জলজ স্বাক্ষর নাগরিকতায় দগ্ধ জীবনের ভাষ্য ~ শামশাম তাজিল


জলজ স্বাক্ষর
নাগরিকতায় দগ্ধ জীবনের ভাষ্য

শামশাম তাজিল


বিনত খসড়াপাঠের মধ্য দিয়ে তার কবিতার সঙ্গে পরিচয়। তবে সৈয়দ ওয়ালীর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলোর মাঝে যে কাব্যগ্রন্থটি আমাকে সবচে বেশি নাড়া দিয়েছে এবং যা আপন গুণে আমাকে ভাবিত করেছে, তার কবিতার প্রতি প্রতীতি জন্মিয়েছে, কবিতার মাহাত্ম্যে আলোড়িত করেছে তা জলজ স্বাক্ষর

যাপিত জীবন, কান, তবুও, অধুনা দোলক, প্রিজমের বিশ্বে নাচে অলীকের ফাঁকি, রোগ, ক্রোধান্বিত জেরার আগে দাঁড়িয়ে আছে যে জগৎ, উপসংহার, খেদ, সুতরাং, পথ-এর মত অনবদ্য সব কবিতা আছে যা চিন্তা আর আবেগকে সমানভাবে নাড়া দেয়।

কাব্যগ্রন্থটির শুরু হয়েছে হয়ে উঠবার গল্পদিয়ে। কবিতার শেষ দুই পঙক্তিতে তিনি বলছেন __

শাপ-স্বরূপ আপনি স্বর্গ থেকে নিক্ষিপ্ত হবেন নরকে এবং
ধীরে ধীরে হয়ে উঠবেন একজন ছিদ্রান্বেষী... পুরাদস্তুর...’ 

এই দুটো লাইনে কবি এই গ্রন্থে কোথায় যেতে চান তার সামান্য ইংগিত দিয়ে রেখেছেন। এবং কবিতা পড়তে পড়তে আমরা আবিষ্কার করব, হয়ে উঠবার গল্পের ভেতর দিয়েই তিনি সমাজ-রাষ্ট্রকে চিনে নিতে চান। আমরা সেই পরিচয় উন্মোচিত করব ধীরে ধীরে। আমরাও হয়ে উঠতে চাই ছিদ্রান্বেষী, পুরাদস্তুর __ আর তা কবিতার প্রয়োজনেই। কবি 'ঐকান্তিক অভিলাষে' বলছেন__

ফেলে দেয়া দ্বেষ-বাদ নিয়ে
তর্কে
উৎসাহ নেই;
ওতে যার রুচি হয় হোক
খুবলে খুবলে খাক জগৎ মলিন;
আমাদের হ্লাদ-রস সৃজনের চেষ্টা বেঁচে থাক
আয়ু পাক
দীর্ঘ...।

এই কবিতায় চিন্তার বৈপরীত্য খুব সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি বৈচিত্রে বিশ্বাসী। বেঁচে থাকতে চান আপন সৃষ্টির মগ্নতায়। আত্মমগ্ন থেকে সৃজন রস আস্বাদন করতে থাকলেও দ্বেষ-বাদে তার আগ্রহ নেই সত্য, কিন্তু দ্বেষ-বাদ দূর করতেও তার উৎসাহ চোখে পড়ে না।



তা না পড়ুক, তাতে আমাদের আগ্রহ নেই। কবিতাই আমাদের আগ্রহের জায়গা। তার কবিতা মেদহীন__ চিন্তার গাঢ়তা যতটা ততটাই শব্দের বাহুল্যবর্জিত। কবিতার বাহ্যিক আড়ম্বর আর বাড়তি কারুকাজের চেয়ে চোখে পড়ে পর্যবেক্ষণের ছাপ, অভিজ্ঞতার তীব্রতা। যাপিত জীবন, ঝোঁকটা, রোগ __ এইসব কবিতা পড়লে সহজেই তার আগ্রহের বিশ্বকে চিহ্নিত করা সম্ভব। 'তবুও' কবিতায় তিনি যখন বলেন __

আকাশে যে ধরে যায় সব
সমুদ্রে অনেকটা 
ডোবাতে ধরে আর কতটুকুই জল,
তবু হায় জীবনের সব প্রেম, মন্থন
ডোবা জলের ঘোলা জলেই করে খেলা

কবি জীবনের অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। 'তবুও' কবিতায় তার ছাপ স্পষ্ট। সেটা জরুরী নয়, যা আমাদের ভাবায় তা হল, জীবন অপরিসীম সম্ভাবনা নিয়েও আদতে ডোবার ঘোলা জলেরই মন্থন।

নাগরিক জীবনের সব কিছুর ভেতর দিয়েই কবিকে যেতে হয়। নগরের আলোর ঔজ্জ্বলের আধাঁরেও লুকিয়ে থাকে নাগরিক ক্লেদ, ব্যর্থতা, পরাজয়, অভাব, হিংসা, নষ্টামি । একদিকে সভ্যতার মুখোশ, অন্য দিকে জীবনের পরাভব। যেমন তিনি বলেন__
পেটমোটা মানিব্যাগ কথা বলে
শোনে সব অর্থমুগ্ধ বিগলিত
কান। __কান

অথবা

ইদানিং শহরে ফিরে এলেই
আমারও
বমি বমি লাগে;ছয় নয় খায়েশের
শিশ্ন
জেগে উঠে ফোঁসফোঁস করে;

এহেন রোগের হেতু শহরকে শুধাতেই
প্রগতিশীল ঠাকুরদের পিছু পিছু পশ্চিমের অন্ধকারে লুকালো সে মুখ।
__রোগ

অথবা

সঙ্গম আসন্ন হলে
খুলে পড়ে সুবেশী আনন
__ থিয়েটার

দাবীহীন একটি হৃদয়
এই শহরে, বেঁচে নেই;ফিসফিসানি নেই কোন দু জোড়া ঠোঁটের!
__নিঃস্ব শহর

নাগরিক কালচারে জেলিফিশ চালু এক মাল!
__ জেলিফিশ

এইসব কবিতার লাইনগুলো আওড়াতে আওড়াতে খুব স্পষ্ট ধরা পড়ে কবি নগরে বসবাস করলেও তাকে বিনা প্রশ্নে ছেড়ে দিতে রাজি নন। নগরের সুবিধার দিকে তাকিয়ে তিনি সত্য ভুলে যান নি। শুধু যে নগরের ক্লেদই তার চোখে পড়েছে তা নয়। নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা সামগ্রিকতা নিয়েই তার কবিতায় বর্তমান। আরও কিছু পঙক্তি দেখি যার দিকে তাকালে নগর স্পন্দিত হয়ে ওঠবে বিমুগ্ধা বেদনাসহ। কবি নগরে বসবাস করলেও নগরাচ্ছন্ন নন, তার চিন্তা পরিশীলিত, নির্মোহ ধ্যানীর মনন তার চেতনাকে প্রকাশ করে উজ্জ্বলরূপে। শহর নিয়ে তিনি কোনো দ্বিধার দেয়াল নির্মাণের প্রয়োজন বোধ করেন নি। 'ফণা' কবিতায় তার স্পষ্ট উচ্চারণ __

প্রতিটি শহর সখী
বাইরে বনানী
ভেতরে টানবাজার।


 'জলজ স্বাক্ষর' এ যত না জলের স্পর্শ পাই তার বেশি পাই নাগরিক আঘাতের, নির্মমতার, নিষ্ঠুরতার পরিচয়। কবি সব কিছু প্রকাশ করে দিতে চান। বলে দিতে চান __ এই সভ্যতা ব্যর্থ, পরাজিত। তবু মাঝে মাঝে আমরা আশান্বিত হই যখন দেখি তিনি বলেন__

মুদ্রার বিনিময়ে বানরের নাচ, অনেকেই নাচবে না
__পাঁক

এইটাই স্বপ্ন দেখার জায়গা। যেখানে বড় করে শ্বাস নেবার ফুসরত মিলবে। কবি পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সমকালের সমাজ-অর্থনীতি-রাজনীতির বাস্তবতাকে জীবনের সঙ্গে সংপৃক্ত করতে সফল হলেই তা মহাকালের অংশ হয়ে ওঠে। আমরা যে সময়ে বসবাস করছি সেখানে সহজ করে কথা বলাটাই নিরাপদ নয়। কেন নিরাপদ নয় তা ব্যাখা করতে পারলে নিশ্চয়ই আমরা নিরাপদ থাকতাম। তবু কবি সৈয়দ ওয়ালীকে বলতে শুনি__



রাষ্ট্র,বেঁচে আছো তো?
আমার শুধুই শঙ্কা হয়,শুধুই মনে হয়
লাশকাটা ঘরে তুমি মরে পড়ে আছ।

তুমি কি আদতেই গুম হয়ে গেছ উদ্ধার অসম্ভব অন্ধকারে?

রাষ্ট্র কী তার ব্যাখ্যার দরকার করে না। সেদিকে যাবোও না। কিন্তু যখন রাষ্ট্র নিজেই গুম হয়ে যাবার সম্ভাবনার ভেতর দিয়ে যায় তখন আমাদের মনে শঙ্কা জাগে। আমরা ভীত হয়ে উঠি। সে ভয় অমূলক নয়। প্রকৃত কবি ভবিষ্যৎবক্তা। কবি ওয়ালীর শঙ্কা মিথ্যা হোক,__ হয়তো তিনি নিজেও তাই চান। কবির দৃষ্টি আমাদের পথ দেখাক। রাষ্ট্র বুঝতে শিখুক তার করণীয় কী, __ সেটা মানুষের কল্যাণের পথ ধরেই। কবির মানসিক প্রবণতা, চিন্তা আর দূরদৃষ্টি হোক রাষ্ট্রের জন্য সাবধানকারী বয়ান।


কবিতা আদর্শ প্রচারের হাতিয়ার নয়। এই বোধটুকু যাদের আছে, তাদের চিন্তার সঙ্গে একমত হতে না পারলেও অসুবিধা হয় না। সৈয়দ ওয়ালী একই সঙ্গে আধুনিক (কিন্তু আধুনিকতাবাদের প্রতি তার অনাস্থা উপলব্ধি করা যায় সহজেই), আবার ঐতিহ্য সচেতন। যদিও আধুনিকতার সঙ্গে ঐতিহ্যের বিরোধ নেই, তবে আধুনিক সমাজে ঐতিহ্য লালন করার বন্দোবস্ত নেই__ সেটা স্বীকার করতে হবে। তার কারণ আছে। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থায় তা ততটুকুই সম্ভব যতটা পুঁজিবাদ অনুমোদন করে। ম্যাকলুহানের গ্লোবালাইজেশনের যুগে একান্ত নিজস্ব বলে কিছু নাই, থাকে না। মার্কেট ইকনমি সব কিছুকে বাজারে ছেড়ে দেয়। তাই ঐতিহ্য রক্ষার নামে আর্তনাদ এখানে কারো কর্ণকুহরে প্রবেশ করে না। কিন্তু তাই বলে কবির আকাঙ্ক্ষা থেমে থাকবে কেন?

চেয়ার নয় সিংহাসন তো নয়ই
খেজুর পাতার পাটি ভালো লাগে খুব,আরও
ভালো লাগে ঘাস,তার নান্দনিক কোমল ফরাস;

পাদপ্রদীপের নিখাত আলোর চেয়ে
স্নিগ্ধ ছায়া যেথা, নম্র শেফালির সাথে খুনসুটি করে
তেমন নিভৃত কোণ,তেমন অলখ জীবন ভালো লাগে 

এইসব কবিতার পঙক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ জীবনের সহজ সারল্যের কথা। কবির এই আর্তনাদ আদতে কোন কাজেই আসবে না। যদিও এই হাহাকার কবির জীবনে থাকা চাই। সৈয়দ ওয়ালী নিশ্চিতভাবেই পোস্টমর্ডানিজমের সাথে পরিচিত, কিন্তু বাঙালি কবির জীবনের শেকড় গেঁথে আছে গ্রামে। তাই তিনি আর্তনাদ করবেনই। আর এই কবির বেড়ে ওঠা জমিদার বাড়িতে__ তিনি যতই আধুনিক হোন, চাইলেও মূলকে অস্বীকার করতে পারবেন না। আমরাও কবিকে তার শব্দচয়ন আর উপমার ব্যবহার দেখে চিনে নিতে পারি।

আমরা যে বিশ্বব্যবস্থায় বসবাস করছি তাকে কিভাবে নিজেদের কাছে উপস্থাপন করব? অর্থব্যবস্থার নিয়মে বলছি, বহুজাতিক পুঁজিবাদে জীবন জেরবার। কিন্তু এই ব্যবস্থা এতই সুক্ষ্ম আর উন্নত ( উন্নত শব্দটা সাপেক্ষতা নির্ভর) একে নিজদের সামনে বিশ্লেষণ করা আর এর চরিত্র উন্মোচন করা প্রায় অসম্ভব। তাই বলে তার চরিত্র নির্ণয় করা, একে চিহ্নিত করা __ এইসব বাদ দিয়ে বসে থাকা চলবে না। এই ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যাযোগ্য করে তুলতে হবে। তবেই একে পরিবর্তনের জন্য কাজ করা সম্ভব হবে। কেউ মানতে চাই বা না চাই, প্রত্যেকের কবিতা তার চিন্তা আর অন্তর্জগৎকে উন্মোচিত করে। দ্বিধা আর ডাইলেমা আধুনিকতার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সৈয়দ ওয়ালীর কবিতাও তা থেকে মুক্ত নয়। সময়কে ধারণ করেই তার কবিতার অগ্রগামিতা। অধুনা দোলক কবিতায় তিনি বলেন__

দরজাটা খুলুন, ভয় নেই আমরা মানুষ
শ্বাপদেরা শিকারে বেরিয়েছে, আপাতত ফিরবে না

অকস্মাৎ মধ্যরাতের ভীতি উদ্রেক ডাকে
আতংকে কেঁপে ওঠে আতুর হরিণী, ভাবে-      
দরজার ওপাশ থেকে কাহারা জানাচ্ছে আহ্বান, তাহারা মানুষতো নাকি আলোকিত ভান?

কিংবা

কী করে যে বল তুমি, ‘সন্দেহ কর হে ভায়া,
চোখেরে কানেরে তুমি কিছুটা সন্দেহ কর, সন্দেহে নব্য পাবে বিশ্বাসে গত......

এমন এক হাল কর দেশের
আপন জন্মেও যেন বাপকে সন্দেহ করে, পুতে!

এইসব সন্দেহ, দ্বিধা নিয়েই আধুনিক কবির কারবার। আশব্যারি বলতেন, কবিতা বাস্তবতার প্রতিফলক নয়, কবিতাই তৈরি করে বাস্তবতা। সৈয়দ ওয়ালীর কবিতায় দেখি বাস্তবতা নিজেই রূপ পাল্টে কবিতা হয়ে যাচ্ছে। সন্দেহ থেকেই জ্ঞানের সুচনা, কিন্তু কবিতা জ্ঞান দান করে না। তবু কোনো কোনো কবিতা চিন্তাকে উস্কে দেয়, দৃষ্টিকে প্রসারিত করে। যা স্বাভাবিকভাবে ব্যক্ত করা সম্ভব নয়, তা প্রকাশ করার জন্যই কবিতার আশ্রয় নিতে হয়। কবিও বাস্তবকে আমাদের সামনে তুলে ধরার নিমিত্তে আড়াল খুঁজেন। কিন্তু তা বাস্তবতাকেই তুলে ধরে। তাই বলা যায়, সৈয়দ ওয়ালীর কবিতা অভিজ্ঞতার অভিজ্ঞতা।


ভণ্ডামি, কৃতঘ্নতা, লোভ _ এইসব আধুনিক সমাজেও স্বাভাবিক অনুসঙ্গ। 'স্বাভাবিক' শব্দে কারো দ্বিমত থাকলে সেটাই হবে অস্বাভাবিক। পুঁজিবাদ আমাদেরকে লোভী, ভণ্ড আর প্রতারক বানিয়ে ছাড়ে। তার স্বভাবধর্মের কারণেই। মুনাফা অর্জনই যেখানে মূখ্যবিবেচক, সেখানে তাই স্বাভাবিক।

পরচুলা-অরণ্য থেকে ঘুরে এসে 
মাথা ধরে গেল চিরুনির;
ইদানিং শহরে ফিরে এলেই
আমারও
বমিবমি লাগে; ছয় নয় খায়েশের
শিশ্ন
জেগে উঠে ফোঁসফোঁস করে;

এহেন রোগের হেতু শহরকে শুধাতেই
প্রগতিশীল ঠাকুরদের পিছু পিছু পশ্চিমের অন্ধকারে লুকাল সে মুখ।

এই কবিতার বিশ্লেষণ দরকার নাই। কবিতা নিজের কথা নিজেই ব্যক্ত করছে অপরিমেয় সামর্থ্য নিয়ে। আমরা শুধু সেইসব প্রগতিশীল ঠাকুরদের দিকে তাকিয়ে থাকি, যারা আত্মস্বার্থে নিজেদের রূপ পাল্টায় অহরহ।


কবি বিশেষ কোনো মতাদর্শকে লালন করেন না। নিজেকে প্রকৃতবাদী হিসেবে উপস্থাপন করেন তিনি। এই স্বীকারোক্তি রয়েছে তার কবিতাতেই। যদিও প্রকৃতবাদী চিন্তায় নতুনত্ব কিছু নাই। আর তা খুব কার্যকরী চিন্তাও নয় এই সময়ে। তবে এও সত্য, আমাদেরকে প্রকৃতি নির্ভর হয়েই বেঁচে থাকতে হয়। তাই বলেই আমরা প্রকৃতবাদী হতে বাধ্য নই। এই কবিও সে বাধ্যবাধকতা আরোপ করেন না। বরং ইহাই সার কবিতায় তিনি বলছেন __

বরং, আপনি আমাকে প্রকৃতিবাদী বলতে পারেন
মানবতাবাদী নয়;
ঈশ্বরে,কার কি বিশ্বাস জানার দরকার দেখি না
দেখি, মানুষেরা প্রকৃতিরই পার্ট,
দেখি, প্রকৃতির বাঁচা মরার পর ঠেস দিয়ে বেঁচে থাকে, পিঁপড়ে হতে ডায়নোসরের গান;

তবে ঈশ্বর প্রসঙ্গ যখন টেনে এনেছেন তখন বলতে হয়, কবির কাছে প্রকৃতিই যেন এখানে ঈশ্বরের বিকল্প হয়ে ওঠেছে! যদিও কবির এই চিন্তার সাথে প্রাসঙ্গিকভাবেই ভিন্নমত পোষণ করি। তারপর তিনি আবার বলছেন __


সাম্যবাদী নয়
আমাকে আপনি সরাসরি প্রকৃতি নামেও ডাকতে পারেন
তাতে, ইতর বিশেষ হবার শক্যতা নেই
বরং গিরিগিটি চাহনির উত্তরে
হেঁয়ালির গুপ্তে রাখা আছে অন্তহীন মিথের জগৎ। 

সাম্যবাদেও কবির অনাস্থা। কিন্তু তিনি প্রকৃতি হয়ে উঠতে চান। তাতে পাঠক হিসেবে কোন আপত্তি করি না। আমরাও কবির সঙ্গে ভ্রমণ করতে চাই অন্তহীন মিথের জগতে। সৈয়দ ওয়ালীর শক্তির জায়গা তার ভাষার ঋজুতা। চিন্তার বৈচিত্র্য। বিশেষত নগর জীবনকে এত স্পষ্ট করে খুব কম মানুষজনই ব্যাখার সামর্থ্য রাখেন। খুব কঠোর কথাও নম্র, অনুচ্চস্বরে ব্যক্ত করার সাহস খুব কম কবিরই হবে। এখানেও তার মুন্সিয়ানা চোখে পড়ে। তার জলজ স্বাক্ষর সমকালীন জীবনের গভীরব্যাপক বিশ্লেষণ ও ভাষ্য হয়ে থাকবে_ এইকথা বেশ জোরের সঙ্গে বলা যায়। একবিংশ শতাব্দীতে বসবাসের তাপ, তীব্রতা, জ্বালা, দহনকে আমাদের সামনে দৃষ্টিগ্রাহী রূপে প্রকাশ করার মধ্য দিয়ে কবি নিজেকেও প্রকাশ করেন, তাতে দেখি আগুনের উত্তাপে পুড়ে যাচ্ছে তারও মুখ। আমরাও তাতে সমান অংশীদার।

প্রকাশকঃ অনুপ্রাণন প্রকাশন।
ঢাকা বাংলাদেশ
প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০১৮
মূল্যঃ ১৫০ টাকা,

শামশাম তাজিল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন