সম্পাদকের কলমে



সম্পাদকের কলমে

পঁচিশে বৈশাখ আর আমরা বাঙালি, অনেকেই মনে করেন এক অবিচ্ছেদ্দ সম্পর্ক। শরৎ আসলেই যেমন শিউলি ফুটবে তেমনই বৈশাখ মানেই যেন রবীন্দ্রনাথ। অনায়াসলব্ধ এক উত্তরাধিকার। আমরা নিশ্চিত যতদূর বাঙালি ততদূর রবিঠাকুর। যতদিন জীবন ততদিন রবীন্দ্রনাথ। এমনটা ভাবতেই অভ্যস্ত আমরা অনেকেই। বিশেষত বাঙালির সাংস্কৃতির কর্মকাণ্ডের পরতে পরতে রবীন্দ্রনাথ। সেই রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে যেতেও আমাদের ভরসা রবীন্দ্রনাথই। তাঁকে অস্বীকার করে তাঁকে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর এমনই অমোঘ প্রভাব। আর এই প্রভাব নিয়ে আমরাও নিশ্চিত আমরা আজও কবিকে নিয়েই রয়েছি। আমাদের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ভিতরেই আমাদের এই নিশ্চয়তার ছাপ রয়ে যায়। ফলে বৈশাখ আসলেই আমরা আরও বেশি করে উজ্জীবিত হয়ে উঠি রবীন্দ্রচর্চায়। দিকে দিকে পত্রপত্রিকায় বিশেষ রবীন্দ্রসংখ্যা প্রকাশের ধুম। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রজয়ন্তীর উদযাপন। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার ইত্যাদি ইত্যাদি।

অসীম সে চাহে সীমার নিবিড় সঙ্গ * হাসিদা মুন



অসীম সে চাহে
সীমার নিবিড় সঙ্গ

রবীন্দ্রনাথের অখন্ড ব্যক্তিসত্তা সত্যদর্শী ব্রহ্মজ ঋষিগনের শাশ্বত কল্যাণবানীর দ্বারা অনুপ্রানিত।  তাঁর সমাজচিন্তা, ইতিহাস চিন্তা, শিক্ষা চিন্তায় বৌদ্ধধর্মের মৈত্রী ভাবনা, বাউলের মানবতাবাদ, গৌড়ীয় বৈষ্ণবগনের রসসাধনা, মরমিয়াবাদের প্রেমধর্ম, হিন্দুধর্মের ভক্তিবাদ ও ইসলামের অদৃশ্য ভাতৃত্ববোধে তাঁর ধর্মচেতনা পরিপুষ্ট। তারঁ রচনাবলীতে এমনই  মুল-সুর নানাভাবে ধ্বনিত হয়েছে।

সমসাময়িক সংস্কৃতি ও রবীন্দ্রনাথ * সোনালি পুপু



সমসাময়িক সংস্কৃতি
ও রবীন্দ্রনাথ

কত দিন আগের এক জন মানুষ সেই সময়ের, যখন সবে সবে বিজলি বাতি জ্বলেছে  পৃথিবীতে  আজ এই আন্তর্জালের মুঠোয় বন্দী ছোট্ট পৃথিবীতে,   দেড়শ বছরের ও পরে,  সেই লোকটি কোন ভাবেই কি আর প্রাসঙ্গিক থাকেন? প্রশ্ন নিয়ে বসেছি আর আমিও খুব বৃদ্ধ হয়েছি যে, সেটা টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছি তবু পিছন ফিরলে এখনো ইস্কুলের হাইডেস্ক, কলেজের ক্যান্টিন হাত বাড়িয়েই ছুঁতে পারি বটে আর সেখানে ত রবি ঠাকুর থই থই আমরা যখন ষোড়শী নায়িকা, তখন; গীতাপাঠ অপেক্ষা শেষের কবিতা পাঠ করিলে স্বর্গের অধিক নিকটবর্তী হইবে। আমাদের ক্লাস নাইন টেনের ডায়েরিতে ত এরকমই লেখা থাকত আমরা জানতাম আঁতেল লেবেলটা গায়ে সাঁটতে চাইলে সাজে সজ্জায়, কাঁধের ঝোলায়, এলোমেলো লম্বা বিনুনিতে, এবং অবশ্যই খাতার পাতায় বা মুখের কথায় শান্তিনিকেতনি ফ্লেভার থাকতে হবে

এই সময়ের রবীন্দ্রনাথ * সুস্মিতা কৌশিকী



এই সময়ের
রবীন্দ্রনাথ

সত্তরের দশকের  এক হিন্দি ছবির ডায়ালগের অনুকরণে  বাঙালি অনায়াসে বলতে পারে ' মেরে পাস  রবি ঠাকুর হ্যায় '  জোকস্ আপার্ট তবে কথা তো মিথ্যে নয় এই একটি নামেই বাঙালির বিশ্বজয় বাঙালি  অযুত নিযুত খেদের মধ্যেও  বলে --- ' ভাগ্যিস আমাদের রবীন্দ্রনাথ ছিল, না হলে যে কী হতো এই জাতির! '  এই জাতি ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়েছে, এভারেস্ট এ উঠেছেলর্ডস জয়েও উচ্চারিত হয় তার নাম  অর্থাৎ জলে- স্থলে - অন্তরীক্ষে বাঙালির বিচরণ অবাধ কিন্তু তার জীবনবীক্ষার সঙ্গে ওতপ্রোত জড়িয়ে, মিশে  একাকার হয়েছে  যে নামটি, সেটি বাঙালির প্রাণের মানুষ  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের

জাতি ও সমাজ গঠনে রবীন্দ্রচেতনা * সুধাংশুরঞ্জন সাহা



জাতি ও সমাজ গঠনে
রবীন্দ্রচেতনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই দেশে দেশজ শিক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কারণ ইংরেজদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে তিনি কখনও আদর্শ বা সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। সেই কারণেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বীরভূমের এক শান্ত পরিবেশে কেনা জমিতেই (পরে যার নামকরণ করা হয় শান্তিনিকেতন) ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শুরু করলেন এক অনন্য ধারার দর্শন ও পরীক্ষামূলক শিক্ষাকেন্দ্র   রবীন্দ্রনাথ এই পরীক্ষা মূলক শিক্ষাব্যবস্থাকে কবির স্বপ্ন হিসেবে উল্লেখ করেন। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের কবির স্বপ্ন, যত ছোট আকারেই হোক না কেন, তার ভিতরে নিহিত ছিল স্বাদেশিকতার মৌলিক ও মুক্ত চিন্তার সমন্বয়। তাঁর ভাবনায়, পড়াশোনা শিশুমনকে যেন কোনভাবেই ভারাক্রান্ত না করে। তিনি বিশ্বাস করতেন শিশুমনকে গড়ে তুলতে হবে জানার আনন্দ ও প্রকৃতির মধ্যে প্রকৃতিকে চেনা, জানার মাধ্যমে।

পিরালি কলঙ্ক পেরিয়ে কুশারি থেকে ঠাকুর * সিদ্ধার্থ সিংহ



পিরালি কলঙ্ক পেরিয়ে 
কুশারি থেকে ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কার পেলেন, তখনও কেউ কেউ নাক সিঁটকে বলেছিলেন, নোবেল পুরস্কার পেয়েছে তো কী হয়েছে? ওরা তো পিরালি ব্রাহ্মণ। লোকের মুখে মুখে অপভ্রংশ হয়ে ‘পিরালি’ হয়ে গেলেও আসলে ‘পিরালি’ নয়, কথাটা হল ‘পির আলি’। এই ‘পির আলি’ অপবাদের জন্যই নাকি তখনকার দিনের লোকেরা ওই পরিবারে কোনও ছেলেমেয়ের বিয়ে দিতে চাইতেন না। ফলে অত বড় জমিদারি থাকা সত্ত্বেও, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের মতো একজন মানুষের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের জন্য রবীন্দ্রনাথের কোনও পাত্রী জুটছিল না। শেষ পর্যন্ত কোনও উপায় না দেখে তাঁদের জোড়াসাঁকো কাছারিরই এক কর্মচারী, যশোরের ফুলতলি গ্রামের বাসিন্দা, বেণীমাধব রায়চৌধুরীর শরণাপন্ন হন ঠাকুর পরিবারের লোকেরা।

বাঙালির মননে রবীন্দ্র-বোধ * সমর্পিতা ঘটক



বাঙালির মননে
রবীন্দ্র-বোধ

বাঙালি, সমাজ জীবন, রবীন্দ্রনাথ, প্রভাব এই শব্দগুলোকে যদি আলাদা আলাদা করে ভাবি তাহলে এই বাক্যবন্ধগুলি কেন্দ্র করে অনেক ছবিই ভিড় করে আসে। রোজের চলার জীবনে এই ছবিগুলো প্রত্যক্ষ করি আর উপলব্ধির স্তরে আন্দোলিত হয় মিশ্র অনুভূতি। তেমন মননশীল বাঙালি সংখ্যায় কমে গেছে বলে আমরা হাপিত্যেশ করি। জানিনা এমন কথা বলা সমীচীন কি না! অনেকের ধারণা যে বাঙালি এখন ভীষণভাবে তরল যাকে মাপ মতো, আকার মতো যেকোনও ধাতুর পাত্রে ধরিয়ে ফেলা যায়। এর সপক্ষে যুক্তিসিদ্ধ উদাহরণ এই মুহূর্তে তুলে ধরার স্পর্ধা আমার নেই। বাঙালি মানস ঠিক কোন জীবনবোধে আজ চালিত হচ্ছে সেটি মাপার কোনও যন্ত্র নেই, শুধু মনে হয় কোনও কিছুই বর্জন না করার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নিতে সে আজ তরল যদিও সরল নয়; সরল নয় কারণ পৃথিবী তথা বাংলা ক্রমাগত বদলে যাচ্ছে। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে যে বাঙালি উজ্জীবনের মন্ত্র আহরণ করে ঋদ্ধ হয়েছে আজ তার কতটা জীবনে প্রতিফলিত হচ্ছে তা ভাবার সময় এসেছে।

শেষের কবিতা নাকি কবিতা নয় * শতরূপা চক্রবর্তী


শেষের কবিতা
নাকি কবিতা নয়

কোথাও একটা পড়েছিলাম কেউ একজন বলছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এত নাচানাচি কেন বুঝিনা বাপু। কি যে ছাতার মাথা লিখে গেছেন নিজেই জানেন না। 'শেষের কবিতা' নামে একটা লেখা নিয়ে দারুণ হৈ চৈ তারপর জানা গেল ওটা নাকি একটা নভেল...ভাবুন। আরে বাবা পদ্য কি গদ্য যে লিখেছে সে নিজেই জানে না। আর লোকে তার ব্যাপারে না জানলে এত গেল গেল রব কেন মশাইঠিক তাই, রবীন্দ্রনাথ ৫২ টি কাব্য গ্রন্থ, ৩৮ টি নাটক, ১৩ টি উপন্যাস, ৩৬ টি প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। যা নানা সময় প্রকাশিত হয়েছে। তিনি মোট ৯৫টি ছোট গল্প এবং ২০০০এর কাছাকাছি গান রচনা করেছিলেন যেগুলি যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতানে পাওয়া যায়। রবীন্দ্ররচনাবলীর ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র নাথের যাবতীয় রচনা সংকলিত আছে।

রবীন্দ্রনাথের নামের ব্র্যান্ড বনাম রবীন্দ্রনাথ * লক্ষ্মী নন্দী



রবীন্দ্রনাথের নামের ব্র্যান্ড
বনাম রবীন্দ্রনাথ

আলোচিতব্য প্রবন্ধে শিরোনাম নিয়ে ঋদ্ধ  পাঠকমহলকে একটা সত্য কথা বলার তাগিদ অনুভব করছি। আসলে প্রথমে আমি শিরোনাম  লিখেছিলাম - রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা উৎসব করি শিখিনাই কিছু তাঁর। কিন্তু যেহেতু ২৫বৈশাখ সম্মুখে তাই চোখের সামনে নানান ঘটনার পুনরাবৃত্তি ভেসে উঠছিল। তার থেকেই বর্তমান লেখার শিরোনাম হয়ে দাঁড়াল এই। তবে শুনেছি যে এও সত্যি, বিজ্ঞাপন জগতে রবীন্দ্রনাথের অবদানও নাকি যথেষ্ট ছিল। অনেক প্রোডাক্টের এককালের ভাষায় তিনি ' ব্রান্ড অ্যাম্বাসাডড়' ছিলেন। তবে এ বিষয়ে শুনেছি অর্থকরী পাওনার সঙ্গে তাঁর বিশেষ সম্পর্ক ছিল না। বিশেষত দেশীয় জিনিসের বিজ্ঞাপন জগতের লোকদের নিরাশ করে তিনি ফিরিয়ে দিতেন না। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আমরা উৎসব করি শিখিনাই কিছু তাঁর! 

রবীন্দ্রনাথ ও আমরা * রণবীর চন্দ



রবীন্দ্রনাথ
ও আমরা

ছোটবেলায় চাবাগানে শৈশবের অনেকটা সময় কাটানোর সময় চারপাশের গাছপালা, পশুপাখি, গরুর গাড়ি, ছোট পাহাড়ী নদী, ঝর্ণা এসবের মধ্যেই সহজপাঠের বা রবিঠাকুরের লেখার একেকটা চরিত্র খুঁজে পেতাম। সকালবেলায় কোনো ফেরিওলা বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁকে গেলেই রবিঠাকুরের বিচিত্র সাধ কবিতাটা মনে পরে যেত।  মনে হতো আমিও যেন ফেরিওলার মতো এগলি  ওগলি হয়ে দূরে কোথাও চলে যাই। একবার ডাকঘর নাটক অভিনয় করতে গিয়ে নিজেকে অমল, কবিরাজ বা অন্যকারোর সাথে নয় মিশিয়ে দিয়েছিলাম দইওলার সাথে। মনেহতো  দইওলার মতোই বাঁক কাঁধে নিয়ে দূর পাহাড়ের আড়ালে চলে যাই। আবার রাতের বেলায় গরুর গাড়ির ঘন্টার আওয়াজ তুলে যখন কেউ দূরের হাট থেকে ফিরে আসত তখন মনের কোনায়  ভেসে উঠতো শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলায় মেলা শেষে লোকজনের বাড়ি ফেরার ছবি।  আসলে তখন আমাদের জীবনে রবিঠাকুর এমনভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন যে চারপাশের প্রকৃতির মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের বইয়ে পড়া গল্প কবিতাগুলি মিলিয়ে নেবার চেষ্টা করতাম। " তিনটে শালিক ঝগড়া করে রান্নাঘরের চালে" পড়ার সাথে সাথে চোঁখ চলে যেত রান্না ঘরের চলে।  খুঁজে ফিরতাম তিনটে শালিককে।

বহুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথ ও আমরা * যাদব চৌধুরী



হুমাত্রিক রবীন্দ্রনাথ
 ও আমরা

বাংলা ভাষায় অনেক কবি সাহিত্যিক আছেন এদের মধ্যে অনেকেই বিখ্যাতযাঁরা বিখ্যাত তাঁদের নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়এক্ষেত্রে বলার হচ্ছে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আজ পর্যন্ত যতো লেখালেখি হয়েছে, বাকিদের তার সিকিভাগও হয় নিরবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যাঁরা লিখছেন তাঁরা তো শিক্ষিত মানু।l কিন্তু এর বাইরেও রবীন্দ্রনাথের একটা গুণগ্রাহী ভক্তদল আছেতাঁরা রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে বিশেষ জানেন না, রবীন্দ্রসাহিত্য তেমন পড়েন নি, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের নাম উঠলেই তাঁদের মধ্যে সম্ভ্রমবোধ কাজ করে যায়এই গুণগ্রাহীর দল কারা? আছেন আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, ছাত্রছাত্রী, সংগীতজগতের লোক ও আপামর জনসাধারণ। ব্যক্তিগতভাবে রবীন্দ্রনাথের প্রভাবে আমরা অনেকেই দোল খাইনানা দিকেগীতিনাট্য, পূজা, প্রেম ও প্রকৃতি পর্যায়ের অনেক গান, তাঁর প্রবন্ধের কিছু লাইন, শেষের কবিতার কিছু লাইন ও ডাকঘর, রক্তকরবী ইত্যাদি নাটক বাঙালির  ভেতরে অহরহ খেলে যায়।

বাঙালির সমাজে এবং জীবনে রবীন্দ্রনাথ * মণিজিঞ্জির সান্যাল


বাঙালির সমাজে এবং জীবনে ............রবীন্দ্রনাথ

আমরা যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে চিনি এবং জানি তিনি আমাদের বাঙালির অস্তিত্ব, তিনি আমাদের একান্ত নিজের মানুষ। আমাদের ভিতরের আমি যখন কথা বলি তখন আমরা তাঁর কণ্ঠের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। এখানেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমস্ত কৃতিত্ব যে তিনি আমাদেরই সব কথা একাই বলে গেছেন একশ বছর পরের কথা বলে গেছেন অনায়াসে  আমরা যখন যা কিছুই ভাবি তা যেন রবীন্দ্রনাথের মত করেই ভাবি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই আমাদের চিন্তা-চেতনার সাংস্কৃতিক পরিধি বিস্তারের প্রতিটি স্তরে একটু একটু করে এগিয়ে দিয়েছেন। বাঙালির মনের বিকাশকে এই এগিয়ে দেবার যে ভূমিকা সেটাই তাঁর শিক্ষাচিন্তার স্বরূপ রূপে বিবেচিত হতে পারে। আলাদা করে তাঁর শিক্ষা ভাবনার স্বরূপ খোঁজার কিছু নেই। এক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বিস্তৃত মহাসমুদ্ররূপ রচনাসমগ্র রেখে গেছেন তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই হল বাঙালির মনন ও চৈতন্যের বিকাশের জন্য শিক্ষাচিন্তার স্মারক এবং বাহক।

রবীন্দ্র সমাজভাবনা এবং আজকের প্রেক্ষিতে তার প্রাসঙ্গিকতা * বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়


রবীন্দ্র সমাজভাবনা এবং আজকের  প্রেক্ষিতে তার প্রাসঙ্গিকতা

একজন কবি যখন লেখেন তখন তিনি একা, চুপচাপ। তবু তাঁর লেখার ভেতর সমাজের সচেতন অংশগ্রহণ  থাকে। এই সামাজিক ভাবনার লিপিবদ্ধরূপ থেকে যায় তাঁদের সৃজনকর্মে। কখনও লেখায় কখনও বা প্রত্যক্ষ কোন কাজে স্পষ্টভাবে ফুটে থাকতে পারে দেশ কাল সমাজের বিভিন্ন দিগন্ত। তাঁদের কবিতার দেহ ও আত্মায় অদৃশ্য বন্ধনের মতো জড়িয়ে থাকে এক বিশেষ দর্শন। সমাজ দর্শন। মানব দর্শন। এর পিছনে থাকে বিবিধ প্রেরণা ও তাড়না। এই প্রেরণা ও তাড়নার সঙ্গে যা কিছুর যোগাযোগ আছে সেগুলোই মূল চালিকা শক্তি হিসেবে পরিচালিত করে নতুন সমাজ গঠনের স্বপ্নে । একটু ঘুরিয়ে যদি কথাটা এভাবে বলি যে শিল্পীমাত্রেই সমাজবিরোধী। যে সমাজ পচা গলা হাজার অশিক্ষা আর কুসংস্কারের আবর্তে বন্দী। যে সমাজ ঘুনধরা, নিরন্নের মুখে অন্ন জোগানোর ন্যুনতম দায়িত্ব পালন করে না। বিপন্ন অসহায় মানুষকে ঠেলে দেয় ঘৃণার প্রান্তে। কবিরা সেই সমাজের বিরোধীতা করেন। বিরোধীতা করেন এক সুন্দর সমাজের স্বপ্ন দেখেন বলেই। জীর্ণ মৃতপ্রায় এই ব্যবস্থাকে ভেঙে তাঁদের অন্তরের আলো প্রায় অসীম দূরত্বকে আলোকিত করে।

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক * বিকাশ চন্দ



মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক,
আমি তোমাদেরই লোক...”

বিশ্বকবির জান্মের প্রায় ১৫৯ বছরের পরেও সামগ্রিক জীবন বোধে বাঙালী জীবনের সাথে আত্মিক সম্পর্কে, চিরকালীন আত্মিক বন্ধনে এখনো প্রাসঙ্গিক থাকবেনও পরবর্তি কালের সাথে সমান ভাবে স্মরনীয় হয়ে থাকবেন মানবিক জীবনে যাই ঘটুক সে জীবন থেকে মৃত্যু, আনন্দ, শোক, বিরহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো না কোনো ভাবে তাঁর কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, উপন্যাস, হাস্যকৌতুক সহ যা কিছু যে ভাবেই লিখতে যাই না কেন তা রবীন্দ্র নাথের অজস্র লেখার মধ্যে সম্পৃক্ত হয়ে যায় তাই কোন নিবদ্ধ প্রবন্ধ আলোচনা সে তো সেই পুরনো কথা গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ২৫ শে বৈশাখ ১২৬৮, ৭ ই মে ১৮৬১ আর তাঁর চলে যাওয়া ২২ শে শ্রাবণ ১৩৪৮, ১৯৪১ সালের ৬ ই আগস্ট, বর্ষামুখর একটি প্রকৃতির অঝোর কান্নার দিনে

রবীন্দ্রনাট্য এখনো বাঙালির অন্তরের আত্মীয় হয়ে উঠল না * ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়



রবীন্দ্রনাট্য এখনো
বাঙালির অন্তরের আত্মীয় হয়ে উঠল না

রবীন্দ্রনাথের গানের গায়কদের প্রতি তাঁর পরামর্শ ছিল ‘দেখো আমার গান যেন আমারই গান মনে হয়’। এক গভীর বিশ্বাসে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন “বাঙালিকে সুখে দুঃখে আমার গান গাইতেই হবে” নিজের সংগীত ভাবনা নিয়ে সমকালীন সঙ্গীতবেত্তাদের সঙ্গে দীর্ঘ তর্ক করেছেন, বাংলা গানের পূর্বাপর সম্পর্কে অজস্র দলিল রেখে গেছেন রবীন্দ্রনাথ, কিন্তু নাট্য বিষয়ে তেমন নয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা লেখায়, চিঠিপত্রে নাটকের প্রসঙ্গে এসেছে মাত্র সঙ্গীতে, সাহিত্যে বাঙালির মননের সবটাই জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ, কিন্তু নাটকের রবীন্দ্রনাথ কিছুটা ব্রাত্যই থেকে গেছেন বাংলা সাধারণ রঙ্গালয়ের দেড়শ’বছরের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের নাটক বাঙালি গ্রহণ করেনি এমনকি ১৯৬১তে তাঁর জন্ম শতবার্ষিকীতে যখন ব্যাপক রবীন্দ্র অধ্যয়ন ও চর্চা, তাঁর গানের দিগন্তবিস্তারী প্রসার তখনও আমাদের রঙ্গমঞ্চ রবীন্দ্র নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল

বাঙালি সমাজ বাংলাভাষা এবং রবীন্দ্রচিন্তা * নাসির ওয়াদেন



বাঙালি সমাজ বাংলাভাষা
এবং রবীন্দ্রচিন্তা
                 
           ,,,,"  হায় ছায়াবৃত,
             কালো ঘোমটার নীচে
       অপরিচিত ছিল তোমার মানবরূপ
               উপেক্ষার আবিল দৃষ্টিতে ।

     এল ওরা লোহার হাতকড়া নিয়ে,
     নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে,
                সভ্যের বর্বর লোভ
     নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।" ,,,,

সমাজ হিতাকাঙ্ক্ষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর * নন্দিনী সেনগুপ্ত


সমাজ হিতাকাঙ্ক্ষী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আজ যখন এই লেখা  লিখছি, তখন প্রায় সমগ্র পৃথিবী আতঙ্কে কাঁপছে। অদৃশ্য শত্রু ‘করোনা’ মারণভাইরাস একে একে স্পর্শ করছে পৃথিবীর সমস্ত দেশকে। মানুষের বিজ্ঞানের অহংকার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মানুষের স্পর্শ থেকে বাঁচবার জন্য বসে আছে একা ঘরে। একা বসে হয়তো এ এক আত্মবিশ্লেষণের সময়। এখনো বাঙালির জীবনের ধ্রুবতারা রবীন্দ্রনাথ পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতে পারেন সভ্যতার এই চরম সংকটের সময়ে। পৃথিবীর স্থান কত অকিঞ্চিৎকর এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, তার লেখার মধ্যে পাই সে ইঙ্গিত। ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ নাটকের সন্ন্যাসী উচ্চারণ করেন...  

গীতাঞ্জলি ও আমরা * তৈমুর খান



গীতাঞ্জলি
ও আমরা

একশো বছর পরও রবীন্দ্রনাথের 'গীতাঞ্জলি ' (১৯১২) কি আমাদের স্পর্শ করে? এ প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দিতে পারি না। এক বিস্ময় বিমূঢ় যুগের মানুষ হয়ে বেঁচে থাকার প্রতিযোগিতায় যেভাবে প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছি, সেখানে আধ্যাত্মিকতা বোধের জায়গা কোথায়? এত আলোকময় সভ্যতা  . তবু মনে হয় কোথাও আলো নেই।  চারিপাশে সব বিদ্রুপ দাঁড়িয়ে আছে। অর্থ - যশ - খ্যাতি সবই শূন্যে বিলীন হয়ে যাবে। মানুষই থাকবে না, মানবিকতাই বাঁচবে না, সেখানে কাব্য কবিতার আয়ু রচনা!  আধ্যাত্মিক শক্তির জয় ঘোষণা কী করে সম্ভব?  সভ্যতায় মনন হারিয়ে যাচ্ছে। সর্বজনীনতায় সর্বব্যাপী বোধিকেন্দ্রে বিস্তৃত হবার, শিল্পকে উপলব্ধি করার ক্ষেত্র ছোটো হয়ে যাচ্ছে। এক গভীর প্রশান্তির আত্মঅন্বেষণর ভেতর স্থির হবার সময় কি এযুগের মানুষের হাতে আছে?

এবং রবীন্দ্রনাথ * জয়িতা ভট্টাচার্য



এবং রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথকে আমরা অনেকদিন  ধরে ভুলে গেছি। আসলেই ভুলে গেছি। আমরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  নামে বাঙালির একটি পুঁজিকে জানি। যা আমাদের আটকে ফেলেছে একটা পিঞ্জরে। অনুষ্ঠানে, সিনেমার উদ্বৃত্ত অংশে, শোকসভা বা কবিতা উৎসব নিদেন এলিটিসম এর প্রমাণ দিতেও সেই রবীন্দ্রনাথ। আমরা রবীন্দ্রনাথ ভাঙিয়ে খাই। আর কিছু করার চেষ্টা করিনি আমরা। রবীন্দ্রনাথ আমাদের ছাই ফেলতে ভাঙা কুলো। এই অবধি পড়ে অবশ্যই কোনো কোনো  রবীন্দ্রপ্রেমী রেগে যাবেন। ইনসিকিয়োর্ড ফিল করবেন! কিন্তু একবার যদি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখি, আমরা কতটা ভেবেছি রবীন্দ্র দর্শন নিয়ে, কতটা? যতটা আমরা দেরিদা, হাইডেগার লাঁকা  নিয়ে সমস্যা লিপ্ত থাকি তার এক চতুর্থাংশ আমরা রবীন্দ্র দর্শন আত্মস্থ করতে পারিনি। যে অন্তর্নিহিত  শক্তি  বিশ্বের  পরমা প্রকৃতি সৃষ্টি করে চলেছে সেই অন্তর্নিহিত শক্তি  রবীন্দ্রনাথের চেতনার উৎস। কিন্তু তিনি তো অনন্য। তাই সেই চেতনার সঙ্গে  যুক্ত হয়েছে ইয়ুরোপের গতিবাদও। 

নির্ভয়ে ছুটিতে হবে সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা * চন্দ্রানী মিত্র বোস



নির্ভয়ে ছুটিতে হবে
সত্যেরে করিয়া ধ্রুবতারা

"কল্পনা করছি
অনাগত যুগ থেকে তীর্থযাত্রী আমি
ভেসে এসেছি মন্ত্রবলে ..
উজান স্বপ্নের স্রোতে
পৌঁছলেম এই মুহুর্তেই
বর্তমান শতাব্দীর ঘাটে "...


রবীন্দ্রনাথ ও নারীপ্রগতি আজকের প্রাসঙ্গিকতার আলোয় * কৌশিক চক্রবর্ত্তী



রবীন্দ্রনাথ ও নারীপ্রগতি 
আজকের প্রাসঙ্গিকতার আলোয়

মেয়েদের দুঃখ ও অবমাননায় চিরদিন আমি বেদনা ও লজ্জা বোধ করি. আমার অনেক লেখার মধ্যে অনেকবার তা প্রকাশও হয়েছে..সমাজশাসনে মেয়েদের সঙ্গে পুরুষের স্বাধীনতার পর্বতপ্রমাণ তারতম্য দীর্ঘকালই আমাকে দুঃখ দিয়েছে..বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনেদের লেখা চিঠিপত্র থেকে আমরা রবীন্দ্রনাথের নারীপ্রগতির চেতনা সম্বন্ধে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে পারি। রবীন্দ্রনাথ পূর্ববর্তী যুগে রামমোহন রায় বা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নারীমুক্তির ক্ষেত্রকে এক সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন। তাই পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথের কলম ও ভাবধারাকে আমরা নারীমুক্তির চেয়ে নারীপ্রগতির আঙ্গিকেই তুলে আনতে পারি বেশি।

শিক্ষা ও চেতনার আলোকে রবীন্দ্রনাথ * কোয়েলী ঘোষ



শিক্ষা ও চেতনার আলোকে
রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ মানব সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রেই এক এমন এক সৃষ্টির সাক্ষর রেখে গেছেন যার প্রভাব সর্বকালের  জন্যই প্রযোজ্য  কবি ও সাহিত্যিক হিসাবেই আমরা তাঁকে বেশি চিনি  কিন্তু তাঁর  বহুমুখী প্রতিভা অন্যান্য বিষয়েও ছাপ রেখে গেছে চিন্তাবিদ মনীষী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিভিন্ন গদ্য রচনার মধ্য দিয়ে তাঁর সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন দেশের বর্তমানের যে পরিস্থিতি সেজন্য যথেষ্ট শিক্ষার অভাব আছে বলে মনে করি রবীন্দ্রনাথ  বলেছেন --'' অশক্তকে শক্তি দেবার একমাত্র উপায় শিক্ষা' প্রাচীন ভারতবর্ষে ছাত্রদের কর্তব্য ছিল শুধু জ্ঞান অর্জন" ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ " --সেজন্য চাই শরীর ও মনের সমন্বয়, তবেই সে সাধনায় সিদ্ধিলাভ সম্ভব তিনি বলেছেন --''বিদ্যালাভ করা কেবল বিদ্যালয়ের ওপর নির্ভর করে না, অনেক ছাত্র বিদ্যালয়ে যায়, উপাধি পায় অথচ বিদ্যা পায় না'', ''একখণ্ড পাথর ও একটি বীজের মধ্যে মূলগত পার্থক্য রয়েছে; পাথর একখণ্ড পাথর মাত্র,কিন্তু বীজের মধ্যে ভাবীকালের সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে এই সম্ভাবনাকে রুপ দেবার প্রয়োজন আছে'' ''ভ্রূণকে গর্ভের মধ্যে এবং বীজকে মাটির মধ্যে নিজের উপযুক্ত খাদ্যের দ্বারা পরিবৃত হইয়া থাকিতে হয় ......''কেবল ইন্দ্রিয়ের শিক্ষা নয়,কেবল জ্ঞানের শিক্ষা নয়, বোধের শিক্ষাকে আমাদের বিদ্যালয়ে প্রধান স্থান দিতে হবে আমাদের স্কুল কলেজেও তপস্যা আছে কিন্তু সে মনের তপস্যা, জ্ঞানের তপস্যা; বোধের তপস্যা নয়