রবীন্দ্রনাথ যতটা আধুনিক ততটা প্রাসঙ্গিক * কাকলি মান্না



রবীন্দ্রনাথ যতটা আধুনিক ততটা প্রাসঙ্গিক

এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
আমার  মুক্তি সর্ব জনের মনের মাঝে...

সভ্যতার  জটিলতা থেকে চাই মুক্তি, বদলে যাওয়া সময়, স্পর্শ মুহূর্ত জুড়ে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর  মুক্তি নেই যতদিন সভ্য সমাজে জানার স্পৃহা পুষে রাখবে যতদিন মানুষ তার দর্শন  সুস্থ  সমাজ গঠনে ঠিক মত ব্যবহার করতে পারবে না ততদিন তিনি অপরিহার্য এই কাল এই সময় বহমান নদীর মতন স্রোতে  ভেসেই যেতে হয় যখন সব অসহায়তা গ্লানি যন্ত্রণা কে ছাপিয়ে  যায়. তখন তিনি সামনে এসে দাঁড়ান সমস্ত ইন্দ্রিয় একটাই অনুভূতির অনুরণন হয় তিনি রবীন্দ্রনাথসমস্ত পূজার আয়োজন গন্ধ বর্ণে র যে সাযুজ্যতা তা প্রকাশের শিক্ষা ই হোলো আসল শিক্ষা

ঐ শিক্ষা পাই রবীন্দ্রনাথের কাছে যুগোপযোগী রবীন্দ্রনাথ কোন নি যুগের নন বিভিন্ন মানুষ স্বার্থের  কারণে তাঁকে বাঁধতে চাই কোনো শতাব্দীর গন্ডি তে তাঁকে আটকানো সম্ভব না পৃথিবী কে দেখতে শেখা,  মানুষকে জানা,  সহজাত ইন্দ্রের বাইরে গিয়ে  দুঃখ ভালোবাসা যন্ত্রণার  প্রকাশের মাধ্যমে  যে আদর্শের সন্ধান পাওয়া যায়  তা রবীন্দ্রনাথ কে জানলে পাওয়া যায় তিনিই শিখিয়েছেন সুন্দর  শুধু দেখতে নয় অন্তরের সৌন্দর্য বিকশিত করতে হবে যাতে সুখের গভীরতা স্পর্শ  করতে পারি,  দুঃখের পভীরতায় পৌঁছাতে  পারি অনন্ত জগতের  সঙ্গে প্রাণের স্পর্শ  পাই সে আর কেউ নন আমাদের  রবীন্দ্রনাথ তাইতো তিনি বলতে পারেন... জগতে আনন্দ যোগে আমার নিমন্ত্রণ...

সমস্ত বাঙালি জাতির জীবনে রবীন্দ্রনাথ  এমন এক সম্পদ যাকে বাদ দিয়ে বেড়ে  ওঠা,  সুস্থ  জীবনে প্রতিটা বাঁকে তিনি অপরিহার্য শেষ জীবনে হঠাৎ  ছবি আঁকতে শুরু করে তিনি সকলকে অবাক করে দেন বিশ্বের শিল্প বিশেষজ্ঞ রা বলেন চিত্র  শিল্পী হিসাবে ও তিনি আধুনিক বর্তমানে তাঁর  প্রাসঙ্গিকতা আলোচনা প্রসঙ্গে বলতে  তার মতন কল্পনা প্রবন মানুষ হয়তো ভবিষ্যৎ  দেখতে পেতেন তিনি লিখেছিলেন.. আজই হতে শত বর্ষ  পরে /কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতা খানি কৌতুহল ভরে... এই কবিতাই তাঁর  প্রাসঙ্গিকতার সবচেয়ে বড়  প্রমাণ আগামীতে এমন ভাবেই প্রতি অনুষ্ঠানে আবৃত্তি হবে তাঁর  কবিতা, প্রেমিক প্রেমিকা  খুঁজে পাবে না বলা কথাগবেষকরা খুঁজে চলবেন তাঁর  রচনার পভীরতম  অর্থ মনে হয় এইখানেই তাঁর  সার্থকতা তাকে  জানা আমাদের  ফুরাবে না  কোনদিন... এই জন্যই  তিনি নতুন হয়ে থাকবেন

রবীন্দ্রনাথের প্রতিভা থাকে অনেক স্বতন্ত্র করে তুলেছে কবির তীক্ষ্ণ বুদ্ধি তাঁর  উপন্যাস  চর্চাকে এমন এক স্তরে পৌঁছে  দিয়েছে যা আমাদের প্রতিদিনের গ্রাম  শহরের প্রত্যক্ষ দেখা সহজ সরল দরিদ্র বা স্বার্থান্ধ  মানুষের  জীবন কাহিনীর সাথে অনেকটাই মেলে না তারা শঙ্করের "ধাত্রীদেবতা",  মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়  এর "পুতুল নাচের ইতিকথা"  "পদ্মা নদীর মাঝি",  বিভূতিভূষণ এর "পথের পাঁচালী" তে অনেক বেশি মাটির গন্ধ পাওয়া যায় এসব  উপন্যাসে বর্ণিত বিষয় চিত্র নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনের  কথা বলে,  প্রান্তিক মানুষের চাওয়া  পাওয়ার কথা বলে,  জীবন সংগ্রামের কথা বলে যা অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক শরীর ও মনের টানা পোড়েনে জীবন ও জীবিকার নিয়ন্ত্রিত শিক্ষিত মধ্যবিত্ত  প্রতিভাবান কথা শিল্পীরা তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে  কল্পনাশক্তি,  আঞ্চলিক জ্ঞান,  ভাষাজ্ঞান  শরীর মনের টানাপোড়েন,  পেশা জীবিকার বৈচিত্র্য,  প্রান্তিক মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠতা  নতুন রাজনৈতিক  দর্শন  ও পরিবর্তিত সামাজিক প্রেক্ষাপট রবীন্দ্র রচনায় ততটা পাইনা যতটা ফাউ তার পরবর্তী  সাহিত্যিক দের রচনায় সাম্প্রতিক উপন্যাস সাহিত্য  বিষয় বৈচিত্র্যে জীবনের নানা মুখে শিকড় চালানোর দুঃসাহস,  নারী পুরুষের সম্পর্কের নানা রকম ফেরার  সামনে এসে এতটাই পাল্টে গেছে বা সাহিত্য জটিলতা প্রকাশকে রবীন্দ্রনাথ  পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন বলা যায়  টানাপোডেন  উপন্যাসে সমরেশ বসু যে জীবন চিত্র  এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথ  এর  কোনো উপন্যাস এ বাস্তব এত নগ্ন রূপে ধরা পরে নি প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য  সমরেশ বসু  এক জায়গায় বলেছেন "চার অধ্যায়" উপন্যাসে যে হাহাকার দেখা যায় তা আজও অনেক রাজনৈতিক  গল্প কাহিনীর ক্ষেত্রে  প্রাসঙ্গিক  মনে হয়  সাম্প্রতিক উপন্যাস সাহিত্য  বিষয় বৈচিত্র্য নারী পুরুষের সম্পর্কের নানা রকম ফেরে পাল্টে গিয়েছে প্রায় আমূল পরিবর্তনের জটিলতা প্রকাশে রবীন্দ্রনাথ  তাঁর আকর্ষণ হারিয়েছেন বর্তমান  সময় ক্রমশ  পরিবর্তিত,  এই পরিবর্তনের অন্যতম ধারক ও বাহক অর্থনৈতিক অবস্থা ও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়ন শীল দেশ রূপে আমরা এখোনো যথেষ্ট পিছনে আছি অধিকাংশ রাজ্য  অনুন্নত  শিক্ষা ও পরিকাঠামোর চাকায় পিষ্ট দরিদ্র  দূরীকরণে বা প্রান্তিক মানুষের সমস্যার কথা তার লেখায় তেমন ভাবে দেখা যায় না "শেষের কবিতা"  যতই বেশি শৌখিন মনে হোক সমরেশ বসু  মনে করেছেন আসলে আখ্যানটি তথাকথিত রবীন্দ্র  বিরোধীদ‌র সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের লড়াইয়ের রূপক খুব সম্ভবত প্রেমের অমরত্বকে দৈনন্দিন জীবনের প্রথাগত সম্পর্ক থেকে আলাদা করার জন্য  যে রুচি বা কালচার দরকার সেটা বোঝানোর জন্য ও এই কাহিনীর অবতারনা বুদ্ধদেব বসু বলেছিলেন,  শেষের কবিতা  এমন এক উপন্যাস যাতে গদ্যের চেয়ে কাব্য গুণ  বেশি রয়েছে এটা উপন্যাস এর মতন দীর্ঘ  নয়,  সর্বোপরি এটা কোন পর্যায়ে ফেলা যায় তা নিয়ে সমস্ত বিশ্বের সাহিত্য  সমালোচক  দের মধ্যে  দ্বন্দ্ব আছে

বিশ্বের সর্ব কালের অনির্বচনীয়  সৃষ্টি রবীন্দ্রনাথের গান সংগীত সৃষ্টি র ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথ  এর মতন গীতি কাব্য আবিস্কৃত হয় নি আর হবে বলে মনে হয় না  কারণ বর্তমানেক সমাজ ও সর্ব স্তরের মানুষকে একইভাবে আলোডিত করে তার গান রবীন্দ্র সুরের গঠন এমন এক স্বপ্নের মায়া জ্বাল বিস্তার করতে পারে যে তাতো মুগ্ধ হতে শিক্ষার দরকার হয় না রবীন্দ্র  গীতি কাব্য হোল গানের প্রাণ সেই বাণী এমন এক চিত্র  কল্প রচনা করে তাতে আবেগ সঞ্চার করে সুর সুকুমার শিল্পের রস বোধের  জন্য সমঝদারি শিক্ষিত চিন্তার পশ্চাৎ  পট ই দিতে পারে রবীন্দ্রনাথ এর গানও তাই স্বয়ং সম্পূর্ণ কোন উৎসব কোন শ্রদ্ধা জ্ঞাপন কোন বিরহের অনুরণন তাঁর  গান ছাড়া সম্ভব  নয় সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজ পরিবর্তনের  যে পাটভাঙা রূপ আমরা লক্ষ্য  করছি তাতে রবীন্দ্র  সংগীত  অপরিহার্য বলতে হয় " বড়  বিষ্ময় লাগে হেরিটেজ তোমারে".. তিনি বিশ্বে অপার  অনেকেই বলেন রবীন্দ্রনাথ  এর গানের ভাঙ্গন এসেছে... এটা একটা ফাঁকা  আওয়াজ আর এই যে  আপাত ভাঙ্গন তা ও গ্রহণীয়তার ই নামান্তর এই গ্রহন ই আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে তাঁর  গানের কথা  সুরের মাধুর্য  যেভাবে জীবন ছুঁয়ে আছে আর কোন কালে কোন সৃষ্টি এত প্রভাবশালি হবে বলে আশা ও করা যায় না ধমনী অলি গলি বেয়ে যে জীবন স্ফুরন তার গতি রোধ করে কার সাধ্য রবীন্দ্রনাথ  এর  সংগীত গ্রহনের অবসান হয়নি আর হবেও না  তাঁর  সংগীতের নান্দনিকতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ

জীবনস্মৃতি  শুধু জীবন কাহিনী  নয় এক গভীর দর্শন সময়ের  স্রোতে জীবন পরিবর্তিত হয়  কিন্তু জীবন দেখার যে অন্তর চোখ বা দৃষ্টি তা সকলের থাকে না তিনি তাঁর  দৃষ্টি  তে ঈশ্বর কে দেখতেন জীবনকে দেখা সে কেবল তার নির্ভার সুন্দর কেই দেখে যাওয়া নয় রূঢ কেও দেখা,  সর্বনাশ  কেও দেখা,  এমনকি মৃত্যু কেও দেখা কিন্তু দেখার এই সমগ্রতার আগে যে প্রস্তুত  হয়েছে সে সইতে পারে না সেই গভীর দেখাকে দেখার জন্য  মব তৈরী করতে বলেছেন মনে পড়ে যায় সুদর্শনার কথা... দেখার  জন্য  কত বিফলতা কত ঢাকাঢাকি এলেন অন্ধকার দেখে এক আলোর যাত্রা ১৯৪১ খ্রীষ্টাব্দে  ১৩ ই মে তিনি রূপনারায়ণের কূলে কবিতা রচনা করেন এর কিছু দিন পরই তাঁর  মৃত্যু হয় এই কবিতায় স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে...চিনিলাম আপনারে /আঘাতে আঘাতে /বেদনায় বেদনায় /সত্য  যে  কঠিন /কঠিনেরে ভালবেসেছিলাম... আরো লিখেছেন আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এ  জীবন... একথা এর মদ  লুকিয়ে  থাকা গূঢ সত্য  কী তবে  তিনি শেষ জীবনে এসে উপলব্ধি করেছিলেন?  দুঃখের তপস্যা জেনেও তিনি কঠিন কেই ভালোবাসতে বলেছেন বাস্তব জীবনের  দুঃখ কষ্টের মধ্যে দিয়ে ই প্রকৃত জীবন খুঁজে পাওয়া  সম্ভব  প্রকৃত সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াকরিয়ে দেয় তাঁর  রচনা  যেমন তাঁকে চিনতে শেখায় তেমনি আমাদের ও আঘাতক্ সহ্য করতে শেখায় তিনি জীবনে ষত আঘাত পেয়েছেন তত ভালো সাহিত্য  সৃষ্টি করেছেন ছোট থেকে বিভিন্ন মৃত্যু  তাঁকে  কঠিন হতে শেখায় কঠিন কে না জানলে অনেক সত্য  কে অস্বীকার করতে হয় তিনি বার বার মানসিক সংস্কৃতির উন্নতির কথা বলেছেন আমরাই তাঁকে ঠাকুরের আসনে বসিয়ে পূজো অর্চনা র ব্যবস্থা  করেছি ১৯১১ সালে অচলায়তন  ও ডাকঘর লেখেন অচলায়তন    প্রথা ভাঙার কথা রুখে দাঁড়াবার কথা বলেছেন  রবীন্দ্রনাথ  তাঁর আত্মপরিচয় গ্রন্থে  লিখেছিলেন ... আত্মার ধর্ম যে কী তা আজও আমি সম্পূর্ণ ও সুস্পষ্ট  বুঝতে পারিনি অনুশাসন আকারে তত্ত্ব আকারে কোনো পুঁথি  তে লেখা ধর্ম সে তো নয় এই ধর্ম কে জীবনের মর্মকোষ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দাঁড় করিয়ে দেখা ও জানা আমার পক্ষে  অসম্ভব এক মুক্ত জীবনের প্রতীক পঞ্চক সংস্কার বদ্ধ  অযত্নে আঘাত করার প্রত্যয় ও অঙ্গীকার... যা আজকের সমাজে ও ভীষন ভাবে দরকার প্রচলিত  প্রথা  ভেঙে সত্যের প্রতিষ্ঠা করতে এক গুরুর প্রয়োজন কঠোর নিয়ম তান্ত্রিকতা ভেঙে  ঝড়ের  মতন বিজয় কেতন উড়িয়ে গুরুর আবির্ভাব বর্তমান  সময়েও সমাজের  উন্নয়নের জন্য এক প্রকৃত গুরুর প্রযোজন অচলায়তন পুঁথি  নির্ভর  সংস্কার সর্বস্ব  নিয়মের বাড়াবাড়ি তে আবদ্ধ আনন্দহীন জীবন দর্শনের রূপক যা আসলে স্থবিরতার ই নামান্তর

তিনি মনে করতেন হিন্দু মুসলমান  এর মধ্যে  বিরোধ সংগঠিত হয় মুলত অশিক্ষা  থেকে উপর ওয়ালা মার খেয়ে নিচু শ্রেনীর মানুষ জীবন যাত্রার  জন্য সব কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ  সভ্যতার পিলসুজ,  মাথায় প্রদীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে,  উপরের সবাই আলো পায়,  তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে  পরে শ্রমজীবী মানুষের জন্য এই দরদ "ওরা কাজ করে" কবিতায় আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে এই কবিতা তখন যতটা জীবন্ত ছিল এত বছর পরও একই রকম ভাবে প্রাসঙ্গিক সমস্ত পৃথিবী  ঘুরে তিনি অসংখ্য মানব সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছেন একই সঙ্গে যে জাগ্রত মানব শক্তি শিক্ষা শিল্প কৃষি ও ধর্ম বিপ্লব ঘটতে পারে তা তিনি উপলব্ধি করেছিলেন তার সাথে যুক্ত হয়েছিল নিজের দেশের পরাধীন চিত্ত অসহায়তার বেদনা তবুও তিনি আশাবাদী ছিলেন সহজেই বলতে পেরেছিলেন মানুষের দেবতাকে  স্বীকার করে প্রণাম  করে যাব,  আমার জীবন দেবতা ২মাকে সেই শিক্ষা দিয়েছেন শেষ জন্মদিনে লিখেছিলেন... ঐ  মহামানব আসে /দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্ত্য  ধূলির ঘাসে ঘাসে তিনি বলে গেছেন সামাজিক বিভেদ মেটাতে সমগ্র জাতি ধর্মের উর্ধে উঠে ভাবতে হবে অসম্ভব ভাবে বর্তমান  রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একথা প্রাসঙ্গিক তা বলাই বাহুল্য ঐ কথা তখন ষতটা উচিত ছিল  আজও ততটাই বাস্তব চিরকাল  মানল মহিমা, শ্রম শক্তি নারী মুক্তি ও নারী সত্ত্বার আলাদা মর্যাদা গুরুত্ব পেয়েছে তাঁর  কাছে

রবীন্দ্রনাথ  হঠাৎ  উপলব্ধি করেন ভাষার  ক্ষমতা সীমিত এমন অনেক কিছু আছে অনুভব আছে যা ভাষার গন্ডি র বাইরে তাই তাকে ধরতে কিনি রেখা রঙের ব্যবহার শুরু করেন এক অধরাকে ধরা যায় মূর্ত করে তোলা যেতে পারে আঁকার মাধ্যমে ছবি আঁকার  কোন শিক্ষা না থাকলেও তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত অসামান্য পর্যবেক্ষণ শক্তি দিয়ে বিশ্বকে দেখতেন রূপ জগতের সঙ্গে পরিচিত হতেন বিশ্ব জগতের  স্থূল ও সূক্ষ্ম,  সৃষ্টি ও প্রলয় যে একই ছন্দে বাঁধা সেই ছন্দকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ  যা বর্তমানে  অনেক সাহিত্য  অনুরাগী  র গবেষনার বিষয়

রবীন্দ্রনাথ  এর  প্রাসঙ্গিকতা  বা প্রয়োজনীয়তা  বোঝার জন্য  বা তিনি কতটা অপরিহার্য আমাদের জীবনে তা জানতে অবশ্যই  তাঁকে পড়তে হবে.. বারে বারে পড়তে হবে তবুও তিনি ধরা ছোঁয়া র বাইরে থেকে যান শুধু কাব্য নাটক উপন্যাস প্রবন্ধ  নয়,  তিনি যে ভাব আদর্শ মত চিন্তা দর্শনের  কথা লিখেছেন  তা পড়তে  হবে তবে তা বুঝে ফেলা এক জীবনের কাজ  নয় তাঁর ব্যবহৃত  প্রতি  শব্দের যে গূঢ অর্থ ... লুকিয়ে থাকা আঙ্গিক বুঝতে গভীর মনন প্রয়োজন দীর্ঘ সাধনায় দেখার দৃষ্টিতে বোধের গভীরে তিনি যদি ধরা দেন তবেই কিছুটা মূল্যায়ন সম্ভব এক উচ্চ স্থানে তিনি রয়েছেন.. স্পর্শ করতে হলেও অধ্যায়ন  দরকার দেখা যখন দৃষ্টি হয়ে যায় বোধের গভীরে লুকোনো জানবার স্পৃহা জেগে ওঠে ঠিক তখনই পুরো সমাজের মধ্যে  ভিন্ন ভিন্ন  রূপে তাঁকে প্রত্যক্ষ করি মৃত্যুর মতন সত্য  আর নেই.. তাই মৃত্যু র দিক থেকে দেখলে জীবন সুন্দর সত্য  লাগে তাই আরো আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে করে বিভিন্ন উন্নয়ন ভাবনা ও সরকারি  কর্ম কাণ্ডে  রবীন্দ্রনাথ  কে খুঁজে পাওয়া  যায়  না .. দিন দিন পাঠ্য পুস্তকে ও তত দেখা যায় না তবে ভবিষ্যতে নিশ্চই আরো বেশি করে খুঁজে পাব বইয়ের পাতায় যেসকল  মানুষ রবীন্দ্রনাথ  পড়েন চর্চা করেন তাঁরা সরাসরি সান্তনা পেতে পারেন,  আনন্দ পেতে পারেন,  নৈতিক জাগতিক মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে পারেন রবীন্দ্রনাথ  ভীষন ভাবে সমসাময়িক প্রাসঙ্গিক  এক উজ্জ্বল নক্ষত্র যার আভা কখোনো ম্লান হয় না   এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার সেই   সৃষ্টি ই তার সময় কে উত্তীর্ণ করতে পারে যদি পরবর্তী  সময়ে   জীবনে তার প্রভাব পড়ে যে সৃষ্টি সময় কাল উত্তীর্ণ হয়ে  সমস্ত কালের মানুষের কাছে সমসাময়িক মনে হয় তাহাই আধুনিক সেদিক থেকে বিচার করলে রবীন্দ্রনাথ  যতটা আধুনিক ততটা প্রাসঙ্গিক

কপিরাইট কাকলি মান্না কর্তৃক সংরক্ষিত


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন