রংরুট সাক্ষাৎকার
ইমাম গাজ্জালী
রংরুট: কখনো কি মনে হয়েছে ৭১-এর স্বাধীনতা রংরুট ধরেই এগিয়ে চলেছে? অন্তত
বিগত চার দশকের নিরিখে। বিশেষ করে এই প্রশ্নটি দিয়েই আপনার সাথে আলাপটুকু শুরু
করার কারণ আর কিছুই নয়, বিগত চার দশকের স্বাধীনতার প্রাপ্তি
আর অভিজ্ঞতার বাটখারায় বাঙালির সার্বিক উন্নতির রেখাচিত্রটি কি অনেকটাই বেঢপ দেখায়
না?
আপনার মতামত।
ইমাম গাজ্জালী: হ্যাঁ, অবশ্যই রংরুট ধরে এগিয়ে চলেছে
বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ কথা আগে কেউ কেউ মিন মিন করে বলত, এবার
জোরে জোরে বলার সময় এসেছে। তারস্বরে
বলতে হবে, “বাংলাদেশ রংরুট ধরে এগিয়ে চলেছে”। উপমহাদেশের এই অঞ্চলের মানুষ যারা চিরদিন নীচ তলায় থেকেছে। দিল্লী, মুর্শিদাবাদ, কোলকাতা, করাচি, রাওয়াল পিণ্ডি ও ইসলামাবাদের পশ্চাৎভূমি
(Hinterland) হওয়ার ভাগ্যবরণ করাই ছিল যার নিয়তি, সেই অঞ্চলের মানুষ শোষণ লুণ্ঠন
আর অপমানে পিষ্ঠ হয়ে যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখনই দৃশ্যমান হয়েছে এই বাংলাদেশ, তবে
তার কায়া এখনো স্পস্ট হয়নি। তার
আগেই ‘বাংলাদেশ’ হাতছাড়া হয়ে গেছে।
ব্রিটিশরা তাদের শাসনের ভিত্তি হিসেবে একটা অনুগত শ্রেণি ও
আমলাতন্ত্র তৈরি করেছিল। একটা আপোষরফার মাধ্যমে তাদের হাতেই ব্রিটিশ স্বাধীনতা দিয়ে
গেছে। ফলে ভারত ও পাকিস্তান মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশিক রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা। তাদের
পক্ষে নিজেদের মত করে রাষ্ট্র নির্মান দূরহ ছিল। আর বাংলাদেশ একটা সশস্ত্র যুদ্ধের
মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয়েছে। সেখানে আপোষরফা ছিল না। সুতরাং সেখানে ব্রিটিশ উপনিবেশিক
রাষ্ট্রের ধারাবাহিকতা ছুড়ে ফেলে দিয়ে নিজেদের মত একটা রাষ্ট্র নির্মানের শর্ত ও
সুযোগ ছিল। অথচ স্বাধীনতার পরপরই ব্রিটিশের ধারাবাহিকতার পাকিস্তান রাষ্ট্রের
পুনরুজ্জীবন ঘটানো হল। নামটাই শুধু বাংলাদেশ রাখা হল, আর মানুষকে ফিরিয়ে নেওয়া হল
আগের দশায়। বাংলাদেশ এখন মূলত ভারত পছন্দ পাকিস্তান। এখন ওই অপমানিত, শোষিত ও
লুণ্ঠিতদের ঘুরে দাঁড়ানোর জমিন কেড়ে নেওয়া হয়ে গেছে। ইতিহাসের সোনার তরীতে তাদের
সোনার ধানটাই নেওয়া হল, শুধু তাদেরই রেখে দেওয়া হলো ‘আবাহমানের’ দুর্দশায়। এই
রংরুট থেকে ফেরাতে হবে বাংলাদেশকে। দখলিস্বত্ত্ব বুঝে নিতে হবে আপন মানচিত্রের।
রংরুট:
একটি দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার বাতাবরণ কতটা
জরুরী বলে মনে করেন আপনি? বাংলাদেশের সংবিধানে
মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনাটিকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসতে গেলে কিভাবে এগনো দরকার? না কি জনমানসের মূল আবেগ যদি
ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধেই থাকে তবে সেই আবেগকেই সম্মান জানানো জরুরী? আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আপনার মতামত।
ইমাম গাজ্জালী গতার আগে বলে নিই, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’
এর চেয়ে ‘ইহজাগতিকতা’ এটিই আমার কাছে সঠিক শব্দ। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা মনে উঠলেই স্বামী বিবেকানন্দ, জওহর লাল নেহেরু, শেখ
মুজিবুর রহমান এদের মুখ ভেসে ওঠে। নিজ ধর্মের প্রতি আনুগত্য এবং অপর ধর্মের প্রতি
শ্রদ্ধাশীল হওয়ার একটা ভাষ্য তৈরি করেন তারা, আর সকল ধর্মের সমান অধিকারের স্লোগান
দেন। ব্যক্তিক ক্ষেত্রে সেটা মন্দ না। কিন্তু আসল কাজ হল রাষ্ট্র ও রাজনীতি থেকে
ধর্মের পৃথকীকরণ, আর প্রয়োজন হল ধর্মীয় পরিচয়ের ব্যাপারে রাষ্ট্রের উদাসীনতা।
কিন্তু এসব প্রশ্নে ওই ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নীরব থাকে। এজন্য ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ শব্দ
নিয়ে আমার আপত্তি। এখানকার আলোচনায় ‘স্যেকুলারিজম’ শব্দটিই
আমি ব্যবহার করতে চাই।
যা হোক, প্রাচ্যে স্যেকুলারিজম খুবই জরুরি একটি বিষয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রয়োজনীয়তা আরো বেশি আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে স্যেকুলারিজম এত
গুরুত্ব বহন করে যে, এই প্রত্যয়টি ছাড়া বাংলাদেশের দার্শনিক ভিত্তিই নির্ণয় করা
সম্ভব নয়। এছাড়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি দেশের একটি রাষ্ট্রের মতাদর্শিক ভিত্তি
হিসেবে ‘স্যেকুলারিজম’কে গ্রহণ করা অনেক বড় গুরুত্ববহ ও বিরল ঘটনা। অথচ বাংলাদেশ সৃষ্টিই হয়েছিল ‘স্যেকুলার’ রাষ্ট্র গড়ার আকাঙ্খা থেকে। সেই
সঙ্গে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও বাঙালী জাতীয়তাবাদতো ছিলই। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠদের
দেশ হিসেবে একটি রাষ্ট্রের এমন আধুনিক মতাদর্শিক ভিত্তি-সম্ভবত পৃথিবীতে আর একটিও
খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর এটাই ছিল বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি। শুধু তাই নয়,
সেখান থেকে যদি সত্যসত্যই বাংলাদেশ এগিয়ে যেত, সেই অগ্রযাত্রা থেকে ইতিবাচক শিক্ষা
নিতে পারত উপমহাদেশের বাকি দেশগুলোও। যেখান থেকে ইতিহাসের অনেক প্রশ্নের মিমাংসা
হতে পারত। ইতিহাসের অনেক চরিত্রের নতুন করে মূল্যায়িত হওয়ার সুযোগ তৈরি হত।
যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে গৃহিত মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্রের
নামে যেমন লুটপাট হয়েছে, তেমনি ‘স্যেকুলারিজমের’ নামে হিন্দুদের বাড়িঘর দখল লুটপাট
থেকে শুরু করে বহু অপকর্ম হয়েছে। এরকম বহু উদাহরণ দেওয়া যাবে বাঙালী জাতীয়তাবাদ ও
গণতন্ত্র নিয়েও। মুক্তিযুদ্ধের এমন দুর্মূল্য অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে শাসকদের
ওই সব অপকর্মে। ওআইসি’র সদস্যপদ নেওয়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, নও মুসলিম
বক্সার মোহাম্মদ আলীকে আমন্ত্রণ, শুক্রবার ছুটির দিন ঘোষণা, পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু
করে সবখানেই দ্বি-জাতি তত্ত্বের আয়োজন শুরু করা, শাসকদের পক্ষ থেকে ধর্মীয়
উম্মোদনাকে উস্কে দেওয়ার মত হাজারো উদাহরণ দেওয়া যাবে। একাত্তরের মানুষকে ফের
পাকিস্তানের মানুষে পরিণত করার জোর আয়োজন শুরু সেই একাত্তর থেকেই। অতীতের সকল
শাসকেরাই কাজটি করেছেন অত্যন্ত নিপূন হাতে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশকে রাখা
শাসকদের জন্য নিরাপদ ছিল না।
এটা ঠিক যে সেক্যুলারিজমকে বাদ দিলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই
মানচিত্রের ভেতর বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, বরং পাওয়া যায় পাকিস্তানকে।
পার্থক্য এতটুকুই যে, সেটা ভারত পছন্দ পাকিস্তান। এ কারণে ‘স্যেকুলারিজম’কে একটা
গালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কোমর বেধে লেগেছেন একটি গ্রুপ, যারা মাদ্রাসা
লাইন থেকে আসেননি, এসেছেন আধুনিক স্কুল কলেজ ইউনির্ভাসিটি থেকে। ধর্মের চেয়ে এদের আধুনিক
জ্ঞান বিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচয় অনেক বেশি। এদের অনেকের আবার বামপন্থার ব্যাকগ্রাউন্ট
আছে। ইনিয়ে বিনিয়ে এরা বহু কথা বললেও এরা কৌশলে পাকিস্তানি, দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারক। এক সময় এদের অনেক অনুসারি থাকলেও এখন ফেসবুক ভিত্তিক কয়েকজন চ্যালাচামুন্ডা
তাদের অস্তিত্বের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছেন। কিন্তু ‘স্যেকুলার’ শব্দকে গালি হিসেবে
প্রতিষ্ঠিত করতে কিছুটা সফল হয়েছেন বটে। দাঁড়ি গোঁফ ছাটা এসব
লোকজনদের জঙ্গিদের চেয়ে ভয়াবহ জ্ঞান করি। এদের ধার দেওয়া চাপাতি দিয়েই জঙ্গিদের
কোপাকুপি চলে।
আমার বিবেচনায় জনমানসের আবেগ অনুভুতি একটা ভাসমান বস্তু,
তাকে নানাভাবে শাসকরা উল্টোদিকে নিয়ে গেছে, সেই দিকে গড্ডালিকায় গা ভাসানো খুব
বাজে কথা হবে। বরং একে নিজ খাতে আনার জন্য ভাবাদর্শিক কাজ নানাভাবে শুরু করা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে শোষণ ও লুণ্ঠনমূলক ক্ষমতায় টিকে থাকার জায়গা থেকে মুক্ত রাখা
দরকার। বিএনপি জামাত তো শেষ, এখন লড়াই হওয়া দরকার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে প্রকৃত
মুক্তিযোদ্ধার।
রংরুট: সুদীর্ঘ বাম আন্দোলনের ঐতিহ্য বাঙালির
আত্মপরিচয়কে কতটা বিশেষত্ব দিতে পেরেছিল বলে আপনার ধারণা। এবং একই সাথে ক্ষমতা
কেন্দ্রিক মানুষের ভোট কুক্ষিগত করে রাখার যে রাজনীতি তা কিভাবে বাম ঐতিহ্যকে
ধুলিসাৎ করল শেষমেষ? আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই বিশ্বে বাম আন্দোলনের
পূনরাভ্যুত্থান কি আর সম্ভব আদৌ?
ইমাম গাজ্জালী এটা
একটা গুরুত্বপূর্ণ্ প্রশ্ন,
জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন
এখানকার বামপন্থী ছাত্র তরুণরাই
শুরু করেছিলেন, ওই
লড়াইকে তারাই এগিয়ে নিয়েছিলেন। প্রথমদিকে মাওলানা ভাসানী তাদের
ছায়া দিলেও তারা কিন্তু
রাজনৈতিক নেতৃত্ব পায়নি। বাঙ্গালী
আত্মপরিচয় পূর্ণ্{{তা পেত
বামদের হাতেই, কিন্তু তাদের
নানা বালখিল্যতা ও কাণ্ডজ্ঞানহীনতার কারণে সেটা হাতছাড়া হয়ে
প্রতিপক্ষের কব্জায় চলে যায়। এতক্ষণে বাঙ্গালী আত্মপরিচয়টা ওই
‘প্রতিপক্ষের’ ব্যাখ্যায় একটা বিদঘুটে
রূপ নিয়েছে। সেখানে
সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে কিংবা ভারতের
নতজানু আনুগত্য রয়েছে। তাদের
অনেকে বাঙ্গালী বলতে ‘মুসলমান
বাঙ্গালী’ বোঝে। যা
কৌশলে পাকিস্তানের দ্বি-জাতিতত্ত্বই।
বিপরীতে জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী
লড়াই যে শেষ বিচারে
শ্রেণি সংগ্রাম-এই
সহজ কথাটি সেকালের (পাকিস্তান
পর্বে)বাম আন্দোলনে কমই
উপলব্ধ হয়েছে। ওই
সময় রাশিয়া কিংবা চীনের
পার্টির ডেস্ক থেকে আসা
তত্ত্ব অনুসরণ করতে গিয়ে
তারা সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী
লড়াইকে প্রধান রাজনৈতিক করণীয়
নির্ধারণ করেন। তার
নীচে চাপা পড়ে যায়
আভ্যন্তরীণ জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী
লড়াই। জাতিগত নিপীড়ন বিরোধী
লড়াইকে প্রধান রাজনৈতিক করণীয়
হিসেবে সামনে এনে সাম্রাজ্যবাদ
বিরোধী লড়াইকে তার অধীনস্থ
করতে সক্ষম হয়নি সেকালের
বামপন্থার রাজনৈতিক নেতৃত্ব।এর
প্রভাব এখনো পুরোমাত্রায় বিরাজমান। যার কারণে দেশিয় শাসক
শ্রেণি এবং তাদের সরকার
ও রাষ্ট্র নানাভাবে ছাড় পেয়ে
গিয়েছে, এখনো যাচ্ছে। এভাবেই
আইউব খানের মত স্বৈরাচারকেও
সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বীর হিসেবে
চিহ্নিত করেছিলেন তারা। বলেছিলেন,
‘ডন্ট ডির্স্টাব আইউব খান’।একই
ভাবে ইন্দিরা গান্ধী ও বন্দেরা
নায়েকের মত স্বৈরাচারী শাসকের
মধ্যেও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী
উপাদান দেখতে পেয়েছিলেন এই
জাতের কমিউনিস্টরা। গার্মেন্টের
শত শত শ্রমিক আগুনে
পুড়ে মরলেও একসঙ্গে দাঁড়াতে
পারেন না তারা, কিন্তু
ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে বোমা
পড়লে ধারাবাহিক কর্মসুচি দিয়ে
থাকেন।
এখনকার জনগোষ্ঠির লোকেরা মুসলিম
আত্মপরিচয়ে সন্তষ্ট থাকতে পারেনি
বিধায় বাঙ্গালী আত্মপরিচয়কে আকড়ে
ধরতে চেয়েছে। তখনই
বাংলাদেশ বিষয়ক রাজনীতি স্পষ্ট
হয়ে ওঠেছিল। বাঙ্গালী
আত্মপরিচয়কে অবলম্বন করে তারা
সমাজতন্ত্রের কথা বলেছে, ধর্ম্
নিরপেক্ষতাকে গ্রহণ করেছে, গণতন্ত্রকে
বেছে নিয়েছে। এগুলো
বামপন্থারই অবদান। অথচ
সেই বাঙ্গালী আত্মপরিচয়ের আকাঙ্খাকে
বামদের একটা গুরুত্বপূর্ন্ অংশ
উগ্রজাতীয়তাবাদ বলে প্রত্যাখ্যান করে। আমাদের মতো এসব পশ্চাৎপদ
দেশে জাতিগঠন প্রক্রিয়াকে অগ্রাহ্য
করে কখনো শ্রেণিসংগ্রাম পায়ের
নীচে জমিন পেতে পারে
না।
ক্ষমতাকেন্দ্রীক মানুষের ভোট কিছুটা
হলেও বাম ঐতিহ্যকে ধুলিস্যাৎ
করেছে বৈ কি। তবে
আমার বিবেচনায়, যে
রাজনৈতিক লাইন গ্রহণে শোষিতের
আন্দোলন দানা বাধতে পারে,
একটি মেহনতীদের রাজনৈতিক সংগ্রাম
গড়ে উঠতে পারে সেটাই
বামপন্থীরা চিহ্নিত করতে সক্ষম
হননি। রাজনৈতিক সংগ্রাম বলতে
রুটি রুজি জমি মজুরির
কথা নয়, ক্ষমতা দখলের
কথাই বোঝানো হচ্ছে। যা
নির্বাচন, সংসদ, সংবিধান বিষয়ক। সেই লড়াইকে আমার বিবেচনায়
নির্বাচনের ডামাডোলে হারানো দুস্কর। রুটি রুজি জমি মজুরি,
জাতীয় সম্পদ রক্ষা-এসব
আন্দোলনে কমিউনিস্টরা খুব
ভাল করেন। কিন্তু
ক্ষমতা দখল বিষয়ক রাজনৈতিক
সংগ্রামে তারা কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয়
দিতে সক্ষম হন না। যার কারণে ব্রিটিশ আমল
থেকেই অভিযোগ ছিল, “রোটিকে
লিয়ে কমিউনিস্ট, স্বরাজকে
লিয়ে কংগ্রেস।”
আমাদের ধারণা, সমালোচনা ও সীমাবদ্ধতা
সহ বাহাত্তর পঁচাত্তরের বাংলাদেশে
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল
জাসদের আন্দোলন, একাত্তরের
দিকে শ্রীলঙ্কায় জনতা
ভিমুক্তি প্যারামুনার আন্দোলন,
কিছুদিন আগের নেপালের পুস্প
কমল দহল প্রচন্ডের আন্দোলনের
মধ্যে সীমাবদ্ধতা সহ
সেই রাজনৈতিক লাইনের স্পন্দন
খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আমার
মতে, কমিউনিস্ট আন্দোলনের পূনরুত্থান
সম্ভব। কারণ পৃথিবীর সমাজ
বিকাশের ধারায় পুঁজিবাদই শেষ
কথা হতে পারে না। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের স্বরূপ
সন্ধান করা দরকার। এজন্য
দরকার তত্ত্বগত পূর্ণগঠন। নিজ
দেশের সকল ধারার কমিউনিস্ট
আন্দোলনের বিচ্যুতি ভুল ভ্রান্তি
ও অপরাধগুলো চিহ্নিত করা দরকার। তা স্বীকার করা দরকার। অগ্রগতিগুলো একইভাবে চিহ্নিত করা
ও ধারণ করা দরকার। জাতীয়
ও আন্তর্জাতিক সকল পর্যায়েই একই
কাজ করা দরকার। কমিউনিস্ট
রাজনীতির তত্ত্বগত পূর্ণগঠনের ধারায়,
কমিউনিস্ট আন্দোলনের পুর্ণজ্জীবন ঘটানো
সম্ভব। এটা খুব জরুরিও
বটে।
রংরুট: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও
পূর্বইউরোপের পটপরিবর্তনের হাত ধরে বর্তমানের একমেরু বিশ্ব মানুষের মৌলিক
অধিকারগুলির পক্ষে কতটা বিপদসংকুল বলে আপনি মনে করেন? নাকি
সমাজতন্ত্রের লৌহযবনিকার আড়াল উঠে যাওয়াতেই মানুষের মৌলিক অধিকার অধিকতর সুরক্ষিত
এখন?
আপানার অভিমত।
ইমাম গাজ্জালী: সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ও পূর্বইউরোপের
পটপরিবর্তনের দরকার ছিল। সমাজতন্ত্রের সেই ধারাও রংরুটে চলে গিয়েছিল। যার পতন না
ঘটলে ‘রংরুটের সমাজতন্ত্রের’ দায় বয়ে বেড়াতে হত। সেটা আরো বাজে ব্যাপার হত। এর
অর্থ এই নয় যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন মানে পুঁজিবাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে। এখন
সময় এসেছে সমাজতন্ত্রের সঠিক রুট নির্ণয়ের। একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের জন্য
বিশ্বব্যাপী লড়াই শুরু করার তত্ত্ব নির্মানের শ্রেষ্ঠ সময় এখন।
পুঁজিবাদ সাম্রাজ্যবাদের বিপদ দুইদিক থেকে, এরা শুধু
মানুষকেই শোষণ ও লুণ্ঠন করছে না, বরং পৃথিবীকে যুদ্ধের ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে,
অপরদিকে প্রাণ প্রকৃতি পরিবেশকেও হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে। একচেটিয়া পুঞ্জিভবন পৃথিবীকে হুমকির মধ্যে রেখেছে। পরিবেশবিদরা যে সব কথা
বলেন, তাতে পৃথিবীটা পুরোপুরি প্রাণির বসবাসের অযোগ্য হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যা ইতোমধ্যেই আমরা অনুভব করছি। সেই বিবেচনায় একমেরুর পৃথিবী মানুষ ও প্রাণ
প্রকৃতির জন্য হুমকি মনে করি।
রংরুট: সারা বিশ্বের রাজনৈতিক
গতিপ্রকৃতির মধ্যে দিয়েই অনেকেই ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চার মধ্যে সুকৌশলী
স্বৈরতন্ত্রের ক্রমবিকাশের অশনি সংকেত দেখছেন। এর পিছনে কি ধনতান্ত্রিক
পুঁজিবাদেরই বলিষ্ঠ হাত রয়েছে? এই প্রসঙ্গে মুসোলিনির একটি
উক্তি মনে পড়ছে,
“Fascism should more appropriately be called corporatism because it is a merger
of state and corporate power.’ -- Benito Mussolini” আপনার
অভিমত।
ইমাম গাজ্জালী: হ্যা, এটা
সঠিক কথা। করপোরেট পুঁজির চরিত্র আরো আগ্রাসী ও আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্রের
শ্রেণিনিরপেক্ষতার যতটুকু ভড়ং আছে, সেটাও আর রাখতে পারছে না। তবে, আমাদের মত দেশের
কথাই যদি বলি, কারণ এই দেশকেই মূলত চিনি। সেখানে ক্ষমতায় থাকতে হলে বিপরীত মত ও
শক্তিকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেই শাসকদের টিকে থাকতে হয়।
তা না হলে তারা নিজেরাই নীরব কিংবা সরব জনরোষে উচ্ছেদ হওয়ার আশঙ্কায় থাকেন। একারণে একদিকে শাসকদের দমন থেকে বাঁচতে যেন তেন ভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়
বিরোধীরা। আর শাসকরাও ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। আর এই মানসিকতা থেকেই
স্বৈরতন্ত্র জন্ম নেয় বলে ধারণা করি। জনতার ভিতরে ক্ষুব্ধতা যত বেশি থাকে,
তাকে দমন করার জন্য শাসকদের সেই মাত্রায় স্বৈরাচার হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে
না। অপরদিকে, দীর্ঘদিন ধরে কমিউনিস্ট ধারায় রাজনীতি করে বহু ক্লান্ত নেতা জনগণকে
নিয়ে ধারাবাহিক গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে অক্ষম হয়ে পড়েছেন। এই পরাজিতেরা আশ্রয় পেতে বুর্জোয়া
শাসকদের খাতায় নাম লিখিয়েছেন। এতে স্বৈরতন্ত্রের হালে কিছুটা হলেও
পানি পাচ্ছে পাশাপাশি স্বৈরতন্ত্র বিরোধী লড়াই সাময়িকভাবে একটু থমকে দাঁড়িয়েছে।তবে
ধকল কাটিয়ে উঠলে শিগগিরই এ পরিস্থিতি কেটে উঠতে পাবে বলে আশা করা যায়।
রংরুট: আজকে একদিকে বিশ্বায়ন ও আর
একদিকে ইনটারনেট বিপ্লবে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী
উন্নতিতে আপনার কি মনে হয়, দেশীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার যে
গণ্ডীবদ্ধতা তৈরী করে- যাতে মানুষে মানুষে অন্তত সাংস্কৃতিক ও
মানসিক একটি বিভাজন রেখার দূরত্ব রয়েই যায়; অদূর
ভবিষ্যতে মানুষ সেই দূরত্বের বিভাজন রেখা মুছে ফেলে বিশ্বমানবতায় পৌঁছাতে পারবে কি
অনেক সহজেই?
ইমাম গাজ্জালী: বিশ্বমানবতায়
পৌঁছানোর পথ কি? সেটা যদি হয় ইউরোপীয় মানুষ সাজা কিংবা তাদের শিখিয়ে দেওয়া জ্ঞান
বিজ্ঞান মুখুস্ত করা? তাদেরতো একটা নিজস্ব ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রয়েছে, তার তীরে
নৌকা ভেড়ানো? এজন্য আমাদের উত্তরাধিকার ও ঐতিহ্যকে বাধা মনে করা? আমি তা মনে করি
না। এর অর্থ ইউরোপের উন্নত জ্ঞান বিজ্ঞান গ্রহণে বিরত থাকার কথা আমি মোটেই বলছি
না। আমি মনে করি, ইউরোপ জ্ঞান বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্বে যে সমৃদ্ধি
অর্জন করেছে, তেমন ধারার একটা নবযাত্রা আমাদেরও শুরু করা দরকার। সেটা ঊনিশ শতকের
কোলকাতা কেন্দ্রীক কিংবা ষাটের দশকে পূর্ববাঙলা কেন্দ্রীক জাগরণের চেয়েও উন্নত এবং
সমৃদ্ধতর জয়যাত্রা। তার পথ খুঁজে বের করা দরকার। এজন্য আমাদের ঐতিহ্য ও
উত্তরাধিকারের কলঙ্কিত দিকগুলো প্রত্যাখ্যানের সাহস দরকার। তখনই ‘দেবে আর নেবে,
মিলবে মেলাবে’ সম্ভব। তখনই অভিন্ন বিশ্বমানবতায় পৌঁছানো কেজো কথা হবে। সেখানেই
ইন্টারনেট বিপ্লব খুব বড় সহায়ক হতে পারে।
রংরুট: আধুনিক জীবনে ভোগবাদ মানবিক মূল্যবোধের
ভিত্তিভুমিকেই টলিয়ে দিয়েছে –এমানটাই যদি কেউ ভাবেন, সেই ভাবনাকে আপনি কি ভাবে দেখেন? ভোগবাদের বিস্তারের সাথে
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে সমানুপাতিক সম্পর্ক সেকথা মাথায় রেখেও মানবিক মূল্যবোধের
অবক্ষয়ে ভোগবাদের ভুমিকাকে কি কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন আপনি?
ইমাম গাজ্জালী: অবশ্যই, ভোগবাদ সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে। এমন স্বরূপ এর আগে পৃথিবী প্রত্যক্ষ
করেনি কখনো, ভোগবাদের এই পৃথিবী মানুষকে মনে করে পণ্যের কাস্টমার। এই সংস্কৃতিটি
চারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে যে, পণ্য কিনলেই জীবন স্বার্থক। পণ্যের কাস্টমার নয়,
‘মানুষ’ পরিচয়টা বড় করে তুলতে পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থা থেকে পৃথিবীকে ফেরানো দরকার। সেই আয়োজন নতুন করে শুরু হওয়া চাই। এজন্য একুশ শতকের সমাজতন্ত্রের স্বরূপ চাই।
আমি মনে করি সেটাই ভোগবাদে লাগাম টানতে পারে, রক্ষা পাবে মানবিক মূল্যবোধ, সেই
সঙ্গে প্রাণ প্রকৃতি ও পরিবেশ। কারণ জীবনকে উদযাপন করতে ভোগবাদ অনিবার্য নয়। জীবন
ভোগের নয় আনন্দের, সুখবোধ ও স্বস্তির। এর জন্য সাংস্কৃতিক আন্দোলনের আয়োজন চাই।
তার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা চাই। আর সেই রাষ্ট্র নির্মানের দায় অনুভব করি।
রংরুট: আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নাগরিকের
মৌলিক অধিকার,
তার স্বাধীনতার পরিসর ও নাগরিক জীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ
এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকই বা কতটা ও সামঞ্জস্য বিধানই বা কি ভাবে সম্ভব? অবশ্যই এই ফারাক ও সামঞ্জস্য বিধান এক এক অঞ্চলে এক এক সমাজ ও রাষ্ট্রে এক এক
রকম হওয়ারই কথা। কিন্তু বিশ্বায়ন কি এই বিষয়ে সঠিক কোন দিশা দিতে পারবে বলে মনে হয়?
ইমাম গাজ্জালী: আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক
অধিকার ও তার স্বাধীনতার পরিসরকে আমাদের রাষ্ট্র প্রতিনিয়তই সংকুচিত করে রাখছে।
যেমন বিশ্ব মানবাধিকার বলে যে একটা কথা রয়েছে, আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনে তা চর্চা
হওয়া দুরহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। একমাত্র ক্ষমতাসীনরাই মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতে
পারেন, একই সঙ্গে তাদের মদতে সাধারণের মৌলিক অধিকারগুলো কেড়ে নেওয়ার কাজও সম্পন্ন
হয়েছে।
আমার মনে হয় না বিশ্বায়ন এ ব্যাপারে কোনো দিশা দিতে পেরেছে।
আমার চোখের সামনে তার কোনো ছিটেফোটা উদাহরণও দেখি না। নাগরিকের মৌলিক অধিকারই
বলুন, তার স্বাধীনতার পরিসরই বলুন, মানুষের আন্দোলন তেজি হয়ে উঠলেই একমাত্র তখনই
সেগুলো মানুষ চর্চা করার কিছুটা স্পেস পায়।
রংরুট:
সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিবর্তনের পথে আমরা যে
অনেক দূর এগিয়ে এসেছি, সে কথা হয়তো বলাই যায়। কিন্তু সমাজ সংসার
বিবর্তনের পথে বিগত দুই হাজার বছরের হিসাবটুকুই যদি ধরি খৃষ্টাব্দের সূত্রে- তাহলে সত্যই কতটুকু এগোলো মানুষের সমাজ সংসার সভ্যতা? আপনার
মূল্যায়ন।
ইমাম গাজ্জালী: সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মানুষ এগিয়েছে, সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব উন্নতি সমৃদ্ধি ভোগ করতে পারছে সীমিত সংখ্যক এবং নির্দিষ্ট অঞ্চলের
মানুষ। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সেই আওতার বাইরে রয়েছে। যারা একে ‘মানুষের উন্নতি’
হিসেবে নিজেদেরও সেই পর্যায়ভুক্ত মনে করে একটা আত্মতৃপ্তি পেতে পারে, এর বেশি কিছু
নয়। সভ্যতার এই উন্নতি ও সমৃদ্ধি মূলত সম্পদের পুঞ্জিভবনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফলে বৈষম্য ও বঞ্চনা বাড়ছে, বাড়ছে যুদ্ধের ঝুকি, পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে প্রাণ
প্রকৃতি পরিবেশ।
রংরুট: সবশেষে এসে শুরুর সেই
সূত্রটুকুর স্মরণে জানতে চাইবো; রংরুটই বলুন আর অগ্রগতিই বলুন
সাধারণ মানুষের জন্যে এই বিশ্ব কতটা নিরাপদ আজ, কারণ
সেইখানেই বিশ্বমানবতার নোঙরটি ফেলতে হবে না কি আমাদের?
ইমাম গাজ্জালী সাধারণ মানুষের জন্য এই পৃথিবী মোটেই নিরাপদ নয়। নিরাপদ পৃথিবী এমনি এমনি
আমাদের সামনে এসে আবির্ভূত হবে না। আসলে নিরাপদ পৃথিবী নির্মান করার ব্যাপার। শুধু
মানুষের জন্য নয়, সকল প্রাণিজগতের জন্যও নিরাপত্তা চাই। কারণ পৃথিবীটা শুধু
মানুষের একার নয়। মানুষ প্রকৃতির প্রভু নয়, বরং তার অংশ, সচেতন অংশ। এই নিরাপত্তা
শুধু সমরাস্ত্র আর সশস্ত্র বাহিনী দিয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব নয়, তার জন্য দরকার,
বন্ধুত্ব, বিশ্বাস আর ভালবাসা। তবে শর্ত থাকে যে,
শোষণমূলক ব্যবস্থা বজায় রেখে সেগুলো চর্চা করা সম্ভব নয়। এবং সেই ধারায় নিরাপদ
বিশ্ব গড়াও সম্ভব নয়। বিশ্বাসের বন্ধুত্বের আর ভালবাসার বিশ্ব গড়ার কাজে এখনই হাত
লাগানো চাই।
ইমাম গাজ্জালী: আমি ঢাকার একটি দৈনিক
পত্রিকায় কাজ করি। সেখানে নিত্যদিন ফরমায়েসি লেখা তৈরি করতে হয়। যে লেখা মূলত
পত্রিকা কর্তৃপক্ষের, আমি শুধু শব্দের পর শব্দ সাজাই। তাদের পছন্দসই বাক্য নির্মান
করি। আর লিখি মূলত ব্লগে, সেই লেখার দায় আমার। পত্রিকায় যা লিখতে পারি না, তাই লিখি ব্লগে। কিসের দায়ে পত্রিকায় লিখি? তা
বলতে পারি না, তবে সে প্রশ্নের জবাব দিতে চাইলে আমার স্ত্রী আর সন্তানদের মুখ ভেসে
ওঠে। তবে ব্লগে লিখি কিসের দায়ে? এর জবাব দেওয়ার সময় তাদের মুখের পাশাপাশি সামনে
ওঠে দাঁড়ায় বাংলাদেশ আর পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষ। ভর ছাত্রজীবন কেটেছে একটি বাম
ধারার রাজনীতিতে। তখন স্বপ্ন দেখতাম। পরবর্তি চিন্তাভাবনাতেও
অটুট সেই স্বস্তি কেড়ে নেওয়া স্বপ্ন। এখনো চিন্তা করি ও স্বপ্ন দেখি, তবে প্রথম
যৌবনের সেই নেতাদের চাপিয়ে দেওয়া পথে নয়, একদম নিজের মত করে। এখন চিন্তা করি, আর ঝেড়ে ফেলতে চাইছি চিন্তার দাসত্ব। নিজে যা ভাবি, সেই রকম
করে লিখতে চাই। চিন্তা করার ক্ষমতা যতটুকু আছে, ততটুকুই
আমার সম্বল, এছাড়া উল্ল্যেখ করার মত কোনো পরিচয় আমার নাই।
ইমাম গাজ্জালী
রংরুট সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে থেকে আপনার সহযোগিতার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ।
তোরে তো বুদ্ধীজিবীর মতো লাগতাছে।
উত্তরমুছুন