তিনটি গল্প ~ সৈয়দ ওয়ালী



তিনটি গল্প
সৈয়দ ওয়ালী

সেয়ানে সেয়ানে

নানা লোকের নানান কথা আর মাগনা উপদেশ শোনা শেষে সোলেমান সাহেব একেবারে হাঁক দেবার ভঙ্গিতে বললেন, ‘ওই মিয়া এলান জোয়ান মর্দ হইয়া ভিক্ষা কর ক্যালা? কাম কইরা খাইবার পার না’?

'কামই তো করতাছি স্যার', উত্তরে লোকাল বাসে ভিক্ষা করতে থাকা মধ্যবয়সী ভিক্ষুকটি বলে উঠল। তার স্বাস্থ্যটা যে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে একেবারেই যায় না এটা অন্তত ওই বাসে ভ্রমণরত প্রতিটি যাত্রীই মানবে। কোন কারণে যে ভিক্ষুকটি এই বয়সে এই পেশা বেছে নিয়েছে এটা আনুমান করা দুরূহ ব্যাপারই বলা চলে।

ভিক্ষুকটির এমন উত্তরে ভীষণরকম ক্ষেপে গিয়ে সোলেমান সাহেব ধমকে উঠল যেন, 'ওই মিয়া ভিক্ষা করা কী কোন কাম-নি? আমাগো নবীজি ভিক্ষা করতে না করে নাই? থুতনিতে এক মুঠা দাড়ি রাখলেই কী রসুলের সুন্নত পালন হইয়া যায় মিয়া, এইসব কথা জাইনা মাইনা চলতে হয় না?

এমন ধমকে ভিক্ষুকটি একটু ঘাবড়ে গেলেও, উত্তরটা দিল যেন আঁতে ঘা দেবার মত, ''স্যার আপনেরা, মানে শিক্ষিত লোকেরা যাকাতের নিয়ম কানুন জাইনাও তো ঠিকভাবে যাকাত দেন না; আপনারা ঠিকমত যাকাত দিলে কী আইজ আমাগো এই চৈত্রমাসের গা-পুড়া রইদ্রের মইধ্যে এমন কষ্ট কইরা ভিক্ষা কইরা প্যাট চালাইতে হয়? আমাগোরে এইসব কওনের আগে নিজেরা ঠিক কাম করেন। আপনারা ঠিক কাম করতে থাকলে একদিন না একদিন এই দেশে একটা ভিক্ষুকও থাকব না। ভিক্ষা দিয়া সোয়াব কামানোর লাইগা বিদেশ থিকা ভিক্ষুক আনা লাগব।

ভিক্ষুকটির এমন পিত্তি জ্বলা উত্তরে যুৎসই কোন কথা খুঁজে না পাওয়ায় সে সহ বাসের অন্যান্য যাত্রীরা কিছু একটা বলতে চাওয়ার মৃদু হুল্লোড় তুলতে গিয়েও কেমন এক তবদা খেয়ে চুপ মেরে গেল। আর কোর্ট কাচারির সামনে বাসটা থামতেই তাড়াহুড়া করে নেমে গেল সোলেমান সাহেব। যাকাতের কথা উঠায় তার মনে পইড়া গ্যাছে যে আইজ বছরের শ্যাষ জুম্মাবার; বাড়িত গিয়া গোসল কইরাই তারে পাটুয়াটুলি মসজিদে যাওন লাগবো; আইজ মসজিদের যাকাত কমিটিরও এই বছরের শ্যাষ মিটিং! এই মিটিংয়েই সামনের বছরের কাজ কামের বাজেট পাশ হইব। এমন ইম্পরট্যান্ট মিটিংয়ে হে না থাকলে চলে? যেইহানে হে হইল গিয়া কমিটির ছেক্রেটারি! এলাকার ক্যাঠা না জানে যাকাত কমিটির ছেক্রেটারি হওনের পর তার এলাকার গরীব দুখীগো লাইগা তার নানা কিসিমের উপকারের কথা; যদিও কিছু বদলোকে কয়, যাকাত কমিটির ছেক্রেটারি হওনের পর থিকাই নাকি তার শান শওকত বাইড়া গেছে; আর শান শওকত বাইড়া যাওনের পর থিকা নাকি মহল্লার মাস্তান পুলাপানগুলাও তারে অহন সালাম আদাব দ্যায়; কয়ডা বছর আগে নাকি গল্লির নেড়ি কুত্তাও তারে পুছত না। বদলোকে তো কত কিছুই কয়! তয় তার শান শওকত যে দিন দিন বাড়তাছে এইডা মিছা কথা না, কথাডা হাচা; সবই আল্লাহ পাকের রহমত!

বাস থেকে নেমে আপন মনে এইসব আওরাতে আওরাতে গা-পুড়া রোদের ভেতর দিয়ে যখন নিজের বাড়ির দিকে একরকম ছুটেই চলছিল সোলেমান সাহেব, পেছনে লোকাল বাসের ভিড়ের ভেতর তখন জোয়ান মর্দ ভিক্ষুকটির পিত্তি জ্বলা কথাগুলোর রেশ ভেসে বেড়াচ্ছিল।
...



অনুমান

এমনকি ইতর প্রাণীদের পুরুষেরাও বহুগামিকথাটা শুনে চমকে উঠে এক অদ্ভুত দৃষ্টিতে ঈশিতার দিকে তাকিয়ে থাকার প্রাক্কালেই এক গুরুতর প্রশ্নের সম্মুখীন হল সাবের। তবে কী পুরুষের বহুগামিতা প্রকৃতি প্রদত্ত এমন এক বৈশিষ্ট যাকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার সুযোগ নেই? নাকি এ একই জাতের প্রাণীদের মাঝে কেউ দীর্ঘদিন একটিভ ভুমিকা পালন করায় এবং কেউ প্যাসিভ ভুমিকা পালন করার কারণেই এমন ঘটছে? সাবেরের চুপ থাকাকে মহাপাপের স্বীকারোক্তি ধরে নিয়েই ঈশিতা আরও যোগ করল যে, ‘তুমি কী জানো সেই রাতের করুণ কান্নার পর থেকে মাদী বেড়ালটার আর কোন শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না; মানে গত তিনরাতে আমি আর তার গলার আওয়াজ শুনিনি?

ঈশিতার এমন ধারার তথ্যে সাবের একটু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতে, ঈশিতা পুনরায় বলল, ‘সম্ভবত বেচারি কে হত্যা করা হয়েছেকী যে যা তা বল না তুমি; প্রাণীদের মধ্যে কী এমন ঘটে নাকি;পরকীয়া প্রেমের কেচ্ছা গোপন রাখতে স্ত্রীকে আই মিন যার সাথে সে এখন থাকে তাকে হত্যা করবে ওই মদ্দা বেড়াল? তোমার মাথার অনেকগুলো স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে ঈশিতা’, প্রচণ্ড বিরক্তি নিয়ে প্রায় স্বগতোক্তির ন্যায় বলে উঠল সাবের।

সাগরের এহেন উত্তরে মোটেই বিচলিত দেখাল না ঈশিতাকে। ঈশিতা জানে তার মাথার কোনও স্ক্রুই ঢিলা হয়নি। ওমেন রাইটসনিয়ে কাজ করতে গিয়ে তাকে যে বিচিত্র পড়ালেখার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে এবং  বিভিন্ন মর্মান্তিক কেইস হ্যান্ডেল করতে হয়েছে সেসব থেকে তার যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তার আলোকে পুরুষ জাতটাকে ভালো করেই চেনা হয়ে গেছে তার। শুধু মানুষ নয় তার দৃঢ় বিশ্বাস ইতর প্রাণীদের পুরুষেরাও বহুগামি।

শুক্রবার সকালে কেমন বিচ্ছিরি এক অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভেঙে গেল সাবেরের। ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙে যেতেই ইঁদুর পচার তীব্র গন্ধ ধক করে নাকে এসে লাগল। গত রাতে ঘুমাবার আগে ইঁদুর মারার ওষুধ ঘরে ছিটিয়ে ঘুমিয়েছিল ঈশিতা। প্রায় বৃহস্পতিবাড় রাতেই এমন করে ঈশিতা। পাশ ফিরে দেখে ঈশিতা নেই। বেডরুমের দরজা খুলে ডাইনিং রুমে পা দিতেই দেখতে পেল নাকে ওড়না চাপা দিয়ে, বাথরুমের শলার ঝাড়ু হাতে নিয়ে কিচেনের পেছন দিকের গলির দিকে যাচ্ছে ঈশিতা। তার চোখেমুখে কেমন এক চাপা উত্তেজনা! ঈশিতার এমন ছুটে যাওয়া দেখে তার পিছু পিছু সাবেরও পেছনের গলিতে গিয়ে হাজির হল। ইঁদুর নয় একটি মৃত মাদী বেড়ালকে দেখতে পেল সে কার্নিশের নিচে, মরে পড়ে আছে। দুর্গন্ধটা এই মৃত বেড়ালটিই ছড়াচ্ছে। মৃত বেড়ালটার শরীরে বেশ কিছু অদ্ভুত ধরণের ক্ষতের চিহ্ন দেখে একটু অবাক হল সাবের। ঈশিতার দিকে খেয়াল দিতেই সে দেখতে পেল কেমন এক অপ্রকৃতিস্থ দৃষ্টিতে মৃত বেড়ালটির অদ্ভুত ক্ষত চিহ্নগুলোর দিকে সেও তাকিয়ে আছে; ঈশিতার কাছে গিয়ে তাকে ওখান থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করতেই ঝামটা দিয়ে হাতটা সরিয়ে দিয়ে মৃত মাদী বেড়ালটার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল, ‘আমার অনুমান যে মিথ্যে নয় এবার বিশ্বাস হল?

কিসের অনুমান কিসের বিশ্বাস এসব কিছুই মেলাতে না পেরে এবং উত্তরে কী বলা কিংবা কী করা উচিৎ তারও কিছুই বুঝতে না পেরে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা সাবের তীব্র দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য নাকটা আরও জোরে চেপে ধরতে ধরতে শুনতে পেল, ‘ঈশিতা বিড়বিড় করে বলছে আমার অনুমান মিথ্যে নয়, মিথ্যে নয়, হতেই পারে না
...

 
দাসেদের দিনকাল

১...

শমরিতা হাসপাতালের আই-সি-ইউ বিভাগে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তে থাকা বাবাকে দেখে হাসপাতাল থেকে অনেক রাতে বাড়ি ফিরলেও অফিস সময় শুরুর এক ঘন্টা আগেই অফিসে পৌঁছে গেল সাগর। যদিও এত আগে অফিসে সাধারণত সে আসে না। রাতেই এম ডি স্যারকে বলে রাখতে পেরেছে বিধায় সে নিশ্চিত যে তিন মাসের অগ্রিম বেতন একসাথে পেতে তার খুব একটা বেশি সময় লাগবে না। সকাল এগারটার মধ্যেই নিজের কাজ দ্রুততার সাথে কিছুটা শেষ করে কিছুটা গুছিয়ে তার জুনিয়র কলিগকে সব বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হল সে। এবং ঠিক এগারটা পাঁচ মিনিটে ইন্টারকমে তার অফিসের চিফ একাউন্টেন্ট সালেহ সাহেবকে কল দিয়ে বলল, সালেহ সাহেব আজ সকালে আমাকে তিন মাসের বেতন অগ্রিম দেবার কথা; এম-ডি স্যার কী এ ব্যাপারে আপনাকে কিছু জানিয়েছে? ইন্টারকমের ওপাশ থেকে সালেহ সাহেব বলল,জ্বী  স্যার  জানিয়েছে। আপনি যদি একটু কষ্ট করে আমার সেকশনে আসেন তবে খুব ভালো হয়। সালেহ সাহেবের বলার ধরনটা স্বাভাবিক মনে হল না সাগরের। কোন প্রকার টাকা নেবার জন্যেই সালেহ সাহেব তাকে তার সেকশনে আগে কখনও ডাকেনি। সবসময় তার টেবিলে এসেই টাকা দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে গেছে। আজ ডাকল যে? তবে কী আরও কোনও দুঃসংবাদ আজ তার জন্যে অপেক্ষা করছে? নতুন এক দুশ্চিন্তার ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে তিন তলার একাউন্টস সেকশনে হাজির হল সাগর। সাগরকে দেখে সালাম দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে হ্যান্ডসেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিল কোম্পানির চিফ একাউন্টেন্ট সালেহ সাহেব আর মুখে বলল, বসুন স্যার। সালেহ সাহেবের টেবিলের উল্টোদিক অর্থাৎ তার সামনের চেয়ারে বসতে বসতে তার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝতে চাইল সাগর। সালেহ সাহেবকে কী একটু বিমর্ষ দেখাল? মানুষটা তাকে পছন্দ করে বলেই জানে সাগর। ভালভাবে চেয়ারে বসার পর সাগরকে একটি খাম এগিয়ে দিয়ে সালেহ সাহেব বললেন, স্যার এখানে তিন মাসের অগ্রিম বেতন আছে, টাকাটা গুনে নিন; যদিও আমি গুনেই রেখেছি, তবুও। টাকা গোনা শেষ করে সালেহ সাহেবকে ধন্যবাদ দিয়ে সাগর উঠতে গেলে, সালেহ সাহেব বললেন, স্যার উঠবেন না আরেকটু কাজ বাকী আছে। তারপর আরেকটি খাম এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, এই খামে কোম্পানির পক্ষ থেকে আরও এক লাখ টাকা এবং এম-ডি স্যারের একটি চিঠি আছে। অতিরিক্ত এক লাখ টাকা এবং এম-ডি স্যারের চিঠির কথা শুনে, সালেহ সাহেবের চোখের দিকে তাকিয়ে, খামটা নিতে নিতেই সাগর বুঝে গেল, সে যে আশঙ্কা করেছিল তাই ঘটতে যাচ্ছে; আরও একটি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে ওই চিঠির মাঝে। চিঠিটা খুলেই তার জানা হয়ে গেল যে সেটি তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার চিঠি; কোম্পানির পক্ষ থেকে চিঠিটা এম-ডি স্যার তার উদ্দেশ্যে লিখেছে। যেখানে খুব মার্জিত স্বর, পরিমিত ভাষা ও দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোম্পানির ব্যবাসায়িক ও আর্থিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপের দিকে যাবার কারণে তাকে তার কোম্পানি আর চাকরিতে বহাল রাখতে পারছে না। তাকে যে তিন মাসের অগ্রিম বেতন দেয়া হয়েছে সেই তিন মাস এর পর থেকে কোম্পানির সাথে তার আর কোন সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। তার সকল কাজ ও দায়িত্ব তার ইমিডিয়েট জুনিয়র কলিগকে বুঝিয়ে দেবার মাধ্যমে এই তিন মাসের যে কোন দিন সে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে পারে। চাইলে সে আগামী সপ্তাহেও এই অব্যাহতি নিতে পারে তাতে কোম্পানির কোন আপত্তি থাকবে না। এবং তিন মাসের বেতন অগ্রিম ছাড়া যে একলাখ অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে সেটা কোম্পানির এম-ডি স্যারের পক্ষ থেকে তার বাবার চিকিৎসার খরচ হিসাবে গণ্য করতে বলা হয়েছে। 

চিঠিটি পড়া শেষ করে, এক লাখ টাকার বাণ্ডিল নাম মাত্র পরখ করে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল সাগর। সালেহ সাহেবকে নিচু স্বরে ধন্যবাদ দিয়ে একাউন্টস সেকশন থেকে বেরিয়ে এলো সাগর। প্রকৃত অর্থে আজ থেকে যে তার আর চাকরিটা নেই তার অনেক কলিগ এখনও জানেনা বিধায় অনেকেই তার বাবার অসুস্থতার কথাই জিজ্ঞেস করল। কলিগেরা কী করে তার বাবার অসুস্থতার কথা এত দ্রুত জেনে গেল এই প্রশ্ন মাথায় উদয় হলেও প্রশ্নটা নিয়ে মাথা ঘামাতে মন চাইল না তার। বরং কলিগদের দায়সারা গোছের উত্তর দিতে দিতে অফিস থেকে বেরিয়ে নয়া পল্টনের রাস্তায় নেমে এলো সে। এমন ঘটনার জন্য সামান্যতম প্রস্তুতি না থাকায় ভেতরে ভেতরে ভীষণ মুষড়ে পড়লেও বাবার অপারেশনের চিন্তায় ব্যাপারটাকে আমল দিতে চাইল না সে। একটি সিএনজি  ডেকে ভাড়া ঠিক না করেই উঠে বসে সিএনজি ড্রাইভারকে বলল,পান্থপথ, শমরিতা হাসাপাতালে চলো।

২...

অনেকদিন থেকেই যে কোন বিপদের সময় যে মুখটা প্রথমেই ভেসে ওঠে, স্মরণ করলে মনটা শক্তি পায় এবং খানিকটা নির্ভার লাগে সেই অহনাকে ফোন দেবার জন্য মোবাইল ফোনটা প্যান্টের সাইড পকেট থেকে বের করল সাগর। এবং আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করল মোবাইল ফোনটা বন্ধ। কাল রাতে ফোনটা চার্জে দিয়ে রাখলেও আজ অফিসে আসার সময় ফোনটা অন করার কথা মনেই পড়েনি। কী হচ্ছে এসব! তীক্ষ্ণস্বরে তিরস্কারের পাশাপাশি নিজেকে বলতে লাগল সাগর, এত ভেঙে পড়লে চলে! কার জীবনে বিপদ, খারাপ সময় না আসে? এ শহরে তোমার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি কেউ কী মোকাবেলা করছে না? আগেও কী এমন পরিস্থিতিতে পড়নি তুমি? এত ঘাবড়াবার তো কিছু নেই, অন্য একটি চাকরি জুটিয়ে নেবার জন্য তোমার হাতে পুরো তিন তিনটি মাস সময় পড়ে আছে; কিসের এত ভয় তবে? কী বললে, বয়স হয়ে গেছে? তুমি বয়সের অজুহাত দিচ্ছ! যে তুমি বিভিন্ন মানুষকে সফল হবার ক্ষেত্রে অজুহাতের নানাবিধ অপকারিতা সম্পর্কে ট্রেনিং দিয়েছ; সেই ট্রেনিং-দাতা তুমি আজ ভেঙে পড়ছ! বাহ, চমৎকার! এ না হলে স্ববিরোধী, ভীতু, ভঙ্গুর মধ্যবিত্ত! মাথা থেকে চাকরি ও অন্যান্য চিন্তা মুছে আপাতত বাবার কথা চিন্তা কর সাগর;  তোমার বাবা এই মুহূর্তে আইসিইউতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে; তাকে এই লড়াইয়ে জিততে সাহায্য কর। তার অপারেশনের জন্য আজ দুপুর বারোটার মধ্যে যে এক লাখ টাকা হাসপাতালে জমা দিতে হবে মনে আছে সে কথা? শেল্ফ-টকের এই জায়গায় এসে হাসপাতালে টাকা জমা দেবার শেষ সময়সীমার কথা মনে পড়ে যাওয়ায় অহনার দেয়া হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সাগর দেখতে পেল বারোটা বাজতে মাত্র দশ মিনিট বাকী। সিএনজিটি আরও দ্রুত চালিয়ে নেবার জন্য সিএনজির ড্রাইভারকে তাড়া লাগালো সাগর।

পান্থপথ সিগন্যালটা পার হয়ে শমরিতা হাসপাতালের গেটে এসে সিএনজিটা যখন থামল বারোটা বাজতে তখন মাত্র তিন মিনিট বাকী। দ্রুত সিএনজি ভাড়া মিটিয়ে টাকা জমা দেয়ার জন্য হাসপাতালের ক্যাশ কাউন্টারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনটা অন করল সাগর। ক্যাশ কাউন্টারের কর্তব্যরত ব্যক্তির প্রশ্নের উত্তরে তার বাবার আই-সিই-উ এর বিছানা নম্বরটা উল্লেখ করে এক লাখ টাকা তার হাতে বুঝিয়ে দিল সাগর। ক্যাশ কাউন্টারের কর্তব্যরত ব্যক্তি টাকাটা গুনে টাকার রশিদ সাগরকে বুঝিয়ে দেবার মুহূর্তে সাগরের স্ত্রী অহনার মোবাইল থেকে একটি ম্যাসেজ এলো সাগরের মোবাইলে। ম্যাসেজটা ওপেন করতেই সাগর দেখতে পেল সেখানে লেখা আছে, SAGAR, BABA IS NO MORE …
...

সৈয়দ ওয়ালী


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন