রংরুট সাক্ষাৎকার - অপরাজিতা সেন



রংরুট সাক্ষাৎকার
অপরাজিতা সেন

রংরুট: তিনি বলেছিলেন রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করো নিবাঙালির কূপমণ্ডুক মানসিকতার ছবিটা বিগত এক শতকে কতটা পাল্টিয়েছে বলে মনে হয়?

অপরাজিতা সেন: আমি বহুদিন দেশের বাইরে যদিও প্রতি বছর একবার করে কলকাতা যাই কাজেই আমার মতামত কতটা প্রাসঙ্গিক হবে জানি না তবুও বলি 'রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনিকি ঠিক কূপমণ্ডূকতা বোঝায়? বোধহয় না বরং আমার তো মনে হয় বাঙালির পৃথিবীর যে কোনো বিষয়ে একটা মতামত আছে সে প্রাসঙ্গিক হোক বা না হোক সত্তরের দশকে USIS ভাংচুর হয়েছে কতবার ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়
বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিল জিতলো যখন মনে হয়েছিল যেন সেটা বাঙালিদেরই কৃতিত্ব পাড়ায় পাড়ায় ব্রাজিলের পতাকা আর গভীর রাতে বাজি ফোটানোর আওয়াজের কথা হয়তো অনেকের মনে আছে অথচ ঘরের ঠিক বাইরে যে সব ঘটনা ঘটে - সে যত অন্যায়ই হোক - তাতে বাঙলির উৎসাহ নেই তেমন তেমন কোনো প্রতিবাদ দেখিনি কখনো এখানে আমি রাজনৈতিক মিছিলের কথা বলছি না -নাগরিক আন্দোলনের  কথা বলছি এই শেষ কবছরের কথা ছেড়েই দিলাম


রংরুট: এই প্রসঙ্গে জানতে চাইবো আপনি নিজেকে প্রথমত বাঙালি বলে মনে করেন নাকি ভারতীয়? এবং বিশেষত এখন সুদূর ফ্রান্সের নাগরিক হিসাবে আপনার কোন পরিচয়টিতে আপনি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন? মানুষের বড়ো পরিচয় কোনটি? দেশ জাতি জাতীয়তা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী পরিচয়ের উর্দ্ধে ওঠা একজন মানুষের পক্ষে কতটা সম্ভব বলে মনে হয়? এবং কতটা জরুরী?

অপরাজিতা সেন: এখানে আমার উত্তর একদম দ্ব্যর্থহীন - আমি ভারতীয় সেটাই আমার প্রথম এবং প্রধান পরিচয় একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না - বাঙালি যতই নিজেদের পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি মনে করুক না কেন, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ জানেই না পশ্চিমবঙ্গ কোথায় বরং বাংলাদেশের নাম অনেক বেশী পরিচিত, যদিও সে দেশের অধিবাসীদের যে 'বাঙালি' বলা হয় সেটাও অনেকেই জানে না তা ছাড়া আমি সত্যিই বিশ্বাস করি আমার দেশ ভারতবর্ষ

তো গেলো অন্যকে পরিচয় দেবার কথা কিন্তু আমি জানি আমি মনে প্রাণে বাঙালি বাংলা ভাষা আমার হৃদয়ের ভাষা, বাংলা সাহিত্য আমার জীবনে সব থেকে বেশি ছাপ ফেলেছে আমার সব থেকে গভীর ভাবনা বাংলায় কিন্তু এটা  শুধুই ভাষা এবং সংস্কৃতি সম্বন্ধে বলা

দীর্ঘদিন বিদেশে থেকে একটা কথা বুঝেছি - জন্মপরিচয় ভুলে যাওয়া খুবই সহজ আবার তেমনই কঠিন ছিন্নমূল মানুষ দু ভাবে বাঁচতে পারে দূর বিদেশে - নিজের পরিচিতি, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি আঁকড়ে ধরে অথবা সব জলাঞ্জলি দিয়ে - যাতে অন্য পাঁচজনের সাথে তাদের কোনো পার্থক্য না থাকে - ভাষা ব্যবহারে, আচারে বা আচরণে আমি দুরকমই দেখেছি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ একটা ভারসাম্য খুঁজে পান এই দুই প্রান্তসীমার মধ্যে আমার মতে তাঁরাই বিশ্বনাগরিক এবং এটা শুধু প্রবাসীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়কিন্তু এটা জরুরি কিনা বলা খুব কঠিন - এটা একেবারেই ব্যক্তিগত ব্যাপার

রংরুট: অবশ্যই আপনার বেড়ে ওঠার পর্বে আপনার স্বদেশ জন্মভুমি আপনার মন মনন মানসিকতায় যে প্রভাব ফেলেছিল আজকে অন্য একটি সংস্কৃতির দেশের একজন নাগরিক হিসাবে সেই প্রভাব আপনার উপর কতটা ক্রিয়াশীল এখনও? এবং এই প্রসঙ্গেই জানতে চাইবো ফ্রান্সের সমাজ সংস্কৃতির প্রভাবের সাথে আপনার ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের মেলবন্ধন বা সামঞ্জস্য সূত্রটিই বা ঠিক কি রকম আপনার কাছে।

অপরাজিতা সেন: কিছুদিন আগে আমার এক দিদিবন্ধু বলেছিলেন - এই মেয়েটা বিদেশে থাকে, কিন্তু মনটা পড়ে আছে এখানে (মানে দেশে) ঠিকই বুঝেছেন তিনি আমার গভীরতম চিন্তা ভাবনা অনুভূতি সবই আমার মাতৃভাষায় আমার সবথেকে প্রিয় বই, কবিতা, গান বেশীর ভাগই বাংলায় আমার ছেলে জন্মেছে এবং বড়ো হয়েছে ফ্রান্সে কিন্তু সে পরিষ্কার বাংলা বলে ছোটবেলায় পড়তেও পারতো - হয়তো আবার পরে নিজের ইচ্ছেয় পড়বে আমি প্রতি বছর দেশে যাই, মন খারাপ হলে এখনো নিজের পুরোনো বাড়িতে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে

কিন্তু ফ্রান্সে থেকে ফরাসি ভাষা শিখব না, ফরাসি সংস্কৃতিকে চিনবো না - এটা হতেই পারে না ফ্রান্সের সাথে আমার পরিচয় অনেক দিনের - আমি ফরাসি ভাষা শিখতে শুরু করি কলকাতায় - Alliance Française - সেখানে পরিচয় হয় ফরাসি সাহিত্য আর সিনেমার সঙ্গে; একটা নতুন জগৎ তখন খুলে গেছিলো চোখের সামনে দু বছর পড়ার পরই প্যারিসে যাবার সুযোগ মিলে গেলো রিসার্ভ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এলাম আবার পড়াশুনো করতে ফরাসি ভাষাটাকে একদম আত্মগত করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না

আস্তে আস্তে দেশটাকে ভালোও বেশে ফেললাম ফ্রান্স স্বর্গ অবশ্যই নয়, কিন্তু অন্য অনেক দেশের তুলনায় অনেক বেশী সাম্যবাদী, স্বাধীন, সংস্কারমুক্ত এখানে সমাজে নানা স্তর আছে কিন্তু তার মধ্যে ফারাক খুব বেশি না এখানে শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবায় ধনী দরিদ্র বা মধ্যবিত্তের মৌলিক অধিকার একই রকম, জাতপাতের বালাই নেই রাষ্ট্রের চোখে, সমাজের চোখে সবাই মোটামুটি সমান  ১৯৮৩ সালে যখন এখানে এসেছিলাম তখন কোনো বর্ণবৈষম্য ছিল না, অন্তত আপাতদৃষ্টিতে আজকের ফ্রান্স অনেক বদলে গেছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত্য ফ্যাসিস্টরা ক্ষমতায় আসতে পারেনি ছোটবেলা থেকে এক উদার বামপন্থী পরিবারে বড় হয়েছি, কাজেই তৎকালীন ফরাসি সমাজের সাথে যোগবন্ধন ছিল অনায়াস


রংরুট: আজকে একদিকে বিশ্বায়ন ও আর একদিকে ইনটারনেট বিপ্লবে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী উন্নতিতে আপনার কি মনে হয়, দেশীয় ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার যে গণ্ডীবদ্ধতা তৈরী করে- যাতে মানুষে মানুষে অন্তত সাংস্কৃতিক ও মানসিক একটি বিভাজন রেখার দূরত্ব রয়েই যায়; অদূর ভবিষ্যতে মানুষ সেই দূরত্বের বিভাজন রেখা মুছে ফেলে বিশ্বমানবতায় পৌঁছাতে পারবে কি অনেক সহজেই?

অপরাজিতা সেন: না, আমার তা মনে হয় না বরং আমার আশংকা যে এই ইন্টারনেট এবং নানা রকমের সোশ্যাল মিডিয়ার ফল ঠিক উল্টো হবে. ভুলে গেলে চলবে না যে এইসব মিডিয়ার একটি বড় আকর্ষণ সমমনষ্কতা, যার ফলে খুব সহজে গড়ে ওঠে বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায় এর সুফল আছেই নিশ্চয় কিন্তু কুফলও কিছু কম না এই সব গোষ্ঠীর সদস্যরা তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমানাতেই বদ্ধ থাকে যারা অন্য মত পোষণ করেন তারা অবলীলাক্রমে শত্রূ হয়ে যায় আজকের টুইটার কাদা ছোড়াছুড়ির একটা প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে হোয়াটস্যাপে প্রচার হচ্ছে ভুয়ো খবর - কেউ বিচার করার নেই এটা সারা পৃথিবী জুড়ে চলছে - কম বেশি

বিশেষ বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এই সব মাধ্যমের মূল লক্ষ্য - তার মধ্যে প্রধান হলো LGBT এবং তার পরেই ইসলাম সম্প্রদায় এই সব গোষ্ঠীর মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে যাচ্ছে বিদ্বেষ আমি এই বিষয়ে তাই বেশী নৈরাশ্যবাদী


রংরুট: বর্তমানের একমেরু বিশ্বব্যবস্থায় বিশ্বায়ন আপনার কাছে কি ভাবে প্রতিভাত হয়। বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিশ্বায়নের প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মানের কতটা উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন আপনি?

অপরাজিতা সেন: এটার উত্তর দেয়া সহজ নয় আমার পক্ষে; দেশে যখন ফিরি আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় জীবনযাপনের মান উন্নত হয়েছে অন্যান্য দেশ সম্পর্কে বলতে পারবো না তবে যখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টগুলি পড়ি, বিশেষত আফ্রিকার কিছু দেশ সম্বন্ধে, তখন মনে হয় বিশ্বায়নে ওই দেশগুলোর তেমন কোনো উন্নতি হয়নি তবে 'এক মেরু' বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে একটা প্রশ্ন না করে পারছি না - এটার মানে ঠিক কি? আমেরিকার আধিপত্য? অর্থাৎ অন্য কোনো রাষ্ট্রশক্তি একেবারে অনুপস্থিত? ইউরোপ , জাপান বা চীন কোনো শক্তি নয় ? এটা মনে হয় সঠিক মূল্যায়ন নয়


রংরুট: এইখানে আরও একটি প্রশ্ন স্বভাবতঃই উঠে আসে, আমরা যারা জীবনের অর্ধ শতাব্দী পার করে ফেলেছি, এবং বিশেষত যাদের বেড়ে ওঠার একটা প্রধানতম সময় কেটে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রণ্টের শাসনামলের প্রথম দিকেই; তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি আর ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির মধ্যে মানুষের মুক্তি ঠিক কোনটাতে বলে আপনার মনে হয়? এই বিষয়ে যদি বিস্তারিত ভাবে কিছু বলেন! যেখানে মুক্তি বলতে আমরা পুঁজির হাতে নিষ্পেযিত হওয়ার থেকে মুক্তির কথাই ধরে নিচ্ছি।

অপরাজিতা সেন: বিষয়ে আমি খুব পক্ষপাতদুষ্ট আগেই বলেছি যে আমি বড় হয়েছি কট্টর বামপন্থী আবহাওয়াতে সমাজতন্ত্র আমার কাছে আমার মাতৃভাষার মতো - আমার জীবনের বুনিয়াদ তবে অর্থনীতির ব্যাপারটা আলাদা; সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রমাণ করতে পারেনি তার কার্যকারিতা অথবা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির কোনো বিকল্প কাজেই অর্থনীতির ছাত্রী হিসেবে মনে হয় ধনতন্ত্র আছে এবং থাকবে আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস মানুষ নিজের মুক্তি নিজে খুঁজে নেয় - ওটা ঠিক কোনো তন্ত্র- ওপর নির্ভর করে না


রংরুট: আধুনিক জীবনে ভোগবাদ মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিভুমিকেই টলিয়ে দিয়েছে এমানটাই যদি কেউ ভাবেন, সেই ভাবনাকে আপনি কি ভাবে দেখেন? ভোগবাদের বিস্তারের সাথে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে সমানুপাতিক সম্পর্ক সেকথা মাথায় রেখেও মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ে ভোগবাদের ভুমিকাকে কি কোন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন আপনি?

অপরাজিতা সেন: আমি মনে করিনা আধুনিক ভোগবাদ মানুষকে অমানুষ করে তা যদি  হতো তাহলে পৃথিবীতে আর  কোনো জনহিতকর কাজ হতো না আমি অনেক সাধারণ মানুষকে চিনি যারা ঢাক ঢোল ছাড়া আর আপাতদৃষ্টিতে কোনো লাভের আশা ছাড়াই কত রকমের গঠনমূলক কাজ করছেন যাদের সাহায্য দরকার তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন শুধু ফ্রান্স বা ইউরোপে নয় - পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে  'মূল্যবোধের অবক্ষয়' কথাটায় আমার প্রবল আপত্তি আছে. মূল্যবোধ পালটে যায় এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে সেই পরিবর্তন না মেনে হা হুতাশ যারা করেন তাদের সাথে আমি একমত নই কিছু মৌলিক মূল্যবোধ অবশ্যই আছে যা চিরদিন থাকবে কিন্তু তার প্রকাশ হয়তো একরকম হয় না সেটা মেনে নিতেই হয় বলে আমার ধারণা আর ভোগবাদ নিয়ন্ত্রণ করা মানে কি? কে নিয়ন্ত্রণ করবে? আর কেনই বা করবে? ভোগী চিরকাল ছিল, এখনো আছে হয়তো অনুপাতে বেশি - অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দের কারণে কিন্তু তার জন্য এখনো পর্যন্ত্য যদি সমাজ গুঁড়িয়ে না গিয়ে থাকে তাহলে অদূর ভবিষ্যতে তা হবে এই আশংকার কোনো কারণ দেখিনা


রংরুট: আধুনিক বিশ্বব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তার স্বাধীনতার পরিসর ও নাগরিক জীবনে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ এই দুইয়ের মধ্যে ফারাকই বা কতটা ও সামঞ্জস্য বিধানই বা কি ভাবে সম্ভব? অবশ্যই এই ফারাক ও সামঞ্জস্য বিধান এক এক অঞ্চলে এক এক সমাজ ও রাষ্ট্রে এক এক রকম হওয়ারই কথা। কিন্তু বিশ্বায়ন কি এই বিষয়ে সঠিক কোন দিশা দিতে পারবে বলে মনে হয়?

অপরাজিতা সেন: হ্যাঁ অবশ্যই আমার মনে হয় বিশ্বায়নের একটা বড় ভূমিকা আছেই এখানে পৃথিবীর সব দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার আজও স্বীকৃত নয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, লিঙ্গ সমতা, নাগরিক রাজনৈতিক অধিকার মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে  হিউমান রাইটস ওয়াচ এবং আরো অনেকগুলি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এই মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে এই কাজ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে বাদ দিয়ে করা অসম্ভব আর বিশ্বায়নের জন্যই বিভিন্ন রাষ্ট্রের টিকি বাধা আছেই এই সব বিশ্বসংস্থার কাছে (ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্ক , IMF, UNDP, ...) এই সব সংস্থার বিরুদ্ধে অনেক কথাই বলা যায়, এবং বলা হয়েছে বা হচ্ছে কিন্তু আমার মনে হয় যে সমাজের নিম্নতম স্তরে যে সব মানুষ অবিরাম যুদ্ধ করে শুধু বেঁচে থাকার জন্য, তাদের বোধহয় কিছু উন্নয়ন হয়েছে


রংরুট: সাহিত্য দর্শন বিজ্ঞান প্রযুক্তির বিবর্তনের পথে আমরা যে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি, সে কথা হয়তো বলাই যায়। কিন্তু সমাজ সংসার বিবর্তনের পথে বিগত দুই হাজার বছরের হিসাবটুকুই যদি ধরি খৃষ্টাব্দের সূত্রে- তাহলে সত্যই কতটুকু এগোলো মানুষের সমাজ সংসার সভ্যতা? আপনার মূল্যায়ন।

অপরাজিতা সেন: এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে একটি পুরো প্রবন্ধ লিখতে হয় তার কারণ সমাজ বিবর্তন সরল রেখায় হয় না ইতিহাসে দেখেছি বিবর্তনের প্রথম প্রধান কারণ ধর্মবিশ্বাস বিজিতের ধর্ম বার বার সমাজকে বদলে দিয়েছে কখনো ঠেলে দিয়েছে অন্ধকারের দিকে, কখনো দিয়েছে আলোর নিশানা এগোনো বা পেছনো হিসাব করার জন্য একটা স্থির বিন্দু লাগে - সেটা বাদ দিয়ে কোনো বিশ্লেষণ সম্ভব নয় এই দু হাজার বছরের মধ্যে কোন বিন্দুটা ধরবো? আর তাছাড়া সমাজ বিবর্তন এক এক দেশে এক এক ভাবে হয়েছে কোনো সর্বজনীন প্যাটার্ন আমি অন্তত দেখতে পাই না কাজেই এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়


রংরুট: অর্ধশতাব্দী অতিক্রান্ত জীবনের অভিজ্ঞতাজাত দূরদৃষ্টিতে মানুষের ভবিষ্যত কতটা আশাপ্রদ আপনার কাছে। বিশেষত দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার সুবাদে অনেকটা বড়ো এক পৃথিবীর সংস্পর্শে আসার প্রেক্ষিতে যদি বলেন। আমাদের পক্ষ থেকে অজস্র ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মূল্যবান সময় থেকে আমাদের জন্যে এতটা সময় দেওয়ার জন্যে। আগামীতে আপনার চিন্তাভাবনার নানান অনুষঙ্গে বিশেষত আপনার লেখালিখির মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠার মনস্কামনা জানাই। আমাদের সকল পাঠক ও শুভান্যুধ্যায়ীর জন্যে যদি বিশেষ কিছু বলতে চান সবার শেষে।

অপরাজিতা সেন: আমি চূড়ান্ত আশাবাদী আমি বার বার দেখেছি শুভবুদ্ধির জয় - আমার জীবনের সংকীর্ণ পরিসরে আমি লোভ দেখেছি, অবিচার দেখেছি  - এমন কি এখনো দেখছি প্রতিদিন কিন্তু তেমনি দেখেছি প্রতিবাদ, প্রতিরোধ দেখেছি প্রয়োজনের সময় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ায় চেনা অচেনা মানুষ আমি নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেখেছি এক নতুন মূল্যবোধ যা আমাদের প্রজন্মের থেকে হয়তো আলাদা কিন্তু কোনো ভাবেই নিকৃষ্ট নয় আমি সত্যি মানুষের শুভচেতনায় বিশ্বাসী - আমার মনে হয় যে আমরা যদি আমাদের নিজেদের জীবনে দোষটা ঢেকে গুণটা দেখার চেষ্টা করি, যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, যদি গিয়ে দাঁড়াই মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে, তা হলে হয়তো আমাদের সমাজের সার্বিক মঙ্গল হবে শুভম

অপরাজিতা সেন: কলকাতায় জন্ম আর  পড়াশুনো. গোখলে মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল , প্রেসিডেন্সি কলেজ আর তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় । অর্থনীতির ছাত্রী । ১৯৮১ সালে রিসার্ভ ব্যাঙ্ক এ প্রথম চাকরি -অফিসার পদে। ১৯৮৩ সালে কলকাতা ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি আবার নতুন করে পড়াশুনো শুরু করতে . এবার MBAবিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার পর আবার বিশ্ববিদ্যালয় ২০০০ সালে - ইন্টারনেট টেকনোলজির MTech. আপাতত সরকারি চাকুরে - কাজ ফ্রান্সে বিদেশী পুঁজি আনার প্রচেষ্টা ।  ফরাসি নাগরিক লেখালেখি শুরু ওয়েবে। বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত একাধিক ছোটগল্প। ওয়েব পত্রিকা সম্পাদনা।

অপরাজিতা সেন
রংরুট সম্পাদকমণ্ডলীর পক্ষে থেকে আপনার সহযোগিতার জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন