আ
মাটির কথা
অলভ্য ঘোষ
বিশ্বকর্মা পুজো চলে
গিয়েছে।আজ সকালে মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে রমেন শুনেছে চাদর মুড়ি দিয়ে
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর; " যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,,
নমো নমঃ। যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ,,,নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,, নমো নমঃ।... ...
"
ভোরের দিকে বেশ একটা
ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব পড়ে গিয়েছে।ঠাণ্ডা এখন অনেকটা বয়স সন্ধির মত আধ কাঁচা অপরিণত।
টিনের ছাউনির তলায় অর্ধ নগ্ন স্নান ঘরে এক মগ জল ঢালে রমেন।শরীরটা তার যেন শিহরণ
দিয়ে ওঠে। উপরের দিকে চেয়ে দেখে ছাদে বাপি-দা ঘুড়ি ওড়াচ্ছে।একটা তেরঙ্গা ঘুড়ি
আকাশের খোলা ময়দানে শিকল ছেঁড়া পাখির মত উড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে।বাপি দার হাতের
আবর্তন গতির বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘুড়ি আকাশ ছুঁই ছুঁই।রমেন গায়ে এখনো এক মগ জল ঢেলে
দাঁড়িয়ে রয়েছে। শরীরে জাগ্রত শিহরণ টা চোখ
বুঝে অনুভব করার চেষ্টা করছিল।বন্ধ চোখের তারায় বাপি-দার ঘুড়ির সাথে আর একটা
ঘুড়ি প্রণয় প্রণয়িনীর মত লুকোচুরি খেলে চলে।একটা উচ্ছ্বাস আনন্দে শরীর মন ভরে
ওঠার আগেই ভোকাট্টা বিকট শব্দে স্বপ্ন ভঙ্গ।অনুভূতির চরম স্পর্শ থেকে বঞ্চিত
স্খলিত রমেন চোখ মেলে দেখল।কেটে যাওয়া ঘুড়ি টাকে বাঁধনের অবলম্বন হীনতায় দুলে
দুলে নিঃসঙ্গ একা একা পতিত হতে।শূন্য মরুভূমিতে পথহারা এক পথিকের হাহাকারে বুকের ভেতর টা তার মোচর দিয়ে ওঠে। প্রসারিত
আকাশ থেকে জনসমুদ্রে টাইটানিকের মত যেন
ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে ঘুড়ি টা।
সিক্ত রমেন হাত দুটো
বুকের কাছে জড়ো করে ধরে।জলের আবর্তে বালতির ভিতর মগ টা খেলা করে।সূর্য থেকে আলোক
রেণু ঝড়ে ঝড়ে পড়ছিল।হঠাৎ মেঘাচ্ছন্নতা গ্রাস করে ফেললো আলোক পিণ্ড টাকে।বালতি ভরে
জল উপচে মগ টা পড়লো চাতালে।এক লহমায় সবকিছু পাল্টে যায়।স্বপ্ন দেখানো আকাশ স্বপ্ন
কেড়ে নেয়।রমেনের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসে।চোখের দিয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। বুকের ভেতরটা
হাহাকার করে ওঠে।চাতালের এক কোনে ইট বিছানো শ্যাওলা ধরা মেঝের উপর কর্কশ পাঁচিলের
গায়ে অপ্রস্ফূটিত অবিকশিত একটা আম আঁটির অর্ধ অঙ্কুরিত চারা।শিকড় মাটির দিকে
ইটের ফাঁক খুঁজে নিম্নমুখী হবার চেষ্টায় দৃঢ়।সদ্য গজানো সবুজ নরম দুটি পাতা
আকাশের দিকে মুখ করে; যেন ফেল ফেলে দৃষ্টিতে
চেয়ে আছে বাঁচার অভিলাষ;রমেনের উন্মোচিত
জলোচ্ছল চোখ কে আকর্ষণ করল।অপরিণত অবহেলিত এই সবুজাভর ছোট এক বিন্দু কংক্রিটের
অরণ্যের মাঝখানে ধ্বংস স্তূপের অন্তরালে মিট মিট করে জ্বলতে থাকা যেন একটা প্রাণের
মত।প্রতিকূলতার বাঁধন ছিন্ন করে যার স্পন্দন এক বুক নিশ্বাসের প্রেরণায় যুজে
চলেছে।
রমেন ঝুঁকে পড়ে সবুজ
পাতায় গাল ঘষে কিশলয়ের স্পর্শানুভূতি পেতে চাইল মনে। রমেনের সব যন্ত্রণার যেন সে
অংশীদার।পৃথিবীর সব দূষণ সব উদগীরণ শুষে নিতে সবুজ গাছের বিকল্প বা আর কে আছে।রমেন
ও তো কত ঘৃণা কত অপমান কত অপবাদ কত কত গরল নীরবে পান করেছে।না সে নীলকণ্ঠ হতে
পেরেছে না সবুজ গাছ সে শুকিয়ে গেছে।পুড়তে পুড়তে সে ছাই হয়েছে ক্ষইতে ক্ষইতে সে
অবলুপ্ত।আবহ-বিকারে পর্বত ও ক্ষয়ে যায় আমরা তো মানুষ।পর্বত যে ক্ষইছে তা যেমন পর্বত
আরোহীর চোখে পড়ে না।তেমনি মানুষের পুড়ে যাওয়া মানুষের ক্ষয়ে যাওয়া এতটাই
সূক্ষ্ম যে তার আত্মীয় পরিজন সমাজ সংসারের কারো চোখেই পড়ে না।অনুভূতিতে উপলব্ধ হয়
না।তবুও রমেনের মনে হল পৃথিবীতে এই আম চারা টি
যেন তার সব যন্ত্রণার অংশীদার।একটি আম আঁটির কথা এই মাটির কথা যেন তার
নিজের কথা মনে হল।যে মাটি কথা বলতে পারে না।ভিজে কাপড়ে আম আঁটির গোড়ার সেই মাটি
সরিয়ে গাছ টাকে নিয়ে গিয়ে বসাল উঠোনে।
জানালার কাছে বসে রমেন
রোজকার মত ডায়েরি খুলল।ওটা রমেনের একমাত্র সঙ্গী।ডায়েরির বুকে লেখা শব্দ গুলো
রমেনের মঙ্গলকাব্য।তার সব কথা দিনলিপির বুক ভরে গেঁথে রেখেছে।সবাই যখন রমেন কে
প্রত্যাখ্যান করেছে একটি কাগজের পিণ্ড;সুন্দর সুচরিত হৃদপিণ্ড হয়ে উঠেছে।রিখটার স্কেলের মত
রমেনের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের হৃদ কম্পন অঙ্কিত হয়ে চলেছে ডায়েরির পাতায়
পাতায়।পৃষ্ঠা উল্টাল রমেন। ছাব্বিশে জুলাই উনিশশো নব্বই। আজ একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার।এক অজ্ঞাত
পরিচিত দৈত্য আলাদিনের চিরাকের মত এক মুহূর্তে আমাকে পৃথিবীর সব সেরা ধন সব সেরা
সুখ এনে দিয়েছে।কয়েক দিন ধরে এক ভদ্রলোক বাসে স্কুল ফিরতি কোলে বসার সুযোগ
দিচ্ছেন।মাথায় গায়ে হাত বোলান কোন কোন সময়।কানের ধারে নাম ঠিকানা বাবার নাম কোন
ক্লাসে পড়ি ইত্যাদি ইত্যাদি জিজ্ঞেস করার সময় কথার ফাঁকে চুমু বসিয়ে দেয়। ঠোঁট আর
জিভের সেঁতসেঁতে ভাব শরীর হিম করে দেয়।ভাল লাগে।আর ভাল লাগে বাম্পার পেরুনো বাসের
জার্কিংয়ে আমাকে যখন জাপটে ধরে হাফ প্যান্ট পরা খোলা থাইয়ে হাত বুলায় সর্বাঙ্গ
আড়ষ্ট হয়ে আসে। গতকাল উনি একটু বেশি রকমের আদর করছিলেন।গলায় হার পরিয়ে একটা
ক্যাটভেরির প্যাকেট কিনে দিয়েছেন।আমি আপত্তি জানালেও উনি জোর করে মুখে গুজে দিয়ে
ফিসফিস করে বলেছেন আজ ফ্রেন্ডশিপ ডে বন্ধুত্ব রাখতে হয়।প্রথম টা দুষ্টু লোক বলে
ভয় পেলেও পরে বুঝেছি মায়ের গল্পে ছেলে পাচারকারী ছেলে ধরা এ নয়। তা না হলে
ক্যাটভেরি খেয়ে আমার ঘুমতো আসেইনি বরং স্কুল থেকে ফিরে দিদির সঙ্গে শোভা দের
বাড়িতে চুটিয়ে হুস-ধাপ্পা খেলেছি।
আমাকে দেওয়া লোকটার হার
দিদির খুব পছন্দ হয়েছে।বার বার গলায় গলিয়ে ঘুরে ফিরে আয়নায় দেখেছে নিজেকে।আমি
চাইতেই বলেছে ;
- যা মেয়েদের হার ছেলেদের
পরতে নেই।
কথাটা মেনে নিতে
পারিনি।কারণ আমার শার্ট ,প্যান্ট, গেঞ্জি সবি দিদি নিজের মনে করে।হার টা ছিনিয়ে নেবার উপক্রম
করার আগেই মা বিছানায় শুয়ে শুয়েই হার খানা দিদির হাত থেকে নিজের হাতে নিয়ে ভাঙা
গলায় জিজ্ঞেস করেছে কোথায় পেলি;মিথ্যে করে বলেছি
কুড়িয়ে।হাতপেতে নেওয়া টা মা পছন্দ করে না।রাস্তার জিনিস কুড়ানো ও তার পছন্দ
নয়।কিন্তু রোগে ভোগে অভাবে সেই মা ও কেমন পাল্টে যাচ্ছে। নিমিষে হারটা খাটের কাটে
ঘোষে প্রত্যাশা অপূরণে মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে।হাঁপিয়েছে মা।সুযোগে দিদির চিল
ছোঁ।
আজ অবাধে বাস থেকে
রানী-কুঠি নেমেছিলাম।কোনও দ্বিধা সংশয় না করে দেখতে গেছিলাম লোকটার বাড়িতে রাখা
গয়নার বাক্স।ওর কাছে নাকি এরকম আরও অনেক হার,বালা,কানের দুল,টায়রা,স্নো, পাউডার, সাবান, শ্যাম্পু, পারফিউম, হেয়ার জেল, সানস্ক্রিন ক্রিম,
লোশন সব সব আছে। দেখার ইচ্ছেটা সংবরণ করতে
পারিনি। লোকটা বলল;
-ঠিক যেন নতুন বৌ।চল তোকে
সাজিয়ে দিই।
গয়না সরাতে গিয়ে দেখলাম
গয়নার বাক্সের ভেতর গয়নার আড়ালে একটা সাপ ও রয়েছে।জানি না তা অভিশাপ কিনা!লোকটা
আমার সমস্ত শরীর ভরে দিল গয়নায়।
আমি বুঝে পাচ্ছিলাম না
আমি এ অবস্থায় বাড়ি যাব কি করে।
লোকটা বলল;
-আমাদের এই অবস্থা টা
লুকিয়ে রাখতে হয়।শরীরের ভেতর মন গয়না টাকে ঢেকে রাখতে হয় রমেন।
ঠোঁটে লিপস্টিক,কানে টেপা দুল,মাথায় টিকলি,মুখে পাউডার ঘষে ঘষে মসৃণ
করে তুলল।গলায় পরিয়ে দিল চাঁদমালার হার।তারপর গয়না ভাগ করে নিজেও সাজল।আমার একটু
একটু ভয় করছিল। বুঝতে পারছিলাম দেরি হয়ে যাচ্ছে।মা বকাবকি করবে। চোখ তুল ছিলাম না
লজ্জায়। কিন্তু সাজার আবেগটা আমাকে চেপে ধরে বসিয়ে রেখেছিল। ছাড়ছিল না।লোকটা অনেক
কথা বলল।আর যা বলল না স্পর্শে বোঝাল। আমি লজ্জার মৌচাক ভেঙে হাসতে হাসতে বিছানায়
লুটিয়ে পড়েছিলাম। কে জানতো মধু চোরদের হুল ও বরাদ্দ। ও আমাকে জাপটে ধরে। আমি
ভণিতার ছলে নিজেকে ছাড়ানোর ভান করি। তারপর এক জাদু স্পর্শে সমস্ত শরীরটা অবশ হয়ে
আসে।এক একটি করে শূন্য করে সব কিছু ছিনিয়ে নিলো সে।যেমন ভাবে গয়নার বাক্স শূন্য
হয়েছিল।ঠিক তেমনি শূন্য হলাম আমি।আমার শরীর মন দেহ এত হালকা হয়ে গেল যে মহাশূন্যে
যেন হাওয়ায় ভাসতে লাগলাম।আমি দুই হাতে লজ্জা ঢাকতে গেলাম।ও জোর করে হাত সরিয়ে
দিল।আমার ঠোঁট নিমেষে লেবেনচুষ করে নাভির উপর স্বাচ্ছন্দ্যে লিপস্টিক মাখানো দুটো
লাল মোটা পুরু ঠোঁটের চিহ্ন একে দিল লোকটা।আমি তখন এক লহমায় সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ে।রূপকথার কোনও মায়া
পুরীতে।একসাথে এত আনন্দ এভাবে আমি কখনো পাইনি।তারপর সেই দৃঢ় সর্পের ছোবলের
আঘাত।হাতের নিষ্পেষণে সংজ্ঞা ফিরে পেলাম যখন শ্বেত শুভ্র সুখ পালকে পলকায় বিছানা
নোংরা।শরীরে টনটনে ব্যথা। পা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত।লোকটা যেন আলাদিনের
দৈত্য।কিন্তু এত ভাল লাগা কখনো আমার পাওয়া হয়নি আগে।
জানালা দিয়ে উঠোনের দিকে
তাকায় রমেন।মৃদুমন্দ বায়ে যাওয়া হাওয়ায় উঠনের বসানো আম চারা টা মাথা
দোলাচ্ছে।রমেনের কপালের সামনে বহু দিনের চিরুনি বিহীন চুলগুলো ঝোলা বারান্দার মত
কপাল ঢেকে বসে।দুই চোখে হাত বোলায় সে।
পিছনে চায়ের কাপ হাতে
শম্পা এসে দাঁড়ায়।রমেনের সামনের তক্তপোশে চা রেখে যায়।খাদে পড়া গলায় বলে;
- তোর চা।
চায়ের কাপ টার দিকে তাকায়
রমেন।দুটো মেরি বিস্কুটের সাথে এক কাপ ধোঁয়া ওড়া গরম চা।চায়ের মধ্যে উত্তপ্ত তরলে
হাবুডুবু খাচ্ছে একটা সরসরা পিঁপড়ে।আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিনারায় উঠে আসতে।কিন্তু
বার বার হড়কে পড়ছে উত্তপ্ত তরলে।রমেন আঙ্গুল ডুবিয়ে সাহায্য করল পিঁপড়ে
টাকে।আঙ্গুলের ডগা বেয়ে হাতের তালুতে এসে পৌঁছল অবোধ কীট টা।রমেনের দুই চোখ
মায়াময় অশ্রু প্লাবনে গভীর মহাসাগর হয়ে উঠল মুহূর্তে।
আবার শান্তিদার কথা মনে
পড়ে তার।বাসের সেই লোকটা যার বাড়িতে গিয়েছিল রমেন।শান্তিদা শান্তিদি বলে ডাকার
নির্দেশ দিয়েছিল রমেন কে।রমেনের ও একটা যুতসই নাম বার করে ফেলেছিল।রমা।লোক চক্ষুর
অন্তরালে শান্তি রমার সইয়ের সম্পর্কে তখন সবে পাক ধরেছে।আর সংসারে শনি।রমেনের
মায়ের কাঁধ এবং ঘাড়ের ব্যথার রোগ টা ধরা পড়েছে।ব্রেস্ট ক্যানসার।যন্ত্রণায়
ককিয়ে চিৎকার করে সে।
-গলা টিপে শেষ করেদে
আমাকে।
দরজায় তালা রমেনের বাবার
কারখানায়।সঞ্চয়ের শেষ টাকা কটা যখন রমেনের মায়ের চিকিৎসায় শেষ।ডাক্তার ওষুধ করে
যখন রমেনের দিদির বিয়ের গয়না গুলোও ঘুচল
হাঁড়ি কলসি অবধি বেচা চলছে রমেনের বাবা মদ খাওয়া ধরেছিল।দৈন্যতা উইপোকার মত
যখন সংসার টা কুড়ে খাচ্ছে।একদিন কাজের আশ্বাসে রমেন শান্তিদির সাথে গিয়েছিল
ধর্মতলায়।দিনটা জ্বল জ্বল করে রমেনের চোখে ভেসে ওঠে।শান্তি দি রাস্তার পাশের
পেচ্ছাপ খানায় উঁকি মেরে পাশের হালকা হওয়া লোকটার নিম্নাঙ্গ দেখার চেষ্টা
করছিল।শরীর দুলিয়ে দেয়ালে জল ছবি এঁকে মুখে মুচকি হাসি ধরে রেখেছিল লোক টা।তারপর
এক কোনে দুজনার কি কথা হল রমেন বুঝতে পারেনি।শান্তি দি লোকটার সাথে যেতে
বলেছিল।নিজের হিস্যার টাকা টাও আগাম রেখেছিল জানিয়ে।তারপর একদল শকুন এর মাঝে
ভাগাড়ে পড়ে থাকা একটা মরা গরুর মত অস্থি চামড়ার নিষ্কৃতি খুঁজে ছিল রমেন।পাঁচজন
বোটকা গন্ধ ওয়ালা কাবুলের দস্যুর হাতে মুখ,বুক,পশ্চাৎ,নিষ্পেষণে দংশনে ময়দার তালের মত পাকিয়ে গিয়েছিল তার।তারপর
দরজার কড়া নাড়ার আওয়াজ।মোটা গোঁফ ওয়ালা আর এক রেজিস্টার শয়তান রিগ্যাল সিনেমার গা
ঘেঁসে এক কামরা হোটেল ঘরে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ঢুকে পরেছিল। কাবলিওয়ালা দের কাছ
থেকে বোঝাপড়া সেরে ভিক্ষার হাত রমেনের দিকে বাড়িয়ে ছিল পুলিশ টা।দেবার মত তার
কিছুই ছিল না।চারিদিকে হাঁতরিয়ে পুলিশ টা কেবল একটি কনডমের প্যাকেট খুঁজে
পেয়েছিল।প্যাকেট টা রমেনের মুখের সামনে ধরে জুলু জুলু চোখে চেয়ে বলেছিল পড়িয়ে
দে।খসখস আওয়াজ করে পুলিশের প্যান্টের চেন খোলার আওয়াজ হলে; রমেন পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল।হাঁটুর নিচে লুটচ্ছিল তার
পাজামা।পুলিশ টা খিস্তি করে রমেনের পাছায়
সজোরে লাথি মারে।তারপর মুখ থুবড়ে পড়া রমেনের চুলের মুঠি ধরে মুখ খানা চেপে ধরেছিল
তার প্যান্টের খোলা চেনের মাঝখানে।সংকোচের অবকাশ না দিয়ে দুই হাঁটুর সন্ধিস্থলের
মাংসপিণ্ডে প্রশাসনিক চাপে রমেনের দম আটকে এসেছিল।তার চিৎকার চার-দেওয়ালে মিলিয়ে
যাবার আগেই কামড়ে বসেছিল রমেন।তারপর ছুট। হাঁপাতে হাঁপাতে থেমেছিল শান্তিদার কাছে।দালালির
হাত এগিয়ে আসতেই রমেন উখলে দিয়েছিল ভেতরে জমে থাকা বমি টা।
রমেন আর একটা ডায়েরি
খোলে।এটা নিরানব্বই সালের বাইশে ডিসেম্বর।
ছাদে বাপি-দা কে একটা
গ্রিটিংস দেয় দিদি।
গ্রিটিংসের ভেতরে সোনালী
কালির স্কেচ পেনে ছন্দ করে লেখা;
"দিতে হল দেরি।রাগ করো না
বাপি দাদা আই অ্যাম ভেরি স্যরি।"-টু বাপি দা। ফ্রম শম্পা।
গ্রিটিংসের উপরের মোড়কে
সুন্দর নকশা করে গোলাপ আঁকা।সবটাই করেছি আমি।কিন্তু সমস্ত কৃতিত্ব টা নিল
দিদি।বাপি-দা বলেছে;
-যেমন সুন্দর আঁকার হাত
তেমনি লেখার।
আমার ভীষণ হিংসা
হচ্ছিল।ফাঁস করে দিতে ইচ্ছে করছিল।কিন্তু কথার পৃষ্ঠে কথা চাপিয়ে সব চাপা দিয়ে
দিচ্ছিল দিদি।আমি মুখ খুলে খোলের কথা বলতে যেতেই চিমটি কেটে পিঠ লাল করে দিয়েছে
দিদি।
রমেন দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ছাড়ে।চায়ের দিকে তাকাল চা জুড়িয়ে জল হয়ে গিয়েছে। আর ধোঁয়া উড়ছে না।মেরি বিস্কুটে
কামড় বসিয়ে চায়ে চুমুক দেয়।আরো পুরানো কথা ভিড় করে মনে। তমলুক থেকে পড়াশোনা করতে
এসেছিল বাপি দা।রমেন দের ওপর তলাটা তখন মেসবাড়ি।আরো বেশ কয়েকটি ছাত্র থাকত। তার মা
গত; বাবা সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করে।মোটা টাকার
দেনায় জর্জরিত।সংসারের সচ্ছলতার অন্বেষণেই বাড়ির একটা অংশে ভাড়ার পন্থা অবলম্বন।
চায়ের কাপ টা হাত থেকে
নামিয়ে ডায়েরি তুলে স্মৃতি মন্থন করতে গিয়ে কয়েক পৃষ্ঠা অক্লেশে উল্টে ফেলে
রমেন।উনত্রিশে ডিসেম্বরে থামে।
বাপি দা বলেছে আমার
সাইক্রিয়াটিস্ট দেখানোর প্রয়োজন।বাপি-দার নালিশে;দিদি আজ আমার ওপর ভীষণ রাগ করেছে।গতকাল রাতে আমি বাপি-দার ঘরে
গিয়েছিলাম।বাপি দা ঘুমচ্ছিল একটা দেব শিশুর মত।নাইট ল্যাম্পের ছায়া মগ্নতা যেন
মায়াময় করে তুলেছিল তার মুখখানা।জীবন্ত বুদ্ধ।নিটোল গাল;মুদিত গোলাপ পাপড়ির মত বড় বড় চোখের পাতা।পুরু ঠোঁট;নিমেষের মধ্যে আমার হুশ কেড়ে নিলো।লেপে ঢাকা সমস্ত শরীর টা
দেখার ইচ্ছে করছিল।আস্তে আস্তে লেপ সরাতে বাপি-দা কুঞ্চিত হয়ে শুলো।বিছানার
এলোমেলো চাদরের উপর মাতৃগর্ভের প্রগাঢ় আবেষ্টনীতে বদ্ধ একটা নিষ্কলুষ ভ্রূণের মত
দেখাচ্ছিল তাকে।আমার অজান্তেই আমার হাতটা তার গায়ে নেমে এলো।আমি সমস্ত দেহে হাত
বুলিয়ে দিচ্ছিলাম। ঠোঁট দুটো তার নড়ছিল ;ঘুমের নিবিড়তায় পাশবালিশে আলিঙ্গন খোঁজে।কয়েকবার চোখের পাতা কেঁপে ওঠে।আমার
লক্ষ্য এড়ায়নি।কপালে একটা চুমু বসিয়ে দিই।কে জানতো সেই চুমু বিদ্যুতের চাবুকের
থেকেও তেজস্ক্রিয়।কি লজ্জা...... কি লজ্জা.......!বাপি-দার চিল চিৎকারে ঘুম ভাঙা
চোখে মেসবাড়ির ছেলেরা ভিমড়ি খেয়ে চোর ভেবে জাপটে ধরল আমাকে।লাইট জ্বেলে সকলে
স্বস্তি পেল। কেবল অস্বস্তি কাটল না বাপিদার।দিদিকে সে জানিয়েছে আমার মানসিক
চিকিৎসার প্রয়োজন।
দিদি একনাগাড়ে
বকেচলে।পাড়ার ছেলেরা আমাকে দেখলে সিটি বাজায়।টোন করে।আমার চালচলন পোশাক আশাক
সাজগোজ কোনটাই ভাল নয়।দিদির বেলা এসব কি হয় না?আমি জিজ্ঞেস করেছি ও উত্তর করতে পারেনি।আরো প্রশ্ন করেছি সে
কি পিঠ খোলা ব্লাউজ বদলায়; আঁচল দিয়ে নাভি
ঢেকে হাটে;নাকি রাস্তায় বেরোনো বন্ধ করে দেয়।ও বলেছে ওরটা
স্বাভাবিক।আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি বলেছি উপভোগ্যও বটে।ছেলেরা আওয়াজ দিলে মজা পাস
নিজেকে সুন্দরী সুন্দরী মনে হয় তাইনারে।
দিদি তেলে বেগুনে জ্বলে
ওঠে।
-ভীমরতি ধরেছে তোর।তুই কি?ছেলে, মেয়ে,না হিজড়া?
দিদির সমস্ত রাগটা গিয়ে
পড়ে আমার ছোট আয়নাটার ওপর।আমার মত অও বোধহয় অবিকৃত প্রতিচ্ছবি দেয়।তাই এক আছাড়ে
ভেঙে ঝরঝরে হয়ে গিয়েছে।দিদি বলেছে অতশত সে বোঝে না।পাড়ার ছেলেরা যখন শিস দেয় বলে
ঐ ছক্কার দিদি আসছে তখন দিদির নাকি লজ্জা করে ঘেন্না হয়।আয়নার কাঁচের মত ভালবাসার
পারদ মাখানো সূক্ষ্ম হৃদয়টা ঠুনকো আঘাতেও ঘৃণার ডিনামাইটে যেন ভেঙে চুরমার হয়ে
যায় আর শত চেষ্টায় ও জোড়া লাগে না।
সজোরে ডায়েরি টা বন্ধ করে
হাঁপাতে থাকে রমেন।তাকে সকলে ঘেন্না করে।বাপি-দা দিদি বাবা আত্মীয়
স্বজন........সকলে।সত্যিই তার দেহটা পচাগলা পোকা ধরা পায়খানার মত
অস্বাস্থ্যকর।আবর্জনা অ্যাসিড ফিনাইল জল কিছুতেই যখন দুর্গন্ধ রোধ করা যায় না।তখন
কর্পোরেশনের ময়লা ফেলার গাড়ি বেলচা করে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে শহর থেকে জনবসতি থেকে
দূরে ধাপার মাঠে।
ডায়েরি লেখা রমেনের
পুরানো দিনের অভ্যাস।দুই হাজার তিনের ডায়েরির পাতাগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে লক্ষ্য
করে আটই মার্চের পাতাটা জেমস ক্লিপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট আরো কয়েকটি পাতার সাথে
আটকানো।আজ দিদির এক বান্ধবী এসেছিল দুপুরে।আমি পাশের ঘরে ছিলাম।দিদির সাবধান বাণী
অগ্রাহ্য করে বেশ উত্তেজক গল্পে মেতে ছিল ফাঁকা বাড়ি পেয়ে।গলা উত্তেজনায় খাদ
থেকে চড়ায় উঠে পড়ছিল মাঝে মাঝে।দিদিদের কলেজের এক বান্ধবী কমলিকা দিকে ভালবাসে
দিদির বন্ধুটি।ঐশ্বর্য রাই এর সাথে বর্ণনা করে ফেলল মেয়েটি কমলিকা দিকে।ওদের কথা
প্রসঙ্গে আর জানলাম ভদ্র মহিলার স্বামী বিদেশে থাকেন ওনার একটি মেয়ে আছে।জিন্সের
প্যান্ট আর টি শার্ট পোরে দিদির বান্ধবী টি সারাদিন সাইকেল নিয়ে টোটো করে বেড়ায়
অধ্যাপিকার পিছন পিছন।দিদি প্রিন্সিপাল কনীনিকা দির প্রশংসা করায় মেয়েটি বেজায় চটে
যায়।মোটা বুড়ি।এটাই তার অপছন্দের কারণ।কমলিকাদির মোবাইলে দিদির বান্ধবী টির
নাম্বার সন্দেহভাজন তালিকায় ধরা পড়ে যাবার পর থেকে নতুন নতুন অচেনা বুথ থেকে সে
কমলিকা দির কণ্ঠে কেবল হ্যালো ডাক টুকু শোনার জন্য ফোন করে।তাকে নিয়ে কলেজে পাড়ায়
বাড়িতে লোকের ছিঃ ছিঃ পড়ে গেছে।তবু মেয়ে নট নরন চরন।কলেজ কামাই করছে ভয়ে।জরুরি
অবস্থায় দিদির কাছে কলেজের আবহাওয়া জানতে এসেছিল।অভিভাবক ডেকে অপমান করেছে
প্রিন্সিপাল।পরিস্থিতি থিতলে সে কলেজ অভিমুখী হবে।
হঠাৎ দিদির গলাটা ভারী
শোনাচ্ছিল।
-আমার এসব একদম ভালো লাগে
না।ডোন্ট টার্চ মি।
তারপর একটা চিৎকার।আমি
ছুটে দিদির ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা বিছানা থেকে ভ্যানিটি ব্যাগ টা হাতে তুলে ঘুরতে
ঘুরতে আমার দিকে চেয়ে বলল; আসিরে।তারপর বের
হয়ে গেল।আমার মধ্যে চলে যাওয়া মেয়েটির ছায়া প্রশ্ন চিহ্নের উদয় ঘটাল।দিদি কে
জিজ্ঞেস করলাম।
-এটা কেরে পাঞ্জা?
সেদিন মুখে চোখে হাসি না
দুঃখ কি লেগেছিল রমেন এখন আর মনে করতে পারে না।হাসি হলে বিদ্রূপের আর দুঃখ হলে
মাটির যে মাটি কথা বলতে পারে না।আমাদের মাটির কথা আ মাটির কথা আম আঁটির কথা।রমেন
গাছটার দিকে আর একবার তাকায় সব কেমন ছন্দে ছন্দে মিলে যাচ্ছে।কিন্তু এত ছন্দ এলো
কোথা থেকে।অমাবস্যার নিকষ কালো কুমেরুতে পূর্ণিমার জোছনার প্রলেপ লাগল
কেমন করে।তবে কি সময় কাব্য করে না মানুষকে নিয়ে।ফুসফুসের অজানা লোকে উত্তরীয়
নিশ্বাসে নাড়ি ছিঁড়ে রাজপ্রাসাদ ও কুঁড়েঘর; কুঁড়েঘর ও রাজপ্রাসাদ হতে পারে; জীবনকল্প পরশ
পাথরে।মরূদ্যান ও মরুভূমি; মরুভূমি ও
মরূদ্যান মনে হতে পারে মনের অচলায়তন ঘুচলে।রমেনের মনে হয় ঘনীভূত যন্ত্রণা গুলো
মিছরির মত ফোঁটা ফোঁটা জমে গোটা একটা কাঁচের প্রিজম মত হয়।সেই ঘন জ্যামিতিক টির
একটি কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু দুই প্রান্ত সর্বসম ও সমান্তরাল বহুভুজ দ্বারা আবদ্ধ
এবং অন্যান্য তলগুলো সামান্তরিক-ক্ষেত্র।যার মধ্য দিয়ে সাদা আলোকরশ্মি যাবার সময়
সাতটি রং এ বিভক্ত হয়ে যায়। ব্যবহার অনুযায়ী
তলের সংখ্যা হয় ভিন্ন ভিন্ন ।
রমেন বিছানার তলা থেকে
একটা কিডস ব্যাগ বের করে।আলমারি থেকে জামা প্যান্ট ভরে নেয় তাতে।তার উপর ডায়েরি
গুলো সাজিয়ে রাখে।পেনের আঁচর বিহীন দুই হাজার ছয় এর ডায়েরি টা তখনো বিছানায়
পড়ে।ডায়েরি টা উল্টে পাল্টে দেখে সে।সাদা পাতা গুলো চাদরের ঘ্রাণ নিতে নিতে
বিছানার নৈসর্গলোকে একা পড়ে আরাম খায়।টনটনে ব্যথায় মাথার দুপাশে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ
করে বসে রমেন।কয়েক মাস ধরে তার ঘুসঘুসে জ্বর আসছিল।ওষুধেও কমছিল না।শরীর ভেঙ্গেছে;ওজন কমেছে;শেষ অবধি সরকারি
হাসপাতালের ডাক্তার ফিরিস্তি করেছিল একগুচ্ছ ব্লাড টেস্টের।ধরা পড়ল রোগটা।শম্পা
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল।বাপির ভালো নাম বিমলেন্দু; চক্রবর্তী ওরা।শম্পার সাথে বিয়ের কথা পাকা।আসছে
ফাল্গুনে।কলকাতার একটা সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি করে বাপি।একমাত্র ছেলের
পছন্দের সায় দিয়েছে মা বাবা।রবিবার আশীর্বাদ।ভয় কেবল রমেন কে নিয়ে।রমেনের খবর টা
পাঁচকান হলে হীরের টুকরো ছেলেটাও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।রমেনের বাবার চিন্তার অন্ত
নাই।শম্পার ও উদ্বেগ সেখানেই।বাপি দা মেনে নিতে পারলেও তার রক্ষণশীল পরিবার রমেনের
অসুখ টা জানতে পারলে............
বাবা যখন মাথা
চাপড়াচ্ছিল।
রমেন বলল সে বাড়ি ছেড়ে
চলে যাবে।
বাবা প্রশ্ন করে;
-কোথায়?
শক্ত হলেও উত্তরটা রমেন
নিজেই দেয়।
-আত্মীয় স্বজন সবাই জানবে
আমি চাকরির জন্য বাইরে গিয়েছি।আসলে সেটা স্কুল অফ ট্রপিক্যাল।
রমেন জানে ট্রপিক্যাল
মেডিসিন ক্রান্তীয় রোগজীবাণু সংক্রান্ত ইন্ডিয়ান মেডিকাল সার্ভিস ধাপার মাঠ।সব
আবর্জনার শেষ ঠিকানা।
একটি গাড়ির শব্দে রমেন
সোজা হয়ে বসে।শম্পা এসে দাঁড়ায় দরজায়।ব্যাগ কাঁধে তুলে ঘরের বাইরে বেরহয়
রমেন।বিছানা থেকে নতুন ডায়েরি টা হাতে তুলে রমেন কে এগিয়ে দিতে যায় শম্পা;
-ভাই তোর নতুন ডায়েরিটা
পড়ে রয়েছে যে।
রমেনের মুখে ছায়াঘন
আকাশের এক চিলতে রোদ্দুরের মত তির্যক হাসি খেলে গেল।
- নতুন বছরটা আমার জন্য
নয়রে দিদি তোদের।তোদের কথা লিখিস।আর যদি পারিস লিখিস উঠোনে বসানো এই আম গাছ টার কথা।
.....আম আঁটির কথা।ওর বড় হয়ে ওঠার কথা............ফল ছাওয়া দেওয়ার কথা.........ওকে
ঘিরে কাক কোকিলের সংসার পাতার কথা।
রমেন মনে করে পৃথিবীতে
উদ্ভিদের চাইতে সংবেদনশীল জীব জীবজগতে কেউ নেই।তার ফল মূল পাতা ফুল কোনটাই ফেলা
যায় না সমস্তটাই প্রাণী কূলের জন্য উৎসর্গীকৃত।রমেন আরো মনে করে জীবজগতে গাছের চাইতে সহনশীল জীব ও আর কেউ
নেই।হাজার কুঠারের বাড়ি তার বুকে বসালেও সে প্রতিক্রিয়া জানায় না।তার হাজার দুঃখ
কষ্ট হলেও সে কখনো প্রকাশ করে না।
রমেন কিডস ব্যাগ টা
মাটিতে রেখে মানব শিশুর মত আম গাছের চারাটাকে আদর করে।তার কচি পাতার কোমল স্পর্শ
মাখে গালে।তারপর মুঠি ভরে ঝুর ঝুর মাটি দেয় তার গোড়ায়।আম আঁটির কথা এই মাটির
কথা।কেউ জানতে পারে না।রুমালে হাত মুছে বাবাকে প্রণাম করে রমেন। শম্পাকে প্রণাম
করতে গেলে সে পা সরিয়ে নেয়।বাবার বুকে মুখ গুঁজে কেঁদে ওঠে।
রমেন বলে;
- নোংরা হাত তাই প্রণাম
নিবিনা দিদি।
বিদায় লগ্নে চোখের জল
সংবরণ করে সে।তার এখন অনেক কাঁদার বাকি।ওই টুকুই তো সহায় সম্বল রইল তার।ফুরিয়ে
গেলে পাবে কোথায়।আটকে আসা সঙ্কুচিত গলার স্বর প্রাণপণে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে
সে বলল;
-আসি!তোরা ভালো
থাকিস।বাবাকে দেখিস।
রমেন দ্রুত পায়ে বেরিয়ে
যায়।শম্পা ডুকরে কেঁদে ওঠে।তাকে চুপ করতে বলে রমেনের বাবা।বুকের মাঝখানটায় তখনো
তার আঁচড়ে পড়ছে সাইক্লোন টাইফুন এর মত বিশালাকার লোক লজ্জার ভয়।
রমেনের ট্যাক্সি টা পাড়ার
গলি রাস্তা থেকে সশব্দে বেরিয়ে যায়।পেছনে পড়ে থাকে রমেনের চেনা গলি,চেনা মুখ গুলো,চেনা উঠোন,আর ছোট একটা আম চারা নীরব
নির্ভেজাল দর্শক হয়ে।
দূরে আগমনীর ঢাকের বাদ্যি
দশমীর মত শোনায়।
বিজ্ঞান ও মনে করে
পৃথিবীতে প্রায় এক ট্রিলিয়ন জীবজন্তু বসবাস করে তার মধ্যে তারা জানতে পেরেছে
মাত্র ষোল লক্ষর কাছাকাছি জীবজন্তুর কথা।তা জীব জগতের একটা ধূলিকণার ও সমান নয়। বাকিদের
কথা চিরকাল অজ্ঞাত কল্পনাতীত থেকে যাবে।
অলভ্য
ঘোষ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন