সমসাময়িক সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ * সোনালি পুপু



সমসাময়িক সংস্কৃতি
ও রবীন্দ্রনাথ

কত দিন আগের এক জন মানুষ সেই সময়ের, যখন সবে সবে বিজলি বাতি জ্বলেছে  পৃথিবীতে  আজ এই আন্তর্জালের মুঠোয় বন্দী ছোট্ট পৃথিবীতে,   দেড়শ বছরের ও পরে,  সেই লোকটি কোন ভাবেই কি আর প্রাসঙ্গিক থাকেন? প্রশ্ন নিয়ে বসেছি আর আমিও খুব বৃদ্ধ হয়েছি যে, সেটা টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছি তবু পিছন ফিরলে এখনো ইস্কুলের হাইডেস্ক, কলেজের ক্যান্টিন হাত বাড়িয়েই ছুঁতে পারি বটে আর সেখানে ত রবি ঠাকুর থই থই আমরা যখন ষোড়শী নায়িকা, তখন; গীতাপাঠ অপেক্ষা শেষের কবিতা পাঠ করিলে স্বর্গের অধিক নিকটবর্তী হইবে। আমাদের ক্লাস নাইন টেনের ডায়েরিতে ত এরকমই লেখা থাকত আমরা জানতাম আঁতেল লেবেলটা গায়ে সাঁটতে চাইলে সাজে সজ্জায়, কাঁধের ঝোলায়, এলোমেলো লম্বা বিনুনিতে, এবং অবশ্যই খাতার পাতায় বা মুখের কথায় শান্তিনিকেতনি ফ্লেভার থাকতে হবে


সাবেকি জরি চকচকে শাড়ি বা চ্যাপ্টা গোদা বনেদী গয়না নেহাৎ গ্রাম্য বলে নাক শিঁটকিয়ে আধুনিক সৌখিন শিক্ষিত তারুণ্য টেরাকোটা পেতল কাঠের গয়নার খোঁজে থাকত। আর এই ধারার সূত্রপাত একেবারেই রবিবাবুর অন্দরমহলে। তাঁর বাড়ির মহিলাদের এবং তাঁর নিজের নানান এক্সপেরিমেন্ট এই হালফ্যাশনের আঁতুড়ঘর। সুতরাং আমরা কৈশোরে পা দিয়েই  ফস ফস করে, নিবারন চক্রবর্তীকে টেনে আনতাম সেকেলে রবীন্দ্রনাথকে গালি দিতে হলে, এই কবির, “আনিলাম অপরিচিতের নাম ধরনীতে --- “বলার কি আরাম, একমাত্র রবীন্দ্রনাথের  "শেষের কবিতা-" র ভক্তরাই জানে তো যাই হোক আরও তো তিরিশ চল্লিশ বছর কেটে গেছে তারপর তবে? এবার রবীন্দ্রপ্রভাব কোথায়হিসেব করি ফর্দ করে

এক

এই যে ভাষাটায় লিখছি, মুখে বলছি, গল্প কবিতা প্রবন্ধ উপন্যাস, গম্ভীর গদ্যই হোক বা নেহাত ছ্যাবলামি, সবটাই রাবীন্দ্রিক উপস্থাপনার বাংলা এটা বঙ্কিমচন্দ্রের অলঙ্কারে সাজানো শুদ্ধ বাংলা নয় এটা আলালের ঘরের দুলাল বা হুতোমের কথ্য বাংলার কলকাত্তাই ভাষা ও নয় ইদানীং রানি রাসমনির জীবন অবলম্বনে বাংলা দূরদর্শনে একটি সিরিয়ালের চরিত্রদের মুখের ভাষা শুনে শিক্ষিত মানুষ অনেকেই নাক সিঁটকাচ্ছেন কিন্তু খাস কলকেতাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষ মানে ঘটিদের কথা অনেকখানি এরকমই ছিল আমার মা পদ্মাপারের মেয়ে ছিলেন, আর বাবা কৃষ্ণনগর থেকে সদ্য কলকাতায় আসা পরিবারের ছেলে আমার বাবাকাকাদের বাড়িতে, বিশেষ করে গ্রামের কাছাকাছি থাকা আত্মীয়  মেয়েদের মুখের ভাষা অনেকখানিই, এয়েচে খেয়েচে, নুচি নেবু সহযোগে অন্য টানে বলা হতে শুনেছি সেটা আজকের শিক্ষিত বাংগালী ব্যবহার করেন না। আধুনিক কলকাতার ছেলেমেয়েরা যে বাংলা বলে, তাতে মটর কড়াইয়ের মত ইংরিজি বা হিন্দি শব্দ বাদে যেটুকু বাংলা সেটুকু একেবারেই রবীন্দ্রনাথের লেখা সহজপাঠের বাংলা এর আগে এ বাংলায় কেউ হাসেনি, কাঁদেনি, ঝগড়া করতেও জানত না


দুই –

আজকের সাজসজ্জা কত রকম এক্সপেরিমেন্ট দেশ বিদেশের সাজ পোশাক, অংগরাগ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা সোনার গয়না দেখলে নাক কুঁচকে ওঠে না?  তারাই ত নিজেদের আধুনিক বলে, নাকি? তা, বনেদি গয়না ছেড়ে বিদেশের সাজ চালচলন নিজেদের মধ্যে মিশিয়ে তথাকথিত ফিউশান ত ঠাকুর বাড়িতেই শুরু হয়েছিল আমি যেটুকু জানি শান্তিনিকেতনে, দেশি মালকোঁচা দেওয়া ধুতির সংগে জাপানি মার্শাল আর্টের যেমন মেলবন্ধন ঘটিয়েছিলেন রবি ঠাকুর এবং তাঁর পরিবারের মানুষেরা তা আজকের উনিশ কুড়ি করে চলেছেনা অহরহ? ছেলেদের পোষাকে, নতুনত্ব তথা দেশী স্টাইলের যে পোশাক  দেখিয়ে  উঠতি তরুনের দল প্রথম বার কংগ্রেসের সভায়  চাঞ্চল্য এনে দিয়েছিল, সেই রকম ধুতি, বা আলিগড়ি চুড়িদার, শালের ব্যবহার করতে  ত বিরাট কোহোলীদের ও দেখছি তবে?  স্টাইল গুরু ত আজ ও সেই গুরুদেবই রইলেন মজার ব্যাপার হল, রবিবাবু সেই দিনে, বেয়াড়া এবং নিয়মভাঙ্গা ছোকরাদের দলপতি এবং আইকন হিসেবে বিস্তর গালি খেয়েছিলেন গর্বের সংগে সেই ট্র্যাডিশানটিও আজকের প্রজন্ম সাদরে লালন করছে না কি?

তিন –

এখন মানে এই একেবারে হালে, সচেতন আধুনিক আধুনিকারা, পরিবেশ এবং স্বাস্থ্য সচেতন হবার চেষ্টা করছেন রাসায়নিক ক্ষতিকারক প্রসাধন বাদ দিয়ে প্রকৃতির দিকে মুখ ঘোরাচ্ছে সবাই খাদি ইত্যাদি ভারতীয় সাবান, তেল, সুগন্ধীর কদর আকাশ ছোঁয়া ধুপের ধোঁয়ায় চুল শুকোনো বা লোধ্রফুলের রেণু মুখে মাখার গল্প যে কবির লেখায় পাওয়া যায়, তাকে কি আজকের নায়িকা সেকেলে বলতে পারবে তবে আর। আহা, বেঁচে থাকুন আমার আধুনিক প্রথম প্রেমিক রবীন্দ্রনাথ। আজকের “ কেয়ারলেস বিউটি” আর কার কাছে এত আদর পাবে? রবিবাবুর আগে তাকে আর কোন বাঙ্গালি কখনও বলেনি, “যেমন আছ তেমনি এস, আর কোরো না সাজ ----“কেউ বলেনি, “ অলকে কুসুম না দিও, শুধু শিথিল কবরী বাঁধিও –“ না সেজেও যে সুন্দর হওয়া যায়বা সাজকে যে কখনই মানুষের নিজস্ব ব্যক্তিত্বকে ছাপিয়ে যেতে দেওয়া যাবে নাসে কথা রাবীন্দ্রিকরাই ত সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিয়েছে, এবং আজও দিচ্ছে কেউ টের পাচ্ছে সেই ঐতিহ্য এবং তাকে সেলাম জানাচ্ছে কেউ কেউ বা অজান্তেই অনুসরণ করে চলেছে টের পাচ্ছেনা যে গুরুদেব হয়ে সেই বুড়ো মানুষটিই রইলেন, এবং তাঁর পরিবার

চার

কত ব্যান্ড চার দিকে একেবারে শুরুর দিকের চন্দ্রবিন্দু, ভূমি, লক্ষ্মীছানা থেকে শুরু হয়ে একক বা দল হিসেবে নানা শিল্পীর মুখে গানের নানান রকম শুনছি এরা সবাই ভাবছেন, নতুন কিছু করছি কিন্তু এঁদের নূতন যৌবনের দূত হিসেবে পতাকা ওড়াতে কে শেখালেন তা ভুলে গেলে চলবে কি? গান, রসবোদ্ধা ভারতবর্ষে, মার্গ সঙ্গীত হিসেবেই চর্চিত হত অন্য আরেকটি ধারা বয়ে চলত মাটির কাছাকাছি সেখানে লোকায়ত সুরে কথায় বাউল, ভাটীয়ালি, কীর্তন,ভাঙ্গরা, গরবা, কাওয়ালি, ভজন গান  রঙ ছড়াত দেশের সাধারন মানুষের মনে গানের কথা তাই হয় তৈরি হত হয় উর্দুতে, নয় সংস্কৃত ঘেঁষা বন্দীশ লোকগীতির কথা নানান আঞ্চলিক ভাষায় ঘুরে বেড়াত মানুষের মুখে মুখে শিক্ষিত মানুষের আসরে তার জায়গা হত না পরে বাংলায় গীতিকাররা শুদ্ধ বাংলায় ললিত ছাঁদে চাঁদ তারা গগনের শোভা বা ঈশ্বর বিষয়ক ভাবগম্ভীর গীত রচনা করতে শুরু করেছিলেন কেউ সহজ মুখের কথায়, বলেনি, “ একলা বসে হেরো তোমার ছবি ---এঁকেছি বাসন্তী রঙ দিয়া“ কিংবা, “অভয় দাও ত বলি আমার উইশ কি, একটি ছটাক সোডার জলে পাকি তিন পোয়া হুইস্কি ---“আজকের র‍্যাপ বা জীবনমুখি গান কি এর চেয়ে আধুনিক কিছু?  আজ্ঞে হ্যাঁ এই রকম রবীন্দ্রসঙ্গীত আজকের বাংগালীর চেতনে অবচেতনে, আজকের বাঙ্গালীর শিরায় শিরায় দৌড়চ্ছে বাঁধ ভেঙ্গে দাও, বাঁধ ভেঙ্গে দাও ভাঙ্গো ---“ গানখানা তো আজকের প্রজন্মের জন্যে ত থীম সংগ বলা যেতে পারে আর লোক গীতি? সালোক সংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত থাকা সবুজ উদ্ভিদের মত রবিকবি, দেশজ গানকে আত্মস্থ করে ফুল ফুটিয়েছেন সুরুচিশীল শহরের মানুষের জলসায় বাউল গানের মাটির গন্ধ মাখা সুরকে নিয়ে এসেছেন নাগরিক মঞ্চে। আজও গিটারে সুর তুলে আধুনিক সুরেলা গলা গাইছে, “ভেঙ্গে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে?”, “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে”।

পাঁচ —

মেয়েদের নিয়ে একটা সমান্তরাল চিন্তার জায়গা সব সময়েই আছে রবীন্দ্রবৃত্তে মহিলাদের কেমন ছবি দেখছি? চারিদিকে মহিলা মহল বান্ধবী, বৌদিরা, ভাইঝি,ভাগ্নী , এবং অবশ্যই সহধর্মিনী,” ভাই ছুটি” রবীন্দ্রকাব্য, “ অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক কল্পনা” র আবেশমুক্ত হয়ে বাস্তবের মাটিতে পা রেখেছে সহজেই তাই, এই প্রথম, অন্দরমহলের “কার্পেটের পিছন দিকের “ মত অস্বাস্থ্যকর পূতিগন্ধময় অবস্থা, এবং তাতে সমস্ত জীবন কাটিয়ে, “রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা “ র   যাঁতাকলে পিষ্ট নারী জীবন, তার অপমান, বঞ্চনা আর লড়াই নিয়ে সর্বসমক্ষে আসার সাহস পেয়েছে পরবর্তী কালে মেয়েদের বাবা হিসেবে, প্রতিপদে লাঞ্ছিত রবীন্দ্রনাথ নিপুণ ভাবে এঁকেছেন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সঙ্গে মেয়েদের এবং তাদের পরিবারের মানুষের অসম লড়াই আর অপরিসীম যন্ত্রনার গল্প গল্পগুচ্ছ, যোগাযোগের মত উপন্যাস, এবং আজকের আধুনিকতম বুদ্ধিজীবি শিল্পী পূর্নেন্দু পত্রীর চলচিত্রায়িত গদ্য  “ স্ত্রীর পত্র “, একবারে আজকের মেয়ের স্বাধীন চেতনার গল্প, তার আত্মসম্মানের সংগ্রামের মাইলস্টোনএমন কি, আজ সরকার ও সবলা মেলা করছেন, রবীন্দ্রশব্দ চয়ন মেনেই নিজের ভাগ্য জয় করার সাহস  গোড়া থেকে, রবিবাবুর কাছ থেকেই পেয়েছে মেয়েরা যেমন পেয়েছে ঠাকুর বাড়ির মেয়েদের কাছ থেকে বাইরে আসবার শালীন পোশাক এবং   পোশাক নিয়ে  হাজারো পরীক্ষা  নিরীক্ষা  করার স্পর্ধা তাসের দেশের নির্ভীক রানীই হোন, বা চতুরঙ্গের দামিনী; ঘরেবাইরের আগুনের শিখার মত বিমলা হোক বা গোরার দেশকালের আচারবিচারের সীমা ছাড়ানো মা আনন্দময়ী, রবীন্দ্রনাথের নারীরা  শক্তিময়ী মানবী বিনোদ বৌঠানের মত সমাজের অনুশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখানো নারীর মধ্যে আজকের মেয়ে খুঁজে পায়না নিজের লড়াইকে কি? অন্যদিকে আশালতার মধ্যেও নিজেকে খুঁজে পায় অপটু হাতে  সংসার সাজাতে যাওয়া আজকের মেয়ে। অহরহ। আর, মেয়েরা প্রতি মুহুর্তে আজও সাহস পায় রবীন্দ্রকাব্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চরিত্র রাজেন্দ্রনন্দিনী চিত্রাঙ্গদার কাছ থেকে এই নাটক এই যুগের সমস্ত মেয়ের অন্তর্দ্বন্দকে আজকের ভাষায় এঁকেছে যোদ্ধা মেয়ে, রাজ্যচালনায় পারদর্শী নারী, পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্যে ললিতলবংগলতা হয়ে সাজসজ্জায় নিজেকে ঢেকে আত্মগোপন করে থাকবে? না কি স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে জানাবে, সে দেবী নয় পূজা চায় না, দাসী নয়, পিছনে থাকবে না, সব লড়াই সঙ্গীর পাশে থেকে লড়তে চায় তার রূপকে পণ্য হতে দিতে ও রাজি নয় সে নিজের শর্তে বাঁচবে তাতে যদি পুরুষ তার পাশে না থাকে, তবুও সে হেরে যাবে না তার মুখে আজকের স্লোগান; একেবারে এই সময়ের কথা তবু আমি আমি রবএই কথা আত্মস্থ করেনি এমন কোন আত্মসম্মানসম্পন্ন নারী আজকের দিনে মনে হয় না আছে তবেই বুঝুন, দেড়শ বছর পেরোনো রবীন্দ্রনাথ আজো কি ভয়ানক প্রাসঙ্গিক



ছয়

সব শেষে দৃষ্টিকে ছড়িয়ে দিই পৃথিবীর সমস্ত কোনায়,  এযুগের সার্বিক চেতনার দিকে। সমস্ত দেশের মানুষ, নতুন প্রজন্ম, বলছে, নতুন কিছু চাই অন্যরকম কিছু চাই ধাক্কা দেবার মত কিছু চাই মুখের ভাষা হোক, বা পোশাক; সাজের ধরন হোক বা নিজের অনুভূতিদের মেলে ধরার মাধ্যম, সারা পৃথিবী বলছে বন্ধনহীন হয়ে ডানা মেলব কোথাও আটকে থাকব না যুগসত্তা, যুগধর্ম কেবলই বলছে, বাঁধন খোলার কথা বলছে দেশের সীমানা মুছে দাও লিঙ্গ বৈষম্য সরিয়ে ফেলো মানুষকে ছুটতে দাও প্রাণশক্তির আনন্দে আচার বিচারের পুরোনো শেকল ছিঁড়ে উঠে দাঁড়াক উন্মুক্ত নির্ভয় মানুষ বল দেখি সারা বিশ্বের বন্ধুরা, বিশ্বনাগরিকত্ব এ পোড়া দেশে কে টেনে এনেছে সমকালীন সমাজ আর মানুষদের অজস্র গালি খেয়ে? সেই শান্তিনিকেতনের শ্যামলী উত্তরায়নে বাস করতে থাকা রবি ঠাকুর তিনি ইউরোপ, রাশিয়া, জাপান, কম্বোজ, কোথায় না গেছেন সংস্কৃতির আদান প্রদানের জন্য একের পর এক যাত্রাপথের  চিঠিতে  বিশ্বযুদ্ধ, রাজনৈতিক টানাপড়েন, মানুষের ওপর এদের প্রভাব, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, তার ভাল ও মন্দ দিক এবং সবার ওপরে বিশ্বায়নের মানবিক প্রয়োজন, ফুটে উঠেছে একেবারে আজকের মানুষের চিন্তাধারার সাথে পা মিলিয়ে তিনি বাংলায় নিয়ে এসেছেন সারা পৃথিবীর সাজসজ্জা, আচার ব্যবহার, গান নাচ এবং নাট্য রীতি চেতনে হোক চাই অবচেতনে, যেখানে পা রাখি, যেদিকে মনের ডানা মেলি, পাশে নবরসের রসিক আধুনিকতম মানুষ রবীন্দ্রনাথ সত্যি গভীরে গিয়ে ভাবলে মনে হয়, আজকের সমাজে রবীন্দ্রনাথের প্রভাব,বোধ করি, আগের চেয়েও ঢের বেশি। ভেবে দেখো সবাই, সে মানুষটা দেড়শ বছর আগে নেহাত বেমানান ছিল না? এটা একেবারে আজকের ফুটন্ত তারুন্যের স্লোগান কি না?

তোরে হেথায় করবে সবাই মানা
হঠাত আলো দেখবে যখন ভাববে
একি বিষম কান্ড খানা!   ----" বা,
ওই যে প্রবীণ, ওই যে পরম পাকা
চক্ষুকর্ণ দুইটি ডানায় ঢাকা
ঝিমায় যেন চিত্রপটে আঁকা
অন্ধকারে বন্ধ করা খাঁচায়

এ কথা,  আজকের উদ্দাম তরুণ ছাড়া কে আর বলে? তাই, সমসাময়িক উঠতি বয়েসের মন ও মানসিকতার ওপরে,  আমার মতে রবীন্দ্রপ্রভাব সবার চাইতে বেশি  এই মূহুর্তে ছায়া ফেলে চলেছে অহরহ  কতখানি? সে হয়ত  মানুষ বুঝতেও পারছে না শুধু সকলের অবচেতনে ঘুরে ফিরে আসছে শব্দ," পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজনে চলতি হাওয়ার পন্থী "লিভ-ইন জুটিদের জন্যও কি ভীষণ ভাবে মানানসই রবীন্দ্রনাথ এরচেয়ে আধুনিক কাকে আর বলি? 
 
কপিরাইট সোনালি পুপু কর্তৃক সংরক্ষিত
  

   

1 টি মন্তব্য: