জলে কুমির
ডাঙায় বাঘ। জনগণ যখন সচেতন ভাবে রংরুট ধরেই এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয় তখন এই পরিণতিই
যে অবধারিত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নেতা নেত্রীর ভাষণে
বিশ্বাস করতেই ভালোবাস। এবং যে দেশে শিক্ষার হার যত কম, সে দেশে জনগণকে মিথ্যায়
বিশ্বাস করানো তত বেশি সহজ। বলাই বাহুল্য। আর চতুর এবং বুদ্ধিমান’রা তখন সেই
সুযোগেই শিবির বদলের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। বেমালুম নির্লজ্জের মতোনই। সাধারণ জনগণকে
বিভ্রান্ত করার এও আর এক সহজ উপায়। তাই বাঘ ও কুমির দুই পক্ষই সেই সুবিধাবাদী
সুযোগসন্ধানী চতুর ও বুদ্ধিমানদেরকে আদর আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃহত্তর
জনসাধারণ তাই দেখেই নিশ্চিন্তে হয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সেই লাইনে বুথ জ্যামই
হোক আর ছাপ্পার কারবারই জমে উঠুক। জনগণ নিশ্চিন্ত থাকে অচ্ছে দিন আর পরিবর্তন এলো বলে।
তাই যেখানেই ভোট দেওয়ার সুযোগ সেখানেই অচ্ছে দিন আর পরিবর্তনের স্লোগানে দাও ভোট।
তার পরিণতি যা হবার তা তো হবেই। সে নিয়ে আর শোক করে কি হবে?
নগর কলকাতার রাস্তার ইতিহাস ~ ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
নগর কলকাতার রাস্তার ইতিহাস
ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়
আজব
শহর কলকাতার পথঘাটের ইতিহাস, তার
জন্মের পেছনে রয়েছে আরো আজব আর রোমাঞ্চকর কথা। ঘাটের কথা থাক, বলা যাবে বারান্তরে। পথের
বা রাস্তার কথাই বলি। কথা কলকাতার
রাস্তার কথা। নগর কলকাতার
বেড়ে ওঠার সামাজিক ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে
আছে এর রাস্তার ইতিহাসও। পুরনো আমলের
মানচিত্রে রাস্তার নাম চিহ্নিত করার রেওয়াজ ছিল না। ১৭৮৪ সালের আগে কোন রাস্তার নাম দেওয়া হয়নি। ১৭৯২ সনে কর্নেল মার্ক উড কলকাতার যে মানচিত্র প্রকাশ
করেন তাতে নামাঙ্কিত রাস্তার সংখ্যা ছিল মাত্র ২৬টি। এরমধ্যে ২০টি ইংরাজ রাজপুরুষদের নামে আর ৬টি ছিল
বাঙালিদের নামে,
তারা হলেন মদন দত্ত,
প্রাণকৃষ্ণ বাবু, নীলু দালাল, নারায়ণ চ্যাটার্জী, মুক্তারাম বাবু ও বলরাম ঘোষ। (সূত্র – ঐতিহাসিক নিশীথরঞ্জন রায়/প্রাণতোষ
ঘটকের ‘কলকাতার পথ ঘাট’ গ্রন্থের
ভুমিকা) এখনও বলরাম ঘোষ স্ট্রীট ও মুক্তারাম বাবু স্ট্রীট আমাদের খুব পরিচিত
রাস্তা। বাকি
রাস্তাগুলির পরিচয় ছিল পাড়ার নামে, যেমন ‘আহমেদ
জমাদার স্ট্রীট’(এখন ইলিয়ট রোড), ‘গোরস্তান চৌরঙ্গী কা রাস্তা’
(এখন পার্ক স্ট্রীট), ‘ডুম টোলি’ (এখন এজরা স্ট্রীট), ‘পুরানা নাচঘরকা পূরব রাস্তা’ (এখন লর্ড সিনহা রোড),
‘পুরানা নাচঘর কা উধার
রাস্তা’(পরে থিয়েটার রোড, এখন
সেক্সপীয়ার সরণি), ‘হোগলকুড়িয়া
গলি’ (এখন সাহিত্য পরিষদ স্ট্রীট), ‘রানী মুদি গলি’ (পরে বৃটিশ ইন্ডিয়ান স্ট্রীট, এখন আবদুল হামিদ সরণি, এইরকম। এইসব রাস্তাগুলির ইতিহাস কলকাতার সামাজিক
ইতিহাসেরই অঙ্গ। এইসব নামের
মধ্যে লুকিয়ে আছে আদি কলকাতার বিন্যাস। বাদামতলা, বেলতলা, ঝামাপুকুর, পদ্মপুকুর,
নেবুতলা পটলডাঙ্গা ইত্যাদি
কলকাতার নানান মহল্লা বা এলাকার নামের পেছনে নিশ্চিতভাবেই লুকিয়ে আছে স্থানিক
ইতিহাস। মধ্য কলকাতায়
এন্টালি নামটি এসেছে ‘হেন্তালি’’ গাছের নাম থেকে। কলকাতার নগরায়ন হবার আগে আদি কলকাতায় ঐ অঞ্চলে
হেন্তাল বা হেঁতাল গাছ প্রচুর হত এটা সহজেই অনুমান করা যায় এই নাম থেকে। হেঁতাল গাছ জন্মায় জোয়ারের জলের প্রভাবে। এখন যেমন সুন্দরবনে হেঁতাল ঙ্গাছের জঙ্গল আছে। একইভাবে ‘ট্যাংরা’, ‘তপসিয়া’,
‘চিংড়িঘাটা’নামগুলি থেকে ঐতিহাসিকরা অনুমান
করেন আদিতে এলাকাগুলি ছিল লবণ হ্রদের মধ্যে।
শিকড়ের সন্ধানে ~ শ্রীশুভ্র
শিকড়ের সন্ধানে
শ্রীশুভ্র
“এক”
আমরা প্রায়শই দুঃখ করি, আধুনিকতার
স্রোতে গা ভাসিয়ে আমরা আমাদের শিকড় থেকে ক্রমশই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি দিনে দিনে।
বিশেষত আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা আজ বেড়ে উঠছে ঘরে বাইরে, তারা যেন শিকড়হীন এক অস্তিত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে দ্রুত গতিতে। একটু
চিন্তা করলেই দেখা যায়, এই একই ক্ষোভ ছিল আমাদের পূর্ববর্তী
প্রজন্মেরও। আমাদের সম্বন্ধে। আমাদের বেড়ে ওঠার কালে। অর্থাৎ বিষয়টি আজকের সমস্যা
নয়। প্রতি কালেই এই একই কথা শোনা যায় নবীন প্রজন্মের সম্বন্ধে। অর্থাৎ এইটুকু
নিশ্চিত যে, বিষয়টি প্রতি যুগেরই এক বাস্তব সমস্যা। সাধারণত
দেখা যায়, আমাদের বয়স বাড়ার সাথে, যতই
আমারা বার্দ্ধক্যের দিকে ঢলে পড়তে থাকি, ততই যেন এই ক্ষোভ বড়
বেশি সঞ্চারিত হতে থাকে আমাদের মানসিক পরিসরে। সংসার জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমরা যেন
ধীরে ধীরে আমাদের শিকড় সম্বন্ধে একটু একটু করে হলেও সচেতন হয়ে উঠতে থাকি। যে
সচেতনতা আমাদের যৌবনে বিশেষ দেখা যায় না। যায় না বলেই আমাদের সম্বন্ধে আমাদেরই
পূর্ববর্তী প্রজন্মেরও একটি ক্ষোভ জায়মান হয়ে উঠতো আমাদের নবীন বয়সের কালে। কিন্তু
জীবনের পড়ন্ত বেলায় আমাদের মননের দিগন্তে সেই শিকড়ের প্রতি একটি ভালোলাগার বোধ গড়ে
উঠতে থাকে ধীরে ধীরে। এ যেন অনেকটা বয়সের সাথে হারানোদিনের স্মৃতির প্রতি
নস্টালজিক অনুভুতি। ফেলে আসা সেইসব দিনের নানান রকমের রীতিনীতি লোকাচার ধর্মকর্ম
সংস্কৃতির প্রতি আমাদের মনন প্রক্রিয়ায় নতুন করে যেন একটা ভালোবাসা ভালোলাগা ফিরে
ফিরে আসতে থাকে। আর তখনই আমারা অনুভব করি আমাদের নিজেদের শিকড়ের প্রতি একান্ত একটি
টান। সেই সময়ে আমাদেরই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে ঠিক যে টানটার অভাব দেখে আমরা কখনো
কখনো ক্ষুব্ধও হয়ে উঠে থাকি।
সমকাম এবং সমকামীদের যৌনতা ~ অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সমকাম এবং সমকামীদের যৌনতা
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
হিজড়া বিশেষণটি দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি
পরিভাষা -- বিশেষ করে ভারতের ট্রান্সসেক্সুয়াল বা ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে
বুঝিয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারণে জন্মগত যৌন প্রতিবন্ধী
ব্যক্তি, যাদের জন্ম-পরবর্তী লিঙ্গ নির্ধারণে জটিলতা দেখা দেয়, মূলত তারাই হিজড়া। ‘হিজড়া’ শব্দের
অপর অর্থ হচ্ছে ‘Transgender’, ‘Transgender’ বলতে এমন এক
লৈঙ্গিক অবস্থাকে বোঝায় যা দৈহিক বা জেনেটিক কারণে মেয়ে বা ছেলে কোনো শ্রেণিতে
পড়ে না। প্রকৃতিতে কিছু মানুষ নারী এবং পুরুষের যৌথ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ
করে। বাংলা ভাষায় এই ধরনের মানুষ ‘হিজড়া’ নামে পরিচিত। সমার্থক শব্দে ছক্কা, গাণ্ডু (ফুল
গাণ্ডু ও হাফ গাণ্ডু) শিখণ্ডী, তৃতীয় লিঙ্গ, উভলিঙ্গ, নপুংসক, Transgender (ইংরেজি), ইনুখ (হিব্রু), মুখান্নাতুন
(আরবি), মাসি, বৌদি, চাচা, তাউ, ওস্তাদ, মাংলিমুখী, কুলিমাদর, ভিলাইমাদর,
মামা, পিসি, অজনিকা ষণ্ড,
অজনক, সুবিদ, কঞ্চুকী,
মহল্লক, ছিন্নমুষ্ক, আক্তা,
পুংস্তহীন ইত্যাদি। হরিদ্বারে বৃহন্নলাদের সকলে তাওজি বা পণ্ডিতজি
বলে। পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মে হিজড়াদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। বাংলা ‘সমকামিতা' শব্দটির গঠন সংস্কৃত থেকে সঞ্জাত। সংস্কৃত
শব্দ ‘সম’-এর অন্যতম অর্থ সমান অথবা
অনুরূপ এবং ‘কাম’ শব্দের অন্যতম অর্থ
যৌন চাহিদা, রতিক্রিয়া তথা যৌন-তৃপ্তি।সমকামিতার ইংরেজি
প্রতিশব্দ ‘Homosexuality’ তৈরি হয়েছে গ্রিক ‘Homo’ এবং লাতিন ‘Sexas’ শব্দের সমন্বয়ে। গ্রিক ভাষায় ‘Homo’
বলতে বোঝায় ‘সমধর্মী’ বা
‘একই ধরনের’। আর ‘Sexas’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা।
অমিয়ভূষণের উপন্যাস ভাবনা ও মহিষকুড়ার উপকথা ~ সুস্মিতা কৌশিকী
অমিয়ভূষণের উপন্যাস ভাবনা
ও
মহিষকুড়ার উপকথা
সুস্মিতা কৌশিকী
গড়পড়তা বাঙালি পাঠকের উপন্যাস ভাবনা যে উচ্চতায় শেষ হয়, তারও
অনেক উচ্চতায় অমিয়ভূষণের উপন্যাস ভাবনার শুরু। তাই হয়তো তাঁর
উপন্যাস পাঠকের সুস্বাদু (মুচমুচে মুখরোচক তিনি কোনদিন লেখেনই নি) মনে হয়নি। যারাও বা সাহস করে
দু' চারটি উপন্যাস পড়েছেন, বুঝেছেন হজমকরা সহজসাধ্য নয়। তবে তাতে এই ঔপন্যাসিকের কিছু যায় আসেনি তিনি
বেঁচে থাকতেও। কারণ তিনি সুনীল, হুমায়ূন, শীর্ষেন্দুর
মতো শুধু সাহিত্য চর্চা করতে চাননি। তিনি আমৃত্যু শিল্পের অনুরাগী ছিলেন, এক নির্বিণ্ণ
সাধক। বই লিখে টাকা করে ফুলে ফেঁপে ওঠা যায় ঠিকই কিন্তু তাতে শিল্প হয়
না। শিল্প নিভৃত চর্চার
বিষয়। সমসাময়িক পাঠকের খোঁজে তিনি লেখেন নি কোনদিনই। কুচবিহারের আর এক
বিশিষ্ট সাহিত্যিক অরুনেশ ঘোষকে দেওয়া
সাক্ষাৎকারে অমিয়ভূষন তাঁর সমকালীন ঔপন্যাসিকদের বিখ্যাত লেখা সম্পর্কে যে মন্তব্য
করেছেন তাতে বাঙালি পাঠকের একশো ভাগ
বিস্ময়ের উদ্রেগ হয়। বিভূতি বন্দ্যোর আরন্যক পড়েছি, ভালো বই। তবে একে উপন্যাস
বলা চলে না " । তারাশঙ্করের কালিন্দী'র গল্প তাঁর ভালো লেগেছিল, ভালো লেগেছিল মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা র ' আরম্ভ আর প্রস্থান' তবে ' পড়ে আলোড়িত হওয়ার মতো কিছু নয় '। অবশ্য এসবের কারণ
দর্শিয়েছেন তিনি " রাশিয়ান, ফরাসী, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান,
ইটালিয়ান ( ইংরেজি অনুবাদে ) এবং বহু ইংরেজি ও আমেরিকান উপন্যাস পড়া
থাকায় হয়তো এরকম হয়েছে। এসবের তুলনায় বাংলা উপন্যাসকে জোলো মনে হতো"।
ধর্ম যখন মানবিকতার অন্তরায় ~ তৈমুর খান
ধর্ম যখন মানবিকতার অন্তরায়
তৈমুর খান
ধর্মই কি একদিন পৃথিবী ধ্বংস করিবে? যেদিন হইতে
ধর্ম আসিয়াছে সেদিন হইতে যুদ্ধও আসিয়াছে। ধর্ম যদি শান্তি লইয়া আসিত তাহা হইলে
পৃথিবীতে কি এত মৃত্যু, এত রক্তপাত দেখিতে হইত? মানবিকতা বনাম ধর্ম — কে বড়ো? ধার্মিকেরা ধর্মকেই বড়ো করিয়া তুলিয়া ধরিবেন। মানবিকতাকে ধর্মের কাছে
তুচ্ছ করিয়া হীন প্রতিপন্ন করিবেন। কারণ মানবিকতায় পরকাল নাই। পরকালের মোহময়
সুখের হাতছানিও নাই। ধর্ম এভাবেই যুক্তি ও সত্যকে অস্বীকার করেই তাহার সাম্রাজ্য
বিস্তার করিয়া চলিয়াছে। আমেরিকান মুক্তচিন্তাবিদ লেখক লেমুয়েল কে. ওয়াশবার্ন
(১৮৪৬) এই জন্যই বলিয়াছেন : “Most
men would kill the truth, if the truth would kill their religion.” সুতরাং ধর্ম একটি অন্ধকার অদৃশ্য
রূপকথার কাল্পনিক প্রজ্ঞা মাত্র। ধর্মজীবীদের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত
কাল্পনিক সত্যের উপরই ইহার ইমারত নির্মিত হয়। হয়তো এই কথা ভাবিয়াই বিশ্ব বিখ্যাত
বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলিয়াছিলেন : “‘religious truth’ conveys nothing clear to me at all.” এই সত্যকে খুঁজিয়া দেখিবার
প্রয়াস কাহারও নাই, অথচ এক প্রগাঢ় অন্ধ আবেগ রহিয়াছে। এই
আবেগ এমনই যাহা এ বিষয়ে অধিক প্রশ্নও তুলিবে না। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসাইয়া
চলিতে পারিলেই নিজেকে ধন্য মনে করিবে।
বং বনসাই ~ মৈ মৈত্রেয়ী
বং বনসাই
মৈ মৈত্রেয়ী
স্বদেশী কোনো গাছের বীজ যদি বিদেশের মাটিতে
ফেলা হয়, তাহলে সে নিজের মতো করে সেই মাটিকে আঁকড়ে ধরে। সেই দেশের জলবায়ুতে নিজেকে
মানিয়ে নেয় ঠিকই কিন্তু নিজের বৈশিষ্ট্যকে বজায় রাখে। কিন্তু সেই গাছকে যদি বড় করে
প্রবাসে নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে অনেকসময়ই সে তার নিজস্বতা
হারিয়ে ফেলে। অথচ এর উল্টোটা হওয়াই কিন্তু স্বাভাবিক ছিল।
নির্ভুল ~ অলভ্য ঘোষ
নির্ভুল
অলভ্য ঘোষ
পর্ব-১
কুয়াশায় মোড়া হিমশীতল সকালে চার্চে যাবার
পথে;যখন প্রার্থনা গানটা আমি ভুল গাইতাম। সেই আধা কলি ফোঁটা
মেয়ে বেলায়;তবুও তুমি আমাকে দেখা দিয়েছিলে জেসাস। বেহুশ বেঘোর। জ্বরে পুড়ে ছাই
হয়ে যাওয়া ছোট্ট মেয়েটির মাথায় জলপট্টির মতো তোমার ঠাণ্ডা শীতল হাত রেখেছিলে
যখন আমার ঠাকুরমা গিয়েছিল হার্বাট বৈদ্য কে ডাকতে।
ফিনিক্স rebirth of a bird ~ মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী
মৈত্রেয়ী চক্রবর্তী
১
রিনি-- পোশাকী নাম অরুন্ধতী, বিয়ে ঠিক
হলো সপ্তর্ষির সাথে। জ্যেঠামশায় নাম দুটো দেখে বলেছিলেন রাজযোটক। বাবাকে প্রশ্ন
করে ছিলেন "কোথায় পেলে একে?" জ্যেঠামশায় যতোদিন
ছিলেন বশিষ্ঠমুনি বলেই ডাকতেন সপ্তর্ষিকে। রিনির ছোটবেলায়, গরমের
রাত্রে ছাদে শুয়ে বাবা তারা চেনাতেন, কতো সুন্দর সুন্দর
কাহিনী তারাদের ঘিরে, সে সবও শোনাতেন। সপ্তর্ষি মন্ডলের
সপ্তম তারা বশিষ্ঠ, আর তার ঠিক পাশেই ছোট্ট মিটমিটে একটা
তারা বশিষ্ঠর স্ত্রী অরুন্ধতী। বিয়ের অনুষ্ঠানে সপ্তপদীর সময়ে বা একদম শেষে বরকে
বলা হয় তার সদ্যবিবাহিত স্ত্রীর মুখ ধরে ওই অরুন্ধতীকে দেখাতে। বশিষ্ঠর পাশে
যেভাবে সবসময়ে উনি আছেন, কিন্তু এতো অনুজ্বল যে চট করে ঠাহর
হয় না; ঠিক সেই ভাবেই প্রত্যেক স্ত্রীর উচিত তার স্বামীর
পাশে থাকা। কাজেই অরুন্ধতীর স্বামী সপ্তর্ষি এ রাজযোটক ছাড়া কি? (যদিও আজকাল কার অনেক অজ্ঞ পুরোহিতরা কেউ বলেন 'স্ত্রীকে
ধ্রুবতারা দেখান' আবার কেউ বলেন 'তারা
দেখে ঘরে যান'।)
মিতুন ~ মৌসুমী ঘোষ দাস
মিতুন
মৌসুমী ঘোষ দাস
হেমন্ত গুটিগুটি পায়ে শীতের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়িয়েছে। এখন দুপুরের খানিক
পরেই কোন আগাম খবর না দিয়ে ঝুপ করে ‘আন্ধার’ নামে।
পাখীরাও আর দেরি না করে ডানা ‘ঝাটপটিয়ে’ নদীর ওপর দিয়ে দল বেঁধে ঘরে ফিরে আসে। সাঁঝ নামতেই কলোনির রাস্তাঘাট
শুনশান হয়ে যায়। চাঁপামারি কলোনির দক্ষিণে পাকুড়তলার পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা ডানে
বেঁকে নদীর দিকে গেছে, সেই রাস্তার পাশে নদীমুখো একটা টিনের
চালা দেওয়া ঘরে শাশুড়ি শিউলিকে নিয়ে থাকে মিতুন। মা বল, কি বাবা বল,
‘আপনমানুষ’ বলতে এখন তাঁর একমাত্র ভরসা শাশুড়ি।
এক বিচ্ছিন্ন দূরত্বের অভিবাসী ~ তৈমুর খান
এক বিচ্ছিন্ন দূরত্বের
অভিবাসী সত্যসাধন চট্টোপাধ্যায়
তৈমুর খান
যাঁকে আমার প্রথম যৌবনে পরিব্যাপ্ত এক আকাশ
বলে দেখতে শিখেছিলাম,
যাঁকে নিস্তরঙ্গ সমুদ্রের মতো ভাবতে শিখেছিলাম, যাঁকে সূর্যের ভাষা বলে বোধ জেগেছিল — তাঁর কাছেই
ভাসমান হতে, নিস্তব্ধ হতে, রোদ্দুর কণা
হতে চেয়েছিলাম। দীক্ষা নয়, শিক্ষাও; গ্রহণ
নয়, সঞ্চারও;
প্রসন্নতা নয়, প্রজ্ঞাপারমিতাও। এরকম
মানুষ আর দ্বিতীয়টি পাইনি। পৃথিবীতে তিনি মহাপৃথিবীর দেবতা।
পালামৌ এর জঙ্গলে ~ নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
পালামৌ এর জঙ্গলে
নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
''এমন সময় আসিবে হয়তো দেশে, যখন মানুষে অরণ্য দেখিতে পাইবে না। ___শুধুই চাষের
ক্ষেত আর পাটের কল, কাপড়ের কলের চিমনি চোখে পড়িবে, তখন তাহারা আসিবে এই নিভৃত অরণ্যপ্রদেশে, যেমন লোকে
তীর্থে আসে। সেই সব অনাগত দিনের মানুষের জন্য এ বন অক্ষুণ্ণ থাকুক।''
- আরণ্যক, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
উপাস্য আলোর পাশে জীবনের সারস্বত ধ্বনি ~ বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
জীবনের সারস্বত ধ্বনি
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
ইন্দ্রিয়জ অনুভবযোগ্য পরিসর অতিক্রম করে আমাদের চেতনা যখন আমাদের পরিচালিত করে প্রকাশের
উৎসভূমি এবং অস্তিত্বের অনিঃশেষ বিন্দুর
দিকে। সম্প্রসারিত করে আমাদের পুনর্নবায়িত বীক্ষণের
ঐশ্বর্যে। তখনই নিজের চারপাশে
স্পন্দনময় অতীন্দ্রিয় জগতের আভাস প্রতিবিম্বিত হয় সত্তায়। তখনই মনে হয় Turns of our existences
here and now into a simple point on the line of an infinite destiny. কবি রত্নদীপা দে ঘোষের দশম কাব্যগ্রন্থ ‘ মামেকং
শরণম’ পড়তে পড়তে ঠিক
এরকমই এক অনুভব অপার্থিব উন্মাদনায় ঝঙ্কৃত হয়েছে মর্মে। ভগবৎগীতায় শ্রীকৃষ্ণ
অর্জুনকে যে কথাগুলো বলেছেন কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে দাঁড়িয়ে। বস্তুগত অস্তিত্বের বাইরে প্রগাঢ় এবং
সর্বপ্রসারিত অনুভূতিবিশ্বের দরজা জানলা দোহাট করে খুলে দিয়েছেন। যার ফলে নৈসর্গিক আজানে কল্লোলিত হয়েছে জীবনের সারস্বত
ধ্বনি। সেই
সংশ্লেষনী উপলব্ধির নির্যাসই এই কাব্যগ্রন্থের আশ্রয়। গীতার ১৮ টি
অধ্যায়ের সমস্ত শ্লোক থেকে চিন্তাবীজ সংগ্রহ করে যৌক্তিক পরম্পরায় রত্নদীপা
প্রসারিত করেছেন তাঁর দূরান্বয়ী দৃষ্টি। একান্তের স্পষ্টতায় শুনতে পেয়েছেন সেই ‘অনন্তবীজের ব্রহ্মশাঁখ’ অখণ্ডমণ্ডলাকার দুন্দুভি। অনুরণিত তুমুল প্রতিধ্বনির শব্দে ভিজে গেছে তাঁর
প্রবহমান শব্দপথ- “
শোক আসলে একটি সাদা ঘোড়ার পুরাণ। তোমাকে সংশোধন/ দেবে
না হে। শোককে প্রশ্রয় দিয়ো না …পীতাভ রশ্মির
মতো নিজেকে ছড়িয়ে দাও… গতিপথ বদলে ফিরে এসো …’’
বিরোধীশক্তিই গণতন্ত্রের একমাত্র রক্ষাকবচ ~ নাসির ওয়াদেন
নাসির ওয়াদেন
বহু ভাষা, বহুজাতি, বহু
ধর্ম সমন্বিত আমাদের দেশ,ভারত। বিভিন্ন ঘটনা যেভাবে আমাদের
দেশে সংঘটিত হচ্ছে বা ঘটানো হচ্ছে তাতে দেশের অখণ্ডতা বিপন্ন । সাম্প্রতিক
মহামান্য উচ্চতম ন্যায়ালয় যে আদেশ বা নির্দেশ দিয়েছেন তাতে জনগণের মধ্যে ভরসার
আলো বিচ্ছুরিত হয়েছে বলা যেতেই পারে । স্বাধীনতার ৭২ বছর পরেও ভারতকে একটা সংকটের
মুখে পড়তে হচ্ছে ,যখন "এক দেশ,এক
জাতি "গঠনের কথা উঠছে, তখন দেখছি ভারত ক্রমাগত পিছনে
হাঁটছে । এই দীর্ঘ সময় একটা দেশের কাছে কম সময় নয়, তথাপি
স্বাধীনোত্তর ভারত যে অগ্রগতির পথে চলার কথা তার লক্ষ্য পথ থেকে অনেকটা পিছনে।
১৯১৭সালে রাশিয়ার পটপরিবর্তন বিশ্বের জনগণের মধ্যে নতুন আশা, উদ্দীপনা লক্ষ করা গেলেও,ব্রিটিশরা দেশ ছেড়ে যাওয়ার
সময়ে যাঁরা দেশকে গড়ার মহান দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাঁরা সঠিক দ্বায়িত্ব পালনে ব্যর্থ
হন। বিশ্ব সমাজতাত্ত্বিক দার্শনিক কার্ল মার্ক্স -এর দৃষ্টিতে ভারতের বিপ্লবের
যাবতীয় গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও ভারতে গণবিপ্লব সংঘটিত হলো না, অথচ,নানান সমস্যা সংকুল,ছত্রভঙ্গ
আফিমগ্রস্ত চীন সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে গেল।ভারতের মতো সমস্যা জর্জরিত দেশ
অন্ধকারের কূপমণ্ডূকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারল না ।কৃষক, শ্রমজীবী,
মধ্যবিত্ত শ্রেণী যে স্বপ্ন দেখেছিল, ভারত
আত্মমর্যদাশীল হয়ে দেশকে বিশ্বের উন্নতশীল দেশে উপনীত হবে, সেই
স্বপ্নে জল পড়ে যায় ।ভারতীয়দের মধ্যে আর্থিক, শারীরিক,
সামাজিক ও রাজনৈতিক আক্রমণ অব্যাহত থাকে। ইংরেজ দেশের ভার জোতদার,
জমিদারের হাতে সঁপে যায়, ফলে ভারতের
ভাগ্যাকাশে সিঁদুরে মেঘ থেকেই যায় ।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)