বঙ্গ রাজনীতি * রওশন আরা বেগম

রাষ্ট্রের থেকে যে কিছু পাওয়ার আছে এই বোধটি মানুষের মধ্যে আজও জাগেনি। আর অধিকার বোধ সেটি তো আরেক ধাপ উপরে। তেমনি হাসিনাও ঠিক এই ভাবেই এসেছে। তারা বাবা একটা দেশ দিয়েছিলেন। দেশ বাসী তা কোন দিনও ভুলেনি। শেখ মুজিব দেশ দিয়েছেন তবে দেশে সঠিক নেতৃত্ব বা সুশাসন তিনি কখনো দেখাতে পারেন নি। এই ব্যর্থতাকে মুজিব ভক্তরা মানতে নারাজ। তাকে যে ভাবে মারা হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কজনক একটা অধ্যায়। এর প্রতিদান হিসাবে বাংলার মানুষ হাসিনাকে বার বার ক্ষমতায় এনেছে। আমরা পেয়েছি বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবের বংশের ধারা। একটা দেশের প্রধান মন্ত্রী কেমন হবেন তা নির্ভর করে গোটা দেশের মানুষের চরি্ত্রের উপর। ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~


বঙ্গ রাজনীতি
রওশন আরা বেগম

বঙ্গের রাজনীতিতে আজ এত নারী যুক্ত হয়েছে দেখলে মনে হতে পারে যে এই মাটি নারীর প্রতি খুব উদার। আসলে এখানে নারীর প্রতি করুণা, সস্তা আবেগ দেখানো হয়েছে। এই মাটির মানুষ নারীর প্রতি ভয়াবহ বিদ্বেষ পোষণ করে। এই নারী বিদ্বেষী সমাজ কি ভাবে নারী প্রধানের শাসন মেনে নিলো? কেন এই রাজনীতির কর্ণধার হয়েগেলেন নারীরা?

মজার ব্যাপার হলো এরা সবাই কেউ না কেউর হাত ধরে এখানে এসেছেন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কৌশলী কর্মকান্ড তাদের সাইন বোর্ড হিসাবে সামনে এনে দিয়ে শুধু পুরুষের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। আর এই কাজটি করে দিয়েছেন আমাদের মাথা মোটা পুরুষেরা যারা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে রাজনীতির গন্ধ খুজে পান, সুন্দরী নারীর মধ্যে সব প্রতিভা খুজে পান। আমরা নারীরা সমাজের অনেক পিছনের সারিতে আছি। সামনে যেতে ভয় পাই আর যাদের যাবার দক্ষতা ছিল তারা আজ কিছু ভোগের মধ্যে ডুবে জীবনটা উপভোগ করে নিচ্ছে।

নারীরা লাঞ্চিত হয়েছে তা তাদের গায়ে কোন আঁচড়ই লাগে না। কারণ তারা তো ভাল আছে। স্বামী তাকে রূপের মূল্য দিয়ে শোকেসে সাজিয়ে সুখেই রেখেছে। এর থেকে বেশী কিছু তো এই নারীর চাওয়ার নেই। একটা স্বচ্ছলতা, স্বামী সংসারই তার গন্তব্য। এর বাইরে তাকে যেতে নেই। সমাজপতিরা তাকে বেয়াদপ বজ্জাত নারীতে ভূষিত করবে। কি দরকার এই সব আন্দোলন করার। তাই সমাজে কোথায় কি ঘটেছে এই নারীর ভাবনায় নেই। রাস্তা ঘাটে নারীর কাপড় খুলে ফেলা হয়েছে তাতে কি হয়েছে, আমার তো কিছু হয় নি। এই ক্ষুদ্র বোধ নারীকে ভবিষ্যতে আরো ক্ষুদ্র জায়গায় নিয়ে একটা অদ্ভুত প্রাণীতে পরিনত করবে।

এই নারী আজো অবিচারের বিরুদ্ধে দাড়াতে শেখেনি। তারা যা শিখেছে তা তাদের কাজ কর্মে ফুটে উঠেছে। খালেদা জিয়া ছিলেন দুই সন্তানের জননী এবং সুন্দরী সর্ব সময় মেকাপ পরিহি্তা হাউজ ওয়াইফ। রাষ্ট্র পরিচালনার মত কোন যোগ্যতা আছে কি না তা নিয়ে মানুষ ভাবে না। এরা আবেগের হাতে বন্দি। তার যোগ্যতা কি? রাষ্ট্র প্রধান জিয়ার স্ত্রী। এটাই তার বড় পরিচয় ছিল, ভাগ্য খুলে যাওয়ার দরজা। জিয়ার মৃত্যুর পর যারা তাকে সামনের কাতারে এনে দিয়েছিল তারা জানতো এই নারীকে সামনে রেখে ভাল লুটপাটের রাজনীতি করা যাবে, ধর্মকে এনে জঙ্গিবাদের বাম্পার ফলন দেওয়া যাবে এই মাটিতে। এটা সাইন্ড বোর্ড হিসাবে ভালই কাজে লাগবে। এই কাজে তারা সফলও হয়েছেন। বাংলাদেশের মানুষের আবেগ তখন এই নারীর প্রতি উতাল ঢেউ আকারে পড়েছিল। তাই তিনি কয়েক বার প্রধান মন্ত্রীর পদটি খুব সহজেই জয় করেন। স্বামী হারা এই নারীকে বাংলাদেশের মানুষ অনেক সম্মান ইজ্জেত দিয়েছে। মানুষ কি পেয়েছে?

রাষ্ট্রের কাছে তাদের আর কিছু পাওয়ার নেই। জনগণ দিতে জানে কিন্তু রাষ্ট্রের থেকে কিছু আদায় করতে পারে না। এই প্রসঙ্গে ব্যক্তিগত কিছু কথা বলি। আমার বাবা দেখতে ছিলেন বৃটিশদের মত। মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃটিশ ভেবে তাকে আটকও করা হয়েছিল। আমাদের ভাই বোনের অনেকেই সেই চেহারা পেয়েছে। তবে ভাগ্যিস আমি এর মধ্যে পড়ি নাই। এখন দ্বিতীয় জেনারেশনে আমার দ্বিতীয় ভাইয়ের মেয়েটি সেই চেহারা পেয়েছে। সে তার বাবা মত হয়েছে। আর আমার ভাইটিও আমার বাবার মতই দেখতে। এখন দেখতে পেলাম বাসায় কেউ আসলেই আমার ভাইজি ডাকে। কারণ কি জানেন? তার মত সুন্দরীকে দেখলেই নাকি খুব ভাল লাগে। গ্রামের নারী পুরুষের কাছে গেলে বোঝা যায় যে কেন খালেদা জিয়াকে ভোট দেওয়া হয়। তাকে দেখলেই নাকি খুব ভাল লাগে, মায়া জাগে। খালেদা জিয়াকে সবাই ভোট দিয়েছিল তার সুন্দর ইনোসেন্ট মার্কা চেহারা দেখে। তাকে সামনের কাতারে রাখলে দেশবাসী খুশী থাকবে। তাকে দিয়ে দেশ চালানো যাবে কি না তা কেউ কখনো ভাবে নি।

রাষ্ট্রের থেকে যে কিছু পাওয়ার আছে এই বোধটি মানুষের মধ্যে আজও জাগেনি। আর অধিকার বোধ সেটি তো আরেক ধাপ উপরে। তেমনি হাসিনাও ঠিক এই ভাবেই এসেছে। তারা বাবা একটা দেশ দিয়েছিলেন। দেশ বাসী তা কোন দিনও ভুলেনি। শেখ মুজিব দেশ দিয়েছেন তবে দেশে সঠিক নেতৃত্ব বা সুশাসন তিনি কখনো দেখাতে পারেন নি। এই ব্যর্থতাকে মুজিব ভক্তরা মানতে নারাজ। তাকে যে ভাবে মারা হয়েছে তা বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কজনক একটা অধ্যায়। এর প্রতিদান হিসাবে বাংলার মানুষ হাসিনাকে বার বার ক্ষমতায় এনেছে। আমরা পেয়েছি বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবের বংশের ধারা।

একটা দেশের প্রধান মন্ত্রী কেমন হবেন তা নির্ভর করে গোটা দেশের মানুষের চরি্ত্রের উপর। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলতে এখন এই আওয়ামী সরকারের নিজস্ব ব্যবসার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আর বাইরে আর কোন দেশ প্রেম থাকতে নেই। তাই সরকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই ব্যবসা খুব জমজমাট। শুধু হাসি ফোটে না সাধারণ মানুষের মুখেএখানে তনুরা ধর্ষিত হয়, এখানে লেখকদের মারা হয়, এখানে শ্রমিকদের মাটি চাপা দেওয়া, এখানে ধর্মের সমালোচনাকারীদের বাঁচার অধিকার নেই, এখানে সংখ্যা লঘুদের হত্যা করা হয়, এখানে উপজাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে মানা হয় না। এর নেই কোন প্রতিকার, নেই কোন বিচার তবে প্রধান মন্ত্রীর ছেলে হত্যার ষড়যন্ত্রের বিচার ঠিক সময় মতই হবে। তাই হচ্ছে। তবে বিচার পাই না আমরা সাধারণ মানুষেরা।

সহজ সরল শিক্ষিত ভদ্রলোকেরা সেখানে রাজনীতি করতে পারে না। কারণ এই রাজনীতির সাথে ধর্ম জড়িত, এই রাজনীতির সাথে ষড়যন্ত্র জড়িত, এই রাজনীতির সাথে জনগণের আবেগ জড়িত, এই রাজনীতির সাথে বংশগত উত্তারাধিকার জড়িত। শুধু নেই সেখানে কোন মানবিকতার চর্চা, মানব উন্নয়ন শিক্ষা। তবে ব্যক্তির অর্থনৈতিক উন্নয়ন আছে তবে তা বেশীর ভাগই রাজনীতির সাথে সম্পর্ক যুক্ত। এই ধরনের রাজনীতির হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্ব উন্নয়নের কাতারে কি ভাবে দাঁড়াবে? ভাববার সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে। তাই এখন শুরু হয়েছে তর্ক নানা তর্ক। ভাস্কর্য শিল্পকে এই শতাব্দীতে গুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় প্রধান মন্ত্রী স্বয়ং। ওদিকে ভারতে চলছে গো মাংস আর আজান নিয়ে হুস্তুল কান্ড। জ্ঞান বিজ্ঞানের আমাদের যাত্রা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে? আমরা শিল্প চিনি না, সাহিত্য বুঝিনা, সংস্কৃতি কি তা জানি না, ধর্ম কি তাও জানিনা। এই সব অজ্ঞতা নিয়ে আমরা ইতিহাসের পাতায় কোন জায়গায় স্থান পাবো? সময় বলে দেবে এর উত্তর।
রওশোন আরা বেহুম