যাই যাই শীতের আমেজে জমে
উঠেছে ৪৩তম আন্তর্জাতিক কলিকাতা পুস্তকমেলা। মরশুমটা উৎসবের। সেই উৎসবের আরও একটি
পার্বণ এই বইমেলা। এবং গ্রন্থ প্রকাশ। যদিও গ্রন্থ প্রকাশের বেশির ভাগটাই দখলে
নিয়ে রেখেছে স্বনির্বাচিত কবিতার বই। প্রতিদিনই প্রকাশিত হচ্ছে প্রচুর কবিতার বই।
কবিতা সংকলনের এই সুনামিতে সকলেরই হাসি হাসি মুখের ছবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কের নানান
সাইট জুড়ে। আনন্দ আর তৃপ্তির পরিবেশে জমে উঠেছে উৎসব। সেই উৎসবের মধ্যেই প্রকাশিত
হচ্ছে রংরুট দ্বিতীয় বর্ষের চতুর্থ তথা অন্তিম সংখ্যা মাঘ ১৪২৫। কিন্তু অত্যন্ত
দুঃখের সাথেই জানাতে বাধ্য হচ্ছি এই সংখ্যায় আমরা লেখকদের উৎসাহ আগ্রহ থেকে
সম্পূ্র্ণ বঞ্চিত হয়েছি। হয়তো সকলেই এইসময় বইমেলা নিয়ে অতীব ব্যস্ত বলেই সময় মতো
লেখা দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন নি। অনেকেরই এই সময় বই প্রকাশের ব্যস্ততা রয়েছে।
অনেকেই বইমেলা নিয়েও ব্যস্ত। ফলত সময় মতো লেখা না পাওয়ায় রংরুটের বর্তমান সংখ্যাটি
ক্ষীণ কলেবরেই প্রকাশিত করতে বাধ্য হলাম আমরা।
গঙ্গা: পবিত্র অথবা অপবিত্রের গল্পগাথা : অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
গঙ্গা:
পবিত্র অথবা অপবিত্রের গল্পগাথা
অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী
পর্যন্ত হিন্দু জনজীবন আন্দোলিত হয়ে ওঠে গঙ্গার নাম-মাহাত্ম্যে, গঙ্গা মাহাত্ম্যে। ভারত নদীমাতৃক দেশ। ভারতের বিভিন্ন নদীকে
কেন্দ্র করে নগর, তীর্থস্থান, বাণিজ্যকেন্দ্র প্রভৃতি সৃষ্টি হয়েছে। তাই ঋগবেদ থেকে শুরু
করে সংস্কৃত সাহিত্যগুলিতে বিভিন্ন নদনদীর গুণকীর্তন শোনা যায়। ভারতীয় সমাজের
প্রাণসঞ্চার ঘটিয়েছে নদনদী। প্রাচীন নদনদীর সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান নদনদীর অবস্থান,
সাদৃশ্য, ভুগোল, ইতিহাস, বিজ্ঞান, পুরাণ, লৌকিক-অলৌকিক, পবিত্র-অপবিত্র, নিকৃষ্ট-উৎকৃষ্টতা
অনুধাবন করলে আমাদের জ্ঞান ও গবেষণা
সার্থক হবে।
ইংরেজির আশীর্বাদ : শ্রীশুভ্র
ইংরেজির আশীর্বাদ
শ্রীশুভ্র
হই হই রই রই করে এসে গেল
২০১৯। নতুন বছর। নতুন ভাবনা। নতুন কার্যক্রম। সরকারী বেসরকারী। সমাজিক রাজনৈতিক
নানাবিধ নতুন প্রকল্প দেখতে পাবে রাজ্যবাসী। নতুন বছর তাদের অনেক চাহিদাই নিশ্চয়
পুরণ করবে। কারণ মানুষ মাত্রেই মূলত আশাবাদী। কাঁটাতারের এই পারে অধিকাংশ মানুষেরই
বহু দিনের একটি চাহিদা ছিল। অনেকেই চাইতেন নিজ সন্তানকে সরকারী শিক্ষাব্যবস্থায়
ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া শেখাতে। কিন্তু অধিকাংশ সরকারী স্কুলগুলির শিক্ষাদানের
মাধ্যম বাংলা হওয়ায় সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন লাখো লাখো ইংরেজি প্রেমী
অভিভাবক। যাঁদের অনেককেই সাধ্যের বাইরে গিয়েও বেসরকারী স্কুলে কচিকাঁচাদের ভর্ত্তি
করতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হতো। উপার্জনের বাইরেও আরও উপার্জন করে হাজার হাজার টাকা
ব্যায় করতে হয় বেসরকারী স্কুলগুলির মুনাফার খিদে মেটাতে। সন্তানকে ইংরেজ করে তোলার
সাধ মেটানোর জন্য। আর্থিক সঙ্গতি যাঁদের শক্তিশালী, তাঁদের অবশ্য যত দামী ইংরেজি
স্কুল, যত বেশি ব্যায়ভার ততই মানসিক তৃপ্তি। ততই বুক ভরা গর্ব। গ্রীন কার্ডের
স্বপ্নও তাঁদের কাছে তত বেশি মোহময়। সে কথা থাক। কিন্তু সন্তানকে ইংরেজ করতে
যাঁদের নাভিশ্বাস উঠে যায়, সন্তানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির দিককে অবহেলা করেও যাঁদেরকে
ইংরেজি স্কুলগুলির অতিরিক্ত মুনাফার সর্বগ্রাসী খিদে মেটাতে হয়; তাঁদেরও বহুদিনের
আক্ষেপ রাজ্যে সরকারী স্কুলগুলিতে যদি ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকতো,
তবে অনেক দুর্গতি থেকেই রক্ষা পাওয়া যেত। আর যাঁদেরকে, কোন ভাবেই সাধ ও সাধ্যের
ভিতর সামঞ্জস্য করতে না পেরে নেহাতই বাধ্য হয়ে সন্তানকে বাংলা মাধ্যমের
স্কুলগুলিতে ভর্ত্তি করতে হয় কপালে কড়াঘাত করে, তাঁদেরও বহুদিনের দাবি একটাই রাজ্য
সরকারের স্কুলগুলিতে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া শেখানোর ব্যবস্থা করার।
ভাষা বেঁচে থাকে চর্চায় : রীনা তালুকদার
ভাষা
বেঁচে থাকে চর্চায়
রীনা তালুকদার
মানুষ বাক্ যন্ত্রের
সাহায্যে মনের ভাব বুঝানোর জন্য যে ধ্বনি উচ্চারণ করে বা প্রকাশ করে তাকে ভাষা
বলে। বাক্ যন্ত্র দ্বারাই ধ্বনির সৃষ্টি। বাক্ যন্ত্র হচ্ছে গলনালী, মুখবিবর, কণ্ঠ, জিহবা, তালু, দন্ত্য ও নাসিকা ইত্যাদিকে বাক্ যন্ত্র বা বাক্ প্রত্যঙ্গ
বলে। ভাষার দুটি রূপ একটি মৌখিক অন্যটি লেখ্য বা লৈখিক রূপ। লেখ্যরূপ দু’প্রকার সাধু ও চলিত ভাষা। যে ভাষা তৎসম শব্দবহুল সর্বনাম ও
ক্রিয়াপদ অপেক্ষকৃত দীর্ঘ গুরুগম্ভীর ও কৃত্রিম তাকে সাধু ভাষা বলে;
আ মাটির কথা : অলভ্য ঘোষ
আ
মাটির কথা
অলভ্য ঘোষ
বিশ্বকর্মা পুজো চলে
গিয়েছে।আজ সকালে মহালয়ার পুণ্য প্রভাতে রমেন শুনেছে চাদর মুড়ি দিয়ে
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর; " যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা। নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,,
নমো নমঃ। যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ,,,নমস্তস্যৈ,, নমস্তস্যৈ,, নমো নমঃ।... ...
"
ফিরিয়ে দেওয়া : কেকা সেন
ফিরিয়ে
দেওয়া
কেকা সেন
সকাল সকাল রীতা ক্যানিং
লোকালটা ধরে ফেলল। অনেক দূরের গন্তব্য তার। " দয়াপুর "। নামের মধ্যেই এক
মায়া মাখানো আদর। ট্রেনে উঠেই একটা জানালার সিটে বসে পড়ে সে। যদিও দুটো স্টেশন পরই
এক আকস্মিক ধাক্কায় তাকে জানালার সিটটা ছাড়তে হয়।
" এটা কি হল?"
" আপনি যদি না দেখে বসেন
তো এরকমই হবে!" " ওটা আমার
জায়গা, আশেপাশে সবাইকে জিজ্ঞাসা
করে দেখুন। "
" এ আবার কি! জায়গা কারও কেনা হয় নাকি!"
" আলবাত হয়।" রীতা
চারপাশে তাকিয়ে দেখে কয়েক জোড়া ডেইলি প্যাসেঞ্জারি চোখ তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে
আছে।
আর কথা বাড়ায়নি রীতা,
সরে বসেছিল ভালোভাবে। আজ তার ডাক্তার হিসাবে
প্রথম সরকারি চাকরীতে জয়েনিং, বিশেষ জায়গার
বিশেষ দিন। আজকের দিনটা সে কিছুতেই কোন ঝামেলায় জরাবে না। ট্রেনের লোকজন, বাইরের টুকিটাকি দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যেন সে ক্যানিং পৌছে
গেল।
পালু : শুভেন্দু বিকাশ চৌধুরী
পালু
শুভেন্দু বিকাশ চৌধুরী
পালু – কোন আদরের ডাক নয়, আমার পদবির অপভ্রংশ। ভেবে দেখলে, আমার পুরো জীবনটাই একটা বিরাট অপভ্রংশ। আমার মাথাটা গোল - বোধহয় একটু বেশী
রকমের, চুলগুলো ছোট করে ছাঁটা,
কপালের মাঝখানটায় চুল কিছুটা এগিয়ে এসেছে সামনে,
তার দুপাশে চুলের সীমানা শেষ হয়েছে অনেক ভিতরে।
মুণ্ডু আর ধড়ের মধ্যবর্তী দূরত্বটাও যথাযথ নয়, যেন হঠাৎ করে একটা মুণ্ডু বসিয়ে দেওয়া হয়েছে, গলার নির্মাণকাজটা শেষ না করেই। হাত-পা গুলো মোটা মোটা।
হাতের প্রকৃত ব্যাবহার আমি করতাম ছোটবেলায় ঘুসি মেরে, আর পা গুলো থপথপ করে হাঁটার জন্য। ইচ্ছে থাকলেও ইদানীং আর
ঘুসিটা মারা হয়ে ওঠে না অবশ্য। এইসব দেখেশুনেই বোধ হয় ওরা প্রাণীজগতে ভালুকের
সঙ্গে আমার একটা সাদৃশ্য আবিষ্কার করেছিল। তাছাড়া ভালুর সঙ্গে অন্ত্যমিলেরও একটা
প্রয়োজনীয়তা ছিল – অস্বীকার করা যায় না।
ফেসবুক বনাম সাহিত্যপত্রের কবিতা : তৈমুর খান
ফেসবুক
বনাম সাহিত্যপত্রের কবিতা
তৈমুর খান
ফেসবুকে সাহিত্যচর্চা
বর্তমানে যেভাবে বাড়ছে তাতে আনন্দিত এবং আশঙ্কিত হবার প্রবণতা দুই-ই দেখা দিচ্ছে ।
আনন্দিত এই কারণেই যে আমাদের মধ্যে সাহিত্যের জাগরণ ঘটছে । আশঙ্কার কারণ হল যে
আমাদের মধ্যে প্রকৃত সাহিত্যের মর্যাদাহানি হচ্ছে । ফেসবুকের সাহিত্য এবং পত্র-
পত্রিকায় প্রকাশিত সাহিত্যের মধ্যে বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে ।
একটি দুর্মুখ গদ্য : তৈমুর খান
একটি দুর্মুখ গদ্য
তৈমুর খান
যৌবনের ভাষা
সাহিত্যে পুরস্কার
পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং যশস্বী হওয়ার ক্ষেত্রে কি বড়ো বড়ো কবি-সাহিত্যিকদের তোষণ
করার দরকার আছে ?
প্রশ্নটি বহুদিন থেকেই মাথার মধ্যে ঘুরপাক
খাচ্ছে। শুনেছি প্রতিটি পুরস্কারের পেছনেই একজন বড়ো সাহিত্যিকের কলকাঠি থাকে।
তিনি সেটা না নাড়ালে খুব ভালো লিখেও নাকি কপালে পুরস্কার জোটে না। ওপার বাংলার
একজন সুন্দরী সাহিত্যিক কতজন কবি-সাহিত্যিকের নামের সঙ্গে তাঁর শারীরিক সম্পর্কের
কথা স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন তার হিসেব আমাদের জানা নেই। তবু সেইদিন অর্থাৎ
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর কিছু আগেই তাঁর নামেও নিজের সম্পর্কের কথা
জানিয়েছেন। যদি তাঁর কথা সত্যি বলে মেনে নিই –— তাহলে মনে প্রশ্ন জাগে, এত লোকের সঙ্গে তিনি সম্পর্ক কেন গড়েছিলেন ?
সহবাস : পারমিতা চক্রবর্ত্তী
সহবাস
পারমিতা চক্রবর্ত্তী
সহবাস শব্দের অর্থ
বিশ্নেষণ করলে দেখা যায় এই শব্দটির তিনটি আঙ্গিক বা দিক আছে - ১. একত্রে অবস্থান,
অর্থাৎ এক সঙ্গে বাস করা ২. সংস্পর্শ, সান্নিধ্য (সহবাসের দ্বারা একরকম মন আরেক রকম হইয়া পড়ে ) ৩.
সঙ্গম, রমন ( স্ত্রী সহবাস) {সহ+বাস}। শব্দটিকে বিভিন্ন রূপে ব্যবহার করে থাকি ৷ সহবাস শব্দটি
বললেই সবার আগে যেটি মাথায় আসে তা হল একটি নারী ও পুরুষের সহ অবস্থান তা দৈহিক,
মানসিক এবং পারিপার্শিক সবটুকুই বোঝা যায় ।
এখনদেখা যাক এই শব্দটিকে নিয়ে কে কী ভাবে ভেবেছেন :
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)