টীকা ছাড়াও টিকে আছি
লকডাউনের জেরে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ক্ষতির সম্মুখীন
হয়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি। সবচেয়ে বেশি মার খেয়েছে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি
শিল্প। অর্থনীতির বণ্টন বৈষম্য আরও বেড়েছে। ধনীরা আরও ধনী হয়েছেন। গরিব আরও গরিব।
মোটের উপর আর্থিক সঙ্কট তৈরি হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্র বিরাট লাভবান হয়েছে অতিমারির
সময়ে। এই সময়টায় শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে নার্সারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়
এর শিক্ষণ সমস্ত কিছু অনলাইন হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোম এবং অনলাইন ক্লাসের জন্য
ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের বিক্রি ব্যাপক হারে বেড়েছে। এই সবের জন্য নতুন নতুন
প্রযুক্তি যাঁরা তৈরি করছেন, তাঁদের ব্যবসা বাড়ছে। একই ভাবে মাস্ক, স্যানিটাইজার-সহ
চিকিৎসাসামগ্রী তৈরির সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলিও তাদের ব্যবসা বাড়ানোর বিপুল সুযোগ
পেয়েছে। সব মিলিয়ে অনেকগুলি রাস্তা খুলে গিয়েছে। নতুন নতুন সম্পদশালী তৈরি হচ্ছেন।
এই করোনা সঙ্কটের মধ্যেও বিগত কয়েক মাসে আমাদের দেশে নতুন ১৫ জন বিলিওনিয়ার তৈরি
হয়েছে। ফোর্বস পত্রিকার রিয়েল টাইম বিলিওনিয়ারের তালিকায় আপাতত মোট ১১৭ জন ভারতীয়। অথচ লকডাউনের মাস মার্চ
মাসে এই সংখ্যাটা ছিল ১০২। আর এই ১১৭ জন সম্পদশালী ভারতীয়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ
৩০ হাজার কোটি ডলার। বোঝাই যাচ্ছে যে করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজি ও পুঁজিতন্ত্রের
বিন্যাস এলোমেলো। অর্থনৈতিক এই গাড্ডাটি নতুন নয়, ছিলই। ওপরের চাকচিক্য ও জাঁকজমক
দেখে তা বোঝবার উপায় ছিল না। বিশ্বব্যাপী
বাজারে ছেয়ে থাকা উজ্জ্বল পণ্যসমাবেশ, ৪২হাজার ছুঁয়ে থাকা শেয়ারবাজার, এখানে সেখানে ইয়াব্বড়ো
ছাপান্ন-আটান্ন-ষাট-পঁয়ষট্টি ইঞ্চি ছাতিওয়ালা নেতাদের সদর্প দাপাদাপি, একদিকে
জাতিরাষ্ট্র-জাতীয়তাবাদ, অন্যদিকে বিশ্বায়নের শান্তিবাণিজ্য বুলি আউড়ে প্রকৃতি ও
সমাজকে তছনছ করা, এসবের
আড়ালে আসলে পুঁজিতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু হাল ২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকেই গত
এক-দশকের বেশি সময়কাল ধরে স্পষ্টতর, করোনা-পরিস্থিতি সে সঙ্কটকে শুধু আরো গভীরই করেনি, গোটা পুঁজিতান্ত্রিক
ব্যবস্থাকে বেয়াব্রু করে ফেলেছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কালে কুখ্যাত স্প্যানিশ ফ্লু, ১৯২৯-৩০ এর মহামন্দা
এবং তৎপরবর্তী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, এসব মনে রেখেও বলা যায়, পুঁজিতন্ত্রের মোটামুটি গত
পাঁচশো বছরের ইতিহাসে — বিশেষত শিল্পবিপ্লব পরবর্তী সময়ে পুরো ব্যবস্থাটা সম্ভবত এর আগে ঠিক এইভাবে
বিশ্বজোড়া সার্বিক হামলার মুখে পড়েনি। সে অর্থে, বর্তমান সঙ্কট অভূতপূর্ব। প্রায়
সমস্ত শিল্প উৎপাদনপ্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ, বিশ্বের সর্বত্র নথিভুক্ত পঞ্জিকৃত বেকারের সংখ্যা ক্রমশ
বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধনী ও শিল্পোন্নত রাষ্ট্রকে ও আর্ন্তজাতিক
অর্থপ্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা এবং ত্রাণ বাবদ বিপুল পরিমাণ
অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। শুধু যে তথাকথিত শিল্প-উৎপাদনক্ষেত্র বিপর্যস্ত হচ্ছে তা
নয়। গত তিন দশক ধরে নিওলিবারল বাজার অর্থনীতি ও পণ্যবাণিজ্যের অভাবনীয় বিস্তারের
কালে যে যে ঝাঁ-চকচকে ক্ষেত্রগুলো দ্রুতগতিতে বেড়েছে, তার সবকটা একত্রে মুখ থুবড়ে
পড়েছে, নির্মাণ, পর্যটন, হস্পিটালিটি, অসামরিক বিমান পরিবহন, একচেটিয়া এবং বড় খুচরো ব্যবসা।
বাকি ক্ষেত্রগুলোও প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে সংকুচিত হচ্ছে
পুঁজিতন্ত্রের কাছে যে বিষয়টা অনেক বেশি চিন্তার, গত কয়েক দশক ধরে
অর্থপুঁজির যে বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল সেটিও অনেকাংশে গতিরুদ্ধ। রাষ্ট্রগুলো
বাজারের সাম্য বজায় রাখার জন্য যে লগ্নি করেছে, তাতে করে শেয়ার বাজারের সরাসরি
ধস সাময়িকভাবে আটকেছে বটে, সামগ্রিক নিম্নগতি রোধ করা যায়নি। লগ্নি এবং বিনিয়োগের
বিভিন্ন সম্ভাব্য ক্ষেত্রে সার্বিক সংকোচনের কারণে বর্তমান অর্থপুঁজির বাজারের
কেন্দ্রে আবর্তিত যে অর্থনীতি, তা বিপন্ন। ফলে, আপাত-উৎপাদন বহির্ভূত
(ননপ্রোডাক্টিভ), মুখ্যত
অনিয়ন্ত্রিত মুনাফাবৃদ্ধির যে ধূমধামাকা পুঁজিবাজারের কেন্দ্র হয়ে উঠছিল, তা আর কতদিন চালু থাকবে
তা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে। এখন কথাটা হল, কীভাবে পুঁজিতন্ত্রে ঘেরা এই
সমাজ ব্যাবস্থায় থেকে এই সঙ্কটকে দেখছেন কিংবা দেখবেন? করোনা মহামারি জনিত যে আপৎকালের
মধ্যে আমরা গড়পড়তা মানুষেরা হাবুডুবু, সেই গোলমেলে সময়ের
দাবি ও প্রয়োজনকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েও, মহামারি অবস্থায় এবং
তৎপরবর্তীতে এই মূল্যায়ন করা অবশ্যকর্তব্য।
এমন অবস্থায় রাষ্ট্র কী করে?
এই সঙ্কট আমার আপনার আর আমি আপনি মিলেই তো পাড়া,মহল্লা জেলা, রাজ্য দেশ তাহলে এই
সময়ে আমাকে ভালো রাখার দায়িত্ব কার? দেশের লোকের নিরাপত্তার দায়িত্ব কার? খাদ্যসঙ্কট নিরসনে মূল
ভূমিকা কার?
লোকে না
খেতে পেয়ে,
বন্যা
ঘূর্ণিঝড় ভূমিকম্পে, করোনায়
এবং হাঁটতে হাঁটতে মারা গেলে বা আরো দশ রকমের রোগব্যাধিতে ভুগে মারা গেলে, তা ঠেকানোর কথা কার? সবাই জানেন এই দায়িত্ব আমাদের মহামূল্যবান ভোট দানের
মাধ্যমে আমরা সরকার নির্মাণ করি সেই
রাষ্ট্রের।করোনার বাজারে পুরোনো মহামারী ও দুর্ভিক্ষ ইত্যাদির কথা আসছে। সরকার
দায়িত্ব নেবে। স্বাধীন দেশ বা রাষ্ট্র দেশের নাগরিকদের প্রতি তার সাংবিধানিক
দায়িত্ব পালন করবে। কেউ না খেতে পেয়ে অপুষ্টিতে ভুগে মরবেন না। কেউ বিনা চিকিৎসায়
মরবেন না। কেউ তাঁর জন্ম পরিচয়ের কারণে (ধর্ম, জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ) সামাজিক বৈষম্য-বঞ্চনার
শিকার হবেন না। রাষ্ট্রীয় অ-বিচারের শিকার হবেন না কেউ। একটি স্বাধীন দেশে এইরকম
হয়, হবারই কথা।
আর আমরা?
আমার দেশ জুড়ে আবার দেশ ভক্তির ঝড়। দেশ মানে
সংবিধান। দেশ মানেই রক্তে লেখা বলিদান। ধর্মীয় উন্মাদনায় ডুবে আছে দেশের মানুষ।
ধর্মীয় উন্মাদনা ও আবেগনির্ভর জাতীয়তাবাদের সঙ্গে পুঁজিতন্ত্রের সংশ্লেষ ও
সহাবস্থান,
এই
অবস্থাটা একশো বছরেও বদলায় নি শুধু সময়টা বদলে গেছে, সবাই মিলে ভোট দিয়ে রাজা তৈরি
করে, কিন্তু দেশকাল
নির্বিশেষে রাজাদের দাপটে প্রজার দল ত্রাহি ত্রাহি রব তুলছে। তবু বিশ্বাসীর দল
অনড়। কারণ রাজার মাহাত্যে ভরসা হারালে ঘোর নৈরাজ্য আসতে বাধ্য। এটা তো স্বাভাবিক
ছিলই। সামগ্রিক ভাবে ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে ব্যর্থ এই সরকার, দেশ জুড়ে জনপ্রিয়তার
গ্রাফ নিন্ম মুখী। NRC, CAA তে চূড়ান্ত হয়রানিতে ভারতবাসী। পরিকল্পনাহীন ভাবনার অবাস্তব প্রয়োগের
ফলে সারা দেশ এর অর্থনীতি বিপর্যস্ত। মেইড ইন ইন্ডিয়ার বদলে মেক ইন ইন্ডিয়ার সিংহ
আজ মরচেতে ভঙ্গুর। দেশের উৎপাদন বাণিজ্য
নিন্মমুখী। শিল্পনীতি একমুখী। স্বাস্থ্য পরিকল্পনা উন্নয়ন
শুধুই প্রচার সর্বস্য। এই সময় যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাই একমাত্র সম্বল। আর যুদ্ধের জিগির
তুলে দেশবাসীর ভাবনার অভিমুখ বদলে দেওয়ার আর এক চক্রান্ত। এই বিরুদ্ধ বিরোধিতায়
আমার আপনার মগজ চুরি করার জন্য হাজির এমন
প্রচুর গিরগিটি,
যারা এমন
"বয়কট " এর মত বিজ্ঞাপনে সামিল হয়ে নজর ঘুরিয়ে দেবে বেকারীর থেকে..৫১%
এর বেশি লগ্নী বলীয়ান বেসরকারি হয়ে যাওয়া প্রতিরক্ষা থেকে ব্যবস্থা বিলগ্নিকরন
থেকে।দেশের বনাঞ্চল ও খনিজ কর্পোরেটের
হাতে নিঃশব্দে সমর্পণের থেকে। শ্রম আইনের পরিবর্তনের থেকে।সার্বিক
স্বাস্থ্য বিধানের দায়িত্ব ভাবনার প্রশ্ন গুলি এড়িয়ে আমরা মেতে থাকবো বয়কটের
খেলায়।ফলত তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থা, কৃষকদের দারিদ্র্য, ক্রমবর্ধমান বেকারি ও
মূল্যবৃদ্ধি,
মন্দা এসব
নিয়ে ভাবতে যাবেন বলে মনে হয় না। আসলে, ভাবার ক্ষমতা, প্রয়োজন বা ইচ্ছা কোনোটাই তাঁদের নেই, তাছাড়া, না থেকেও দিব্যি চলে
যাচ্ছে।
এখন চেতনার জগতে তোলপাড় করে প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশের এই ঘোর দুঃসময়ে, খামোখা এসব চর্চায়
কালক্ষেপ করে কি হবে? করোনা
অতিমারী এবং তজ্জনিত খাদ্যসঙ্কট ও রেশনব্যবস্থার অসাম্য অবস্থা অথবা কেন্দ্র রাজ্য
সমীকরণ এসব ছেড়ে আমরা কপি বুক অর্থনীতিতে মন দিচ্ছি কেন? দিচ্ছি একারণে, যে করোনা বলুন আর রেশন
বলুন, কিছুই পুঁজিতন্ত্রের
বাইরে নয়। করোনা-বিপর্যস্ত ধনী ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান।
আমেরিকা থেকে ফ্রান্স-জার্মানি হয়ে ইংল্যান্ড অবধি একের পর এক দেশে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা
ভেঙে পড়ছে,
দেড় থেকে
দু মাস প্রায় সমস্ত উৎপাদন বন্ধ, বেকারির হার আকাশ ছুঁচ্ছে। শ্রমিক আন্দোলন বিপর্যস্ত, বড় সংগঠিত সংগঠন প্রায়
সর্বত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধাচারণে অক্ষম, অন্যরা, অর্থাৎ কম মজুরিতে কাজ করা বা তথাকথিত স্বনিযুক্ত
শ্রমজীবীরা,
কৃষিশ্রমিকেরা
এবং আর্ন্তদেশীয় ও অর্ন্তদেশীয় পরিযায়ী শ্রমিকেরা –এঁরা মুখ্যত অসংগঠিত। ফলে
শ্রমিক আন্দোলনের চাপে নিওলিবরেল অর্থনীতি রাষ্ট্রনির্ভর ওয়েলফেয়ার অর্থনীতি হয়ে
যাবে, এ সম্ভাবনা কম। বাকি
থাকে যুক্তির ও ন্যায়ের কথা। করোনায় পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে, ব্যবস্থাগত সঙ্কট তৈরি
হচ্ছে,
ঠিক।
কিন্তু ব্যবস্থাটা তো সঙ্কটের মধ্যে ছিলোই। বিশ্বব্যাপী খোলা বাজার আর অবাধ মুক্ত
বাণিজ্যের দর্শনকে চ্যালেঞ্জ করে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রগুলো ক্রমশ ফ্যাসিবাদ অভিমুখী
ডানপন্থী পরিচয়ের রাজনীতির দিকে ঝুঁকছিলো। পুঁজিতন্ত্র কিভাবে চলবে, রাষ্ট্র কী আচরণ করবে, তার সাথে যুক্তি বা
ন্যায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোক, করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক
রাজনৈতিক সঙ্কটের অভিঘাতে হোক, জাতিরাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী আক্রমণে হোক, কি বন্যায় দাবানলে
ঘূর্ণিঝড়ে দুর্ভিক্ষে এখানে ওখানে দু-দশ লাখ লোক মরলেও তাতে ব্যবস্থাটা আরো
যৌক্তিক বা ন্যায়পরায়ন হয়ে উঠবে না। যেটা বোঝা দরকার, সেটা হচ্ছে, পুঁজিতন্ত্রের যে গূঢ়
চলন, রাষ্ট্র সেখানে
ঐতিহাসিকভাবেই পরজীবী। গত তিরিশ-চল্লিশ বছরে পৃথিবীতে মোট যে পরিমাণ পুঁজি
সঞ্চালিত হয়,
তাতে
আমাদের চেনা তথাকথিত উৎপাদন ক্ষেত্রের(প্রোডাক্টিভ সেক্টর) ভাগ কমছে। বাড়ছে তুলনায়
অচেনা অর্থপুঁজি বা ফিন্যান্স ক্যাপিটাল। আজকের পৃথিবীতে কি শেয়ারবাজার কি
ফিন্যান্স বাজারে নতুন লগ্নি, তার প্রায় সবটাই ফাটকা। রাষ্ট্রের হাতে কত পুঁজি থাকে? রাষ্ট্র ব্যাংকের হাতে
তরল পুঁজি মাখাতেই থাকবে, এবং একইসঙ্গে, বেকার শ্রমিককে মজুরিও দেবে, লোকের খাদ্য-শিক্ষা-স্বাস্থ্যের
ব্যবস্থাও করবে?
ধরুন
ভারতের কথা – সরকারের কাছে কি এত পুঁজি আছে? অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, দরকার হলে টাকা ছাপাও।
প্রশ্ন,
কত টাকা
ছাপানো হবে?
কতদিন ধরে? ছাপানোর পর কী? ছাপানো টাকায় মূল্য
সংযোজন হবে কী করে? উৎপাদন
পুরো বন্ধ হয়ে থাকলে বা হঠাৎ করে অনেকটা কমে গেলে শেয়ারবাজার চাঙ্গা থাকবে কী করে? কতদিন?
তাহলে এই সংকট মোকাবিলায় কী
করণীয়?
চাই চিকিৎসা ব্যবস্থার
পুনর্নবীকরণ ও স্বাস্থ্য কর্মীদের পুনরুজ্জীবন :
বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে প্রতিটি দেশে যে সুদক্ষ
স্বাস্থ্য কর্মী রয়েছেন যাঁরা পোলিও বা অন্যান্য সামাজিক স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার
সাথে যুক্ত থেকে প্রান্তিক এবং সমানা সামনি ভাবে বিভিন্ন রোগ মোকাবিলা ও উন্নততর
স্বাস্থ্য বিধান কর্মসূচী রূপায়িত করে চলেছেন। তাদের কোভিড ভাইরাস বা
এই ধরনের মহামারী সম্পর্কিত কোনো প্রশিক্ষণ না থাকার কারনে কোভিড ভাইরাসের সার্বিক
সংক্রমণ ও বিশ্বব্যাপী প্রসার চলতে থাকা এই সাবেকি ব্যবস্থাপনার অন্তঃসার
শূন্যতাকে সামনে নিয়ে এসেছে। কোভিড ভাইরাস এর প্রাদুর্ভাব
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশাসনিক ভন্ডুরতা প্রকাশ করেছে। সঠিক সময়ে এই সংস্থার
দেওয়া পরামর্শ বিশ্বের কোনো দেশ সার্বিক ভাবে গ্রহণ করেনি। যেহেতু এই সংস্থাটির
অস্তিত্ব প্রতিটি দেশের অনুদানের উপর চালিত হয় সেক্ষেত্রে তার স্বাধীন ও নিরপেক্ষ
মতপ্রকাশ ও সেটি প্রতিটি দেশের মেনে নেওয়া ও তার প্রয়োগ সেই দেশের রাজনৈতিক
দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভর করে। আগামীতে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা প্রদান করা মানব জাতির নিজের স্বার্থেই
করা উচিত। বর্তমানে বিশ্বের সমস্ত স্থানেই one valve technique
এর
মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান করা হয়। স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার সাথে যুক্ত সমস্ত
স্তরের উপর্তলার কর্মকর্তাদের অন্তঃসার শূন্য জ্ঞান সংক্রমণ কে ত্বরান্বিত করেছে। মহামারীর পরবর্তী সময়ে সংক্রামক
রোগ ও তার মোকাবিলার জন্য সঠিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ। পেশাদার শিক্ষার পাঠ্যক্রম কে
পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত করা। মহামারী মোকাবিলার জন্য Task Force গঠন, মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী
নিয়ে ও প্রান্তিক কর্মীদের অভিজ্ঞতা ও বৈজ্ঞানিক ধারণার উপর ভিত্তি করে কার্যাবলী
ও নিয়মাবলী গ্রহণ করা উচিত।
চাই সবার জন্য ভ্যাকসিন :
নভেল করোনা ভাইরাসের আগমন এবং এই জন্য ভ্যাকসিন
তৈরির প্রয়োজন এমন এক সময়ে হলো যখন বিশ্ব ব্যাপী বিভিন্ন কম্পানি ইনফ্লুয়েঞ্জার
ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যাস্ত। লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের
সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ এবং মহামারী রোগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা ডেভিড
হেইম্যান বলেছেন স্বাভাবিক সময়ের মত একই গতিতে যদি ইনফ্লুয়েঞ্জা,হাম, রুবেল ও অন্য রোগের
ভ্যাকসিন তৈরি অব্যাহত থাকে তাহলে একই সময়ে যদি করোনা ভাইরাসের জন্য 100 কোটি ডোজের চাহিদা
তৈরি হয় তাহলে নিসন্দেহে প্রোডাকশনের ঘাটতি পড়বে। খুব দ্রুততম সময়ের
ভেতর খুব বেশি পরিমাণ ভ্যাকসিন তৈরি করে দেওয়াটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। মানবদেহে কোন জীবাণু
প্রবেশ করলে এর বিরুদ্ধে ইম্যুনিটি(নিরাপত্তা) সৃষ্টি করার জন্য কৃত্রিমভাবে যা
প্রদান করা হয় তাই ভ্যাকসিন।পৃথিবীজুড়ে Smallpox রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল
এবং পোলিও,হাম, ধনুষ্টংকার এর মত রোগের
প্রায় নির্মূলকরণ সম্ভব হয়েছে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাপ্রদানের মাধ্যমে। বিশ্ব
স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে ২৫ টি রোগ আছে যাদেরকে ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা
সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার তথ্যমতে প্রতিবছর ভ্যাকসিনেশন ফলে আড়াই মিলিয়ন
মৃত্যু প্রতিরোধ হয়। ভ্যাক্সিনেশনের পরিপূর্ণ প্রয়োগের মাধ্যমে একটি কম্যুনিটির
বেশীরভাগ (মোটামুটি ৮০-৮৫%) মানুষকে ভ্যাকসিনেশন করা গেলে ঐ কম্যুনিটির প্রায় সব
সদস্য একই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা লাভ করে (Herd immunity/Community
immunity)।
এই প্রক্রিয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধ করা যায়। জীবাণু থেকেই তার
দ্বারা সৃষ্ট রোগের ভ্যাক্সিন প্রস্তুত করা হয়। যেকোন জীবাণুর আছে দুইটি
বৈশিষ্ট্য- একটি হল রোগ সৃষ্টি করা (Pathogenecity)। অন্যটি দেহের অভ্যন্তরে ঐ একই
রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য কিছু পদার্থ (Antibody) তৈরী করা। রোগ সৃষ্টির
ক্ষমতাহীন জীবাণুকেই ভ্যাক্সিন হিসেবে দেহে প্রবেশ করানো হয়। ফলশ্রুতিতে এই জীবাণু
দেহে রোগের কারণ হয় না, উল্টো রোগটি যেন না হয় তার জন্য বিশেষ পদার্থ(Antibody) তৈরী করতে থাকে। আরেকটি
সুবিধা হল এই জীবাণুগুলো মেমরি সেল গঠন করে ফলে পরবর্তীতে একই জীবাণু পুনরায়
প্রবেশ করলে সহজে সনাক্ত করতে পারে। এভাবে ভ্যাক্সিন শরীরের ইম্যুনিটি-কে বাড়িয়ে
দেয়। পৃথিবী জুড়ে ভ্যাকসিন গবেষণাও গত কয়েক দশক ধরে তহবিলের দীর্ঘস্থায়ী অভাবের
কারণে ভুগেছে,
যেখানে
আন্তর্জাতিক মানের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এবং উন্নত দেশের সরকারগুলি তার
গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য ভাবে অর্থের সংস্থান থেকে দূরে সরে গেছে
এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন গবেষণা বিভিন্ন ফিলান্থ্রপিক গোষ্ঠীর অর্থায়নে
পরিচালিত হয়েছে। প্রতিটি দেশ তার বার্ষিক বাজেটে যে পরিমান অর্থ তার সমরাস্ত্র
আধুনিকিকরনে ব্যয় করে তার কয়েক ভগ্নাংশ ব্যয় করে মানব মান উন্নয়নের জন্য সামগ্রিক
গবেষণায়।
কিছু ভাইরোলজিস্ট বর্তমান প্রাদুর্ভাবকে একটি
সতর্কবার্তা হিসাবে দেখেছে এবং বলেছে যে বর্ধিত পরিবেশগত চাপ মানব-মানব
ট্রান্সমিসিবিলিটি আরও এই জাতীয় ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে। সরকারী ভাবে ভ্যাকসিন
গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করার জন্য প্রতিটি সরকারগুলি সক্রিয় হতে
হবে এবং টিকা গবেষণায় প্রয়োজনীয় মেধা ও ব্যাবস্থাপনা সম্পুর্ন করতে হবে। গ্লোবাল
হেলথ কমিউনিটি বদ্ধমূল বৌদ্ধিক সম্পত্তি নিয়মনীতি সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করবে যা
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভ্যাকসিনগুলিতে অর্থনৈতিক প্রবেশাধিকার রোধ করতে পারে। যা
পরবর্তী পৃথিবীতে স্বাস্থ্য অসাম্য নিয়ে আসতে পারে।
চাই অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মজুত
কৌশল :
1973 সালের Cold War এর টানটান স্নায়ু
যুদ্ধের সময় থেকেই পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন দেশ তার প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য
সামগ্রী এবং চিকিৎসা সামগ্রী মজুত রাখতে শুরু করে। পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে মুক্ত
বাণিজ্য নীতি চালু হওয়ার পরে সহজলভ্য কাঁচামাল ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি Stock Pilling বা মজুত করার প্রবণতা
থেকে বিশ্বের বহু দেশ পিছিয়ে আসে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফিনল্যান্ড তার
নিজস্ব ভান্ডারে ঘাটতি হতে দেয় নি। Covid 19 প্রাদুর্ভাব উচ্চতর বিশ্বায়নের বিশ্বে স্টক
রক্ষণাবেক্ষণের সাথে জড়িত অর্থনীতির বেহাল অবস্থা ও পরিচালন ব্যবস্থার চূড়ান্ত
অদক্ষতার দিক নির্দেশ করছে। সরকারি ক্ষেত্র এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে সর্বক্ষেত্রেই
ওষুধ উৎপাদন ও মজুতিকরনের এর ব্যাপারে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। বেশিরভাগ ওষুধ
নির্মাতা কোম্পানি গুলি অল্প লাভের ওষুধের চেয়ে বেশি লাভজনক ওষুধ ও এন্টিবায়োটিক
উৎপাদনে বেশি আগ্রহী হয় এর ফলে প্রয়োজনীয় সহজলভ্য ওষুধের অকাল পরিলক্ষিত হয়। সারা বিশ্ব জুড়ে সরবরাহ
চেন বিপর্যস্ত। সরবরাহ চেন গুলির স্বাভাবিক হওয়ার জন্য আরও সময় লাগবে এর ফলে আমরা
কৃত্রিম ভাবে সৃষ্ট এক সংকটজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ব। এই সংকট উন্নততর বিশ্বের
কোনও বাণিজ্য কৌশল কি না এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হলেও Covid19 পরবর্তী সময়ে সরকারি উদ্যোগে
যে কোনও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরও বেশি বেশি Warehouse নির্মাণ ও জীবন উপযোগী
অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের মজুতিকরনের মাধ্যমে এক নতুন অর্থনীতি সার্কেলের সূচনা করতে
পারবে। আজকে যখন আমরা উন্নততর অর্থনীতির অন্তঃসার শুন্য শব্দনিনাদ করছি প্রচার সর্বস্যঃ
রাজনীতির গান গাইছি এবং ব্যাপক বেসরকারিকরণের মাধ্যমে প্রগতির জং ধরা চাককে
ঘোরানোর চেষ্টা করছি সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে সরকারি করণ ও সরকারী নিয়ন্ত্রণই এই
মুমুর্ষ অর্থনীতি, দেশ
সহ মানবজাতির পতনকে রক্ষা করতে পারবে।
চাই সর্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ
:
শেষ অবধি, আমরা দেখেছি যে দেশগুলির একটি
কার্যকর প্রাথমিক যত্ন ব্যবস্থার অভাব রয়েছে তারা প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করতে
লড়াই করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত আর্থিক দক্ষতা এবং সুপরিচিত পরিচালিত
হাসপাতাল ব্যবস্থা সহ এখনও একটি বড় মামলার বোঝা নিয়ে লড়াই করছে। ইউনিভার্সাল
হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) সিস্টেমের অভাবে বিষয়গুলি স্বাস্থ্যসেবা অ্যাক্সেসের অভাব
দ্বারা উদ্বেগিত হয়েছে।যদিও ইউএইচসি চলমান রাষ্ট্রপতি প্রাথমিকগুলিতে বিশিষ্টভাবে
বৈশিষ্ট্যযুক্ত করেছে, তবে
এটি এখনও পুরো জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। গত দশকে ইউএন জেনারেল
অ্যাসেম্বলি এবং ডাব্লুএইচও-এর গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ইউএইচসি দৃঢ় ভাবে বিশ্ব
স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে স্থান পেয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উচ্চতর বিনিয়োগ এবং একটি
শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার মাধ্যমে ইউএইচসি অর্জন করতে হবে যে
বৃহত্তর ঐকমত্য রয়েছে। বিশ্বকে এই দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত কারণ সমাজের
স্বাস্থ্যের উন্নতির মূল ভিত্তি হ'ল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত
প্রবেশাধিকার।বৈশ্বিক নেতৃত্বকে বুঝতে হবে যে আমরা একই ধরণের প্রকোপ থেকে ক্রমাগত
হুমকির মধ্যে আছি এবং প্রস্তুতিই আমাদের একমাত্র ঢাল। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে একই ভুলগুলি
আবার না ঘটতে রোধ করতে কঠোর পরিবর্তন করতে হবে।
এতো গেল একতরফা চাই এর ফর্দ
কিন্তু বাস্তব কি?
উদারনীতির মুনাফাকেন্দ্রিক পুঁজির সমৃদ্ধির
দানবীয় তাণ্ডবের ফসল শুধু রোগ-মহামারী ও সেসব সামাল দিতে ব্যর্থতার মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকছে না। যথেচ্ছ বিনিয়োগ, করপোরেটের ব্যাপ্তির আত্মঘাতী প্রবণতা ধ্বংস করছে
জীববৈচিত্র্য। জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে বরফ গলছে মেরুঅঞ্চলে-গলছে
হিমালয়। অ্যামাজন জ্বলে, অস্ট্রেলিয়ার দাবানল থামে না, সুন্দরবন ধ্বংসের সব আয়োজন
সম্পন্ন,
সারা
পৃথিবীময় বনাঞ্চল-পাহাড়-নদী-জলাশয়-কৃষিজমি বিনষ্ট হচ্ছে। দূষণের নির্মমতা
আকাশচুম্বী। নগরায়ণের ফলে নীলাকাশ অদৃশ্যপ্রায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। সব জেনেও বৃহত্ শক্তির রাষ্ট্রগুলো
তাদের মিত্র ও লেজুড়রা পৃথিবীর সম্ভাব্য ধ্বংস ডেকে আনছে। তারা জানে, মানুষকে সঠিক পথ দেখালে
তাদের বাগাড়ম্বর-জারিজুরি অসাড় হয়ে যাবে।
তাহলে করণীয় কী?
রুশ সাহিত্যিক ‘ফিওদোর দস্তয়েভেস্কির উক্তি—‘হোক
তা ভুল বা ঠিক মাঝেমধ্যে ভেঙেচুরে ফেলা আনন্দের’ চাই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের
কার্যকর অংশগ্রহণে গণশক্তির উত্থান। ভেঙেচুরে নিঃশেষ হয়ে যাক বিদ্যমান অন্যায্য
ব্যবস্থা। গড়ে উঠুক বাসযোগ্য, নতুন, ভবিষ্যত্ পৃথিবী। আপাতত, লকডাউন কবে উঠবে বলা যাচ্ছে না।
লকডাউন উঠলেও যে ঠিক কী হবে জানা নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র প্রধান
জানিয়ে দিয়েছেন,
ভাইরাস
নিয়ে ঘর করাটা অভ্যেস করে ফেলতে হবে। ফলে, অবস্থাটা দ্রুত বদলাবে, এ আশা নেই বললেই চলে।
কোভিড প্রতিষেধক টিকা যতক্ষণ না বেরুচ্ছে, অর্থাৎ যতদিন পর্যন্ত তা
বাজারজাত ও সহজলভ্য হচ্ছে, অবস্থাবদল ঘটবে না, একরকম নিশ্চিত। তাঁরা যাঁদের
কথা সকালসন্ধ্যা ভাবেন, ভেবে আকুল হন, সেই মেহনতি সাবঅল্টার্ন দিন-আনি-দিন-খাই মজুরচাষী, তাঁদের অবস্থাটা ঠিক কী
দাঁড়াচ্ছে?
করোনা
পরিস্থিতিতে কিছু সরকারি সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে, কিছু খাদ্যসামগ্রী, সামান্য অর্থ, এইরকম। কিন্তু সে
সাহায্য দেশের সর্বত্র সব মানুষের কাছে একভাবে পৌঁছচ্ছে না। রেশনে যা পাওয়া যাচ্ছে, প্রয়োজনের তুলনায়
অপ্রতুল। রেশন সবাই পাচ্ছেনও না। রাজ্য সরকার বলছেন, কার্ড না থাকলেও রেশন পাওয়া
যাবে। কার্যত তা ঘটছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো চাল গম, যা কিনা ফুড কর্পোরেশন
অব ইন্ডিয়া বা এফসিআই-এর জিম্মায় ঠাসগুদাম মজুদ থাকে সরকারি কার্ড না থাকলে তা পাবার জো নেই।
উপরন্তু রাজ্য সরকার বলছেন, এফসিআই ঠিকঠাক মাল দিচ্ছে না, লোকে খায় সেদ্ধ চাল, দেওয়া হচ্ছে আতপ, তাও যতটা দেবার কথা
ততটা নয়। রাজ্য সরকার এও বলছেন, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত চাল মজুদ, দরকারমতো লোকের কাছে পৌঁছে যাবে, এফসিআই দিক না দিক
থোড়াই পরোয়া। তাহলে গণ্ডগোলটা কোথায়? লোকে উপযুক্ত মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না কেন? শুধু এ রাজ্যে নয়, দেশের অন্যত্র থেকেও
খাদ্যাভাবের খবর আসছে। শহরের গরীব, গ্রামের ভূমিহীন বা প্রান্তিক চাষী, গ্রামীণ শ্রমজীবী, সমুদ্রপারের মৎস্যজীবী, বনে থাকা আদিবাসী
বনবাসী,
কেউ নিরাপদ
নন। কেন নন?
কেন
খাবারের অভাব ঘটছে? বিষয়টা
তলিয়ে বোঝা দরকার।
তাহলে কি বোঝা উচিত!!!
রাষ্ট্র এবং পুঁজিবাজার, কারুর কাছেই এসব প্রশ্নের উত্তর
নেই। তারপরেও,
বিপর্যস্ত
ও তালগোল পাকানো অবস্থায় পুঁজিতান্ত্রিক ব্যবস্থাটা বেঁচে থাকতে পারে, অনিবার্য আত্মধ্বংস
অর্থাৎ ইমপ্লসনের দিকেও এগিয়ে যেতে পারে। এই সঙ্কটদীর্ণ, গোলমেলে অবস্থাটাকে পড়ার, বোঝার, চেষ্টা করছেন কি? করোনা সঙ্কটে বিপর্যস্ত
আক্রান্ত যে শ্রমজীবী মানুষ, যথা পথে প্রান্তরে হঠাৎ আবিষ্কৃত পরিযায়ী শ্রমিকের ঢেউ, তাঁদের পাশে থেকে, মধ্যে ঢুকে
পুঁজিতন্ত্রের অর্থনৈতিক সঙ্কটকে রাজনৈতিক সঙ্কটে বদলে দেবার কোন পরিকল্পনা আছে কি? মানুষ কী করবেন, কীভাবে ভাববেন, আদৌ ভাববেন কিনা, এসব প্রশ্ন ক্রমেই আরো
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এই নতুন অবস্থাটাকে বুঝতে ও ব্যবহার করতে মানুষ যদি ব্যর্থ
হন, ফ্যাসিবাদছায়া স্পষ্টতর
হয়ে উঠবে,
উঠতে বাধ্য।
অনেক আগে জাঁ পল সার্ত্ৰ বলেছিলেন, পুঁজিতান্ত্রিক সঙ্কটের সময় জনগণ যদি আন্দোলনে না থাকেন, ফ্যাসিবাদ আসবেই, ঠেকানো যাবে না।
কপিরাইট ভাস্কর পাল কর্তৃক
সংরক্ষিত
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন