অপরাজিতা ~ সেন কালবেলা

 

কালবেলা

 


২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকেই সারা পৃথিবীতে শুরু হয়ে গিয়েছিলো কানাকানি। চীন দেশের উহানে ধরা পড়েছে এক অচেনা ভাইরাস – বিদ্যুৎবেগে তার আক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে অধিবাসীদের মধ্যে। কিন্তু খুব সহজবোধ্য কারণেই চীনদেশের সরকার এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেননি তখন, যদিও ২০১৯ এর শেষেই এই ভাইরাসের অস্তিত্বের কথা জানা যায় - যে কারণে বিজ্ঞানীরা তার নাম দিয়েছেন কোভিড ১৯। সারা পৃথিবী হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলো যে উহান শহরে সরকারি আদেশে বন্ধ হয়ে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। উহান সারা পৃথিবী থেকে রাতারাতি বিচ্ছিন্ন।  জনবহুল ব্যস্ত শহরের রাস্তাঘাট বিলকুল ফাঁকা, সেখানে রাস্তায় টহল দিচ্ছে পুলিশ বা মিলিটারির গাড়ি, আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে ড্রোন, ধমক দিয়ে ঘরবন্দী করছে অধিবাসীদের। এবার আস্তে আস্তে যখন চীনের প্রাচীর পেরিয়ে এই নতুন ভাইরাসের মারণশক্তির কথা কিছু কিছু জানা যেতে লাগলো, ততদিনে ভাইরাস পৌঁছে গেছে দক্ষিণ কোরিয়া আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আরো কিছু দেশে। মার্চ মাসের প্রথমে আমাকে কাজে যেতে হয়েছিল ভারতবর্ষে। সেখানেও  ততদিনে পৌঁছে গেছে কোভিডের মারণবার্তা।  শোনা যাচ্ছে ভারত সরকার খুব চিন্তিত - ভারতে এই ভাইরাস একবার ঢুকলে কি অবস্থা হতে পারে তাই ভেবে।  এর মধ্যেই নাকি কিছু লোক আক্রান্ত হয়েছে। 


ফ্রান্সে ফিরে আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে খবর পেলাম ইতিমধ্যে ইটালিতে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাস- লম্বার্দিতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, তার মধ্যে সত্তরোর্ধ মানুষই বেশি।  দেখতে দেখতে প্রায় দাবানলের মত ইউরোপে ছড়িয়ে গেলো কোভিড -  ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন - ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হাসপাতালগুলো আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে,- প্রতিদিন মৃত এবং আক্রান্তদের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। ১১ই মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদ (WHO) ঘোষণা করলো যে এই ভাইরাস অতিমারীর রূপ নিয়েছে। ১৩ই মার্চ ফ্রান্সে ঘোষিত হোলো লকডাউন।  ১৬ই মার্চ থেকে সব বন্ধ - স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান, কল কারখানা, বিমান চলাচল। এক অদৃশ্য দানবের অভিশাপে এক মুহূর্তে যেন প্রস্তরীভূত হয়ে গেল সারা দেশ।  ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোন ঘোষণা করলেন জরুরি অবস্থা - গৃহবন্দী থাকবে সারা দেশ, অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া (খাদ্যদ্রব্য, ওষুধ, পেট্রল) আর সব কিছু বন্ধ। বাড়ির এক কিলোমিটারের বাইরে যাবার জন্য বিশেষ ছাড়পত্র লাগবে।  জারি হয়ে গেলো 'সোশ্যাল ডিসটেন্স ' - ন্যূনতম দু মিটার দূরত্ব রাখতে হবে সবার সাথে যে কোনো জায়গায়।  যারা পারবে তারা বাড়ি থেকে কাজ করবে। দেখা গেলো দেশের বেশ বড় একটা অংশের পক্ষে সেটা করা সম্ভব না কারণ তাদের কাজ মানুষের সঙ্গে - ঘরে বসে সে কাজ কোনোভাবেই করা যায় না। এই দলে পড়ে হোটেল, রেস্তোরাঁ বা কারখানার এসেম্বলি লাইনের কর্মীরা, পৌরসভা বা সামাজিক কর্মীরা। তবে তারা বাঁচবে কি করে ? তাই প্রথম থেকেই  ফরাসি সরকার ঘোষণা করে যে সব কর্মীরা অন্তত তাদের মাইনের ৮০% পাবে যতদিন না অবস্থা স্বাভাবিক হয়।  সেই দায় বহন করবে সরকার। ইউরোপের সব দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তখন।  তাই আমেরিকা বা ভারতবর্ষের শ্রমিক এবং চাকুরিজীবিদের মতো হাল হয়নি ইউরোপের সাধারণ মানুষের।  ফ্রান্সে বা ইউরোপের অন্যান্য দেশে জীবনযাত্রাও অচল হয়ে যায়নি একেবারে, শুধু জাহাজ আর বিমান চলাচল একদম প্রথম থেকেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল।  গণপরিবহন বরাবরই চালু ছিল, যদিও সংখ্যায় অনেক কম। চালু ছিল লরিতে করে মাল সরবরাহ।  কাজেই দিনযাপনের কোনো অসুবিধা তেমন ছিল না। শুধু একটাই সাংঘাতিক অভাব - প্রতিরক্ষামূলক মাস্ক এবং পরিচ্ছদের।  এমনকি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যও অপ্রতুল হয়ে পড়লো সবকিছু - তাঁরা এই সব ছাড়াই লড়াই করে যেতে থাকলেন ভাইরাসের সঙ্গে।  এক অসম প্রতিযোগিতা। এক সাহসী লড়াই - যেমন পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই দেখেছি আমরা। 


এদিকে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ - রাতারাতি কয়েক লক্ষ ছাত্র ছাত্রী ঘরবন্দী হয়ে পড়লো - তাদের বয়স তিন থেকে তেইশ । সরকার ঘোষণা করলেন পড়াশুনো সব চালু থাকবে। শিক্ষকরা পড়াবেন, ছাত্ররা পড়বে।  অন্তর্জালের মাধ্যমে ইস্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছে যাবে সবার ঘরে ঘরে।  এখানে বলি, ২০১৫ সাল থেকে ফ্রান্সে এক বিশাল উদ্যোগ শুরু হয়, যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ডিসটেন্স লার্নিং।‘  তার প্রধান উদ্দেশ্য - সব স্তরের ছাত্র ছাত্রী যেন অন্তর্জালের পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারে যে কোনো জায়গা থেকে। তার জন্য স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের বিতরণ করা হয়েছিল আধুনিক ট্যাবলেট।  শিক্ষকদের দেয়া হয়েছিল কম্পিউটার। তৈরী করা হয়েছিল এক বিশাল প্লাটফর্ম - যেখানে শিক্ষকরা পড়াতে পারবেন, হোমটাস্ক দিতে পারবেন, পরীক্ষা নিতে পারবেন, পরীক্ষার খাতা দেখে নম্বর দিতে পারবেন।  ছাত্ররা প্রশ্ন করতে পারবে,  শিক্ষকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারবে, পাবে সবরকম উপদেশ ও সাহায্য। কাজেই কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করে দিলেন যে এই গৃহবন্দী অবস্থায় পড়ুয়াদের কোনো ক্ষতি হবে না।


আদতে দেখা গেল ব্যাপারটা যতটা সোজা ভাবা গিয়েছিল ততটা সোজা নয়। দেখা গেলো স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষিকা এই অন্তর্জালে পড়ানোর ব্যাপারে আদৌ ওকিবহাল নন, বিশেষত যাঁরা গ্রামের স্কুলগুলিতে পড়ান।  দেখা গেলো সেখানে অন্তর্জাল ব্যবহার করাটাই অনেক ক্ষেত্রে দুরূহ।  ছাত্র ছাত্রীদের অনেকের বাড়িতে কম্পিউটার নেই, নেই অন্তর্জালে যাবার কোনো পন্থা।  শুধু গ্রামে কেন, শহরেও তাই - ছাত্রদের মধ্যে অর্থনৈতিক বিভেদ অতন্ত্য প্রকট হয়ে দেখা দিলো।  বোঝা গেলো ছাত্রগোষ্ঠীর একটা বড় অংশ এই শিক্ষাপ্রয়াস থেকে বাদ পড়ে যাবে।


তার ওপর সব বাড়িতে সবাই গৃহবন্দী।  মা বাবা বাড়ি থেকে কাজ করছেন, হয়তো বাড়িতে দু তিনটি পড়ুয়া।  অথচ কম্পিউটার হয়তো একটাই।  মুঠোফোনে ক্লাস হয়তো করা যায়, কিন্তু হোমটাস্ক করা অত সোজা না।  শিক্ষকরা এই নতুন পদ্ধতিতে পড়াতে গিয়ে অনুভব করলেন যে ক্লাসে পড়ানো আর অন্তর্জালে পড়ানো মোটেই একরকম নয়।  সংবাদসূত্রে আমরা নিয়মিত জানতে পারলাম কত কসরত করে তাদের এই নতুন যোগ্যতা অর্জন করতে হচ্ছে। সব কিছু ঠিকঠাক হতে হতে মার্চ মাস শেষ হয়ে এলো।  মোটামুটি ৭৫% ছাত্র ছাত্রীরা এই ভার্চুয়াল ক্লাসরুমগুলোতে যোগ দিতে সক্ষম হলো। পড়াশুনো চলতে থাকলো কোনোমতে। কিন্তু দেখা গেলো যে সবাই একইভাবে মনোযোগ দিতে পারছে না।  স্কুলের কঠিন রুটিনে যেটা সম্ভব সেটা বাড়িতে বসে সম্ভব হচ্ছে না - সবার মনোযোগ বা পড়াশুনোর ইচ্ছে এক রকম নয়।  উচ্চবিত্ত বা উচ্চশিক্ষিত পরিবারের বাচ্চারা মা বাবার সাহায্যে এগোতে পারছে, অন্যরা নয়।


শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রে নয়, এই অর্থনৈতিক বৈষম্য কদিনের মধ্যেই প্রকট হয়ে উঠলো এখানে।  সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবার ফলে যারা ঠিকা কাজ করছিল বা যারা অস্থায়ী চাকরিতে ছিল তাদের রুজি রুটি একদম বন্ধ হয়ে গেলো। সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও সে হাত সবার কাছে পৌঁছলো না।  যেমন হয়, কিছু লোক সবসময়েই জালের বাইরে থেকে যায়।  নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বহু বেসরকারি সংস্থান এই সময় প্রতিদিন দুবেলা এইসব হতভাগ্যদের খাবার ব্যবস্থা করেছে।  বড় বড় শহর আর শহরতলীর ছোট ছোট বাড়িগুলিতে পরিবারের সবাই ২৪ ঘন্টা বন্দী - ফলে বহু পরিবারে অশান্তি শুরু হয়ে গেলো অচিরেই।  হু হু করে বেড়ে উঠলো conjugal violence - যে সব সংস্থা এই সব অত্যাচারিতাদের সাহায্য করে তারা অনেক চেষ্টা করেও সবাইকে সাহায্য করতে সক্ষম হলো না। কিন্তু তেমনি আবার দেখলাম কত সাধারণ  লোক এগিয়ে এলো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। বিভিন্ন জায়গায় তৈরী হয়ে উঠলো সাহায্যকারীদের ছোট ছোট দল - বয়স্ক মানুষদের খোঁজ নেয়া, তাদের বাজার ঘাট করে দেয়া, যেসব স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের প্রাণের মায়া  না করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসপাতালে পড়ে আছেন তাদের বাচ্চাদের দেখাশুনা করা - এইসব কাজ স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিলো কিছু মানুষ।  তারা বেশির ভাগই নারী।  যেসব দোকান বাজার খোলা ছিল তখন সেখানেও মেয়েদের ভূমিকাই প্রধান - প্রায় ৯৫% ক্যাশিয়ার মহিলা। হাসপাতালেও নারীরাই সংখ্যাগুরু - নার্স বা অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীরা বেশির ভাগই নারী।  হঠাৎ 'সফ্ট পাওয়ার' কথাটা খুব চালু হয়ে গেল মিডিয়ার কল্যাণে।  এখন আবার প্রায় অবলুপ্ত!


১১ই মে ফ্রান্সে লকডাউন তুলে নেয়া হলো আংশিকভাবে।  সব জায়গায় প্রচুর কড়াকড়ি - সুরক্ষার কঠিন প্রোটোকল। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে লাগলো সবকিছু, খুলে গেলো হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল।  সবকিছুই খুব কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রিত কিন্তু মানুষ সব জায়গাতেই এক চরিত্রের।  গৃহবন্দী মানুষজন একেবারে আত্মহারা হয়ে ধরে নিলো যে লকডাউন উঠে গেছে অর্থাৎ করোনাও রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে দেশ থেকে।  এখানে জুলাই - অগাস্ট মাসে গরমের ছুটি - হৈ হৈ করে লোকজন রওনা দিল পাহাড়ে বা সমুদ্র তীরে ছুটি কাটানোর জন্য।  বিশেষত সমুদ্র সৈকতে বহু বারণ সত্ত্বেও ভিড় বাড়তে বেশি সময় লাগলো না।  স্বাস্থ্য দপ্তরের সতর্কীকরণ বেশির ভাগ লোকই অগ্রাহ্য করার ফলে দেশের সব জায়গায় পৌঁছে গেলো ভাইরাস।  যেসব জায়গা লক ডাউনের আগে মোটামুটি সুরক্ষিত ছিল সেখানেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়লো সংক্রমণ।


সেপ্টেম্বর মাসের দুই তারিখ থেকে সব কিছু খুলে গেছে এখানে। ছাত্র ছাত্রীরা ফিরে গেছে তাদের নিজেদের জায়গায়।  তাদের উল্লাস অপরিসীম, তাদের বয়স কম, কাজেই সব সুরক্ষা প্রোটোকলকে কাঁচকলা দেখিয়ে তারা ফুর্তি করতে ব্যস্ত।  ফল যা হবার ছিল ঠিক তাই হয়েছে।  প্যারিস, মার্সাই , লিওন , তুলুস, লিলের মত বড় বড় শহরে সংক্রমণের হার প্রতিদিন বেড়ে চলেছে।  আবার জারি হচ্ছে কারফিউ বিভিন্ন জায়গায়, আবার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বার বা রেস্তোরাঁ।  হাসপাতালে কোভিড রুগীদের সংখ্যা দ্রুতবেগে বাড়ছে - প্রায় বিপদ সীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে সব সূচক।  শুধু ফ্রান্সে না, ইউরোপের অন্য বেশ কয়েকটা দেশে পৌঁছে গেছে কোভিডের দ্বিতীয় তরঙ্গ। পুনর্মূষিক ভব! ঠিক এই ভয়টাই করেছিলেন সারা পৃথিবীর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।  ইউরোপে এখন হেমন্তকাল, এর মধ্যেই বেশ ঠান্ডা পরে গেছে অনেক জায়গায়।  আর তার সাথে বৃষ্টি।  আর কদিন পরেই রীতিমতো ঠাণ্ডা পরে যাবে।  প্রতিবছর ঠিক এইরকম সময় থেকে শুরু হয়ে যায় flu এর আক্রমণ আর তাতে মৃত্যু হয় বহু লোকের, বিশেষত বয়স্ক মানুষদের।  এবার তার সাথে যুক্ত হবে করোনা, যার না আছে কোনো প্রতিষেধক, না আছে কোনো চিকিৎসা। মানুষকে গৃহবন্দী করার ফলে করোনার সংক্রমণ যতটুকু আটকানো গেছিল তার দ্বিগুন গতিতে আবার ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাস। 


আজ ১৪ই অক্টোবর ২০২০।  আজ রাতে রাষ্ট্রপতি মাক্রোন আরো একবার জরুরী অবস্থা ঘোষণা করবেন। বড় বড় শহরগুলিতে হয়তো রাত আটটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত কারফিউ জারি হবে।  হয়তো সেই সব শহরের অধিবাসীরা আবার ফিরে যাবে আংশিক অন্তরীণে। যেসব প্রতিষ্ঠান অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়িয়েছিল তারা হয়তো আবার মুখ থুবড়ে পড়বে। ফরাসি অর্থনীতিকে খাড়া করার জন্য সরকার এখনো আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সে ও একদিন শেষ হবে। সংখ্যালঘু কিছু দায়িত্বজ্ঞানশূন্য মানুষের স্বার্থপরতার খেসারত দেবে একটা গোটা দেশের লোক, বিশেষত তরুণ সম্প্রদায়। সামনে ঘোরা রজনী।  এখনো কি মানুষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে না?


কপিরাইট অপরাজিতা সেন কর্তৃক সংরক্ষিত

৮টি মন্তব্য:

  1. কয়েকটি typo থেকে গেছে - জায়গা, ফিরে ইত্যাদি। সংশোধন করে দিলে বাধিত হবো।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. অমরা অত্যন্ত দুঃখিত। অনভিপ্রেত ভুলগুলির জন্য। আশা করি এখন সব ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে। "কিন্তু খুব সহজবোধ্য কারণেই চীনদেশের সরকার এ নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেননি তখন"- পাশ্চাত্য মিডিয়ার প্রচারিত এই মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডায় প্রভাবিত না হয়ে আসুন বরং দেখে নি, উহানের ঘটনায় ৩১শে ডিসেম্বর ২০১৯-এ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে করোনা সংক্রমণের প্রথম খবর জানানোর পর থেকে চীন কবে কখন কার কার সাথে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে ছিল।

      মুছুন
  2. জানুয়ারীর ৩ তারিখে চীন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সহ আমেরিকার স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনস্ত সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এণ্ড প্রিভেনশন সংস্থাকে করোনা সংক্রান্ত আপডেট দেওয়া শুরু করে। জানুয়ারী ৫ তারিখ চীনের আপডেটের উপর নির্ভর করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, সংস্থার সকল সদস্য দেশকে করোনা সংক্রান্ত বিদ্যমান পরিস্থিতি জানাতে শুরু করে। ৭ই জানুয়ারী চীন নির্দিষ্ট ভাবে নভেল করোনা ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে পারে। ঠিক তার পরের দিনই চীন আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এণ্ড প্রিভেনশন সংস্থার সাথে এই বিষয়ে প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে। এর পরের দিন অর্থাৎ ৯ই জানুয়ারী চীন নভেল করোনা ভাইরাস জনিত মহামারী বিষয়ে নানান তথ্য বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাথে শেয়ার করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে চীনের কৃতিত্বকে প্রশংসিত করে বলা হয়, “….preliminary identification of a novel corona virus in a short period of time is a notable achievement and demonstrate China’s increased capacity to manage new outbreaks”। এর পরের দিন ১০ই জানুয়ারী চীনের স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাথে ফোনে আলাপ করেন।

    উত্তরমুছুন
  3. ১২ই জানুয়ারী খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। চীন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হাতে করোনার জেনেটিক কোড উদ্ধার করে তুলে দিলে সংস্থা জানায়, “China shared the genetic sequence of novel corona virus on 12th January, which will be of great importance for other countries to use in developing specific diagnostic kits….”। আপনি অন্ধ মার্কীণপন্থী এবং চীন বিদ্বেষী হতেই পারেন। সেটি একান্তই আপনার প্রকৃতি। কিন্তু এই বছর ১২ই জানুয়ারী চীনের দেওয়া করোনার জেনেটিক সিকোয়েন্সের কোড যে করনো মোকাবিলায় টেস্ট কিট তৈরীর রাস্তা খুলে দিয়েছিল, সেটি কিন্তু ঘটনা। ফলে এই সত্য আর কোনভাবেই ধামাচাপা দেওয়ার উপায় নাই। ফলে এ কথাও আর বলার উপায় নাই, চীন তথ্য গোপন না করলে সময় মতো টেস্ট কিট তৈরী করে সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেত। আসল সত্য বরং ঠিক উল্টো। এবং এরপর ২০শে জানুয়ারী চীন বিশ্বকে জানিয়ে দেয় করনোরা মানুষ থেকে মানুষকে সংক্রমণের কথা। ২২শে জানুয়ারী চীনের রাষ্ট্রপ্রধান জার্মান ও ফ্রান্সের রাষ্ট্র প্রধানের সাথে এই বিষয় ফোনালাপও করেন। এবং ঠিক পরের দিনই চীন উহানে লকডাউন কার্যকর করে।

    উত্তরমুছুন
  4. এবার আসুন ২৪শে জানুয়ারী আমেরিকার রাষ্ট্রপ্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্প তার টুইটার বার্তায় ঠিক কি বলেছিলেন দেখে নেওয়া যাক। “China has been working very hard to contain the Coronavirus. The United States greatly appreciates their efforts and transparency. It will all work out well. In particular on behalf of the American people I want to thank President Xi”. তাহলে এটা পরিস্কার আমেরিকার মতো প্রধান শক্তিধর একটি রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে জানুয়ারীর ২৪ তারিখের ভিতর ট্রাম্প জেনে গিয়েছিলেন চীনের অভ্যন্তরীন পরিস্থিতি কি রকম ছিল। চীন প্রধানত কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছিল। তিনি এটিও জানতেন করোনা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানো একটি ভাইরাস। জেনে গিয়েছিলেন, করোনার মোকাবিলায় টেস্ট কিট তৈরীর জন্য করোনার জেনেটিক সিকোয়েন্সও চীন বিশ্বসহ আমেরিকাকেও জানিয়ে দিয়েছিল ১২ই জানুয়ারীতেই। তার নিজের দেশের স্বাস্থ্য দপ্তরের অধীনস্ত সিডিসি’র সাথেও চীনের কর্তৃপক্ষের নিয়মিত যোগাযোগের কথাও তার অজানা ছিল না। এবং ২৩ তারিখে উহানের লক ডাউনে যাওয়ার তথ্যও সেই সময় তার হাতেই ছিল। ফলে একটি শ্রেষ্ঠ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে সেই সময় দেশের মানুষের সুরক্ষার বন্দোবস্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক তথ্য সমূহ তার ও তার সরকারের হাতেই ছিল জানুয়ারীর ২৪ তারিখেই।

    উত্তরমুছুন
  5. ২৭শে জানুয়ারী চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান মা শিয়াওই মার্কীণ স্বাস্থ্য সচিব অ্যালেক্স অ্যাজারের সাথে ফোনে কথা বলেন। সে খব পওয়া যায়, অ্যালেক্সের পোস্ট করা টুইটার বার্তায়। “This morning I Spoke on the phone with Minister Ma Xiaowei of China regarding the novel #coronavirus outbreak. I conveyed our appreciation for China’s efforts and we discussed ways to increase the collaboration between our countries and the @who.”

    ২৮শে জানুয়ারী চীনের রাষ্ট্র প্রধান শী জিনপিং বেজিং’এ সফররত বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেকটর জেনারেলের সাথে কথা বলে জানান, এই মহামারী এক অফিশাপ। আমরা একে লুকিয়ে থাকতে দেবো না। পরের দিনই বর্ষীয়ান চীনা আধিকারিক ইয়াং জিয়েচি আমেরিকার সেক্রেটারী অফ স্টেটস-মাইক পম্পেও’র সাথেও কথা বলেন। ৩০শে জানুয়ারী বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, “In many ways China is actually setting a new standard for outbreak response. It’s not an exaggeration”.

    উত্তরমুছুন
  6. এইদিনই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার টুইট বার্তায় লেখেন, “Just received a briefing of this Coronavirus in China from all of our GREAT agencies who are also working closely with China. We will continue to monitor the ongoing developments. We have the best experts anywhere in the world, and they are on top of it 24/7”. অর্থাৎ মার্কিণ অধিপতি কার্যত স্বীকার করলেন, চীনের সাথে নিবিড় সংযোগে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে রাতদিন কাজ করে চলেছে। অর্থাৎ চীনের উদ্ভুত পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখা হচ্ছে ২৪ ঘন্টা ব্যাপি। চীনের তথ্য গোপন করার কোন তথ্যই কিন্তু জানুয়ারীর এই ৩০ তারিখ অব্দি সময়ে খুঁজে পাওয়া গেল না। বরং একটি বিষয়টি সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেল। সেটি হলো এই সময় সীমায় কার্যত গোটা মাস ব্যাপি চীন কর্তৃক নিয়মিত তথ্য সরবরাহ করার ঘটনাটি। এবং আরও জানা গেল বিশেষত আমেরিকার সাথে চীন সরাসরি যোগাযোগের ভিতর দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। ও উদ্ভুত পরিস্থিতি সম্বন্ধে নিয়মিত ভাবে আমেরিকাকে অবহিত করে গিয়ে ছিল। আরও বড় কথা, এই সকল তথ্য আমরা কিন্তু পেলাম সরাসরি আমেরিকার রাষ্ট্র প্রধান সহ অন্যান্য উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের কাছ থেকেই। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বাদ দিয়ে অন্য কোন তৃতীয় সূত্র থেকেও নয়।

    উত্তরমুছুন
  7. এই দিনই অর্থাৎ জানুয়ারীর ৩০ তারিখেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সর্বচ্চো সতর্কতা সরূপ গ্লোবাল হেল্থ এমার্জেন্সী জারি করে। যেটি বিশ্বের কোন দেশ ও সংবাদ সংস্থারই অজানা থাকার কথা নয়। এবার আমরা আরও একটি প্রয়জনীয় তথ্যের দিকে নজর দেবো। আমরা জানি জানুয়ারীর ৩ তারিখ থেকে চীন করোনা সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত আপডেট দেওয়া শুরু করেছিল। সেই দিনের পর থেকে ঠিক কত দিন বাদে অন্যান্য কয়েকটি প্রধান দেশে প্রথম করোনা রুগী ধরা পরে। এই তথ্যই প্রমাণ দেবে অন্যান্য দেশগুলি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হাতে মোটামুটি ন্যূনতম কতদিন সময় পেয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রথম করোনা রুগী ধরা পড়ে ২০শে জানুয়ারী। অর্থাৎ ১৭ দিন পর। আমেরিকায় ২১শে জানুয়ারী। অর্থাৎ ১৮ দিন পর। ফ্রান্সে ২৪শে জানুয়ারী অর্থাৎ ২১দিন পর। জার্মানিতে ২৭শে জানুয়ারী। অর্থাৎ ২৪ দিন পর। ইতালীতে ৩০শে জানুয়ারী। অর্থাৎ ২৭ দিন পর। স্পেন ব্রিটেন ও রাশিয়ায় ৩১শে জানুয়ারী অর্থাৎ ২৮ দিন পর। এবং ভারতে ৩০শে জানুয়ারী অর্থাৎ ২৭ দিন বাদে। হ্যাঁ এরপরেও এরপর তিন মাস কেটে গেলেও চীন তথ্য গোপন করে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী ছড়িযেছে এই ভুয়ো খবর প্রচার কিন্তু বন্ধ হয় নি।

    উত্তরমুছুন