ? ......কে আমি? না না,
একদমই ভাবছি না। ......আমি এ-ব্যাপারে খুব – উঁহু উঁহু!! কি যে বলেন!!
কোনক্রমে টাল সামলাতে
সামলাতে কন্ডাকটর এসে হাজির, হৃতেশ বুক-পকেটেই ৫০টাকার নোটটা
রেডিই রেখেছিল,
“কলেজ মোড় !!”
- একমিনিট !! একটা
৩০... !! পিছনের সীট থেকে মিষ্টি শব্দটা
আরেকবার...
হৃতেশ আন্দাজ করল, মহিলা তারই কাছাকাছি কোথাও নামবে। মুহূর্তে ফোনটা আবার বেজে উঠল, আবার নিলাঞ্জনা?
- কি হল?
- হৃতেশ? শোন না, আগে
রাজারহাট যেতে হবে। তোমাকে এই মাত্র address মেসেজ
করেছি, সেক্টর ফাইভ এক্ষুনি না গেলেও
হবে। আমি কথা বলে নিয়েছি – সরি!! কিচ্ছু করার নেই –
- এইমাত্র টিকিট কেটে ফেললাম !!
- চেঞ্জ করো – অন্য বাসে যাও! যা হোক কর...
আমি পরে ফোন করছি, OK?
হৃতেশ কন্ডাকটর-কে হাঁক পাড়ল, “দাদা এটা রাজারহাট যাবে?” পাশের লোকটা উপরপড়া হয়ে উত্তর
দিলো,
- যাবে যাবে!! আমিও যাচ্ছি
…কোথায় নামবেন ?
যেন শুনতে পায়নি ভান করে, কন্ডাকটর-কে টিকিটটা বাড়িয়ে দিলো হৃতেশ, “চেঞ্জ
করে দিন না!” চাকরিটার সব ভাল, বাইরে-বাইরে থাকলে মনটাও হাল্কা বোধ হয় – কিন্তু
এই শেষ মুহূর্তের দৌড়াদৌড়ি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্লান্তিকর লাগে। মানস, কল্যাণ,
বিমান, ইন্দ্র... ওদেরও একই কথা।
একসঙ্গে নয়নয় করে দেড়টা বছর তো কাটল – এবার job change না করলেই নয়, বিমান তো তলেতলে চেষ্টা করছেই !
- এটা আমি বিশ্বাসই করি না! …না না, মেয়ে বলেই কি বিয়ে করতে হবে না কি?
হৃতেশ ভুলেই গেছিল, চট করে পিছনে ঘাড় ফেরানোর চেষ্টা করে – জানলার
উপর ভর দিয়ে ফর্সা, সুডৌল হাত, তাতে
বাহারি চুড়ি বাসের দোলায় দুলছে। রাধাচূড়ার রঙের পোশাক আর খোলা-চুল অল্প-অল্প দেখা
যাচ্ছে। এরপর বেশী তাকানোটা অসভ্যতার পরিচয়। হৃতেশের খুব-খুব মনে হল, সুন্দরীই হবে! গলাটা যা শুনেছে, সুন্দরী না হলে দুঃখ পাবে। তাতে
কার কি এসে যাবে সে বলা মুশকিল, কিন্তু কিছু-কিছু আশা পূর্ণ হতে
দেখলে মনটা ভাল হয়ে যায়।
- দেখুন, মা আর আমি ... বেশ আছি। এসব
ভাবনা না ভেবে কোন ক্ষতি তো হয়নি - হয়েছে? বলুন? আমি মনে করি, মেয়েদের নিজস্বতা, খুব-খুব
...... না না,
তা কেন? সে কখন বললাম? ...... আহা,
বিয়ে করবো না, এ কথা তো বলিনি ! এটা
যার-যার ব্যাপার, আমি সেটা নিয়ে ...... (খিলখিল করে
হাসি) আপনি না!! একি !! পছন্দ না হলে, এতক্ষণ
তো... না না আসলে আমি খুব choosy !!
হৃতেশের বেশ লাগছে, লুকিয়ে নিষিদ্ধ আলোচনা শোনার মজাই আলাদা। বিশেষ করে সুন্দরীদের – নাহ !! সুন্দরী ছাড়া ভাবাই যাচ্ছে না – নির্ঘাত
সুন্দরী!! শুধু,
বিয়ে না করে কেন বসে আছে, এটা
ঠিক বোঝা যাচ্ছে না...
- আচ্ছা, আপনিই বা আমার পিছনে পড়ে আছেন
যে?
বাংলাদেশে কি মেয়ের... ওই বাজে কথা একদম বলবেন না - (খিলখিল করে হাসি) জানি জানি!! পুরুষদের যেন
চিনতে বাকি ... (খিলখিল করে হাসি) আচ্ছা বেশ, বুঝলাম
– তা এবার বলুন তো, আজ সকাল-সকাল কি ভেবে... (খিলখিল করে হাসি) বাপরে !!! এতো কাব্যও আসে
দেখছি?
...... এই গরমে? না না !! আমি শুধু অফিস আর
বাড়ি।
হুম... বোঝা গেল, পাণিপ্রার্থী !! বেশ নাছোড়বান্দা public !!! ছেলেগুলোও
হয়েছে…
সেদিন ইন্দ্র বলছিল, ওর
মামাতো-না-পিসতুতো ভাই দমদমে বাড়ি ......হাওয়া !! দুদিন পর পুলিশ উদ্ধার করল রিষড়া
থেকে –
এক বিহারী মেয়ের সাথে লোপাট। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আনা হল, আবার ১৫দিন যেতে-না-যেতে... বিশ্রী কাণ্ড, দ্বারভাঙ্গায়
পালিয়েছে। সেখানেই মেয়েটার বাড়ি। তারাই ধরে বিয়ে দিয়েছে, এখন
ব্যাটা বুঝেছে –
কেস গুবলেট।
- একেবারে বিয়ের পিঁড়ি ? অ-স-ম্ভ-ব
!! জানি-না-শুনি-না (খিলখিল করে হাসি) ...!! এটাকে জানা বলে? No Sir !! আমি অত সহজে ফাঁদে পা দিচ্ছি না !! (খিলখিল করে হাসি) ...... সে আপনি যাআআ
ইচ্ছে ভাবতে পারেন – কেন কেন? মা কি
বলবে?
আমি কি কারোর গলগ্রহ নাকি? যা
আমার income,
I can… নিশ্চয়ই, ছেলে বলে আপনি decide করবেন as
per your wish ... আহাহাহা !! যাকগে, কি
বলতে ফোন করলেন সেটা শুনি ?
বা-বা-রে !! এটা শুধু
ভণিতা ছিল?
এরপর আসল কথা? হৃতেশের বুক কেঁপে ওঠে।
মা বলছিল ছোটমাসি নাকি হৃতেশের বিয়ের সম্বন্ধ দেখার কথা বলছে। দূরসম্পর্কের কেউ
তার মেয়ের জন্য,
কি সব কি সব... হৃতেশ হ্যাঁ না কিছু বলে নি। এখন তো ভাবতে
হবে?
পরমা ছাড়াতে-ছাড়াতে
বৃষ্টির দেখা মিলল – আকাশ কালো করে আছে, টপটপ
করে বড় ফোঁটা পড়ছে, তাতে যেন আরও ভেপ্সে উঠছে চারপাশ – এসি-বাসে বসেও বেশ বোঝা যাচ্ছে। আয় আয় আরও বৃষ্টি আয় !!
- এখানে বৃষ্টি !!! আপনার ওখানে হচ্ছে? ... হচ্ছে না?
– যাআআ !! হবে হবে... ধৈর্য ধরুন। ... আমার ভিজতে খুব মজা
লাগে। তবে অফিসে যাচ্ছি তো !! ...... না না ছাতা আছে, বাস-স্টপ
থেকে ২-৩মিনিট... তেমন জোরে হলে দাঁড়িয়ে যাব। ওফ!! এখনই এতো চিন্তা? (খিলখিল করে হাসি)
হৃতেশও জানে এসব
চিন্তা-ফিন্তা কিচ্ছু নয়, মেয়ে ফাঁসানোর কথাবার্তা – এইসব ছেলেরাই মেয়েগুলোর মাথা খেয়ে রেখে দিয়েছে !! মেয়েগুলো হচ্ছে আরও নচ্ছার -
অফিসে কাজ করে পারমিতার
কলেজ-ফ্রেন্ড,
মালা সাধুখাঁ – আলাপ হয় কিছুদিন আগে।
কর্মসুত্রে হায়দ্রাবাদে থাকে বছর-দেড়েক ধরে – কলকাতায়
boyfriend
আর হায়দ্রাবাদে live-together করে
আরেকজনের সাথে।
হৃতেশ অবাক চোখে
জিজ্ঞাসা করায়,
Gold Flake ঠোঁটের কোনায় কায়দা করে ধরে মালা মুচকি হেঁসে জবাব দিয়েছিল, “এলেম লাগে !!” মালা, কলকাতায়
এসেছিল ছুটিতে,
তার boyfriend বলেছে, “কি দরকার?
এখানেই চাকরি করো!!”
- আমি তো বাবা সাফ জানিয়ে দিয়েছি – হবে না
!!
মালা কাথ ঝাঁকিয়ে জানায়
- তা... boyfriend কি বলছেন?
হৃতেশ উৎসুক হয়
- এখানে থেকে-থেকে ছেলেগুলো ম্যাদা-মারা হয়ে গেছে... আর কি
বলবে?
চুপ করে আছে !!
মালা নাক তুলে আকাশের দিকে ধোঁয়া ছাড়ে।
- এসব... মানে, এইরকম জীবন ভাল লাগে?
হৃতেশ নিঃশ্বাস চেপে
থাকে
- I love challenges !!
মালার শরীর যেন
পাখনা-মেলা পাখি
হৃতেশ চুপ করে অন্যদিকে
তাকায়,
পারমিতা মুখ টিপে হাসে।
- শুনুন ! আমি অফিস যাচ্ছি – এখন
ছাড়ি!!...... আপনাকে তো বললাম, আমার ১টা থেকে ৮টা !! ...... না
না আজ হবে না,
আজ আমি মাসির-বাড়ি থাকব। আর হ্যাঁ, ওখানে
ফোনে কথা বলা মুশকিল - (খিলখিল করে হাসি) ওমা !! কে বলল আমি ভয় পাই? আসলে,
আত্মীয়স্বজনের সামনে ......(খিলখিল করে হাসি) ঠিক আছে, ঠিক আছে আমিও দেখবো !! একমাঘে তো শীত
যায় না!!
নিলাঞ্জনার ফোন, হৃতেশ চট করে অন করে, “বলো !!”
- সেক্টর ফাইভ আজ ক্যান্সেল !! কাস্টোমার এইমাত্র জানালো, আজ পারবে না... তুমি রাজারহাট করে আমাকে ফোন করবে - Ok?
- বুঝলাম…
হৃতেশ ফোন নামিয়ে রাখে
বাস সেক্টর ফাইভে ঢুকলো, বৃষ্টির ফোঁটা যেন আরও ঘন-ঘন পড়ছে, হৃতেশ খেয়াল করল, পিছনে আর কথা শোনা যাচ্ছে না। আড়-চোখে সেই হাত দেখতে পেল – সামনে মেলে রেখেছে, বাসের দুলুনিতে অল্প অল্প
দুলছে। ফর্সা হাতে গাড় nail polish বেশ লাগছে। অফিসে
নিলাঞ্জনা,
দীপা, কোয়েল... এরা বেশ ফর্সা, পারমিতা একটু কালো। দীপা বোধহয় পাঞ্জাবী – বড়সড়
চেহারা। আসলে,
হৃতেশ মেয়েদের দিকে খুব বেশী তাকায় না, কলেজে বন্ধুরা হাসাহাসি করতো, “সালা ভীতু !!” হৃতেশ ঠিক ভীতু নয়, কিন্তু তাহলে ঠিক কি?
কলেজে পড়তে শুভাশিসের
বাড়িতে মাঝেমাঝে যাওয়া-আসা ছিল। শুভাশিসের তিন বোন – দুজন
বড় আর একজন ছোট। বাবা রেলে-ক্লার্ক ছিলেন, রিটায়ার
করে বজবজে বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে গেলেন – আর শহরে থাকব না। আসলে, খরচ কমাতেই এই যুক্তি দিয়েছিলেন। শুভাশিসের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল সিনেমায় অভিনয়
করবে –
রীতিমত যাতায়াত করত নানা লোকের কাছে। হৃতেশ মাঝেমাঝেই যেতো
ওদের বাড়িতে,
বোঝাবার চেষ্টাও যে করেনি তাও নয় – কিন্তু
স্মৃতি,
জটিল করে দেয় পরিস্থিতি। স্মৃতি ছিল শুভাশিসের ছোটবোন, হঠাৎ জানা গেল সে হৃতেশকে মনে-মনে ভালবাসে – বিয়ে
করতে চায় !! শুভাশিস এইমারে কি সেই-মারে, “লুকিয়ে-লুকিয়ে আমার
বোনকে লাইন-মারছিস??”
হৃতেশ তো হতবাক, “বিশ্বাস কর...!!”
- আর আমার বাড়িতে এলে ঠ্যাং ভেঙে দেবো !!
- ওরে, আমি তোর মুখ থেকেই শুনছি ...
- কোন কথা শুনতে চাই না !!
পরে হৃতেশ বুঝেছিল, সিনেমাতে কাজ পেতে সুবিধা হবে এই চিন্তা করে বোনকেও সাথে নিয়ে যাওয়া-আসা
করেছিল শুভাশিস। সে সব জানার পর আর ওইমুখো হয়নি হৃতেশ।
- হ্যালো !! এইতো এসে গেছি !!
হৃতেশকে নাড়া দিয়ে সেই
প্রমীলাকণ্ঠ আবার ভেসে এল
বাঁ-পাস থেকে হলুদের
হিল্লোল হৃতেশকে বিবশ করে এগিয়ে গেল বাসের সম্মুখপানে। এসি-বাসের ঝাঁকুনিতে শরীরটা
দুলেদুলে নিজেকে সোজা রাখার চেষ্টা চালাতে থাকলো। হৃতেশ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলো, মাথায় বাহারি ক্লিপ দিয়ে চুল আঁট করে বাঁধা, দু-হাতে
রঙ-বেরঙের চুড়ি,
শরীরের আকর্ষক অংশগুলিও যেন ঘোষণা করছে – সুন্দরী !! হৃতেশ আকুল হৃদয়ে প্রার্থনা করে
–
মুখখানি একবার দেখতে পেলে বাসে ওঠাটা সার্থক হয় !!
- আস্তে পার্টনার !! Ladies -
ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে
কনডাক্টরের ঘোষণা
এসি-বাস বাধ্য-পশুটির
মতো স্টপে দাঁড়িয়ে পড়ল, সটান দরজা খুলে গেল – রাধাচূড়া রঙ মুহূর্তে চোখের সামনে থেকে মিলিয়ে গেল। হৃতেশ এক-মুহূর্তের জন্য
চোখ বুজে ফেললো। এই মুহূর্তটা সে মনে রাখতে চায় না, বাসে
তার মন আর টিকিয়ে রাখতে পারছে না –
ঝোড়ো-বাতাস আর ঝমঝম করে
বৃষ্টি সব ধুয়ে দিয়ে যাচ্ছে – ধূসর-রঙের মেঘের মোড়কে দূরে
বাড়িগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে, হৃতেশের মনে হল – আহ কি বেআক্কেলে এই বৃষ্টি ? মেয়েটি কি পারবে এই অঝোর-ধারাতে
নিজেকে বাঁচাতে ? পাশের লোকটা খুশিতে ঝকমক করে উঠলো, “আহ !! খুব দরকার ছিল, দুদিন ধরে কোন বৃষ্টি হচ্ছে না
!!”
হৃতেশ দাঁত চিবিয়ে বিড়বিড় করে – nonsense !!
শুভব্রত
দাশগুপ্ত