আমরা জানি যে, পুঁজির নিয়মই হচ্ছে দেশের নতুন নতুন ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ করা এবং দেশীয় অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে ফেলা ও শোষন উপযোগী কাঠামো সৃষ্টি করা। এতে মানুষের যে সকল মৌলিক অধিকার, মৌল দাবী সুরক্ষিত ছিল, তা ধ্বংস হয়ে যাওয়া। জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনে, বিদেশী পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটে। সমাজতন্ত্রের সমাজব্যবস্থা, সাম্যবাদী সমাজ কল্পনা করা কিংবা আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার ব্যাখ্যা কিছুটা সান্ত্বনা পর্যায়ের, পুঁজির বিনাশ না ঘটা অবধি, পুঁজিবাদের কেন্দ্রীভবন যতদিন থাকবে, ততদিন সমাজতন্ত্র কল্পনার স্তরে রয়ে যাবে। অসম পুঁজির বিকাশ যেমন জাতীয় জীবনে চরম সংকট ডেকে আনে, তেমনি একটা সময়ে ভেঙেচুরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে। ফলে মানুষ এক সময় তার মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা করে যাবে, তাতে সমাজতন্ত্রের ছত্রছত্রছায়ায় হতে পারে, কিংবা অন্য ভাবেও••••~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
রংরুট সাক্ষাৎকার
নাসির
ওয়াদেন
রংরুট: কখনো কি মনে হয়েছে ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা রংরুট ধরেই এগিয়ে
চলেছে?
অন্তত বিগত সাত
দশকের নিরিখে। বিশেষ করে এই প্রশ্নটি দিয়েই আপনার সাথে
আলাপটুকু শুরু করার কারণ আর কিছুই নয়, সাত দশকের স্বাধীনতার প্রাপ্তি আর অভিজ্ঞতার
বাটখারায় মানুষের সার্বিক উন্নতির রেখাচিত্রটি কি অনেকটাই বেঢপ দেখায় না? আপনার মতামত।
নাসির ওয়দেন: উত্তর এভাবে দেওয়া
যায় যে, ভারতের স্বাধীনতা ১৯৪৭সালে জনগণের ক্ষোভ, অর্থনৈতিক
বৈষম্য, সামাজিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক সংকট থেকে দেশ
মুক্তির প্রেরণা জাগে। পরাধীন
ভারতের বিভিন্ন গণআন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে পরোক্ষ প্রভাব ছিল। বৃটিশ পরাধীনতার হাত থেকে ভারতীয়দের মুক্তির ঐকান্তিক প্রয়াসও জাতীয়তাবাদী
আন্দোলনে ইন্ধন জোগায়। অহিংস ও সহিংস আন্দোলনের
মধ্যে সহিংস আন্দোলনের চাপে পড়ে বৃটিশরা দেশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে
স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পূর্ণ রংরুটে চলেছিল এ কথা আমি মনে করি না। সঠিক চিন্তন ও বিপ্লবী কর্মকান্ডে নৈতিকতার ভেতর দিয়ে জয় হয়েছিল বলে মনে
করি। তবে একথা জোরের সঙ্গে স্মরণ
করতে চাই যে, বিগত সাত দশকের মতো পর্যাপ্ত সময় হাতে পেয়েও
ভারতের বিভিন্ন শাসক গোষ্ঠী দেশ পরিচালনা করলেও সেভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রকে
প্রসারিত করতে পারেনি। মানুষের
দৈনন্দিন অভিজ্ঞতার নিরিখে তারা দেখেছে যে, সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে
মানদণ্ড থাকা দরকার, তা
সম্ভব হয়নি। দীর্ঘদিন কংগ্রেস দল শাসন
ক্ষমতায় থাকলেও পুঁজিবাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারেনি। কংগ্রেসের
নিজস্ব শ্রেনী স্বার্থ থাকায় এবং জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার দায়বদ্ধতা
থাকায়, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের ভেতর কর্মসূচি পরিচালনা করেছে। ফলে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে গিয়ে ১৯৯১ সালে 'Economic Survey'এর ভিত্তিতে' New Economic Policy ' গ্রহন করে ও গ্যাট চুক্তিতে
স্বাক্ষর করে। ফলে সার্বিক উন্নয়নের
ক্ষেত্রে বলুন আর জনস্বার্থে বলুন এক ভয়াবহ ধনবৈষম্য, সামাজিক ও শ্রেণিগত সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাই
আশানুরূপ সাফল্য মেলেনি।
রংরুট: ভারতবর্ষের রাজনীতিতে একটি ধর্মনিরপেক্ষতার বাতাবরণ, যেটি বৃটিশ আমল থেকেই কংগ্রেসি নেতৃত্ব দ্বারা
সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল, স্বাধীনতার সাত দশক পেড়িয়ে এসে সেই বাতাবরণের
ফানুশটিকে কি দিনে দিনে চুপসে যেতে দেখছেন না? না কি ভারতীয় জনমানসের মূল আবেগ সেই বাতাবরণটিকে
আরও বহুদিনের জন্যে রক্ষা করতে পারবে। পারবে ভারতীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের বলেই? আপনার মতামত।
নাসির ওয়দেন: কংগ্রেস দল দীর্ঘদিন
ধরে জাতীয় রাজনীতিতে কেন্দ্রের শাসন ক্ষমতাসীন থেকে কিছুটা ধর্মনিরপেক্ষতা বজায়
রাখার জন্য প্রচেষ্টা করে গেছে। সংবিধানের প্রস্তাবনাতে কথাটা স্পষ্ট করে থাকলেও
বৈচিত্র্যময় ভারতের অখণ্ডতা রক্ষারজন্য যে ধরনের ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল, তা করেননি, তাই রাজীব গাঁধীর কার্যকলাপে প্রমাণিত। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ভারতের অতীত ঐতিহ্য। প্রাচীন ভারতের সময়কাল থেকেই নিজ নিজ ধর্মাচরণের ভেতর দিয়ে নিজ সংস্কৃতিতে
পুষ্ট হয়েছে। কংগ্রেস শাসকগণ দীর্ঘকাল
শাসন ক্ষমতায় থাকার ফলে দলের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে দলীয় স্বার্থ সিদ্ধির
উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা মাফিক ধর্মনিরপেক্ষতা অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু
আমরা কী দেখলাম, সাত দশকের রাজনৈতিক উত্থান পতনে দেশের মধ্যে
অস্থিরতা ক্রম বৃদ্ধিমান। বিভিন্ন রাজ্যে জাতিসত্তার নামে, উন্নয়নের অসমতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার জলাঞ্জলি ঘটেছে। দিন দিন বৃটিশদের দেওয়া বিভেদ নীতি জাতীয় জীবনে প্রকট আকার ধারণ করছে। বিশ্বাস হারিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বাসে
ফাটল ধরেছে, চুপসে যাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার
বেলুন। পাঁচ হাজার বছরের বেশি কাল
জুড়ে ভারতের এই মাটিতে যে সভ্যতা, যে
সংস্কৃতি ও যে জীবন ধারা গড়ে উঠেছে তা কোনো একটি জনগোষ্ঠী, একটি ভাষা, একটি
দর্শন বা একটি ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে নি। তা দেশজ ও বহিরাগত বহু জনগোষ্ঠী, বহুবিধ ধর্ম, বিভিন্ন
দার্শনিক চিন্তা ও নানা ভাষার ঘাত-সংঘাত, ভাঙা গড়া, সংযোজন ও বিয়োজন এবং সমাজ বিকাশের
বিভিন্ন স্তরের মধ্য দিয়ে মিলে মিশে গড়ে উঠেছে। সর্ব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা ও রাজনীতি থেকে ধর্মের সম্পূর্ণ বিচ্ছেদ
এবং ধর্মাচরণ ব্যক্তির নিজস্ব ব্যাপার এই চিন্তাধারাই প্রকৃত সেকুলারিজম বা
ধর্মনিরপেক্ষতা। ভারতের মাটিতে এই সময়ে
কতখানি নিরাপদ তা ভাবতে হচ্ছে। উগ্র জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র
করে মৌলবাদী শক্তির দ্বারা দেশ ক্রমাগত সাম্প্রদায়িকতার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। সুকৌশলে বিষ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান শাসক দলের প্রচ্ছন্ন সহায়তায় একশ্রেণির মানুষ উগ্র
সাম্প্রদায়িকতার সুযোগ গ্রহণ করছে। তবে
আমার বিশ্বাস, সনাতনী ভারতের যে আদর্শ, যে পারস্পরিক মেলবন্ধন, সম্পর্ক অটুট আছে, কিছু মানুষ তাতে প্রভাবিত হচ্ছে না, তা নয়, কিন্তু
অধিকাংশ মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতার ছায়াতলে থাকবেই। বহুত্ববাদী চিন্তা চেতনার ভেতর দিয়ে একতন্ত্রী ভাবনার যে ভারতীয় ঐতিহ্য আছে
তা অটুট থাকবে।
রংরুট: আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সুদীর্ঘ বাম আন্দোলনের ঐতিহ্য বাঙালির আত্মপরিচয়কে কতটা
বিশেষত্ব দিতে পেরেছিল বলে আপনার ধারণা। এবং একই সাথে ক্ষমতা কেন্দ্রিক
মানুষের ভোট কুক্ষিগত করে রাখার যে রাজনীতি তা কিভাবে বাম ঐতিহ্যকে ধুলিসাৎ করল
শেষমেষ?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে
এই রাজ্যে বাম আন্দোলনের পূনরাভ্যুত্থান কি আর সম্ভব আদৌ?
নাসির ওয়দেন: রাজনৈতিক বিতর্কে না
গিয়ে বলতে চাই যে, বিগত ৩৪ বছরের বাম আমলে বাংলার ও বাঙালির একটা
স্বতন্ত্রবোধ দেখা গেছিল। উন্নয়নের
ক্ষেত্রে চিন্তা চেতনার ফাঁক থাকলেও বাংলার অগ্রগতি যে ঘটেছে, একথা স্বীকার
করি, তবে আরও সুপরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল। কৃষির বিকাশ ঘটেছিল ভূমি সংমাধ্যমে, বর্গাদার, পাট্টাদার, ভূমিহীনকে ভূমি দেওয়ার ভেতর দিয়ে বহু মানুষ জমি জায়গা
পেয়েছিল, উন্নয়নের জোয়ার না এলেও
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অনেকটা বাংলা এগিয়ে ছিল। তবে এটা ঠিক যে, উদার
অর্থনীতির ফলে বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও কেন্দ্র ও রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে
সহাবস্থান ছিল না। ফলে রাজ্যগুলির সীমাবদ্ধতা
ছিল ও এখনও আছে। শুধুমাত্র কৃষির বিকাশের
দ্বারা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের ধারা রক্ষা করা সম্ভব না, দেশ তথা রাজ্যের সার্বিক
বিকাশে শিল্পের প্রয়োজন। কৃষিরউপর
ভিত্তি করে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সঠিক রূপায়ণে খামতি ছিল। সর্বজনীন সহমতের, জনগণের অংশীদায়িত্বের ঘাটতির ফলস্বরূপ বাম ঐক্যে
ফাটল ঘটে এবং বাম ঐক্য ধূলিসাৎ হয়ে পড়ে। পুঁজিবাদী
ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে, দেশে দেশে
বেকারী বেড়ে যাচ্ছে। jobless হচ্ছে, অর্থনৈতিক
সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, বিশ্বে
কর্মচ্যূতি বাড়ছে, লগ্নি
পুঁজির দাপটে জনজীবন হাঁপিয়ে উঠছে। ফলে মানুষ বিকল্প অর্থনীতির সন্ধানে প্রবৃত্ত হবে। তীব্র
পুঁজির সংকট থেকে বাঁচতে মানুষ বামপন্থা ্অর্থনীতির দিকে ঝুঁকবে বলে আমার মনে হচ্ছে। সর্বহারা
মানুষের গণআন্দোলনে থাকার কারণে এটা হতে পারে ----
রংরুট: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও পূর্বইউরোপের পটপরিবর্তনের হাত ধরে বর্তমানের একমেরু
বিশ্ব মানুষের মৌলিক অধিকারগুলির পক্ষে কতটা বিপদসংকুল বলে আপনি মনে করেন? নাকি সমাজতন্ত্রের লৌহযবনিকার আড়াল
উঠে যাওয়াতেই মানুষের মৌলিক অধিকার অধিকতর সুরক্ষিত এখন? আপানার অভিমত।
নাসির ওয়দেন: ১৯৯০~৯১ সালে
সোভিয়েত ইউনিয়নের ও পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলিতে সমাজতন্ত্রের পতনের ফলে
বিশ্ব রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটে। মার্কিন
সাম্রাজ্যবাদ পৃথিবীতে মহাশক্তিধর দেশ হিসেবে পরিগণিত হয়ে পড়ে। স্বভাবত
ঐ দেশগুলো বিশ্বপুঁজিবাদের শিকার হয়ে যায়। আমরা
জানি যে, পুঁজির নিয়মই হচ্ছে দেশের
নতুন নতুন ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ করা এবং দেশীয় অর্থনীতির কাঠামো ভেঙে ফেলা ও শোষন
উপযোগী কাঠামো সৃষ্টি করা। এতে মানুষের যে সকল মৌলিক
অধিকার, মৌল দাবী সুরক্ষিত ছিল, তা ধ্বংস হয়ে
যাওয়া। জনগণের অর্থনৈতিক ও
সামাজিক জীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনে, বিদেশী
পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটে। সমাজতন্ত্রের সমাজব্যবস্থা, সাম্যবাদী সমাজ
কল্পনা করা কিংবা আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার ব্যাখ্যা কিছুটা সান্ত্বনা
পর্যায়ের, পুঁজির বিনাশ না ঘটা অবধি, পুঁজিবাদের কেন্দ্রীভবন যতদিন থাকবে, ততদিন
সমাজতন্ত্র কল্পনার স্তরে রয়ে যাবে। অসম পুঁজির বিকাশ যেমন জাতীয় জীবনে চরম সংকট ডেকে আনে, তেমনি একটা সময়ে
ভেঙেচুরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনার বীজ লুকিয়ে থাকে। ফলে মানুষ এক সময় তার মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা করে যাবে, তাতে সমাজতন্ত্রের ছত্রছত্রছায়ায় হতে পারে, কিংবা অন্য
ভাবেও••••
এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথঠাকুর রাশিয়া ভ্রমণের সময়ে 'Modern Review' পত্রিকাতে লিখেছেন যে, ''•••if she fails with the flag of true ideals in her hands,
then her failure will fade like the
morning star only to usher in the sunrise of the new age." এই কথাটাই ভরসা যোগায়।
রংরুট: সারা বিশ্বের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির মধ্যে দিয়েই অনেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক
রাজনীতি চর্চার মধ্যে সুকৌশলী স্বৈরতন্ত্রের ক্রমবিকাশের অশনি সংকেত দেখছেন। এর পিছনে কি ধনতান্ত্রিক পুঁজিবাদেরই
বলিষ্ঠ হাত রয়েছে? এই
প্রসঙ্গে মুসোলিনির একটি উক্তি মনে পড়ছে, “Fascism
should more appropriately be called corporatism because it is a merger of state
and corporate power.’ -- Benito Mussolini” আপনার
অভিমত।
নাসির ওয়দেন: অবশ্যই। সারা বিশ্বের রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতির মধ্যেই দেখা যাচ্ছে
যে, অনেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার মধ্য
দিয়ে সুকৌশলে স্বৈরতন্ত্রের অশনি ছায়া দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। যেকোনো
ভাবে হোক ক্ষমতা দখলে রাখতে হবে। তাতে
জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি যদি ভঙ্গ হয়, হোক, জনগণের স্বার্থ রক্ষার চেয়ে দলের গদী রক্ষা জরুরি। এই
মানসিকতার ভেতরে লুকিয়ে আছে স্বৈরতন্ত্রের পদধ্বনি। কিন্তু
একথা মনে রাখা দরকার যে, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম পরিচালনা করতে
হলে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে একসাথে নেওয়া খুবই বিপজ্জনক ও আত্মঘাতী কৌশল। কেননা, স্বৈরতান্ত্রিক
শক্তি ধর্মীয় মেরুকরণের দ্বারা জনগণের ঐক্য বিনষ্ট করে। মুসোলিনির
বক্তব্য থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হওয়া যায় যে, কর্পোরেট শক্তির দ্বারা ফ্যাসিবাদ
সমৃদ্ধ হয়ে থাকে। ফ্যাসিস্ট শক্তি বিভিন্ন
রূপে, বিভিন্ন ভাবে জাতির মধ্যে, সম্প্রদায়ের
মধ্যে, ধর্মের নামে বিভেদ ঘটিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদে জন্ম
দেয়। সেই
বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিগুলো ফ্যাসিবাদী বিরূপ চেহারা নিয়ে বেড়িয়ে এসে গণতন্ত্রকে
ধ্বংস করে। হিটলারের ষাট লক্ষ ইহুদী
হত্যা, ইন্দোনেশিয়ার কমিউনিস্ট হত্যা, চীনের গণহত্যা, (অন্য মতে আছে ), বর্তমানে রোহিঙ্গা হত্যা ও বিভিন্ন
দেশে জাতি, বর্ণ বিদ্বেষগত কারণে গণহত্যা এরই ফল হিসেবে
সংঘটিত হচ্ছে।
রংরুট: আজকে একদিকে বিশ্বায়ন ও আর একদিকে ইনটারনেট বিপ্লবে মানুষের সাথে মানুষের
যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতিতে আপনার কি মনে হয়, দেশীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার যে গণ্ডীবদ্ধতা তৈরী
করে-
যাতে মানুষে মানুষে অন্তত সাংস্কৃতিক ও মানসিক একটি বিভাজন
রেখার দূরত্ব রয়েই যায়; অদূর
ভবিষ্যতে মানুষ সেই দূরত্বের বিভাজন রেখা মুছে ফেলে বিশ্বমানবতায় পৌঁছাতে পারবে কি
অনেক সহজেই?
নাসির ওয়দেন: বিশ্বায়ন গাল ভরা
নাম। এর সম্পর্কে সাধারণ জনগণের
কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই, কিন্তু 'এক দেশ, এক নীতি 'র যে প্রয়াস জনজীবনে কোনো
প্রভাব ফেলতে পারছে না, তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য। আন্তর্জাল
বা ইন্টারনেটবাহী অপ্রাকৃত বা ভার্চুয়াল বিশ্ব, ভোগ্যপণ্য সম্পৃক্ত জীবনে যোগ করেছে এক নতুন মাত্রা। সকলেই
সব কিছু হাতের কাছে পেতে চাই। নিজের বাসস্থানের ভেতর
যাবতীয় পার্থিব সম্পদ জড়ো করে স্বচ্ছন্দে জীবনযাপনই একমাত্র লক্ষ্য। এই
মাত্রাহীন চাওয়া-পাওয়ার অবসরে সামাজিক তথা মানবিক মূল্যবোধ দিশেহারা। বাজার
অর্থনীতির ফলে পণ্যের পসরার পিছনে দৌড়িয়ে বেড়ানো মানুষের অদম্য আকর্ষণকে ভিত্তি
করেই বাণিজ্য শুরু করল দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার ভোগ্যপণ্য
উৎপাদনকারীর দল। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যেমন
মানুষের জীবন সমৃদ্ধ করে, তেমনি তার কুফলও মারাত্মক। দেশীয় ঐতিহ্য হারিয়ে, বিদেশীয় আচার অনুষ্ঠান অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। ভারতের সনাতনী আদর্শ বিঘ্নিত হচ্ছে, পাশ্চাত্য সভ্যতার অনুকরণে অভ্যস্ত
হয়ে গেছি। ফলে সাংস্কৃতিক ও মানসিক
ক্ষেত্রে বিভেদ বাড়ছে, স্বকীয়তা ও আত্মকেন্দ্রিকতা জোরালো হচ্ছে, বিভাজন নীতির
বৃদ্ধি ঘটছে। তবে, আমি মনে করি যে, এই বিভাজন নীতি
সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী এবং ক্রমপাতনিক নিয়মানুসারে বিশ্ব মানবতার দোরগোড়ায় মানুষ
"এক দেশ, এক নীতি " বিশ্বাসে আকৃষ্ট হবেই ও মানুষ পরিত্রাণ চাইবে।
রংরুট: আধুনিক জীবনে ভোগবাদ মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিভুমিকেই টলিয়ে দিয়েছে –এমানটাই যদি কেউ ভাবেন, সেই ভাবনাকে আপনি কি ভাবে দেখেন? ভোগবাদের বিস্তারের সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে সমানুপাতিক সম্পর্ক সেকথা
মাথায় রেখেও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে ভোগবাদের ভুমিকাকে কি কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ
করা সম্ভব বলে মনে করেন আপনি?
নাসির ওয়দেন: ভোগবাদ তো
পুঁজিবাদের নামান্তর। পুঁজির
অসম বিকাশের ফলে ভোগবাদের উৎপত্তি। যার অঢেল আছে, তার ভোগের
স্পৃহা ততটাই বেশি। ভোগবাদের ফলশ্রুতিতে আমরা
বাবা রামরহিম, ফলাহারী বাবা আরও কত মানুষ
যে জড়িয়ে আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। ভোগবাদই মানুষকে দিন দিন
বিনাশ করছে। ভোগবাদের বিপরীতে দারিদ্রতাও
আছে। Theory
of Immezeration (দারিদ্রের
তত্ত্ব ) এ বলা হয়েছে যে, "সামাজিক সম্পদ, সক্রিয় পুঁজি যত বৃদ্ধি পাবে •••ততটাই শিল্প
শ্রমিকদের বেকারী বাড়বে, জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ••• পুঁজি সঞ্চয়ের এটাই সাধারণ
নিয়ম। " তাই বলে জনগণ হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না, তারা সংগঠিত হয়ে কায়েমী স্বার্থের বিরুদ্ধে
সংগ্রামে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ভারত এক আধ্যাত্মিক দেশ, অশিক্ষা ও কুসংস্কার জড়িয়ে আছে, প্রকৃত
শিক্ষার আলোয় পুড়ে যাবে ভোগবাদ। মানবিক মূল্যবোধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, জনগণ
সংগঠিত আন্দোলনে সামিল হচ্ছে, দাবি আদায়ের লড়াই শুরু হয়েছে। মানবিক
মূল্যবোধের অবক্ষয় সত্বেও ভোগবাদকে
নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলেই আশা করছি।
রংরুট: আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তার স্বাধীনতার পরিসর ও নাগরিক জীবনে রাষ্ট্রীয়
নিয়ন্ত্রণ এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকই বা কতটা ও সামঞ্জস্য বিধানই বা কি ভাবে সম্ভব? অবশ্যই এই ফারাক ও সামঞ্জস্য বিধান এক
এক অঞ্চলে এক এক সমাজ ও রাষ্ট্রে এক এক রকম হওয়ারই কথা। কিন্তু বিশ্বায়ন কি এই বিষয়ে সঠিক কোন
দিশা দিতে পারবে বলে মনে হয়?
নাসির ওয়দেন: আধুনিক
বিশ্বব্যবস্থায় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার প্রতিনিয়ত খর্ব করা হচ্ছে। বিভিন্ন
দেশে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ, জাতপাত, সংকীর্ণ রাজনীতি, অনিয়ন্ত্রিত
অর্থনীতি জাতীয় জীবনে বিশেষ সংকট ডেকে আনছে। স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলি সংকুচিত হচ্ছে, নাগরিক জীবনে বিশেষ করে রাষ্ট্রীয়
চরিত্রের পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে উগ্রতা, নিষ্ঠুরতার ধ্বনি শোনা যাচ্ছে, ফলে আমরা তীব্র সংকটে নিমজ্জিত হয়ে
পড়ছি। আমাদের উত্তরণের একমাত্র পথ
সঠিক মতাদর্শকে সামনে নিয়ে আসা। জাতীয়তাবাদকে
এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিশ্বায়নের
খারাপ বিষয় পরিহার করে ভালগুলোকে পরিশ্রুত করে শ্রেণি ঐক্যের ভিত্তিতে অর্থনীতির
সুষম বিকাশ ঘটানো। বিশ্বায়নের শর্ত অনুসারে
গ্যাট চুক্তির ফলে ভারতীয় অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে, যেমন, কৃষি বীজে ও পণ্যে পেটেন্ট
ব্যবস্থা চালু করা, ভরতুকির সীমা বেঁধে দেওয়া ও অবশেষে রদ করা, গণবন্টন
ব্যবস্থা তুলে দেওয়া, খাদ্য শস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি
বাধ্যতামূলক করা ইত্যাদির দ্বারা অর্থনীতি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রতিযোগিতার বাজার চালু হয়েছে, সহজে বিদেশী পণ্য আমাদের বাজারে
প্রবেশ করতে পারছে ও দেশীয় শিল্প সংকটে দাঁড়িয়ে আছে। একদা বৃটিশরা দেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে, তেমনি, পরোক্ষ পথে উদারনীতির আড়ালে
ধনসম্পত্তি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী জে ডি
বার্নাল তার বই " সোস্যাল ফাংশন অব
সায়েন্স " এ বলছেন --"ভারতবর্ষে বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য জাতীয় আয়ের ০•০১৫ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে •••ওই দেশের বিজ্ঞানের অগ্রগতির
জন্য দেশের মানুষকে অবিলম্বে স্বনির্ভর ও স্বাধীন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত প্রয়োজন। •••" বিশ্বায়ন দেশকে কোন
পথে নিয়ে গেছে তার বিষয়ে আদথ ব্রুক বলেছেন, "ব্রিটিশ শিল্পের উন্নতি
শুধুমাত্র যুগান্তকারী আবিষ্কারের প্রতিফলন নয়, ভারতবর্ষ থেকে লুঠতরাজ ও শোষণের
মাধ্যমে নিয়ে আসা প্রচুর ধনসামগ্রীও এর জন্য দায়ী। " তবে ভারতের শাসকদল যদি তার সুফল গুলোকে কাজে লাগাতে পারে, বিকল্প অর্থনীতির পথ অবলম্বন করে তাহলে দেশ স্বনির্ভর
হলেও হতে পারে।
রংরুট: সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিবর্তনের পথে আমরা যে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি, সে কথা হয়তো বলাই যায়। কিন্তু সমাজ সংসার বিবর্তনের পথে বিগত দুই হাজার
বছরের হিসাবটুকুই যদি ধরি খৃষ্টাব্দের সূত্রে- তাহলে
সত্যই কতটুকু এগোলো মানুষের সমাজ সংসার সভ্যতা? আপনার মূল্যায়ন।
নাসির ওয়দেন: সাহিত্যে, দর্শনে, বিজ্ঞানে
প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা এগিয়ে গেছি। যদি
আমরা সেই বিষয়কে ধরে ধরে বিশ্লেষণ করি তাহলে এটা বুঝা সহজ হবে যে, মানুষের অগ্রগতি
দ্রুত ঘটছে, বিজ্ঞানের অবদান আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। বিজ্ঞানীদের
এক সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূস বলেন :-" বিজ্ঞান আমাদের জানতেই হবে। পররাষ্ট্রবিদ্যা, রাজনীতি, আইন, দর্শন, ধর্ম এমনকি নৈতিকতাকেও কোনো সর্বজনীন চরিত্রে দেখা যায়
না। সর্বজনীনতা রয়েছে শুধু
বিজ্ঞানেই। "আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ যেমন নতুন ভাবনাকে উস্কে দিয়েছে, তেমনি মার্ক্সের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদকেও বাতিল করে দেওয়া যায়নি। বিজ্ঞানী
মেঘনাদ সাহা বলেছেন, --" এক পাউন্ড পরীক্ষালব্ধ তথ্য, একটন থিওরি
অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। " ফলে সমাজ বিবর্তনের
ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অস্বীকার করা যাবে না। দু’হাজার
বছরের মানব সভ্যতা অনেক এগিয়ে গেছে, প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন কায়িক শ্রমকে কমিয়ে
দিয়েছে, অথচ অল্প খরচে বেশি বেশি উৎপাদন তুলে দিয়েছে। দুহাজার
বছর সময় কম নয়, সেভাবে অগ্রসর হতে পারে নি। সাহিত্য
জীবন দর্শনের অগ্রগতি টেনে এনেছে। মনন ও চেতনার প্রসার ঘটিয়েছে।
রংরুট: সবশেষে এসে শুরুর সেই সূত্রটুকুর স্মরণে জানতে চাইবো; রংরুটই বলুন আর অগ্রগতিই বলুন সাধারণ মানুষের
জন্যে এই বিশ্ব কতটা নিরাপদ আজ, কারণ সেইখানেই বিশ্বমানবতার নোঙরটি ফেলতে হবে না
কি আমাদের?
নাসির ওয়দেন: পরিশেষে, একটি জটিল ও কঠিন শব্দের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। রংরুটের
পথে কিংবা অগ্রগতির বিষয়ে একটা মুল বিষয় হচ্ছে --মানবতা। বিশ্ববাসী আজ বিপন্নের মুখে দাঁড়িয়ে। চারিদিকে
যেভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মৌলবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে, তাতে আক্ষরিক অর্থে মানবতা বিপন্ন। "বিপন্ন স্বদেশ, এসো
প্রতিরোধ গড়ে তুলি "--শ্লোগান তুলে ধরতে দেখছি। জাতীয়
জীবনে অর্থনৈতিক সংকট, একমেরু বিশ্ব, এককেন্দ্রিক শাসন কায়েম করার
স্পৃহা দেখে শঙ্কা জাগে, উদ্বিগ্ন
হয়ে পড়ি। প্রতিদিনই সংবাদ শিরোনামে
খুন, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, মানববোমা ব্যবহার, মানবতা লুণ্ঠিত
হচ্ছে। ফলে বিশ্ব আজ নিরাপদ
স্থান নয়, মানুষ ভিনগ্রহে যাওয়ার রাস্তা সন্ধান করছে। গণতান্ত্রিক
কোরিয়া আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব, জীবাণু যুদ্ধের হুমকি, পারমাণবিক যুদ্ধের চেয়েও ভয়ংকর চেহারা ধারণ করতে
চলেছে, আর বিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভয়াবহ
পরিস্থিতিতে। এই মূহুর্তে আশু প্রয়োজন
হচ্ছে বিশ্ব মানবতাবোধ জাগিয়ে তোলা। শ্রেণী
সংগ্রামের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের অনেক পথ চলতে হবে। রাষ্ট্র সংঘ বা সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ যাই বলি না কেন, নীরব পুতুল করে রাখলে চলবে না। দৃঢ়তা নিয়ে মানবজাতির স্বার্থে, মানুষের কল্যাণে এগিয়ে যেতে হবে। আমি
বিশ্বাস করি, মানুষের জয় হবেই, বিশ্ব সাম্যবাদের দিকে এগিয়ে যাবে
সংশোধন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে।
সকলকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম, শুভেচ্ছা, ভালবাসা
জানাই। রংরুট
কর্তৃপক্ষকে আমার বিনম্র ভালবাসা জানিয়ে ইতি করছি। সকলেই ভাল থাকুন ও সৃজনশীলতায় নিয়োজিত থাকুন। ধন্যবাদ।
নাসির ওয়াদেন :
জন্ম~২৩ জুলাই ১৯৫৯। বীরভূম জেলার মুরারই থানার রঘুনাথপুর গ্রামে, এক মাঝারি কৃষক পরিবারে। পিতা
আফসার আলী, মাতা লতিফুন-নেশা, পিতামহ পঞ্জত আলী, স্থানীয়
এক জমিদারের রাজস্ব কর্মচারী ছিলেন। পিতা ভালো মর্সিয়া গান
গাইতেন। প্রাচীন পুঁথি বাড়িতে পড়া
হতো। ছোট দাদু সাবের আলী সুর করে
পুঁথি পড়তেন। বর্তমানে প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত। সহধর্মিণী
মানেসা খাতুন স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জড়িত। এক
কন্যা ( বাংলা সাহিত্যের স্নাতকোত্তর ) ও এক পুত্র বর্তমান। মশাল" পত্রিকাতে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম
কাব্য গ্রন্থ - " বুক ছুঁয়েছি নগ্ন রাতে " ২০০৬ ও "প্রিয় ফুল ও
অভিমানী ইচ্ছেরা "-২০০৭ এবং গল্পগ্রন্থ -" অথবা অন্য পৃথিবী" ২০০১১
সালে প্রকাশিত হয়। ২০১১ সালে গল্পগ্রন্থখানি
'কাঞ্চীদেশ সাহিত্য 'পুরস্কার পায়। স্বরচিত নাটকও পুরস্কৃত
হয়েছে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে লেখা
লেখি চলছে। অধ্যাপক ডঃ অরিন্দম সিংহ লিখেছেন : কবি নাসির ওয়াদেন এক সংবেদনের কবি কাব্যচর্চা তাঁর বহুদিনের। গ্রামীণ জীবনকে, জীবনের নানা ভাঙাগড়াকে প্রত্যক্ষ করেছেন একেবারে
বাস্তবতার সঙ্গে লগ্ন থেকেই ••••।
নাসির ওয়াদেন
রংরুট
সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে থেকে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।