অক্টোবর বিপ্লবের ফলভোগীও সারাবিশ্ব। কিন্তু অক্টোবর বিপ্লব কার্যত অসমাপ্ত। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের মধ্যেই অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়ী হওয়ার শর্ত নিহিত ছিল। বড় ধরণের ঝড় তুললেও পরিণতির দিকে যাওয়ার আগেই সেটা দিকভ্রান্ত হয়ে মিলিয়ে যায়। পৃথিবী ফের চলে যায় পুরোনো জায়গায়। অক্টোবর বিপ্লবের পশ্চাদপসরণের কারণে বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া শোষণ, একচেটিয়া আধিপত্য ও লুটতরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শোষণ-লুটতরাজ চলছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি, আরো হিংস্র, আরো নিষ্ঠুর, আরো বর্বরোচিতভাবে। নানা ছল-ছুতোয় চলছে যুদ্ধোন্মাদনা, সেই
সঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা। নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুন চলছে বিচারহীনভাবে। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ, নতুনরূপে ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফলে যে কারণে অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, তার আবেদন এতটুকু ফুরায় নি। বরং তা অনুভূত হচ্ছে আরো শতগুণে।~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মহান অক্টোবর বিপ্লব প্রসঙ্গে
ইমাম গাজ্জালী
এক
মহান অক্টোবর বিপ্লব মানবজাতির ইতিহাসে এক অনন্য মাইল ফলক। অক্টোবর বিপ্লব হল ফরাসী বিপ্লবের আরো পরিশীলিত, আরো অগ্রবর্তী, আরো সুপরিণত রূপ। লেনিনের জবানিতে, ‘রাশিয়ার
বিপ্লবের সরাসরি ও আশু কর্তব্যটা ছিল বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক, মধ্যযুগীয়তার অবশেষগুলোর উচ্ছেদ, সেগুলোকে শেষ পর্যন্ত চূর্ণ করা, রাশিয়া থেকে এই বর্বরতা, এই লজ্জা ... প্রগতির এই প্রচণ্ডতম বাধার বিলুপ্তি। ... মহান ফরাসী বিপ্লবের চেয়েও বেশি দৃঢ়ভাবে, বেশি দ্রুত, বেশি সাহস ও সাফল্যের সঙ্গে এবং জনগণের ওপর প্রতিক্রিয়ার দিক থেকে বেশি ব্যাপক ও গভীরভাবে সম্পন্ন হয়েছে অক্টোবর বিপ্লব।’
‘রাজতান্ত্রিক জঞ্জালটা আমরা এমনভাবে ঝেঁটিয়ে সাফ করেছি যে, যা কেউ আগে করেনি, কখনো করেনি। অধিকার-ভেদ ব্যবস্থার যুগযুগের ইমারতটার একটা পাথর, একটা ইটও আমরা বাকি রাখি নি। অধিকার-ভেদের সবচেয়ে গভীর মূল অর্থাৎ ভূমিস্বত্বে সামন্ত্রতন্ত্র ও ভূমিদাস প্রথার জের আমরা পুরোপুরি উৎপাটিত করে দিয়েছি।’ ফরাসী বিপ্লবের যে মর্মবস্তু, তার সঙ্গে অক্টোবর বিপ্লব শুধু একটি অতিশয় বিষয় যুক্ত করে দিয়েছে, তা হল সম্পত্তির যৌথ মালিকানার প্রশ্নটি।
ফরাসী বিপ্লবের ফলভোগী সারাবিশ্ব, ফরাসী বিপ্লব কার্যত পরিসমাপ্ত, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপোস করলেও ওই বিপ্লবের পর আগেকার পৃথিবীতে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়।
বিপ্লব মানে হল উৎপাদন সম্পর্কে পরিবর্তন। এক উৎপাদন সম্পর্ক থেকে আরেক উৎপাদন সম্পর্কে উল্লম্ফন। সেই নিরিখে ফরাসী বিপ্লব সামন্ততন্ত্র তথা রাজতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এরপর আর সামন্ততন্ত্রে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। ফরাসী বিপ্লব যে সামন্ততন্ত্রকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছিল, এর জেরে এমনকি অনুন্নত দেশেও সামন্ততন্ত্রের টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। উপনিবেশের হাত ধরে সে সব দেশে পুঁজিবাদ চলে আসে। এরপর সেখানে আর সামন্ততন্ত্র প্রধান শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে পারেনি। কোথাও কোথাও টিকে থেকেছে উপনিবেশিক শাসকদের অনুকম্পা নিয়ে। যে সামন্ততন্ত্রকে দেশীয়রা উচ্ছেদ করতে পারত নিজেদের মত করে, সেখানে উপনিবেশিক শাসকরা সেই কাজ করেছে তাদের স্বার্থ ও সুবিধা মত। যার কারণে পুরোপুরি উচ্ছেদ না হলেও উপনিবেশিক দেশে সামন্তবাদ আর প্রধান শক্তি হিসেবে টিকে থাকতে সক্ষম হয়নি। বিশ্বজুড়ে সামন্ততন্ত্রের পতন কিংবা প্রধান শক্তি হিসেবে টিকে না থাকার মধ্যেই ফরাসী বিপ্লবের বিজয়ী হওয়ার কারণ নিহিত রয়েছে। বঙ্গে সতীদাহ প্রথার বিলোপ ও বিধবা বিবাহের প্রচলন পরোক্ষভাবে ফরাসী বিপ্লবের জের। এছাড়া নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠাও ফরাসী বিপ্লবের ফল।
দুই
অপরদিকে, অক্টোবর বিপ্লবের ফলভোগীও সারাবিশ্ব। কিন্তু অক্টোবর বিপ্লব কার্যত অসমাপ্ত। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদের মধ্যেই অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়ী হওয়ার শর্ত নিহিত ছিল। বড় ধরণের ঝড় তুললেও পরিণতির দিকে যাওয়ার আগেই সেটা দিকভ্রান্ত হয়ে মিলিয়ে যায়। পৃথিবী ফের চলে যায় পুরোনো জায়গায়। অক্টোবর বিপ্লবের পশ্চাদপসরণের কারণে বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া
শোষণ, একচেটিয়া আধিপত্য ও লুটতরাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শোষণ-লুটতরাজ চলছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরো বেশি, আরো হিংস্র, আরো নিষ্ঠুর, আরো বর্বরোচিতভাবে। নানা ছল-ছুতোয় চলছে যুদ্ধোন্মাদনা, সেই সঙ্গে ধর্মীয় উন্মাদনা। নির্যাতন, হত্যা, গুম, খুন চলছে বিচারহীনভাবে। গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা হরণ, নতুনরূপে ফ্যাসীবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফলে যে কারণে অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল, তার আবেদন এতটুকু ফুরায় নি। বরং তা অনুভূত হচ্ছে আরো শতগুণে।
অক্টোবর বিপ্লব পরিণতির দিকে যায় নি। বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদই অক্টোবর বিপ্লবের সঠিক ও যৌক্তিক পরিণতি। এই বিপ্লবের ভরকেন্দ্র ছিল সেই সময়ের অনুন্নত রাশিয়াতে। কারণ রাশিয়া ছিল সাম্রাজ্যবাদের দুর্বল গ্রন্থি। ভরকেন্দ্রটি উন্নত পশ্চিম ইউরোপে অবস্থান করলে যে তেজ নিয়ে দাঁড়াতে পারত, যে সম্ভবনা নিয়ে আসতে পারত, অনুন্নত রাশিয়ার ক্ষেত্রে তা সম্ভবপর ছিল না। উন্নত পশ্চিম ইউরোপে যেমন তখনকার ব্রিটেন, ফ্রান্স কিংবা জার্মানিতে ওই ধরণের বিপ্লব সংঘটিত হলে সেটা হত আরো পরিপক্ব, আরো তেজি, আরো জোরালো, আরো অপ্রতিরোধ্য। বিপ্লবের ভরকেন্দ্রটি হত অনেক বেশি শক্তিশালী। লেনিনের জবানিতে, ‘অগ্রসর
দেশগুলির অন্তত একটি দেশেও প্রলেতারীয় বিপ্লবের বিজয়ের পর খুবই সম্ভবত একটা বড় রকমের বদল ঘটত, তখন রাশিয়া আর আদর্শ দেশে নয়, ফের পরিণত হত একটা পশ্চাৎপদ দেশে (সোভিয়েতি ও সমাজতন্ত্রী অর্থে)।’ তার পরেও এই বিপ্লব বিশ্বজুড়ে যে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়েছিল, সেটার ফলাফল অপরিমেয়।
তিন
যখন অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত হয়, সে সময় আমরা ছিলাম ব্রিটিশ উপনিবেশের অধীন। ব্রিটিশরা প্রায় দুই শত বছর এখানে রাজত্ব করেছিল। এশিয়া-আফ্রিকা-ল্যাটিন আমেরিকাও ছিল উপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও লুন্ঠনের যাঁতাকলে পিষ্ট। অক্টোবর বিপ্লব সংঘটিত না হলে বিশ্বজুড়ে উপনিবেশিক শাসন-শোষণ-লুণ্ঠনের অবসান এত তাড়াতাড়ি হত কিনা সন্দেহ। বলশেভিক বিপ্লবের চেতনা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল যে, এর প্রভাবে উপনিবেশিক দেশগুলোতে এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল। দেশে দেশে গড়ে ওঠে কমিউনিস্ট পার্টি। সেই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইও শতগুণে তেজি হয়ে উঠে। ফলে পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হয় উপনিবেশিক-সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো। ফলে উপনিবেশের পতনে বলশেভিক বিপ্লবের অবদান অস্বীকার করার উপায় নাই।
যে সকল দেশে উপনিবেশবাদ বিরোধী জাতীয় মুক্তির লড়াই কমিউনিস্টদের নেতৃত্ব সংঘটিত হয়েছিল, সে সকল দেশে সমাজতন্ত্র অভিমুখী (জনগণতন্ত্র, নয়াগণতন্ত্র, জাতীয় গণতন্ত্র) বিপ্লবের মাধ্যমে উপনিবেশের পতন সংঘটিত হয়েছিল। যেমন চীন, ভিয়েতনাম ইত্যাদি। উপনিবেশিক দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভিয়েতনামের মত আরো কয়েকটি দেশে, বিশেষত তখনকার ভারতবর্ষে সমাজতন্ত্র অভিমুখী বিপ্লব সংঘটিত হলে, বিশ্ববিপ্লবের ভরকেন্দ্র হিসেবে সোভিয়েত রাশিয়ার যে সীমাবদ্ধতা ছিল, তা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হত। সোভিয়েত রাশিয়া, গণচীন ও ‘সমাজতান্ত্রিক ভারতের’ যৌথ শক্তিদিয়ে বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদকে পরাস্ত করা একেবারেই অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু লেনিনোত্তর রাশিয়ার কমিউনিস্ট পার্টির বিভ্রান্তিকর রাজনৈতিক লাইন অনুসরণ করতে গিয়ে এসব উপনিবেশিক দেশের কমিউনিস্ট পার্টিও এক ধরণের ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যায়। যেমন উপস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই থেকে সরে এসে অনুপস্থিত ফ্যাসীবাদ বিরোধী লড়াই গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়। ফলে গুরুত্বহীন হয়ে ওঠে তাদের রাজনৈতিক সংগ্রাম। কিন্তু সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াই থেমে থাকেনি, কারো জন্য অপেক্ষা করেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশবাদের পতন ঘটে। এরই সঙ্গে শেষ হয় প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগ। পৃথিবী এখন পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগে প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে, সোভিয়েত আমলের রাশিয়ার অভাবনীয় উন্নতি, শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় উৎকর্ষ, জীবন যাপনের মানোন্নয়ন, ক্রীড়ার ক্ষেত্রে নৈপুণ্য, মহাকাশ বিজ্ঞানে সাফল্য সোভিয়েত রাশিয়াকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়। ফলে উন্নত পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তা ঈর্ষার কারণ হয়ে ওঠে। শ্রেষ্ঠত্বের হুমকির মধ্যে পড়া পশ্চিম ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নিজ দেশের শ্রমিকদের জীবন যাপনের মানোন্নয়নের দিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। ফলে আজকের যুক্তরাষ্ট্রের ও ইউরোপের শ্রমিকরা যতটুকু সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন, তার পেছনেও রয়েছে মহান অক্টোবর বিপ্লবের অবদান। শুধু কি তাই, জার্মানিতে হিটলারের নেতৃত্বে এক অপ্রতিরোধ্য ফ্যাসীবাদের উত্থান হয়েছিল। বড় কথা হল সেই ফ্যাসীবাদের বিপদ থেকেও পৃথিবীকে রক্ষা করেছে মহান অক্টোবর বিপ্লব।
চার
এখন চলছে পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রায় সবগুলো দেশেই সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ শোষণের অবসান ঘটেছে। নানা সীমাবদ্ধতা ও সমালোচনা সহ উপনিবেশিক দেশগুলো স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এ সকল দেশে পুঁজিবাদের দ্রুত বিকাশ ঘটে ও পুঁজিবাদী সমাজ গড়ে উঠে। এ সকল দেশ নানা সীমাবদ্ধতাসহ বস্তুত স্বাধীন পুঁজিবাদী দেশে ও রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন বুর্জোয়া রাষ্ট্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশও তেমনি একটি দেশ।
তবে এটা ঠিক যে, ইউরোপের দেশে দেশে যেভাবে পুঁজিবাদী বুর্জোয়া সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে উঠেছিল, যে ধরণের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল, বাংলাদেশসহ এসব স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশে সেভাবে পুঁজিবাদী বুর্জোয়া সমাজ ও রাষ্ট্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। ইউরোপের মত না হলেও এসব দেশে আধুনিক সমাজের আদলে এক ভিন্ন ধরণের বিকৃত, অনুন্নত, অপরিপক্ব বুর্জোয়া রাষ্ট্র গড়ে ওঠে, যা ছিল উপনিবেশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বুর্জোয়া রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা ও সম্প্রসারণ (Extension)। এতদসত্ত্বেও উপনিবেশের শৃঙ্খলমুক্ত এসব দেশের শাসক শ্রেণি নানা বিকৃতি ও সীমাবদ্ধতাসহ বুর্জোয়া শ্রেণি। এইসব দেশগুলিতে জারি আছে দেশীয় পুঁজিবাদ এবং দেশীয় শাসক বুর্জোয়া, বুর্জোয়া রাষ্ট্র ও সরকারের শোষণ, লুটতরাজ ও নির্যাতন। পাশাপাশি সাম্রাজ্যবাদের শোষণও বিদ্যমান। পরোক্ষ সাম্রাজ্যবাদের যুগে এ সকল দেশে বিপ্লবের জন্য সময়ের দাবি হল ভিন্ন রণনীতি ও ভিন্ন রণকৌশল। প্রত্যক্ষ সাম্রাজ্যবাদ বা উপনিবেশবাদের যুগের রণনীতি, রণকৌশল দিয়ে এ যুগে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদ সম্ভব নয়।
এই যুগ হল লেনিনোত্তর বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিপ্লবী পুনর্গঠনের যুগ। লেনিনোত্তর বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের বিচারমূলক পর্যালোচনা ও সারসংকলনের যুগ। এই যুগ হল কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুনরুত্থান ও পুনরুজ্জীবনের যুগ। লেনিনোত্তর রাশিয়া ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ভ্রান্ত রাজনৈতিক তত্ত্বগত লাইনকে বিচারমূলক পর্যালোচনা করে কমিউনিস্ট আন্দোলনের রেনেসাঁ সৃষ্টির যুগ।
এশিয়া-আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার এই সব দেশে বুর্জোয়া শাসক শ্রেণির সীমাহীন শোষণ-লুণ্ঠন-নির্যাতনে সাধারণ জনগণ বিশেষত মেহনতী নরনারী অতিষ্ঠ। এসব দেশের শ্রমিকরা বিদেশে শ্রম বিক্রি করতে গেলে মর্যাদাহীন, নির্যাতনমূলক ও দাসোচিত জীবন যাপন করতে বাধ্য হন। এদের বইতে হচ্ছে উপনিবেশিক আমলের জঞ্জাল - রাষ্ট্র ও প্রশাসনের জোয়াল। এসব দেশের শ্রমিকরা, মেহনতী নরনারী উপনিবেশিক আমলের চেয়ে আরো কঠোর, আরো বর্বরোচিত শোষণের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের ওপর সাম্রাজ্যবাদীরা চাপিয়ে
দিয়েছে এক অন্যায় যুদ্ধ। বিপ্লব ছাড়া এসব যুদ্ধ থেকে এই কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষকে কে নিষ্কৃতি দেবে? এই দাসোচিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে, এই উপনিবেশিক জঞ্জালটাকে ঝেড়ে ফেলে দিতে, সীমাহীন শোষণ ও লুটতরাজকে উচ্ছেদ করতে আর কোন পথ খোলা আছে? সুশাসন? স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা? আইনের শাসন? এসব গালভরা বুলিসর্বস্ব কথা দিয়ে কি এর সমাধান সম্ভব? নাকি বিপ্লবী আন্দোলনেই এর সমাধান মেলে? আমাদের মতে, স্বাধীনতাপ্রাপ্ত এই
সব দেশের এই শোষণ, লুণ্ঠন, নির্যাতন ও যুদ্ধ থেকে মুক্তি পেতে বিপ্লব ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নাই। তাই এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার এই সাবেক উপনিবেশিক দেশগুলোই হল এ যুগের বিপ্লবের ভরকেন্দ্র।##
ইমাম গাজ্জালী